ভালোবাসায় বন্দিনী পর্ব ১০

0
1813

#ভালোবাসায়_বন্দিনী
#জান্নাতুল_নাঈমা
#পর্ব_১০

“আমার বুকের ভিতর ভালোবাসার ছোট্ট একটি ঘর রয়েছে। যার দরজা খোলার ক্ষমতা আজ অবদি কারো হয়নি। কিন্তু তোমার আমার প্রথম দর্শনেই দমকা হওয়ার বেগে খুলে গিয়েছে সেই দরজা। এখন শুধু আমার সীমানায় তোমার আসার অপেক্ষা। চাইলেই খুব সহজে নিয়ে আসতে পারবো তোমায়। কিন্তু আমি চাই এমনও আসা তুমি আসো যেই আসাতে পিছন হাঁটার কোন উপায় থাকবে না।
আর সেই আসা তোমার হবে না হবে তোমার হৃদয়ের” ~রুদ্র

মাঝরাতে মেসেজের শব্দে ঘুম ভেঙে গেছে হৈমীর।

— রাত তিনটে বাজে আর এই সময় এই মেসেজ?? নাম্বার টাও কালেক্ট করে ফেলেছে। হায় খোদা এই লোক তো দেখি মহা ঝামেলা।

মেসেজটা আবারো চেক করলো নাম্বারটায়ও চোখ বুলালো। নয়নকে ফোন করতেই ঘুমু ঘুমু কন্ঠে বললো,

— কি রে আবারো স্বপ্নে রুদ্র ভাইয়ের থাপ্পড় খেয়েছিস নাকি?? তোর জীবন থাপ্পড়ময় হওয়ার সাথে সাথে আমার জীবনটাও প্যারাময় হয়ে গেছে। রাতদুপুর ঘুম ভাঙিয়ে চেঁচিয়ে ওঠিস।

— চুপপ!শয়তান মেয়ে সত্যি করে বল আমার নাম্বার ঐ ভূতটা কে কে দিয়েছে?? তুই যদি হয়ে থাকিস কাল তোকে পঁচা নর্দমায় চুবাবো সিওর থাক।

— এই এই কি বলছিস আমি না আমি না। নয়না আপুর থেকে নিয়েছে। লাফিয়ে ওঠে বসে কথাটা বললো নয়ন।

— কি নয়না আপু! কি বলছিস আপুর মাথা কি পুরোই গেছে। নাকি দেবরের কথায় ওঠছে আর বসছে কোন টা??

— অমন দেবর থাকলে তাঁর কথায় ওঠবোস না করে উপায় আছে নাকি। আপু তো বিকেলে ফোন করে বললো রুদ্র ভাই নাকি কেমন ভয়ংকর ভাবে প্রশ্ন করে এড়িয়ে চলার সাহস হয়ে ওঠে না। ওনাকে দেখে রাদিফ ভাইয়াও ভীষণ ভয় পায়।

— ধূর বাল কি আছে যে ওরে দেইখা ভয় পাইতে হবো সবার, ফালতু যত্তসব।

— ওমা তাই নাকি তুই যদি এতোই ভয় না পাস মাঝরাতে স্বপ্ন দেখে ফোন করিস কেনো??

— তোর আজাইরা কথা শোনার মুড নাই ঘুমাতে দে আমায় যত্তসব। বলেই নয়নকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ফোন রেখে দিলো।
.
চোখ বন্ধ করতেই রুদ্রর কথা গুলো কানে বাজতে লাগলো “তুমি আমার বাধ্য হয়ে থাকো, তুমি আমার বন্দিনী হয়ে যাও পৃথিবীর সব সুখ এনে দেবো তোমায়” নিঃশ্বাস আঁটকে এলো হৈমীর ওঠে বসে দুকান চেপে চোখ বুজে রইলো। লোকটা মাথায় জেকে বসেছে সড়ছেই না। কি করি আমি, ঐ গম্ভীর, কর্কশ লোকটার প্রেমে পড়ে যাবো না তো আবার?? নাহ এটা হতে পারেনা। যে করেই হোক দাদুকে আমায় সবটা জানাতে হবে কাল। এসব থেকে মুক্ত হতেই হবে আমায়।

