ভালোবাসায় বন্দিনী পর্ব ২

0
2467

#ভালোবাসায়_বন্দিনী
#জান্নাতুল_নাঈমা
#পর্ব_২

রাদিফ এবং রুদ্রর মা সুরভী বেগম,সমস্ত ঘটনা শুনে রুদ্র কে ফোন দেয়।যে করেই হোক ছেলেকে বোঝাতে হবে,মানাতে হবে।মানুষ সামাজিক জীব।আর সমাজে টিকে থাকতে গেলে কিছু নিয়মের ভিতর থাকতেই হবে। কিন্তু তাঁর ছোট ছেলেটা যেনো কেমন হয়ে গেছে। একদম সকলের থেকে আলাদা।পুরো দুনিয়ার মানুষ যাবে ডান দিকে আর সে যাবে বা দিকে। সূচনা ফোন করে জানালো রুদ্র বউয়ের বোনের বান্ধবীর গায়ে হাত তুলেছে। পুতুলের মতো মেয়েটাকে নাকি দেখলে শুধু আদর করতে মন চাবে। তোতাপাখির মতো নাকি কথা বলে মেয়েটা।
এমন মেয়ের গায়ে কেউ হাত তোলে??মনে মনে বিরবির করতে করতেই ফোন কানে ধরে রইলো।
দুবারের সময় ফোন রিসিভ হলো, সুরভী বেগম এক ঢোক গিলে নিয়ে পরমস্নেহে,খুবই ভালোবাসা এবং আদর মেখে বলেন,

— বাবা তুমি কোথায় ভাইয়ের আশেপাশে আছোতো??

রুদ্র গম্ভীর গলায় বললো,

— যেটা বলতে ফোন দিয়েছো সেটা বলো। আমি কোথায় আছি তা তুমি ভালো করেই জানো।

সুরভী বেগম ছেলের স্বভাব ভালো করেই জানে।তাঁর ছেলের উপস্থিত জ্ঞান ও বেশ প্রখর।কোন প্রকার ভনিতা করা পছন্দ করে না ছেলেটা।সোজাসাপটা কথা তাঁর বেশী পছন্দনীয়। তাই হালকা হাসলো সুরভী বেগম অতঃপর খুবই ভালোবেসে বললো,

— বাবা তুমি যেনো আর কোন প্রকার ঝামেলা না করো। দেখো বাবা তোমার বড় ভাইয়ের বিয়ে আজ।
আজকের দিনে এমন রাগ করতে নেই।বিয়ে বাড়িতে অমন দুষ্টুমি হয়েই থাকে।তাই বলে তুমি রেগে গিয়ে ওটুকুন বাচ্চা মেয়েটা কে মেরে দিবে।আমি তোমাকে মেয়েটাকে সরি বলতে বলবো না আমি শুধু বলবো বউ ওঠিয়ে নিয়ে আসা অবদি যতোক্ষণ ও বাড়ি থাকবে শান্ত হয়ে থাকবে।যে যাই করুক যাই বলুক তুমি চুপচাপ থাকবে।আর কোন পাগলামো করবে না।এটা তোমার মায়ের আদেশ ভাবলে আদেশ, অনুরোধ ভাবলে অনুরোধ।ভুলে যেওনা তোমার বড় ভাইয়ের জীবনের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন আজকে।তোমার জন্য সেই দিনটা কোনভাবে মাটি হয়ে যাক বা তোমার পরিবারকে কারো কাছে অসম্মানিত হতে হোক এটা নিশ্চয়ই তুমি চাইবে না।

মায়ের কথা শুনে রুদ্র টু শব্দ টিও করলো না।শুধু গভীরশ্বাস ছাড়লো।

সুরভী বেগম মুচকি হেসে বললেন,

— ধন্যবাদ বাবা।আর শুনো তোমার বাবা কে ভুল বুঝোনা ওনি আমায় কিছু জানায়নি।সূচনাই আমাকে ফোনে সব জানিয়েছে।কারন সূচনাকে আমি বলে দিয়েছিলাম ওদিকের সব খবরাখবর আমাকে জানাতে।তুমি ওর ওপরও রেগে যেওনা বাবা।ও আমার আদেশ পালন করেছে শুধু।এখন গিয়ে ভাইয়ের পাশে বসো কেমন।

