লাভনীতি -১৪

0
2111

#লাভনীতি
বিথি হাসান -১৪

৩৭.
বাসর ঘরে বেডে বসে বসে রাগে মাথা ফাটাচ্ছে আফসানা।তার ইচ্ছে করছে এখুনি গিয়ে অর্কের কলার ধরে রুমে আনতে।তবে নতুন বউ বিধায় সেই সুযোগ নেই।রাত প্রায় ১২টা। এখনো কি ঘরে আসার সময় হয়নি এই শয়তান টার।মানুষ প্রেম করে বিয়ে করলে নাকি বাসর ঘরে ডুকার জন্য মরিয়া হয়ে থাকে।বাসর রাত নিয়ে যত জল্পনা কল্পনা থাকে সেসব পূরন করার জন্য।ইচ্ছে থেকে যায় তবে সময় ফুরিয়ে যায় এসব দাম্পত্যিদের।কিন্তু এই বেটা অর্ক?

বেড থেকে নেমে আয়নার সামনে যায় আফসানা।রাগ দেখানোর কোন পোজটা তাকে মানায় সেটাই পর্যবেক্ষণ করতে থাকে।একবার নাক ফুলাচ্ছে তো একবার চোখ বড় বড় করছে।কোন টাই সুন্দর হচ্ছে না তাই তার রাগ আরো বেড়ে যাচ্ছে।
হঠাৎ করেই দরজা খোলার শব্দের প্রথমেই আফসানা ঘড়ির দিকে তাকায়।রাত প্রায় পনে একটা।তারপর দরজার দিকে তাকায়।

অর্ক ডুলতে ডুলতে তার দিকে তাকিয়ে আছে।আফসানা অর্কের দিকে তাকাতেই অর্ক দাত দেখিয়ে হেসে দেয়।যাতে আফসানা রাগে নাক ফুলে ওঠে।আফসানা তেড়ে অর্কের কাছে যায়।

—-“এই আমার রসমালাই।তুমি কি রাগ করেছো??

অর্কের এমন বাচ্চা কথায় আফসানা অবাক হয়।তারপর সন্দেহ করে কাছে যেতেই আফসানার সন্দেহ সত্যি হয়।অর্ক ড্রিংক করেছে।কিন্তু কেন?বাসর ঘরে দুই ধরনের পুরুষ মদ খেয়ে ডুকে।
১.যাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে হয়।
২.যারা নেশাখোর।

কিন্তু অর্কের সাথে এর মধ্যে কোনটাই হয়নি।তবে কেন এই লোক মদ গিলছে?

—-“কি গিলে এসেছেন????

—-“এই বউ!! রাগ দেখাচ্ছো আমার সাথে?তুমি রাগ করলে কত আকর্ষণীয় লাগে তোমাকে তুমি কি জানো?মন চায় খেয়ে ফেলি একদম।

অর্কের কথায় আফসানা রাগ ভুলে লজ্জায় রাঙা হয়ে যায়।বাসর ঘরে দাড়িয়ে জামাই যদি এমন রোমাঞ্চকর কথা বলে কার না লজ্জা লাগবে।তাও সে যদি আবার পছন্দের মানুষ হয়।আফসানা লজ্জায় লাল হয়ে যায়।তা দেখে অর্ক হো হো করো হেসে আফসানা কে আচমকা জরিয়ে ধরে ভার ছড়ে দেয়।আফসানা দুহাত দিয়ে অর্ককে জাপটে ধরে পরে যাওয়ার ভয়ে।তারপর কোন রকম বেডে নিয়ে গিয়ে শুয়িয়ে দেয়।অর্ককে বেডে ফেলতেই অর্ক আফসানা কে টান দিয়ে নিজের উপর নিয়ে আসে।

এতে করে আফসানা আরে কুঁকড়ে উঠে।সে এক পলকে অর্কের গলার দিকে তাকিয়ে থাকে।তার ইচ্ছে করছে সেখানে একটা কামড় দিতে।যাতে ফর্সা গলা লাল বর্ন ধারন করে আর আফসানা কে লজ্জা দেওয়ার শাস্তিও পায়।সে আর কিছু না ভেবে বসিয়েই দেয় কামড়।প্রায় এক মিনিট ধরে কামড় দিয়ে ধরে রাখে সে।অর্ক কিছু বলছে না শুধু আফসানার কোমড় দুহাতে ধরে রাখছে।
কিচ্ছুক্ষণ পর গলা ছেড়ে অর্কের দিকে তাকাতেই আফসানা দেখে অর্ক তার দিকে দুষ্টু হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছে।আফসানা লজ্জায় অন্য দিকে তাকায়।

—-“কি ব্যাপার? খেয়ে ফেলার কথা বললাম আমি আর খাচ্ছে তুমি???

