যদিও_অসময়ে_এসেছো_তুমি ৬

0
668

#যদিও_অসময়ে_এসেছো_তুমি

#লেখিকা_সুমাইয়া_সেহরিন_সুইটি

পর্ব-৬

স্নিগ্ধার মাথায় আকাশ ভেঙে পরলো যখন দেখলো রাহাত বাইকে অন্য একটি মেয়েকে নিয়ে ঘুড়ছে।বিষ্ময়ে স্নিগ্ধার চোখ কপালে রাহাতের কোনো বোন নেই।তাহলে এই মেয়েটি কে।স্নিগ্ধা বোরকা নেকাব পড়ায় রাহাত স্নিগ্ধাকে দেখে নাই।স্নিগ্ধা একটা অটো’তে করে রাহাতকে ফলো করতে থাকে।স্নিগ্ধা রাহাতের নাম্বারে কল দেয় কিন্তু রাহাত রিসিভ করে না।রাহাতের বাইকের পিছনে মেয়েটা রাহাত’কে জড়িয়ে ধরে আছে।দৃশ্যটা দেখে স্নিগ্ধার চোখে পানি টলোমলো করতে লাগলো।একটা রেস্টুরেন্টের সামনে রাহাত বাইক থামালো।তারপর রাহাত ও অচেনা মেয়েটি রেস্টুরেন্টের ভিতরে ঢুকলো।স্নিগ্ধাও তাদের পিছনে যেতে লাগলো।

স্নিগ্ধা তাদের পিছনের টেবিলে বসে তাদের সব কথা শুনতে লাগলো।স্নিগ্ধা বোরকা ও নেকাব পরে থাকায় রাহাত স্নিগ্ধা কে খেয়াল করে নাই,,

—-টেল মী বেব,,তুমি এই কয়দিন আমাকে এতো ইগ্নোর কেনো করেছো?আজ একটা মাস আমি আমার মধ্যে ছিলাম না।তিন বছরের সম্পর্ক একটা ভুল বোঝাবুঝির জন্য শেষ হয়ে যেতে পারে না।

—এই কারনেই নাদিয়া,তোমাকে ক্ষমা করতে আমি বাধ্য হলাম।তুমি যা করেছো তার জন্য তোমার মুখ ও দেখা আমার উচিত না। শুধু তুমি আমার ফার্স্ট লাভ এজন্যই তোমাকে আমি আর একটা সুযোগ দিচ্ছি। আমি নিজেও তোমাকে ভোলার অনেক চেষ্টা করেছি,অন্য একটা রিলেশনে পর্যন্ত গিয়েছি কিন্তু পারি নাই।মেয়েটা তোমার থেকে অনেক সুন্দর কিন্তু তারপরও তোমার প্রতি আমার অনুভূতি একটুও কমে যায় নাই।এজন্যেই তোমাকে আর একটা সুযোগ দিচ্ছি।তোমার জন্যে অন্য একটা মেয়েকে তো আমি ঠকাতে পারি না।আমি আজই স্নিগ্ধা কে সব সত্য বলে মাফ চেয়ে নিবো।

নাদিয়া রাহাতের হাত ধরে কান্না করতে লাগলো। তুমি যা বলবে আমি তাই করবো রাহাত।দয়াকরে আমাকে আর কষ্ট দিও না আর ইগ্নোর করো না।আমার আগের রাহাত হয়ে যাও।

রাহাত নাদিয়ার হাত ধরে হাতে একটা আলতো চুমু একে দিলো।স্নিগ্ধা অশ্রুসিক্ত নয়নে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। কী করবে স্নিগ্ধা এখন।এতো বড় ধোকা। রাহাত কী করে পারলো।সে যেহেতু অন্য কাউকেই ভালোবাসে তাহলে তাকে কেনো প্রপোজ করলো?স্নিগ্ধা চোখ মুছে রাহাতের সামনে দাড়ালো।রাহাত স্নিগ্ধা কে দেখে বেশ ঘাবড়ে গেলো।স্নিগ্ধা রাহাতের কলার ধরে বললো “কী বলেছিলি? আমাকে ভালোবাসার আগে বেচে থাকার কোনো কারণ খুজে পাস নাই?মরার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত আমাকেই ভালো বেসে যাবি?কোথায় গেলো তোর ভালোবাসা?কেনো এতো মিথ্যা বলেছিলি?কেনো এতো মিথ্যা স্বপ্ন দেখিয়েছিলি?স্নিগ্ধা কান্নায় ভেঙে পরলো।

—স্নিগ্ধা প্লীজ আমার কথা শুনো।আমি তোমাকে এক্সল্পেইন করছি।

—কী এক্সপ্লেইন করবি তুই?আমার হাসিখুশি জীবন’টাকে নরকের সমতুল্য করে এখন আর কী বলতে চাস?