রুদ্র ফোন কেটে দিলো।সুরভী বেগম স্বস্তির এক নিশ্বাস ছেড়ে রেদওয়ান শেখ কে ফোন করে জানিয়ে দিলেন রুদ্র কে সে বুঝিয়েছে।আর কোন সমস্যা হবে না তাই কোন প্রকার টেনশন না করতে।
.
হৈমী ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলো।ওয়াশরুম গিয়েছিলো বিধায় সূচনা এদিকে তাঁর খালামুনিকে ফোনে সবটা জানিয়ে দিতে পেরেছে।হৈমী বের হতেই শুরু হয়ে গেলো ননস্টপ বকবকানি।সূচনার এবার প্রচন্ড হাসি পাচ্ছে।কিন্তু হাসা যাবে না।মেয়েটা যাতে সেকেন্ড টাইম মারের কথা কাউকে না বলে সেই জন্যে বোঝাতে হবে।বেশ কিছুক্ষণ কথা বলে বুঝলো নাহ কাউকে কিছু বলবে না।
মেয়েটা বেশ সহজসরলও।মনখুলে শুধু কথা বলতেই জানে মেয়েটা।এই মেয়ের পাশে রুদ্র পাঁচ মিনিট বসে থাকলে না জানি কি ঘটে যেতো ভেবেই মুচকি হাসলো।

— ইশ আবার আমাকে নতুন করে মেকআপ লাগাতে হবে।কোথায় ভাবলাম বরের ভাইদের সাথে লাইন মারবো তা না এবার গোলাপি দিদি বসো গোলাপি মেক আপ নিয়ে। আচ্ছা আপু রাদিফ ভাইয়ার কয়টা ভাই আসছে বিয়ে বাড়িতে।

কথাগুলো বলতে বলতে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসলো হৈমী।গালে প্রাইমার লাগাতে লাগাতে আয়নাতেই সূচনার দিকে তাকালো। কিউট একটা স্মাইল দিয়ে বললো,

— তোমাকে কিন্তু হেব্বি দেখতে আপি।তুমি রাদিফ ভাইয়ার কি হও?? আর ঐ বনমানুষ টা তোমার কি হয়?? আচ্ছা আপি ওনার মাথায় কি ব্যামো আছে?? কথায় কথায় গায়ে হাত তোলে কেনো??
নাকি সুন্দরী মেয়ে দেখলে ওনার মাথায় এলার্জি ভেসে ওঠে আর তার পীড়াপীড়িতেই ঠাশঠাশ লাগায়।এটা কিন্তু ঘোর অন্যায় নিজের সমস্যা নিজে সমাধান না করে অন্যদের মারে কেনো?? এই যা তুমিও তো বেশ সুন্দরী কই তোমায় তো মারলো না।আমি ছোট বলে এভাবে অত্যাচার করলো??অ্যাঁ,,, বলেই কান্নার ভঙ্গি করলো।

সূচনা স্বভাবতই চুপচাপ থাকতে পছন্দ করে। প্রয়োজন ব্যাতিত তেমন কথা বলে না। তারওপর হৈমী যখন কথা বলে একসাথে অনেক কথা বলে। আর একসাথে প্রচুর প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়।কোন টা রেখে কোনটা বলবে কোন কথার উত্তর দেবে ভাবতে ভাবতেই বেশ সময় পেড়িয়ে যায়।

— এবার কিন্তু আমি সিরিয়াস রেগে আছি।আর আমার রাগের ধরন কিন্তু অন্যরকম সাবধানে থাকতে বলো ওনাকে।কখন কি ঘটে যায় বলা যায় না।বাই দ্যা বসার ঘর ওনি তোমার কে হয়??বললে না তো??

