মন প্রাঙ্গনে এলে যখন পর্ব ১৩

0
907

#মন_প্রাঙ্গনে_এলে_যখন
#লেখনীতেঃ #আলফি_শাহরিন_অর্পা
#পর্ব_১৩

পরশি জয়ের বাহুবন্ধনীতে আবদ্ধ। সে না চাইতেও ডুবে গেছে জয়ের চোখের মায়ায়। এভাবে তারা কতক্ষণ ছিল এর হিসাব নেই। তারা দু’জনে একে অপরের সাথে স্বাচ্ছন্দ্যে অনুভব করছে কিনা জানা নেই কিন্তু আশেপাশের মানুষরা ঠিকই তাদের অবস্থা দেখে আনন্দ উপভোগ। ফ্রিতে ছায়াছবি দেখতে পেলে কেই বা মিস করবে। কেউ কেউ তো মোবাইল বের করে ভিডিও করা শুরু করে দিয়েছে।

–ভাইয়ু! মিষ্টি আপু!

জয়া স্কুলের বাহিরে দাঁড়িয়ে অনেক সময় ধরে জয়ের অপেক্ষা করছে কিন্তু তার আসার কোনো নাম-গন্ধ নেই। এমনে দিন তোহ সে একা যায় আর একা আসে, আল্লাহ ভালো জানে আজ কী মনে করে ভাইয়া তাকে নিতে আসছে। বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে সে বিরক্ত। মানুষ তার দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে আছে যেন সে এক এলিয়েন। এরিমধ্য তার কিছু ফ্রেন্ডের আম্মু এসে তাকে জিজ্ঞেস করে গেছে, এখানে দাড়িয়ে আছো কেনো? তোমাদের গাড়ি কোথায়? ইত্যাদি এমন নানা প্রশ্ন। তাই সে মহাবিরক্ত। অবশেষে এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে না পেরে চলে গেল পার্কিং এরিয়ার দিকে। সেখানে যেয়ে দেখলো পরশি পরে যাচ্ছে আর জয় তাকে ধরে ফেলেছে। আর কোনো দিকে না তাকিয়ে জয়া ওদের ডাক দিলো।

জয়ার ডাকে হুশ ফিরলো জয় আর পরশি। তাই তারা তাড়াতাড়ি করে একে অপরের থেকে ছিটকে দূরে সরে পড়লো। আশেপাশে লোকজন তাদের দিকে তাকিয়ে আছে বলে পরশি একটু ইতস্তত বোধ করছে। আবার জয়েরও এসব দেখে খুব বিরক্ত প্লাস রাগ লাগছে, তাই সে জোরে খেঁকিয়ে উঠলো।

–এখানে কী কোনো তামাশা বা সিনেমা চলছে যে সবাই নিজ কাজ ছেড়ে এখানে চলে এসেছেন? নাকি আপনাদের কোনো কাজ-ধা*ন্ধা নাই? এই জন্য মনে হয় এখানে দাড়িয়ে আছেন সবাই। জয়ের এমন রাশভারি কণ্ঠ শুনে যে যার কাজে চলে গেল।

–মিষ্টি আপু! তুমি এখানে মানে আমার স্কুলে কেনো এসেছ? জয়া দৌড়ে পরশির কাছে এসে বাক্যটি বললো।
–কিছু কাজের জন্য এসেছিলাম। তা তুই কেমন আছিস জয়া?
–আমি ঝাঁকাস আছি। কিন্তু তোমার সাথে আমার কথা নেই। এখন তুমি আমার বাসায় অত আসো না কেন? আগে তো তোমাকে আমাদের বাসায় আসার জন্য বলা লাগতো না?
–জানো জয়া এই দুনিয়ার সব কিছুর পরিবর্তন ঘটে। এই পরিবর্তনের ধারা আদিকাল থেকে চলে আসছে। আমরা মানুষও সেই পরিবর্তনের অন্তর্ভুক্ত। যা আমাদের এখন ভালো লাগে তা পরে যেয়ে ভালো নাও লাগতে পারে অথবা প্রকৃতি এমন কোনো খেলা খেলে দিবে যা আমরা মানুষরা কখনো বুঝতে পারব না। এই দেখ আগে আমি তোমাদের বাসায় কত যেতাম কিন্তু এখন দেখ পড়াশোনা বা অন্যান্য কাজের ব্যস্ততার জন্য যেতে পারি না। মানুষের জীবন কখন কাকে কোথায় নিয়ে দাড় করায় তা মানুষ কখনো ভাবতে পারবে না। আচ্ছা আমার লেট হচ্ছে যেতে হবে। একদিন সময় করে আন্টিকে নিয়ে বাসায় এসো। এই বলে পরশি সেখান থেকে চলে গেল।