জোর করেই চোখ বুজে রইলো হৈমী অথচ ঘুম তাঁর চোখে ধরা দিলো না। এদিকে রুদ্র সারারাত ছাদে কাটিয়ে দিলো। সাথে সাদমান ছিলো সিগারেটের ধোঁয়া ওড়াতে ওড়াতেই সারারাত পাড় করে দিলো দুই বন্ধু। আজানের সময় সাদমান বললো,

— রুদ্র নিচে চল রাত কেটে গেছে দু’ঘন্টা ঘুমিয়ে নে। নয়টায় হৈমীকে দেখতে পারবি। আমারও একটু ঘুম প্রয়োজন তুই তো আবার কারো সাথে বেড শেয়ার করিস না।রুমের সামনে প্রবেশ নিষেধ লিখে রাখছিস নিজের বাড়িই যাই।

দোলনায় বসা থেকে ওঠে দাঁড়ালো রুদ্র চুলগুলো পিছন দিক নিতে নিতে বললো,

— এতো বড় বাড়িতে রুমের অভাব পড়েছে নাকি?? সূচনার রুমের পরের রুম খুলে দিচ্ছি ওখানে ঘুমা। ঠিক সময় আমার রুম চলে আসবি।
— হুম ওকে বাট দোস্ত হৈমীর সঙ্গে রুম শেয়ার করতে পারবি তো?? নাকি ওর বেলায়ও এক নিয়ম।
— মুখ বন্ধ রাখ চল।
— আমি রাখলেও তোমার জানেমান তো মুখ বন্ধ রাখবে না। দোস্ত এই লজিকটাই বুঝলাম না তুই কিভাবে এর প্রেমে পড়তে পারিস৷

দরজা পেরিয়ে সিড়িতে পা ফেলেই থেমে গেলো রুদ্র। লম্বা এক শ্বাস টেনে বললো,
— ওর ভিতরের সত্ত্বাকে চিনে ফেলেছি যে আমি। হতে পারে ও আমার বিপরীত স্বভাবের কিন্তু কোথাও না কোথাও আমাদের সত্ত্বা এক। “কিছু মানুষ আশায় বাঁচে। কিছু মানুষ বাঁচে বুকের ভিতর অজস্র স্মৃতি জমিয়ে। আর ও বাঁচে ওর ভেতরের সবটা উজার করে দিয়ে”
— বাহ একমাসেই এতো ভালো চিনে ফেলেছিস।
— হুম কিছু মানুষ কে চিনতে একদিনই যথেষ্ট আবার কিছু মানুষ কে বছরের পর বছর দেখেও সঠিক ভাবে চেনা মষ্কিল।
— আরেব্বাস কবি বন্ধুর মুখ খুলেছে দেখছি৷ তা ভিতরের কবিত্ব জাগ্রত হলো কবে??
সিড়ির বর্ডারে হাত রাখলো রুদ্র মৃদু হেসে বললো,
— যেদিন থেকে তোতাপাখির আগমন ঘটেছে।
— ওয়ে হয়ে কেয়াব্বাত হে!
— চাপা স্বভাবের মানুষ আমি পছন্দ করিনা৷ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কথাও পছন্দ করিনা৷ আমি যেমন স্ট্রেইট কথা বলতে পছন্দ করি হৈমী তেমন স্ট্রেইট কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করে। তবে আমি বলি জ্ঞান থেকে সেন্স থেকে আর ও বলে ননসেন্সের মতো। হোয়াটেভার সব ঠিক করে নেবো আমি।
— হুম যথাজ্ঞা মহারাজ।

সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে রুদ্র বললো,
— সূচনা কে দেখছিস কি বুঝছিস বলতো??মেয়েটা ভীষণ শান্ত, নম্র,ভদ্র একটা মেয়ে। কিন্তু ওর মনকে তুই পড়তে পারবিনা। ওর নমনীয়তা সকলের মন কে জয় করে নেয়৷ অথচ মেয়েটা কিন্তু ভীষণ রহস্যময়ী৷ বেশ চাপা স্বভাবের। মনের কথা মুখে আনতেই পারে না মেয়েটা৷ এই স্বভাব টা আমার একে বারেই অপছন্দনীয় এর কারন এমন স্বভাবের মানুষ মারাত্মক হয়৷ এরা ভীষণ বুদ্ধিমতী হয়৷ আর পিছন থেকে ছুড়ি এরাই মারে।
— তুই তোর বোন সম্পর্কে এমন কথা বলছিস কেনো??
— বলছি কারন সূচনা একটা ভুল আশা নিয়ে আছে। এতোদিন আমি পারিনি সেই আশা থেকে ওকে বের করতে। সরাসরি কিছু বলিওনি। আমি ওকে বোনের নজরে দেখেছি আর ও সেই সুযোগ টাই নিয়েছে।
— কি বলিস সত্যি এসব??
— সত্যি হোক মিথ্যা হোক আই ডোন্ট কেয়ার। এতোদিন জীবনটাকে একটা পর্যায়ে নিতে পারিনি কারন সঠিক মানুষের দেখা পাইনি, আজ পেয়েছি। সো আমার জীবনটাকে সঠিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ারও সময় এসেছে।
.
রেদওয়ান শেখ নামাজ পড়ে আবার শুয়েছেন। সুরভী বেগম তার মাথার কাছে বসে বললেন,
— তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে??
— বলে ফেলো।
— রাদিফের জীবনটা তো গোছানো হলো এবার রুদ্র কে নিয়ে কিছু ভাবো।
— তোমার ছেলেকে নিয়ে ভাবার সাহস কি এ পৃথিবীতে কারো আছে বলে তুমি মনে করো??
— দেখো রুদ্র যাই বলুক যাই করুক আমাদের উচিত ওর জীবনটা সুন্দর ভাবে গুছিয়ে দেওয়া। তাছাড়া তুমি ভালো করেই জানো সূচনাকে আমি রুদ্রর বউ করার স্বপ্ন দেখছি।
— তোমার ছেলে সূচনাকে বোন হিসেবে মানে তাঁকে নিয়ে এমন স্বপ্ন না দেখাটাই বোধ হয় ভালো। সূচনার জন্য অনেক ভালো পাএ দেখবো আমি।
— এ কথা বলো না মেয়েটা আমার রুদ্র কে ভালোবাসে। মায়ের মতো বড় করেছি ওকে আমি ওর মনের কথা আমার থেকে ভালো কেউ জানে না।

রেদওয়ান শেখ শোয়া থেকে ওঠে বসলো। চিন্তিত চোখে চেয়ে বললো,
— তাহলে ছেলে কে জানাও আমায় বলছো কেনো??এমন তো না তোমার ছেলে বাবা ভক্ত।কারো কথা শুনে না সে, যা শুনে কিছু তা হলো তোমার কথা তাই এসব আমাকে না বলে তুমি তাকেই বলো। বলেই রেদওয়ান শেখ ওঠে গেলেন।
.
আজ হৈমী কলেজ যায় নি ঘুম না হওয়াতে শরীরটা ভীষণ উইক লাগছে তাঁর। নয়নকে ফোন করে জানালো সে যাবে না শরীর ঠিক নেই। সকালের খাবাড় খেয়ে বাচ্চা রা স্কুলে চলে গেলো। দাদু বাগানে বসে ফুল গাছগুলোর পরিচর্যা করছিলো। হৈমীও মোড়া নিয়ে দাদুর পাশে বসলো। দাদু হাসিহাসি মুখে বললো,
— কি গো গিন্নি মুখটা এমন শুকনো লাগছে কেনো??
— দাদুভাই তোমায় কিছু বলার আছে আমার। আমতা আমতা করে বললো হৈমী।

দাদু মাথা দুলিয়ে বললো,
— হুম জটিল কিছু মনে হচ্ছে।
— সাংঘাতিক জটিল। বলেই মুখ ভাড় করলো হৈমী।
— বলে ফেলো দিদিভাই আমার কাছে সব সমস্যার সমাধান পাবে।

হৈমী এবার সাহস করে সবটা খুলে বললো দাদুকে।
দাদু সব শুনে মুচকি হাসলো রুদ্র যে তাঁর সাথে আগেই এ বিষয়ে আলোচনা করেছে সেটাও জানালো। বাচ্চা দের জন্য রুদ্রর নতুন উদ্যেগের কথাও জানালো। সব শুনে হৈমী বিস্মিত চোখ মুখে দাদুর দিকে তাকালো।
দাদু হৈমীর দিকে ঘুরে বসলো। পরম স্নেহে বললো,
— ছেলেটার মন টা ভীষণ স্বচ্ছ। বাইরে থেকে কঠিন হলেও ভিতরটা বেশ নরম। সে তোমায় তাঁর অর্ধাঙ্গিনী হিসেবে চায়৷ তোমার জন্য এমন সুপাএ আর দুটি পাবো না দিদিভাই। বলেই চোখ ঘোরালো।

