লাভনীতি -০৫

0
2164

#লাভনীতি
বিথি হাসান -০৫

১৫.
প্রচুর মেহমান এসেছে আজকে আফসানাদের বাসায়।কারনটা খুবই খুশির।আফসানার ভাই তামিম বিডি এসেছে আজকে।তাই আত্মীয় সজন এসেছে দেখতে।নম্রতার মা বাবা ও বড় ভাই অর্ক ও এসেছে।নম্রতা তার পরিবার কে দেখে অনেক মুডে আছে।আমরা এমনই।একা একা কোথায় গেলে একটা লজ্জা বা ভয়ে থাকি।তবে মা সাথে থাকলে সেই ভয় টা আর থাকে না।আগে ভাবতাম ছোট বলে হয়ত এমনটা হত।কিন্তু বড় হবার পরও।একা কোথায় গেলে ভয়ে লজ্জায় কারো সাথে ভালো করে কথাও বলতে পারি না।তবে সাথে মা থাকলে এসব জড়তা কখনোই হয় না।

নম্রতা ও মা বাবা কে পেয়ে অনেক ভাবেই আছে।আফসানা কিছু বললে তাকে এড়িয়ে যাচ্ছে। শুধু তার মায়ের সাথে চিপকে আছে।কতদিন পর মাকে পেয়েছে।মায়ের আচলের নিচে নিচে থাকছে।মেয়ের এমন ছেলেমানুষী দেখে নম্রতার মা মিসেস রুবিনার চোখে পানি এসে যাচ্ছে। একটা মাত্র মেয়ে।তাও এতো ছোট।তাকে ছাড়া এতো দূরে থাকে। যদিও মামার কাছে থাকে তারপরও মা থেকে তো দূরে।শুধু একমাত্র ভাইজি অনুরোধ করায় না করতে পারেনি।নম্রতার এমন ছেলেমানুষী করতে দেখে আফসানা বার বার টিপ্পনী কাটছে।সবাই হাসাহসি করছে নম্রতা কে নিয়ে।বিয়ের বয়সী মেয়ে যদি এমন আহ্লাদী করে তবে সবাই তো হাসবেই।মিসেস রুবিনা নম্রতাকে এর জন্য এক ধমক দিয়েছেন সবার সামনে।নম্রতার খুব মন খারাপ হলো।তাই সে আর থাকতে না পেরে ডয়িংরুমে তার বাবার কাছে চলে যায়।তার বাবা আহমেদ শরীফ সোফায় বসে নম্রতার মামা ও তার ভাইয়ের সাথে কথা বলছিলো।নম্রতা গিয়ে বাবার গা ঘেষে বসে।আর বাবার কাধে মাথা রেখে আহ্লাদী স্বরে বলে,

—“বাবা তোমার সাথে বসলে কি তুমি আমায় মায়ের মত বোকা দিবে?

মেয়ের কথায় আহমেদ সাহেব একটু হাসলো।তারপর ঠাট্টা করে বলল,

—“বুঝলেন ভাই,মেয়েকে কয়দিন পর বিয়ে দিবো।সে এখনো তার মায়ের নামে আমার কাছে বিচার দেয়।হাহাহহা।আমার আম্মাজান কে বোকা দিয়েছে মিসেস শরীফ?এতো বড় সাহস?তোমার মাকে এর জন্য দাম দিতে হবে।

—ওহহো বাবা।তুমিও না।এটা সেই কবের ডায়লগ।নতুন কিছু বলো?আমি জানি তুমি মায়ের সাথে এমন কিছুই বলবে না।

বাবার কাধে মাথা রেখে নম্রতা দুচোখ বুঝে। আর নম্রতার বাবা আহমেদ সাহেব ও তার মামা অট্টোহাসি ফেটে পরে।

একটুপরে আফসানা এসে৷ নম্রতাকে তার রুমে নিয়ে যায়।নম্রতা আফসানার সাথে রাগ করে আছে। তাই কথা বলছে না।ফাযিল ময়েেটা কিভাবে তাকে খেপালো?আফসানা নম্রতার মুখ গোমরা দেখে হেসে যাচ্ছে। কোন রকম হাসি থামিয়ে বলে,

—-“নম্রু তুই এতো আবেগি কেন রে???

