ভালোবাসায় বন্দিনী পর্ব ৪৪

0
1856

#ভালোবাসায়_বন্দিনী
#জান্নাতুল_নাঈমা
#পর্ব_৪৪
.
এতোদিন ছিলো বন্ধুত্ব আজ থেকে বন্ধুত্বের পাশাপাশি ভালোবাসার নতুন এক অধ্যায় শুরু হলো মাহের এবং সূচনার। ফজরের আজান শুনতেই বিছানা ছাড়ে সূচনা৷ দীর্ঘসময় শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে আসে সে। মাহেরও বিছানা ছাড়লো। লজ্জায় মাহেরের দিকে তাকাতে অবদি পারছেনা সূচনা। মাথা নিচু করে দ্রুত জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজে দাঁড়ালো সে।
.
ভোরের দিকেই রাদিফ ফোন করে জানায় তাঁর মেয়ে রাফসার জ্বর, ঠান্ডা। নয়নারও ভীষণ জ্বর৷ মেয়ে এবং নাতনীর অসুস্থতার খবর পেয়ে এক মূহুর্ত দেরী করেনি মনিকা বেগম। স্বামীকে নিয়ে চলে যায় শেখ বাড়িতে৷

মাহেরের অফিস রয়েছে তাই ব্রেকফাস্ট রেডি করে বসে আছে সূচনা। অন্যদিন হলে ডাকতে যেতো কিন্তু আজ লজ্জায় মাহেরের সামনে দাঁড়াতে পারছেনা৷ বুকের ভিতর শুধু ধড়ফড় ধড়ফড় করছে। রেডি হয়ে ড্রয়িং রুমে আসে মাহের। সূচনা খাবার বেড়ে চেয়ারে বসে আছে চুপ করে। মৃদু হেসে এগিয়ে যায় সে। সূচনা নড়েচড়ে বসে। মাহের খেতে শুরু করে আর বলে,

—- আপনিও বসে পড়ুন আজ তো মা নেই। এখন না খেলে পড়ে একা খেতে হবে।

সূচনা হালকা মাথা নেড়ে নিজের প্লেটে খাবার নেয়। তাঁর হাত কাঁপছে মাহের বুঝতে পারে সূচনার মনের অবস্থা। কিন্তু সে যে বুঝতে পারছে তা বুঝতে দেয়না সূচনাকে। নিজের মতো খাচ্ছে আর মাঝে মাঝে সূচনাকে দেখছে। বেশ অন্যরকম লাগছে আজ সূচনাকে। প্রকৃতির সকল স্নিগ্ধতা যেনো আজ সূচনার মাঝে এসে জায়গা করে নিয়েছে। মেরুন কালারের সূতি ওড়না দিয়ে মাথায় ঘোমটা দেওয়া সূচনার৷ একসাইট দিয়ে তাঁর লম্বা ভেজা চুলগুলো ওকি দিচ্ছে। শ্যাম্পুর কড়া স্মেলেই যেনো পেট ভরে গেলো মাহেরের। সূচনা খাবার মুখে দিয়ে ধীরগতিতে চিবুচ্ছে। সে যে খাবার গিলতে পারছেনা মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। দুগালে খাবার ভরে মুখ ফুলিয়ে রেখেছে। চৌকা নাকে বেশ বড়সড় নাকফুল পড়া। একদম পারফেক্ট বউ বউ লাগছে। সত্যি তো বউ। এতোদিন ধরে বউ হয়ে এসেছে সে অথচ তাঁর বউ হওয়াটা পূর্ণতা পেয়েছে আজ।
.
খাওয়া শেষে সব গুছিয়ে রুমে যায় সূচনা৷ মাহের সবগুছিয়ে সূচনার দিকে তাকায়। জানতে চায় তাঁর কোন সমস্যা হচ্ছে কিনা? সূচনা লজ্জায় নুইয়ে যায় মাথা ডান দিক বাম দিকে করে বলে না৷ তবুও মাহের পেইন কিলার হাতে ধরিয়ে দেয় আর খেয়ে নিতে বলে। তারপর সূচনাকে রেডি হতে বলে তাঁকে সুখনীড়ে নামিয়ে দেবে বলে। হঠাৎ সুখনীড়ে কেনো জানতে চাইলে মাহের উত্তর দেয়, ‘তাঁর স্ত্রী কে নিয়ে কারো মনে ঘৃনা থাকুক, তাঁর স্ত্রী কারো চোখে অপরাধী থাকুক সে চায় না৷ ভুল মানুষেরই হয় কিন্তু সেই ভুল মানুষ নিজে থেকে করে নাকি কারো দ্বারা প্রভাবিত হয়ে করে সেটা কিন্তু কেউ জানেনা। তুমি ভুল করেছো সবাই তোমার ভুল দেখেছে কেউ তোমার পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করেনি। অনেকে অনেক যুক্তি দেবে অন্য কেউ যা বলবে তাই তুমি শুনবে কেনো? কিন্তু কেউ এটা বুঝবেনা মানসিক ভাবে তুমি ঠিক কতোটা অসহায় ছিলে তখন। আর যাইহোক ভালোবাসা হারিয়ে সবাই স্ট্রং থাকতে পারেনা সেখানে যদি তোমার ব্রেইন ওয়াশ করার জন্য রুদ্রর দাদির মতোন কেউ থাকে তাহলে তো কথাই নেই৷ ওনি তোমায় খারাপ পরিস্থিতি থেকে বের হতে সাহায্য না করে আরো খারাপের দিকে ঠেলে দিয়েছে। ওনার মতোন বিকৃতমস্তিষ্কের মানুষ দের এ সমাজে শাস্তি খুব কম হয়৷ তবুও সকলের জানা উচিত ওনার রূপটা৷ আর কারো জানা না হলেও রুদ্র আর হৈমীর জানা উচিত’।

চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আসে সূচনার। মাহের এগিয়ে যায় তাঁর দিকে দুহাতে আলতো করে দুগালে স্পর্শ করে কপালে চুমু একে দেয়। বলে,

—- চোখের পানি খুব মূল্যবান সূচনা। মূল্যবান জিনিস এভাবে ব্যয় করবেন না।

—- মূল্যবান মানুষের জন্য মূল্যবান জিনিস ব্যয় করা কি দোষের নাকি?

হেসে ফেলে মাহের সূচনার গাল টিপে দিয়ে বলে,

—- আপনিও খুব মূল্যবান। এবার আপনি থেকে তুমিতে আসা যাক?

মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয় সূচনা। মাহের মুচকি হেসে বলে,

—- তারাতাড়ি রেডি হয়ে নাও আমার বেশী সময় নেই।
.
ল্যাবটপ কোলের ওপর বসিয়ে চেয়ারে বসে কাজ করছে রুদ্র। বিছানার সামনে বসেছে সে যাতে হৈমীর সুবিধা হয় তাঁকে খাওয়িয়ে দিতে। হৈমী বিছানায় বসে ভাত মেখে রুদ্রর মুখে দিচ্ছে আর ওটা সেটা গল্প করছে। অথচ রুদ্র কাজে ডুবে আছে৷ হৈমী বেশ ভালো করেই জানে রুদ্রর খেয়াল নেই তাঁর দিকে তবুও সে মুখ বন্ধ রাখতে পারেনি। মুখ বন্ধ রাখলেই নিজেকে অসহায় মনে হয় তাঁর। খাওয়া শেষ করে আস্তে করে বিছানা থেকে নামে। প্লেট টেবিলে রেখে নিজে হাত ধুয়ে আবার বিছানায় এসে বসে। পেটে পেইন হচ্ছে আল্লাহ জানে বাবু এতো জ্বালায় কেনো? বাবুকি বাবার মতো হবে না মায়ের মতো? মায়ের মতো হলে তো এতো জ্বালাতো না নিশ্চিত বাবার মতো হবে।

—- কি হলো মুখ ভাড় করে বসে আছো কেনো রেডিওর চার্জ শেষ? ল্যাবটপে দৃষ্টি স্থির রেখেই প্রশ্নটি করলো রুদ্র।

তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে উত্তর দিলো হৈমী,

—- না ভাবছি বাবু যে এতো জ্বালায় বাবু নিশ্চিত বাবার মতো হয়েছে। আমিতো খুব শান্ত, ভদ্র তাহলে বাবু সবসময় এতো অশান্ত থাকে কেনো?

মুচকি হাসলো রুদ্র এ হাসির অর্থ হলো তাঁর বউ যে রেডিও তা সে আজ নিজের মুখেই স্বীকার করেছে নিজের অজান্তেই।

—- তাই না? বাবার মতো হলে অবশ্যই চুপচাপ থাকতো। বাবার স্বভাব পেলে আর যাই হোক তোমার মতো সর্বক্ষণ ছটফট করতো না।