জয় এতক্ষণ পরশির কথাগুলো শুনছিলো। ওর কথাগুলো শুনে মনে হচ্ছিল কথাগুলো জয়াকে না বরং তাকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে। কিন্তু তার এসব নিয়ে কোনো মাথা ব্যাথা নেই। মূলত সে যে কাজের জন্য এসেছে হয়ে গেছে। তাই তার মনটা আজ বড্ড খুশি। কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত জিনিস হঠাৎ করে পেলে যেরূপ অনুভূতি হয় জয়ের ঠিক এমন অনুভূতি হচ্ছে।

________________________

–স্যার! স্যার! বলে দৌড়ে একটা লোক রুদ্ধের রুমে প্রবেশ করলো।
–কী হয়েছে রাফি? আর এভাবে দৌড়াচ্ছিস কেনো? অত্যন্ত স্থির কণ্ঠে প্রশ্নটি করলো রুদ্ধ।
–স্যার!স্যার! এইটুকু বলে সে হাঁপাতে লাগলো।
রুদ্ধ ওর অবস্থা দেখে ওকে বসতে বললো আর জগ থেকে পানি ঢেলে তার দিকে এগিয়ে দিলো। রাফি ঢকঢক করে পানি খেয়ে ফেললো।
–এবার বল কী বলবি?
–স্যার! এই মাত্র খবর পেলাম দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আবারও মেয়েদের অপহরণ করা হচ্ছে। আর এরচেয়ে বিষ্ময়ের বিষয় হলো এটি টাইগার গ্রুপের কাজ। রাফির কথা শুনে রুদ্ধ একটু চমকালো না। সে জানত এমন কিছু হবে। রাফি অতঃপর আবার বললো-
–স্যার যতটুকু আমার মনে আছে আমরা দু’বছর আগে রে/কে/ট/টিকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছিলাম। তাদের বসকে তো আপনি নিজে আমার সামনে হ/ত্যা করেছিলেন। আর টাইগার গ্রুপে লিডারের কোনো সন্তান ও নেই তাহলে এই নতুন লিডার কে হতে পারে স্যার?
–রাফি! এই পৃথিবী আমাদের ভাবনার জগৎ থেকে অনেক বেশি অপ্রত্যাশিত। তাই তো কখনো কখনো এমন ঘটনা ঘটে যা আমরা ভাবতেও পারিনা। এই উদাহরণ স্বরূপ টাইগার গ্রুপের লিডার। সত্যি বলতে আমি আগে থেকে জানতাম টাইগার গ্রুপের লিডার মরেনি বা যে মরেছে সে টাইগার গ্রুপের লিডার নয় তার কোনো সহযোগী। নাহলে তুই ভাব যাকে ধরার জন্য পুলিশ, সিআইডি এরা ওত পেতে রয়েছে বছর দশেক ধরে তাকে মারা কি এতটাই সোজা। সে এতদিন অপেক্ষায় ছিলো কবে মানুষ তাকে ভুলে যাবে তাই নিজেকে আত্মগোপন করে রেখেছিল। যাতে সে ফিরে আসলে মানুষ কখনো এই কথা বিশ্বাস না করে আর সেই মুহূর্ত আজ এসে পড়েছে। প্রমাণ স্বরূপ তুই নিজেই। তুই নিজেই বিশ্বাস করতে পারলি না যে টাইগার গ্রুপের লিডার বেঁচে আছে।

একট বদ্ধ রুম। রুম পুরোপুরি অন্ধকারে আচ্ছন্ন। কিন্তু কোথা থেকে যেনো সূর্যের সামান্য তির্যক আলোক রশ্মি রুমটিতে প্রবেশ করছে। সেই অন্ধকারে আচ্ছন্ন রুমে এক ব্যক্তি ও/য়া/ইনের গ্লাস হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দৃষ্টি তার সামনের দেওয়ালে বাঁধানো ফ্রেমটির উপর নিবদ্ধ।

–তুই কী ভেবেছিলি আমাকে ধরা এতটাই সহজ? আমার কষ্টে গড়া এই সম্রাজ্য এত এত সহজে গুড়িয়ে দিবি? তুই আমার সাথে যে খেলায় মেতে উঠেছিলি, আমার সাথে জিতা এতটাও সহজ না। তুই জিতেছিলি কেননা আমি তোকে জিততে দিয়েছিলাম। এই বলে লোকটি হু হা করে হেঁসে উঠলো।

চলবে….

বিঃদ্রঃ গল্পটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনার বন্ধু-বান্ধব যারা গল্প পড়তে ভালোবাসে তাদের সাথে শেয়ার করুন। তাদেরও পড়ার সুযোগ করে দিন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here