যদিও_অসময়ে_এসেছো_তুমি শেষ পর্ব

0
1062

#যদিও_অসময়ে_এসেছো_তুমি

#লেখিকা_সুমাইয়া_সেহরিন_সুইটি

#পর্ব_১৭ (অন্তিম পর্ব)

মোবাইলের এলার্মে ঘুম ভেঙে গেলো স্নিগ্ধার। উঠতে যেয়েও উঠতে পারল না।পাশে তাকিয়ে সাফরানকে দেখে তার দিকে তাকিয়ে রইলো। সাফরান স্নিগ্ধাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে আছে। কেমন যেন লজ্জা লজ্জা করে স্নিগ্ধার।এতোদিন একা ঘুমিয়ে আসছে আর আজ এমন একজনের পাশে শুয়ে আছে যাকে কিনা আগে একটুও সহ্য করতে পারতো না।
সাফরানের ঘুমন্ত চেহারার দিকে তাকিয়ে নিজেই হেসে উঠে। লাল চোখ ওয়ালা রোবট’টাকে ঘুম অবস্থাতেও কিউট লাগছে।সাফরানের কপালে একটা চুমু একে দেয় স্নিগ্ধা।
তারপর সাফরান থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে একটু হাল্কা হয়
এখন সকাল ৫টা মোবাইলে এলার্ম সাফরান দিয়েছিলো।স্নিগ্ধা এলার্ম বন্ধ করে আবারো চোখ বন্ধ করে “আর একটু ঘুমিয়ে নিলে মন্দ হবে না”স্নিগ্ধা চোখ বন্ধ করে পাশ ফিরে শুয়ে থাকে।আর তখনি সাফরান এক হাতে স্নিগ্ধাকে নিজের দিকে টেনে নিয়ে আসে। আকস্মিক এমন আচরনে স্নিগ্ধা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে।
—এই কী করছো?
সাফরান স্নিগ্ধার কোনো কথার উত্তর না দিয়ে স্নিগ্ধার মুখের কাছে তার মুখে নিয়ে আসে, “এখন উঠে নামায পড়ে যদি পড়তে না বসো তাহলে আরো অনেক কিছু করবো”

স্নিগ্ধা লজ্জা পেয়ে চোখ নিচু করে নেয়। সাফরান ঠোঁটের কোণে দুষ্টু হাসি ফুটিয়ে স্নিগ্ধাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। নিজেকে ছাড়ানোর অনেক জোড়াজুড়ি করতে থাকে স্নিগ্ধা।সাফরানের খোচা খোচা দাড়ির স্পর্শে এক অন্যরকম ভালো লাগা অনূভূত হচ্ছে।
—আচ্ছা যাচ্ছি নামায পড়তে,তুমিও উঠে নামাজ পরে নাও।

—চল,,,

—আর শুনো তুমিও আমাকে “তুমি” করে বলবে।

—কেনো “তুই” বলায় সমস্যা কিসের?

—কেমন যেন বোন বোন ফিল হয়।

—হুর পারবো না,,তুই করেই বলবো।

—তাহলে আমিও তোমাকে সাফরান ভাইয়া বলে ডাকবো।(মুচকি হেসে)

—কী?

—জ্বী।

—এই না প্লীজ,আমি তোমাকে তুমি করে বলবো তাও “ভাইয়া” ডাকিও না প্লীজ।

—ঠিক আছে ভাইয়া।

—তবে’রে,,,

সাফরান স্নিগ্ধাকে ধরতে যেতেই স্নিগ্ধা পালিয়ে গেলো।স্নিগ্ধা ভেংচি কেটে কেটে সাফরানকে আরো রাগীয়ে তুলছে।

দুজনে ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে নিলো। স্নিগ্ধা আজকের পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।আর সাফরান ল্যাপটপ সামনে নিয়ে বসে দোকানের হিসাব নিকাশ করছে।

————————

রাফিয়া আহমেদ রান্নাঘরে সকলের জন্য নাস্তা বানাচ্ছে,তখনি স্নিগ্ধা এসে রাফিয়া আহমেদকে সাহায্য করতে লাগলো।

—কী’রে স্নিগ্ধা ঘুম কেমন হলো,,, (মুখ টিপে টিপে হেসে)

—ভালোই হয়েছে মামি,থুক্কু মা।

—আগামী বছর নাতি,/নাতনির মুখ দেখতে পাবো তো?