সত্যি তো বাবার মতো হলে তো অবশ্যই গম্ভীর, একরোখা হয়ে পেটে ঘাবটি মেরে থাকতো নিশ্চিত তাঁর মতোই হবে। সারাক্ষণ চঞ্চলতায় ভরে থাকবে বাচ্চা টা ওয়াও কত্তো মজা হবে ভাবতেই চোখ, মুখ উজ্জ্বলতায় ভরে ওঠলো হৈমীর৷
.
সূচনা আসার পর অনেক সময় কাটায় হৈমীর সাথে৷ নিজের হাতে রান্নাও করে দিয়ে গেছে আজ৷ সেই সাথে সবকথা জানিয়েছে। সব শুনে কান্না পেয়েছে খুব৷ মানুষ এতোটা নীচ হতে পারে ভাবতেই অবাক লাগে তাঁর। কোথায় বড়রা ছোটদের ভুল পথ থেকে বের করে আনবে। সঠিক পথ দেখাবে। তা না রুদ্রর দাদি সবসময় ভুল পথে এগিয়ে দেয় নিজ পরিবারের মানুষ কে। ভুলকেই সঠিক হিসেবে বেছে নেয় সে৷ সঠিকের কোন মূল্যায়নই করে না। একজন বয়স্ক মানুষের কি এমনটা হওয়া বা এমনটা করা উচিত?একজন বয়স্ক মানুষ এমন নিচু মানসিকতার হতে পারে? অবশ্য রুদ্রর ছোটবেলার কাহিনী শুনেও আচ করা যায় মহিলা কতোটা পাষাণ হৃদয়ের৷ বলবেনা বলবেনা করেও রাতে রুদ্র কে সব বলে দেয় হৈমী৷ রুদ্র বাঁকা হেসে বলে সে এসব আগেই বুঝেছিলো কিন্তু আজকে একদম সিওর হয়ে গেলো৷ কিন্তু কিছু মানুষের ভুলের শাস্তি দেওয়া যায় না৷ আর রুদ্রর দাদি হচ্ছেন সেই মানুষ। যার ভুলের সীমা নেই অথচ সে ভুল করেও আজীবন সঠিক হয়ে রয়ে গেলেন। তাঁর ভুলের শাস্তি হয়তো দুনিয়াতে হবেনা। পরকালের খবর ঐ উপরওয়ালাই ভালো জানেন৷ আল্লাহ মাফ করো, আল্লাহ মাফ করো,সকলকেই হেদায়েত দান করো। বিরবির করে বললো রুদ্র। হৈমী বললো,’আমিন’।
.
দেখতে দেখতে ডেলিভারির দিনটি এসে গেলো। নিম্নে চারদিন হসপিটালে থাকতে হবে। সে হিসেবেই সুরভী বেগম সবকিছু গুছিয়ে নিলেন। নয়না রাদিফ পিচ্চি মেয়েটা সহ সবাই এসেছে। সকলে খুশি সেই সাথে একটু ভয়ও কাজ করছে। সূচনা রাফসাকে কোলে নিয়ে হাঁটাহাঁটি করছে৷ মাহেরও আজ ছুটি নিয়েছে৷ আর কেউ না জানলেও সূচনা জানে মাহের কতোটা টেনশনে রয়েছে। হৈমীকে নিয়ে বড্ড সিরিয়াস মাহের বরাবরের মতোনই। তাঁর হয়তো অধিকার নেই তবুও সে দূর থেকে প্রার্থনা করে যায় হৈমীর জন্য। তাই বলে এই না যে সে সূচনাকে ভালোবাসেনা৷ সে সূচনাকেও ভীষণ ভালোবেসে ফেলেছে তবুও মনের ভিতর কোথাও না কোথাও হৈমীর জন্য দূর্বলতা তাঁর রয়েই গেছে৷ সূচনার রুদ্রর প্রতি কোন দূর্বলতা না থাকলেও মাহেরের ঠিকি রয়েছে৷ মেয়েরা খুব সহজে সব কিছু থেকে নিজেদের বের করে আনতে পারে। মানিয়ে নেওয়ার ব্যাপারটা যেমন মেয়েদের থেকে ভালো কেউ পারেনা তেমনি ব্যার্থ জীবন থেকে নিজেকে ওভারকাম করে নেওয়াও মেয়েদের থেকে ভালো কেউ পারেনা। সূচনা মনে প্রাণে বিশ্বাস করে তাঁর জীবনে রুদ্র শুধুই মরীচিকার মতোন ছিলো। মাহেরের সবটা মেনেই সূচনা ভালোবাসে মাহেরকে। ভালো না বেসে উপায় কি? এই পুরুষ টি যে উপর থেকেই নির্ধারিত তাঁর জন্য৷ তাঁর সান্নিধ্য যে পবিএ৷ তাঁর হৃদয় যে খুবই স্বচ্ছ। অন্য পুরুষ রা হয়তো বউয়ের মন রাখার জন্য গভীর রাতে বউয়ের শরীর ছোঁয়ার লোভে বলে, তাঁর মনে বউ ছাড়া কেউ নেই আগে থাকলেও এখন নেই। কিন্তু মাহের সর্বদা এক কথায় অটল। হৈমী তাঁর প্রথম ভালোবাসা হলেও তাঁর শেষ ভালোবাসা সূচনা৷ কারো প্রথম ভালোবাসা গর্বের না হলেও শেষ ভালোবাসা হওয়াটা ভীষণ গর্বের। প্রথম টা জুরে হৈমী থাকলেও শেষটা জুরে শুধুই সে।
.
ভয়ে হৈমীর চোখ, মুখ শুকিয়ে গেছে। রুদ্রর মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। তাঁর ভিতর কি চলছে তা শুধু সে আর উপরওয়ালাই জানে। বিছানায় বসে আছে রুদ্র দৃষ্টি তাঁর মেঝেতে। সুরভী বেগম হৈমীর চুলগুলো বেনুনী করে দিলেন৷ তারপর বেরিয়ে গেলেন রুম থেকে দুজনকে কিছু সময় একা ছেড়ে দিলেন তিনি। ঘন্টাখানেক বাদেই বেরিয়ে যাবে তাঁরা। রুদ্রর পাশে গিয়ে বসলো হৈমী৷ বললো,
—- দাদিকে একবার ফোন দেবেন?

