মন প্রাঙ্গনে এলে যখন পর্ব ১৫

0
915

#মন_প্রাঙ্গনে_এলে_যখন
#লেখনীতেঃ #আলফি_শাহরিন_অর্পা
#পর্ব_১৫

আজ স্কুলে স্নিগ্ধার প্রথম দিন। সে আজ খুবই আনন্দিত। তার মনে হয়েছিল সে আর কখনো পড়ালেখা করতে পারবে না কিন্তু সে কখনো ভাবেনি জীবন তাকে এভাবে সারপ্রাইজ করবে। সে এখন নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে পরে আর অন্যের উপর বোঝা হয়ে থাকতে হবে না। এসব ভাবতে ভাবতে সে স্কুলের ভিতর প্রবেশ করলো।

স্কুলের ভিতর প্রবেশ করে স্নিগ্ধা হা হয়ে গেল। কেননা জায়গাটা খুবই খোলামেলা ছিল। সামনে বিশাল মাঠ। মাঠটিকে চারপাশ দিয়ে ঘিরে রেখেছে স্কুলের বিল্ডিং গুলো। মাঠের পাশে একটা ছোট বাগান আছে যেখানে প্রায় নানা ধরনের ফুল আছে। এসব আগ্রহের সাথে দেখতে দেখতে এগোতে লাগলো। যখন পরশির সাথে স্কুলে এসেছিল তখন পিছনের গেট দিয়ে ঢুকেছে আর বেড়িয়েছে তাই স্কুল পরিদর্শনের সময় পায়নি। আচমকা হাঁটতে হাঁটতে কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে স্নিগ্ধা ও অপরপক্ষে ব্যক্তিটি নিচে পড়ে গেল।

____________________

পরশি আজ অনেকদিন পর বাসা থেকে বের হলো। উদ্দেশ্য শপিং করা আর নিজেকে ট্রিট দেওয়া। ব্যাপার অদ্ভুত হলেও সত্যি। আপাদত জীবনে কেউ নেই যার সাথে সে নিজের সুখ-দুঃখ শেয়ার করবে আর যারা ছিল তাদের নিজ দোষে হারিয়েছে আর যারা আছে তারা প্রচণ্ড ব্যস্ত। এমন নয় যে তাদের বললো তারা পরশির সাথে আসতো না কিন্তু এখন নিজের প্রয়োজনে মানুষকে বিরক্ত করতে পরশির ভালো লাগে না।

আজ প্রচন্ড শপিং করে ফেলেছে পরশি। দু-হাত ভর্তি ব্যাগ। আর আজই সে তার সাথে কোনো হেল্পার আনেনি তাই যত জ্বালা সব তাকে পোহাতে হচ্ছে। শপিং ব্যাগ গুলো ঠিক করতে করতে হাঁটার সময় আকস্মিক সে কারো সাথে হালকা ধাক্কা খায় ফলে তার হাতে থাকা বেশ কয়টা ব্যাগ নিচে পড়ে যায়। তাই সে তাড়াতাড়ি নিচে বসে ব্যাগ গুলো উঠাতে লাগলো।

–আই এম সো সরি! আসলে আমি খেয়াল করিনি। আজ অনেক বেশি শপিং করে ফেলেছি তাই সামাল দিতে পারছিলাম না। আর হেল্পারও সাথে আনিনি। তাই কিছু মনে করবেন না। এই কথাগুলো সে উপরক্ত ব্যক্তিটির দিকে তাকালো। তার সামনে দাড়ানো ব্যক্তিটিকে দেখে সে কিছুক্ষণের জন্য থম মেরে গেল কেননা ব্যক্তিটি আর কেউ না জয়। জয়কে দেখে সে তাড়াতাড়ি নিচে থাকা ব্যাগটি উঠিয়ে দাড়িয়ে গেল।

–সরি। এই বলে পরশি সেখান থেকে চলে যেতে নিলে জয় ওকে হঠাৎ প্রশ্ন করে বসলো।
–কেমন আছো পরশি?জয়ের প্রশ্ন শুনে পরশি জয়ের দিকে তাকিয়ে একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বললো-
–আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহর রহমতে আমি খুব ভালো আছি। তাছাড়া জীবনে আমার খারাপ থাকার কোনো কারণ নেই। যারা আমার জীবনে সুখ নামক ছলনার লোভ দেখিয়ে দুঃখ বয়ে এনেছিল তাদের অনেক আগেই এই পরশি মাহতাব নিজের জীবন থেকে বিদায় জানিয়ে দিয়েছে।
–হ্যাঁ মানলাম তোমার জীবনে কষ্টের যারা কারণ ছিলো তাদের সাথে তোমার কোনো সম্পর্ক নেই কিন্তু যারা তোমাকে ভালোবেসে আগলে রেখেছিল তাদের কেনো নিজের থেকে দূরে সরিয়ে রাখছো। তোমার ভালোবাসাকে অপমান করার শাস্তি তারা আমাকে এখন পর্যন্ত দিয়ে যাচ্ছে আর সত্যি বলতে এই নিয়ে আমার কোনো আক্ষেপ নেই কারণ আমি এর যোগ্য ছিলাম। দয়া করে মায়ের সাথে একটু কথা বলে নিও৷ তার মতে সে এক কু*লা*ঙ্গা*র জন্ম দিয়েছে যার জন্য তার ফুলের মত মেয়েটার জীবন নষ্ট হয়ে গেল। এই কথাগুলো বলে জয় সেখান থেকে চলে গেল। পরশি এতক্ষণ মনোযোগ দিয়ে জয়ের কথা শুনছিলো। আসলেই তোহ সে জয়ের জন্য তার পুরো পরিবারকে শাস্তি দিয়েছে। যারা তাকে ভালোবেসে ছিল তাদের সাথে সম্পর্ক কিভাবে ছিন্ন করল।

