শিশির বিন্দু পর্ব ১

0
1090

#শিশির_বিন্দু❤️
লামিয়া সুলতানা সিলভী ( লেখনীতে)
পর্বঃ১

ঘড়ির কাটা তখন ঠিক রাত ৭ টা তে আটকে আছে,, একবার ঘরির দিকে তাকিয়ে নিজের দিকে তাকালাম! নিজেকে দেখে নিজেই একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে উঠলাম! মানুষের জীবন কি অদ্ভুত তাইনা? তুমি যা চাও তা তুমি কখনোই পাবে না, ভাগ্য যা চাবে সেটাই হবে তোমার জীবনের একমাএ সিদ্ধান্ত! কারোর জন্য সময় কখনো থেমে থাকে না, সময় চলে নিজের গতিতে! এক জীবনে মানুষ কত কিছুই না পায়- দুঃখ-কষ্ট, হাসি-কান্না, সব কিছুই ভাগ্য আর সময়ের সাথে সাথেই পরিবর্তন হয়!..

এগুলো ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ মনে হলো কেও ডাক দিলো! তাকিয়ে দেখি আমার ৫ বছরের মেয়ে–রুদ্রা! বাচ্চাটা একদম জেনো ওর বাবার কপি, তাকালেই ওর আব্বুর হাসিজ্জ্বল চেহারা ভেসে উঠে!..

রুদ্রাঃ মাম্মা, তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে বউ সেজে! ( গালে হাত রেখে) একদম আমার মাম্মা মাম্মা লাগছে! নানুআপি যেমন রূপকথা পরীদের গল্প শুনায় আমার মাম্মাকে ঠিক তেমন পরী লাগছে,,আমার সোনা মাম্মা!..

আমি রুদ্রার কথায় মুচকি হাসলাম! মেয়েটার ৫ বছর হলে কি হবে, কেও দেখে বলবে না ও এতো ছোট! কথা-বার্তা ছোটদের মতো হলেও বোঝার ক্ষমতা আমার চেয়েও জেনো দ্বিগুন! এইটুকু বয়সে যে বাচ্চা খেলবে, হেসে বেড়াবে, দৌড়াবে তার বরাবরই আমার দিকে নযর! আমি কিসে খুশী থাকবো, কি করলে ওকে ভালোবাসবো, আদর করবো, কাছে টানবো! আমাকে জেনো অতিরিক্ত ভালোবাসে!..

আমার ভাবনার মাঝেই রুদ্রা আবার বলে উঠলো,,

রুদ্রাঃ জানোতো মাম্মা, নতুন বাবাকে দেখতে কিন্তু অনেক সুন্দর,,কিন্তু আমার মাম্মার মতো সুন্দর না! আর জানোতো আমাকে কোলে নিয়েছিলো সে, তারও একটা বেবী আছে,, একদম পুচকে! হি হি ( রুদ্রা খিলখিল করে হেসে উঠে)

বিন্দুঃ নতুন বাবা? কে বলেছে তোমাকে এটা? ( আমি বললাম)

রুদ্রাঃ কে আবার বলবে? ইন্দুমতী বলেছে!..

রুদ্রা আবার ক্ষণিকেই মন খারাপ করে বলে,,

রুদ্রাঃ মাম্মা তুমি নাকি আজকে চলে যাবে ঐ নতুন বাবাটার সাথে তার বাড়িতে? আমি যে তোমাকে ছাড়া একা থাকতে পারিনা! ( গলা জরিয়ে ধরে) আমি ইন্দুমতীর কাছেও থাকবো না মাম্মা!..

বিন্দুঃ কে বলেছে এসব বাজে কথা? ইন্দু বলেছে? ওকে আমি বকে দিচ্ছি দারাও,,আমি যেখানেই যাবো আমার রুদ্রাবতী কে সাথে নিয়ে যাবো! তুমি মন খারাপ করোনা তো সোনা!..

