মন প্রাঙ্গনে এলে যখন পর্ব ১৯

0
789

#মন_প্রাঙ্গনে_এলে_যখন
#লেখনীতেঃ #আলফি_শাহরিন_অর্পা
#পর্ব_১৮

–জীবন আসলেই অদ্ভুত। কখন মানুষকে কোথায় এনে দাড় করিয়ে দিবে ভাবা যায় না। কাল পর্যন্ত আমার না ছিলো কোনো ঠিকানা আর না ছিলো নিজেকে রক্ষা করার কোনো উপায়। শুনেছি পৃথিবী নাকি মানুষের একমাত্র আবাসস্থল, এখানে সেই আদিযুগ থেকে মানুষ বসবাস করে কিন্তু মানুষের রুপে যে হায়েনারাও পৃথিবীতে বসবাস করে তা আমার সৎ ভাইকে না দেখলে বুঝতামই না। সেদিন একটা কথা বুঝে গিয়েছিলাম মেয়েদের নিরাপত্তা কোথাও নেই। না আছে ঘরে আর না আছে বাহিরে। নিজেকে গুটিয়ে ফেললাম সবকিছু থেকে। আর একটা নারী কখনো একটা পুরুষের কাছে নিরাপত্তা পাবে না। নারীরা শুধু পুরুষের হিংস্রতার শিকার হওয়ার জন্য জন্ম নিয়েছে। এসব ভেবে জীবন পার করছিলাম।

কিন্তু এইসবের মধ্যে একটা কথা ভুলে গিয়েছিলাম আমার বাবাও তোহ পুরুষ কিন্তু সে তো কোনোদিন আমার উপর টোকা পর্যন্ত লাগতে দেননি। সবসময় আমাকে আগলে রেখেছিলেন। আমাকে আগলে রাখার খাতায় আরও একজনের নাম যুক্ত হয়েছে কিন্তু তাকে কী বলে সম্বোধন করবো তা আমার জানা নেই। যখন থেকে তার সাথে আমার পরিচয় তখন থেকে তাকে ‘আপনি’ ছাড়া আর কোনো নামে সম্বোধন করিনি। মানুষটা রগচটা, রাগ কন্ট্রোল করতে পারে না, পৃথিবীর সবর সামনে কঠোর কিন্তু এক জায়গায় এসে সে ও নরম হয়ে যায়। তার পরিবার, তার বোনের কাছে। যত রাগ থাকুক না কেনো কখনো তা নিজের বোনের সামনে প্রকাশ করেনি। আমি যে তার কত কাজে বাঁধা দিয়েছি, হ্যাঁ মানছি শাস্তি আমাকে দিয়েছে কিন্তু সেগুলো আমাকে ভবিষ্যৎ এর জন্য অনেক মজবুত করেছে। আমি যাতে ভবিষ্যতে কিছু করতে পারি এর ব্যবস্থা ও তিনি করে দিয়েছন। এমনই বা কয়জন করে। সব পুরুষ এক না, সকলে তার চাহিদার জন্য নারীকে ব্যবহার করে না। কেউ কেউ আছে যারা নারীকে মজবুত হতে সাহায্য করে, নারীর ভিতরে উপস্থিত শক্তি জাগ্রত করতে সাহায্যে করে। কিন্তু বর্তমানে নারী শোষকদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার ফলে কেউ আর পুরুষদের বিশ্বাস করতে পারে না।

উক্ত কথাগুলো লিখে স্নিগ্ধা ডায়েরিটা বন্ধ করে ফেললো। এই কথাগুলো সে কখনো কারো সাথে শেয়ার করতে পারবে না তাই হয়ত ডায়েরিতে তা আবদ্ধ করে ফেলল। এমন সময় তাড়াহুড়ো করে পরশি রুমে প্রবেশ করে।

–আরে স্নিগ্ধা তুমি রেডি হওনি কেন?
–রেডি? কীসের জন্য?
–কেনো তুমি জানো না? মাথা ডানে-বামে নাড়িয়ে না বুঝালো স্নিগ্ধা।
–উফপ! আমিও না পাগল হয়ে গেছি? তোমাকে তো আমি বলিনি যে তুমি জানবে? দিন দিন আমার ভুলে যাওয়ার রোগ হয়েছে। কপাল চাপড়ে কথাগুলো বললো পরশি।
–আমার এক মামনি আছে যে আমাকে তার মেয়ের মত ভালোবাসে। আমার সব আবদার মেনে নিত। আমার আম্মু – আব্বু যখন মারা যায় তখন বেশ ছোট ছিলাম, তাই তারা কেমন দেখতে ছিলো তার আমার ঠিক মনে নেই। সবসময় তার ছবিতেই দেখতাম কিন্তু যখন থেকে মামনি জীবনে এলো তখন থেকে মনে হত আমার মা যদি থাকতো তাহলে একদম তার মত হত। তার শরীরের থেকে কেমন জানি মা মা গন্ধ পাই। তুমি গেলে তোমাকেও খুব সহজে আপন করে নিবে। কিছু কারণ বশত আমাদের সাথে তাদের যোগাযোগ ছিন্ন করতে হয়েছিল কিন্তু আজ পুরাতন সম্পর্ক আবার জোড়া লাগবে তাই আমি খুব খুশি। আজ তারই একমাত্র মেয়ের জন্মদিন। এসব বলতে বলতে পরশির চোখে জল এসে পড়ল। স্নিগ্ধা খুব মনোযোগের সাথে পরশির কথা গুলো শুনল।
–তাই ঝটপট রেডি হে যাও। লেট করো না। এই বলে পরশি চলে গেল।

