লাভনীতি -১৩

0
2304

#লাভনীতি
বিথি হাসান-১৩

৩৪.
সময় ঠিক রাত ৭টা হওয়ায় হলুদের পোগ্রাম শুরু হয়ে যায়।নম্রতাদের ছাদে হলুদের ফাংশন করা হয়।অর্ক কোন রকম গায়ে হলুদ লাগিয়ে ওঠে চলে যায় গরু কিনতে।বাড়ির কাজে গরু কিনা হয়নি।তাই দ্রুত যাচ্ছে কিনতে।

স্টেজের কিনারে অন্ধকারে বসে বসে এতক্ষণ অর্ককেই দেখছিলো আফসানা।অর্ক না একটা বারও তাকে খুজেছে।আর না অর্ককে দুঃখি লাগছে।কত সুখেই না আছে অর্ক।তাহলে সে তৃতীয় পক্ষ হয়ে কেন তার সুখে বাধা দিবে।দৌড়ে নিজের রুমে চলে আসে।তারপর সব কিছু গুছিয়ে বেরিয়ে পরে বাসা থেকে।গেইটের সামনে আসতেই অর্কের সাথে দেখা হয় আফসানার।আফসানার হাতে ব্যাগ দেখে অর্কের মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।এই মেয়েটা কি পালাই পালাই ছাড়া আর কিছু বুঝে না?সারাক্ষণ দূরে যাবো দূরে যাবো করে বেড়ায়।

—–“কোথায় যাওয়া হচ্ছে??? (রেগে)

আফসানা একপলক তাকিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে আসতে নিলে অর্ক তার হাত ধরে আটকায়।এতে আফসানা যেন তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে।সে অগ্নিশর্মা হয়ে বলে,,,,

—-“হু দ্যা হেল আর ইউ???

আফসানার কথায় রেগে যায় অর্ক।তবুও রাগ কন্ট্রোলে রেখে শান্ত ভাবেই বলে,
—“ভেতরে যাও।

—“আমাকে কি কাঠপুতুল পেয়েছেন কাঠপুতুল?যে তাকে যেমন ভাবে নাচাবেন সে তেমন ভাবেই নাচবে?যখন মন চাইবে তখন ভালেবাসার নাটক করবেন।আর যখন মন চাইবে অবহেলা করবেন।যদি তাই মনে করে থাকেন তাহলে সরি।আমি কাঠপুতুল নই।আমি একজন মানুষ। আমারও অনুভূতি আছে।তাই সড়ে দাড়ান।

—“আমার বিয়েটা খেয়ে যা নাহয়!!

—-“ফাক ইউর বিয়ে।গো টু হেল।ডু ইউ আন্ডারস্ট্যান্ড হোয়াট আই সে? জাস্ট গো টু হেল!!!
স্টুপিড

হাতটা টেনে একদম নিজের সাথে মিশিয়ে ফেলে আফসানাকে অর্ক।কত বড় সাহস তার বিয়ে নিয়ে কটুক্তি। নাহ এই মেয়েটা একদম অসভ্য হয়ে গেছে।কেউ দেখার আগেই কাজ ছাড়তে হবে।আফসানার হাত ধরে বাহিরে নিয়ে যায় অর্ক।আফসানা একটু অবাক হয় তবে বিষন্নতা মনটা ছেয়ে যায়।অর্ক তাহলে হাত ধরে টেনে তাকে বাহির করে দিচ্ছে পাছে যদি তার বিয়েতে সমস্যা করে।

—————————–
৩৫.
নম্রতার চিৎকারে বাড়ির সকলে এক জায়গায় জোরো হয়।কি এমন ঘটলো বিয়ে বাড়িতে কে জানি?নম্রতার চোখের দৃষ্টি অনুসরন করে তাকাতেই সবার চোখও বড় হয়ে যায়।

দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে অর্ক আর আফসানা। গলায় মালা পড়া।আফসানা মাথা নিচু করে রাখছে।আর অর্ক নম্রতার দিকে রাগি লুকে তাকিয়ে আছে।এভাবে চিল্লানোর মানে কি?ফাযিল মেয়ে।

—-“কিরে?এগুলো কি?মালা সালা?(আহমেদ শরীফ)

—“আর বলো না বাবা!!এই মে,,,,,,,

অর্ক কিছু বলার আগেই আফসানা কাদো কাদো হয়ে বলে ওঠে,,,,
—“ফুফাজান!!আমার কোন দোষ নেই।আপনার ছেলে আমাকে জোর করে কাজি অফিসে নিয়ে গিয়েছিলো!!আমার কোন দোষ নেই।

আফসানার কথা শুনে একত্রে সবাই হাসিতে ফেটে পরে।তা দেখে আফসানা হা করে তাকিয়ে থাকে।ও কি এমন বলল যে সবাই হাসছে।ছেলে পাত্রি রেখে অন্য মেয়েকে বিয়ে করে নিয়েছে সেখানে এতো হাসির কি হলো???
আফসানাকে এভাবে বোকার মত তাকিয়ে থাকতে দেখে নম্রতা হাসতে হাসতে বলে,,,

—“কিরে তুই আবারও পালানোর ধান্দা করছিলি নাকি?

