লাভনীতি -০৭

0
1992

#লাভনীতি
বিথি হাসান-০৭

২১.
মানুষ যা চায় তাই কি সে পায়?যদি কেউ মনে করে আমি যা চাই বিধাতা আমাকে তাই দিবে।তাহলে সে ভুলের মধ্যে রয়েছে।আসলে মানুষ যা পরিকল্পনা করে তার জীবন নিয়ে তার অনেক কিছুই তার পরিকল্পনার সাথে বেমিল রয়ে যায়।আমরা যা চাই তা কখনোই পাই না।আর যা চাই না তাই পেয়ে যাই।

আসাদের মতে,সে নম্রতা কে পেয়ে গেছে।বিয়ের মাধ্যমে সে নম্রতার উপর সম্পূর্ণ অধিকার পাবে।বিয়ে মানেই মিলন!!!আদো বিয়ে মানে মিলন?কিসের মিলন?শুধুই দৈহিক? নাকি অন্তরের ও?না জানি আসাদ কোনটা বুঝে?

আসাদ আর নম্রতার বিয়ে হয়েছে আজ বিশদিন।এই বিশদিনে আসাদ নম্রতার সাথে বিন্দু পরিমান খারাপ আচরন করেনি।কেন কিছু নিয়েও না।নম্রতার সাথে রাগ করার মতো অনেক কিছুই নম্রতা করেছে আসাদের সাথে।তাও কিছু বলছে না সে তাকে।আসাদের মতে,বউ তো তারই।বউ তো পালিয়ে যাচ্ছে না।বিয়ে হয়েছে যেহেতু ভালো নম্রতা কে বাসতেই হবে।
কিন্তু সে তো ভালোবাসে।আর এখন তো বউও।নম্রতা কে তার আপন করতে ইচ্ছে করে।নিজের উপর কন্ট্রোল রাখতে পারছে না।ভালোবাসায় যে ধৈর্য প্রয়োজন আসাদ তা বেমালুম ভুলে গেছে।

আসাদের নম্রতার ঘনিষ্ঠ হতে গেলে দেখা যায় নম্রতার পাগলামি।এটা অবশ্য নম্রতার পাগলামি নয় এটা নম্রতার একটা পরিকল্পনা। সে পরিকল্পনা করেছে এমন যে সে এমন এমন কাজ করবে যে আসাদ তাকে ছেড়ে দিবে।সে পারবে না এমন মানুষের সাথে সংসার করতে যে তার মতামত কে পরোয়া করে না।

——————————
২২.
একদিন আসাদ রাত ১২টায় বাসায় আসে।আসাদ সবসময় ১২টা বা ১টায় বাজেই বাসায় আসে।আাসদের মা মিসেস লায়লা ছেলের জন্য অপেক্ষা করতে করতে কখনো কখনো টেবিলেই ঘুমিয়ে যান।তফাজ্জল করিমের হার্টে সমস্যা থাকায় সে খেয়েই দ্রুত ঘুমিয়ে পরেন।

আসাদের মাকে রুমে পাঠিয়ে নম্রতাই টেবিলে বসে আসাদের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।আসাদ বাসায় আসতেই নম্রতা কে টেবিলে খাবার নিয়ে অপেক্ষা করতে দেখে সে মনে মনে প্রচুর খুশি হয়।তার খুশি চোখে মুখে ফুটে ওঠে।নম্রতা ব্যাপারটা ভালো করেই খেয়াল করে।সে আসাদের অবর্তমানে একটা ভেংচি কাটে।
আসাদ ফ্রেশ হয়ে টেবিলে আসে।নম্রতা ভালো মতোই তাকে খাবার সার্ভ করে।মনের আনন্দে দ্রুত খাবার খেয়ে শেষ করে রুমে যায় আসাদ।একটু পর নম্রতা রুমে আসতেই আসাদ টান মেরে তাকে তার বুকে নিয়ে আসে।আর দরজা লক করে দেয়।নম্রতা তাকে একটু নিবিড় ভাবে জরিয়ে ধরতেই নম্রতা কাপাকাপ দেখে কে!!!!

কাপতে কাপতে সে একসময় আসাদের বুকেই সেন্সলেস হয়ে পরে।আসাদ প্রথমে ঘাবড়ে গেলেও নম্রতার চালাকি সে ঠিক বুঝতে পারে।সে নম্রতার গালে হাত রেখে কয়বার ধীরে ধীরে চাপড়া দিয়ে ডাকে।

—-“এই নম্র?এই,,,,,,,,

নাহ কোন রেস্পন্স নাই।যদি কেউ সত্যিই জ্ঞান হারায় তবে তার চোখের পাতা স্থীর থাকে না।নড়াচড়ায় ব্যস্ত থাকে।তবে নম্রতার চোখের পাতা একদম স্থীর।দেখেই বুঝা যায় ইচ্ছে করে বুঝে রাখছে।আসাদের মুখ দিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে।কোন রকম কোলে তুলে আসাদ তাকে বেডে শুয়ে দেয়।নিজে বেলকনিতে চলে যায়

