#মন_প্রাঙ্গনে_এলে_যখন
#লেখনীতেঃ #আলফি_শাহরিন_অর্পা
#পর্ব_২
–ভাই!ভাই! চিৎকার করে ডাকছে পরশি রুদ্ধকে। পরশির চিৎকার শুনে রুদ্ধর হুশ আসে সে এতক্ষণ পরশি আর অজ্ঞাত মেয়েটির কথোপকথন শুনছিলো। কিন্তু তার মাথায় কিছু ডুকছিলো না। এখন এসব ভাবার সময় নেই পরে ভাবা যাবে এসব বিরবির করে দৌড়ে পরশির কাছে গেলো রুদ্ধ।
–ভাই! দেখনা মেয়েটি বেহুঁশ হয়ে গেল। মেয়েটিকে তাড়াতাড়ি ধর। পরশির কথাগুলো শুনে রুদ্ধ না চাইতেও মেয়েটিকে কোলে তুলে নিয়ে মেয়েটিকে রুমে নিয়ে গিয়ে শুইয়ে দিলো।
ডাক্তার মেয়েটিকে এতক্ষণ দেখছিল। দেখা শেষ হলে সে রুদ্ধকে ইশারা করলো বাহিরে আসার জন্য।
–মি. রুদ্ধ মেয়েটিকে দেখে মনে হচ্ছে মেয়েটি প্রচণ্ড ভয় পেয়েছিল তাই অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেছে। আপনার বোনের কাছ থেকে এই মেয়ের ব্যাপারে যতটা শুনলাম তাই থেকে মনে হচ্ছে মেয়েটি ডিপ্রেশনে আছে। আবার মেয়েটি আপনাকেও আঘাত করার চেষ্টা করেছে, ওর মধ্যে কোনো কিছুর ভীতি কাজ করছে। এই ভীতি থেকে মেয়েটিকে বের করতে হবে নয়ত মেয়েটি নিজের কোনো ক্ষতি করতে পারে। আর একটা কথা মেয়েটির হাতে-পা আঘাতের দাগ স্পষ্ট কেউ খুব নির্মমভাবে বাচ্চা মেয়েটিকে মেরেছে। আমি মেয়েটিকে ঘুমের ঔষধ দিয়েছি তাই কয়েক ঘণ্টা ঘুমিয়ে থাকবে। রুদ্ধ এতক্ষণ ডাক্তারের কথা মন দিয়ে শুনল। নিজের এক গার্ডকে চোখ দিয়ে ইশারা করল গার্ডটি ডাক্তারের ব্যাগটি ডাক্তারের হাত থেকে নিয়ে তাকে বাহিরে নিয়ে গেল।
একটু আগে একজন সার্ভেন্ট এসে মেয়েটির ড্রেস পাল্টে দিয়ে গেছে সাথে ক্ষত জায়গা গুলো পরিষ্কার করে মলম লাগিয়ে দিয়ে গেছে। সোফায় বসে এক দৃষ্টিতে বিছানায় শায়িত মেয়েটিকে পর্যবেক্ষণ করছে রুদ্ধ। মেয়েটি দেখতে খুবই সাধারণ। গায়ের রঙ ও বেশ ছিপছিপে, শরীরটা বেশ শুকনো মনে হয় অনেকদিন ধরে খাবার গলাধঃকরণ করেনি কিন্তু মেয়েটির মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় জিনিস হলো মেয়েটির লম্বা চুল। উফফ! রুদ্ধ তুই কী পাগল হয়ে গেছিস? একটা বাচ্চা মেয়েকে এভাবে পর্যবেক্ষণ করছিস, মানুষ জানলে তোর উপর থুথু ফেলবে তার উপর ইভটিজিং এর মামলা খাবি ওটা আলাদা। তার এইসব ভাবনার মধ্যে পরশি রুমে প্রবেশ করল। হঠাৎ দরজা খোলার শব্দে রুদ্ধের ধ্যান ভাঙে।
পরশি রুদ্ধের দিকে একনজর তাকিয়ে মেয়েটির দিকে তাকায়।
–ভাই মেয়েটির মনে হয় জ্ঞান ফিরছে। দেখো ওর হাত-পা নড়ছে। রুদ্ধ তাকিয়ে দেখলো সত্যি মেয়েটির জ্ঞান ফিরছে। ধীরে ধীরে চোখ মেলে উঠে বসার জন্য চেষ্টা করছে। পরশি যেয়ে মেয়েটিকে উঠতে সাহায্য করলো।
মেয়েটি কাচুমাচু ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে রুদ্ধ আর পরশির দিকে। রুদ্ধ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মেয়েটির দিকে। রুদ্ধের এই দৃষ্টি দেখে মেয়েটির প্রাণ যায় যায় অবস্থা।
–নাম কী? গম্ভীরমুখে প্রশ্নটি করলো রিদ্ধ।
–জী..জী!
–কানে কী কম শুনতে পাও। আমি জিজ্ঞেস করেছি তোমার নাম কী?
–স্নি..স্নি..স্নিগ্ধা।
–তোমার বয়স কত?
