ভালোবাসায় বন্দিনী পর্ব ৩

0
2271

#ভালোবাসায়_বন্দিনী
#জান্নাতুল_নাঈমা
#পর্ব_৩
.
নিজের কাজে সফল হয়ে বিশ্বজয়ী এক হাসি দিলো হৈমী।পুরো কাজটা করতে হৈমীর হাত,পা,বুক প্রচন্ড কাঁপছিলো।হার্টবিট বেড়ে গিয়েছিলো কয়েকগুন। কেঁচির গ্যাজ গ্যাজ শব্দে বাই চান্স যদি রুদ্রর ঘুম ভেঙে যায় ভাবতেই তাঁর গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছিলো।অবশেষে কাজে সফলতা পেয়েছে।

চুলগুলো ওখানে ওভাবেই রেখে দিলো।কেঁচির সাথে ছোট্ট একটু কাগজ নিয়ে এসেছিলো কিন্তু কলমই আনেনি।ভয়ে দম বন্ধ হয়ে আসছিলো কি করবে ভাবতেই এদিক ওদিক তাকালো টেবিলের ওপর বেশ বই খাতা কলম দেখতে পেলো৷সেখান থেকেই একটি কলম নিয়ে লিখলো,

“হ্যালো মি.জঙ্গলে ভূত গুড মর্নিং! একজন অবলা মেয়ে ভুল করেছে তাই বলে গায়ে হাত তুলবেন?
ঠাশ ঠাশ করে গালখানা লাল করে দিবেন?
তবুও আমি কিছু বলিনি কিন্তু কাল যখন শুনলাম আপনার এই জঙ্গলে পানা আই মিন এমন বাবড়ি চুলের জন্য আপনার মা কষ্ট পায় তখন আর চুপ করে থাকতে পারলাম না।এতে আপনার মা খুশি হয়ে আমাকে আদরও করে দিবে আর আমারো আপনার থেকে প্রতিশোধ নেওয়া হয়ে যাবে হিহিহি। আপনার যেমন চুলগুলো প্রিয় আমার তেমন নিজের গাল গুলোও খুব প্রিয়। এবার দেখুন প্রিয় জিনিসে দাগ পড়লে কেমন লাগে উপস সরি আপনার তো কাট পড়েছে দাগ না হিহিহি” ~হৈমী।
.
সকাল আটটা বাজে। নয়নার পাশে বসে আছে হৈমী।
নতুন বউদের দিয়ে বিয়ের পর প্রথম দিন এ বাড়িতে কোন কাজ করানো হয় না।বউ চুপচাপ বসে থাকবে আর সকলে এসে নতুন বউ দেখবে।হৈমীর এই বিষয় টা খুব ভালো লাগলো। এ বাড়ির প্রত্যেকটা মানুষই খুব ভালো শুধু একজন বাদে। ভাবলো হৈমী।
.
সূচনা রুমে এসে নয়না হৈমী আর রাদিফকে হালকা নাস্তা পানি দিলো।নাস্তা করার পর সব কাজিনরা মিলে টুকটাক গল্প গুজব করছে। হৈমীও গল্প করছে কিন্তু তাঁর যেনো কেমন বুকটা ধুরু ধুরু করছে। এমন ফিলিংস আগে কখনো হয়নি। রুদ্র কে ওভাবে দেখার পর থেকেই তাঁর বুকের ভিতর ধুরুধুরু শুরু হয়েছে। আর সেই ধুরুধুরুতে যোগ হয়েছে ভয়। মনে মনে ভাবলো,