—- কেনো? মেঝেতে দৃষ্টি স্থির রেখেই প্রশ্ন করলো রুদ্র।

—- একবার দোয়া চাইবো প্লিজ। ওনি যেমনই হোক আমার উচিত এসময় সকলের থেকে দূয়া নেওয়া।

মেঝেতে দৃষ্টি রেখেই নিজের ফোন এগিয়ে দিলো হৈমীর দিকে। বললো,

—- রাদিফের দাদি দিয়ে সেভ আছে নাম্বার টা।

হৈমীর হাসি পেলো কিন্তু এমন সিরিয়াস সময় সে হাসিটা আটকে রাখলো৷ দাদিকে ফোন করে দূয়া চাইতেই দাদি বললেন,

—- আমার দোয়া কি আর তোমার প্রয়োজন আছে? তোমার স্বামীতো একাই একশ৷

—- জ্বি দাদি আপনি দূয়া করে দিলেই দু’শ পূরণ হবে প্লিজ দূয়া করে দিন না। আমার খুব ভয় করছে জানেন? আগে তো মা হইনি কোনদিন।

—- আচ্ছা আচ্ছা অতো ভয় পেতে হবোনা। কিছুই হবোনা তোমার ঐ বয়সে আমি দুই বাচ্চার মা হইছি তাই ভয়ের কিছু নাই। আল্লাহ আল্লাহ করো সব ভালোয় ভালোয় কইরা বাড়ি ফিরো দোয়া করে দিলাম।

দাদির সাথে কথা শেষ করে খুশিতে গদগদ হয়ে হৈমী বললো,
—- ইয়েসস দাদি দোয়া করে দিয়েছে আমাকে। যাক আজকের দিন অন্তত দাদি কোন কটু কথা শোনায়নি। বাঁচলাম।

হৈমী লক্ষ করলো রুদ্র সেই যে একদিক হয়ে বসেছে আর এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে না। বিরক্ত হয়ে বললো,

—- এই যে হ্যালো মি. কি ব্যাপার বলুনতো?এদিকে তাকাচ্ছেন না কেনো? দেখি তাকান তাকান কে জানে আজকের পর আর এই রেডিওর কথা শুনতে পারবেন কিনা? এই বাচাল মেয়ের মুখ দেখতে পারবেন কিনা? দেখে নিন দেখে নিন আবার পরে আফসোস হতে পারে।

কথাটা হৈমী মজা করে বললেও রুদ্রর মানসিক অবস্থা যা তাতে খুব লেগেছে কথাটা৷ পুরুষ মানুষ মনের সুখ বা দুঃখের অনুভূতিকে সেভাবে খুলে প্রকাশ করতে পারেনা৷ কিন্তু তাঁদের অনুভূতিগুলো হয় খুব গভীর৷ চোয়াল শক্ত হয়ে আসে রুদ্রর। কান গরম হয়ে যেনো ধোঁয়া বের হওয়ার উপক্রম। রক্তবর্ণ চোখে হৈমীর দিকে চেয়ে কষিয়ে এক থাপ্পড় লাগায় গালে। ব্যাথায় কুঁকিয়ে ওঠে হৈমী। গাল আর ঠোঁটে ধরে হাত সামনে আনতেই রক্ত দেখে কেঁদে দিলো।রুদ্রর রক্তবর্ণ চোখ দুটো দেখে ভয়ে আত্মা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে তাঁর। রক্তবর্ণ চোখের অশ্রুও দেখতে পেলো খুব কাছ থেকে। এ যেনো অশ্রু নয় রক্ত ঝড়ছে চোখ দিয়ে।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here