সাজের সময়ও মেয়েটা কথা বলছে শুধু মেয়েটা না মেয়েটার চোখ ও যেনো পিটপিট করে কথা বলছে।
কিছু মানুষ আছে যাদের মুখে জোস থাকে।তাঁরা কথার ছলেই মানুষ কে পটিয়ে ফেলতে পারে।হৈমী মেয়েটাও পটিয়ে ফেলেছে সূচনাকে।সূচনার খুব পছন্দ হয়েছে হৈমীকে।এমন একটা ছোট্ট কিউট বোন থাকলে মন্দ হতো না।পুরো বাড়িটা হৈ-হুল্লোড়ে ভরে থাকতো।

হৈমীর কথাগুলো শুনে সূচনা মৃদু হেসে বললো,

— রাদিফ ভাইয়ার আম্মু আমার খালামুনি হয়।

— ওও তাঁর মানে বন মানুষ টা তোমার ভাই। অ্যাঁ,,,তোমার মতো এত্তো সুন্দরী মেয়ের ভাই কিনা অমন রাক্ষস।তবে যাই বলো রাদিফ ভাইয়া কিন্তু বেশ কিউট,,, সো হ্যান্ডসাম।হবে নাই বা কেনো কার দুলাভাই দেখতে হবে না??

সূচনা চুপ রইলো রুদ্র কে সে কখনোই ভাইয়ের নজরে দেখেনি।তাই হৈমীর কথাটা ভালো লাগলো না।তবুও মুখে হাসি টেনে বললো,

— আমাকে বোধ হয় খুঁজছে আমি যাই তুমি তারাতাড়ি চলে এসো কেমন।
.
গালে হালকা ভাবে মেকআপ লাগালো হৈমী।ব্যাথায় টনটন করছে গাল টা।ইচ্ছে রকম রুদ্র কে বকছে আর সাঁজছে।আগের মতো সাজ না হলেও এভাবে মন্দ লাগছে না।সাজ শেষে খেয়াল হলো টিকলির কথাটা। গালে হাত দিয়ে চেঁচিয়ে বললো,

— এই যা আমার টিকলি,,, হায় খোদা আমার এত্তো সুন্দর কিউট টিকলি টা কোথায় পড়ে গেলো।আর কতো অঘটন ঘটবে আজ আমার সাথে।বলেই ওড়নাটা একসাইট দিয়ে চুলগুলো এক সাইট দিয়ে বেরিয়ে আসতেই নয়ন সামনে পড়লো।সে হৈমীকেই ডাকতে আসছিলো বেশ রাগ নিয়ে বললো,

— কি রে বেরিয়ে এলি কেনো আরো দু’ঘন্টা সাঁজগোজ কর৷আপুর বিদায় হওয়ার পর বেরিয়ে আসতি।

হৈমী চোখ দুটো রসগোল্লার মতো করে অবাক স্বরে বললো,

— তুই জানিস আমার টিকলি পাচ্ছি না।আর তুই জানিস বন মানুষ টা আবার কি করেছে।তুই জানিস সূচনা আপুর মতো সুন্দরী মেয়েটা নাকি বোন মানুষ টার বোন৷রাদিফ ভাইয়ার বোন ঠিক আছে তাই বলে ঐ হনুমান টার বোন হওয়ার কি খুব দরকার ছিলো??

নয়ন এবার হৈমীর হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে গেলো আর বললো,

— আমি কিচ্ছু জানিনা জানতেও চাইনা।বড় ভাই এর বোন হলে ছোট ভাইয়েরও হবে এটাইতো স্বাভাবিক। তোর এই প্যাক প্যাক বাদ যা বইন।চল খাবো সকলে একসাথে আমাদের বাড়ির সকলের খাওয়া শেষ হলেই আপুর বিয়ে পড়ানো হবে।আপু বলে দিয়েছে কবুল বলার সময় আমরা যেনো অবশ্যই আপুর পাশে থাকি। আপাতত তোর ক্যাসেট তুই অফ রাখ বইন।