“একটু সাবধানে থাকতে হবে নয়তো গালে আরো কয়টা পড়তে পারে। বিয়ে বাড়িতে অতগুলো লোকের সামনে যে থাপ্পড় লাগাতে পারে সে সব পারবে। এখন তো এটা তাঁর নিজের বাড়ি ও মাই খাট আমি নয়না আপুর কাছ ছাড়াই হবো না”
.
রেদওয়ান শেখ ফোন দিতেই রাদিফ রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেলো।আজ বাড়িতে বউ ভাতের অনুষ্ঠান। রুদ্র দশটা, এগারোটার আগে ঘুম থেকে ওঠবে না।ওঠলেও সে বাড়ির কোন কাজে হাত লাগাবে না।যতোই লোকজন থাকুক না কেনো নিজেদের কাজে নিজেদেরও হাত লাগাতে হয়৷রাদিফ গিয়ে প্যান্ডেলের লোক দের দিকনির্দেশনা দিতে লাগলো। শেখ বাড়িতে যে কোন অনুষ্ঠানেই বেশ বড়সড় আয়োজন করা হয়৷ আর এটাতো বাড়ির বড় ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠান। আয়োজনে কোন ত্রুটি রাখছে না রেদওয়ান শেখ।
.
হৈমী যখন রুমের দরজা ভিরিয়ে বেরিয়ে যায় তখনি চোখ খুলে তাকায় রুদ্র।ছোটবেলা থেকেই তাঁর ঘুম বেশ হালকা।সে যখন ঘুমায় তখন তাঁর রুমে কেউ এসে হাটাহাটি করলেই তাঁর ঘুম ছেড়ে যায়।আজো তাঁর ব্যাতিক্রম হয়নি। কিন্তু আজ তাঁর মা বা দাদী আসেনি এসেছে সেই মেয়েটা।বিয়ে বাড়িতে যে মেয়েটা কে প্রথমবার দেখেই তাঁর হৃদস্পন্দন কেঁপে ওঠেছিলো।রাতের আকাশে হাজার তাঁরার ভীড়ে একটি চাঁদ যেমন সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।তেমন হৈমীও সকলের দৃষ্টি আকর্ষণের পাশাপাশি রুদ্ররও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলো।প্রথম দেখায় ভালোলাগা খারাপ লাগা উভয় ফিলিংসই হয়েছে রুদ্রর।

খারাপ লাগা ফিলিংস হওয়ার কারন দুটো বাচ্চা মেয়েটা একটু বেশীই মুখ চালিয়েছে। দ্বিতীয়ত অত্যাধিক পরিমাণে সাজগোজ করেছে বডি স্ট্রাকচার দেখেই বোঝা যাচ্ছিলো পনেরো,ষোল বয়স। এ বয়সি মেয়েদের দিকে ছেলেদের আলাদা একটা আকর্ষণ থাকেই। আবার কারো কারো থাকে কুনজর। সবদিক বিবেচনা করে রুদ্র নিজেকে সামলে রাখতে পারেনি। মাথা গরম হয়ে যাওয়ায় মেরে দিয়েছে৷ সেকেন্ড টাইম মারতে ইচ্ছে ছিলো না তবুও তাঁর হাত স্পর্শ করতে আসায় কন্ট্রোল করতে পারেনি নিজেকে। একটি ছেলের হাত একটি মেয়ে এতো সহজভাবে কিভাবে ধরতে পারে লাজ,লজ্জার বালাই নেই ভাবতেই রাগ হয়েছিলো ভীষণ। কিন্তু এখন যা ঘটলো তাঁর অর্থ কি??

বেডরুম না হলে আবার কয়েকটা লাগিয়ে দেওয়া যেতো।কিন্তু বাচ্চা একটা মেয়ে তাঁর বেডরুমে এসেছে। যতোই হোক সে পুরুষ মানুষ।এসময় গায়ে হাত দেওয়া ঠিক হতো না।তারওপর সে পোশাক বিহীন ছিলো শুধু থ্রিকোয়াটার প্যান্ট পড়া।

মেয়েটা যখন তাঁর খুব কাছে এসেছিলো কেনো জানি চোখ মেলতেই ইচ্ছে করছিলো না। অদৃশ্য কোন এক শক্তি তাঁকে চুপচাপ থাকতে বাধ্য করেছে।এতো বড় একটা কাজ ঘটালো মেয়েটা তবুও সে চুপচাপ ছিলো??কিন্তু কেনো?? সে তো এমন টা নয়।

পাশে রাখা কাগজটা হাতে নিলো। হৈমীর লেখাগুলো পড়ে রুদ্রর মেজাজ গরম হয়ে গেলো। একেতো অন্যায় করেছে আবার তা লিখে জানানও দিয়ে গেছে।ভয় ডর,লাজ লজ্জার মাথা খেয়ে এসেছে নাকি মেয়েটা।