বিন্দু এবার ইন্দুকে কল দিয়ে ওর ঘরে আসতে বলে! বাসায় অনেক লোক যার কারণে চেঁচিয়ে ডাকা যাবে না,, নাহলে এতোক্ষনে ইন্দুকে ডেকে দু-চার কথা শুনিয়ে দিতো! ইন্দুটা একটু অন্যরকম,,একটু বেশীই স্পষ্টভাষী,, কোন কথা জেনো ওর মুখে আটকায় না! ছোট বাচ্চাকে এগুলো বলার কোন মানে হয়? আপনারাই বলেন,,,

এরই মাঝে ইন্দু রুমে এসে আসতে করে দড়জাটা ভেজিয়ে দেয়,,,

ইন্দুঃ বল আপু, ডাকছিলি কেন? আমার কাজ আছে!..

বিন্দুঃ তুই আমাকে কাজ দেখাস,, সারাদিন বাড়ির কয়টা কাজ করিস তুই? রুদ্রকে কি বলেছিস? কিসের নতুন বাবা? আমি ওকে ছেড়ে দিয়ে একা যাবো এটা তোকে কে বলেছে? তুই জানিস না আমার মেয়ে আমার কাছে কি? বাচ্চা মেয়েকে এগুলো বলে মন খারাপের কোন মানে আছে? বেশী জেনো বুঝিস না আমি কিন্তু সব লণ্ডভণ্ড করে দিবো, পরে বিপদে পড়বি তুই, আম্মু আর আব্বু! ( লাস্টের কথাটা একটু চিল্লিয়েই বলে)

ইন্দুঃ আমি কিন্তু মোটেও ওভাবে বলিনি আপু, তুই শুধু শুধু ভুল বুঝছিস আমাকে! দেখ আজকে তোর বিয়ে, আজকে তো রুদ্রা কে নিয়ে যেতে পারবি না! কালকে আমরা সবাই একসাথে যাবো আর তোর নতুন বর ( বিন্দু চোখ গরম করে তাকায়) না মানে ওই ভাইয়া টা তো রুদ্রার বাবাই হবে বল সেজন্যই তো আমি বলেছি!..

ইন্দুর কথা বলার মাঝেই দড়জায় কেও কড়া নাড়ে! ইন্দু গিয়ে দড়জা খুলে দেয়! তখনি বিন্দুদের মা তন্দ্রাবতী এসে বলে,,

তন্দ্রাঃ বিন্দু,, ও মা কি সুন্দর লাগছে আমার মেয়েটাকে!. ( মিস্টি করে হেসে বলে)

বিন্দুঃ আম্মু প্লিজ, leave me alone.. তোমরা এখন যাও আমার ভালো লাগছে না!..

তন্দ্রাঃ মা রাগ করিস না,,দেখ আমরা তো তোর আর রুদ্রার ভালোর জন্যই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি আর তাছাড়া তুই এ বিয়েতে নিজেও তো হ্যা বলেছিস! গত দুই বছরেও তো জোর করে রাজি করাতে পারিনি!..

বিন্দুঃ এখন মনে হচ্ছে রাজি না হলেই ভালো হতো! আমি এখনই না করে দিয়ে আসছি!.( রুদ্রাকে কোল থেকে নামিয়ে, উঠে দাঁড়ায়)

তন্দ্রাঃ বিন্দু বাড়াবাড়ি করিস না,,একটু পরেই কাজি আসবে! আর তুই এমন করছিস? বাচ্চাটার কথা ভাব,ওর জন্যই তো তুই রাজি হয়েছিস! ওর সত্যিই একটা মায়ের দরকার!..

বিন্দুঃ তোমরা যাও তো এখন,,আমার ভালো লাগছে না!..

তন্দ্রাঃ থাক তুই,, রুদ্রা দিদিভাই চলো,,তোমাকে সবাই খুজছে! ( রুদ্রার হাত ধরে নিয়ে যায়) ইন্দু আয়, ওকে একা থাকতে দে!..

বিন্দুঃ ইন্দু দড়জা টা বাইরের থেকে টেনে দিয়ে যা!.

