ভালোবাসায় বন্দিনী পর্ব ৭

0
1929

#ভালোবাসায়_বন্দিনী
#জান্নাতুল_নাঈমা
#পর্ব_৭

“আমার ভালোবাসায় আমি করবো তোমায় ওগো বন্দিনী। আমার ভালোবাসার উষ্ণ ছোঁয়ায় ছুঁয়ে দিব তোমার ঐ হৃদয়খানি” ~রুদ্র।
.
হৈমী বড় বড় করে চেয়ে বসা থেকে লাফ দিয়ে ওঠে দাঁড়ালো। পুরো রুম জুরে ঘুরছে আর বার বার পড়ছে লেখাটা। “নাম রুদ্র কোন রুদ্র ওহ মাই গড ঐ বন মানুষ টা। হায় আল্লাহ বলে কি ব্যাটা আমার নামে এই লেখা পাঠিয়েছে কাহিনী কি?? শালা আমি একটু হাত ধরেছিলাম বলে থাপ্পড় লাগায় দিছোস।
প্রেম করতে তো আর ধরিনাই। যাচাই করতে ধরেছিলাম আর তুই মাইর লাগাইছোস। গাড়িতে মাইর লাগাইছোস, ইনজেকশন দিয়ে আমার হাত লোলা করে দিছোস তবুও একটা শিক্ষা দিতে পারলাম না। আর তুই আমাকে কতোবার ছুঁয়েছিস আবার চিঠি পাঠিয়েছিস ঢং। এই এক মিনিট এক মিনিট ব্যাটায় আমারে চিঠি পাঠায় ক্যান,ব্যাটা রোমান্টিক বাক্যও লিখে ঘটনা কি?? আমার মতো কিউট মাইয়ার প্রেমে ঐ বন মানুষ,রাগী গম্ভীর বদমেজাজি পোলা পড়লো। ও মা গো বলে কি”??

কপালে তিন ভাজ ফেলে ভ্রু কুঁচকে পার্সেলের দিকে তাকালো। আরো কিছু আছে কিনা চেক করতেই তাঁর নেকলেসটা পেলো। খুশিতে লাফিয়ে ওঠলো। তারমানে নয়না আপুর শশুড় বাড়িই ফেলে এসেছিলাম। খুশিতে গদগদ হয়ে চেইন টা গলায় পড়ে নিলো। আবারো চিঠিটা ওলোট পালোট করে দেখলো। আর ভাবলো “ব্যাটার মতিগতি ঠিক ঠেকছে না আচ্ছা করে ধোলাই দিতে হবে।কিন্তু কিভাবে দিবো কিছু বললেই তো ঠাশ ঠাশ লাগায়” ভেবেই ন্যাকা কান্না কাঁদলো। তখনি রুমে এলো এলা,এলা এবার ক্লাস ফাইভে পড়ছে সেও সুখনীড়ের একজন সদস্য। এলা বললো,

— হৈমী আপু, হৈমী আপু কিউট ভাইয়া এসেছে। মাহেরকে সব বাচ্চারাই কিউট ভাইয়া বলে ডাকে।হৈমী শুধু ভাইয়া আর পরী বয়ফ্রেন্ড বলে ডাকে।

এলাকে বললো,
— তুই যা আমি এখনি আসছি।
এলা চলে যেতেই হৈমী আবারো চিঠিটা পড়লো। মাথা তাঁর হ্যাং হয়ে আছে কিছু ঢুকছে না এসবের মানে কি?? আপাতত এ বিষয় মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে রুম ছেড়ে বের হলো সে।

সকলে মিলে কেক কাটলো। একসাথেই সকলে খাওয়া, দাওয়া করলো। রাত তখন আটটা বাজে। দাদু রাতে তারাতারি ঘুমিয়ে পড়ে এবং ফজরের সময় ওঠে নামাজ আদায় করে ভোরে ওঠার দরুন আগে আগেই ঘুমায় তিনি।

