মন প্রাঙ্গনে এলে যখন পর্ব ২১

0
866

#মন_প্রাঙ্গনে_এলে_যখন
#লেখনীতেঃ #আলফি_শাহরিন_অর্পা
#পর্ব_২১

আহনাফও এসে পড়েছে চৌধুরী বাড়িতে। তার বাবার সাথে জয়ের বাবার খুব ভালো সম্পর্ক আছে। কিন্তু জয় বা জয়াকে সে আগে কখনো দেখেনি। জয়ের সাথে তার দেখা হওয়ার ঘটনাটা খুবই অদ্ভুত। জয় আর আহনাফের প্রথম দেখা একটা পার্টিতে হয়েছিল তখন টুকটাক কথাবার্তা হয়েছিলো। কিন্তু পরে তাদের একটা সেমিনারে দেখা হয়,সেখান থেকেই তাদের বন্ধুত্ব শুরু হয়। পরে তারা জানতে পারে তাদের বাবা একে অপরের বন্ধু। তখন তাদের বন্ধুত্ব আরো গভীর হয়ে যায়। অতীতে কিছু সময়ের জন্য তাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, তখন সবে মাত্র আহনাফ চাকরিতে জয়েন দিয়েছে আর জয়ের জীবনে তখন নানা ধরনের সমস্যা ছিলো। ওদের আবার দেখা সেদিন হয় যেদিন ওদের দুজনের কিছু কমন বন্ধুরা গেট টুগেদারের আয়োজন করে।সেদিন অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে আহনাফ জানতে পেরেছিল জয়া জয়ের বোন।

আহনাফ পার্টিতে এসে জয়াকে দেখে এক প্রকার থমকে যায়। নীল রঙের গাউন, খোলা চুল আর মাথার উপর ছোট একটা তাজ পরায় তাকে অসাধারণ লাগছে। না চাইতেও তার দৃষ্টি বারংবার জয়ার দিকে যাচ্ছে।

______________________

হঠাৎ করে পার্টির সব লাইট অফ হয়ে গেল। কিন্তু তারপর রঙবেরঙের বিভিন্ন লাইট জ্বলে উঠলো।
এমন সময় হলের মাঝখানে এসে একটি লোক এসে দাড়ালো। বর্তমানে সে মানুষটি সকলের মধ্যমণি।

–হ্যালো বন্ধুরা! সবাই কেমন আছেন? আমি হলাম আজ রাত আপনাদের হোস্ট আর দোস্ত এহসান খান। আমি জানি আপনারা সবাই এতক্ষণ বোর হয়ে গিয়েছিলেন তাই আপনাদের বিরক্তি দূর করার জন্য বা*ন্দা হাজির।
মানুষ প্রথম হকচকিয়ে গেলেও হঠাৎ পরবর্তীতে ব্যাপারটা তাদের বেশ মনোরঞ্জন করছে।

–আপনারা সবাই দেখতেই পারছেন পুরো জায়গাটা রঙবেরঙের আলোতে কেমন ঝলমল করছে কিন্তু এই সব বাতি গুলো যদি নিভিয়ে দেই তাহলে ব্যাপারটা কেমন হবে। প্রথমে ভেবেছিলাম জুটিদের মধ্যে নৃত্য প্রতিযোগিতা রাখবো কিন্তু এটা বর্তমানে সকলেই করে তাই ব্যাপারটা একটু ইন্টারেস্টিং করার জন্য এখানে একটা টুইস্ট আছে।

_____________________

–আপনারা সবাই আমার হাতে দুটো কাঁচের বাটি আর এটার ভিতরে কিছু রঙিন চিটস দেখতে পাচ্ছেন। এই দু বাটির মধ্যে একটায় ছেলেদের নাম আরেকটায় মেয়েদের নাম লিখা আছে। যেখানে পার্টি শুরুর আগে আপনারা নিজের নাম লিখে পার্টিতে প্রবেশ করে ছিলেন। খেলা শুরুর প্রথম পর্যায়ে এখানে উপস্থিত সব ছেলেরা আমার হাতের ডানদিকে আর সব মেয়েরা আমার হাতের বামদিকে আসবে। তারপর প্রত্যেক পাশ থেকে একজন করে আসবে আর চিট তুলবে। যার চিটে যে নাম উঠবে সেই হবে আজ একে অপরের ডান্স পার্টনার। আপনারা ভাবছিলেন গেমটা এতটাই সহজ হবে? চলুন আপনাদের ধারণা ভুল প্রমাণ করে দেই। আপনারা যেই চিট টা উঠাবেন তার মধ্যে কার নাম লেখা থাকবে সেটা আপনি ছাড়া কেউ জানতে পারবে না, এমনকি আপনার পার্টনারও না। ছেলে-মেয়ে উভয়ের চোখে কালো পট্টি বেঁধে দেওয়া হবে। অতঃপর পুরো বাড়ির বাতি বন্ধ করে দেওয়া হবে এবং মিউজিক চালু করে দেওয়া হবে। সেই অন্ধকারে মধ্যে আপনাদের আপনার পার্টনারকে খুজতে হবে এবং যখন আপনার মনে হবে এটা আপনার পার্টনার তখনই গানের তালে তালে আপনাদের একে অপরের সাথে ডান্স করতে হবে। আর হ্যা যদি কেউ পার্টনার চুজ করতে ভুল করে শাস্তি কিন্তু ভোগ করতেই হবে।

