মন প্রাঙ্গনে এলে যখন পর্ব ১৬

0
892

#মন_প্রাঙ্গনে_এলে_যখন
#লেখনীতেঃ #আলফি_শাহরিন_অর্পা
#পর্ব_১৬

–ক্রিং! ক্রিং! সেলিনা চৌধুরী দুপুরের খাবারের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল হুট করে তার মোবাইল ফোনটা বেজে উঠলো। সে বেসিনের পাশে থাকা গামছা দিয়ে হাত মুছতে মুছতে গেলেন ফোনের কাছে। ফোনের স্ক্রিনের নামটি দেখে তার চোখ ছলছল করে উঠলো। আজ কতদিন পর মেয়েটার সাথে কথা বলবে আর বিলম্ব না করে সে ফোনটা রিসিভ করে ফেললো।

–মামনি! পরশির মুখে মামনি ডাক শুনে তার অন্তরটা কেঁপে উঠলো। কতদিন পর মেয়েটার মুখে মামনি ডাক শুনছে সে। কিন্তু মেয়েটার প্রতি তার তীব্র অভিযোগ আছে তাই সে পরশির প্রশ্নের কোনো জবাব দিলো না।
–ও মামনি! তুমি কথা বলছো না কেন? পরশির এমন মিষ্টি কন্ঠে মামনি ডাক শুনে সেলিনা বেগমের সব রাগ পানি হয়ে গেল।
–মার খাবি তুই আমার হাতে। এতদিন পর তোর এই মামনির কথা মনে আসলো। তোকে কী আমিও কষ্ট দিয়েছিলাম যে তুই আমার সাথে কোন যোগাযোগ রাখলি না। সেলিনা চৌধুরীর এমন অভিযোগ মূলক কথা শুনে পরশি হু হু করে কেঁদে দিলো। আজ অনেকদিন পর নিজের মনের মধ্যে লুকায়িত অগণিত কথা তার মামনিকে বলে দিল। নিসন্দেহে আজ তার অনেক হালকা লাগছে।

___________________________

–স্নিগ্ধা! স্নিগ্ধা! বলে চিল্লিয়ে বাসার ভিতর প্রবেশ করলো রুদ্ধ। স্নিগ্ধা তখন রুদ্ধের কাপড়চোপড় গুছচ্ছিল। রুদ্ধের আকস্মিক ডাকে স্নিগ্ধা হতবিহ্বল হয়ে গেল কিন্তু মনের ভুল ভেবে অতোটা পাত্তা দিলো না। অতঃপর যখন আবার রুদ্ধের ডাক শুনল সে এটাকে মনের ভুল বলে ভাবতে পারলো না, ছুটে গেল তার কাছে।

–জী.জী। আপনি আ..মাকে ডেকেছিলেন। হাঁপাতে হাঁপাতে কথাগুলো বললো স্নিগ্ধা। রুদ্ধের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তার উপর নিবদ্ধ।
–হমম আমি তোমাকে ডেকেছি। কিন্তু এভাবে দৌড়ে আসার মানে কী? গম্ভীর কণ্ঠে প্রশ্নটি করলো রুদ্ধ।
–আসলে..মানে..।
–ম্যা..ম্যা বন্ধ করো আর আমার জন্য দুধ দিয়ে এক কাপ চা বানিয়ে আনো তো? রুদ্ধের হঠাৎ এমন আবদারে স্নিগ্ধা হা হয়ে গেল।
–কি হয়েছে এভাবে হা করে তাকিয়ে আছো কেনো?
–মা..নে। আপনি কী আমাকে বলেছেন?
–এখানে কী তুমি ছাড়া আর কেউ আছে যে তাকে বলবো আর তাছাড়া কেউ থাকলেও কাজটা তোমাকেই করতে হত কেননা আমার কাজ করার দায়িত্ব তোমার উপর তা নিশ্চয়ই ভুলে যাওনি?

________________________

শীতের শৈত্য প্রবাহ কেটে গেছে অপরদিকে গ্রীষ্মের উত্তপ্ত রৌদ্র ধরনীর বুকে নেমে এসেছে। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে স্নিগ্ধা, পরশি ও রুদ্ধের জীবনেও অনেক পরিবর্তন এসেছে। স্নিগ্ধা এখন নিজের অতীত ভুলে জীবনে এগিয়ে গিয়েছে। স্নিগ্ধা এখন রুদ্ধের প্রায় সব কাজ করে দেয় সহজ ভাষায় বললে রুদ্ধের সব কাজ করা ওর অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। রুদ্ধের কখন কি লাগবে এটা স্নিগ্ধার চেয়ে ভালো কেউ বলতে পারবে না। তাছাড়া তাদের দু’জনের সম্পর্ক আগের থেকে অনেক সহজ হয়েছে। বর্তমানে স্নিগ্ধা রুদ্ধকে দেখলে পালাই পালাই করে না। আবার স্নিগ্ধা পড়াশোনার ক্ষেত্রে ও বেশ এগিয়ে গেছে। পড়াশোনায় ওকে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছে আহনাফ। কেউ ভাবতে পারেনি এত কম সময়ে স্নিগ্ধা এত উন্নতি করবে। তাই ওর স্কুলের শিক্ষকরা ওর প্রশংসায় পঞ্চমুখ। এখন স্নিগ্ধার গুটি কয়েক বন্ধু-বান্ধব হয়েছে বটে। তাদের সাথে হেঁসে-খেলে তার দিন পার হয়ে যায়। কিন্তু স্নিগ্ধার এই উন্নতি একজনের সহ্য হয় না আর সে হলো জয়া। জয়ার মনে স্নিগ্ধাকে নিয়ে প্রচণ্ড হিংসাত্মক ভাবনা জন্মেছে। স্কুলের সবার এটেনশন স্নিগ্ধা পাচ্ছে তা সে মোটেও সহ্য করতে পারছে না। সে পড়ালেখায় মনোযোগী না হলেও সবসময় সবার মনোযোগ আকর্ষণকারী ছিলো। কিন্তু স্নিগ্ধা আসার পর থেকে সবাই স্নিগ্ধার সাথে তাকে তুলনা করে, তাকে কটাক্ষ করে কথাবার্তা বলে, যা তার মোটেও পছন্দ নয়। তাই সে সবসময় স্নিগ্ধাকে হেনস্ত করার চেষ্টা করে। তাকে পদে পদে অপদস্ত করে। পানি যখন মাথার উপরে উঠে যায় ভালো ভালো মানুষের ধর্য্য ভেঙে যায়, স্নিগ্ধার ক্ষেত্রে ও তাই। সে এখন জয়াকে পাল্টা উত্তর দেয়, চুপ থাকে না।