নয়নকে নিয়ে এসেছে মাহের। তাঁদের মা সমানে ফোন করছে তারাতারি বাড়ি ফেরার জন্য৷ কিন্তু বাচ্চা রা বায়না ধরেছে গান শুনবে। হৈমী বাচ্চা দের গানের প্রতি এতো আগ্রহ দেখে মাহের কে বললো,

— ভাইয়া তুমি এক কাজ করো প্রতি ফ্রাইডেতে ওদের দুঘন্টা করে সময় দাও আর গান শেখাও। ওদের সাথে আমিও শিখবো যাতে ওরা যখন গান শুনতে চাইবে আমিই শোনাতে পারি হিহিহি।

প্রস্তাব টা মন্দ লাগলো না মাহেরের। সে তো চায় সব সময় হৈমীর সাথে থাকতে,হৈমীর পাশে থাকতে। কিন্তু পড়াশোনা, কাজ এর জন্য হয়ে ওঠেনা। তাছাড়া প্রত্যেক সপ্তাহে সুখনীড়ে আসাই হয় তাহলে আসাটা গুরুত্বপূর্ণ করে তুললে মন্দ হয় না।এক টুকরো সুখের আশায়ই তো সুখনীড়ে আসা তাঁর। এক কথায় রাজি হয়ে গেলো মাহের। হৈমী তখন লাফিয়ে ওঠলো আর বললো,

— আমাকে কিন্তু গিটার বাজানো শিখিয়ে দিতে হবে।

চোখ ঘুরিয়ে মাথা দুলিয়ে হাত নেড়ে কথাটা বললো হৈমী৷ মাহের তাঁর দিকে অপলকভাবে চেয়ে মৃদু হাসলো। আর মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো। হৈমী মাহেরের দুগাল টেনে দিয়ে বললো,

— সত্যি তুমি কিউট বয় এন্ড কিউট ভাইয়া। আমরা খুব খুব লাকি তোমার মতো একজন কে আমাদের পাশে পেয়েছি।

“ইশ মেয়েটা পাগল করে দেবে আমায়৷ এভাবে কাছে এসে ছুঁয়ে দিলে নিজেকে যে সামলাতে পারিনা রে পাগলী” এক ঢোক গিললো মাহের নিজেকে সংযত করে বললো,

— এবার যে ওঠতে হবে। লিটল ওয়াইফ এবার তাহলে আসি। পাশে পরী বসা ছিলো তাঁর দিকে চেয়ে কথাটি বললো মাহের।

পরীও কিউট একটা হাসি দিয়ে বললো আচ্চা আবাল আসবে। মাহের পরীর কপালে কিস করে বললো “ওকে ডিয়ার”।

নয়ন আর মাহের চলে যেতেই হৈমী নিজের রুমে গিয়ে ভাবতে লাগলো।” এসবের মানে কি?? এমন একটা লেখা কেনো ওনি আমায় পাঠালেন?? কোন ঘাপলা নাই তো??নয়নকে বলাও হলো না মাহের ভাইয়া ছিলো বলে। সে যাই হোক এবার ওনাকে কড়া কথা শুনিয়ে দিবো কয়টা। আর আমার সাইকেলটাও ফেরত নিবো কেমন শয়তান ব্যাটা। তোর ধান্দা বাজি আমি ছুটাবো ওয়েট কর শুধু” লুচু কোথাকার!
.
চোখে ঘুম নেই রুদ্রর। নিজেকে বড্ড পাগল পাগল লাগছে তাঁর। এতো দিন হয়তো সকলে তাঁকে পাগল ভাবতো কিন্তু বেশ কয়েকদিন ধরে সে ফিল করে সে সত্যি পাগল৷ ঘুমাতে পারে না,খেতে পারেনা,বন্ধু দের সাথে বাইরে আড্ডা দিতে পারে না। বাইরে গেলে মন বাড়ি বাড়ি করে বাড়ি এলে মন বাইরে যেতে চায়।