হৈমী মুখ ফুলিয়ে বললো,
— দাদুভাই ওনাকে তুমি চেনো না। ভীষণ সাংঘাতিক।
— তুমিও কি কম সাংঘাতিক নাকি। এসব চিন্তা করো না। খাঁটি সোনা পেয়েছো যতন করে বুকে রাখো।
হৈমী বসা থেকে ওঠে দাঁড়ালো কাঁদো কাঁদো হয়ে বললো,
— আমি বিয়ে করতে চাই না দাদুভাই এসবে জরাতে চাই না আমি। বলেই পা বাড়ালো চলে যাবে বলে।

দাদু বললো দিদিভাই দাঁড়াও। হৈমী থেমে গেলো।
দাদুও ওঠে দাঁড়ালো লাঠিতে ভর করে হেঁটে হৈমীর সামনে গিয়ে নিজের ডান হাতের পাঁচ আঙুল তাঁর সামনে তুলে ধরলো। আর বললো,

— এ হাতের পাঁচ আঙুল যেমন সমান নয়। তেমনি এ পৃথিবীর সব মানুষের মন মানসিকতাও এক রকম নয়৷
তোমার পরিবারের সাথে তোমার রক্তের সম্পর্ক ছিলো রুদ্রর পরিবারের সাথে আত্মার সম্পর্ক গড়ে তুলবে দেখবে সেই সম্পর্কের শেষ নেই। আর হ্যাঁ হাতের পাঁচ আঙুল যেমন সমান নয় তেমনি প্রত্যেকটা মানুষ ও এক ধাচের নয়। বড় হচ্ছো এসব তো তোমায় বুঝতে হবে তাইনা৷ আর ছেলেটা বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে বৈধ সম্পর্কে আমি আপত্তি করতে পারিনা বরং সব দিক বিবেচনা করে তোমার জন্য যা ভালো হয় সেটাই সমর্থন করছি।

হৈমী আর এক সেকেন্ডও দাঁড়ালো না। চলে গেলো দাদুও মনটা ভাড় করে এগুতে লাগলো। সে খুব ভালো করেই জানে হৈমীকে না বোঝালে সমস্যা আরো বাড়বে রুদ্র কারো তোয়াক্কা করবে না হৈমীরও না৷ তাই হৈমীকে পজেটিভ বিষয় গুলোই বোঝাতে হবে। যাতে রুদ্র কে মেনে নেয়।
.
নয়নের কাছে শুনলো হৈমীর শরীর ভালো না তাই কলেজ আসেনি। সাদমান কে রেখেই রুদ্র গাড়ি স্টার্ট দিলো। একটানে সুখনীড় চলে এলো সে। দরজা খোলা থাকায় নক না করেই সোজা ভিতরে চলে গেলো। দাদু সোফায় বসে বই পড়ছিলো। সালাম দিতেই দাদু চশমা খুলে তাকালো। সালাম ফিরিয়ে বললো,
— দাদুভাই যে কেমন আছো বসো।
— হৈমী কোথায়?? কাঠ কাঠ গলায় বললো রুদ্র।
দাদু ওঠে দাঁড়ালো রুদ্র কে দেখে তাঁর ভালো ঠেকছে না। মৃদু গলায় বললো,
— মেয়েটার শরীর ভালো নেই তাই বাড়িতেই আছে ছাদে সময় কাটাচ্ছে একটু।
— আপনি বসুন বই পড়ুন আমি দেখা করে আসছি। সিড়িটা কোনদিকে??
দাদু হালকা হেসে সিঁড়ি দেখিয়ে দিলো রুদ্র আর এক সেকেন্ডও দাড়ালো না উপরে ওঠে গেলো। দাদু এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সোফায় গিয়ে বসলেন। আর ভাবলেন একা কথা বলাটা জরুরি এতে হৈমীর ওকে চিনতে সুবিধা হবে। আমি যেভাবে চিনেছি এভাবে চিনতে পারলে আর কোন চিন্তা থাকবে না।
.
ছাদের বর্ডার ধরে দাঁড়িয়ে অবিরত চোখের জল ফেলছে হৈমী৷ মনটা তাঁর ভীষণ বিষন্ন আজ খুব মা, বাবা কে মনে পড়ছে তাঁর। ভীষণ একা লাগছে। জীবনটা কেমন বিষাদময় লাগছে নানারকম দ্বন্দ্বে আছে সে। মনের ভিতরের সব দ্বিধা কে দূর করতে পারছে না কোনভাবেই না। তাঁরও ইচ্ছে করে জীবনে কেউ আসুক রাঙিয়ে দিক তাঁর বিষাদময় জীবনটাকে ভালোবাসার রঙে। কিন্তু ভয় হয় বড্ড ভয় হয়। এক মন বলে ভালোবাসার খাতায় নাম লিখাতে অন্য মন বলে না এটা তোর জন্য নয়। যার জীবনে বাবা,মায়ের ভালোবাসা নেই তাঁর জীবনে অন্যকারো ভালোবাসা কি করে ঠাই পাবে। ভালোবাসার প্রথম ধাপেইতো তাঁর ফলাফল শূন্য। দ্বিতীয় ধাপে যাওয়ার সাহস কি করে দেখাবে সে??