অর্কের স্বাভাবিক কন্ঠ শুনে আফসানা ভরকে যায়।একটু আগে না অর্ক মাতলামো কন্ঠে কথা বলেছে?তবে এখন এতো স্বাভাবিক কন্ঠ? হাউ ইজ পসিবল?অর্কের মাতালামোর সুযোগই নিতে চেয়েছিলো আফসানা।মাতাল থাকা অবস্থায় যা ইচ্ছে করলেও বলতে পারে না বলে সে একটু বেহায়া হয়েছিলো।তবে অর্ক কি মাতাল ছিলো না?

—“বউয়ের থেকে আগে আদর পেতে হলে এমন একটু আধটু নাটক করতেই হয় মিসেস অর্ক!!

—“তার মানে তুমি এতক্ষণ নাটক করছিলে??তবে এই এলকোহলের গন্ধ কিসের???

—“এটা একটা পারফিউম যা অতিরিক্ত এলকোহল দিয়ে তৈরি। তাই প্রথম সবার কাছেই মদ মদ লাগে।যাই হোক কামড় যে দিয়েছেন এবার আদর করে দাও!!!ফাস্ট!!

—“আমার বয়েই গেছে।যাও গো টু হেল!!!আমার সাথে নাটক করা।আমাকে বোকা বানানো।আমাকে কষ্ট দেওয়া এসব কিছুর শাস্তি হলো তুমি আমাকে ছোঁবে না।ছোঁবে না মানে ছোঁবে না।হাত ও ধরতে পারবে না।ভিজা চুলের ঘ্রান ও নিতে পারবে না।কোমড় থেকে কাপড় সড়ে গিয়ে নগ্ন পেটের বাজ দেখা গেলেও তুমি ধরতে পারবে না।ঘরে নতুন বউ থাকার পর ও তাকে ছুয়ে দেখতে পারবে না। আর এটাই তোমার শাস্তি।ভালোবাসা কে ভালোবাসতে শিখো।অবহেলা তো সবাই করে।

আফসানার কথায় অর্ক গম্ভীর হাসি দেয়।তার এই হাসিতে আছে বহু চাওয়ার পর পাওয়া প্রশান্তি।আফসানা ও যে তাকে ভালোবাসে সেটা অর্ক জানে।হয়ত এখন রেগে আছে।তবে সেটা বেশিক্ষণ স্থায়ী হবে না।অর্ক রসিকতা করে বলে,

—-“বেদা মাছ চিনো তো রসমালাই? বেদা মাছ যা জেলের জালে ফেসে যাওয়ার পর বলে আগে ঝুড়িতে ভরুক তারপর দেখাচ্ছি মজা।তবে যখন তাকে ঝুরিতে ভরা হয় তখন তার ধাপড়া ধাপড়ি করা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না।তুমি সেই বেদা মাছ।আমাকে জালে আটকা পরে এখন বলছো তোমাকে ছুবো না?এটা কি হয় রসমালাই?

অর্কের কথায় আফসানা ভেতরে ভেতরে হেসে দেয়।তবে তা প্রকাশ করে না।মুখে একটা ভেংচি কেটে পাশ ফিরে শুয়ে পরে।অর্ক একটা জোরে শ্বাস ছেড়ে গাওয়া শুরু করে,,,

—“আখ খেতে ছাগল বন্দি,জলে বন্দি মাছ।
নারীর হাতে পুরুষ বন্দি গুড়ায় বারো মাছ।
সখি গো ওও আমার মন ভালা না।
সখি গো ওও আমার মন ভালা না।
সানার সাথে পিরিত কইরা সুখ পাইলাম না।
সখি গো ওও আমার মন ভালা না।

অন্য দিকে ফিরে মুখে বালিশ চেপে হেসে যাচ্ছে আফসানা।অর্ক জানে কিভাবে তার রসমালাই এর রাগ ভাঙাতে হয়।তাই সে অনুযায়ী কাজ চালু করছে।

—————————————
৩৮.
নম্রতা বসে আছে আসাদদের বাসার ছাদে।আসাদও বউ বিয়ে করে বাড়িতে নিয়ে এসেছে।
নম্রতার পরিক্ষার আর মাত্র একমাস বাকি।এই একমাস নম্রতা শশুরবাড়ি তে থাকবে।তারপর পরিক্ষা মামার বাড়ি দিয়ে আবার সোজা শশুরবাড়ি ব্যাক করবে।নম্রতা ভেবে রাখছে আজকে আসাদকে কিছু প্রশ্ন করবে।যা সঠিক জবাব আসাদ না দিলে আসাদকে সে দেখে ছাড়বে।
আসাদ বর্তমানে নিচে বাসার অফিস রুমে কিছু লোক আসছে তাদের সাথে মিটিংয়ে আছে।এই ফাকে নম্রতা ছাদে চলে আসছে।তাদের রুম আবার ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে ঠিকি তবে নম্রতা একা একা ভালো লাগছিলো না রুমে।যাওয়ার আগে আসাদ নম্রতা কে আবার ভয়ও দেখিয়ে গেছে।কানের একদম কাছে এসে বলেছে,

—–“আই ওয়েন্ট ইউ ফুল্লি নম্রতা!!!