এই যন্ত্রণা আর সহ্য করতে পারছে না রুদ্র। মন শুধু বলে মেয়েটা কে নিজের কাছে নিয়ে আয়। তাঁর ভিতরের সব দুঃখ, কষ্ট, যন্ত্রণা ভুলিয়ে দে৷ নিজের ভালোবাসায় তাকে বন্দিনী করে ফেল। বুকের ভিতর যে ছোট্ট খাঁচার দরজা খুলে দিয়েছিস যতো তারাতারি সম্ভব খাঁচার ভিতর আটকে সেই খাঁচার দরজা বন্ধ করে ফেল যেনো আর কখনো বের হতে না পারে সারাজীবন তোর বন্দিনী হয়ে থাকে। কিন্তু মেয়েটা তো ম্যাচিওর না। সবে ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ছে।এ বয়সি মেয়েকে কি করে বিয়ে করে ঘরে তুলবে??

শোয়া থেকে ওঠে বসলো রুদ্র। জোরে জোরে শ্বাস নিতে থাকলো। রাত হলেই দম যেনো বন্ধ হয়ে আসে। বাচ্চা মেয়েটার মাঝে কি এমন আছে?? কেনো এতো পাগল পাগল লাগে আমার তাঁর জন্য??

কতো মেয়েকে থাপড়িয়েছি শুধু মাএ এই প্রেম ভালোবাসায় জরাবো না বলে। হৈমীর তুলনায় বেশ বড় বড় মেয়েরাই প্রপোজাল দিয়েছে অথচ ছোট হয়ে এমন কান্ড করার জন্য কতো অপমান করেছি। তাদের বাবা,মায়ের কাছে নালিশ দিয়ে শাস্তির ব্যবস্থা করেছি আর আজ আমি তাঁদের তুলনায়ও বেশ ছোট বাচ্চা একটা মেয়ের জন্য এমন ছটফট করছি। যদিও মেয়েটা সভ্য হতো তা তো না, সারাক্ষণ ইডিয়টের মতো বকবক করেই যায় উফফ।এটাকে মানুষ বানাতে কবছর লেগে যাবে কে জানে।

দুঃখ হচ্ছে, কষ্ট হচ্ছে, যন্ত্রণা হচ্ছে আবার সুখও হচ্ছে।বুকের ভিতর এক চিনচিনে ব্যাথা অজানা, অচেনা ব্যাথাটা খুব করে নাড়া দেয় আজকাল। এই সুখ,দুঃখের কিনারা কোন অবদি ঠেকেছে জানা নেই তাঁর। জানা শুধু তাঁকে চাই। আমার ভালোবাসায়_বন্দিনী করতে চাই তাঁকে। আমার ভালোবাসায়_বন্দিনী।

ঘুমানোর জন্য চোখ বুজলেই হৈমীর কথাগুলো কানে, মাথায় বাজতে থাকে অবিরত৷ মনে হয় মেয়েটা কানের কাছে এসে চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে কথা বলে ঘুমে ডিস্টার্ব করছে। কিছু বলার জন্য চোখ খুললেই পুরো রুম ফাঁকা। এমন যাতনা না দিলেই কি নয়??অসহ্য লাগছে রুদ্রর একটা সেকেন্ড হৈমী বিহীন থাকা যেনো দায় হয়ে পড়ছে এই অল্প কয়েক দিনেই। হুট করে কি থেকে কি হয়ে গেলো। যেদিন থেকে হৈমীর অতীত জেনেছে সেদিন থেকেই যেনো বুকটা তাঁর জন্য খুব পুড়ছে। কেমন যেনো মায়ায় জরিয়ে গেছে যা থেকে একটু ওঠার চেষ্টা করতেই বেশী করে জরিয়ে যাচ্ছে।
.
সকাল আটটা বাজে প্রতিদিন দেরীতে ঘুম থেকে ওঠলেও আজ তারাতারি ওঠেছে রুদ্র। উদ্দেশ্য হৈমীকে দেখতে যাওয়া। সারারাত যাকে এক পলক দেখার জন্য ছটফট করেছে সকালে তাঁকে দেখতে না যাওয়াটা বড্ড বেমানান।

