লাভনীতি -১৬

0
1630

#লাভনীতি
বিথি হাসান-১৬

৪২.
বেডের উপর বসে মাথা নিচু করে বাবুকে ফিডিং করাচ্ছিলো নম্রতা।আর তার ভাবনাতে ভেসে যাচ্ছিল আসাদ।লোকটা কি করে পারছে তার সাথে এমন করতে?তবে কি ভালোবাসা শূন্য হয়ে যাচ্ছে। এইতো সেদিন কতই না পাগলামী করলো তার জন্য। তবে আজ?

সাত মাসের ভরা পেট নিয়ে খাবার টেবিলে বসে খাওয়া অসম্ভব ছিলো নম্রতার।তাই সোফায় বসে খাচ্ছে সে।কিন্তু খাইয়ে দিচ্ছে আসাদ।আসাদ নম্রতাকে খাইয়ে দিচ্ছে আর তার পি এ, নাফিসের সাথে কথা বলছে।নম্রতা বহু বারন করেছে।খাইয়ে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। সে খেতে পারবে।মিসেস লায়লা ও বলেছে, সে নম্রতাকে খাইয়ে দেক।কিন্তু আসাদের একই কথা।তার বউয়ের জন্য সে আছে।বেবি যদি জানে তার বাবা তার মাকে সে পেটে থাকতে টেককেয়ার করেনি।তবে খুব বাজে লাগবে।
তার এসব কথায় মিসেস লায়লা মুখ ভেংচি কেটে চলে গেলেন।যেতে যেতে বলছে,
—-“যে আসেনি তার জন্য ও কি দরদ আমার ছেলের।মাকে ও চিনে না এখন আর।আমি তো পুরনো হয়ে গেছি।এখন সেই সব।

মিসেস লায়লার কথায় আসাদ হেসে নম্রতাকে খাওয়ানো শুরু করে।কোথায় সেই বেবিকে জবাবদিহিতা করার ভয় পাওয়া তার আসাদটা।আসুক একবার!!!

দরজা খোলার শব্দে নম্রতার ভাবনা ছুটে যায়।সে দরজার দিকে না তাকিয়েই চিল্লিয়ে ওঠে।
—-“কতবার বলেছি আমি!! আমাকে বিরক্ত করো না মা।ভালো লাগে না ঐ লোকের কথা শুনতে।প্রচন্ড বিরক্ত আমি।

তারপর কিছু না বলে মাথা নিচু করে বসে ।পরক্ষণেই টের পায় কেউ রুমে ডুকে তার পাশে ঠাস করে শুয়ে পরেছে।সে ভেবেছে আফসানা হবে।তাই কোন রকম রিয়েক্ট না করে বসেই থাকে।

—-“আমাকে রেখে আমার বাবানকে নিয়ে তুমি কিভাবে পারলে একা চলে আসতে এখানে নম্রু???

আসাদের কন্ঠ শুনে চমকে যায় নম্রতা। এবং সাথে সাথে বাবুকে নিয়ে গুরে বসে।কয়েকটা বড় বড় ধম নিয়ে ওঠে দাড়ায় সে।এবং বিনা বাক্যে রুম ত্যাগ করে।আর এদিকে আসাদ অবাক।নম্রতা কোন রকম রিয়েক্ট না করায়।সে ভেবেছিলো তাকে কাঠখোট্টা পুড়াতে হবে।এখন দেখছে তাকে পুরো জঙ্গলই পুড়াতে হবে।একটু কষ্ট ও পেলো বটে।নম্রতা একবার তার দিকে তাকায়নি বলে।পরক্ষণেই আবার মনটা আনন্দে ভরে যায় নিজের বাবা হওয়ার কথাটা মনে পরলে।

বাবা হওয়ার অনুভূতি কত খুশির।সেটা যে হয়েছে সেই জানে।আচ্ছা এই বাবা হওয়াতে এতোটা প্রশান্তি আল্লাহ কিভাবে লুকিয়ে রাখেন?বাবা হবে তারপরই বুঝবে এর অনুভূতি। এর আগে নয়।আচ্ছা যারা বাবা হতে পারে না বা বাচ্চা দানে অক্ষম তাদের কেমন লাগে?বুকটা ধরাশ করে ওঠে আসাদের।নিশ্চয়ই এটা জঘন্য অনুভূতির মধ্যে পরে।

———————————————
৪৩.
মাথা নিচু করে বেডের ওপর বসে আছে আফসানা।সে দুশ্চিন্তায় এতই মগ্ন যে কখন অর্ক রুমে এসেছে তা সে টেরও পায়নি।অর্ক রুমে ডুকে আফসানা কে এমন বিধ্বস্ত দেখে একটু ভয় পায়।অফিস থেকে এসেছে সেই সন্ধায় মাত্র ডিনার করে রুমে এসেছে সে।এসেই যা দেখলো!!!
হলো টা কি আবার?আফসানার কাছে গিয়ে বসতেই আফসানা মুখ তুলে তাকায়।সেই কি মলিন মুখ।যা অর্ককে খুব পিরা দিচ্ছে। প্রিয় মানুষটা এমন করে তাকালে সবারই বুকে গিয়ে লাগবে। অর্কেরও লাগছে। খুব তীব্র ভাবে।

—–“কি হয়েছে আমার কাচা গোল্লার?