_________________________

–এই মেয়ে! দেখে হাঁটতে পারো না? চোখগুলো কী আলমারিতে তালা দিয়ে আসছো? রাগে ফুসফুস করতে কথাগুলো বললো জয়া।
–আসলে মাফ করবেন! আমি তোমাকে দেখতে পাইনি।
–দেখতে যেহেতু পাও না তাহলে চোখে চশমা লাগিয়ে হাঁটবে নয়ত বাসায় বসে থাকবে এখানে কী করছ?
–আসলে আমি স্কুলে নতুন তাই তাকিয়ে তাকিয়ে স্কুলটা দেখছিলাম। তাই সামনে যে কেউ আসছে আর খেয়াল করিনি। ইতস্তত বোধ করে কথাগুলো বললো স্নিগ্ধা।
–সাধারণত গ্রামের মেয়েরাই এমন করে নতুন কিছু দেখলে তাকিয়ে থাকে। তা তুমি কোন গ্রাম থেকে উঠে এসেছ? বিরক্তির সাথে প্রশ্নটি করলো
জয়া।

–সাট আপ জয়া! এতক্ষণ জয়া আর স্নিগ্ধার কথোপকথন দূর থেকে দাড়িয়ে শুনছিলো আহনাফ। সে ভেবেছিলাম যেহেতু স্নিগ্ধা সরি বলে দিয়েছে তাহলে ব্যাপারটা মিটমাট হয়ে যাবে কিন্তু জয়ার কথাবার্তা শুনে আহনাফের রাগ উঠে গেল। তাই নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলো না।

–ও যখন তোমায় সরি বলেছে তোমার উচিত ছিল তাকে মাফ করে দেওয়া কিন্তু ওর সাথে পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া কেনো করছো?
–আমি ওর সাথে ঝগড়া করছিলাম না জাস্ট ওর দোষ গুলো ধরিয়ে দিচ্ছিলাম।
–ওহ রিয়েলি! কোনটা ভুল ধরা আর কোনটা ইনসাল্ট করা আমি এর অন্তর জানি। যদি ওর দোষগুলোই ধরাচ্ছিলে তাহলে ও কোথা থেকে আসছে এই নিয়ে প্রশ্ন উঠতো না। আর ও যদি গ্রামের মেয়ে হয়ে থাকে তাহলে তুমি নিজেকে যেভাবে ওর সামনে প্রেজেন্ট করেছো লাইক সো কল্ড শহরের মেয়ে মানুষ শহরের মেয়েদের খারাপ ভাববে। তাই নিজের দাম্ভিকতা ত্যাগ কর। স্কুলে জাত-পাত ভেদাভেদ করা হয় না এটা মাথায় রেখো। এখন দ্রুত ক্লাসে যাও। জয়া আহনাফের তেঁতো কথা হজম করতে না পেরে সেখান থেকে প্রস্থান করলো।

–তোমার নাম কী? অত্যন্ত মোলায়েম কণ্ঠে আহনাফ প্রশ্নটি করলো।
–জী স্নিগ্ধা।
–স্নিগ্ধা। নিউ স্টুডেন্ট। দেখ স্নিগ্ধা আমার জীবনকে যত সহজ ভাবি জীবন ততটা সহজ না। বাস্তবিকতা খুবই কঠিন। জীবন যুদ্ধে জয়ী হতে হলে নিজেকে মজবুত করতে শিখ। একা চলতে গেল জীবনে প্রচুর ঝড়-ঝাপটা আসবে। তুমি যদি এই ঝড় মোকাবিলা না করতে পারো জীবন পার করা খুবই কঠিন হয়ে যাবে। সারাজীবন তোমার পাশে তোমাকে আগলে রাখার মত কেউ থাকবে না। জীবনের কোনো না কোনো পর্যায় তোমায় একা চলতে হবে। তাই নিজের জন্য হলেও যে ভূল তুমি করোনি তার দায় নিয়ো না। স্নিগ্ধা অবাক দৃষ্টিতে আহনাফের দিকে তাকিয়ে আছে। আহনাফ ওর অবস্থা দেখে মুচকি হেসে বললো –
–তোমার পাস্ট সম্পর্কে প্রিন্সিপাল স্যারের থেকে শুনেছি।

চলবে…..

বিঃদ্রঃ আপনাদের পছন্দের জুটি কোনটি?
আহনাফ?জয়া
জয় ?পরশি
রুদ্ধ ?স্নিগ্ধা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here