“মেয়েটার মাথার স্ক্রু কি একটু ঢিলা??মানসিক সমস্যা আছে?? নাকি শিক্ষা দিক্ষার অভাব?? ভাবলো রুদ্র। নিজের কাঁটা চুল গুলো হাতের মুঠোয় শক্ত করে ধরে রইলো কিছুক্ষণ। চোখ দুটো লাল বর্ন হয়ে গেছে তাঁর। এতোবছরে কেউ যা সাহস করেনি এই মেয়েটা সেই সাহস করেছে। মেয়েটা কে এখন ঠিক কি করা উচিত?? সকলের সামনে পরপর কয়টা লাগানো উচিত?? তাই ভাবছে রুদ্র।
.
রাদিফ,রুদ্রর দাদী এসে নয়নার সাথে রসিকতা করছে। হৈমীর বেশ মজা লাগছে দাদীর কথাগুলো।
দাদী নানারকম গল্প করার পাশাপাশি বেশ জ্ঞান দিলো নয়না কে।

— শোনো মেয়ে বিয়ে জীবনের খুবই গুরুত্বপূর্ণ
একটি বিষয়। জন্ম,মৃত্যু, বিয়ে মানবজীবনের তিনটা গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।জন্মগ্রহণ করলে মৃত্যু বরন করতেই হবে। আর দুনিয়াতে নিজের বংশ বিস্তার করতে চাইলে, নিসঃঙ্গ জীবন কাটাতে না চাইলে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতেই হবে।

নয়না দাদীর কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনলো।
হৈমীর মনটা হঠাৎ খারাপ হয়ে গেলো। মলিন চোখেই দাদীর দিকে তাকালো। দাদী আরো বললেন,

— “বিবাহ একটি প্রকৃতগত বিধান। সৃষ্টি জগতকে বৈধ উপায়ে প্রবহমান রাখা কেবল বিবাহ দ্বারাই সম্ভব করেছেন মহান আল্লাহ তায়ালা। বৈধ উপায়ে মানুষের জৈবিক চাহিদা পূরনের নিমিত্তে বিবাহ ছাড়া বিকল্প নেই।বিবাহ সামাজিক কর্মকাণ্ডেরই গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ।আর বিবাহ বিচ্ছেদ সমাজে ঘৃণিত একটি অংশ।হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন –
যে ব্যাক্তি বিবাহ করেন, তিনি তাঁর জীবনের অর্ধেক ধর্ম পালন করেন”

কথাটা শুনামাএই হৈমী বলে ওঠলো,

— আচ্ছা দাদী যদি কেউ কখনো বিয়েই না করে তাহলে কি কোন ক্ষতি হবে?? বিয়ে ছাড়া কি কেউ দুনিয়াতে বাঁচতে পারবেনা??

দাদী মুখে হাসি রেখেই তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে বললো,

— এ আবার কেমন কথা মেয়ে। বিয়ে হলো সামাজিক বন্ধনের সৃষ্টি করে। বিয়ে বিহীন থাকা ইসলাম সমর্থন করে না।যা ইসলাম সমর্থন করে না তা আমরা কেনো সমর্থন করবো??

রুদ্রর মামাতো বোন বললো,

কেনো গো তোমার বুঝি বিয়ে করার ইচ্ছে নাই??

হৈমী মৃদু হাসলো কিছু বললো না৷ নয়না খানিকটা বুঝে বললো,

— দাদী ভালো ছেলে দেখুন তো আমার এই ছোট্ট মিষ্টি বোনটার জন্য এখুনি বিয়ে দিয়ে দিতে হবে।

শোভন বললো,

— চোখের সামনে ছেলে থাকতে আবার নতুন করে ছেলে দেখতে হবে কেনো ভাবি।

দাদী ভ্রু নাচিয়ে বললো,

— বাববাহ পাএী একখান পাএ কয়েকখান। টানাটানি করিস না আবার। ছিঁড়া যাবোগা। রুদ্রর আরেক মামাতো ভাই রিপন বললো,

— না না নানী আমার দু নয়নে আরেক নয়ন চাই শুধু।
শোভন হোহো করে হেসে বললো,

— বুঝলে ভাবী তোমার বোনটাকে কেউ একজন খুব মিস করছে।
.
রুদ্র শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে আসতেই সূচনার হাত কাঁপতে শুরু করলো। চায়ের কাপ পিরিজের ওপর লড়লড়ে করছে। মৃদু শব্দ পেয়ে রুদ্র পিছন ঘুরতেই সূচনার কাঁপাকাপি অবস্থা দেখতে পেলো।