এতো আগে রুদ্র ওঠে পড়েছে দেখে সুরভী বেগম আর সূচনা বেশ অবাক হলো। নয়না জানতো রুদ্র আজ দ্রুতই ওঠবে৷ কারন সে বেশ বুঝতে পারছে রুদ্র হৈমীর প্রতি যে কোন ভাবেই হোক না কেনো বেশ উইক এন্ড ভেরী পসেসিভ হয়ে পড়েছে। বিয়ের পর দুদিন নয়নার সাথে রুদ্র কথা বলেছে তবুও হৈমীকে নিয়ে হৈমীর বিষয়েই। যদিও শুধু প্রশ্ন করেছে এর বাইরে একটি ওয়ার্ড ও বলেনি৷ তবুও নয়না বেশ বুঝতে পেরেছে।

রুদ্র নিচে আসতেই সূচনা কফির মগ সামনে ধরলো। রুদ্র সূচনার দিকে একবার কফির মগের দিকে একবার চেয়ে গম্ভীর স্বরে বললো,

— সামনে থেকে সড় দেরী হয়ে যাচ্ছে আমার খাবো না।
— তোমার জন্য বানিয়েছি খেয়ে নাও প্লিজ। মাথা নিচু করে বললো সূচনা৷
রুদ্র দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
— সকাল সকাল এসব করতে কে বলেছে তোকে। পড়াশোনা নেই যা পড়তে বস।

সুরভী বেগম টেবিলে ব্রেকফাস্ট গোছাতে গোছাতে বললেন,
— আহ রুদ্র মেয়েটা বানিয়েছে খেয়ে নে। ধমকাচ্ছিস কেনো৷

রুদ্র কোন কথায় কান না দিয়ে সূচনা কে পাশ কাটিয়ে হনহন করে চলে গেলো। সূচনার চোখ বেয়ে দুফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো। কফির মগটা নিয়ে কিচেনে চলে গেলো সে। নয়নার খানিকটা সন্দেহ হলেও পাত্তা দিলো না৷ রাদিফ নিচে আসতেই তাঁকে ব্রেকফাস্ট দিয়ে তাঁর পাশে বসলো।
.
সূচনার মুখটা মলিন দেখে সুরভী বেগম কাছে গিয়ে বললেন,

— আমার আম্মাজান কি আব্বাজানের কথায় খুব কষ্ট পেয়েছে??
সূচনা মাথা নেড়ে না করলো অথচ তাঁর চোখ দিয়ে জল গড়াচ্ছে অবিরত। সুরভী বেগম তাঁর কাছে গিয়ে দুহাতে চোখের পানি মুছে দিয়ে কপালে চুমু একে দিয়ে বললেন,
— আব্বাজান তো এমনই আম্মাজান। তাই আপনি ঘোষা করবেন৷ নিজের কর্তার ওপর কেউ এমন ঘোষা করে নাকি।
সুরভী বেগম এমন রসাতক গলায় বললো শুধুমাএ সূচনাকে হাসানোর জন্য। কাজও হলো সূচনা কান্নার মাঝেই হেসে ফেললো। আর বললো,
— আমি যাই ওর বিছানা টা গুছিয়ে আসি।
— ওকে আম্মাজান যান, আপনার অগোছালো কর্তাকে গোছানোর দায়িত্ব তো আপনারই।
সূচনা লাজুক হেসে উপরে চলে গেলো। রোজকার মতো রুদ্রর বিছানা অগোছালোই রয়েছে সূচনা রোজকার মতোই আজো তাঁর বিছানা গুছিয়ে পুরো রুম ঝাড়ু দিয়ে রুমের দরজা লক করে চলে গেলো।
.
৮ঃ৩০ বাজে হৈমী এখন ইংলিশ প্রাইভেটে৷ নয়নার থেকে সব জেনে নিয়েছে রুদ্র। তাই ইংলিশ স্যারের বাসার সামনে গাড়ি নিয়ে ওয়েট করছে। জাষ্ট এক নজর দেখেই চলে যাবে চিন্তা ভাবনা।

