ভালোবাসায় বন্দিনী পর্ব ৯

0
1838

#ভালোবাসায়_বন্দিনী
#জান্নাতুল_নাঈমা
#পর্ব_৯

থাপ্পড়ের ভয়ে চুপচাপই বসে ছিলো হৈমী। টু শব্দ টিও করেনি। নামতে বলতেই বেশ তারাহুরো করেই নেমে পড়লো। কোথায় নিয়ে এলো ভেবেই আশপাশে চোখ বুলাতেই এত্তো অবাক হলো যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। চোখ, মুখে আলাদা এক উজ্জলতা চলে এলো। মনের ভিতর হঠাৎই ভীষণ ভালোলাগার অনুভূতি সৃষ্টি হলো। মুখ দিয়ে আপনা আপনিই বেরিয়ে এলো,

— ওয়াও জায়গাটা কি সুন্দর! কাশফুল,,, মাই ফেভারিট ফ্লাউয়ার। খুশিতে লাফিয়ে ওঠলো হৈমী।

খিলক্ষেত বাজার হয়ে উত্তরমুখী রাস্তায় দেখা যায় কাশফুলেদের। রাস্তার দুপাশ জুড়েই কাশের রাজ্য।
যা দেখে চোখ জুড়িয়ে গেলো হৈমীর, মন টাও জুড়িয়ে গেছে তাঁর।সে ভুলেই গেলো কার সাথে এসেছে। চারদিকে শরতের এই মনোরম সৌন্দর্য উপভোগ করতে লাগলো সে। আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেছে দুহাত মেলে চোখ দুটো বন্ধ করে ধীর আওয়াজে বললো,

— আমি স্বপ্ন দেখছিনা তো, সত্যি আমায় কাশফুল রাজ্যে নিয়ে আসা হয়েছে তো??

— বেশী কথা না বলে ভদ্রভাবে দাঁড়াও। মানুষ দেখছে। বললো রুদ্র।

ব্যাস হয়ে গেলো সব ভালোলাগা আনন্দে জল ঢালার জন্য এটুকুই যথেষ্ট ছিলো। হাত নামিয়ে আশেপাশে চোখ বুলালো। বেশ কিছু ছেলে মেয়েরা ছবি তুলছে। স্কুল,কলেজ পড়ুয়া ছেলে, মেয়েই বেশী দেখা যাচ্ছে। অনেকে গার্লফ্রেন্ড, বয়ফ্রেন্ডের সাথে এসেছে বেশ বুঝলো। সবাইকে দেখে নিয়ে রোবটের মতো পাশে দাঁড়িয়ে থাকা রুদ্রর দিকে চোখ পড়লো হৈমীর৷ মুখটা মূহুর্তেই ভাড় করে ফেললো৷ এক ঢোক গিলে নিয়ে চোখ,মুখ শক্ত করে বললো,

— আপনি তো বেশ ধরিবাজ লোক। আপনি কি ভেবেছেন আমি কিছু বুঝিনা?? হতে পারে কাশফুল আমার ফেভারিট। আমি এমন জায়গায় খুব আসতে চাই কিন্তু পারিনা। টিভিতে দেখেছি, নায়ক নায়িকা কে এমন জায়গায় ঘুরতে নিয়ে আসে। তাই বলে আপনি আমাকে এমন জায়গায় নিয়ে আসবেন??নিজেকে কি আমার বয়ফ্রেন্ড হিসেবে মনে করছেন, নাকি দাবি করছেন কোনটা?? সেদিন তো খুব বললেন আমার মতো হাঁটুর বয়সি মেয়ের ইজ্জত নিয়ে নিজের ব্যাক্তিত্বে কালি লাগাবেন না। তাহলে আজকে বয়ফ্রেন্ডের মতো আচরন করতে ব্যাক্তিত্বে সমস্যা হচ্ছে না।

