লাভনীতি-০৬

0
2158

#লাভনীতি
বিথি হাসান-০৬

১৮.
বিরাট বড় হল রুমের আলিশান একজনের সোফায় আয়েশ করে বসে আছে আসাদ।হাতে তার ফোন।কিন্তু মনোযোগ সব সামনে।কারন,

সারা হল রুম মানুষের সমাগমে ভরপুর।চার সেট সোফার সবগুলোই পূর্ন।আসাদের পাশের সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে তফাজ্জল করিম।যার মুখে বর্তমানে গম্ভীরভাব কাজ করছে।তার ডান পাশের সোফায় কিনারে বসেছে নম্রতার বাবা আহমেদ শরীফ।তার পাশে আফসানার বাবা শাহপরান সাহেব।আহমেদ শরীফ সাহেব শান্ত থাকলেও শাহপরান সাহেবের মুখ ফুলে ফেপে রয়েছে।মনে হচ্ছে আসাদ যদি রাজনীতি তে না থাকত তবে এখনই সবকটাকে সে ১০দিনের জন্য রিমান্ডে নিতো।যা টাকা পয়সা লাগত সে দিতো।তাতে কোন সন্দেহ ছিলো না। তার পাশেই তার বড় ছেলে তামিম।তামিমের এসবে কোন খেয়ালই নেই সে সামনের সোফায় বসা ভিতু মেয়েটা কে দেখে যাচ্ছে। যে বর্তমানে প্রচুর পরিমানে হাত কচলাচ্ছে।

তার পাশের সোফায় বসে আছে অর্ক।অর্ক সামান্য চিল মুডে আছে।সে নিজের উপর নিজেই অবাক হচ্ছে।বোনের বিপদে সে কিভাবে চিল মুডে থাকতে পারে?কিন্তু তার বুকের বা পাশ থেকে বার বার বলছে,তোর চিল করা উচিত চিল কর।যা হবে ভালো জন্য হবে,
অর্ক নম্রতা কে নেওয়ার সময় আসাদের ব্যাপারে যেসব ভেবেছিলো সব ঠিক হলেও।আসাদ যে নম্রতা কে বিয়ে করবে এটা সে ভাবতেও পারেনি।বিয়ে যেহেতু করেছে তাহলে আর কিসের চিন্তা। এসব ভেবেই তার চিল চিল লাগছে।

আসাদের ঠিক সামনে হলুদ শাড়ি পরা মেয়েটা দুহাত মুচরে আকুপাকু করছে।দেখেই বুঝা যাচ্ছে ভিষন ভয়ে আছে।তার পাশেই আসাদের মা মিসেস লায়লা বেগম মেয়েটার মাথায় হাত ভুলিয়ে দিচ্ছেন।

পরিস্থিতি বরাবরই থমথমে।এমন পরিস্থিতি অন্তত আসাদ আশা করেনি।চিল্লাবে চিৎকার করবে পরে এমনেতেই শান্ত হয়ে যাবে এটা ছিলো তার পরিকল্পনা। কিন্তু হচ্ছে টা কি?আচ্ছা তার শশুর মশাই কোন রকম তাদের ভয় পাচ্ছে না তো?ভাবতেই সে আহমেদ শরিফের দিকে একটু ভালো করে তাকায়।সে বর্তমানে সামনে রাখা জলের গ্লাসের দিকে তাকিয়ে আছে।আসাদের মনে হলো হয়ত তিনি জলটা খেতে চাচ্ছে তবে লজ্জায় খাচ্ছে না।তাই সেই ওঠে।গ্লাসটা আহমেদ শরীফের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন,

—“বাবা। আপনি আগে পানিটা খান!!!

আসাদের মুখে বাবা শুনে উপস্থিত সকলেই নজর তুলে তাকায় তার দিকে।আহমেদ শরীফ বুকটা ধুক করে ওঠে এবং সুন্দর একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন তিনি।সবাইকে তাকাতে দেখে আসাদ এতে একটু বিচলিত না হয়ে মুচকি হাসে।এবং তার বাবার দিকে তাকিয়ে বলে,

—“কি ব্যাপার বাবা!! আমার শশুর কে বাবা বলায় তোমার কোন রকম হিংসে হচ্ছে না তো?

—“তোর শশুর। তোর মুখ।যা ইচ্ছে ডাক আমার কি?