ড্রাইভিং সিটে রুদ্র, পাশের সিটে সাদমান পিছনের সিটে আবির আর নিরব তিনজনই রুদ্রর খুব ভালো বন্ধু। তিনজনই জানে রুদ্র কেনো এখানে ওয়েট করছে। এ প্রথম তাঁদের বন্ধু কোন এক মেয়ের জন্য অপেক্ষা করছে। আশ্চর্য ব্যাপার হলো মেয়েটা ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে বয়স নিশ্চয়ই ষোল,সতেরো এর বেশী হবে না। আহারে বাচ্চা টার কপাল এভাবে পুড়লো??ভাবলো তাঁরা।

” তবে যাই হোক বন্ধু যে কোন মেয়ের প্রতি দূর্বল হয়েছে তা ভাবতেই আনন্দে নাচতে মন চাচ্ছে ওদের। কিন্তু এতো আনন্দ প্রকাশ করা যাবে না কারন তাঁদের বন্ধু মোটেও আর সব বন্ধু দের মতো নয় সে বড্ড সিরিয়াস৷ আর বিয়ের আগে প্রেম করার বিষয়ে একেবারেই পক্ষপাতিত্ব না৷ এই কারনেই নিরব আজ বিবাহিত। একটা মেয়েকে খুব পছন্দ হয়েছিলো নিরবের। ইচ্ছে ছিলো চুটিয়ে প্রেম করবে কিন্তু শুরুর আগেই শেষ হয়ে গেলো তাঁর প্রেম৷ এমন বন্ধু থাকলে আর শত্রুর প্রয়োজন হয় না”

“জীবনে প্রথম পার্কে দেখা করতে গিয়েছিলো মেয়েটির সাথে। মেয়েটির নাম মিতু। সেই প্রথম দেখাতেই তাঁদের সম্পর্কের প্রণয়ের আগেই পরিণয় ঘটে গেলো। ধমকে ধমকে কাজি অফিস নিয়ে গিয়ে ধমকে ধমকে কবুল বলালো তাঁদের রুদ্র । তারপর দু পরিবার কে মানিয়ে বড়সড় অনুষ্ঠানও সম্পন্ন করলো নিজ দায়িত্বে৷ সেই বন্ধুর যখন কোন মেয়েকে মনে ধরেছে তাহলে তো মেয়েটা গেছে। নিরব কথাগুলো ভাবছে আর মিটিমিটি হাসছে আবির ও হাসছে মিটিমিটি। সাদমান মোটেও হাসছে না বরং সে ভীষণ চিন্তিত তাঁর পেয়ারের বন্ধু টিকে নিয়ে”
.
৯টার দিকে সকল স্টুডেন্টস বেরিয়ে এলো। সাদমান,আবির, নিরব গাড়ি থেকে নেমে মেয়েগুলোর দিকে চোখ ডাবিয়ে চেয়ে রইলো। কোনটা তাঁদের পিচ্চি ভাবি,বাচ্চা ভাবি তাই বোঝার চেষ্টা করছে সকলে। কিন্তু দূর্ভাগ্য মেয়েগুলো এতোই বাচ্চা যে ভাবি বলতে লজ্জা লাগছে ভীষণ। দশ,এগারো বছরের ছোট মেয়েগুলা, হাঁটুর বয়সি মেয়েকে ভাবি!
ভাবতেই হাসি পাচ্ছে, আবার কান্নাও পাচ্ছে ওদের।