— ষ্টুপিডের মতো কাঁদছো কেনো সমস্যা কি??দাঁতে দাঁত চেপে কথাটা বললো রুদ্র।

হৈমী চমকে পাশে তাকালো। কাঁদতে কাঁদতে নাক,মুখ চোখ লাল হয়ে গেছে তাঁর। কাঁদো কাঁদো গলায় বললো,

— আপনি এসেছেন আবার থাপ্পড় দিবেন আমায় নিন দিন। তারপর চলে যান একা থাকতে দিন আমায়।

হৈমীর অশ্রুমিশ্রিত মুখটা দেখে বুকে যেনো কাটা বিধলো রুদ্রর। চিনচিনে ব্যাথায় বুকটা ভরে এলো।রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে এলো তাঁর। দুহাত মুঠ করে ফেললো। কড়া গলায় বললো,

— কেনো কাঁদছো??
— বলবো না আপনাকে আমি, আপনি কে যে আপনাকে বলতে যাবো। আপনি আমার চরম শত্রু চলে যান এখান থেকে একা থাকতে দিন আমায়।

রুদ্র রেগে হাত ওঠাতে নিতেই হৈমী হুট করে জরিয়ে ধরলো তাঁকে। হাউ মাউ করে কেঁদে ওঠলো সে।আচমকাই এমন কিছু ঘটে যাবে ভাবতেও পারেনি রুদ্র। হৈমীর মাথাটা ঠেকেছে তাঁর বুকে। শব্দ করে কাঁদছে সে। না জানি কতো দিনের জমানো কান্না এগুলো।
তাঁর কান্নার আওয়াজে রুদ্রর বুকের ডিপডিপ আওয়াজ আরো বেড়ে গেলো।এ কেমন অনুভূতি এ অনুভূতির নাম কি দেবে রুদ্র সুখ না দুঃখ?? এভাবে কেনো কাঁদছে মেয়েটা এভাবে জরিয়েই বা ধরেছে কেনো?? কি করা উচিত এখন মেয়েটাকে শক্ত করে ছাড়িয়ে ঠাশিয়ে একটা লাগিয়ে দেওয়া উচিত?? বলা উচিত “এই মেয়ে লজ্জা করে না বিয়ের আগেই একজন পুরুষ মানুষ কে জরিয়ে ধরো। এ বয়সেই এতো পাকনামো কথা থেকে আসে হুম” পরোক্ষনেই ভাবে থাকুক না কিছু ক্ষন কেঁদে কেঁদে আমার বুকে সমুদ্র সৃষ্টি করে দিক। সেই সমুদ্রের বুকে ভেসে বেড়াক সে।
এ স্থানের নামকরণ যে তাঁর নামেই করা হয়ে গেছে।
.
পৃথিবীর বুকে বৃষ্টির আগমণ ঘটলো সেই সাথে রুদ্রর বুকে আগমন ঘটলো হৈমীর চোখের অঝড়ে ঝরে চলা নোনাপানির। মেঘ গর্জন দিয়ে বৃষ্টি নেমে এলো।
দুজনই ভিজে একাকার হয়ে গেলো। রুদ্র শক্ত করে কাঁধ চেপে সরিয়ে দিলো হৈমী কে। হৈমী অশ্রু মিশ্রিত চোখেই চেয়ে রইলো রুদ্রর দিকে। চুলগুলো আবারো ঘাড় ছেয়ে গেছে রুদ্রর। ভিজে ঘাড়ের সাথে লেপ্টে আছে চুল। ডান হাতের তালু দিয়ে কপাল থেকে থুতনী অবদি মুছে গম্ভীর গলায় বললো রুদ্র ,