হৈমী নয়ন চলে যেতেই রুমের জানালার ওপাশ থেকে ছোট একটা চিরকুট ঢিল দিলো কেউ।চিরকুট টা সোজা হৈমী যেখানে তাঁর পার্স রেখেছে বিছানার কোনায়, সেখানে এসে পড়লো।
.
হৈমী নয়ন একসাথে বসেই খাচ্ছে আর সে মূহুর্তটাই ক্যামেরায় বন্দী করছে মাহের। নয়নের বড় ভাই মাহের খান এবার মাস্টার্সে পড়ছে পাশাপাশি কম্পানিতে জব করে।বিয়েতে তাঁর এক্সট্রা কোন কাজ নেই।শুধু বিয়ের প্রত্যেকটা খুটিনাটি মূহুর্ত সহ সব মূহুর্তই ক্যামেড়া বন্দী করে রাখা তাঁর কাজ।বাকি কাজ চাচাতো বড় বড় ভাই আছে তাঁরা সামলাচ্ছে।এতোগুলো ছবি ওঠালো মাহের অথচ হৈমীর একটা ছবিও স্পষ্ট বা ভালো হয়নি।হবে কি করে সে যে চুপচাপ কখনো কোথাও স্থিরভাবে দাঁড়ায়ওনি বসেওনি। খাওয়ার সময়ও মেয়েটার গোটা রাজ্যের আলোচনা করতে হয়৷ভেবেই মুচকি হাসলো মাহের আরো কয়েকটা ছবি তুলে চলে গেলো নয়নার কাছে।যাওয়ার আগে পিছন ঘুরে হৈমীকে আরেক ঝলক দেখে নিলো।এই মেয়ের মুখ টা দেখার জন্য কতোই না অপেক্ষা করতে হয় এবার নয়নার বিয়েটা হয়ে গেলো নয়নের আগেই নিজেরটা সেড়ে ফেলতে হবে।কথাগুলো ভেবেই মুচকি হেসে চলে গেলো মাহের।
.
পেট পুরে খাওয়ার পর নিজেকে সাত মাসের পোয়াতি মনে হয় হৈমীর।তাঁর ৪৮ কেজি ওজন তখন ৫৫কেজি হয়ে যায় বোধ হয়৷না পারে হাঁটতে না পারে কথা বলতে।পেট ফুলে বেলুন হয়ে থাকে।তাই চুপচাপ দশমিনিট বসে থাকে।সারাদিনে দুবার দশ মিনিট করে তাঁকে সবাই এমন চুপচাপ দেখতে পায়। বিয়ে পড়ানোর আগে হৈমী নয়নের রুমে এসে বিছানায় বসে খানিকটা ঝিমাচ্ছে।নয়ন এসে তাঁকে এভাবে ঝিমুতে দেখে দাঁতে কিড়মিড় করে বলে গেলো,

— দুমিনিটের মধ্যে ওঘরে চল।বিয়ে পড়ানো হবে।আর শোন আপুর সাথে আমি বা ভাইয়া যেতে পারবো না। আপন ভাই বোনরা ডোলাধরা যেতে পারে না৷ তাই তুই যাবি আপুর সাথে সব গোছাতেও হবে এবার চল।নয়ন বেরিয়ে গেলো।

(গল্পের লেখিকা #জান্নাতুল_নাঈমা কিছু চোর গল্পটা চুরি করে নিজের নামে চালিয়ে দিচ্ছে।আশা করি কেউ বিব্রত হবেন না)

হৈমী চট করে ওঠে দাঁড়ালো আহা নয়না আপুর সাথে সেও যাবে৷তাঁর মানে কনে বিদায়ের সময় তাঁর তেমন কাঁদতে হবে না।এছাড়া বন মানুষ টাকেও শায়েস্তা করা যাবে ইয়াহু বলেই এক লাফ দিলো সে।
“নয়না আপু যখন কবুল বলবে সেই বিশ্ববিখ্যাত মহামূল্যবান একটি ওয়ার্ড তিনবার বলা কালীন রেকর্ড করে রাখতে হবে” ভেবেই নিজের পার্স থেকে ফোন টা বের করে নিলো।ফোন বের করেই বললো,

— আহারে সোনা মানিক আমার বিশ্বাস করো বিয়ে বাড়ি আছি বলে নয়তো তুমি ছাড়া আমার সত্যি কেউ নেই গো। তুমিই আমার জান তুমিই আমার প্রান। সকালে ঘুম থেকে ওঠে তোমায় দেখি রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে তোমায় দেখি।আমার সবটা জুরেই শুধু তুমি আর তুমি।এই তো আর কিছুক্ষণ তারপর তোমার হৈমী শুধু তোমার বলেই ফোনে পরপর কয়েকটা কিস করলো।পার্স নিতে যেতেই ছোট একটি সাদা কাগজ চোখে পড়লো৷ ভ্রু কুঁচকে মুখে দুষ্ট হাসি টেনে বললো,

— ওয়ে,,,লাভ লেটার নাকি বাহরে বা হৈমী কেল্লাফতে নিশ্চয়ই বিয়ে বাড়ির কেউ তোকে দেখে ক্রাশ খেয়েছে। আর লাভ লেটারও পাঠাই দিছে।বাহ এ যুগেও লাভ লেটার ইন্টারেস্টিং বলেই চিরকুট টা হাতে নিয়ে বেশ উৎসুক হয়ে কাগজের ভাঁজ খুললো।