হৈমী আর নয়ন বের হলো শেষে ননস্টপ কথা বলতে বলতেই বের হচ্ছে হৈমী৷ এদিকে কোনটা হৈমী তাই বুঝতে পারছে না সাদমান,আবির, নিরব। রুদ্রও গাড়ি থেকে বের হচ্ছে না৷ আগের মেয়েগুলো সন্দেহী চোখে চেয়ে চেয়ে চলে গেলো।এটাই স্বাভাবিক তিনটা ছেলে তাঁদের দিকে ড্যাব ড্যাব করে চেয়ে আছে সন্দেহ তো করবেই। শেষে হৈমী নয়নকেও ড্যাব ড্যাব করে দেখতে লাগলো। রুদ্রর কাছে অল্প স্বল্প শুনেছিলে সাদমান৷ তাই মেলাতে লাগলো সামনে বেবি কাট দেওয়া মিলেছে ডাগর ডাগর চোখ মিলেছে। দুপাশে ঝুটি করা কলেজ ড্রেস পড়া দুজনই। নয়ন কলেজ ড্রেস পড়া মাথায় স্কার্ফ আছে। হৈমীর গায়ে স্কার্ফ নেই শুধু ভি বেল্ট সহ ড্রেস পড়া দুপাশে কাঁধে দুই ঝুটি মেলানো।

তিনজন ছেলেকে এভাবে চেয়ে থাকতে দেখে হৈমী তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তে চেয়ে এগিয়ে এলো। কোমড়ে দুহাত রেখে ঘাড় উঁচু করে বললো,

— এই যে বুইড়া, ধামড়া ভাইরা এখানে কি চাই। এমন ভুতুম পেঁচার মতো চেয়ে আছেন কেনো??লজ্জা করে না অবুঝ মেয়েগুলার দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে। চোখ একদম গেলে দিবো৷ ঘরে কি মা, বোন নাই যে বাইরের বোনদের এভাবে দেখতে আসছেন৷ এখনি গিয়ে স্যারকে নালিশ জানাবো যে তাঁর বাসার সামনে বদের আছাড়ি কয়টা ছোকড়া দাঁড়াই আছে লজ্জা শরমের বালাই নাই। কেমন করে তাকাই থাকে মেয়েদের দিকে হুমহ। বলেই রাগে চোখ, দাঁত কটমট করতে লাগলো। নয়ন হৈমীকে ইশারায় চুপ করানোর চেষ্টা করছে।
.
তিনজনই ভড়কে গেলো কথা শুনে।একদমে কতোগুলা বদনাম দিলো মেয়েটা ছিঃ। মনে হয় বদনামের সাবজেক্ট নিয়ে এম এ পাশ করে রেডিও শুনালো। সাদমান হকচকিয়ে গিয়ে বললো,

— এই যে মিস পিচ্চি আপু আপনি একটু বেশীই বলছেন৷ আমরা এখানে আমাদের ভাবি কে দেখতে আসছি। বাচ্চা মেয়েদের দেখার অত শখ নাই।
ভাই ই নিয়ে আসছে আমাদের নয়তো পুঁচকে দের দেখার জন্য কোন আগ্রহই নেই একদম।

হৈমী আরেকটু এগিয়ে বেশ ঝগরা শুরু করে দিলো।
বাবারে মেয়ের ঝাঁঝ ছোট মরিচের ঝাল যে বেশীই হয় একে দেখলেই তাঁর প্রমাণ মিলবে।ভাবলো সাদমান।