—-“তোর কি??

নম্রতার প্রশ্ন শুনে আফসানা একটা বড় শ্বাস নেয়। তারপর জবাব দেয়,

—“তোর এই আবেগি স্বভাবটা না আবার তোকে দূর্বল করে দেয়।শোন,আবেগ সব কিছুতে কাজে লাগে না।আবেগ দিয়ে সব হয় না।

নম্রতা একটা ভেংচি কাটে আফসানা কে।মেয়েটা বড় পাকা পাকা কথা শিখেছে।কয়টা প্রেম করে উনি অনেক বাস্তবতা শিখে গেছে।নিজেকে বিদ্যাসাগর ভাবছে।নম্রতা এবার আফসানা কে জরিয়ে ধরে।আফসানা ও ধরে।মেয়েটার সাথে রাগ করে থাকতেই পারে না নম্রতা।

—————————
১৬.
আসাদ একটা জরুরী মিটিং এটেন্ড৷ করছিলো।সেখানে ফোন রিসিভ করা একদমই বারন।খুব দরকারী না হলে ফোন রিসিভ করতে কে আটকায়?তবে আসাদের ফোনটা পকেটে মিনিট পর পর বাইব্রেট হচ্ছে।অতিরিক্ত কম্পনে পকেট থেকে ফোনটা বের করে দেখে নয়নের কল।নয়ন যাকে নম্রতার ওপর নজর রাখার জন্য ঠিক করা।এই বেটা এখন ফোন দিবে কেন?নম্রতার আবার কিছু হলো না তো?আসাদ অন্য কিছু চিন্তা না করে রিসিভ করে ফোন।আসাদের কানে খবরটা যেতেই আসাদের মাথায় যেন কেউ গরম পিচ ঢেলে দিলো।অসম্ভব রাগে মূহুর্তে চোখ গুলো লাল হয়ে গেলো।কি ভেবেছে এই মেয়েটা? তাকে একটু ছুট দিয়েছে বলে সে কি যা ইচ্ছে তাই করবে?এতো সাহস তাকে কে দিলো?নাহ।আর দেরি নয়।অনেক ছাড় দিয়েছি।এবার ধরিতে টান দিতেই হবে।এই আসাদ কে রাগানো!!এর ফল তো পেতেই হবে নম্রতা কে।তাও নিজের স্বাধীনতা দিয়ে।আজ এই মুহূর্তে বিয়ে করবে সে নম্রতা কে।

এমন কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েই রওনা হলো আসাদ।নম্রতাদের উদ্দেশ্যে।আসাদের রেগে যাওয়ার পিছনে নম্রতার ইচ্ছেকৃত কোন হাত নেই।ইবেন সে তো জানেই না তার জন্য ও কেউ এতো বড় বিপদ নিয়ে আসছে।

—————————
১৭.
——-নম্রতা,আফসানা,তামিম, তন্ময় ও অর্করা একটু বের হয়েছে গুড়ার উদ্দেশ্যে।তামিম এসেছে এই একসপ্তাহ। এর মধ্যে কোথাও যাওয়া হয়নি।বাসায় কত শত মেহমান এসেছে।সবাইকে রেখে তো আর বের হওয়া যায় না।ওরা এসেছে একটা মাঠের মত জায়গা।যেটার মাঝে দিয়ে পিচঢালা রাস্তা গেছে।রাস্তার পাশে ইয়া বড় বড় বিভিন্ন গাছ।আর নাম না জানা বিভিন্ন আগাছা।এই বিকেল বেলায় মানুষ মানুষে পূর্ন জায়গাটা।রাস্তার পাশেই একটু দূরে দূরে বেঞ্চ পাতা।তামিম নম্রতাকে দেখেছে সেই ৪বছর আগে।সেই ছোট্ট মেয়েটা এতো বড় হয়ে গেছে যে তার প্রতি অন্য রকম অনুভূতি এসে পরছে না চাওয়া সত্বেও।

