#মন_প্রাঙ্গনে_এলে_যখন
#লেখনীতেঃ #আলফি_শাহরিন_অর্পা
#পর্ব_১৪
কুয়াশাচ্ছন্ন সকাল সাথে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। হাতে চায়ের কাপ নিয়ে উপভোগ করছে স্নিগ্ধা। জানালার পাশে থাকা নয়নতারা গাছটির দিকে তার দৃষ্টি না চাইতেও যাচ্ছে। বৃষ্টির ফোঁটা গুলো একটার একটা ঐ গাছের ফুল ও পাতার উপর টপটপ করে পড়ছে। দেখতে একদম মতি-মুক্তার মত লাগছে। ইদানীং তার কথা বলতে খুব ইচ্ছা করে। কিন্তু তার যে কথা বলার মানুষের বড্ড অভাব। হ্যাঁ! ইদানিং পরশি আপুর সাথে তার খুব ভাব হয়েছে কিন্তু আপুর পরিক্ষার জন্য তাকে ওতটা সময় দিতে পারে না। বাড়িতে কয়েকজন মেয়ে সার্ভেন্ট আছে যাদের সাথে সে কথা বলার চেষ্টা করেছিল কিন্তু তারাও তার দিক কেমন দৃষ্টিতে যেনো। আর সবশেষে বাকি থাকে রুদ্ধ। উনার থেকে যত হাত দূরে থাকতে পারে তত দূরে থাকার চেষ্টা করে স্নিগ্ধা। তাকে সঙ্গ দেওয়ার মত এই প্রকৃতি ছাড়া কেউ নেই। হাজারো না বলা কথা যা সে অন্য কারো সাথে শেয়ার করতে পারবে না, হাজারো অপারগতা, মনের মধ্যে জমে থাকা হাজারো রাগ-কষ্ট-অভিমান সব সে প্রকৃতির সাথে শেয়ার করতে পারে।
হঠাৎ দরজায় টোকা পড়লো স্নিগ্ধার ধ্যানে বাঁধা পড়লো তাই সে কিছুটা বিরক্তি অনুভব করলো। তাও নিজের বিরক্তিকে প্রকাশ না করে ব্যাক্তিটিকে রুমে আসার অনুমতি দিল। ব্যক্তিটি এই বাসায় কর্মরত বেতনভুক্ত মানুষের মধ্যে একজন। ব্যক্তিটি তার সামনে এসে বললো রুদ্ধ স্যার নাকি তাকে ডাকছে। হঠাৎ রুদ্ধের আচমকা ডাকে সে খানিক বিস্মিত হয়েছিল কিন্তু পড়ে নিজেকে সামলে স্নিগ্ধা ব্যক্তিটিকে বললো সে আসছে। উপরন্তু ব্যক্তিটি চলে গেল।
______________________
আহনাফ ক্লাসে বসে বসে সব স্টুডেন্টের গনিত খাতা রয়েছে চেক করছে আর আরচোখে জয়ার দিকে তাকাচ্ছে। কিন্তু আজ জয়ার ব্যবহারে সে আশ্চর্য হয়ে গেছে। যে মেয়ে সারাক্ষণ ক্লাসে কথা বলত, দুষ্টুমি করত আজ সে কোনো একবারে নিরব। চুপচাপ পুরো ক্লাস মনোযোগ সহকারে করেছে। আবার বাড়ির কাজও করে এনেছে। আগের দিনের শাস্তিগুলো কী সত্যি কাজে দিয়েছে? উহ! হু! না! জয়ার ব্যবহার তাকে সন্তুষ্ট করতে পারছে না। হয়ত জয়া ভদ্র হয়ে গেছে নয়ত সামনে তার জন্য সুনামি বয়ে আনছে। কিন্তু আপাদত সে এসব নিয়ে মাথা ঘামালো না।
–সামনে তোমাদের ক্লাস টেস্ট আর তোমাদের খাতা দেখে যা বুঝলাম সবাই অন্য কোনো সাবজেক্টে মারো না মারো কিন্তু গনিতে লাড্ডু ঠিকই মারবে। আজ কিছু ইম্পর্টেন্ট ম্যাথ দিয়ে দিব বাসায় থেকে ভালো করে শিখে আসব। গম্ভীর স্বরে কথাগুলো বলে চেয়ার থেকে উঠতে যাবে তখনই সে আটকে গেলো উঠতে আর পারলো না। সে আবার উঠার চেষ্টা করলো কিন্তু তাও পারলো না। হঠাৎ তার দৃষ্টি যায় দ্বিতীয় বেঞ্চে বসা জয়ার দিকে, সে তার অবস্থা দেখে মিটিমিটি হাসছে। অতঃপর তার যা বুঝার সে বুঝে গেল।