এমন সময় পুরো বাড়ির সব বাতি জ্বলজ্বল করে উঠলো এবং রঙিন লাইটগুলো নিভে গেলো। হঠাৎ এমন হওয়ায় এহসান অনেকটা অবাক এসব তোহ প্লানে ছিলো না। তখনি কোথা থেকে জয় এসে এহসানের হাত থেকে মাইকটা নিয়ে সকলকে উদ্দেশ্য করে বললো-

–ডান্স কম্পিটিশনে অংশগ্রহণ তো আপনারা পরেও করতে পারবেন। কিন্তু এতক্ষণ পার্টিতে এতক্ষণ থেকে আপনাদের মনে হচ্ছে কি না জানি না তবে আমার অনেক ক্ষুধা লেগেছে। পরে ভাবলাম আমার যেহেতু এই অবস্থা আপনাদের অবস্থা আমার থেকে কম খারাপ তো নয়। আর বাচ্চারা কতটা অস্থির হয়ে পড়েছে তা বলার বাহিরে। তাই গার্ডেনে আপনাদের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্লিজ ইনজয়। উক্ত কথাগুলো বলে জয় তার মাইকটা অফ করে দিলো। জয়ের কথাগুলো অনেক মানুষের ভালো লেগেছে আর বাচ্চাদের কান্না ও সয্য করার বাহিরে ছিলো, এই সময়ে এটাই করণীয় ছিলো।

______________________

–তুই কী পাগল হয়ে গেছিস জয়? কী করলি এটা? কত সুন্দর করে প্রতিযোগিতার ঘোষণা করলাম আর তুই এসে সব চেষ্টা বৃথা করে দিলি। কিছুটা চেচিয়ে বললো এহসান।
–আরে রাখ তোর প্রতিযোগিতা। এই সত্যি করে বলতো গা*জা খাইয়া আসছোস এখানে। কোনো সুস্থ মানুষের পক্ষে এসব বলা সম্ভব না। রাগ-ক্ষোভ নিয়ে কথাগুলো বললো জয়।
–আমারটা বাদ দে। তোর কথা শুনে আমার মনে হইতাসে তুই মেয়াদ উত্তীর্ণ গা*জা খেয়ে আসছোস। তখন থেকে উল্টা-পাল্টা বকতাসোস। কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বললো এহসান।
–এই শা*লা চুপ থাক। আমি তোকে কী বলছিলাম খালি মিউজিক ডিপার্টমেন্টটা দেখতে এইসব প্রতিযোগিতা করার পোকা তোর মাথায় কেমনে ঢুকলো। এখানে বড়রা আছে, ছোট বাচ্চারাও আছে তাদের সামনে এসব প্রতিযোগিতা কী ঠিক হবে। তাছাড়া জন্মদিনের অনুষ্ঠানে এরকম কম্পিটিশন কে রাখে? জয়ের এসব প্রশ্নের প্রতিত্তরে এহসান কিছু বলতে যাবে তখনি সেখানে জয়া এসে পড়ল।