তফাজ্জল করিমের এমন নেতিবাচক জবাবে আহমেদ শরীফ আসাদের হাত থেকে গ্লাসটা নিয়ে সামান্য পানি পান করে।তারপর তা আবার জায়গার টা জায়গা রেখে দেয় নিজ দায়িত্বে। আসাদ এবার দাড়িয়ে সবার উদ্দেশ্য বলে,

—“আই থিঙ্ক কারো কিছু বলার নেই এই বিষয়ে।সো আমি আমার বউকে নিয়ে চলে যাচ্ছি। বায় এভ্রিওয়ান।

আসাদ ওঠতে নিলেই তফাজ্জল করিম বলে ওঠে,

—-“তুমি কি একটু বেশি নির্লজ্জ হয়ে যাচ্ছো না দিন দিন?

তফাজ্জল করিমের কথা শুনে আসাদ একটা টেডি হাসি দিয়ে নম্রতার দিকে তাকিয়ে আবার নিজের সিটে বসে পরে।নম্রতা আসাদের হাসি দেখে মনে মনে বলে,
—-“নির্লজ্জ হয়ে যাচ্ছো?হয়ে যাচ্ছো?এখনো হয়নি?এই ছেলেটা যে কি পরিমান নির্লজ্জ তা আমাকে জিজ্ঞেস করো।হায় আল্লাহ!! তুমি ভালোয় ভালোয় আমাকে এখান থেকে উদ্ধার করো।তাহলে আমি বাড়িতে গিয়েই মসজিদে ১০টা টাকা দিবো।গড প্রমিস আল্লাহ!!!

নম্রতা উপরের দিকে তাকিয়ে চোখ মুখ খিচে বিড়বিড় করে ওঠে।নম্রতার এমন কাজে আসাদের মা মিসেস লায়লা বেগম বললেন,

—“এই মেয়ে?এই বাবু,দেখ তোর বউ কেমন যেন করছে!!!

আসাদ দ্রুত নম্রতাকে দাড় করিয়ে হাত ধরে।আর পিছনে ঘুরে সবার উদ্দেশ্য বলে,

—-“আমি আর এই টপিক মানে আমাদের বিয়ের নিয়ে আর একটা কথা ও বলতে চাই না।আপনারা এখন থাকুন।খাবার দাবার করে তারপর যাবেন।

বলেই আসাদ নম্রতা কে নিয়ে হাটা ধরলেই শাহপরান সাহেব গর্জে ওঠে,

—–“আমাদের মেয়েকে আমরা নিতে এসেছি সম্পাদক সাহেব।আপনি দয়া করে আমাদের মেয়েকে ফিরিয়ে দিন।

শাহপরান সাহেবের কথায় আসাদ সামান্য হেসে বলে,
—-“আপনাদের মেয়ে ছিলো।এখন সে আমার বউ। আর আমার বউকে আমার থেকে কে নেয় তাও দেখে নিবো আমি।রাজনীতি চিনেন তো?এখানে বুদ্ধির জয় হয়।এখানে পেচের শেষ নেই।কোন রকম চালাকি লাইক,,,,,,মামলা করা,পুলিশের কাছে যাওয়া,বড় কারো সাহায্য নেওয়া।এমন বেহুদা কাজ করার কথা মাথাও আনবেন না।তাতে পরিনতি আপনাদেরই খারাপ হবে।আশা করি বুঝতে পারছেন।

বলেই আসাদ নম্রতাকে নিয়ে দ্রুত চলে যায়। আসাদের কথায় শাহপরান সাহেব কিছুটা দমে যায়।আসলেই আসাদের বিরুদ্ধে যাওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়।শাহপরান সাহেবের এমন দমে যাওয়া চেহারা দেখে আহমেদ শরীফের হাসি পেলো।সে কোন মতে হাসিটা চেপে গেলে।এ ভরা সভায় হাসলে ব্যাপারটা অন্য রকম লাগবে।আসাদের ব্যাপারে যা সিদ্ধান্ত নেওয়া সে নিয়ে ফেলেছে।এখানে আর কিছু বলার নেই বলে সে ওঠে দাড়ালো।

—————————–
১৯.
রুমে নম্রতা বেডের ওপর পা ঝুলিয়ে বসে আছে।চোখে পানি টলমলানি। সে এতোটাই নতযাতু হয়ে বসে আছে যে আসাদের সন্দেহ হচ্ছে। এখানে আদো কোন মানুষ আছে নাকি তাকে ছাড়া?

