মন প্রাঙ্গনে এলে যখন পর্ব ২২

0
871

#মন_প্রাঙ্গনে_এলে_যখন
#লেখিকাঃ #আলফি_শাহরিন_অর্পা
#পর্ব_২২

নাচ-গানের পর্ব শেষ হলো মাত্র। নাচের এই প্রতিযোগিতায় পার্টিতে উপস্থিত সকল তরুণ-তরুণীরা অংশগ্রহণ করেছিল শুধু রুদ্ধ ও স্নিগ্ধা বাদে। স্নিগ্ধাকে এক অপরিচিত পুরুষের সাথে এমন হেঁসে খেলে কথা বলতে দেখে তার মনের ভিতর যে অগ্নিশিখা জ্বলজ্বল করছিলো তা নিভানো খুব প্রয়োজন ছিলো, তাই সে কিছু সময়ের জন্য তার একান্তে সময় কাটানো খুব প্রয়োজন। অপরদিকে স্নিগ্ধার পশ্চিমা সংস্কৃতির উপর অত বেশি আগ্রহ নেই অথবা সহজভাবে বললে সে কোনো অপরিচিত পুরুষের সাথে নাচ করতে অনেক অস্বস্তি অনুভব করবে, পরশি আর মামনি অনেকবার তাকে সেধেছিল কিন্তু সে অনেক বিনম্রতার সাথে তাদের প্রস্তাব প্রত্যাখান করেছে।

পরশিও অনেক সময় ধরে নিজের মনকে পার্টির দিকে মনোনিবেশ করার চেষ্টা চালাচ্ছিল কিন্তু সে তা পারেনি। সবকিছু তার বিষাক্ত মনে হচ্ছিল। এসব প্রতিযোগিতার প্রতি তার তেমন কোনো আগ্রহ ছিলো না। জয়া এসেও তাকে অনেক জোর করলো তার সাথে অংশগ্রহণ করার জন্য, যখন সে তাকে মানাতে সক্ষম হলো না সে মামনির কাছে গেলো। কেনো সে ভালো করে জানে পরশির আর যাই হোক মামনিকে মানা করতে পারবে না, হলোও তাই। নিজের পার্টনারকে সেও সবার মত খুঁজতে লাগলো। হঠাৎ করে পরশির হাত গিয়ে ঠেকেছিলো এক পুরুষের বক্ষস্থলে, সাথে সাথে তার মনে হলো তার শরীরে মধ্যে দিয়ে বিদ্যুৎ দৌড় গেল। ঠিক তখনি সেই পুরুষটি তার ডান হাত দ্বারা পরশির বাম হাত স্পর্শ করলো। এই স্পর্শটি তার খুবই চেনা, সে চাইলেও এই হাতের মালিককে ভুলতে পারবে না। কালো পট্টির ভিতর থেকেই তার চোখ দুটি ভেসে উঠলো। হৃদকম্পন বেড়ে গেল সে নিজেকে ছাড়াতে নিবে এর আগেই জয় তার হাত ধরে টেনে নিজের কাছে আনলো অতঃপর গানের তালে তালে তার সাথে তাল মিলিয়ে নাচতে শুরু করলো। একসময় পরশি আর না পেরে জয়কে ধাক্কা দিয়ে সেখান থেকে চলে আসলো।

___________________

ঢাকা মেডিকেলের করিডরে দাড়িয়ে আছে এক যুবক। চোখ দুটো রক্তলাল বর্ণ ধারণ করেছে, সাদা শার্টটি ঘামে ডুবে গেছে। তার নিজের উপর খুব রাগ তার, কেনো সে পার্টি ছেড়ে গেলো? সে যদি না যেতো তাহলে হয়ত নিজের আদরের বোনকে বাঁচাতে পারতো। নিজের বোনের নিথর দেহটা যখন দেখেছিলো তখন সেই একমাত্র জানে তার মনের অবস্থা কেমন ছিলো। প্রত্যেক মুহূর্তে মনের মধ্যে খারাপ চিন্তা গুলো উঁকি ঝুঁকি করছিলো, স্মৃতিচারণ হচ্ছিল বোনের সাথে কাটানো প্রত্যেক মুহূর্ত। না সে আর ভাবতে পারছে না। যত ভাবছে তার মনে খারাপ চিন্তাগুলোর আনাগোনাও বাড়ছে। এসব চিন্তা করতে করতে দেওয়ালের সাথে ঘেঁষে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো রুদ্ধ।