ইন্দু চলে যাওয়ার পর বিন্দু সামনে আয়নার দিকে তাকায়! দেখতে পায়, আয়েনার মধ্যে বধূবেশে তার প্রতিচ্ছবি! লাল বেনারসি,,মাথায় ঘোমটা,,গা ভর্তি গয়না,,কিন্তু এসব কিছুতেই ওর মাথা ব্যাথা নেই মন খারাপ করে কিছুক্ষন তাকিয়ে ভাবতে থাকে,,,

আজ তার বিয়ে,,কিন্তু কোন রকম কোন উৎসাহোই যেনো পাচ্ছে না! এটা দ্বিতীয় বিয়ে বলে কথা না,,প্রথম বিয়েটাও তেমন কোন উৎসাহো ছিলোনা! তার অবশ্যই বিশেষ কোন কারণ আছে! আসতে আসতেই জানতে পারবেন,,,

বিন্দু বিধবা হয়েছে দুই বছর,,রুদ্রার যখন বয়স তিন বছর তখন রুদ্রাকে এতিম করে দিয়ে তার বাবা পরপাড়ে পাড়ি জমায়! রুদ্রার বাবা ছিল জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটির লেকচারার! সাত বছর আগে “রৌদ্দুর মাহবুব রুদ্র” এর সাথে আমাদের নায়িকা মানে- “বিন্দু করিম” এর বিয়ে হয়! কিন্তু বিয়েটা বেশীদিন স্থায়ী হতে পারেনি,,পাঁচ বছর সংসার করার পর রৌদ্দুর একটা কার এক্সিডেন্টে মৃত্যুবরণ করেন! সেই থেকে বিন্দু আর তার মেয়ে রুদ্রা বিন্দুর বাবার বাড়িতে থাকে! বিন্দুর শ্বাশুড়ি খুব একটা সুবিধের মানুষ ছিলো না যার কারণে বিন্দুকে বাবার বাড়িতেই আশ্রয় নিতে হয়!..

বিন্দু এই বিয়েতে কখনোই রাজি হতোনা যদিনা বিন্দুর হবু শ্বাশুড়ি এসে কান্না-কাটি করতো! তাদের একমাএ নাতীরও নাকি মা মারা গিয়েছে ছয়মাস আগে! বাচ্চাটার বয়সও ছয়মাস,,বাচ্চা জন্ম দিতে গিয়েই তার মা মারা যায়! সেই থেকে বাচ্চার বাবা বাচ্চাকে কোলে নেওয়া তো দূরে থাক, মুখও দেখেনি! তার প্রিয়তমা স্ত্রীর মৃত্যুর একমাএ কারণ নাকি এই নিষ্পাপ শিশুটা! বিন্দু ভেবে পায়না কোন বাচ্চার বাবা এরকম করতে পারে! ও তো অবুঝ,,মায়ের মৃত্যুর জন্য কি কখনো কোন সন্তান দায়ী হতে পারে? এমন ব্যাক্তিত্তহীন মানুষকে নিয়েই বিন্দুর এখন সারাজীবন থাকতে হবে!..

বিন্দুর যার সাথে বিয়ে তাকে সে দেখেনি, দেখার বিন্দুমাত্র ইচ্ছেও ওর মনে নেই! তার নামটা পর্যন্ত জানেনা কারণ বিন্দু তো ওই লোকটাকে ইচ্ছে করে বিয়ে করছে না, বিয়ে করছে বাচ্চাটার জন্য, বাচ্চার মা হয়ে উঠবে বলে!..

মাএ তিনমাস হলো পাশের বিল্ডিংয়ে ভাড়া এসেছে বিন্দুর হবু শ্বাশুড় বাড়ির লোকজন! তারা বাচ্চার মা খুজতে ব্যাস্ত, ছোট বাচ্চাকে তো আর দাদা-দাদি পালতে পারবেনা! বুড়ো হয়েছে কখন কি হয় আর তাছাড়া তাদের ছেলেরও তো একটা ভবিষ্যৎ আছে মাএ দুই বছর সংসার করেছে,,সারাজীবন তো আর এই বোঝা বয়ে বেড়াবে না! বাচ্চাকেই বা কতোদিন দূরে রাখবে বাবা, নিজেরই তো সন্তান! আর ছেলেমানুষের পক্ষে একা একটা বাচ্চা বড় করাও সম্ভব না! যার জন্য বিয়ের ব্যাবস্থা..