নম্রতা আজকে একটা সবুজ রঙের সুতি শাড়ি পরেছে।চুল গুলো হাত খোপা করা।কানে স্টোনের এ্যাস কালারের বড় ইয়ারিং।গলায় সেই সোনার চিকন চেইন।হাতে রেশমী চুড়ি।ঠোটে হালকা গোলাপি লিপস্টিক।চোখেও চিকন করে আকা কাজল।গালের টোলটা তো নজর কাড়ছে।

আফসানা ও আজকে সাদার মধ্যে লাল পারের শাড়ি পরেছে।আসলে একজনের কথায় পরেছে।মানুষটা আফসানার কাছে স্পেশাল।হাতে লাল চুড়ি।যা একটু পর পর নারাচারা করছে আর কাঙ্ক্ষিত ব্যাক্তি কে আকর্ষণ করছে।ঠোটে গাঢ় লাল লিপস্টিক।তবে সাথে বড় ভাই থাকায় অন্য সময়ের তুলনায় এখন একটু চুপচাপই।

ছেলেরা একটু সামনে সামনেই থাকছে।তন্ময় সবার থেকে ছোট বলে সে তার মতই থাকছে।তার জন্য ভাইয়া একটা সুন্দর ক্যামেরা এনেছে।সে সেটা নিয়েই দিব্যি আছে।তামিম আর অর্ক পাশাপাশি হাটছে আর গল্প করছে।মাঝে মাঝে তাদের প্রিয়সীদের দিকে তাকিয়ে হালকা হাসছে।হ্যা, আফসানার সেই কাঙ্ক্ষিত ব্যাক্তি আর কেউ নয় অর্ক।অর্ক বহু আগে থেকেই আফসানার ওপর লাট্টু।ঐ যে কথায় আছে না,
“ফুফাতো ভাইয়েরা মামাতো বোনের ওপর ক্রাশ খাবেই””ফুফাতো ভাই অথচ মামাতো বোনের ওপর ক্রাশ খায়নি এমনটা কোথায় দেখেনি।

এবার এসেছে আফসানার ওপর আরো ফিদা হয়ে গেছে অর্ক।তাই আকার ইঙ্গিতে বুঝাতে চাচ্ছে সে আফসানা কে।কি জানি বুঝাতে পারছে কি না?নাকি বুঝেও না বুঝার ভান করে থাকবে?

মাত্রই নম্রতা আর তামিম একটা বেঞ্চে বসেছে।অর্ক তন্ময় আফসানার ফটোশুট করছে।নম্রতা বেঞ্চের পিছনের দিকে তাকিয়ে বিরতিহীন হেসে যাচ্ছে। আফসানা পোজ গুলো এমনই হাসি এসে যাচ্ছে তার।তামিম নম্রতা কে গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।নম্রতা একবার তামিমের দিকে তাকালো।তার হাসি থেমে গেলো।মেয়েরা বুঝে কোন ছেলে কি নজরে তাকায়।তামিমের নজরে নম্রতা এমন কিছু দেখেছে যা আগে কখনো দেখেনি।

হঠাৎ একটা ব্লাক গাড়ি এসে থামে রাস্তায় ঠিক নম্রতার সামনে।এতে নম্রতা একটু ভয় পেয়ে যায়।আর একটু হলেই সে কেল্লা ফতে।চেহারায় একটু রাগি ভাব এনে যেই গাড়ির মালিককে কিছু বলতে যাবে তার জবান আপনাআপনি বন্ধ। সে এ কাকে দেখছে?এই লোক এখানে কেন?

আসাদ গাড়ি থেকে নামতেই মানুষের ভীর জমে গেলো।তামিম এলাকায় অনেক বছর ছিলো না।তাই সে জানে না সামনে দাড়িয়ে থাকা লোকটা কে?এমনেতে তো হিরো লাগছে!!মনে হয় কোন নায়কই হবে।কিন্তু এখানে করছেটা কি?
আসাদ নেমেই নম্রতার হাত টেনে ধরে।আসাদ কে দেখে আফসানা চিল্লিয়ে ওঠে।
—-“হেই হ্যান্ডসাম।কেমন আছেন?আপনি এখানে?