–এসব কি করলে ভাই? এত সুন্দর মোমেন্টটা কেনো নষ্ট করলে? এত কষ্ট করে ইউটিউব ঘেটে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করলাম আর তুমি শেষ মুহূর্তে এসে তুমি তা ধ্বংস করে দিলে। কিছুটা চেচিয়ে এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে ফেললো জয়া।
–সিরিয়াসলি! এসব তোর বুদ্ধি ছিলো আর আমি শুধু শুধু এই বেচারাকে কথা শোনাচ্ছিলাম। পার্টিতে মা আছে, আনাদের আত্মীয়-স্বজনরা আছে তাদের সামনে এসব করতে তোর বিবেকে বাধবে না? তোর লজ্জা লাগবে না? শান্ত কণ্ঠে কথাগুলো বললো জয়
–এতে লজ্জার কি আছে? এখন সবাই এভাবেই পার্টি করে।
–হ্যাঁ করে তাই বলে কী তোরও করতে হবে আব্বুর বিজনেস পার্টনারাও আছে তারা কী ভাববে?
–কিছুই ভাববে না কেননা আমি আব্বুর থেকে পারমিশন নিয়ে নিয়েছি। আর আমি আর কিছু শুনতে চাই না। যেটা যেভাবে আয়োজন করা হয়েছে সেটা সেভাবেই হবে। কিছুটা ভেঙ্গচিয়ে কথাগুলো বলে চলে গেল জয়া।

______________________

–আহনাফ স্যার! আকস্মিক কারো ডাক শুনে কিছুটা বিষ্ময় হলো আহনাফ। এখানে সে জয়কে ছাড়া শুধু জয়াকে চিনে আর জয়া এত ভালো না যে তাকে এত মধুর কণ্ঠে ডাক দিবে। তাই নিজের বিষ্ময়কে চেপে রাখতে না পেরে ফটাফট পিছনে তাকালো।
— স্নিগ্ধা তুমি? এখানে? বিষ্ময় নিয়ে প্রশ্নটি করলো আহনাফ। অতঃপর আবার বললো-
— তুমি জয়ার জন্মদিনের পার্টিতে কী করছো? যতটুকু আমি জানি তোমার আর জয়ার মধ্যে এত ভালো সম্পর্ক নেই যে ও তোমাকে তার জন্মদিনের অনুষ্ঠানে দাওয়াত দিবে।
–আসলে ও আমাকে দাওয়াত দেয়নি। আপনি তোহ আমার জীবনের সব ঘটনা জনেন। আমি এখন যাদের বাসায় থাকি তারা জয়ার বাবার বন্ধুর পরিবার। সেই যোগসূত্রেই আমার এখানে আশা। কিছুটা নিম্ন স্বরে কথাগুলো বললো স্নিগ্ধা।
–তাহলে এই ব্যাপার। একটা কথা বলি মন দিয়ে শুনো জয়া যদি তোমাকে অপমান করার চেষ্টা করে তাহলে প্লিজ মুখ বুজে থাকবে না। প্রতিবাদী হওয়ার চেষ্টা করো। জাস্ট বিকজ তোমার কেউ নেই,তুমি অন্যের বাসায় থাকো এই ভেবে মুখে কুলুপ আঁটবে না। এটা শুধু জয়ার ক্ষেত্রে নয়, সবার ক্ষেত্রে। তুমি যত সহ্য করবে সমাজ তোমাকে ঠিক ততটাই কষ্ট দিবে। আর বর্তমানে তুমি যাদের বাসায় থাকো এবং তাদের ব্যাপার তোমার থেকে যত শুনেছি তারা অন্যায় প্রশ্রয় দে না। তাই তুমি যদি সঠিক হও তারা তোমাকে সাপোর্ট করবে। আর একটা কথা কথাগুলো আমি
তোমার শিক্ষক হিসেবে নয় বড় ভাই হিসেবে বলছি। আর কী সব সময় মুখটা গোমরা করে রাখো? মেয়েরা হবে প্রাণোচ্ছল, পারদর্শী। সবসময় হাসি-খুশি থাকবে। একটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে জীবন থেমে থাকে না। মাথা নাঠিয়ে সম্মতি জানালো স্নিগ্ধা।
–তাহলে হাসছো না কেন? আমি যতটুকু জানি হাসতে টেক্স লাগেনা। রসিকতার সাথে কথাগুলো বললো আহনাফ। আহনাফের কথা শুনে স্নিগ্ধা ফিক করে হেঁসে দিলো। স্নিগ্ধার সেই হাসি দেখে আহনাফ মুচকি একটা হাসি দিলো। কিন্তু তাদের এটা খেয়াল নেই দূর থেকে কেউ তাদের হাসি দেখে জ্বলছে। খুবই তীব্র ভাবে জ্বলছে। চোখ-মুখে রাগের প্রভাব স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। স্নিগ্ধাকে এ্টা অপরিচিত ছেলের সাথে কথা বলতে দেখে কেনো তার কষ্ট, রাগ এবং জেলাসির মত অনুভূতি হচ্ছে জানা নেই রুদ্ধর।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here