—“তা আর বলতে?তুই জানিস আমি না দেখলে এই মেয়ে কখন কোথায় যে চলে যেতো(অর্ক)

—-“আমি তো জানতাম আমার সালিকা চালু মাল।কিন্তু এখন তো দেখছি হাহাহহা(আসাদ)

সবার কথা শুনে আফসানার মুখ বিশাল বড় হা।কি বলছে সবাই?কেউ কি এই বিয়ে তে রাগ করেনি?অর্কের বিয়ের পাত্রির কি হবে তাহলে?আর এতো মজাই কেন নিচ্ছে সবাই?

—“তুই এতো পালাই পালাই করিস বলেই ভাই তোকে বলতে না করেছিলো।কি কিছু বুঝতে পারছিস না?আমি বলছি,,তুই যে ভাইয়ার জন্য এতো পাগল আগে বলবি তো?ভাইয়া আমাদের না জানালে তো জানতামই না।তুই আবার মামার কাছে ঘ্যানঘ্যান করা শুরু করলি তামিম ভাইয়ের কাছে চলে যাবি।সেটা শুনে তো ভাই রেগে সবাই কে বলল সে তোকে বিয়ে করতে চায়।এই সম্পর্কে কারো কোন প্রবলেম না থাকায় সবাইও রাজি হয়ে যায়।তবে ভাইয়ের রাগ কমেনি।সে আমাদের বলে দিয়েছে যাতে তোকে না বলি।আর তুই ও রাগের মাথায় নিজের হবু জামাইকে নিয়ে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে এসেছিস।হাহাহ।সো ইন্টারেস্টিং!!

—-“কিন্তু আমি তো কাজি অফিসে যেতে চাইনি।আমি পালিয়ে বিয়ে করতে চাইনি।তোর ভাই,,,,,

—-“কবুল বলতে বলার সাথে সাথে কে বলে দিয়েছিলো?(অর্ক)

সবাই আবারো হাসিতে ফেটো পরে।আর আফসানার মুখের এক্সপ্রেশন দেখার মত হলো।এটা কি হলো তার সাথে? আগে বললেই হতো তবে কি আর এভাবে বিয়ে করতে হতো?সব হয়েছে এই উল্লুকের জন্য (অর্ক)সব তেল তুলবে রাতে।এমন গুড়ান গুড়াবে মনে থাকবে এই আফসানা কে বোকা বানানোর ফল কতটুকু ভালো!!

—“যাক তাহলে কাজি ডাকার পর্ব আগেই শেষ হয়ে গেলো।আহ কিছু পরিশ্রম থেকে বাচলাম।(আহমেদ শরীফ)

—-“না বেয়াই!!কাজি তো ডাকতেই হবে!

মিসেস লায়লার কথায় সবাই তার দিকে তাকায়।তিনি একটু হেসে আহমেদ শরীফের দিকে তাকিয়ে বলে,

—-“বাবু আর বউমা মানে নম্রতার বিয়েটাও অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে হলো।এখন আবার আপনার ছেলেরটা।আপনাকে পরিশ্রম থেকে বিরত থাকতে তো আর দেওয়া যায় না।তাই আবার কাজি ডাকুন সবার সামনেই আবারো এদের বিয়েটা দিয়ে দিন।

—“ঠিক বলেছেন বেয়াইন!তবে বেয়াইকে ছাড়া কেমন যেন অসম্পূর্ণ লাগছে!(শাহপরান)

—“আপনার বেয়াই তো আপনার ভয়েই এ বাড়িতে আসেনি।আপনি সেদিন যা ভয় দেখিয়ে ছিলেন তাতে তো বেচারা সে কি কম্পন।হাহাহা(মিসেস লায়লা)

—-“বেয়াইন শুধু শুধু লজ্জা দিচ্ছেন বাচ্চাদের সামনে।

সবাই হাসতে হাসতে যে যা কাজ করছিলো তাতে চলে যায়।ঠিক করা হয় এখানে আসাদ আর নম্রতার ও বিয়েটা হবে।আসাদ সবার আড়ালে সেই কখন থেকে নম্রতাকে খুচিয়ে যাচ্ছে রুমে আসতে।তবে নম্রতা বেশি তোয়াক্কা করছে না।সে তো আফসানা কে নিয়ে মজা করার মুডে আছে।

আসাদ না পেরে নম্রতাকে সবার সামনেই রুমে যেতো বলে।নম্রতা আসাদের কথায় রেগে যায়। আসাদের হাতে একটা খামচি দিয়ে রুমে দিকে যায়।আসাদ ব্যাথায় উফফ করে ওঠে।তারপর সবার থেকে বেরিয়ে রুমে ডুকে পরে।রুমে ডুকতেই নম্রতা গর্জে ওঠে বলে,,

—-“কি হয়েছে টা কি??এভাবে ডাকার কি ছিলো?