যাই হোক,,,
বিন্দুকে দেখেই তাসলিমা আহমেদের ( বিন্দুর হবু শ্বাশীড়ি) খুব পছন্দ হয়,,মেয়েটা অসসম্ভব সুন্দরী কিন্তু সাহস করে কিছু বলতে পারেনা! মেয়েটা আদো বিবাহিত নাকি অবিবাহিত এমন দোতনা নিয়ে তো আর তার বিবাহিত ছেলের জন্য বিয়ের প্রস্তাব দিতে পারেনা! ছাদে দেখে, বেলকোনি তে মাঝে মাঝে দেখে, রাস্তাঘাটেও দেখা হয়! তাসলিমার বেশ ভালোই লাগে মেয়েটাকে,,ছেলের পাত্রীও খুজছিলো! হঠাৎ করেই মিরাক্কেলের মতো একদিন বিন্দুর সাথে তাসলিমার কথা হয়! ওদের বিল্ডিং এর সামনের মাঠেই বিন্দু রুদ্রাকে নিয়ে বের হয় আর তাসলিমা বেগমও তার নাতিকে নিয়ে বের হয়! সেই সূএ ধরেই আজকে ওদের বিয়ে!..

এসব ভাবতে ভাবতেই দড়জায় আবারো কড়া পড়ে! বিন্দু তাকাতেই দেখে কাজিকে নিয়ে তার বাবা করিম সাহেব ভেতরে প্রবেশ করলো সাথে তার হবু শ্বশুরও আসে,,আরো অনেকেই আসে! কিন্তু আজকে বিন্দুর হবু শ্বাশুড়ি মা আসেনি,,ছেলের বিয়ে বলে কথা মায়েদের অনেক দায়িত্ব থাকে!..

অবশেষে ৮ টার দিকে কাজি এসে বিয়ে পড়িয়ে চলে যায়, বরের কাছে বিয়ে পড়াতে! কাজির সাথে সাথে সবাই চলে যায়! আসতে আসতে সময় যত অতিবাহিত হচ্ছে বিন্ধুর মনে ভয় টাও বাড়ছে- নতুন বাড়ি,নতুন পরিবেশ, সবার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারবে নাকি, বাচ্চাটার মা হয়ে উঠতে পারবে নাকি! রুদ্রাকে তারা কি সহজভাবেই মেনে নিবে? নাকি দুর্ব্যবহার করবে! ওর শ্বাশুড়ি ভালো হবে নাকি আগের শ্বাশুড়ি মানে রুদ্রের মায়ের মতোই হবে!..

বিন্দুঃ মনে মনে ( রুদ্র, আজ আমি তোমায় বড্ড বেশি মিস করছি,, একদিন আমি ঠিক এভাবেই তোমার জন্য বউ সেঁজেছিলাম! যদিও তোমায় মেনে নিতে আমার সময় লেগেছিলো কিন্তু তোমার কেয়ারিং, ভালোবাসা, আমাকে বোঝা সবকিছুই বাধ্য করেছিলো আপন করে নিতে! তবে আজ দেখো ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস! আমায় দ্বিতীয় বিয়ের জন্য আবার বউ সাজতে হলো!) একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ছাড়ে!..

বিন্দুর যার সাথে বিয়ে হলো সে নাকি ঢাকায় চাকরি করে! তার স্ত্রী মারা যাওয়ার পর ছয়মাস আর নারায়ণগঞ্জ ফেরেনি এতোটুকুই জানে বরের সর্ম্পকে! বাচ্চার মুখটাও দেখেনি পর্যন্ত তার বাবা,, এটা কি কোন বাবার কাজ? নিশ্বাপ বাচ্চাটারই বা কি দোষ ছিলো,, সবই আল্লাহর ইচ্ছা! বিন্দুরাও খুব তাড়াতাড়িই ঢাকায় চলে যাবে বিয়ের সাতদিনের মাথায়! তার বরের নাকি বেশি ছুটি নেই!..