— নিচে চলো।

শীতলতায় শরীরের প্রত্যেকটা লোমকূপ দাঁড়িয়ে গেলো।শরীরের কাপড় ভিজে গায়ে লেপ্টে যেতে লাগলো। ওড়নাটা গলায় আটকানো দুকোনা পিছন দিক দেওয়া। রুদ্র এক ঢোক গিলে এদিক সেদিক তাকাতে লাগলো। হৈমী তাঁর দিকেই চেয়ে আছে। এ সে যেনো বৃষ্টি বিলাসের সাথে দৃষ্টি বিলাসও করছে।

বৃষ্টির পানি চুল বেয়ে গলায় পড়ছে। কপাল নাক বেয়ে গোলাপি ঠোঁট জোরা ভিজিয়ে আরো দ্বিগুণ আকর্ষণীয় করে তুলেছে। ডাগর ডাগর চোখের পাপড়ি গুলো ভিজে জড়ো হয়ে আরো মোটা কালো হয়ে গেছে। কারো চোখ এতো সুন্দর হতে পারে?? বৃষ্টি তে ভিজে চেহারার উজ্জ্বলতা যেনো দ্বিগুন বেড়ে গেছে।এই বৃষ্টি কি আর আসার সময় পেলো না৷ কেনো এতো যন্ত্রণা দিচ্ছে প্রকৃতি আমায়। এভাবে আর সহ্য হচ্ছে না রুদ্রর চট করে পিছন ঘুরলো। আবারো বললো,

— নিচে চলো।
হৈমী সেভাবেই ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো। অল্প বয়সী মেয়েরা বেশীই আবেগ প্রবণ হয়৷ আবেগ কে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না তাঁরা হৈমীও পারছে না৷ রুদ্র যদি সত্যি তাঁকে ভালোবাসে সত্যি তাঁকে আগলে রাখে। সেই লোভ সে আঁটকে রাখতে পারবে না, পারছে না৷
মনের ভিতর টা অশান্ত হয়ে আছে তাঁর এই অশান্তি আর সহ্য করতে পারছে না৷ মুখ ফুটে বললো,
— ভালোবাসেন আমায়??
রুদ্র পিছন ঘুরেই বললো,
— ফালতু কথা বন্ধ করো নিচে চলো।
— যাবো না আমার উত্তর চাই।
— না বাসিনা৷
— তাহলে বিয়ে করতে চান কেনো??
রুদ্রর মেজাজ এবার বিগরে গেলো। পিছন ঘুরে হৈমীর হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে বললো,
— নিচে চলো।
হৈমী শরীর গেড়ে দাঁড়িয়ে রইলো। আর বললো,
— যাবো না। আগে বলুন আমাকে ভালোবাসেন।

রুদ্র রাগ দেখাতে চেয়েও রাগ দেখাতে পারছে না। ভীষণ বিপদে পড়ে গেছে সে। মেয়েটা যেনো তাঁকে আজ দিশেহারা করে ছাড়বে। তাঁর চরিএে দাগ লাগিয়ে ছাড়বে। উপায় অন্তর না পেয়ে অন্যদিক ঘুরে বললো,

— ওড়নাটা ঠিক জায়গায় রাখো হৈমী। আমায় তুমি রাগিও না।

চলবে।

ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন৷ দুপার্ট একদিনে লিখেছি খারাপ হলে আই এম রেইলি সরি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here