আসাদ নম্রতাকে তার জন্য খাবার টেবিলে অপেক্ষা করতে দেখে ভেবেছিলো সে হয়ত আজকে থেকে মানিয়ে নিয়েছে তার সাথে।স্বাভাবিক ভাবেই সে হয়ত সংসারের মর্ম বুঝতে পেরে গেছে।তবে নম্রতার এমন আচরনে আসাদ কিছুটা আশাহত হয়।

এরপর যক্ষনি আসাদ নম্রতার ক্লোজ হয়েছে নম্রতা এমন কিছু না কিছু পাগলামি করেছে।এর মধ্যে নম্রতার আরেক পেচাল শুরু হলো,সে পরতে চায়।
তার পড়ালেখা কমপ্লিট করতে চায়।যেহেতু তার কলেজ লাইফের প্রথম বর্ষ আফসানার কলেজে গেছে।তাই সে পরের বর্ষটা ও সেই কলেজে শেষ করতে চায়।তাই সে আফসানার বাসায় থাকতে চায়।একূিন তার শশুর ও ফোন দিয়ে তাকে এর জন্য অনুনয় করেছে।আসাদের সাফ মানা পরতে হলে এখান থেকে পরতে হবে।এমনে সে নম্রতার ভালোবাসা পাচ্ছে না।তার মধ্যে আবার দূরত্ব ভারলে কেমন হবে?একসময় আসাদের প্রচুর রাগ ওঠে গেলো মাথায়।সে রাগে নম্রতা কে তার মামা বাড়ি দিয়ে আসল।

——–এর জন্য নম্রতা বেজায় খুশি।আসাদের হাত থেকে তো বাচতে পারছে।নেতাজি কে তার একটু ও ভরসা হতো না।যখন তখন কাছে আসতে চায়।সে নেতাজি কে প্রচুর ভয় পায়।সরাসরি না করার সাহস তার নেই।তার নেতাজি তার এসব চালাকি ধরতে পারে না বলে সে মনে মনে আসাদ কে প্রচুর বোকা ভাবে।এমনকি সে আসাদের পেশা নিয়ে সন্দেহ আছে।তার মতে,

—–“এতো বোকা হয়েও কি কেউ রাজনীতি তে নিজের জায়গা ধরে রাখতে পারে?আসাদ প্রচুর আহাম্মক। সে তাকে ইন্টেলিজেন্স ভেবেছিলো।কিন্তু সে সেটা নয়!!!!

নম্রতার বিয়ের পরেও যে মামা বাড়ি থাকছে এটা নিয়ে নম্রতার মামা শাহপরান সাহেবের ও তার ফেমেলির কোন সমস্যা নেই।তারা জানে নম্রতা হয়ত তার আচরনে এমন কিছু করেছে যাতে আসাদের মত মানুষ তাকে এখানে রেখে যেতে বাধ্য হয়েছে।আর লেখাপড়া নিয়ে নম্রতার বাবা মা ও তাদের বুঝিয়ে বলেছে।

—————————–
২৩.
আফসানার মনটা আজকে খারাপ।অর্ক আসবে আসবে করেও আসছে না।কেমন যেন ছেলেটা।প্রেমের শুরুতেই এতো অবহেলা? না জানি ভবিষ্যতে কি হয়?সে কি আদো পাবে?নাকি তার ভাইয়ের মত ভালোই বেসে যাবে।কি জানি নম্রতারা দুভাইবোন তাদের ভাইবোন কে নাকের ঢগায় ঘাম ছুটিয়ে দিয়েছে।তামিম যে নম্রতা কে পছন্দ করেছে তা সে সেইদিন রাতে ছাদেই জানতে পারে।পরে ভাইয়ের জন্য প্রচুর খারাপ লাগে।

এতো কাছে থেকেও ভাই তার পছন্দের মানুষ কে পেলো না।সে পাবে তো?নম্রতার বিয়ের ১০দিন পরেই তামিম লন্ডন ফেরত যায়।
নম্রতার কথায় ভাবনার ছেদ পরে আফসানার।সে অদ্ভুত চোখে তাকায় নম্রতার দিকে।কারন নম্রতা একটু আগে একটা অবাক করা কথাই বলেছে তাকে।যাতে সে অবাক না হয়ে পারল না।

—–“তুই বল তো আফসানা!!!নেতা মানুষ এতো খারাপ হয় কিভাবে?আমি এসব নেতাদের দেখতে পারতাম না কারন এরা মানুষের ধনসম্পদ লুটেপুটে খায়।এবং অসংখ্য মিথ্যে কথা বলে।রাজনীতি মানেই বাটপারি।কিন্তু এই বেটা বাবু,,,,,,,,আমাল বাবু,,,,(ব্যাঙ্গ ও করে)কি করে জানিস?খালি মেয়ে মানুষের পিছন পিছন থাকার কি আছে বলতো?