কিছুক্ষন পর বিন্দুর মা তন্দ্রাবতি আবার আসে বিন্দুর ঘরে,, হাতে এক খাপ মিস্টির প্যাকেট! তন্দ্রাবতির সাথে সাথে একটা অল্প বয়সের রমনীও ভেতরে আসে, কোলে ছয় মাস বয়সের একটা ফুটফুটে বাচ্চা! বিন্দু রমনীকে ঠিক চিনতে পারেনি তবে বাচ্চাটাকে চিনতে পেরেছে,, রমনীটাও হয়তো ওর শ্বশুর বাড়ির লোক!..

তন্দ্রাঃ বিন্দু হা কর মা, মিষ্টি এনেছি! এমন শুভ দিনে মিষ্টি মুখ না করলে চলে!..

বিন্দু কিছু বলে না,, বাচ্চাটাকে দেখে! এবার তন্দ্রা এসে বিন্দুর মুখে আচমকাই একটা কালো মিষ্টি পুরে দিলো! বিন্দু কিছু বললো না ঘরে ম্যাহমান আছে! তবে বিন্দুর মা বুঝতে পারে বিন্দু তার মা-বাবা সবার উপর রেগে আছে!..

তন্দ্রাবতি মেয়েকে মিষ্টি খাইয়ে, রমনিটাকে বসতে বলে চলে যায়! বিন্দুর মা চলে যাওয়ায় রমনীটা বিন্দুর পাশে এসে বসলো বাচ্চাটা কোলে নিয়েই!..

নাদিয়াঃ নতুন বউয়ের নাম কি?

বিন্দুঃ জ্বী বিন্দু করিম,,

নাদিয়াঃ বিন্দু বাহ বেশ ভালো নাম,, তা আমি আর্কের খালাতো ভাইয়ের বউ! আর তোমারও ভাবী হই!..

বিন্দুঃ জ্বী অর্ক কে?

নাদিয়াঃ ( অবাক হয়ে) তুমি অর্ক কে চেনোনা? যার সাথে বিয়ে হলো তাকেই চেনোনা? কেমন দ্বারা বউ তুমি?

বিন্দুঃ না আসলে তেমন কোন সুযোগ হয়নি তাই আরকি,,

নাদিয়াঃ বুঝেছি,,তুমিও অর্কের আগের বউয়ের মতোই! তা এই বাচ্চাটা আর্কের ছেলে, এটা জানো তো?.

বিন্দু মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বাচ্চাটাকে কোলে নেয়,,

বিন্দুঃ জ্বী,আমি মেঘকে চিনি! আন্টি মেঘকে নিয়ে প্রায়ই আসতো আমাদের বাসায়!..

নাদিয়াঃ সে কি কথা নতুন বউ, শ্বাশুড়ি কে আন্টি বলছো? মা বলতে শেখো আজ থেকে! জানতো অর্কের আগের বউটাও ভালোই দেখতে ছিলো কিন্তু ব্যাবহার খুব একটা সুবিধার ছিলো না! প্রেমের বিয়ে বোঝই তো,,অর্কও কিছুই বলতো না ওর বউকে! খালামুণি তো প্রায়ই আমাদের বাসায় গিয়ে কাঁদতো! অর্ককেও মেয়েটা উল্টাপাল্টা বোঝাতো, মেয়েটা মরে গিয়ে ভালোই হয়েছে শান্তি পেয়েছে খালামুণি!.

বিন্দুঃ don’t mind.. আমি কারোর সমালোচনা করা পছন্দ করি না! আর সে এখন মৃত,,তার কথা বললে আপনারই পাপ হবে! সে যেটা ভালো মনে করেছে সেটা করেছে আমার যেটা ভালো মনে হবে আমি করবো! চিন্তা করবেন না আপনার খালামুণিকে ভালো রাখবো!..

নাদিয়াঃ মনে মনে ( ভাবরে তেজ,, শিক্ষিত মেয়েগুলোর এই এক সমস্যা বেশি ফটর ফটর করে?)