—স্নিগ্ধা আই নো আমি তোমার সাথে যা করেছি ঠিক করি নাই।কিন্ত প্লীজ try to understand আমি নিজেও Depressed ছিলাম।তখন ভালো খারাপ কিছুই আমার মাথায় আসে নাই।প্লীজ মাফ করে দাও আমাকে।

স্নিগ্ধা রাহাত আর নাদিয়ার দিকে তাকিয়ে তাদের দুই হাত এক করে দিয়ে বললো ” যা দোয়া করে দিলাম,ছেড়ে দিলাম তোকে,ভালোবাসার মানুষের সাথে সুখী হও,”

কথাগুলো বলে স্নিগ্ধা চোখ মুছে সেখান থেকে চলে আসলো।

—————–

মানুষের স্বপ্ন আশা ভরসা যখন ভেঙে যায় নষ্ট হয়ে যায়।তখন মানুষের পৃথিবীতে বেচে থাকা মূল্যহীন হয়ে যায়।স্নিগ্ধা রাহাতের দেওয়া প্রতিটা কথা, প্রমিজ গুলো ডায়েরি তে খুব সুন্দর করে লিখে রেখেছে।আর তা পরেই সারাটাদিন কাটিয়ে দিচ্ছে স্নিগ্ধা। খাওয়া দাওয়া পড়ালেখা কোনো কিছুতেই স্নিগ্ধা মন দিতে পারছে না।স্নিগ্ধার হাসিখুশি জীবন’টা কখনো এমন হবে এটা স্নিগ্ধা কল্পনাও করে নাই।যেমন হঠাৎ করে রাহাত এসেছিলো ঠিক তেমনি ভাবেই চলেও গেছে শুধু এই অল্প সময়ে কিছু মিষ্টি স্মৃতি দিয়ে গেছে যা বাস্তবতার সাথে মিশে তিক্ত হয়ে গেছে।কান্না করতে করতে স্নিগ্ধা কখন ঘুমিয়ে পড়েছে স্নিগ্ধা জানে না।হঠাৎ একটা শব্দে স্নিগ্ধা হালকা নড়ে উঠলো কিন্তু চোখ মেলে তাকালো না,,,,,

কেউ একজন স্নিগ্ধার পাশে বসেছে।স্নিগ্ধার ইচ্ছা হচ্ছিলো চোখ মেলে দেখবে সামনে বসা মানুষটা কে?এতো রাতে স্নিগ্ধার রুমে কেনো।স্নিগ্ধা ভেবেছিলো হয়তো রাহাত এসেছে।কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই স্নিগ্ধার ভুল ভাঙে।

—স্নিগ্ধা তোর জন্য আমার অনেক কষ্ট হচ্ছেরে,,,আমি কিছুতেই তোর সাথে রাগ করে থাকতে পারছি না।যতোই তোর থেকে দূড়ে সড়ে আসছি ততোই ভিতরে ভিতরে দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছি আমি।কি করে বুঝাই,তোকে ছাড়া আমি ভালো থাকতে পারবো না।আমি তোর ভালোর জন্যেই তোকে শাসন করি,চোখে চোখে রাখি।যেন তুই ফুপার স্বপ্ন পূর্ণ করতে পারিস।কেনো বুঝিস না তুই বল তো। তোকে যে একজন দক্ষ ডাক্তার হতে হবে।

সাফরান নিঃশব্দে কেদে উঠলো। আর সাফরানের চোখের পানি স্নিগ্ধার মুখের উপর পরলো।তখনি স্নিগ্ধা হালকা কেপে উঠলো। তা দেখে সাফরান উঠে ব্যল্কনি দিয়ে নেমে নিচে আসলো।আর তারপর বাইক নিয়ে সোজা বাড়ির দিকে ছুটলো।সাফরান চলে যেতেই স্নিগ্ধা চোখ মেলে তাকালো। সাফরানের চোখের পানি স্নিগ্ধার চোখের উপর পড়ছে স্নিগ্ধা হাত দিয়ে স্পর্শ করলো।এতোদিন পর স্নিগ্ধা বুঝতে পারলো তার রোবট লাল চোখ ওয়ালা ভাইয়ার ও অনূভুতি বলতে কিছু আছে। সাফরান স্নিগ্ধার জন্য যা কিছু করে তা কেবল দায়িত্ব থেকেই নয়।সাফরান স্নিগ্ধা কে পছন্দ করে।কিন্তু স্নিগ্ধা এতোদিন তা ঘূর্ণাক্ষরেও বুঝতে পারে নাই।স্নিগ্ধা ব্যল্কনি তে দাঁড়িয়ে বাহিরের অন্ধকারে আচ্ছন্ন পরিবেশ’টা দেখছে।এই বুঝি ভালোবাসা যা দিনের পর দিন প্রকাশ না করেও মনের মধ্যে বাড়তে থাকে।স্নিগ্ধা ডুকরে কেদে উঠলো। স্নিগ্ধা কেনো আগে সাফরানকে বোঝার চেষ্টা করলো না।কেনো রাহাতের কথায় বিশ্বাস করে নিলো।কেনো রাহাতের জন্য নিজের দামি সময় গুলো নষ্ট করলো।রাতের অন্ধকারে স্নিগ্ধার চোখের পানি মিলিয়ে গেলো।

স্নিগ্ধা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করছে।পড়ালেখা এবং বাড়ির অন্যান্য কাজে থেকে নিজেকে ব্যস্ত রাখছে। আজ সাহিল বাজার নিয়ে এসেছে।কিন্তু অন্য সময় সাফরান নিয়ে আসতো।