“মেয়েরা ওড়না ইউস করে কেনো??গলায় ঝুলিয়ে রাখার জন্য আর কাঁধে ঝুলিয়ে রাখার জন্য??লজ্জা করে না. ছেলেদের সামনে এভাবে আসতে??সং এর মতো সেজে আসতে কোন মানা নেই তাই বলে অসভ্য বর্বরের মতো বুকে থাকার ওড়না গলায় পেঁচিয়ে রাখাটা কোন লেভেলের অসভ্যতামি??নিজেকে কি মনে করো ক্যাটরিনা কাইফ,ঐশ্বরিয়া রায়?? বাঙালি মুসলিম নারী তুমি সো সেভাবেই থাকার চেষ্টা করো” ~রুদ্র।

চিঠি টা পড়া মাএই ধপ করে বিছানায় বসে পড়লো হৈমী। হাওয়া ফুস হাওয়া ফুস বলতে বলতে ড্রেসিং টেবিলের সামনে তাকালো৷ ইশ কি লজ্জা ইশ কি লজ্জা বলতে বলতে দৌড়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে এলো। এভাবে কেউ তাঁকে কখনো বলেনি ছিঃ ছিঃ ছিঃ করতে করতে ওড়নাটা সুন্দর করে গায়ে জরিয়ে পিনআপ করে নিলো।

“কোথায় ভাবলাম লাভ লেটার আসছে তা না আমার হাওয়া ফুস করে দিলো ঐ বজ্জাত বন মানুষ টা৷ মা গো মা কি নজর,,, খাইষ্টা ব্যাটা। কোনদিক নজর দিছে, ব্যাটা তোর চোখ আমি গেলে দিব হুমহ। চিঠি পাঠাইছে আরে ব্যাটা সুন্দর করে মিষ্টি করে বুঝিয়ে বলতি কথাটা। তা না আমাকে অপমান করলি বেইন্না ব্যাটা তোর কপালে বউ নাই হুমহ।তোর চিঠির উত্তর আমি তোরে দিবো জাষ্ট ওয়েট এন্ড সি,,, আমি সং মতো সাজি তাইনা ব্যাটা তুই তো হনুমানকেও ফেল করে দিছোস।বই দ্যা পঁচা নর্দমা ওনি কি আমাকে থাপ্পড় টা এই জন্যে লাগাইছে। বাহরে আজব কাহিনীতো ওনি কি আমার গার্ডিয়ান নাকি যে ভুল করলে মার লাগাবে। এই হৈমীর গায়ে হাত তোলার সাহস আজ অবদি কেউ করে দেখায়নি। আর তুই বিনা পারমিশনে আমার কিউট গালটাকে লাল করেছিস। ভুল দেখেছিস সুন্দর করে মনুষ্য প্রজাতির মতো বোঝাতি।বলা নাই কওয়া নাই চেনা নাই জানা নাই গায়ে হাত।পরোক্ষনেই চমকে ওঠলো হৈমী।
— হায় আল্লাহ চড়ের ছুঁতোয় আমাকে ছুঁয়ে দিলো না তো,,,ইশ কেমন লোহার মতো হাত ছিঃ রাক্ষস একটা।
সুন্দরী মেয়ে পেয়ে ছোঁয়ার ধান্দা লুচু কোথাকার!

একদমে কথা গুলো বলে নিজেকে আয়নায় খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো৷ নিজেই নিজেকে চোখ টিপ দিয়ে ডানহাতের চার আঙুলে কিস করে সেটা নিজের গালে ছোঁয়ালো আর বললো,