—“না আসলে হতোটা কিভাবে ভাই???

—“চুপ!এখন মজা করার সময় নয়!!সড়ুন সামনে থেকে।আমাকে আফসানা কে সামলাতে হবে।

—“তার জন্য আমার সালাবাবু আছে আমার আদরের বউ।আমার বাবুর মা।আমার মায়ের বৌমা।আমার,,,,,

—-“এই চুপ।কি শুরু করলেন বলেন তো?কি বলবেন বলেন?

—-“তোমার কি মনে হয় না তুমি একটু বেশিই তাড়া দেখাচ্ছ আমাকে???হুম?

আসাদকে একটা চিমটি কেটে পালিয়ে যায় নম্রতা।। সে জানে আসাদ কোন গুরুত্বপূর্ণ কথার জন্য তাকে ডাকেনি।ডেকেছে ফাযলামো করতে।আর তার কি এখন হাতে সময় আছে নাকি ফাযলামো করার?ভাই আর ভাইয়ের বউকে ও সামলাতে হবে।কে আছে এদের তাকে ছাড়া।

——————————
৩৬.

বিয়ের দিন!!
তামিম ভিডিও কল দিয়ে সেই যে কান্না শুরু করেছে এখনো কেদেই যাচ্ছে। ছেলেরা এতো কাদতে পারে তাও বোনের জন্য তা জানা ছিলো না এই বিয়ে বাড়ির কারো!!সবার চোখে জল।আফসানর তো চোখ মুখ ফুলে একাকার।অর্ক একটু পর পর ধমকে ওঠছে।তবে তাতেও দুভাই বোনের কেউ কান্না ধামাচ্ছে না।নম্রতা ও আফসানা কে জরিয়ে ধরে ফুপিয়ে কেদে কেদে ওঠছে।তা দেখে হেসে যাচ্ছে আসাদ।কিন্তু সবার আড়ালে।এই মেয়েটা এমন কেন?ওরা না হয় আলাদা হয়ে যাচ্ছে বিধায় কাদছে।ওর কি প্রয়োজন এভাবে কাদার।আফসানা তো সেই তার বাড়িতেই ওঠছে।

নম্রতা কাদার ফাকে আসাদের দিকে তাকিয়ে চোখ পাকাচ্ছে।কারন সে দেখে ফেলেছে আসাদ তার উপর হাসছে।একটুপর পরিবেশ নরমাল হলে অর্কের সাথে কথা বলে তামিম কেটে দেয়।লাইন কাটতেই আফসানা কে দাড়া করিয়ে টেনে রুমে নিয়ে যায় অর্ক।যদিও তাদের বিয়ে কালকে হয়েছে তারপর ও আজই তাদের বাসর হবে। অর্ক রুমের দরজা লাগিয়ে পিছনে ফিরে দেখে আফসানা বেডের কিনারে বসে কেদেই যাচ্ছে। সে একটু বুকে ফু দিয়ে আফসানার সামনে যেতেই আফসানা কড়া চোখে তাকায়।এমনে তে চোখ গুলো লাল ছিলো কাদার ফলে।এভাবে বড় বড় করো তাকাতেই সেটা আরো ভয়ংকর হয়ে গেলো।

—–“ওরে বাবা।এগুলো সেই চোখ যাতে আমি ফিদা হয়েছিলাম?তবে আজ এতো ভয়ংকর লাগছে কেন?নাকি এটা আমার আফসানা না?

মনে মনে কথা গুলো বিড়বিড় করে অর্ক আবারও আফসানার দিকে তাকায়।এবার আর আফসানা তার দিকে তাকায় না।তাতে একটু সাহস মিলে সে আফসানার হাত ধরতেই আফসানা হেচকা টানে হাতটা ছড়িয়ে ফেলে।

—-“সানা বাবু!!!!আমার প্রানের সানা মিস্টি!!আমার সানা সুবহানাকা!!!

—-“জাস্ট সাটআপ মি.অর্ক।মানুষ কে তার আসল নামে ডাকতে শিখুন।এতে ভদ্রতা প্রকাশ পায়।

—-“হ্যা আমি জানি!আর এটাও জানি আমি ভদ্র।কিন্তু মিসেস অর্ক!!আপনি কি জানেন নিজের বউকে যা খুশি তা বলা যায়।এই ধরেন আপনি আমার সানা মিষ্টি আমার রসমালাই??

—-“আমাল লসমালাই(ব্যাঙ্গমি করে আফসানা)

চলবে,
(প্রতিদিন গল্প দিবো তবে একটু ছোট করে।যদি রাজি থাকেন তবে এব্রিডে গল্প পাবেন ইনশাআল্লাহ।ধন্যবাদ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here