–ষো..ষো..ষোলো।
–তোমার মা-বাবা থাকে কোথায়? এডড্রেস দাও? মা-বাবার নাম শুনে স্নিগ্ধার ভয়ে কাঁপতে লাগলো। পরশি স্নিগ্ধার অবস্থা দেখে বুঝতে পারলো হয়ত মেয়েটা কোনো সমস্যায় আছে।
–ভাই! কী করছিস? দেখতে পাচ্ছিস না মেয়েটা ভয় পাচ্ছে। এই কথাগুলো বলে পরশি যেয়ে স্নিগ্ধার পাশে বসে ওর কাঁধে হাত রেখে বললো-
–ভয় পেয়েও না। আমাকে নিজের বড় বোনের মত মনে করো। আমাদের সব খুলে বলো। তুমি কী কোনো বিপদে পরেছ৷ পড়লে বলো আমরা যথা সম্ভব চেষ্টা করবো তোমাকে সাহায্যে করার। আর তোমার বাবা-মাই বা কোথায়? তারা এতো রাতে তোমাকে কীভাবে একা এত রাতে নির্জন হাইওয়েতে ছেড়ে দিলে? নাকি তুমি বাসা থেকে পালিয়ে এসেছ? স্নিগ্ধা পরশির কথাগুলো মন দিয়ে শুনলো। অনেক দিন পর এই তার সাথে এত আদুরে কণ্ঠে কথা বললো। তাই সে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো নাহ পরশিকে জরিয়ে ধরে ঝরঝর করে কান্না করে দিলো।
–খুবই নিম্নবিত্ত পরিবারের মেয়ে আমি। আমার বাবা একজন রিকশাচালক ছিলো। হেঁসে-খেলে আমাদের দিন বেশ যাচ্ছিল। দু’বেলা দুমুঠো ভাত পেলে আমাদের আর কি লাগে। হঠাৎ একদিন জসিম কাকা (আমার বাবার বন্ধু) তাড়াহুড়ো করে আমাদের বাসায় আসে আমি তখন গলিতে আমার বন্ধুদের সাথে কুতকুত খেলছিলাম। উনি এসে আম্মাকে কী যেনো বলে আম্মা কান্নায় ভেঙে পড়েন। এই ঘটনার কিছুক্ষণ পড়ে আব্বা বাসায় আসল কিন্তু এসে আগের মতো আমাকে আম্মাজান বলে ডাকেনি। সে এসেছিলো খাটিয়াতে শায়িত হয়ে। কতই বা বয়স ছিলো আমার ১০ কি ১১ বছর। পাড়া-পড়শী সবাই এসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে যাচ্ছিল আর বলছিলো এখন এই বাচ্চা মেয়েটার কী হবে? আমি পাথর হয়ে গেছিলাম সেদিন।আমার আশেপাশে কী হচ্ছে আমার সেদিকে কোনো খেয়াল ছিলো নাহ। আমি তখনো কিছু বুঝে উঠতে পারছিলাম না সবাই কেনো এত কান্না করছে আর আব্বাই বা এভাবে শুয়ে আছে কেন? তারপর আব্বার খাটিয়াকে ধরে নিয়ে যাওয়া হলো কবরস্থানে। আমি তখনো স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম আব্বার চলে যাওয়ার দিকে। এইটুকু বলে স্নিগ্ধা থামলো। কথা বলতে বলতে হাপিয়ে গেছে। পরশিকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই রুদ্ধ সাইড থেকে পানির গ্লাস এনে তাকে দিলো। স্নিগ্ধা পানি পান করে গ্লাসটি সাইড টেবিলে রাখে। তারপর এক দৃষ্টিতে রুদ্ধ আর পরশি উভয়ের দিকে তাকায়। রুদ্ধের মুখে কাঠিন্য বিরাজমান কিন্তু পরশির চোখ টলমল করছে। অতঃপর একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস আবার বলতে শুরু করলো-
–আব্বা মারা যাওয়ার পর আমি আর আম্মা নানার বাসায় উঠি। সেখানে আগে খালি নানি আর মামা থাকত এখন আমরা গিয়েও তাদের সাথে থাকবে। আব্বা মারা যাওয়ার এক বছর পর্যন্ত সব ঠিক ছিলো, মামা-নানি দুজনেই খুব আদর করত। কিন্তু এক বছর পর মামা বিয়ে করে ঘরে মামি আনলেন। আমি অনেক খুশি ছিলাম মামিকে পেয়ে। মামিও প্রথম প্রথম আমাকে খুব আদর করতো। তাদের বিয়ের কিছুদিন পর নানি মারা গেল। মামির আসল রুপ তারপর বেড়িয়ে আসতে লাগলো । এতেদিন নানির জন্য আমাকে বা মাকে কিছু বলতে পারতো না। নানি মরে যাওয়ার পর আমাকে আর আম্মাকে কথায় কথায় খোঁটা দিত। আম্মার গায়ে হাত পর্যন্ত তুলেছে, মামাও প্রথম প্রথম প্রতিবাদ করলেও পরে চুপ হয়ে যান। এর কিছুদিন পর মামি আম্মার জন্য একটা ভালো ঘর থেকে বিয়ের সমন্ধ নিয়ে আসেন। আম্মাও আমার কথা ভেবে রাজি হয়ে যান কেননা এখানে থাকলে মামির অত্যাচার সহ্য করতে হবে।
চলবে….
বিঃদ্রঃ আজকের পর্বটি কেমন লাগলো জানাবেন আর গল্পটি ভালো লাগলে রিয়েক্ট দিয়ে দিবেন। আপনারা কেনো রিয়েক্ট দেন না। গল্পটি কি খুবই খারাপ হচ্ছে।?