মন প্রাঙ্গনে এলে যখন পর্ব ২০

0
877

#মন_প্রাঙ্গনে_এলে_যখন
#লেখনীতেঃ #আলফি_শাহরিন_অর্পা
#পর্ব_২০

রুদ্ধ আর স্নিগ্ধা এসে চৌধুরী বাড়িতে পৌছালো। গাড়ি থেকে নামর সময় স্নিগ্ধা খেয়াল করেনি তার গাউনের ওরনা এক সাইড গাড়ির ভিতরে ছিলো ফলে দরজা লাগানোর সময় সেই অংশ সহ তা আটকে গেছে। রুদ্ধ ততক্ষণে গাড়ি লক করে আগে চলে গিয়েছে। মাইনকার চিপায় ফাসলে যেমন অনুভূতি হয় তেমন ওর আজ হচ্ছে। আর কিছু না ভেবে তা টানাটানি শুরু করে দিলো।

রুদ্ধ এগচ্ছে কিন্তু এখন পর্যন্ত স্নিগ্ধার কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে সে পিছে ফিরে তাকালো। দূর দূর পর্যন্ত স্নিগ্ধার কোনো অস্তিত্ব না পেয়ে সে একটু ঘাবড়ে গেলো। এতটুকু সময়ের মধ্যে কোথায় হাওয়া হয়ে গেল মেয়েটা। তাই সে দৌড়ে স্নিগ্ধাকে খুজতে গেলো।

ওরনা টানতে টানতে সে অস্থির হয়ে গেছে কিন্তু ওরনা বের হচ্ছে না। বেশি শক্তিও ব্যবহার করতে পারছে না যদি ওরনাটা ছিড়ে যায়।

–মানুষ দেখেছি কিন্তু তোমার মত হাঁদারাম দেখিনি। একটা মানুষ এতটা গাধা কী করে হতে পারে।
আকস্মিক রুদ্ধের আওয়াজে স্নিগ্ধা হকচকিয়ে গেলো। পিছনে ফিরে দেখলো রুদ্ধ দুহ হাত ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে আছে।
–মানে?
–এখনো মানে জিজ্ঞেস করছো? ওরনা যে আটকে গেছে তা বলতে পারলে না?
স্নিগ্ধা কিছুটা কাচুমাচু ভঙ্গিতে বললো–
–আপনি অনেক আগে চলে গিয়েছিলেন তাই ডাকতে পারিনি।
রুদ্ধ গাড়ির লক খুলতে খুলতে স্নিগ্ধাকে জিজ্ঞেস করলো-
–আমার মনে হয় না আমি এতদূর গিয়েছিলাম যে তোমার আওয়াজ শুনতে পারব না। এমনে তো আমার সামনে তোমার কথা কখনো থামে না আজ এমন কী হলো যে গলার সব জোর শেষ হয়ে গেল?

ওরনারা তুলে স্নিগ্ধার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো–
–এই নাও তোমার ওরনা। আর সবকিছুতে তাড়াহুড়ো ভালো না। শিথিলতার সাথেও কাজ সম্পন্ন করা যায়।
স্নিগ্ধা শুধু মাথা নাড়িয়ে হমম বললো।
–এখন কী এখানে দাড়িয়ে থাকার প্লান আছে নাকি ভিতরেও যাবে?

____________________

মিসেস সেলিনা চৌধুরী নিজের এক আত্মীয়ের সাথে কথা বলছিল তখন সে বাড়ির ভিতর রুদ্ধকে প্রবেশ করতে দেখলেন। রুদ্ধকে দেখে তার ঠোঁটে বড় একটা হাসির রেখা দেখা গেল। সে আর একমুহূর্ত দেড়ি না করে রুদ্ধের দিকে এগিয়ে গেলেন।

–কীরে তোর যে একটা মামনি আছে সেটা কী ভুলে গেছিস?
–নিজের মাকে কী কেউ ভুলতে পারে যে আমি ভুলবো।
–চুপ কর মিথ্যুক। যদি মনে থাকতে তাহলে কী মামনি র খবর নিতি না। একজনের শাস্তি অন্যজনকে কেন দিলি।
–কে বলেছে মনে রাখিনি? আমি তোমাদের থেকে দূরে আছি এর মানে এই নয় যে মনের দিক থেকেও দূরে আছি। তোমাদের প্রত্যেকটা পদক্ষেপের উপর আমার নজর ছিল।
–তা আমি বেশ ভালো জানি।