তখনি দশ বছরের একটা ছেলের সাথে রুদ্রা দৌড়ে আসে,,,

রিদমঃ আম্মু আম্মু দেখো মেয়েটা আমাকে ধাক্কা দিয়েছে!( নাদিয়া কে)

নাদিয়াঃ কিহ? এই মেয়ে তোর এত বড় সাহস আমার ছেলেকে ধাক্কা দিস! তুই কে হ্যা? রিদম বাবা তুইও ওকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দে!..

রুদ্রা দৌড়ে ওর মায়ের কাছে এসে,,,

রুদ্রাঃ মাম্মা বিশ্বাস করো এই ভাইয়াটা মিথ্যে কথা বলছে! আমি তোমার কাছে দৌড়ে আসছিলাম আর তখন এই ভাইয়া টার সাথে হঠাৎই ধাক্কা লেগে পড়ে যায়! আমি ইচ্ছে করে করিনি মাম্মা,,তুমি আন্টিটাকে বলো!..

বিন্দুঃ I know mamma.. তুমি আমার কাছে বসো দেখো ছোট্ট একটা ভাই!..

রুদ্রাকে পাশে বসিয়ে নাদিয়ার দিকে তাকায়,,

বিন্দুঃ আমার মেয়ে আর যাই হোক মিথ্যে বলে না ভাবী,,ওকে সে শিক্ষা দিয়ে মানুষ করিনি আমি! আর ছেলেকে এমন কোন শিক্ষা দেবেন না যেনো একসময় আপনাকেই মা হিসেবে পরিচয় দিতে দ্বিধাবোধ করে! এখন থেকেই ছেলেকে কনট্রোল করুন যেভাবে ওকে গড়ে তুলবেন সেভাবেই ওর ব্যাক্তিত্ত প্রকাশ পাবে! sorry don’t mind..

একটা ছোট্ট করে নিঃশ্বাস ফেলে মেঘের দিকে তাকায়,,,

নাদিয়াঃ আমি জানতাম না বিন্দু এটা তোমার মেয়ে,,সরি! মামুনি এদিকে এসো,,( রুদ্রাকে ডাকে)

বিন্দুঃ রুদ্রা আন্টি ডাকছে যাও,,, ( একটু থেমে) আজ যদি রুদ্রার জায়গা অন্য বাচ্চা থাকতো আপনার মোটিভেশনও সেইম কাজ করতো! আপনে যদি ছেলেকে বলতেন হঠাৎই লেগে গেছে বাবা,,ওসব ধরতে হয় না তাহলে এই বাচ্চা ছেলেটা নিজেকে শুদ্ধে নিতো তা না করে উলটে উৎসাহো দিচ্ছেন! যাই হোক,,,( রুদ্রার দিকে তাকিয়ে) মাম্মা তুমি কিছু খেয়েছো?

রুদ্রাঃ না মাম্মা, এখনো খাইনি! আমি কি তোমাকে ছাড়া কখনো খেয়েছি? তুমি আর আমি একসাথে খাবো..

নাদিয়া মনে মনে ভাবছে, ( মায়ের প্রতি কি ভালোবাসা আর আমার ছেলেটা অপেক্ষা করা তো দূরের কথা আমার খাবার কেড়ে নিয়ে খায়)

বিন্দুঃ ওকে সোনা,, আমি ইন্দুকে খাবার দিয়ে যেতে বলছি! বাবা তুমি খেয়েছো? ( রিদমকে জিজ্ঞেস করে)

রিদমঃ জ্বী আন্টি, আমি খেয়েছি!..

বিন্দুঃ ( ঠোট প্রসারিত করে) আচ্ছা ঠিক আছে,,তোমার নাম কি?( এক হাতে মেঘ কে ধরে আর এক হাতে ফোনে ডায়েল করছে ইন্দুকে)

রাত ৯ টার দিকে,বিন্দুর এবার বিদায়ের পালা..

( বাকিটা আগামী পর্বে দিবো)

#চলবে…

[ ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here