অর্কের কথায় আফসানা একটু হেসে জরিয়ে ধরে।অর্কও ভালোবাসার পরশ দিয়ে দেয় মাথায়।আফসানা কেমন আমতা আমতা করছে।কিছু বলতে চায় এমন।কিন্তু কি?

——কি হলো বলো?কেউ কিছু বলেছে আমার রসমালাই কে???

—-“নাহ।ডিনার কেমন ছিল??

—–“অসাধারণ টেস্ট।ধন্যবাদ এত ভালো ডিনারের জন্য মাই কুইন।

আফসানা কিছুটা ফ্রি হচ্ছে। সে একটা লজ্জা পাওয়া হাসি দেয়।এবং মুখ বাকি অর্কের বুকে একটা কিল মারে।এবার আফসানার মনে হচ্ছে কথাটা বলা উচিত। নিশ্চয়ই অর্ক তেমন ছেলে নয়।
একবুক সাহস নিয়ে বলে ওঠে,,

—-“অর্ক আই’ম প্রেগন্যান্ট। জানি তুমি বারন করেছিলে ফেমেলি প্লেনিং নিয়ে ভাবতে।কিন্তু বিশ্বাস করো এখানে আমার কোন দোষ নেই।ঐ দিন মিস করে গিয়েছিলাম ভুলে তোমাকে বলতে চেয়েছিলাম।ভয়ে,,,,,

—-“এখন ভয় করছে না আপনার????

অর্কের দিকে আফসানা তাকিয়ে দেখে অর্ক এক গাল হেসে তাকিয়ে আছে।একটা খুশির দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে বুক চিরে আফসানার।অর্ক টান মেরে আফসানা কে তার বুকের সাথে মিশিয়ে ফেলে।

——“তুই কিভাবে ভাবলি এমন একটা বিষয় নিয়ে তোর সাথে খারাপ ব্যবহার করবো?আমি বাবা হবো আর তুই আমাকে আমার বেবির কাছে পচা বাবা বানাতে চেয়েছিলি।কিভাবে পারলি সানা??
আই’ম ম্যাডলি হেপি ফোর দিস নিউজ।আমিও তোকে বারন করেছিলাম ঠিকিই কিন্তু যা হয়েছে তা নিয়ে ভয় পেতে বলেছি?আমি কি এতটাই খারাপ?

—–“উফফ।চুপ করেন না অর্কবাবু।একটু বেশিই কথা বলেন আপনি।আমি ভয় পেয়েছিলাম কারন আপনি যদি আবার বলেন বেবি না নিলেও পারতে।

সারা বাড়ি ছড়িয়ে পরলো খুশির খবর।নম্রতা তো আফসানা কে নিয়ে মজা করেই যাচ্ছে।”কিরে? আমার টা দেখে একদম তর সইছিলো না। না???বাহ এর মধ্যে খুশির খরব?হাহাহা।
সবাই হেসে হেসে যাচ্ছে তাদের কথায়।ঠিক করা হলো দুদিন পর নম্রতার বাবুর আকিকার সময় এই খুশির খবরটাও এলাউনস করা হবে।আফসানা একটু পর পর ব্লাসিং হচ্ছে।

———————————————
৪৪.
বাড়িতে অসংখ্য মেহমানের ভিরে আসাদ বেচারা এক কোনায় গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে তার রুমে।তার ভিষন জ্বর।১০২°।ওঠে বসতেও পারছে না সে।এদিকে বাবুকে যার তার কোলে দিয়ে নম্রতা সেবা করে যাচ্ছে তার পুরুষের।এ শরীরে কেউ তাকে এসব করতে দিচ্ছে না।কিন্তু আসাদ কে দেখে সে স্থীর থাকতে পারছে না।