রাফিয়া আহমেদের কথায় স্নিগ্ধা লজ্জায় লাল বর্ণ ধারণ করলো। তা দেখে রাফিয়া আহমেদ আলতো করে স্নিগ্ধার চিবুক ধরে বলে,,,

—তোকে পেয়ে আমার ছেলের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে যা প্রকাশ পাচ্ছে খুব।আগে কখনোই সাফরানকে হাসতে দেখি নাই সব সময় মুখে একটা গম্ভীর ভাব করে রাখতো মনে হতো ও যেন আমাদের সবার থেকে বড়।আজ তোর জন্যেই আমি আমার সাফরানকে প্রাণ খুলে হাসতে দেখেছি।

রাফিয়া আহমেদ আবেগে কান্না করে দিলো।

—মা কাদছো কেনো তুমি? তোমার চোখে আমি যেন দ্বিতীয়বার অশ্রু না দেখি।তুমি কোনো চিন্তা করো না।ওই লাল চোখ ওয়ালা রোবটকে নিয়ে তো একদমই না।আমরা সবাই অনেক সুখে থাকবো ইনশাআল্লাহ।

— ইনশাআল্লাহ। আমাদের পরিবারের দিকে যেন কারো খারাপ নজর না পরে।

আচ্ছা তুই তোর মামাকে চা দিয়ে আয়।আমি পায়েস রান্না করি।মিষ্টি খেয়েই পরীক্ষা দিতে যাবি।

—আচ্ছা ঠিক আছে।

পরিবারের সবাইকে নিয়ে সকালের নাস্তা সেরে স্নিগ্ধাকে কলেজে দিয়ে আসলো সাফরান।তারপর দোকানে চলে আসলো।

————————-

বাড়িতে পা রাখতেই চমকে উঠলো স্নিগ্ধা। এখন তো কেবল রাত নয়টা বাজে এই সময়ে বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে পরলো নাকি।পুরো বাড়ি অন্ধকার। মনে মনে ভীষণ ভয় ও লাগছে।অন্ধকার মানেই ভূত বাবাজি চুপ্টি করে ঘাপটি মেরে আছে। ভূত বাবাজি নাহয় ঘাপটি মেরে আছে কিন্তু আমার পা’তিদেব কোথায়।

ভূত ধরে ফেললেও উনিই তো বাচাবে।

এদিকে আরেক দুষ্ট সাহিল বাড়িতে নামিয়ে দিয়েই বাইরে আড্ডা দিতে চলে গেছে।আজ সাফরানকে বলে বকা খাওয়াতে হবে।কেনো যে উনি আমাকে বাড়ি থেকে আনার জন্যে ওই দুষ্টুটাকে পাঠিয়েছে।
পুরো রাস্তায় আমার মাথা খেয়েছে উলটা পালটা কথা বলে বলে।

নিজে একটু সময় বের করে বউকে বাপের বাড়ি থেকে আনতে পারলো না।আজকে প্রশ্ন করে করেই ওনার মাথা খেয়ে ফেলবো।
অন্ধকারে বিড়বিড় করতে করতে হলঘরের লাইট অন করলো।কিন্ত আলো জ্বললো না।হঠাৎ স্নিগ্ধার কেমন ভয় ভয় করতে লাগলো। বাড়ির সবাই কোথায় গেছে,আলো কেনো জ্বলছে না।অন্ধকারে প্রাণ বেরিয়ে যাচ্ছে স্নিগ্ধার।

হঠাৎ তখনি পিছনে কারো উপস্থিতি টের পেলো স্নিগ্ধা। ভয়ে পুরো শরীর কেপে উঠলো। কে আছে পিছনে।স্নিগ্ধা ভয়ে চিৎকার দিয়ে উঠলো। আর তখনি পিছন থেকে একটা হাত স্নিগ্ধার মুখ চেপে ধরলো।স্নিগ্ধা নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে ক্রমাগত।এবার স্নিগ্ধাকে কোলে তুলে নেয়েছে।সাথে সাথে রুমের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের লাল নীল লাইট জ্বলে উঠলো। স্নিগ্ধা সাফরানকে দেখে সস্তির নিশ্বাস নিলো।

