মন প্রাঙ্গনে এলে যখন পর্ব ১

0
429

নিশুতি রাত। চারদিকে কালো মেঘের ছায়া সাথে তেজ বাতাসের আনাগোনা। নিস্তব্ধ রাতে একটা নির্জন হাইওয়েতে আনমনে হেঁটে যাচ্ছে এক ষোড়শী কন্যা। পরনে তার একটা রংচটা সুতির জামা, চুলগুলো অনেক লম্বা কিন্তু এলোমেলো। মনে হয় অনেকদিন ধরে কেউ চুলগুলোর যত্ন নেয়নি। চোখ-মুখে বিষাদের ছায়া স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। চোখ দিয়ে গরিয়ে পড়ছে জলের ধারা। হঠাৎ দূর থেকে একটি গাড়ি মেয়েটির দিকে এগিয়ে আসছে কিন্তু মেয়েটির কোনো হেলদোল নেই। গাড়ি চালক হর্ন বাজাচ্ছে যাতে সে রাস্তায় মাঝখান থেকে সরে যাক কিন্তু সে সরেনি, সে নিজ ধ্যানে মগ্ন। হঠাৎ গাড়িটি তার একদম কাছে চলে আসলো…

অপরদিকে একটা বদ্ধ রুমে বেঁধে রাখা হয়েছে কয়েকজন লোককে। লোকগুলোর অবস্থা দেখে যে কেউ বলতে পারবে তাদের অনেক রূঢ়ভাবে মা*রা হয়েছে। হাতে পায়ে আঘাতের দাগ স্পষ্ট। মা*রের জায়গা গুলো লাল হয়ে গেছে। হঠাৎ
হাতে একটা মোটা লাঠি নিয়ে এক আগুন্তক রুমে প্রবেশ করলো আর ইচ্ছামত লোকগুলোকে মা*রতে লাগলো। লোকগুলোর আর্তনাদ আগুন্তক ব্যক্তিটিকে আনন্দ দিচ্ছিলো। আগুন্তক ব্যক্তিটি তার হাতের লাঠিটাকে ফেলে পাশে থাকা চেয়ারে বসে পড়ল। এবার আগুন্তক লোকটি তার গার্ডদের উদ্দেশ্য করে গম্ভীর কণ্ঠে বললো-
–রাফি আমি যা আনতে বলেছিলাম তা কোথায়? রাফি নামের গার্ডটি একটা বড় ছু’ড়ি নিয়ে আসলো। ছু*ড়ি*টি দেখে আগুন্তকটি একটা হাসি দিলো অতঃপর চেয়ার থেকে দাড়িয়ে গেলো। হঠাৎ করে তার মুখে হিংস্রতা দেখা গেলো সে সকলকে উদ্দেশ্য করে বললো-
–এদের সব গুলোর যৌ*না*ঙ্গ কে*টে ফেলে দে।
–ক্ষমা করুন স্যার! আমাদের ভুল হয়ে গেছে। আমরা আর এমন কাজ করবো না। কিন্তু এটা আমাদের সাথে করবেন নাহ।[মার খাওয়া লোকজনের মধ্যে একজন কথাটি বললো]
–তোদের মতো জা*নো*য়া*র*দে*র মাফ করলে আল্লাহ আমায় মাফ করবে না। কী করে পারলি তোরা একটা বাচ্চাকে ধ*র্ষ*ণ করতে। তোরা ঐ বাচ্চাটার জীবন ধ্বংস করেছিস, ঐ বাচ্চাটার থেকে তার জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছোটবেলা ছিনিয়ে নিয়েছিস, তোদের মাফ করা যায় না। মেয়েটির পুরো জীবন তোরা ধ্বংস করেছিস, তোদের মাফ করলে আল্লাহ আমাকে মাফ করবে না। তোদের জন্য মৃত্যু খুবই ছোট একটা শাস্তি। তোদের এভাবে মারবো না। তিলে তিলে মারবো। রাফি এদের যৌ*না*ঙ্গ কে*টে তাদের সে জায়গায় ফেলে দিয়ে আয় যেখানে তারা বাচ্চাটি কে ধ*র্ষ*ণ করতে চেয়েছিল। আর কেউ যেনো তাদের সাহায্য করতে না আসে। এই বলে আগুন্তক লোকটি চলে গেলো।