— ইশ হৈমন্তী তুই কি জোস রে,,, এত্তো কিউট ক্যান তুই?? একটা পাপ্পি না দিয়ে থাকতেই পারি না তোকে।
নিজেই নিজেকে দেখে ক্রাশ খাই বারে বার। না জানি কোন পোলা কবে আইসা তুইলা নিয়া যায়। হায় হায় হায়!বাই দ্যা আমাগো বাড়ির সামনের বিশ্বরোড,,, “নিজেকে দেখে নিজেই ক্রাশ খাওয়াটা একটা আর্ট যা সবাই পারে না”
.
বিয়ে পড়ানো সহ বিদায় সব কমপ্লিট। মাহেরের বেশ টেনশন হচ্ছে হৈমী কে নিয়ে৷গেটে যে ঘটনা ঘটেছে তাতে বেশ বুঝেছে রুদ্র শেখের মাথা বেশ খারাপ।কিন্তু হৈমী তো ওর স্বভাবসুলভ আচরন করবেই আবার কোন ঝামেলা হবে না তো।নানারকমের চিন্তা মাথায় নিয়েই বাড়ি ফিরলো মাহের।নয়নকে বলে দিলো হৈমীকে ফোনে জানাতে ও বাড়ি যেনো চুপচাপ থাকার চেষ্টা করে। আর কোন সমস্যা হলে ফোন করে যেনো।
.
কারে বর, কনে বরের বাবা সহ বয়স্ক মহিলা দুজন বসেছে। রেদওয়ান শেখ বসেছে সামনে।হৈমীকে কারে বসতে বলেছিলো কিন্তু হৈমী সূচনা সহ রাদিফের ভাই বোনদের সাথে বাসে বসেছে। পুরো বাসটাকে মাতিয়ে রেখেছে হৈমী নিজেই। ছোটরা তাঁর সাথে গল্পে মেতে ওঠলেও এবার বড়রাও তাঁর গল্পগুলো এনজয় করছে। রাদিফের মামাতো ভাই শোভন অপলকভাবে চেয়ে আছে হৈমীর দিকে। মেয়েটা যেনো জাদু জানে কেমন পনেরো মিনিটের মধ্যেই পুরো বাসের লোকজনকে আপন করে নিয়েছে।এমনভাবে কথা বলছে গল্প করছে যেনো তাঁরা সকলে একি বাড়ির লোক। আজি যে তাঁদের সাথে পরিচয় হয়েছে তা হৈমীর কথা শুনে মনেই হচ্ছে না। হৈমী কথার ফাঁকে বলে ওঠলো,

— আচ্ছা আপনাদের বাড়ির আরেক ছেলেকে তো দেখছিনা। ঐ যে বন মানুষ টার কথা বলছি কালো রঙের কাবলী পড়া ছিলো। ঘাড় অবদি চুল এক কানে দুল পড়া ছিলো। ঐ যে আমাকে যে থাপ্পড় লাগালো তাঁর কথা বলছি জঙ্গলের ভুতটা কই দেখছি না তো। বলেই এদিক ওদিক চোখ ঘোরালো।

সূচনা তাঁর পাশেই বসা ছিলো সে এক ঢোক গিলে নিচু স্বরে বললো,

— হৈমী প্লিজ চুপ করো সবাই মাইন্ড করবে। আর ও চলে গেছে বাসায় আমাদের আগেই।

— বা রে মাইন্ড করার কি আছে। এখানে প্রত্যেকটা লোকই জানে ঐ বন মানুষ টা সুবিধার না। ওনি না থাকায় প্রত্যেকটা মানুষই বেশ স্বস্তি তে রয়েছে৷
কি সত্যিতো,,, আরে আমি মনোবিজ্ঞানী হওয়ার সপ্ন নিয়ে বেঁচে আছি কি আর এমনি এমনি নাকি। সকলের মনের কথা আমি এখন থেকেই বেশ বুঝতে পারি৷ তাই ভাবি যখন পুরোপুরি মনোবিজ্ঞানী হয়ে যাবো না জানি কতো লোক আমার থেকে বাঁশ খাবে। বলেই খিলখিল করে হাসতে লাগলো হৈমী।রুদ্রর বাড়ির সকলেও মুখ চিপে হাসতে লাগলো আর ভাবলো মেয়েটা মহা দুষ্টু।

শোভনও হাসলো হাসিটা খানিকটা দমিয়ে বললো,

— তা বেয়ানসাব আমার মনের কথা টা একটু বলে দিবেন প্লিজ।

হৈমী পিছন ঘুরে দেখলো হ্যাংলা, পাতলা ছেলেটা দাঁড়িয়ে আছে তাঁর মুখের হাসির ঝলকানি রয়েছে অনেকটা। দৃষ্টি তাঁদের সিটের দিকেই।

