যদিও_অসময়ে_এসেছো_তুমি ৭

0
677

#যদিও_অসময়ে_এসেছো_তুমি

#লেখিকা_সুমাইয়া_সেহরিন_সুইটি

পর্ব-৭

রুমের মধ্যে শুয়ে স্নিগ্ধা সাফরানের কথা ভাবতে লাগলো।ঠিক কী করলে সাফরান আবার আগের মতো ব্যবহার করবে তাই ভাবছে।হঠাৎ স্নিগ্ধার মাথায় একটা আইডিয়া আসলো।স্নিগ্ধা ধীরে ধীরে নিজের রুমের দরজা খুলে সাফরানের রুমের সামনে আসলো।বাড়ির অন্যরা এখন গভীর ঘুমে আছে।শুধু সাফরানের রুমের লাইট জ্বলছে।হয়তো ল্যাপটপে কাজ করছে।স্নিগ্ধা আলতো করে দরজায় নক করলো।সাফরান দরজা খুলে দিতেই স্নিগ্ধা চোখ নিচু করে বললো আইস্ক্রিম খাবো।স্নিগ্ধার কথায় সাফরান বেশ অবাক হলো শীতের রাত।তার উপর এখন বাজে ১২ঃ৩০ এতো রাতে স্নিগ্ধা বলে কিনা আইস্ক্রিম খাবে।

—মাথা ঠিক আছে তোর?

—হ্যা আছে।এখন চলো বাইরে নিয়ে যাবে আমার রুমে ভালো লাগছে না।

—আমার মাথা খারাপ হয়ে যায় নাই।আমি এতো রাতে বাইরে যাবো।

—যেভাবে বলছো মনে হচ্ছে কখনোই রাতে বাহিরে যাও না।

স্নিগ্ধার কথায় সাফরান একটু চমকে উঠলো তাহলে কী গতোকাল রাতে স্নিগ্ধা সাফরান কে দেখে ফেলেছে,সাফরান গলা পরিস্কার করে বললো ” রুমে গিয়ে শুয়ে পর, আমার কিছু আর্জেন্ট কাজ আছে”

—উহু ভাইয়া প্লীজ নিয়ে চলো না।নাহলে আমার ঘুম আসবে না।

সাফরান স্নিগ্ধার জেদের কাছে হার মানে।এখন নিয়ে না গেলেও সারারাত জেগেই থাকবে।সাফরান বাইক বের করে স্নিগ্ধা কে বাইকের পিছনে বসিয়ে বাজারের দিকে গেলো।যদিও এখন দোকানপাট বন্ধ রাস্তায় তেমন মানুষ নেই।দু একটা গাড়ি চলাচল করছে শুধু। রুমের মধ্যে শীত না লাগলেও বাইরে প্রচুর শীত।এদিকে স্নিগ্ধা শীতের কোনো পোশাক ই পরে নাই।স্নিগ্ধার এমন স্বভাব সাফরানকে অনেক বিরক্ত করে।সাফরান দাতে দাত চিবিয়ে চিবিয়ে বলে,শীত করছে না তোর”?

—এখন একটু ত করছে,,
সাফরান আরো কিছু বলতে গিয়েও বললো না।নিজের গায়ের জ্যাকেটটা খুলে স্নিগ্ধা কে দিলো।

–পরে নে,,

স্নিগ্ধা জ্যাকেটটা পরে নিলো।দু একটা দোকান খোলা আছে এখনো সাফরান দোকান থেকে দুইটা কোণ আইস্ক্রিম এনে স্নিগ্ধা কে দিলো।

—ভাইয়া ব্রীজের দিকে চলো।
সাফরান চোখ রাঙিয়ে স্নিগ্ধার দিকে তাকালো কিন্ত কিছু বললো না।তারপর চুপচাপ ব্রীজের দিকেই চললো। ব্রীজের উপর এসে থামলো সাফরান।স্নিগ্ধা বাচ্ছাদের মতো করে আইস্ক্রিম খাওয়ায় ব্যাস্ত। নাকে ঠোটে আইস্ক্রিমের ক্রিম লাগিয়ে জোকারের মতো দেখাচ্ছে।সাফরান আড়চোখে স্নিগ্ধা কে দেখছিলো।সাফরানের ইচ্ছা হচ্ছিলো স্নিগ্ধার এই চেহারায় একটা ছবি তুলতে।নিজের ইচ্ছাটাকে প্রশমিত করে সাফরানের স্নিগ্ধার কাছে আসলো।তারপর পকেট থেকে টিস্যু বের করে স্নিগ্ধার মুখে লেগে থাকা আইস্ক্রিম গুলো মুছে দিলো।স্নিগ্ধা মুগ্ধ হয়ে সাফরান কে দেখছিলো। এভাবেই কেটে গেলো আরো কিছু সময় হঠাৎ স্নিগ্ধা বলে উঠলো,,,,

—ভাইয়া তুমি আমার উপর রেগে আছো?

