যদিও_অসময়ে_এসেছো_তুমি ১৩

0
622

#যদিও_অসময়ে_এসেছো_তুমি

#লেখিকা_সুমাইয়া_সেহরিন_সুইটি

#পর্ব_১৩

সাফরানের কথা শুনে উপস্থিত সকলে বিষ্ময়ে হতভম্ব হয়ে গেলো।যে ছেলেকে বিয়ের কথা বললেই জ্বর চলে আসে।বিয়ের কথা শুনতেই উধাও হয়ে যায়,সে কিনা আজ সবার সামনে নিজে থেকে বলছে বিয়ে করবে। সকলের দিকে তাকিয়ে সাফরান আবারো বলতে লাগলো ” আপনাদের সকলকে এখানে ডাকার উদ্দেশ্য, আপনারা সবাই আমার কাছের মানুষ,আমার পরিবার তাই আপনাদের জানানো ছাড়া আমি কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবো না। সাফরানের কথার মাঝে স্নিগ্ধা এসে সবার মাঝে দাড়ালো।সাফরান সেদিকে না তাকিয়ে কথা বলেই যাচ্ছে।

“মা,আমি বিয়ে করতে প্রস্তত”

—কাকে বিয়ে করবি তুই?

—মেয়ে তোমাদের চোখের সামনেই আছে।

সাফরানের কথায় স্নিগ্ধা চমকে উঠলো।স্নিগ্ধা চোখ বন্ধ করে ফেললো,এই বুঝি সাফরান তার কথা বলে,সাফরান তাকে আগে না জানিয়েই পুরো পরিবারকে জানাচ্ছে।ব্যাপারটা একদমই ভালো লাগলো না স্নিগ্ধার কাছে।গতো কয়েক সপ্তাহ থেকে স্নিগ্ধা অপেক্ষা করছে সাফরানের কাছ থেকে তার মনের কথা গুলো জানার কিন্তু এভাবে সবার সামনে জানতে হবে এটা ভাবেনি স্নিগ্ধা।

রাফিয়া আহমেদ ও আজাদ আহমেদ স্নিগ্ধার দিকে হাসিমুখে তাকালো।

” মা আমি ফাহিমা কে বিয়ে করতে চাই” ফাহিমার দিকে তাকিয়ে বললো সাফরান। সাথে সাথে লজ্জ্বায় লাল হয়ে গেলো ফাহিমার চোখ মুখ।

বিষ্ময়ে কপালে উঠলো সবার চোখ।সাফরানের মাত্রই বলা কথাটা যেন বারবার প্রতিধ্বনি হচ্ছে কানে।অবাক হয়েছে স্নিগ্ধা নিজেও।নিজের কানকেই যেন বিশ্বাস করতে পারছে না। সাফরান সবাইকে তার দিকে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে আবারো বললো “ফাহিমা ও আমি দুজন দুজনকে পছন্দ করি,আর এজন্যই চাই আপনাদের সবার দোয়ায় আমরা আমাদের নতুন জীবনের সূচনা করি”

ফাহিমার বাবা রাগী মেজাজে বললো ” আর এজন্যেই ফাহিমার বিয়ে ভেঙে দিতে বলছিস বারবার?”

—হ্যা চাচা,,,

—তুই এ কী বলছিস সাফরান (রাফিয়া আহমেদ)

—মা আমি লুকানো কথাটাই তোমাদের জানালাম।ফাহিমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে,আরো পরে জানালে অনেক দেরি হয়ে যাবে।হারিয়ে ফেলবো আমি ফাহিমাকে আর তাই আজ সকলকে ডেকে আমার সিন্ধান্তের কথা জানালাম।

রাফিয়া আহমেদ ছেলের কথা বিশ্বাস করতে পারছে না।রাফিয়া আহমেদের পাশাপাশি সাহিল ও আজাদ আহমেদ ও শকড হয়ে আছে।তারা এতোদিন জেনে আসছে সাফরান স্নিগ্ধাকে পছন্দ করে।হতাশায় তাদের মনটা চুপসে গেলো।