আশেপাশের লোকজন আড় চোখে তাকিয়ে আছে হৈমী রুদ্রর দিকে। রুদ্র হৈমীর তুলনায় বেশ লম্বা ৫ফুট ১১ ইঞ্চি মোটামুটি স্বাস্থ্যবান জিম করা বডি।
আর হৈমী সেখানে ৫ফুট ১ ওজন ৪৫,৪৬ হবে সিমসাম বডি। গার্লফ্রেন্ড, বয়ফ্রেন্ড হিসেবে একেবারেই মানাচ্ছে না৷ সবাই বোঝার চেষ্টা করছে এদের রিলেশন টা কি।

এদিকে হৈমীর বকবকানি তে রুদ্র নিজেকে ঠান্ডা রাখতে চেয়েই পারলো না। ধমকে বললো,

— চুপপ! একদম মুখ বন্ধ নয়তো মেরে নদীর জলে ভাসিয়ে দিয়ে আসবো। লাশটাও কেউ খুঁজে পাবে না।

— কিহ! আপনি আমাকে হুমকি দিচ্ছেন। খুনি কোথাকার এখুনি চলে যাবো আমি। পুলিশের কাছে নালিশ করবো। না না নালিশ না কেস করবো আজকেই থানায় যাবো আমি। বলতে বলতে হৈমী পিছন ঘুরে পা বাড়ালো। সঙ্গে সঙ্গে রুদ্র একটানে নিজের দিক ঘুরিয়ে গালে ঠাশ করে থাপ্পড় লাগিয়ে দিলো।

হৈমী যেমন শত চেষ্টায় নিজের মুখ বন্ধ করতে পারেনা রুদ্র তেমন নিজের হাত আঁটকে রাখতে পারে না। মুখের থেকে হাতই চলে বেশী তাঁর। দুজনই দুজনের একদম বিপরীতমুখী।

আশে পাশের লোক জনের চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম। হৈমী গাল ধরে কেঁদে ওঠলো। রুদ্র দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

— চুপচাপ আমার পিছন পিছন আসো নয়তো হাড়গুঁড় ভেঙে মাটিতে গেড়ে রাখবো।

কয়েকজন ছেলে রুদ্র, হৈমীর ভাবসাব দেখে শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে এগিয় আসছিলো। হঠাৎ পিছন থেকে ডাক পড়লো।

— এ ব্রাদার্স কই যাচ্ছো??

ছেলে গুলো পিছন ঘুরতেই দেখলো তিনজন ছেলে বাইকে বসে আসে। তাঁর মধ্যে একজন আবির তাঁদের এলাকার বড় ভাই। আবিরকে দেখে একটি ছেলে বললো,

— ভাই মনে হয় ঘাপলা আছে। ঐ ব্যাটা পিচ্চি একটা মেয়েকে জোর করে নিয়ে আসছে মনে হয়। গায়েও হাত তুললো। এই এলাকায় এসব তো সহ্য করবো না। মেয়ে স্বেচ্ছায় এলে একটা কথা ছিলো।জোর জবর দস্তি করবো ক্যান??

আবির বাইক থেকে নেমে পড়লো৷ সাদমান আর নিরব বাইকে বসেই মনের সুখে গুনগুন করতে লাগলো।আবির ছেলেগুলো কে বললো,

— ও রুদ্র আমার বন্ধু। বিখ্যাত বিজন্যাস ম্যান পলিটিক্যাল লিডার রেদওয়ান শেখের ছোট ছেলে। আমাদের ভার্সিটির টপার স্টুডেন্ট রুদ্র শেখ। নাম শুনে আশা করি বুঝতে পারছিস ঘাপলা কিছুই নাই। মেয়েটা ওর হবু বউ বাচ্চামি করে বেশী তাই শাসন করছে আর কি।

ছেলে গুলো বড় বড় করে তাকালো৷ রুদ্র শেখের বিষয়ে শুনেছে। দেখেছেও তবে আজ চিন্তে পারেনি। এর আগে দেখেছিলো নাম যেমন মানুষ ও তেমন বেশ ভয়ানক বিহেভিয়ার তেমন দেখতেও। কিন্তু আজ চিন্তে একটু অসুবিধাই হয়েছে বটে। ছেলেগুলো বোকা হাসলো নিজেদের মাথা চুলকাতে চুলকাতে চলে গেলো। আবির, নিরব, সাদমান তিনজনই বাইকের ওপর বসে সিগারেট ধরালো।