—না,তোর উপর রেগে থাকার কোনো অধিকার নেই আমার।

—এভাবে কেনো বলছো। তুমিই তো বলো আমার কোনো বুদ্ধি নেই।সেদিন কী বলেছি আমি নিজেও জানি না।

—তুই এটা বলার জন্যে এখানে এসেছিস?

—ভাইয়া।আমার ব্রেকাপ হয়ে গেছে জানো? জীবনের প্রথম কাউকে না জানিয়ে একটা প্রেম করলাম তাও টিকলো না।

সাফরান স্নিগ্ধার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে। স্নিগ্ধা আবারো বললো ” তুমি অভিশাপ দিয়েছিলে?”

—আমি অভিশাপ দিতে যাবো কেনো?তুই অসময়ে ভুল মানুষের প্রেমে পরেছিলি,যার উপস্থিতি সাময়িক সময়ের।আমি সেদিনই তোকে বলতে পারতাম ছেলেটা তোর জন্য ঠিক না।কিন্তু আমার কথা তুই বিশ্বাস করবি না।আর এটা ভালোবাসা ছিলো না।কারো জীবনে প্রথম হওয়ার মাঝে সার্থকতা নেই।যে শেষে থেকে যাবে,তাকেই ভালোবাসা যায়।

স্নিগ্ধা সাফরানের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ চোখ নিচু করে নিলো।চোখের কোণে পানি চলে এসেছে।সাফরান বুঝতে পেরে বললো চল বাড়িতে যাই,রাত কম হয় নাই।সাফরানের কথায় স্নিগ্ধা বাইকে গিয়ে বসলো।আর কিছু বললো না।

দুজনে নিঃশব্দে। স্নিগ্ধা ছলছল চোখে রাতের এই নিস্তব্ধতা উপভোগ করতে লাগলো। আর সাফরানের প্রতিটা কথা মনের মাঝে আওড়াতে লাগলো।

——————–

বাড়ির সামনে উঠানে সবাই বসে আছে।স্নিগ্ধা ও রাফিয়া আহমেদ নারকেলের নাড়ু বানাচ্ছে।তখনি ফাহিমা একটা বক্স হাতে নিয়ে আসলো।

—কেমন আছো স্নিগ্ধা।

—এইতো আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তুমি কেমন আছো?

— আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। বড় মা সাফরান ভাইয়া কোথায়?

—রুমে আছে।তোর হাতে বক্সটায় কী?

—সাফরান ভাইয়ার পছন্দের গাজরের হালুয়া নিয়ে এসেছি।আচ্ছা আমি দিয়ে আসি।

ফাহিমা সাফরানের রুমের দিকে চললো। সেদিকে তাকিয়ে স্নিগ্ধা ভেংচি কাটলো,,,কেনো ভেংচি কাটলো স্নিগ্ধা জানে না।কিন্তু ফাহিমার এভাবে সাফরানের রুমে যাওয়া স্নিগ্ধার কেমন যেন ভালো লাগলো না।

ফাহিমা রুমে উকি দিয়ে দেখলো। সাফরান দোকানে যাওয়ার জন্যে রেডি হচ্ছে।মাত্রই গোসল করে এসেছে হয়তো।তোয়ালে দিয়ে শরীর মুছছে।ফাহিমা সাফরানের বলিষ্ঠ শরীরের দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে। মাশাল্লাহ কতো জোস দেখতে সাফরান একদম নায়কদের মতো।ফাহিমা নিঃশব্দে সাফরান কে লক্ষ্য করে যাচ্ছে।তারপর সোজা রুমে চলে আসলো ফাহিমা।ফাহিমা কে দেখে সাফরান বললো

—তোকে রুমের মধ্যে আসতে বলছে কে?

—বা’রে তুমি দরজা খোলা রাখছো আসতে সমস্যা কোথায়?

—আমি দরজা খোলা রেখেছি ঠিক আছে,কিন্তু রুমে ঢোকার আগে নক করা উচিৎ ছিলো তোর।

—খোলা দরজায় আর কী নক করবো?

—আচ্ছা এতো কথা প্যাচাতে পারবো না।এবার একটু অন্য দিকে ফির,আমি গেঞ্জি পরে নেই।

ফাহিমা মুচকি হেসে বললো “আচ্ছা ঠিক আছে”

সাফরান তাড়াহুড়ো করে গেঞ্জি পরে ফাহিমা কে বললো “তো সকাল সকাল কেনো এসেছিস?”