স্নিগ্ধাকে কোলে করে সিড়ি বেয়ে উঠতে লাগলো সাফরান।
সাফরানের গলা জড়িয়ে ধরে আছে স্নিগ্ধা।রুমে নিয়ে এসে স্নিগ্ধাকে বিছানায় শুইয়ে দেয় সাফরান।রুমের আলো নিভানো।

—তুমি আমাকে তো ভয় পাইয়ে দিয়েছো,আর একটু হলেতো মরেই যে,,,,

স্নিগ্ধা কথা শেষ করতে পারলো না,সাফরান তার ঠোঁটে আংগুল রেখে চুপ করতে বললো।সাফরান রুমের লাইট জ্বলাতেই স্নিগ্ধা অবাক হয়ে গেলো।অবাক চোখে পুরো রুম দেখছে স্নিগ্ধা। অনেক সুন্দর করে ডেকুরেট করেছে সাফরান।রুমের মেঝেতে ফুল দিয়ে স্নিগ্ধার নাম লেখা।বিছানায় গোলাপের পাপড়ি দিয়ে বানানো লাভ,সাফরান নিজ হাতেই সাজিয়েছে। সাফরান স্নিগ্ধাকে ইশারা করে টেবিলে রাখা বাক্সটা খুলতে বলে,বাক্সটা খুলে একটা কালো রঙ ও লাল পারের শাড়ি দেখতে পায়,শাড়িটা অনেক পছন্দ হয় স্নিগ্ধার।

—কিন্ত আমি, তো শাড়ি পড়তে জানি না,,,
সাফরান রুমের মধ্যে রাখা ক্যান্ডেল গুলো জ্বালিয়ে দেয়,তারপর রুমের লাইট অফ করে।স্নিগ্ধা অবাক চোখে সাফরানকে দেখছে। তার কাছে এখনের সাফরানকে অনেক অচেনা মনে হচ্ছে। সাফরান নিজেও কালো রঙের একটা শার্ট পরে আছে।শার্টের প্রথমের কয়েকটা বোতাম খোলা।এমনেই তো ফর্সা তার উপর কালো শার্টে অনেক সুন্দর দেখাচ্ছে সাফরানকে।তার দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে সাফরান এগিয়ে আসে।পর্দার আড়ালে গিয়ে ব্লাউজ ও পেডিকোট পড়ে আসতে বলে স্নিগ্ধাকে,।

স্নিগ্ধা বাধ্য মেয়ের মতো তাই করে।পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে সাফরানকে বিষ্ময় ভরা চোখ নিয়ে দেখতে থাকে।অনেক্ক্ষণ হওয়ার পরেও যখন স্নিগ্ধা পর্দার আড়াল থেকে বের হয় না তখন সাফরান পর্দার ওপারে চলে আসে।সাফরানকে দেখে স্নিগ্ধা লজ্জায় লাল হয়ে যায়।সাফরান স্নিগ্ধাকে শাড়ি পড়িয়ে দেয়।তারপর আয়নার সামনে স্নিগ্ধাকে দাড়া করিয়ে বলে ” কেমন লাগছে নিজেকে মিসেস আহমেদ?”স্নিগ্ধা আয়নায় নিজেকে দেখে চমকে যায়।তার গলায় একটা হীরার নেকলেস।

—এটা কী করে আসলো।

—শাড়ি পরানোর সময় যখন লজ্জায় চোখ বন্ধ করে ছিলে তখন পরিয়ে দিয়েছি নেকলসটা।

—কিন্ত এটা অনেক দামী হবে কেনো শুধু শুধু,,,,,

সাফরান স্নিগ্ধার ঠোঁটে আংগুল স্পর্শ করাতেই থেমে গেলো স্নিগ্ধা।সাফরানের হাত সরিয়ে স্নিগ্ধা প্রশ্ন করলো “কেনো এতো ভালোবাসো আমাকে?”