হৈমী এবার আরো খিলখিল করে হাসতে লাগলো।
আর বললো,

— লাভ নাই বেয়াইসাব। আমার সাথে যে লাইন মারতে আসে আমি তাঁর দিকে ফিরেও তাকাইনা।আবার আমার দিকে যে ফিরেও তাকায় না তাঁর সাথেই আমি লাইন মারতে চাই। কিন্তু সেই সৌভাগ্য টা আমার হলোই না।কারন টিভির ভিতর ঢুকে বা ফোনের ভিতর ঢুকে তো লাইন মারা যাবে না ইন্ডিয়ায়ও যেতে পারবো না।
বাস্তবে না ক্রাশ খাইলাম না লাইন মারলাম। খুঁজেই পেলাম না কাউকে আহা গো টুরু দুঃখ আমার। তবে আমি কিন্তু হিরোদের দেখে ক্ষনে ক্ষনে ক্রাশ খাই কিন্তু বাঁশ খাইনা হিহিহি।
.
প্রতিদিন বেশ ভোরে ঘুম ভেঙে যায় হৈমীর। যতো রাতেই ঘুমাক না কেনো তাঁর বেশ সকাল সকালই ঘুম ভাঙে৷ তারওপর মেহমান বাড়ি এসেছে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় গিয়ে ঘুমাতে বেশ কষ্ট হয়। তারওপর কুল বালিশ ছাড়া ঘুমাতে পারে না সে। পা টা বেশ ব্যাথা করছে।পুরোপুরি ঘুমও হয়নি বিছানায় সুয়ে থাকতেও মন চাচ্ছে না।পাশে তাকিয়ে দেখলো সূচনা বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।ওঠে বসে দুহাত ওপরে তুলে আড়মোড়া ভেঙে টান টান হয়ে বসে রইলো কিছুক্ষণ।
.
কাল রাতে সকল নিয়ম-কানুন পালন করে বাসর ঘরে দিয়ে আসা হয়েছে নয়না কে। সূচনার রুমের দু রুম আগেই একটা রুম চোখে পড়ে হৈমীর৷বেশ অবাক হয় সে কারন রুমের বাইরে সাদা সাদা দেওয়ালে কালো কালিতে লেখা প্রবেশ নিষেধ। দরজার সাইটে দেয়ালে লিখাটা দেখেই হৈমী ভ্রু কুঁচকে জিগ্যেস করে,

–আপু ওখানে প্রবেশ নিষেধ কেনো??ও ঘরে কি কেউ থাকে না??

সূচনা কিছু বলে না শুধু বলে তুমি বুঝবে না। হৈমী আবারো কিছু জিগ্যেস করতে গিয়ে আরেক প্রশ্ন মাথায় চলে আসে তাই সূচনার রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলে,

— আচ্ছা আপু বন মানুষ টার অমন লম্বা চুল কেনো??ছেলেদের ঘাড় ভর্তি চুল কি বিশ্রি লাগে ছিঃ। এগুলো দেখেই তো একদফায় ভয় পেয়ে গেছিলাম। ভাগ্যিস আমার হার্ট স্ট্রং ছিলো নয়তো ওখানেই জ্ঞান হারাতাম। তোমাদের ভয় লাগে না??

সূচনা তখন হৈমীর মুখে হাত চেপে বলে,

— চুপ করো বনু আর কথা বলো না। এগুলো খালামুনি শুনতে পেলে খুব কষ্ট পাবে। খালামুনি এসব পছন্দ করেনা কতো নিষেধ করেছে কতো বুঝিয়েছে রুদ্র শুনে নি। বাসায় এগুলো নিয়ে কম ঝামেলা হয়নি রুদ্র কারো কথা শুনে না। সে তাঁর স্বভাব,আচরন নিজের ব্যাক্তিগত জীবনের সব স্টাইল নিজের মর্জি অনুযায়ীই করে থাকে৷কাউকে কেয়ার করে না সে। সব চেয়ে আলাদা একজন মানুষ।

হৈমীর বেশ মন খারাপ হয় তখন। কেমন ছেলে যে মায়ের কথা শুনে না এমন সন্তান দুনিয়াতে কেনো হয়৷ বাবা,মায়ের অবাধ্য সন্তান রা দুনিয়াতে আর যাই হোক সঠিক মানুষ হতে পারেনা। তাই তো লোকটাও মানুষের কাতারে পড়ে না হুমহ। বন মানুষ একটা!