জয়ার এখন খুব জোরে জোরে হাসতে ইচ্ছে করছে। খুব কষ্টে নিজেকে দমিয়ে রেখেছে। আমার সাথে পাঙ্গা এবার বুঝো ঠেলা। আমাকে পুরো ক্লাসের সামনে কান ধরিয়ে রেখেছিলে তাই না, কিন্তু আমি তো ভালো স্টুডেন্ট, টিচারদের খুব সম্মান করি তাই আপনাকে আজ বসিয়ে রাখলাম। চেয়ারে এমন গ্লু লাগিয়েছি আপনি যদি উঠেও পড়েন আপনার প্যান্ট আর প্যান্টের জায়গায় থাকবে না। এসব কথা ভেবে জয়ার পৈশাচিক আনন্দ হচ্ছে।
–স্যার! আপনি না কয়টা অংক দিবেন? তাড়াতাড়ি দিন। ঘণ্টা বাজার টাইম হয়ে গেছে। জয়ার এমন প্রশ্নে আহনাফ ওর দিকে তাকিয়ে এমন রিয়াকশন দিলো যেন তাকে কাঁ’চা খেয়ে ফেলবে।
_________________________
স্নিগ্ধা দাড়িয়ে আছে রুদ্ধের সামনে আর রুদ্ধ স্নিগ্ধার সামনে থাকা সোফার উপর পায়ে পা তুলে হেলান দিয়ে বসে আছে রুদ্ধ। রুদ্ধের স্থির দৃষ্টি তার উপর নিবদ্ধ। স্নিগ্ধা চেয়েও সেই দৃষ্টি উপেক্ষা করতে পারছে না।
–স্নিগ্ধা!
–জ..জী।
–পরশি তোমার স্কুলে পড়ার সব বন্দোবস্ত করে দিয়েছে,আমি চাই তুমি ঠিকভাবে পড়ালেখা করো। পড়ালেখায় গাফলতি আমি একদমই সহ্য করব না। মনে থাকবে?
–জী।
–আর একটা কথা। স্কুলে যেহেতু যাচ্ছ একটা কথা মাথায় সেট করে নাও, বন্ধু নির্বাচনের সময় সাবধান থাকবে। তুমি দুনিয়ার রুঢ়তা দেখেছ, এই দুনিয়ায় কেউ কারো আপন না। তাই ভেবে চিন্তে বন্ধু নির্বাচন করবে। জীবন তোমাকে একটা সুযোগ দিয়েছে কিন্তু প্রত্যেকবার এমন সুযোগ পাবে না। তাই একে নষ্ট করো না।
স্নিগ্ধা মন দিয়ে রুদ্ধের কথাটি শুনলো। অতঃপর চলে যাবে হঠাৎ তার একটা কথা মনে আসলো। সে প্রচুর সংশয়ে আছে জিজ্ঞেস করবে কি করবে না। অবশেষে না পেরে জিজ্ঞেস করেই ফেললো-
–আপনি না বলেছেন আপনি আমাকে কাজ করতে দিবেন? রুদ্ধ তখনি কাজে যাওয়ার জন্য বের হচ্ছিল কিন্তু স্নিগ্ধার কথা শুনে থেমে গেল।
–আমি ভেবেছিলাম এই কয়দিনে তোমার মাথা থেকে কাজ করার ভূত নেমে গেছে কিন্তু পাগল সবসময় পাগল থাকে এটা আমি ভুলে গিয়েছিলাম। স্নিগ্ধার কাছে এসে বাক্যগুলো বললো রুদ্ধ। অতঃপর রুদ্ধ তার বাসার একজন সার্ভেন্টকে ডাক দিলো আর বললো-
–আজ থেকে আমার যা কাজ আছে যেমন আমার কাপড় ধোঁয়া, আমার জন্য রান্না করা আমার ঘর গুছানো ইত্যাদি এই ম্যাডাম করবে এনাকে সব কাজ বুঝিয়ে দাও। এবার সে স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে বললো –
–এইটুকুতে হবে নাকি আরও লাগবে? এক ভ্রু উঁচিয়ে প্রশ্নটি করলো রুদ্ধ।
–জী হবে। এই বলে সে তাড়াতাড়ি জায়গা থেকে চলে যাওয়ার চেষ্টা করলো কিন্তু ভাগ্য সহায় হলো না। কার্পেটের মধ্যে পা বেজে সে উপর হয়ে পড়ে যেতে নিয়েছিল এর আগেই এক জোড়া বলিষ্ঠ হাত তাকে ধরে ফেলেছে। সে মাথাটা উপরে তুলে হাতের মালিক তথা রুদ্ধের দিকে তাকালো অমনি রুদ্ধ তাকে টান দিয়ে উপরে তুলে ফেললো। এর ফলে স্নিগ্ধা আছড়ে পড়লো রুদ্ধের বুকের উপর।
চলবে…..