~কিছুক্ষণ আগের ঘটনা~

রাত এখন ১১ টা ছুঁই ছুঁই। অনুষ্ঠান প্রায় শেষের দিকে। কিছু মুহূর্ত আগে প্রচলিত নিয়ম অনুসারে কেক কাটা হয়েছে। অনেক সময় ধরে অনুষ্ঠানে থাকার ফলে মানুষ ক্লান্তিতে নেতিয়ে পড়েছে, যেমন-তেমন করে হলেও এখন যদি মানুষ বাসায় পৌঁছাতে পারে। ঠিক তখনি এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সম্মুখীন হয় সবাই। আবার সব লাইট অফ হয়ে যায়। সকলে মনে করছে আবার কোনো বক্তৃতা শুনতে হবে কিন্তু সব সময় আমরা বুঝি তা সত্য নাও হতে পারে।

শাড়িতে ভুলে জুস পড়ে যাওয়ার কারণে তা পরিষ্কার করার জন্য এতক্ষণ ওয়াশরুমে ছিলো পরশি তখনি কারেন্ট মহাশয় চলে যায়। এমনি তার মেজাজ এখন তুঙ্গে তার উপর এমন ঘুটঘুটে অন্ধকার। শাড়ি পড়ার কারণে প্রচণ্ড ঘেমে গেছে সে তার উপর শাড়িটাও এখন ভিজা, কারেন্ট চলে যাওয়ার ফলে তা শুকাতে পারেনি। দিনটা শুরু ভালোভাবে হলেও শেষটা এত বিরক্তিকর কেনো হচ্ছে। হঠাৎ কারেন্ট চলে আসলো, সে দম ছেড়ে বাঁচলো। এখন আর তার ওয়াশরুমে গিয়ে কাপড় শুকানোর ইচ্ছা নেই, স্নিগ্ধা কে নিয়ে সোজা বাসায় যেয়ে চেঞ্জ করে ফেলবে। যে ভাবা সেই কাজ।
সে তাড়াতাড়ি করে হলের দিকে গেলো। সে একই ঘটনার আবার পুনরাবৃত্তি ঘটলো মানে কারেন্ট চলে গেলো এবং তার পা টাও শাড়ির সাথে বেজে গেল ফলে সে যখন পড়ে যেতে নিবে তখন সে নিজ কোনো ভাবে সামলে নেয়। এই অন্ধকারে হাটা ঠিক হবে না তাই সে পাশে থাকে পিলারের সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে রইলো।

–আল্লাহ বাঁচালো ভাই। কী গরম লাগছিলো। পাক্কা আধা ঘণ্টা পর কারেন্ট আসলো। আমি আর এই ভারি গাউন পরে থাকতে পারবো না তাই আমিও গেলাম। একটা হামি দিয়ে সেখান থেকে চলে গেল জয়া।

আকস্মিকতায় জয়ার চিৎকারে হতভম্ব হয়ে গেলো সবাই। জয় দৌড়ে ওর কাছে গিছে জিজ্ঞেস করলো কী হয়েছে বোনু? জয়া তর্জনী আঙুল দিয়ে সামনের দিকে ইশারা করলো। জয়ার হাতকে অনুসরণ করে সামনের দিকে তাকালো, মুহূর্তের মধ্যেই তার শ্বাস আটকে গেলো, মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিলো। হঠাৎ তার মায়ের ডাকে তার ঘোর ভাঙ্গলো। আশেপাশে কাঠ জাতীয় কিছু খুজতে লাগলো, আকস্মিক তার মনে আসলো বাগানে প্রচুর কাঠ আছে তাই দৌড়ে গেলো কাঠ আনতে।

অনেক কষ্ট করে কাঠ দিয়ে পরশিকে ধাক্কা দিয়ে পিলার থেকে সরিয়ে আনা হলো। পিলারের মধ্যে পেচানো লাইটগুলোর তারের মধ্যে ত্রুটি ছিলো। তাই কারেন্ট আসার ফলে এর মধ্যে বিদ্যুৎ চলাচলও শুরু হয় যেহেতু ওর শরীর ভেজা আর পিলারের এত কাছাকাছি ছিলো তাই সে ই’লে’ক্ট্রি’ক শ’ক খেয়েছে। তখনি তাকে হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হলো যেহতু ঢাকা মেডিকেল কাছে ছিলো সেখানে নিয়ে হলো। একটু দেরি হলে ওর জীবন সংকটে বাড়তে পারে। এতক্ষণ স্নিগ্ধাও রুদ্ধকে অনেকবার ফোন করেছে কিন্তু রুদ্ধ বারবার ফোন কেটে দিচ্ছে। অবশেষে স্নিগ্ধা না পেরে গার্ডকে ফোন দিয়ে ঘটনাটি জানায়। ঘটনাটি যখন রুদ্ধ কানে পৌছায় সে কিছু সময়ের জন্য স্তব্ধ হয়ে যায়।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here