—ভালোবাসার না কোনো প্রশ্ন হয় না কোনো উত্তর।শুধু সীমাহীন অনূভুতি থাকে,তুই ছাড়া আমার মন’টা ভীষণ খালি খালি লাগে,একা একা লাগে,বিষন্নতায় জড়িয়ে যাই আমি পুরোপুরি, তোকে না দেখলে দু চোখ থেকে অনবরত অশ্রু ঝড়ে,তোকে হারানোর ভয়ে প্রতিরাত নির্ঘুমতায় কাটাতে হয়।তোকে ছাড়া নিজেকেই প্রাণহীন আনন্দহীন মনে হয়। তোকে পেয়ে আজ আমি পরিপূর্ণ। চোখের সামনে তুই ঘুরে বেড়াবি আমার,তোকে দেখে ঘুমাবো আর ঘুম থেকে উঠবো তোকে দেখে,প্রতিদিন এক নতুন নতুন অনূভুতি নিয়ে সামনে দাড়াবি তুই,আর আমি মুগ্ধতা নিয়ে তোকে দেখে যাবো,ভালোবেসে যাবো। এক সাথে শুরু হব আমাদের পথচলা,যেখানে হাজারো বাধা আসলেও দুজন দুজনার হাত অল্পের জন্যেও ছেড়ে দিবো না কিংবা হাল্কা করবো না।শক্ত করে আজীবন দুজন দুজনার সাহস হবো,শক্তি হবো।

কখনো ছেড়ে যাবি না তো?

স্নিগ্ধা অশ্রুসিক্ত নয়নে সাফরানের দিকে তাকিয়ে আছে। টুপ করে কয়েকফোটা অশ্রু সাফরানের হাতে পরে,,,

—বোকা মেয়ে কাদছিস কেনো,তোর ওই দুচোখে আমি যেন কখনো অশ্রু না দেখি।

—আমি সত্যিই অনেক ভাগ্যবতী।তোমার মতো একজন মানুষকে আমি জীবন সাথী হিসেবে পেয়েছি।

স্নিগ্ধা সাফরানকে জড়িয়ে ধরে বলে ” আই লাভ ইউ সো মাচ সাফরান। আমি কখনো তোমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা কল্পনাও করতে পারি না।তুমি আমার জীবনে আল্লাহর দেওয়া বিশেষ উপহার যাকে সারাজীবন পরম যত্নে আগলে রাখবো”

স্নিগ্ধার চোখের পানি মুছে কোলে তুলে বিছানায় নিয়ে শুইয়ে দেয় সাফরান।তারপর স্নিগ্ধাকে উষ্ণ আদরে ভরিয়ে দেয়।।।।

আর বেশি বর্ণনা করবো না।আমার আবার রোমান্সে ডায়বেটিস আছে?।স্নিগ্ধা ও সাফরানের জন্য সবাই দোয়া করবেন।সবার ভালোবাসা স্নিগ্ধা ও সাফরানের মতো যেন পূর্ণতা লাভ করে।

————————–

“সমাপ্ত” বলবো না কারণ ভালোবাসার কখনো সমাপ্তি হয় না। ভালোবাসা পূর্ণতা পেয়ে গেলে তৃপ্ততার সাথে আরো বেড়ে যেতে থাকে। তেমনি মনে হয় এই গল্পের ও সমাপ্তি নেই।আমি জানি আপনাদের একেকজনের কল্পনায় এই গল্পটা একেকভাবে গেথে থাকবে।এতোদিন থেকে পাশে থাকার জন্যে ধন্যবাদ। “যদিও_অসময়ে_এসেছো_তুমি” গল্পের মাধ্যমে পেইজে ৪০০ মেম্বার পূর্ণ হলো।নতুন মেম্বার্সদের স্বাগতম। সাথে আমার অন্য লেখা গুলো পড়ার আমন্ত্রণ রইলো।

“যদিও_অসময়ে_এসেছো_তুমি” গল্পটা সবার কাছে কেমন লেগেছে কমেন্টস করে জানাবেন।আপনাদের কাছে ভালো লাগলেই এই গল্পের সার্থকতা হবে।

আগামীকাল থেকে আমার নতুন ভৌতিক গল্প
#ওই_ঘরে_কারা_যেন_থাকে!” পোস্ট করা হবে। আপনাদের ভালো লাগলেই গল্পটা দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা করবো। ধন্যবাদ সবাইকে??

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here