এই কথাই নম্রতার মনে ঝড় তুলে দিয়েছে একদম।তার মন বলছে সে মনে হয় সত্যি একটু বেশি বেশি করছে।আসাদ সত্যি তাকে ভালোবাসে।নাহলে যদি এন্টিমেট হওয়াই আসাদের তাকে বিয়ে করার কারন হতো তবে সেটা সেই কবেই আসাদ তার সাথে জোর করে আদায় করে নিতো।তবে আসাদ তা করছে না।পুরো দুনিয়া আসাদের এক কথায় কাজ করতে প্রস্তুত সেখানে নম্রতা বারবার আসাদ কে গোল খায়িয়েছে।কিন্তু আসাদ কেন জোর করেনি?

পায়ের শব্দে নড়েচড়ে বসে নম্রতা। পিছন না ফিরেই সে জানে কে এসেছে।তার গায়ের ঘ্রান এতোদিনে চেনা হয়ে গেছে নম্রতার।
—-“চন্দ্র বিলাসী!!! আমার বাসর রাত খারাপ করার প্লেন এটা??

আসাদের কথায় নম্রতা একটু হাসে তবে দেখা যাওয়ার মত না।সে এই প্রশ্নের কোন জবাব না দিয়ে বলে,,

—-“আমাকে কেন বিয়ে করেছেন তাহলে আসাদ???

নম্রতার কথায় আসাদ ধাপ করে নম্রতার পাশের চেয়ারে বসে পরে।আর একটা শ্বাস ছেড়ে বলে,,,
—-বিয়ের আজ ৩মাস পরে হঠাৎ এই প্রশ্ন??

—-“হ্যা।আগে করিনি।কারন আমার এই বিয়ে নিয়ে কোন ইন্টারেস্ট ছিলো না।আপনাকে একান্তই আমার করার কোন মতলব ছিলো না।এই বাড়ির একমাত্র বউ হওয়ার কোন স্বপ্ন ছিলো না।

—-“তবে এখন?এখন এসব কিছু আছে???ইন্টারেস্ট হলো তাহলে???

—-“পিন না মেরে জবাব দিন।বিয়ে করেছেন কেন?যেখানে আপনার বাবাই রাজি ছিলো না এই বিয়েতে।সেখানে আমার মত মধ্যবিত্ত শ্রেণির মেয়েকে কেন বিয়ে করেছেন?আমি কি আপনাকে পাওয়ার যোগ্যতা রাখি?আপনি কি সবসময়ই আমার থেকে যাবেন?মন ভরে গেলে ছুড়ে ফেলে দিবেন না এমন কোন গ্যারান্টি কি আছে?

——“কি বলেছে তোকে সমাজ?সমাজের কথায় তুই আমাকে ভালোবাসতে চাস না।আমার ভালোবাসা বুঝছ না?মন ভরার শখ থাকলে তোকে বিয়ে করতাম না।আর বিয়ে ছাড়াও না মন ভরা যায়।মেয়ের অভাব পরেনি আমার।তোকে ভালোবাসি বলে তোর দাম ভেরে গেছে।হাজার হাজার মেয়ে আমাকে বিছানায় পাওয়ার জন্য পাগল ছিলো এবং এখনো আছে।তোকে সমাজের সামনে বউ হিসেবে পরিচয় দিয়েছি তারপর ও তোর কিসের এতো ভয়??কেন তুই সাথে এমন করিস???গ্যারান্টি লাগবে তোর ছুড়ে ফেলে না দেওয়ার গ্যারান্টি?? আমি দিবো তোকে সেই গ্যারান্টি!!!
জলজ্যান্ত গ্যারান্টি।

নম্রতার হাত টানতে টানতে রুমে নিয়ে যাচ্ছে আসাদ।নম্রতা আসাদের কথা এতক্ষণ ভয় পেলেও এখন অসম্ভব কাপছে।আসাদ যদি তাকে মারে??এসব নেতা ফেতাদের তো আবার ভরসা নেই। বউও পিটাতে পারে।তাইতো এতো হেট করে নম্রতা এদের।কিন্তু তার জামাই তাকে একেবারে মেরে ফেলবে না তো আবার?ছোট থেকেই মাইর কে অনেক ভয় পায় নম্রতা। প্রশ্নের জবাব নম্রতা পেয়ে গেছে আসাদের রাগ দেখেই।কোন মানুষ রেগে থাকলে মিথ্যে বলে না।রাগের চোটে সত্যি বলেই দেয়।
আসাদের মনের কথা গুলোও নম্রতা আজ আসাদের রাগের কারনে জানতে পেরেছে।কিন্তু এই লোক কি গ্যারান্টি দিবে তাকে?আবার তাকে জেলে দিবে না তো?পুলিশকে নম্রতা এমনে তে ভয় পায় না।তবে আজকে পাচ্ছে।হায় আল্লাহ এবার কি তবে পুলিশই হবে জলজ্যান্ত গ্যারান্টি???

চলবে,
সরি দেরি করার জন্য। বিয়ের আমেজ এখনো কাটেনি।তারপর ও দিলাম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here