—কী রে সাফরান ভাই আসে নাই।
–না আপু সাফরান ভাইয়া। এখন দোকানে আছে।আমাকে বলছে বাজার গুলো নিয়ে আসতে।

—আচ্ছা আম্মুকে দিয়ে আয়।আর তোর সাথে আমি যাবো।

—সত্যি যাবে আপু।

—হ্যা তুই বস আমি রেডি হয়ে আসছি।

স্নিগ্ধা রেডি হয়ে এসে সাহিলের সাথে তাদের বাড়ি তে আসলো। স্নিগ্ধার মামি স্নিগ্ধা কে দেখে অনেক খুশি হয়ে গেলো।

—কী রে স্নিগ্ধা এতোদিন পর বুঝি মামি কে মনে পড়েছে?

—রোজই তো মনে পরে মামি।

—তাহলে আসিস না যে,

—এইতো আসলাম।দাও এখন আমাকে পায়েস বানিয়ে দাও।তোমার হাতের পায়েস আমার কাছে অমৃতের মতো।

—হাহাহা তাই বুঝি,,আচ্ছা যা।তোর মামার সাথে দেখা করে আয়।আমি পায়েস বানিয়ে দিচ্ছি।

—আচ্ছা আমি যাচ্ছি

স্নিগ্ধা তার মামার রুমে আসলো।মামা কী করছো,,,,

—কে,ও তুই,,,আয়,,,কী আর করবো এইতো এখন বই’ই হচ্ছে নিত্যদিনের সঙগী।বই পড়ছি।

—সব সময় বই কীভাবে পড়ো মামা?এদিকে আমি আছি যে কিনা বই ধরলেই ঘুমিয়ে পড়ি,,,

—হাহাহাহা,,,তাহলে আদূরে ভাগ্নিটা কে এবার বিয়ে দিয়ে দেই।তাহলে আর বই পড়তে হবে না।

—মামা,,,কী বলো এসব,,,আগে তোমার ছেলেকে বিয়ে দাও।বুড়ো হয়ে যাচ্ছে পরে তো কেউ আর বিয়ে করতে চাইবে না।এখনি তো কেউ রাজি হবে না বিয়ে করতে।

–হাহহাহা,,,তাহলে তোর সাফরান ভাইকে বিয়ে দিয়ে সংসারী হয়ে যেতে বলছিস।যেন তোদের শাসন কম হয়।

স্নিগ্ধা মুচকি হেসে জবাব দিলো “না শাসন কমে যাক কখনো চাই না,তুমি সাফরান ভাইয়াকে বিয়ে দিও না কখনো,আমি চাইনা সাফরান ভাইয়া আমাদের কম গুরুত্ব দিক,আচ্ছা তুমি বসো আমি তোমার জন্য চা করে নিয়ে আসছি।

—আচ্ছা যা।

স্নিগ্ধা চলে যেতেই আজাদ আহমেদ মনের মধ্যে জমতে থাকা একটা গোপন ইচ্ছা সম্পর্কে ভাবতে লাগলেন। স্নিগ্ধা কে আজাদ আহমেদের অনেক ভালো লাগে।মেয়েটার বয়স কম।কিন্তু অনেক কয়বার সাফরানের চোখে স্নিগ্ধার জন্য ভালোবাসা দেখেছে আজাদ আহমেদ।সেই ছোট থেকেই স্নিগ্ধার সব কাজ,সাফরানই করতো।

আজাদ আহমেদ ভাবলো সাফরান কে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করবে।কিন্ত ছেলে হয়েছে লাজুক।জিজ্ঞেস করলেও ঘুড়িয়ে প্যাছিয়ে এড়িয়ে যাবে। আজাদ সাহেব বই পড়ায় মনোযোগ দিলেন।

স্নিগ্ধা দু’দিন মামাবাড়িতে থাকবে। সাহিল আর স্নিগ্ধা বাইকে পুরো এলাকা’টা ঘুড়ছে।বাইকটা সাফরানের।সাফরান দোকান থেকে এসে বাইক রেখে ফ্রেস হতে যায়।আর এই সুযোগে সাহিল আর স্নিগ্ধা বাইক নিয়ে বেড়িয়ে পরে।সারাদুপুর কাটিয়ে সাহিল ও স্নিগ্ধা সন্ধ্যার দিকে বাড়িতে ফিরে।দুজনে ভেবেছে সাফরান হয়তো তাদের অনেক বকাঝকা করবে কিন্তু কিছুই করলো না।

শুধু সাহিলের দিকে তাকিয়ে বললো ” পড়তে বসতে যেন ভুলে না যাস,” কথাটা বলে বাইক নিয়ে বেরিয়ে পরলো। স্নিগ্ধার কেমন যেন কান্না চলে আসছে।সাফরান তাকে কোনো বকাঝকা করছে না,কোনো জ্ঞান দিচ্ছে না,কোনো কথাও বলছে না।

(চলবে)

গল্পটা কেমন লাগছে সবার কাছে কমেন্টস করে জানাবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here