কাঁচা রাস্তার পরে বেশ বড় পুকুর ফাঁকা জায়গায় দাঁড়ালো রুদ্র। হৈমী পাশে দাঁড়ালো। ভয়ে তাঁর গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। এই আজরাইলের সামনে থেকে যতোক্ষণ না কেটে পড়তে পারছে ততোক্ষণ শান্তি নাই৷ ঘাড়ের ওপর যে চড়ে বসছে আর নামার নাম নাই। অসহ্য, বিরক্ত লাগছে হৈমীর। গালটা ব্যাথায় টনটন করছে গাল ফেটে রক্ত না বের হয়। কেমন তাপ অনুভব করছে। চোখ দুটো পানিতে টলমল করছে।

— প্রেম করার বিন্দু পরিমান ইন্টারেস্ট নেই আমার।
বউ করে ঘরে তুলতে চাই। বিয়ে করতে হবে আমায়। আশা করি বুঝতে পেরেছো?? রুদ্রর গম্ভীর গলার আওয়াজে চমকে গেলো হৈমী। রাগে তড়তড় করে কাঁপছে সে। ঠোঁট দুটোও কাঁপছে।বেশ রাগ নিয়ে বললো,

— বিয়ে করতে হবে মানে মামার বাড়ির আবদার।
— শশুড় বাড়ির আবদার মামার বাড়ির হবে কেনো?? আমি তোমার শশুড়ের ছেলে মামার না। কথাটি বলে অন্যদিক ঘুরে থামলো রুদ্র।

হৈমীর মেজাজ এবার চরম বিগরে গেছে বেশ ঝাড়ি দিয়ে বললো,
— এখন যদি বলি আপনাকে আমি বিয়ে করবো না। তাহলে কি করবেন আবার মারবেন গাল ফাটিয়ে রক্তাক্ত করবেন?
— দরকার পড়লে করবো। ইউ নো হোয়াট আমি সব করতে পারি।
— তাই নাকি সব পারেন? কিচ্ছু পারেন না শুধু গায়ের জোরই দেখাতে পারেন৷
— এতো কথা তো শুনতে চাইনি। আমার সিদ্ধান্ত আমি জানিয়েছে৷ যে কোন দিন বিয়ে সম্পন্ন করে ফেলবো। প্রেম করার রুচি নাই।
— আমার আপনার সামনে দাঁড়িয়ে থাকার রুচি নাই।
— তবুও থাকতে হবে সারাজীবন।
— অসম্ভব। দেখুন ভালোই ভালোই বলছি আমাকে যেতে দিন। বিয়ে তবুও আপানকে কোনদিন না। মার খাওয়ার শখ আমার নেই। বিয়ে না করেই অনেক খেয়েছি আর না।
— ভালো ভাবে তোমায় আমি সিদ্ধান্ত জানিয়েছি। ভালোভাবে একসেপ্ট না করলে। খারাপ হবে তোমার সাথে খুব খারাপ।
হৈমী এক ঢোক গিললো। খানিকটা ভয় পেয়েছে তা তাঁর চোখ মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। রুদ্র বাঁকা হাসলো। লম্বা এক শ্বাস টেনে এক ঢোক গিলে শান্ত গলায় বললো,
— ভালোবাসি কিনা জানিনা। তবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি বিয়ে করলে তোমায়ই করবো। আমার সিদ্ধান্ত গ্রহন করে নাও। আমার কথা মেনে নাও সারাজীবনের সব না পাওয়া পূর্ন করে দেবো। যেহেতু বিয়ে তোমার আমার হবে সেহেতু সিদ্ধান্ত টা তোমায় আগে জানালাম। এরপর ফ্যামিলি কে জানাবো।