ফাহিমার বাবা বক্কর আহমেদ বলে উঠলো ” দেখ বাবা তুই আমার আপন বড় ভাইয়ের ছেলে,তোক্র ছোট থেকে দেখে আসছি তোর বাবার আদর্শেই তুই মানুষ হয়েছিস তোর কাছে আমার মেয়ে দেওয়া মানে আমারই নজরের সামনে থাকা,তোরা যদি একে অপরকে পছন্দ করে থাকিস তো আমার কোনো আপত্তি নাই।আমি বেশ ধুমধাম করেই তোদের বিয়ে দিবো”,

—না চাচা।আমি ধুমধামে বিয়ে করবো না।আমি একদম সাধারণ ভাবে শুধু পরিবারের মানুষ গুলোকে পাশে রাখতে চাই।

—আচ্ছা বাবা তুই যা চাস তাই হবে।

ফাহিমা খুশিতে তার মা রাবেয়া আহমেদ কে জড়িয়ে ধরে।মেয়ের খুশি দেখে ফাহিমার বাবা ও মা দুজনেই বিয়ের জন্য মত দিয়ে দেয়। সাফরান তার মা ও বাবাকে মন খারাপ করে থাকতে দেখে তাদের কাছে যেয়ে বলে “মা এতোদিন তো বিয়ে দেওয়ার জন্যে মাথা খাচ্ছিলে আমার,এখন কেনো মন খারাপ করে রেখেছো?আমার পছন্দ কী তোমার পছন্দ না?”

সাফরানের মা রাফিয়া আহমেদ চোখ মুছে ছেলের কপালে চুমু খেয়ে বলে উঠলো “তুই সত্যিই যদি ফাহিমাকে পছন্দ করে থাকিস তো আমার এই বিয়েতে কোনো আপত্তি নেই।সংসার তুই করবি তোর জীবন এখানে আমার চাওয়া আর ইচ্ছার কথা বড় না।

—এভাবে কেনো বলছো মা?

রাফিয়া আহমেদ ছেলের কথার জবাব না দিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো। সাফরান সবার মাঝে স্নিগ্ধা কে খোজতে লাগলো।কিন্ত স্নিগ্ধা কে দেখা গেলো না। সাফরান অশ্রু লুকিয়ে ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে আনলো। তাকে যে এভাবেই থাকতে হবে এখন।সবাইকে দেখাতে হবে,স্নিগ্ধাকে দেখাতে হবে সাফরান খুশি আছে।ফাহিমাকে নিয়ে ভালো আছে। ফাহিমার বাবা বক্কর আহমেদ সাফরানের বাবার সাথে দুজনের বিয়ে নিয়ে আলাপ করতে লাগলো।ফাহিমা সাফরানের কাছে এসে বললো ” থেংক্স ভাইয়া ” কথাটা বলে জিব্বায় কামড় দিয়ে আবারো বললো “থেংক্স সাফরান,আমার সব স্বপ্ন সত্ত্যি করার জন্যে থেংক্স,মেনি মেনি থেংক্স,তোমাকে আমার করে দেওয়ার জন্যে”

সাফরান ফাহিমার কথায় কিঞ্চিৎ হাসি ফুটিয়ে তুললো ঠোঁটে,,”আমার কিছু কাজ আছে,তুই মায়ের সাথে কথা বল,আমি আসছি” সাফরান নিজের রুমে আসলো। নিজের চোখেই আজ ছোট হয়ে গেছে সে।এতোদিন তো নিজের সাথে মিথ্যা বলে আসছিলো।আর আজ পুরো পরিবারের সামনে মিথ্যা বলেছে।সাফরানের ইচ্ছা হচ্ছে এখনি ছুটে গিয়ে সবাইকে সত্যটা বলবে,সাফরান ফাহিমাকে না স্নিগ্ধাকে ভালোবাসে।কিন্তু সাফরান জানে কাউকে অনেক বেশি স্বপ্ন দেখিয়ে সেই স্বপ্ন নিজ হাতে ভেঙে দিলে মানুষটাকেই ভেঙে ফেলা হয়।কারণ সেই সাজানো স্বপ্ন পুনরায় আর গোছানো যায় না। নিঃশব্দে কেদে উঠলো সাফরান। বাড়ির সবার অগোচরে স্নিগ্ধাকে খুজে বেড়াচ্ছে।কিন্তু পুরো বাড়ি খুজেও স্নিগ্ধাকে খুজে পাওয়া গেলো না।স্নিগ্ধার অভিমানের কারণ জানে সাফরান এটাও জানে স্নিগ্ধা এখন কোথায় আছে। সাফরান বাইক নিয়ে হিরামতির ব্রিজের দিকে ছুটে চললো।