বির বির করতে করতে হৈমী রুম ছেড়ে বের হলো।
সূর্যের আলোকরশ্নি এখনো সেভাবে ভাসেনি কেবল হালকা আলো ফুটেছে। হৈমী পুরো বাড়িটায় চোখ বুলালো।বেশ বড়সড় বাড়িটা। বেশ বড় লোক বাড়িতে বিয়ে হয়েছে নয়না আপুর ভেবেই মুচকি হাসলো।এদিক সেদিক পা ফেলে হাঁটতে লাগলো। হঠাৎ আবারো চোখ আটকে গেলো প্রবেশ নিষেধ লিখাটায়৷ কেউ নেই তাই ভ্রু কুঁচকে এগিয়ে গেলো। বাইরে থেকেও তালা মারা বা সিটকেরী লাগানো নেই।

“প্রবেশ নিষেধ থাকলে তালা মেরে দিতো তা না করে প্রবেশ নিষেধ লিখে রাখছে ঢং” দরজা হালকা ধাক্কা দিতেই খুলে গেলো। হৈমী প্রথমে চমকে গেলেও পরোক্ষনে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে মাথা এগিয়ে ভিতরে তাকাতেই যেনো কারেন্টে শখড খেলো।

কারন রুদ্র আধা নগ্ন অবস্থায় বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। এ প্রথম কোন পুরুষ মানুষ কে এভাবে দেখলো হৈমী। কাপড়বিহীন সব পুরুষ মানুষ দের এমন ভয়ংকরই লাগে বুঝি।পুরো শরীরে যেনো ঠান্ডা বাতাস খেলে গেলো হৈমীর। বুকের ভিতর ডিপডিপ আওয়াজ করতে শুরু করলো। এক ঢোক গিলে তার কাঠ কাঠ হয়ে যাওয়া শুকনো গলাটা ভিজিয়ে নিলো।

— এতো ভয়ংকর চেহেরা কোন মানুষের হতে পারে।
ভেবেই পুরো গায়ে কাঁটা দিয়ে গেলো তাঁর।রুদ্রর পুরো শরীরে চোখ বুলালো হৈমী৷ ভয় লজ্জা দুটোয় পেলো।

বুক থেকে শুরু করে পেট অবদি এতো ঘনকালো বেশ বড় লোম যে পুরো বুকটা লোমেই ঢেকে গেছে।
দাঁড়ি মিডিয়াম থাকলেও মাথা ভর্তি চুল যা ঘাড় অবদি। এখন তা বালিশে মেলানো আছে৷ থ্রি কুয়াটার প্যান্ট পড়ায় হাঁটুর নিচের বড় কালো ঘন লোমগুলোও স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে। বন মানুষ, জঙ্গলে ভুত নাম দিয়ে ভুল করেনি হৈমী তাই ভেবে এক দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। আর মনে পড়ে গেলো সূচনার কথাটা৷ রুদ্রর মা রুদ্রর এই রূপে কষ্ট পায়৷সব ঠিক লাগলেও বড় বড় চুলগুলো হৈমী হজম করতে পারলো না।

— হৈমীর সামনে কোন মা তাঁর সন্তান কে নিয়ে কষ্ট পাবে তা এই হৈমী সহ্য করবে না৷ তাছাড়া আমার প্রতিশোধ নেওয়াও বাকি আছে মি.বন মানুষ এন্ড জঙ্গলে ভুত। আপনার এই চুলগুলো ভীষণ প্রিয় তাইনা এইবার দেখেন হৈমী কি জিনিস??? এবার যা হপ্পে না এতে হৈমীর প্রতিশোধও সফল হবে এক মায়ের মুখেও হাসি ফুটবে ইয়াহু,,,আমাকে লজ্জায় ফেলা তাইনা এবার নিজেই লজ্জিত হবেন সকলের কাছে হিহিহি।
বেশ মজা হবে আজকে ঢিংকাচিকা ঢিংকাচিকা হুমহ,,,
গাইতে গাইতে ছুটে সূচনার রুমে এসে নিজের পার্স থেকে ছোট বেশ ধারালো কেঁচি টা নিয়ে আবার দৌড় লাগালো রুদ্রর রুমের দিকে।

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here