লোকটা বেশ ত্যাড়া তাই আর বেশী ঝগরার কথা তুললো না শান্ত গলায় হৈমী বললো,
— দেখুন আপনি আমার থেকে বয়সে অনেকটাই বড় আশা করি বুঝতে পারবেন আমার কথা গুলো। আমি এসব বিয়ে টিয়ে করতে চাইনা। তাছাড়া এখন তো আমার বিয়ের বয়সও না বলুন।
— বিয়ের আবার বয়স কিসের? কাগজে কলমে আঠারো পড়লেই সাইন হবে। জাষ্ট সামাজিক রীতি মেনে বিয়েটা সম্পন্ন করতে চাই।
— কিন্তু আমি চাইনা আমি বিয়ে করবো না। আপনাকে তো আরো না। আপনি খুব ডেঞ্জারাস পার্সন। জীবনটা আমি থাপ্পড়ময় করতে চাইনা।
— সেজন্যই তো বলছি বিয়ে করবো। যাতে আমার দিক নির্দেশনা মেনে চলো আর থাপ্পড় খেতে না হয়।
— আমি বিয়ে করবো না। চাইনা আমার জীবন কারো সাথে জরাতে বোঝার চেষ্টা করুন।
— জাষ্ট স্যাট আপ! আর একটা কথা বললে পুকুরে মাথা ঠুশে ধরে মেরে ফেলবো।
হৈমী এক ঢোক গিললো। “লোকটা এমন কেনো আল্লাহ রক্ষা করো। কিছুটা পিছিয়ে দাঁড়ালো বিশ্বাস নেই ধাক্কা মেরে ফেলে দিতেও পারে৷ আমি তো সাঁতার জানিনা”মনে মনে ভেবে বললো,
— আপনি আমার ব্যাপারে জানেন না। আমার খুব কঠিন একটা অতীত আছে। পরিবার জিনিসটাকে আমি খুব ভয় পাই। বিয়ে স্বামী সংসার তারপর বাচ্চা নাহ পারবো না এসবে জরাতে। বললো হৈমী।
— মুখটা বন্ধ রাখো এতো এগিয়ে কে ভাবতে বলেছে।
ভালো,মন্দ বোঝার বয়স এখনো হয়নি। এক নাবালিকার কথা কে আমি গুরুত্ব দিতে ইচ্ছুক নই।
— ভালো কথা আমি নাবালিকা সো বিয়ে আমি করছিনা। আর যদি বিয়ে করতেই হয় আমার টাইপ কাউকে করবো৷ আগে প্রেম করবো তাঁকে চিনবো জানবো যে পরিবার নিয়ে আমার মনে এতো ভয় সেই ভয়টা সেই মানুষ টা দূর করতে পারে কিনা,আমাকে আমার মতো করে ভালোবাসতে পারে কিনা, তাঁর ভালোবাসায় আমাকে মুগ্ধ করতে পারে কিনা সেসব দেখবো তাঁর পর সিদ্ধান্ত নিবো বিয়ে করবো কি করবো না। আপনার মতো বোরিং একটা লোক আমার সাথে কোন দিক দিয়ে যায় হ্যা। নিজেকে দেখেছেন একবার আয়নাতে মনে হয় আপনি রাবন আর আমি সীতা। আর কি বললেন প্রেম করবেন না ভালোবাসেন কিনা জানেন না অথচ ধেই ধেই করে বিয়ের প্রস্তাব দিতে কাশবাগান নিয়ে আসছেন। আরে আমি হচ্ছি এই টাইপ মেয়ে একটা গান আছে না??” বিন্দাসে প্রেম করবো চুটিয়ে আগে হানিমুন তারপরে বিয়ে” কথা গুলো বলেই দূরে সরে গেলো হৈমী যাতে আরেকটা থাপ্পড় গালে না পড়ে। সিরিয়াস মুডে মজা না ঢোকালে তার পেটের ভাত যেনো হজমই হতো না।

রুদ্রর এবার রাগ হলো না। মেয়েটা বেশীই কথা বলে জ্ঞান, বুদ্ধি তো নেইই এমন মেয়েকে কি করে মনে ধরলো কে জানে? কারো প্রতি এভাবে মন পড়ে যাবে তা তো সে কল্পনাও করতে পারেনি৷ অথচ তাই হলো মেয়েটা চোখের ঘুম হারাম করে দিয়েছে একদম। চাপা নিঃশ্বাস ফেলে হাত ইশারা করে কাছে আসতে বললো।