আসাদ গিয়ে নম্রতার পাশে বসে।নম্রতার মাথায় দেওয়া বিরাট ঘোমটা টা টান দিয়ে ফেলে দেয়।সে জানে নম্রতা ইচ্ছে করে এতো বড় ঘোমটা দিয়েছে।ঘোমটা পরে যেতেই নম্রতা লাফিয়ে ওঠে।সে আসলেই ভয় পেয়ে গিয়েছিলো।ভয়ে সামান্য কেপে কেপে ওঠছে।সে আবার ঘোমটা দিতে গেলেই আসাদ হাত ধরে ফেলে।আসাদের হাত ধরতেই নম্রতার মোড়ামুড়ি কয়েকগুন বৃদ্ধি পেয়ে যায়।নম্রতার এই ভয়ই আসাদের ভালো লাগে।খুব ভালো লাগে।

নম্রতা মনে মনে আল্লাহর কাছে মাফ চাচ্ছে। কারন তার মনে হচ্ছে,,,, হয়ত সে কিপ্টামি করে দান করার কথা বলেছে বলেই আল্লাহ তার দোয়া কবুল করেনি।আর নেতাজি কে দেখো।উনাকে এতো খুশি লাগছে কেন?আর উনি কেন আমাকে বিয়ে করলেন তাই তো জানি না এখনো!!!

আসাদের মনের প্রশান্তি বয়ে যাচ্ছে।প্রেমে তো সেই কবেই পরেছে এই লাল সুন্দরীর।আজকে সেই প্রেমে হারাবে ও।এতো দিনের যেই বোঝা মাথায় ছিলো তার তা ও আজ নেমে যাবে।নম্রতাহহহহহ।মেয়েটা শুধু এখন তার। একমাত্র তারই।কেউ আর তার অধিকার নিয়ে আসাদের সামনে দাড়াতে পারবে না।তামিম ছেলেটা কে আসাদ কখনো দেখেনি।তাই ভেবেছে হয়তো নম্রতার ভালোবাসার মানুষ হবে।আজকে সবার সাথে আসতে দেখে বুঝেছে।নম্রতার কাজিন।
সে যাই হোক,যা করার তে করেই ফেলেছে।এখন আর কিছু চিন্তা করতে হবে।জীবনটা এতো সহজ কেন?

—————————-
২০.
জীবন খুব সহজ মনে হচ্ছে আসাদের কাছে।কিন্তু এই একই জীবন তামিমের কাছে দুর্বিষহ লাগছে।ছাদের কোনায় চুপচাপ দাড়িয়ে আছে সে।আকাশে চাদ নেই।তাই পরিবেশটা সুন্দর হয়েও হচ্ছে না।ঠিক তার জীবনের মতো।
জীবনে এই প্রথম কোন মেয়েকে ভালো লাগল।আর সে কি না দেখতে না দেখতেই অন্যের বউ হয়ে গেলো।তারপর ও বিয়েটা যদি মেয়েটার মতামতে হতো।তবে না হয় কিছু করত না।মেয়েটা কে জোর করে বিয়ে করেছে।তামিম খুব শান্ত স্বভাবের।তার রাগ তার কষ্ট,তার খুশি কেউ বুঝে না।সে কাউকে বুঝতেই দেয়নি।যেমন আজকে,

নম্রতা কে তুলে নিয়ে যাওয়ার সামান্য কিছু পরই আফসানা থেকে আসাদের কথা শুনে তামিম কিছুটা আশাহত হয়।আর যাইহোক,একজন দেশের এতো বড় নাম করা রাজনীতিবীদের সাথে টক্কর নেওয়া যায় না।এটা মুখের কথা না।আর এমনেতে আসাদের জোর সম্পর্কে আফসানা যতটুকু শুনেঢ়ে তাতে মনে হচ্ছে নম্রতার আশা করা বৃথা।
কিন্তু যখন আসাদের বাবা তফাজ্জল করিম ফোন করে বললেন তিনি তাদের জন্য গাড়ি পাঠাচ্ছেন আসাদের বাড়ি যেতে তখন মনে হয় তামিমের মনে সুখের প্রদীপ জ্বলে ওঠে।সে ঠিক করেছিলো।এবার নম্রতা কে পেলেই নিজের করে নিবে।আর কারো হতে দিবে না।
তবে,এই বাড়িতে এসে পরিস্থিতি পরক্ষ করে তামিম যতটুকু বুঝতে পারে।আসাদের বাবা তফাজ্জল করিম ছেলেকে অসম্ভব মানে।যার ফলে হয়ত অনিচ্ছায় সত্বেও নম্রতা কে গ্রহণ করেছে সে।