নম্রতার কথায় আফসানা মনটা ধক করে ওঠে।সে অবাক হয়ে যায়।সে যেই ভয়টা পেয়েছিলো সেটা হচ্ছে না তো?সে তৎক্ষনাৎ নম্রতা কে জিজ্ঞেস করে,

—-“তুই কি সত্যি ভাইয়া কে অন্য মেয়েদের পিছনে দেখেছিস?আই মিন এমন কিছু? কোন মেয়ের পিছনে রে?

—-“কার আবার আমার?আমি কি মেয়ে নই?নেতা ফেতা মানুষ সারাদিন বাসায় কি?খালি দেখবি আমার সাথে সাথে চিপকে আছে।একটু এটিটিউড নিয়ে থাকবে তা না!!!

ফুস করে একটা দ্বীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে আফসানার ওষ্ঠদ্বয় দিয়ে।সে যা ভেবেছে তা নয়।তাতে তার মন থেকে এতোক্ষণের চিন্তা টা দূর হয়।এবং নম্রতার পরের কথা গুলে শুনে একটু শান্তি পায়।মুচকি হেসে নম্রতা বলে,

—–“মানুষ বউয়ের পিছন পিছন থাকবে না তো কি শালির পিছে থাকবে গাধী?এতো সুন্দরী বউ তার যদি কেউ নিয়ে যায়?

—-“হাহ।তুই বুঝবি না রে সানা।আমি ঐ বেটার সব বুঝে গেছি।একমাস সংসার করেছি তার সাথে। আমি জানি।আমি নিজেকে কত শত পরিকল্পনা করে বাচিয়ে রেখেছি তুই তো জানিস না।আর ঐ বোকারাম সেটা বুঝলই না।বুদ্ধি আছে বলেই আই’ম স্টিল ভার্জিন বেবস!!!

—-“এই নম্রু?কি বলছিস তুই এসব?মানে কি? তুই এখনো ভার্জিন মানে কি?

আফসানর কথা থতমত খেয়ে যায় নম্রতা।সে এই মেয়েটার সাথে কথা বললে ছড়ছড় করে সব বলে দেয়।এটা একটা খারাপ অভ্যাস।পরিবর্তন করতে হবে।স্বামী স্ত্রীর মধ্যকার কথা কাউকে এভাবে বলা নিষেধ। মা বলেছিলো অনেক আগে।সে একটু ভেবে বলে,

—“আই মিন,তুই তো জানিস নেতাদের স্বভাব।ঘরে বউ রেখে অন্য মেয়েদের নিয়ে মঝে থাকে।তাই আমি একটু ভাবে থাকি।অনেক কলাকৌশল করে এই ভাব বজায় রাখতে হয়।যেটা আমি প্রতিদিন পাল্টিয়ে পাল্টিয়ে অবলম্বন করি।একবার বউকে ভাগে পেলে যে এদের কে আর হাত করা যায় না।তুই ওসব বুঝবি না।ঐ নেতাজির সাথে আমি যা করেছি সেই বুঝেনি।তুই তো দুধের শিশু।

নম্রতার কেন যেন নিজের বুদ্ধির প্রশংসা নিজের করতে ইচ্ছে করছে।কত বুদ্ধিমতি সে।সে বাটপারের উপর সিটারী করেছে।কিন্তু নম্রতার এই গর্ববোধ বেশিক্ষণ টিকলো না।নম্রতাকে নিজের প্রশংসা করতে দেখে আফসানার প্রচুর হাসি পায়।আফসানা অট্টহাসি দিয়ে বলে,

—-“তোমার নেতাজি আমাকে আজকে ফোন করে কি বলেছে জানো?বলেছে,
এই শালিকা,তোমার স্টুপিড বোনকে বলে দিবে সে নিজেকে যত ইনটেলিজেন্ট মনে করেছে।সে ততটা নয়।একদিন আমি এমন চাল চালবো তখন আর তার মাথায় কোন বুদ্ধিই আসবে না।

আফসানার কথায় নম্রতা একটা বড়সর ঢোক গিলল।কি বলে কি এই সানা।নেতাজি তার চালাকি বুঝে ফেলেছে?তাহলে কেন সে তার সাথে কিছু করল না?সে যতটা খারাপ ভাবছে আসাদ কি ততটা খারাপ নয় তাহলে?

—-“আমার কথা কোন রকম ভাবছো নাতো?

হঠাৎ ভারী পুরুষালী কথায় কেপে ওঠে নম্রতা। দরজার দিকে তাকাতেই চোখ বড় বড় হয়ে যায়।উনি এখানে কি করছে?তবে কি তার চালাকি তার উপরই ভারী পরবে?আজকে কি তাহলে সে এই লোকটা থেকে নিজেকে বাচাতে পারবে না?কোন রকমই পারবে না?হায় আল্লাহ!!!!

চলবে,
এক্সট্রিমলি সরি মাই ডিয়ার রিডার্স!!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here