মন প্রাঙ্গনে এলে যখন পর্ব ১২

0
907

#মন_প্রাঙ্গনে_এলে_যখন
#লেখনীতেঃ #আলফি_শাহরিন_অর্পা
#পর্ব_১২

ক্লাসের বেঞ্চের উপর কাজ ধরে দাঁড়িয়ে আছে জয়া। রাগে ফুঁসছে সে। কিন্তু কিছু করতে পারছে না। আহনাফ দূর থেকে ওর অবস্থা দেখে মিটিমিটি হাসছে। জয়ার রাগী চেহারা দেখে সে খুব আনন্দ অনুভব করছে।

~ফ্ল্যাশব্যাক~

আহনাফ বোর্ডে অংক কষছে কিন্তু সেদিকে জয়ার কোনো ধ্যান নেই। সে রুশমির সাথে অনবরত কথা বলেই যাচ্ছে। রুশমি ওকে কথা বলার জন্য মানা করে মনোযোগ দিয়ে অংক করা শুরু করলো। কিন্তু জয়া নাছোড়বান্দা, সে কথা বলবে মানেই বলবে। আহনাফ কতক্ষণ ধরে জয়ার এই দুষ্টুমি গুলো খেয়াল করছে কিন্তু এখন ওকে না বলে পারলো না।

–জয়া! জয়া কথা বলায় এতই মগ্ন ছিলো যে আহনাফের ডাক শুনে নেই। এইদিকে ক্লাসের সকলের দৃষ্টি জয়াতে নিবদ্ধ। আহনাফ আবার ডাক দিলো।
–জয়া! স্ট্যান্ড আপ! এবার জয়ার কানে আহনাফের আওয়াজ গেলো আর সে তড়িঘড়ি করে দাড়িয়ে পড়লো।
–জী..জী..জী স্যার! কি..কিছু বলবেন?
–মিস জয়া! আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে আমি যা করাচ্ছি আমি তা আগে থেকেই পারেন? তাই তো যেখানে সবাই মনোযোগ দিয়ে অংক করছে আর তখন আপনি নিজ ধ্যানে মগ্ন। আর আমি যদি ইতিহাসের পাতা উল্টে দেখি এমন কাজ অনেক বড় বড় বিজ্ঞরা করত। তাই আমি চাই আপনি আপনার এত মহামূল্যবান জ্ঞান আমাদের সাথে শেয়ার করুন যাতে আমরাও কিছু শিখতে পারি।
–মা..মা..মানে স্যার!
–মানে হলো আমি যে অংকটা বোর্ডে হাফ করে রেখেছি তা আপনাকে বোর্ডে যেয়ে কমপ্লিট করতে হবে৷ আর এটা তোহ আপনার জন্য সামান্য ব্যাপার, তাই না মিস? গম্ভীরতার সাথে কথাগুলো বললো আহনাফ। আর আহনাফের কথা শুনে জয়ার তো মরি মরি অবস্থা। সে এই চ্যাপ্টারের কিছুই পারে না আর না এই চ্যাপ্টার আগে ধরেছে। টেনশনে নখ কামরানো শুরু করে দিয়েছে জয়া।
–মিস জয়া! এই নাও চক। জয়া করুণ চোখে চকের দিকে তাকিয়ে চকটি নিয়ে নিলো অতঃপর বোর্ডের সামনে যেয়ে দাড়িয়ে পড়লো কিন্তু কি লিখবে তা বুঝতে পারছে না। অপরদিকে ক্লাসের সবাই জয়ার অবস্থা দেখে হাসাহাসি করছি। ওদের হাসাহাসি দেখে জয়াও পণ করে ফেলেছি ক্লাস শেষে আহনাফকে দেখে নিবে।
–মিস জয়া! জয়া হকচকিয়ে আহনাফের দিকে তাকালো। আহনাফের মুখে বাঁকা হাসির রেখা। এরপর আর কী? জয়া পড়া না পারার জন্য কান ধরে দাঁড়িয়ে আছে।

_________________________

রুদ্ধ পার্টি অফিসে এসেছে কিছু কাজের জন্য। কিন্তু সেখানে এসে সে অবাকতার শীর্ষে পৌঁছে গেল কেননা সেখানে জয়ও আছে। জয় রুদ্ধকে দেখে ওর দিকে আসলো ওর সাথে কথা বলার জন্য। কিন্তু রুদ্ধ জয়কে দেখেও না দেখার ভান করে সেখান থেকে চলে যাচ্ছিল।

–বন্ধু! চলে যাচ্ছিস?
–যে কাজে এসেছিলাম তা শেষ হয়ে গেছে। এখন এখানে থাকার কোনো কারণ আমি দেখছি না।
–কেনো অন্ধ হয়ে গেছিস? আমাকে কী তোর চোখে পড়ছেনা? আর কত এই মান-অভিমানের হিসাব আর কত চলবে?
–মান-অভিমান তাদের সাথে দেখানো হয় যারা তোমার হৃদয়ের খুব কাছের হয় কিন্তু তোর সাথে আমার যা সম্পর্ক ছিলো তা তুই নিজ হাতে শেষ করেছিস। তুই বন্ধু হয়েও শত্রুর মত কাজ করেছিস। আর এমন লোকদের রুদ্ধ মাহতাব নিজের কাছ থেকে যত পারে তত দূরে রাখে। তাই তোর সাথে আমার কোনো কিছুর হিসাব বাকি নেই। এই বলে রুদ্ধ সেখান থেকে চলে গেল। আর জয় ছলছল দৃষ্টিতে রুদ্ধের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকলো।

________________________

পরশি স্নিগ্ধাকে স্কুলে ভর্তি করাতে নিয়ে আসছে। স্নিগ্ধার ভর্তির সব ফরমালিটিস কমপ্লিট। এখন শুধু ওর জন্য বই কেনা আর স্কুল ড্রেস বানানো বাকি। স্নিগ্ধা আর পরশি গাড়িতে বসেছে তখনি পরশির মনে আসছে সে তার পার্স অফিস রুমে
ফেলে আসছে তাই স্নিগ্ধাকে গাড়িতে বসিয়ে রেখে সে চলে গেল পার্সটি আনতে।

তাড়াহুড়ো করে হাটতে যেয়ে পরশি আচমকা কারো সাথে ধাক্কা খেল ফলে তার ব্যালেন্স বিগড়ে গেল। কিন্তু সে নিচে পড়ার আগেই ব্যক্তিটি তার হাত ধরে টান দিলো। এর কারণে ব্যক্তিটির এক হাত পরশির হাতের কবজি আর অপর হাত পরশির কোমড়ের উপর। পরশি তাকিয়ে দেখলো ব্যক্তিটি আর কেউ না জয়। পরশি আর জয় কিছুক্ষণের জন্য একে অপরের চোখের মধ্যে হারিয়ে গেল। পরশি চাইতেও নিজেকে জয় বাহুবন্ধনী থেকে ছাড়াতে পারছে না। সে আবারও দুর্বল হয়ে পড়ছে, নিজের একপাক্ষিক ভালোবাসার কাছে।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here