ফিরে আসার সময় ফুফার মুখে হাসিটা বলে দিচ্ছিল সেও সম্মত এই বিয়েতে।তাই নম্রতা কে পাওয়ার চান্স বরাবরই শূন্য।
এদিকে আফসানর যেন বিশ্বাস হচ্ছে না এতো অল্প সময়ে কি সব হয়ে গেলো?মাত্রই না সে আর নম্রতা সেজে গুজে বেড়াতে গিয়েছিলো?তবে এখন নম্রতা তার সাথে নেই কেন?সে বুক ভরা কষ্ট নিয়ে ছাদে গিয়ে দেখে তার ভাই অন্ধকারে দাড়িয়ে আছে।কি হলো?তার ভাই আবার কিসের দুঃখবিলাস করছে এই অন্ধকারে ? সরু চোখ নিয়ে ভাইয়ের কাধে গাত রাখে আফসানা, চমকে ওঠে তামিম।এক মুহূর্তের জন্য সে ভেবেছিলো নম্রতা বুঝি তার পিছনে দাড়িয়ে তার দুঃখবিলাস দেখতে এসেছে।
তবে না পিছনে ফিরে আফসানা কে দেখে তার মনক্ষুন্ন হয়।মুখ ফুসকে একটা দ্বীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে।
——“ওহ তুই!!!

—-“কাকে প্রত্যাশা করেছিলে ভাই?

—-“কাকে আবার তোর মতই এক রাক্ষসী কে।আচ্ছা রাক্ষসী একটা কথা বলতো??

রাক্ষসী বলায় আফসানার নাক রাগে লাল হয়ে যায়।তবে অন্ধকারে তামিম সেটা দেখে না।সে বলেই যাচ্ছে।
—-“তুই আবার নম্রতার মতো কারো সাথে লটরপটর করছিস নাতো?

—–“ভাই নম্রতা এমন কিছুই করেনি।নেতাদের তো তুই চিনিসই। যাকে ভালো লাগবে তাকেই তুলে নিয়ে যাবে।তবে আমার ভয় হচ্ছে নম্রতা কে যদি ঐ নেতাজি আবার ছেড়ে দেয়?এদের তো চরিত্রে দোষ।

—-“ভয় পাস না।এমন কিছুই হবে না আমাদের নম্রতার সাথে।

—–“আর যদি হয়???

—-” তবে আমি এর শেষ দেখে সারবো।

আফসানা তামিমের পিঠে হাত দিয়ে হাতের ওপর মাথা রাখে।তামিম এক হাত দিয়ে আফসানর গলা জরিয়ে ধরে।আর সাথে নিজেদের কথায় আবারো মগ্ন হয়ে পরে।আফসানা ইচ্ছে করে নম্রতার টপিক টেনে এনেছে তামিমের কথায়।না হয় তার ভাই কায়দা করে তার সম্পর্কে সব জেনে যেত।আর তার লাভ স্টোরি শুরু হওয়ার আগেই সে তার ভাইকে কিছু জানাতে চায় না।অর্ককে তারও ভালো লাগত।আর এখন অর্কের পজেটিভ সাইন পেয়ে তার মনের মধ্যে লাড্ডু ফুটছে।সে মনে মনে বলে ওঠে,

—-“আল্লাহ এই যাত্রায় বাচায় দেওয়ার জন্য অনেক শুকরিয়া। ভাইয়া জানলে পরিবার জানতে একটু সময় ও লাগত না।দুনিয়ার সব বড় ভাই বুঝি এমন ডেঞ্জারাস হয়???কি জানি হয়ত হয়!!!!

চলবে,

কিছুদিনের জন্য আউটওফ টাউন যাচ্ছি।সো,গল্প না ও দিলে প্লিজ কেউ মন খারাপ করবেন না।আর যাদের কাছে গল্পটা অনেক ভালো লাগে তাদের কে বলছি, আপনারা আমার জন্য অনেক দোয়া করবেন। আপনাদের জন্যই তাড়াতাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।ধন্যবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here