হৈমী আমতা আমতা করে বললো,

— মারবেন নাকি আমি মজা করছিলাম। সিরিয়াস কথা এটাই এসব বিয়ে টিয়ে নিয়ে ভাবছিনা। আমি পড়াশোনা করতে চাই৷ অনেক পড়তে চাই মানুষের মতো মানুষ হতে চাই৷ বাচ্চাদের দায়িত্ব নিতে চাই। ছোট হলেও এটুকু বুঝি পরিবার মানেই জটিলতা। কঠিন এক সংগ্রাম। জীবনে অনেক হারিয়েছি। হারানো জিনিসের প্রতি আর লোভ করতে চাইনা। আবার হারালে সইতে পারবো না এর থেকে না পাওয়াটাই শ্রেয়।

রুদ্র নিজের অজান্তেই হৈমীর কাছাকাছি চলে গেলো৷ হৈমীর ডানহাতটা শক্ত করে চেপে ধরে চোখ বুজে বলে ফেললো,
— জাষ্ট বিয়ে টা করে নাও। কোন অভিযোগ করার সুযোগ পাবে না। বিয়ের আগে প্রেমিক পুরুষ বা ভালোবাসাময় পুরুষ হতে চাইনা তাই বলছি জাস্ট বিয়েটা করো। আমার বধ্য হয়ে থাকো আমার বন্দিনী হয়ে যাও পৃথিবীর সব সুখ এনে তোমায় দিবো।

রুদ্রর এমন কন্ঠে হৈমী স্থির হয়ে গেলো৷ হাতের দিকে চেয়ে দেখলো বেশ শক্ত করে চেপে ধরেছে যেনো কখনো ছাড়বেই না। বুকের ভিতর টা কেমন যেনো চেপে ধরলো। আলাদা এক অনুভূতি হলো যে অনুভূতি টা একদমই অপরিচিত। বুকের ডিপডিপ আওয়াজ টা স্পষ্ট বুঝতে পারছে সে। রুদ্রর এই রূপটাও ভীষণ অচেনা। মানুষ টা এভাবেও কথা বলতে পারে এ কথায় জোর ছিলো না, রাগ ছিলো না শুধু অনুনয় ছিলো।

ঘাড় উঁচু করে চোখ উল্টিয়ে একবার রুদ্রর দিকে তাকালো। আবারো মাথা নিচু করে ফেললো। পৃথিবীর সকল নিরবতা যেনো হৈমীর মাঝে এসেই থেমেছে আজ৷ একদম চুপসে গেছে সে। এ কেমন অনুভূতি খোদা! এক ঢোক গিলে নিয়ে মৃদু আওয়াজে প্রশ্ন করলো,

— আমি তো অনেক বেশী বকবক করি। আর আপনি একদমই চুপচাপ গম্ভীর। আমি মোটেই রাগি টাইপ না আর আপনি প্রচন্ড রাগি। আপনি ইয়া লম্বা আর আমি চিনির ডিব্বা। বয়সেও বেশ বড় তবুও কেনো আমায় বিয়ে করতে চাইছেন। এই অল্পসময়েই এমন প্রস্তাব কেনো??আমার কোন পরিবার নেই আপনার খুব সুন্দর একটা পরিবার আছে। সব থাকতেও আমার মতো নিঃশ্বকে কেনো সঙ্গী করতে চাইছেন??

— “প্রত্যেকটা মানুষই তাঁর বিপরীত স্বভাবের মানুষের প্রেমে পড়ে। দুটো পাথরের ঘর্ষণে যেমন আগুন জ্বলে ওঠে তেমনি একই স্বভাবের দুজন মানুষ একসাথে থাকলে সেখানে ঘর্ষণ হয়ে আগুন জ্বলে ওঠার সম্ভবনা বেশী থাকে। তাই আমি বলবো তোমার মতো হাই ভোল্টেজ এর পাগলকে মানুষ করার জন্য আমার মতো একজন সিরিয়াস মানুষের খুব প্রয়োজন ছিলো”।