— ভাবি দেখতে আসছেন ভাবিই দেখেন৷ সব মেয়ের দিকে তাকাতে কে বলছে৷ সব মেয়েরা কি আপনার বাপের সম্পত্তি?? আমাদের দিকেও তাকাইছেন এভাবে তাকালে চোখ লাগবো৷ আমরা দুজন যথেষ্ট সুন্দরী আপনাদের কুনজরে যদি চেহেরা নষ্ট হয় না চোখ একদম তুলে নিবো হুমহ। এই নয়ন “চোখ খা ড্যালা খা ” বলে তুই আমাকে তিনবার ফুঁ দে আমি তোকে তিনবার দেই আয়।

কথা টা বলে শেষ করতে না করতেই ঠাশশশ।

নয়ন সহ তিন বন্ধুই ভয়ে কেঁপে ওঠলো। হৈমী ছিটকে গেছে কিছুটা। কান্না করে দিয়েছে মেয়েটা থাপ্পড় খেয়ে। কিন্তু যখন সামনে চেয়ে দেখলো সাদা রঙের কাবলী পড়া, রোবটের মতো হাত মুঠ করে চোখ, মুখ শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে রুদ্র তখন ক্ষেপে গেলো।

নয়ন ভয়ে সমানে ঢোক চিপছে, হৈমীকে গিয়ে ধরলো। হৈমী এবার গলা ফাটিয়ে বলতে শুরু করলো,

— শয়তান, গোমরা মুখো, লোহার হাত, যন্ত্র মানব।
তুই আমাকে আবার মেরেছিস ছাড়বো না তোকে আমি বলেই নিচ থেকে ইটের খন্ড তুলেই ছুড়লো রুদ্রর দিকে। রুদ্রর কপালে লেগে ছিটকে নিচে পড়লো খন্ডটা৷ হয়তো একটু লেগেছে তবুও কোন ভাবান্তর হলো না। রোবটের ন্যায় দাঁড়িয়েই রইলো। রাগে শরীর কাঁপছে তাঁর চোখ দুটো লাল টকটকে হয়ে আছে। দাঁত কামড়ে দাঁড়িয়ে আছে সে।
.
মূহুর্তেই কি ঘটে গেলো বুঝতে কয়েক সেকেন্ড লাগলো সাদমান, আবির,নিরবের। নয়ন তো বিস্মিত হয়ে একবার রুদ্র আরেকবার হৈমীর দিকে তাকাচ্ছে। রাস্তায় মানুষজন আড় চোখে তাকাচ্ছে। কয়েকজন দাঁড়িয়ে পড়লেও রুদ্রকে দেখে চলে গেলো। শেখ বাড়ির ছোট ছেলেকে চিনতে কারোরি অসুবিধা হলো না।

হৈমী কাঁদছে আর যা তা বলছে। রুদ্র গম্ভীর গলায় বললো,
— নয়ন গাড়িতে বসো গিয়ে।
নয়ন ভয়ে ভয়ে রুদ্রর দিকে তাকালো। ভয়ে হাত পা কাঁপছে তাঁর।
হৈমী ক্ষেপে গিয়ে বললো,
— তুই যদি গাড়িতে ওঠিস তাহলে তোর সাথে আমার সব সম্পর্ক শেষ। এই ভিলেনটার গাড়িতে তুই ওঠবি না। বলেই সকলকে পাশ কাটিয়ে হাঁটা ধরলো।
রুদ্র দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
— স্টপ দ্যায়ার!
হৈমী তবুও বিরবির করতে করতে আগাতে লাগলো।
রুদ্র বড় বড় করে কয়েক কদম পা ফেলেই হৈমীর হাত চেপে ধরলো।
.
সাদমান নয়নকে জিগ্যেস করলো,
— তুমি নয়না ভাবির বোন??
— হ্যাঁ।
— ও হৈমী??
— হুম।
সাদমান বোকা হেসে নয়নকে বললো,
— তুমি গাড়িতে বসো আমরা তোমার বান্ধবী কে বোঝাচ্ছি।
নয়ন বেশ ভয়ে আছে হৈমী তাঁকে বলেছিলো রুদ্র নাকি হৈমীকে চিঠি দিয়েছে। প্রথমে বিলিভ করেনি চিঠিটা দেখে বিলিভ করেছে৷ আর এখন যা ঘটলো এতে বেশ সন্দেহ হলো নয়নের। তাঁর মানে রুদ্র ভাইয়া সত্যি হৈমীর প্রতি সামথিং সামথিং?? তাহলে এমন মারে কেনো??
.
নয়ন গাড়িতে ওঠার আগেই রুদ্র একটানে নিয়ে গাড়িতে ধাক্কা দিয়ে ফেললো হৈমী কে।হৈমী ও মা গো বলে চিল্লাফাল্লা শুরু করে দিলো।