রুদ্ধের ভিতরে ও বেশ পরিবর্তন এসেছে। এখন তার সব কাজে স্নিগ্ধাকে লাগে। স্নিগ্ধাকে ছাড়া যেন তার কোনো কাজ সম্পূর্ণ হয় না। মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে স্নিগ্ধাকে সে ভয় দেখায়, তার ভীতু চেহারা তাকে খুব আনন্দ দেয়। আর স্নিগ্ধার হাতের চা না খেয়ে তার দিন শেষ হয় না। আবার তার আর জয়ের সম্পর্কে ও টুকটাক পরিবর্তন এসেছে। আগে জয়ের সাথে কথা না বললেও কাজের জন্য টুকটাক কথা বলে। জয় ও সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে যাতে রুদ্ধ তাকে মাফ করে দিক।

অপরদিকে পরশি একটা ভালো ভার্সিটিতে চান্স পেয়ে গেছে। এখন সে রুদ্ধের সাথেই থাকে। সে আর হোস্টেলে যাবে না এটা রুদ্ধকে জানিয়ে দিয়েছে। রুদ্ধ পরশির এই সিদ্ধান্তে অনেক খুশি। অবশেষে তার বোন তার কাছে থাকবে। পরশি আর সেলিনা চৌধুরীর ও আবার আগের মত বন্ডিং হয়ে গেছে। কিন্তু এই সব জয় আর রুদ্ধের আড়ালে। কিন্তু এখন এক বিপত্তি এসে হানা দিয়েছে তার জীবনে। সামনে জয়ার জন্মদিন, তাই মামনি তাকে আর রুদ্ধকে আসতে অনেক রিকুয়েষ্ট করছে আর সে তার মামুনির রিকুয়েষ্ট ফেলতে পারছে না। সবচেয়ে বড় কাজ এখন তার ভাই রুদ্ধকে মানানো, যা নেহাৎ অসম্ভব।

__________________________

রুদ্ধ বাগানে বসে আরামসে স্নিগ্ধার হাতের চা খাচ্ছে আর সূর্যাস্ত উপভোগ করছে। এমন সময় তার পাশে সে পরশি বসলো। রুদ্ধ আড়চোখে তা খেয়াল করে আবার চায়ের কাপে চুমুক দিলো।

–ভাই! একটা কথা বলতে চাচ্ছিলাম?
–হ্যাঁ বল!
–ভাই আমি একটা সম্পর্ক ঠিক আগের মত করেছি তোমার থেকে লুকিয়ে। আমি জানি তোমার থেকে লুকানো ঠিক হয়নি কিন্তু তুমি যদি আমাকে মামনির সাথে মিশতে মানা করে দাও এই ভয়ে তোমাকে বলিনি। চোখ বন্ধ করে এক নিঃশ্বাসে বলে ফেললো পরশি। রুদ্ধের কোনে সারা শব্দ না পেয়ে সে আস্তে আস্তে চোখ খুললো। দেখলো রুদ্ধ ঠিক আগের মত চায়ে চুমুক দিচ্ছে। সে এত বড় একটা কথা বললো এতে রুদ্ধ কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না।
–আর কিছু?
–হমম। জয়ার জন্মদিন উপলক্ষে মামনি আমাদের সবাইকে দাওয়াত দিয়েছে আর আমি তার রিকুয়েষ্ট ফেলতে পারিনি।
–তোর কী মনে হয় তুই যে মামনির সাথে যোগাযোগ করেছিস তা আমি জানতে পারব না, এই রুদ্ধকে ধোঁকা দেওয়া এতটাই সহজ। আমি সেই প্রথম থেকেই জানতাম কিন্তু কিছু বলিনি কেন জানিস? কারণ আমি জানি একজনের ভুলের শাস্তি আরেক জনকে দিতে নেই। অতীতের সেই ঘটনায় তাদের কোনো দোষ ছিলো না কিন্তু তারা যদি তোর আশেপাশে থাকতো তাহলে তুই স্বাভাবিক হতে পারতি না তাই এতদিন তাদের সাথে কোনো সম্পর্ক রাখিনি। কিন্তু এখন যখন সব ঠিক হয়ে গেছে আর কোনো অভিযোগ নেই। আমরা যাবো জয়ার জন্মদিনে।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here