— আপনি না বললেন প্রেম করতে চাইনা।
— প্রেম করতে চাইনা বলে প্রেমে পড়তে পারিনা এমনটা তো না।
— তাঁর মানে আমার মতো সুন্দরী কে দেখে আপনার ও চোখ ঝলসে গেছে??
— মুখটা বন্ধ রাখো। চোখ রাঙিয়ে বললো রুদ্র। কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবারো বললো,
— কি বললে পরিবার এর কথা রাইট??
যার পরিবার আছে তাঁকে পরিবার গিফ্ট করে কি লাভ। যার যা আছে সে তো সেটার মর্ম ততোটা বুঝেনা কিন্তু যার নেই না পাওয়া জিনিস সে পেলে তাঁর মর্ম সে খুব বুঝবে। তোমার পরিবার নেই তাই পরিবার গিফ্ট করতে চাই।আমি জানি তুমি এর যথার্থ মূল্যায়ন করবে।

চোখ ভরে এলো হৈমীর সামনের মানুষ টা তো বড়ো আজব। ভাবলো সে।

রুদ্র বলতেই থাকলো,
— তাছাড়া মাথার স্ক্রু ঢিলা মেয়েকে কেউ বিয়ে করতে চাইবে না। একজন মেয়ের জন্য বিয়েটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বাবা,মা পরিবারের দায়িত্ব মেয়ে বিয়ের উপযুক্ত হলে বিয়ে দিয়ে দেওয়া। বাবা,মা পরিবার না থাকলে সেই দায়িত্ব সমাজের অতঃপর রাষ্ট্রের। সেহেতু আমি সমাজসেবী হয়ে কাজটা করে দিচ্ছি ভেবে নাও।

হৈমী ভড়কে গেলো টলমল চোখেই তীক্ষ্ণ করে চেয়ে বললো,
— আমার মাথার স্ক্রু ঢিলা?? ব্যাস অনেক হয়েছে অপমান, এরপরও আশা করেন আমি আপনাকে একসেপ্ট করবো?? হাত ছাড়ুন!
— ছাড়বো না।
— আমাকে আপনি অপমান করেন, মারেন, তবুও কেনো বিয়ে করতে চান??
— এই লজিক টা তুমি বুঝতে যদি তোমার মাথার স্ক্রু ঢিলা না হতো।
হৈমী আরো রেগে গেলো। লোকটা কে সে যেনো বুঝতেই পারছে না৷ কেমন রহস্যময়, কেমন জটিল।
রুদ্র বললো,
— আমাকে বুঝতে হলে সারাজীবন আমার সাথে থাকতে হবে।
চমকে ওঠলো হৈমী বড় বড় করে চেয়ে রইলো।
রুদ্র বাঁকা হেসে বললো,
— বিকেল হয়ে এলো চলো বাড়ি পৌঁছে দেই। তুমি কি আমার থেকে সময় নিতে চাও। আমি সময় দিতে পারি। কিন্তু হবু বরের কথার অবাধ্য হওয়া যাবে না।
যেভাবে বলবো সেভাবে চলতে হবে দ্যান সময় দিবো। নয়তো আজি তোমার ফাঁস। আই মিন এখনি কাজি অফিস নিয়ে যাবো।

এক ঢোক গিললো হৈমী লোকটাকে বিশ্বাস নেই যা খুশি করতে পারে তাই দ্রুত বলে ওঠলো,

— ওকে ওকে আমি সময় নিবো কিন্তু সেটা আমার ইচ্ছেয় আপনার বাঁধা নিয়মে নয়।
— ওকে ফাইন।
.

“আমার বুকের ভিতর ভালোবাসার ছোট্ট একটি ঘর রয়েছে। যার দরজা খোলার ক্ষমতা আজ অবদি কারো হয়নি। কিন্তু তোমার আমার প্রথম দর্শনেই দমকা হওয়ার বেগে খুলে গিয়েছে সেই দরজা। এখন শুধু আমার সীমানায় তোমার আসার অপেক্ষা। চাইলেই খুব সহজে নিয়ে আসতে পারবো তোমায়। কিন্তু আমি চাই এমনও আসা তুমি আসো যেই আসাতে পিছন হাঁটার কোন উপায় থাকবে না। আর সেই আসা তোমার হবে না হবে তোমার হৃদয়ের” ~রুদ্র

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here