–আপু তোহ বললো রেডি হতে কিন্তু কী পড়বো তাই তো বুঝে উঠতে পারছি না। এই ড্রেস চুজ করা এত কঠিন কেনো? নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করলো স্নিগ্ধা।

_________________________

রুদ্ধ আজ খুব সুন্দর একটা গোলাপি ও সাদার মিশ্রনে একটা সুট পড়েছে, যা তাকে খুবই আকর্ষণীয় করে তুলছে। চুলগুলো জেল দিয়ে সেট করে সে চলে গেল ড্রয়িং রুমের উদ্দেশ্য।

আকষ্মিক রুদ্ধের ফোনটা বেজে উঠলো। ফোনের নাম্বারের দিকে তাকিয়ে তার ভ্রু কুঁচকে এলো। পরশি বাসায় থাকতে তাকে কোনো ফোন দিলো। কৌতূহল মেটানোর জন্য তাড়াতাড়ি ফোনটা রিসিভ করলো।

–হ্যালো ভাই!
–হ্যাঁ! কী হয়েছে? আর তুই বাসায় থাকতে আমায় কেনো ফোন দিয়েছিস?
–আসলে ভাই আমি বাসায় নেই। আমি জয়ার জন্য একটা গিফট অর্ডার দিয়েছিলাম কিন্তু তারা বলছে তাদের আসতে দেরি হবে কেননা তাদের আরও তিন জায়গায় অর্ডার দিতে যেতে হবে। কিন্তু তত সময় হাতে নেই তাই আমি রাফি ভাইকে সাথে নিয়ে এসেছি। তুমি চিন্তা করো না।
–তোর একবার আমাকে বলা উচিত ছিল? কিন্তু তুই শুধু রাফিকে পাঠালেও পারতি?
–আচ্ছা ভাই এসব বাদ দাও। যা আমি করে ফেলেছি তো ফেলেছি। ও হ্যাঁ আসার সময় স্নিগ্ধাকে সাথে করে নিয়ে এসো?
–আচ্ছা ঠিক আছে। সাবধানে আসিস। এই বলে ফোন কেটে দিলো।

রুদ্ধ ড্রয়িং রুমে স্নিগ্ধার জন্য অপেক্ষা করতে করতে বিরক্ত হয়ে গেছে।
–উফফ! এই মানুষের রেডি হতে এত সময় কেনো লাগে বুঝি না। তারা জানে তাদের সবসময় লেট হয় তাহলে চার ঘণ্টা আগে রেডি হতে কেনো বসে না। এইসব বলছে আর হলে এদিক থেকে সেদিক হাঁটছে। ঠিক তখনই হিলের ঠকঠক আওয়াজ শুনতে পায় রুদ্ধ। সে জানে ব্যক্তিটি স্নিগ্ধা ছাড়া কেউ না তাই সে মনে মনে ভেবে রেখেছে আজ ইচ্ছা মত তাকে কয়টা কথা শুনাবে। এত সময় লাগে কারো রেডি হতে? কই তার তো লাগেনি। এসব ভেবে সে যেই স্নিগ্ধার দিকে তাকালো তার মুখ আপনা-আপনি হা হয়ে গেল। কেননা আজ স্নিগ্ধাকে খুব বেশি সুন্দর লাগছে। স্নিগ্ধা একটা গোলাপি রঙের গাউন পড়েছে যার মধ্যে সাদা রঙের স্টোন গুলো চিকচিক করছে আর তার সাথে চুল মেসি বান করা। আর কাকতালীয় ভাবে তার আর স্নিগ্ধার ড্রেসের রঙ এক।

–সরি! সরি! আমার জন্য আপনাকে অনেক অপেক্ষা করতে হলো। আসলে আমি বুঝতে পারছিলাম না কী পড়বো। তাড়াতাড়ি চলুন! অনেক লেট হয়ে গেছে আমাদের। রুদ্ধ এতক্ষণ হা করে স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে ছিলো। স্নিগ্ধার কোনো কথা রুদ্ধের কানে গেছে কি না সন্দেহ। যেই না স্নিগ্ধা এগোতে যাবে ঠিক তখনই তার পা গাউনে বাজলো ফলে সে পড়ে যেতে নিলো কিন্তু তার আগেই তাকে রুদ্ধ ধরে ফেলল। ফলে সে এখন রুদ্ধের বাহুবন্ধনীতে আবদ্ধ।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here