————————

স্নিগ্ধা জানে না কেনো সে এখানে ছুটে এসেছে,কেনো সাফরান আর ফাহিমার কথা শুনে বুকের ভেতর টা অস্বাভাবিক ভাবে ব্যাথা করছে।কেনো দুচোখ বেহায়ার মতো কেদেই যাচ্ছে। অনেক বেশি কান্না আসছে আজ।বুকের ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছে।বুকের ভেতরের হাহাকার যেন এই প্রবাহমান নদীর সাথে পাল্লা দিয়ে চলেছে।স্নিগ্ধা ডুকরে কেদে উঠলো। তার সাথেই কেনো?কেনো তাকেই সব সময় কষ্ট পেতে হবে?কেনো তারই মন ভাঙবে। কেনো সবাই বারবার স্বপ্ন দেখিয়ে নিজেই ভেঙে দিবে?পুতুল পেয়েছে স্নিগ্ধাকে? যার যেমন ইচ্ছা তেমন ভাবে সাজিয়ে তারপর সব ছিনিয়ে নিয়ে ছুড়ে ফেলে দিবে?

আচ্ছা এসব মিথ্যা ছিলো কী?

মিথ্যে ছিল কী? সেদিনের সেই পরিচয় একরাশ সচ্চ অনুভূতি,সাজানো কিছু সপ্ন,আর সীমাহীন পাগলামি?
অবাক করা কিছু কথা,অভিমানি অশ্রু ফোটা,ডায়েরীময় সপ্নগাথা,মিথ্যে ছিল কী??

অভিমান করে ভুলে থাকা,অপেক্ষার প্রহর গনা,আড়ালে আমায় দেখা,মিথ্যে ছিল কী????

—হ্যা মিথ্যা ছিলো, সব সাজানো নাটক ছিলো (বলে উঠে সাফরান)

স্নিগ্ধা ঘাড় ঘুরিয়ে সাফরানকে দেখে আবারো নদীর দিকে তাকায় তারপর বলে ” চলে এসেছো?আবারো তোমার সাজানো নাটক পরিবেশন করতে?”,

—বাড়ি ফিরে চল।

—যাবো না।

—দেখ পাগলামি করিস না।

সাফরান স্নিগ্ধার হাত ধরে টান দিতেই স্নিগ্ধা এক ঝটকায় নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয় “ডোন্ট টাচ মী একদম ছুবে না আমাকে,প্লীজ চলে যাও আমাকে একটু একা থাকতে দাও please Stay away from me”

স্নিগ্ধা ডুকরে কেদে উঠে। সাফরান ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। প্রিয় মানুষটাকে চোখের সামনে এভাবে কাদতে দেখার থেকে বড় কষ্ট হয়তো আর নেই তাও যদি কারণ সে নিজেই হয়। সাফরান জোর করে স্নিগ্ধাকে কাছে টেনে নেয়,স্নিগ্ধা অনেক জোরাজোরি করে সাফরানের কাছ থেকে নিজেকে মুক্ত করতে কিন্তু পারে না।

স্নিগ্ধা সাফরানের বুকে ঘুষি দিয়ে বলে উঠে “কেনো ভাইয়া?কেনো এতোটা পর করে দিলে মূহুর্তেই? পরেই যদি করে দিবে তাহলে আপন করার নাটকই বা করেছিলে কেনো?কেনো মিথ্যা মায়ায় জড়িয়েছিলে আমাকে? তুমি আর রাহাত দুজনেই সমান।দুজনেই বেঈমান।

সাফরান চুপ করে থাকে তার দুচোখ অশ্রুতে ভরে আছে,স্নিগ্ধা কী দেখছে না?