আফসানার কথায় আসাদ নম্রতার হাত ধরা অবস্থায় চোখের সানগ্লাস টা খুলে মুখে সেই কিউট হাসি এটে বলে,
—-“শালিকা আমাকে না জানিয়ে গুরতে এসেছো।দিস ইজ নোট ফেয়ার।

আসাদের মুখে “শালিকা ” শুনে আফসানা নম্রতা এমনকি আশে পাশের সবাই থ হয়ে যায়।সবাইকে অবাক করতে পেরে আসাদ একটা রহস্য হাসি দেয়। তারপর নম্রতার হাত ধরে টেনে গাড়িতে বসায়।আর নম্রতা যেন কোন রোবট সে। তাকে যা করছে সে তাই করছে।গাড়ি চলতে শুরু করে।উপস্থিত সবাই অবাক।সবাই যেন একটা ঘোরে আছে।তামিমের ঘোর সবার আগে কাটে।সে চিল্লিয়ে বলে ওঠে,

—-“কে এই জানোয়ারটা?

ভাইয়ের কথায় আফসানা জলদি এসেছে মুখ চেপে ধরে।এমন ধরনের কথা রাজনীতিবীদ দের নিয়ে পাবলিক প্লেসে বললে সর্বনাশ।আফসানা হাতটা মুখ থেকে সরিয়ে আফসানার দিকে কঠিন দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তামিম।যার মানে কি হচ্ছেটা কি????

অর্কের মুখেও ভাষা নেই।ছোট বোনকে কেউ এভাবে চোখের সামনে হাত ধরে নিয়ে যাবে আর সে কাকতাড়ুয়ার মত তাকিয়ে থাকবে বলে কি বড় ভাই হয়েছিলো?কে ছিলো টা কে?কোন খারাপ লোক নয়তো?দেখতে তো কোন রায়বাহাদুর মনে হচ্ছিলো।আর তখন আফসানা কি যেন বলেছিলো লোকটা কে?তার মানে এই মেয়েটা নিশ্চয়ই চিনে??
আফসানার ও একই অবস্থা সে বুঝতেই পারছে না আসলে হচ্ছে টা কি এখানে?আর এতো বড় নেতা নম্রতা কে কেনই বা এভাবে নিয়ে যাবে?কোন উল্টো পাল্টো মতলব নেই তো?আফসানার মাথায় একটা বিষয়ই ডুকছে না।আসাদের যদি কোন খারাপ মতলবই থাকত তবে এই পাবলিক প্লেসে কেন এমন ঘটনা করবে?এতে তো তারই ক্ষতি।তবে কি অন্য কিছু?যা তার জানার বাহিরে?

নম্রতা চুপ করে মাথা নিচু করে বসে আছে আসাদের পাশে।আসাদ একটু পর পর কাকে যেন ফোন করছে আর কি কি সব বলছে।নম্রতার এই মুহূর্তে হাউমাউ করে কান্না করতো ইচ্ছে করছে।এতো বড় মানুষ তাকে নিয়ে করবে টা কি?এদের তো আবার চরিত্র দোষ বিরাজমান।তার সাথে কোন,,,,,,,,, আর ভাবতে পারছে না নম্রতা। সে থরথর করে কাপতে লাগল।ভয়ে তার গলা শুকিয়ে এলো।এতোদিন শুধু শুনে এসেছে ভয়ে মানুষ কাপে।এখন নিজের সাথেই হচ্ছে।

নম্রতা কে এভাবে ভয় পেতে দেখে আসাদ একটা বাকা হাসি দেয়।সে চায় সবাই তাকে ভয় পাক।এমনকি তার বউ ও।তবেই সে যা বলবে তাই করবে।এখন থেকেই ভয় পাওয়া ভালো।বউ কন্টোলে থাকবে।সে নম্রতা কে আরো ভয় পাওয়ার জন্য ফিসফিস করে বলে ওঠে,

—–“ওয়েলকাম টু মাই কিংডম!!! এখানে মন্ত্রী, সেনাপতি,সভাপতি এমনকি রাজা ও আমি।একমাত্র আমি।।।আর এই রাজার একমাত্র রানী হবে তুমি!!!!

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here