শীতের সকাল। আকাশে সূর্য উদয় হয়েছে তার সোনালী কিরণ গুলো চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। বাহিরে হিম শীতল বাতাসে বইছে। বাতাসের কারণে রুমের পর্দা গুলো দুলছে, জানালা দিয়ে সূর্যের কিরণ রুমে প্রবেশ করে বিছানায়য় শায়িত মেয়েটির চোখে, মুখে ও শরীরে পড়ে। যার ফলে সে বিরক্তিতে চোখ কুঁচকে ফেলে এবং আস্তে আস্তে শোয়া থেকে উঠে বিছানার সাথে হেলান দিয়ে বসে। ধীরে ধীরে চোখ দুটি খুললো।

–এইটা কোন জায়গা। আমি এখানে কী করে আসলাম। আমি তো হাইওয়েতে ছিলাম তখন একটা গাড়ি আমার সামনে আসলো তারপর..তারপর.. তারপর কী হয়েছিল? উফফ! মনে আসছে নাহ কেন প্রচণ্ড মাথা ব্যাথা করছে। মাথায় হাত দিয়ে বিরবির করে কথা গুলো বললো সেই মেয়েটি।

হঠাৎ সে কারো পদধ্বনির আওয়াজ শুনতে পেলো। যার ফলে তার সকল ইন্দ্রিয় সজাগ হয়ে গেল। ভয়ে হাত-পা কাঁপতে শুরু করল।
–তা..তা..তারা আমাকে এখানে নিয়ে আসেনি তোহ। না..না..নাহ আমাকে এই জায়গা থেকে দ্রুত পালাতে হবে। এই কথাটি বলে সে বিছানা থেকে উঠে দাড়ালো এবং আশেপাশে কিছু খুঁজতে লাগলো। হঠাৎ সে ফলের ঝুড়িতে একটা ছু*ড়ি দেখতে পেল।

অজ্ঞাত মেয়েটি এই বাড়িটি থেকে বের হওয়ার জন্য হন্ন হয়ে দরজা খুঁজছে। অবশেষে সে দরজা পেয়েও গেল, তাই কোনো কিছু না ভেবে সেদিকে অগ্রসর হলো।

–এই মেয়ে কে তুমি? এখানে কী করছো? হঠাৎ এমন গম্ভীর পুরুষালী কণ্ঠ শুনে মেয়েটি চমকে গেল। পুরুষটি তার দিকে এগিয়ে আসছে মেয়েটি তার পদধ্বনি আওয়াজ শুনতে পাচ্ছে। তার হৃৎপিণ্ড দ্রুত গতিতে লাফাচ্ছে। ভয়ে দুটি শুকনো ঢোক গিললো।

–না এভাবে ভয় পেলে চলবে নাহ। নিজেকে বাঁচাতে হবে। কথাগুলি মনে মনে ভেবে চোখ বন্ধ করে হাতে থাকা ছু*ড়িটি দিয়ে অজ্ঞাত পুরুষটির উপর আক্রমণ করলো। হঠাৎ মেয়েটি তার হাতে কোনো বলিষ্ঠ হাতের ছোঁয়া পেল, তাই সে তাড়াতাড়ি চোখ দুটি খুললো।