—বাড়ি চল। এই শুনশান জায়গায় একা থাকিস না প্লীজ স্নিগ্ধা।

—না আমি তোমার সাথে যাবো না। তুমি তোমার ফাহিমার কাছে যাও।আমার জন্য মিথ্যা কেয়ার দেখাতে হবে না,যে সারাজীবন দেখবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয় কিন্তু মাঝ পথে একা করে দিয়ে চলে যায় সে আর যাই করুক আমার ভালো চাইবে না কখনো। চলে যাও এখান থেকে আমি একা বাড়ি চলে যেতে পারবো।

সাফরানের মাথায় রাগ চড়ে যায় মেজাজ নিয়ে স্নিগ্ধা কে বলে ” চুপ একদম চুপ।আর একটা কথা বলবি না,কথা বলল্লে এখানেই মেরে নদীতে ভাসিয়ে দিবো।তুই বাড়ি ফিরে যাবি তো ওকে ফাইন,আমিই তোকে তোর বাড়িতে পৌছে দিবো।

—আমি যাবো না তোমার সাথে।

নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বসে সাফরান,স্নিগ্ধার চিবুক শক্ত করে ধরে বলে, “সাফরান আহমেদের কথার উপর আর কারো কথা খাটে না,আমার কথাই শেষ কথা,সেরা কথা।তাড়াতাড়ি বাইকে উঠে বস।

সাফরানের রাগী মেজাজ ও লাল চোখ দেখে স্নিগ্ধা বেশ ভয় পেয়ে যায়।

—তুমি আমার উপর,,

—চুপ।বাইকে উঠে বস তাড়াতাড়ি।

ধমকে খেয়ে স্নিগ্ধা তাড়াতাডি বাইকে বসে।কিন্তু হেচকি টেনে টেনে ঠিকই কেদে যায় সারাটি পথ।সাফরান স্নিগ্ধাকে বাড়িতে পৌছে দিয়ে হিরামতির নদীর পাড়ে বসে কাদতে থাকে।বাড়ি ফিরে যেতে ইচ্ছা করছে না।
বারবার স্নিগ্ধার সেই করূণ মুখটা ভেসে উঠছে সত্যিই অনেক অন্যায় করে ফেলছে সাফরান স্নিগ্ধার সাথে।

আগেই তো ভালো ছিলো।যখন স্নিগ্ধাকে বুঝতে দেয়নি সাফরান স্নিগ্ধা কে ভালোবাসে।

তখন দুঃখ গুলো ছিল সবার অলক্ষে,,,নিজেকে রেখেছিলাম সবার আড়ালে,,,!জিবনের মানে ছিল কোনোরকম নিজেকে গুটিয়ে রাখা!
বেচে ছিলাম কিছু সপ্ন নিয়ে তবে বাস্তবায়ন করার কোনো তাগিদ ছিল না,,,!কিন্তু জিবন এভাবে মোড় নিবে তা কখনো কল্পনাও করিনি।এভাবে ভালোবাসার মানুষটাকে পেতে পেতেও হারিয়ে ফেলবো তা ভাবিনি।

হাজার কথার মাঝে সাফরানের ফোন বেজে ওঠে। ফোনের স্কীনে ভেসে উঠা নাম’টা সাফরান ও স্নিগ্ধাকে আলাদা করে দিয়েছে।সাফরান ফোন রিসিভ করে না।সাফরানের ইচ্ছা হয় ফোন’টা নদীতে ছুড়ে মারতে।

(চলবে)

গল্পটা সবার কাছে কেমন লাগছে কমেন্টস করে জানাবেন।সবার গঠনমূলক মন্তব্য আশা করবো। স্নিগ্ধা ও সাফরানের প্রেম কাহিনি কোন দিকে মোড় নিবে? দুজনের ভুল বোঝাবুঝি ভেঙে কী কাছে আসতে পারবে নাকি ভুলের মাঝে থেকেই ভুল গুলো কে প্রশ্র‍য় দিয়ে যাবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here