লোকটা দুদিনে কেমন হয়ে গেছে।মাফ করে দিলেই হতো।একটু বেশিই করে ফেলেছে।বাবুকে কোলে নেওয়া তো দূর মুখটাও দেখতে দেয়নি নম্রতা। অন্য রুমে গিয়ে পর্যন্ত থেকেছে।দুদিন আগে যখন আফসানার খুশির
সংবাদ পেয়েছিলো আসাদ।খুশির ঠেলায় নম্রতার পাশে গিয়ে বসে পরেছিলো।তবে সাথে সাথে নম্রতা রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।
আসাদ এতে ভীষন কষ্ট পায়।কিন্তু হেসে আবার সামনে মনোযোগ দেয়।শত ডাকাডাকির পরও সে রুম ছেড়ে বের হয় নি।ঝুম বৃষ্টির মধ্যে বাসা ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলো আসাদ।কেউ তাকে আটকে রাখতে পারেনি।সে বলেছে, নম্রতার ডেলিভারিতে আরো একমাস দেরি ছিলো তাই একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজেই গিয়েছিলো আসাদ।সে এতটাই বিপদের মাঝে ছিলো যে নিজের ফোনটাও হারিয়ে ফেলেছিলো।একটা গ্রুপগ্যাঙ তার উপর হামলা করেছিলো।
সে নিজেকে আত্নগোপন ব্যবস্থা করে সেখান থেকে সরে যেতে পেরেছিলো।এতো ভয়ংকর পরিস্থিতির কথা বলেও নম্রতার মন সে গলাতে পারেনি।সব শুনে নম্রতা মাই “বাবা আল্লাহ তোমাকে সুরক্ষিত করেছে তাই শুকরিয়া।সেখানে নম্রতার এতো কিসের জিদ??

সবাই অনেক বুঝানের পর যখন নম্রতা অনড়।ঠিক তখনই নম্রতা জানতে পারে দুদিন ধরে আসাদ বেড ছেড়ে ওঠা তো দূর একটু পানি পর্যন্ত খেতে পারছে না।নম্রতা বুঝতে পেরেছে বৃষ্টির প্রভাব।এবং তার প্রিয়তমের তাকে বর্তমানে খুব প্রয়োজন। এক মুহুর্ত অপেক্ষা না করে ছুটে যায় বাবুকে নিয়ে তার বাবার কাছে।

—–” কে বলেছিলো বৃষ্টির মধ্যে পাগলু হয়ে বাসা থেকে বের হতে?কে বলেছিলো?আমাকে না জ্বালালে ভাল লাগে না তোমাদের। এক তো ছেলেটা কাল রাত থেকে কান্না করে করে মাথা খাচ্ছে। আরেক তার বাপ। জ্বরে পুড়ে মরছে সাথে আমাকেও মারছে।আল্লাহ আমাকে একটু শান্তি দাও।

আসাদ মিটমিট করে হাসছে নম্রতার কথায়।সেটা দেখে নম্রতা একটা ঘুসি দিয়ে বলে,,
—–“এখন হাসা হচ্ছে। জানে যে তার অসুস্থতার কথা শুনলে থাকতে পারবো না।শয়তান একটা।

——“এই বাচ্চার মা!!বাচ্চাটা ঘুমালে আসো না আমার কাছে।কতদিন ধরে মন ভরে আদর করতে পারছি না।

—-“এহহহ!!আসছে উনি। ঘর ভর্তি মানুষ তার মধ্যে উনার রোমান্স পায়।কেমন লোক হ্যা কেমন লোক?আমি না৷ হয় একটু রাগ করেছি কই আমার রাগ ভাঙাবে তা না।সে উল্টো আমাকে হয়রান করেছে।বাজে লোক।বাজে বাবা।

——“এই একদম আমাকে বাজে বাবা বলবা না।আমি আমার বাবানের জন্যই সেদিন ঐ গুন্ডাদের সাথে না লড়ে নিজেকে সেভ রেখেছি।নাহলে কে পরোয়া করতো নিজের প্রানের?? বাদ দাও বউ!!!এবার একটু কাছে আসো!!!

—————————-
—–“ঐ কিরে এই জ্বরে দিয়েও তোদের রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা লাগবে??এবার তো একটু ওফ যা ভাই।বাচ্চাটা কাদছে তো ।মা বাবার কি আরো সম্পদের ভাগিদার লাগবে নাকি জিজ্ঞেস করছে।হাহাহাহা

দরজার বাহিরে থেকে আফসানার গলা শুনা যাচ্ছে। এদিকে রুমের ভেতর আসাদের বুকে শুয়ে আছে নম্রতা। আসাদ তাকে আরে শক্ত করে জরিয়ে ধরে বলে,,

—-“শালিকা রানি!!!কয়দিন পর মা হবা একটু এক্সপেরিয়েন্স করো।আর অনেকদিন পর বউকে কাছে পেয়েছি এতো তাড়াতাড়ি ছাড়ছি না। সরি।আপনি যাদের দরজায় নক করেছে তারা এই মুহুর্তে ব্যস্ত আছে।দয়া করে কিছুক্ষণ পর আবার চেষ্টা করুন।

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here