নয়ন কে ইশারা করতেই ভয়ে ভয়ে অন্যপাশ দিয়ে গাড়িতে ওঠে বসলো নয়ন। সাদমান সামনে বসলো। আবির, নিরব পিছন থেকে রিকশা নিলো একটা।

— কোথায় যাচ্ছি?? কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাদের?? আপনি বাড়াবাড়ি করছেন। আপনার নামে কেস করবো আমি। গায়ের জোর আছে বলে সব সময় আমার ওপর সেই জোর খাটাবেন। কি ভেবেছেন কি আমি দূর্বল প্রাণী মোটেই না। আপনি একটা অসভ্য, বর্বর লোক। এতো সাধুপানা করেন৷ আমার মতো বাচ্চা মেয়েকে চিঠি দিতে লজ্জা করে না৷ আবার কারনে অকারনে গায়ে হাত তুলছেন বেহায়া পুরুষ কোথাকার গাড়ি থামান। কিছু বলি না বলে মাথা কিনে নিয়েছেন একেবারে৷ সাইকেল চোর এই আমার সাইকেল দে চোর কোথাকার!

চিৎকার, চেচামেচি তুই তুকারিতে রেগে রুদ্র বেশ জোরেই গাড়ির ব্রেক কষলো। নয়ন ভয়ে হৈমীর মুখ চেপে ধরে বেঝাতে চেষ্টা করলো আর বললো একটু চুপ থাক।গাড়ি এভাবে থামাতে দেখে হৈমীও একটু ভয় পেলো। খানিকটা চুপ হতেই নয়ন হাত সরালো আর হৈমী গলার আওয়াজ স্লো করে নিলো খানিকটা৷ তবুও সে কথা বলবেই।
.
রুদ্র রাগে কয়েক দফা শ্বাস নিলো। সাদমান তাঁকে শান্ত থাকতে বলে জিগ্যেস করলো কোথায় যাচ্ছিস?? রুদ্র কিছু বললো না পিছনের ভয়েস স্লো হওয়াতে আবার গাড়ি স্টার্ট দিলো। গাড়ি থামালো একদম শপিংমলের সামনে। হৈমী গালে হাত দিয়ে চোখের জল ফেলছে আজকে তাঁর সিরিয়াস রাগ হচ্ছে। একবার,দুইবার তিনবার না বার বার এমন আচরণে বিরক্ত হয়েছে ভীষণ।রাগ হচ্ছে তাঁর কি এমন করেছে সে যে বার বার এমন গায়ে হাত তুলবে?? ভাবলো হৈমী।

রুদ্র গাড়ি থেকে নেমে গেছে। সাদমান কে বসিয়ে গেলো যাতে হৈমী গাড়ি থেকে না নামতে পারে। সাদমান একটু টের পেলো রুদ্র কেনো মারলো হৈমীকে আর শপিংমলের সামনেই বা কেনো এলো। কিন্তু না মেরে সুন্দর করে বোঝালেই তো হতো। মেয়েটা তো একদম বাচ্চাই কথা শুনেই তো বোঝা যায় একদম বাচ্চা টাইপ। এ বয়সে কি আর ম্যাচিওরিটি আসবে নাকি??

চলবে।
Pic edited: Sadia Mim

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here