এতক্ষণ স্নিগ্ধা রুদ্ধ আর মিসেস সেলিনার কথা শুনছিল। তাদের কথোপকথন দেখে মনে হচ্ছে তারা আসলেই মা ছেলে।

মিসেস সেলিনা এতক্ষণ রুদ্ধের পাশে দাঁড়ানো স্নিগ্ধাকে। তাই সে রুদ্ধকে জিজ্ঞেস করলো-
–রুদ্ধ মেয়েটা কে রে? মাশাল্লাহ দেখতে খুবই সুন্দর। শ্যামলা মেয়েরা মায়াবতী হয় মেয়েটাকে দেখে কথাটা সত্যি মনে হচ্ছে।
–আসসালামু আলাইকুম আন্টি। পাশ থেকে স্নিগ্ধা কথাটি বললো।
–ওয়ালাইকুমুস সালাম। আর খবরদার আন্টি বলবা না। আমি রুদ্ধ আর পরশির মামনি লাগি সেক্ষেত্রে তোমারও মামনি। মনে থাকবে তো?
মিসেস সেলিনার এমন কথা শুনে স্নিগ্ধা খুশিতে আবেগাপ্লুত হয়ে গেছে। আজ অনেকদিন পর কেউ তাকে এমন শাসন করল, মিষ্টি শাসন।
–আচ্ছা রুদ্ধ এই মেয়েটা কী তোর হবু বউ নাকি? মাশাল্লাহ খুব মিষ্টি চেহারা। তাড়াতাড়ি বিয়েটা সেড়ে ফেল। আর কয়দিন পর তোহ বুড়োদের খাতায় নাম লিখাবি।
স্নিগ্ধা মিসেস সেলিনার কথা শুনে ভিষণ লজ্জা পেলো। তার মনে হচ্ছে এখান থেকে দৌড়ে কোথাও চলে যাই। রুদ্ধ আড়চোখে স্নিগ্ধার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে, স্নিগ্ধার লজ্জা প্রাপ্ত মুখ তাকে খুব আনন্দ দিচ্ছিল। কিন্তু এটা প্রকাশ না করে সে বললো-
–না মামনি এমন কিছুই না।
–তাহলে এই মেয়ে কে?
–বলছি তুমি চলো আমার সাথে।

__________________________

জয়া ওর বন্ধুদের সাথে ছবি তুলছিল এমন সময় ওর এক বান্ধবী ওকে বললো-
–তুই আর স্নিগ্ধা কী বন্ধু হয়ে গেছিস?
–কী স্টুপিড প্রশ্ন করছিস আমি আর ঐ মেয়ে তাও বন্ধু, ইম্পসিবল।
–তাহলে ঐ মেয়ে তোর পার্টিতে কী করছে? মেয়েটি আঙুলটি স্নিগ্ধার দিকে তুলে বললো। জয়া সেদিকে তাকিয়ে রেগে গেলো। নিজের গাউনের এক পার্ট উঠিয়ে তেড়ে গেলো স্নিগ্ধার উদ্দেশ্য।

–এই মেয়ে তুমি এখানে কী করছো?
আকস্মিক এমন কণ্ঠে স্নিগ্ধা হকচকিয়ে গেলো তাকিয়ে দেখলো জয়া। সে কিছু বলতে যাবে তার আগেই পরশি এসে পড়লো।

–স্নিগ্ধা এখানে একা দাড়িয়ে কি করছো? আমার সাথে চলো? এই বলে সে স্নিগ্ধাকে টেনে নিয়ে গেল। মূলত পরশি জয়াকে খেয়াল করেনি। আর জয়া ওদের যাওয়ার পানে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।

চলবে…

বিঃদ্রঃ যারা পেজ লাইক আর ফলো করেননি করে ফেলুন?।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here