—তোমার জন্য গাজরের হালুয়া নিয়ে এসেছি।

—আচ্ছা টেবিলে রাখ।আমি খেয়ে নিবো।

ফাহিমা টেবিলে রেখে চলে যাচ্ছিলো।হঠাৎ পা পিছলে পরে যেতে ধরে।তখনি সাফরান ধরে ফেলে ফাহিমাকে।ফাহিমা সাফরানের গলা জড়িয়ে ধরে।এদিকে স্নিগ্ধা সাফরানকে চা দিতে এসে তাদের এই অবস্থায় দেখে ফেলে।স্নিগ্ধা কে দেখে সাফরান দ্রুত ফাহিমেকে ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়।স্নিগ্ধা সাফরানকে বলে “ভাইয়া তোমার চা”

স্নিগ্ধা চা টেবিলে রেখে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।যেতে যেতে একটু আগের ঘটে যাওয়া সিন’টা বারবার স্নিগ্ধার চোখে ভেসে উঠে।কেনো যেন বুকের ভেতর এক অন্যরকম চিনচিন ব্যাথা অনুভব করে স্নিগ্ধা।

ফাহিমা মুচকি মুচকি হাসতে হাসতে রুম থেকে বের হয়।ফাহিমার চোখে মুখে এক অন্যরকম ঝিলিক দিয়ে উঠছে।ফাহিমা খুশিমনে বাড়ির দিকে গেলো।স্নিগ্ধা সাহিলকে ম্যাথ বুঝিয়ে দিচ্ছে,,,,,পড়ার মাঝেই সাহিল জিগ্যেস করলো,,,

—আপু মন খারাপ নাকি তোমার,,?

—না, রে এমনেই ভালো লাগছে না।

—কেনো আপু,তোমার বয়ফ্রেন্ড কী কিছু বলেছে?

—অনেক পেকেছিস তুই?পড়ার সময় কী সব বলছিস তুই?সাফরান ভাইকে বলবো?

—আমি কই কী বললাম।তোমার মন খারাপ এজন্যই তো জিজ্ঞেস করলাম।আর সাফরান ভাই কয়দিন পর তো বিয়ে করবে আমিও দোয়া করছি ভাইয়ার যেন তাড়াতাড়ি বিয়ে হয়ে যায়।তাহলে শাসন একটু কম করবে।বউ নিয়ে ব্যস্ত থাকবে।

—সাফরান ভাইয়া বিয়ে করব মানে?

—বয়স হচ্ছে না এখন তো বিয়ে করবেই।তাছাড়া ফাহিমা আপু তো সাফরান ভাইকে,,,,

—ফাহিমা আপু সাফরান ভাইকে কী?

—-সাফরান ভাইকে বিয়ে করবে বলেছে।

—কে বলেছে তোকে এসব?

—ফাহিমা আপুই তো বলেছে।

স্নিগ্ধা সাহিলের কথায় বেশ অবাক হয়।স্নিগ্ধা সাহিলের রুম থেকে বের হয়ে ছাদে যাবে বলে ঠিক করে।

—————-

সাফরান সন্ধ্যার একটু আগে ছাদে আসতে পছন্দ করে।এই সময় টা সাফরানের অনেক পছন্দের। হাল্কা আলো অন্ধকারে মিলিত আকাশের দিকে তাকিয়ে সাফরান সাময়ীক সুখ খুজে পায়।তবে পাশের দিকে তাকিয়ে সাফরানের মুখ টা ফ্যাকাসে হয়ে যায়।যদি এমন হতো, সাফরানের পাশে স্নিগ্ধা থাকতো। দুজনে একই সাথে এই সময়টা উপভোগ করতে পারতো।সাফরান একটা কবিতা বলে স্নিগ্ধা কে অবাক করে দিতে পারতো।

সাফরান আকাশ পানে তাকিয়ে ছন্দ মিলাতে থাকে,,,,

আজ এই অবেলায়,,,

সাথে তুমি তো কিসের ভয়?

তোমার মায়া মায়া চেহারায়

সুখ গুলো ভেসে বেড়ায়।

ওগো প্রয়সী প্রিয়তমা

তুমি আমার রাতের তারা,

এ জীবন সপেছি

তোমাকেই ভালোবেসেছি।

ছন্দ গুলো মিলিয়ে সাফরান চোখ বন্ধ করে স্নিগ্ধা কে ভাবতে থাকে।আর তখনি সাফরান বুঝতে পারে তার পাশে কেউ এসে দাঁড়িয়েছে। সাফরান ভেবেছে স্নিগ্ধা হয়তো কিন্ত না চোখ মেলে দেখে ফাহিমা দাঁড়িয়ে আছে,,,,,,,

(চলবে)

গল্পটা কেমন লাগছে কমেন্টস করে জানাবেন।ধন্যবাদ সবাইকে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here