মেয়েটির সামনে ভ্রু কুঁচকে দাড়িয়ে আছে এক শ্যাম বর্ণের পুরুষ। পুরুষটির মুখমন্ডলে এক অদ্ভুত মুগ্ধতা আছে তাই সে চেয়েও তার উপর থেকে চোখ ফিরাতে পারছে নাহ। সে গভীর ভাবনায় মগ্ন ছিলো এমন সময় হাতের মালিক তাকে এমন ভাবে টান দিলো যে মেয়েটি একদম পুরুষটির বু*কের নিকট এসে পড়ল। তার ধ্যান ভেঙে গেল হতভম্বের মতো তাকিয়ে ছিলো পুরুষটির দিকে। সে তাড়াতাড়ি অপরিচিত পুরুষটিকে ধাক্কা মেরে সামনে থেকে সরিয়ে দিলো। অতঃপর আবার হাতে থাকা ছু*ড়িটি পুরুষটির দিকে তাক করলো আর ভয়ে ভয়ে বললো-
–দু..দু..দুরে থাকুন আমার থেকে নইলে আ..আ..আমি আপনাকে মে*রে দিবো।

মেয়েটির কথা শুনে পুরুষটির মধ্যে কোনো হেলদুল দেখা গেলো না বরং তার ভ্রু জোড়া শিথিল হয়ে গেল আর ঠোঁটে বাঁকা হাসির রেখা দেখা গেল।
–এই ছু*ড়ি দিয়ে তুমি আমাকে , রুদ্ধ মাহতাবকে মারবে। বলে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো।

–যে বা যারা আমাকে মারার জন্য তোমাকে পাঠিয়েছে তারা মনে হয় তোমাকে ঠিক মতো ট্রেনিং দেয়নি নয়ত তুমি খুব বোকা। জানোনা ফল কা*টার ছু*ড়ি দিয়ে আর যাই হোক কিন্তু মানুষ মা*রা যায় না। দেখতে তো বাচ্চা মেয়ে, কন্ট্রাক নিয়ে মানুষ মারার ব্যবসায় কীভাবে ঢুকলে?গম্ভীর স্বরে মেয়েটিকে প্রশ্ন করলো রুদ্ধ। রুদ্ধের এসব কথা শুনে মেয়েটির বিষ্ময়ের সীমা রইলো না,সে হতবাক হওয়ার মতো রুদ্ধের দিকে তাকিয়ে ছিলো।

–ভাই! এই ডাকটি শুনে রিদ্ধ পিছে তাকালো দেখলো তার প্রাণ প্রিয় বোন দাঁড়িয়ে আছে। তার বোনকে দেখে তার সব গম্ভীরতা দূর হয়ে গেল মুখে এক টুকরো হাসির রেখা দেখা গেলো।

–পরশি তুই এখানে? তোর তো হোস্টেলে থাকার কথা ছিলো?
–ভাই রাজনীতি তোমার মাথা খেয়ে ফেলেছে তাইতো কোনো দিকে তোমার খেয়াল নেই। ভুলে গেলে নাকি আমার পরীক্ষা শেষ হয়ে গেছে, আমার ছুটি। তাই ভাবলাম বাসায় এসে পড়ি আর তোমার সাথে সময় কাটাই।
–তা ঠিক আছে কিন্তু তুই কখন এসেছিস?
–আমি কাল রাতেই এসেছিলাম কিন্তু তুমি বাসায় লেট করে এসেছিলে তাই আমার ব্যাপারে জানো না। কথা বলতে বলতে পরশির চোখ যায় দরজার সামনে দাড়ানো মেয়েটির দিকে তাকে দেখে তার মুখে খুশির ঝলক দেখা দিলো। পরশি অজ্ঞাত মেয়েটির সামনে যেয়ে বললো-
–তুমি উঠে গেছ? কাল রাত আমি কী ভয় টাই নাহ পেয়েছিলাম। বাচ্চা একটা মেয়ে এতো রাতে হাইওয়েতে কী করছিলে? পরশি অজানা মেয়েটিকে প্রশ্ন গুলো করলো। আর কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবে তার আগেই মেয়েটি অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল।
___________________

চলবে…

#মন_প্রাঙ্গনে_এলে_যখন
#লেখনীতেঃ #আলফি_শাহরিন_অর্পা
#সূচনা_পর্ব

বিঃদ্রঃ প্রথম পর্বটি কেমন লেগেছে গঠনমূলক মন্তব্য করে জানাবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here