রুদ্র ভ্রু কুঁচকে সূচনার দিকে এগিয়ে এলো। সূচনার হাত কাঁপতেই আছে। বড় বড় চোখ করে চেয়ে আছে সে। রুদ্র মুখে গম্ভীর ভাব নিয়েই বললো,

— চা টা রেখে রুম থেকে বের হ।

সূচনা ভয়ে ভয়ে বিছানার পাশের টেবিলল্যাম্পের পাশে চায়ের কাপ রাখলো।
রুদ্র কাবার্ড থেকে সাদা রঙের কাবলী বের করে পিছন ঘুরতেই দেখলো সূচনা ভয় চোখে চেয়ে আছে।
রুদ্র দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

— কথা কানে যায় না এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো।
সমস্যা কি?? হালকা ধমক দিলো।

সূচনা খানিক কেঁপে ওঠলো কাঁপা গলায় বললো,

— তোমার চু,,,

বাকিটা বলার আগেই রুদ্র চিৎকার করে বললো,

— স্যাট আপ একটা কথাও বলবি না তুই। ঐ মেয়েটা তোর সাথে ছিলো না??তোর পাশ থেকে ওঠে আমার রুমে এসে এসব কান্ড করে গেলো তুই কি মরে ছিলি??

সূচনার চোখ দিয়ে টপটপ করে জল বেরিয়ে এলো।

ঘুম ভাঙার সাথে সাথে ধমকাধমকি করছে কাকে?? বলতে বলতেই সুরভী বেগম আর রুদ্রর দুই মামি রুমে এলো।

সূচনা কাঁপা গলায় বললো,

— এসব হৈমী করেছে কখন কিভাবে??

রুদ্র এবার আরো জোরে ধমক দিয়ে বললো,

— সেই কৈফিয়ত কি এখন তোকে দিতে হবে আমায়।

সুরভী বেগম ধমকে বললেন,

— রুদ্র চুপ কর। বাড়ি ভর্তি মেহমান কি শুরু করেছিস ঘুম থেকে ওঠে। বলেই থেমে গেলো। ছেলের দিকে অবাক হয়ে চেয়ে বললো,

— তোর চুল কই??এমন ছোট হয়ে গেলো কি করে??

রুদ্র এবার দ্বিগুন ক্ষেপে গিয়ে সবাইকে রুম থেকে বের করে দিলো। সুরভী বেগমকে সূচনা বললো,

— হৈমী এটা কখন করলো খালামুনি?? আমিতো কিছুই জানিনা।

সুরভী বেগম হাঁটা পা থামিয়ে বড় বড় চোখ করে অবাক স্বরে বললো,

— কিহ হৈমী করেছে,,,

রুদ্রর মামি বললো,

— মেয়েটা বেশ বিচ্ছু কথা শুনেই বোঝা যায়।
তাই বলে এতো দুঃস্বাহস অন্যের বাড়ি এসে এমন কাজ করে ফেললো। রুদ্র যে মানুষ না জানি কি হয় আবার। মেয়েটাকে এবার কড়া কথা শোনানো উচিত।
.
নয়না সব শুনে হৈমীর দিকে রাগি চোখে তাকালো।
সূচনা বেশ রেগে আছে হৈমীর ওপর৷ বাড়ির অর্ধেক মানুষই হৈমীর ওপর প্রচন্ড বিরক্ত হয়েছে। সুরভী বেগম, রাদিফ,আর রেদওয়ান শেখ বললেন,

— যাক ভালোই হয়েছে এমনিতে তো কাটতো না৷ হৈমীর দুষ্টামির জন্য হলেও এবার চুল সাইজে রাখবে।

সকলের মন খারাপ বিরক্ত কে তোয়াক্কা না করে হৈমী বললো,

— তোমরা কেনো মন খারাপ করছো। আমি তো আন্টির জন্যই এসব করলাম। কেমন ছেলেরে বাবা নিজের বাড়ির লোকেরই কথা শুনে না। তাই তো আমি নিজ দায়িত্ব নিয়ে কাজটা করে দিলাম।

ড্রয়িং রুমে সকলের মাথায় হাত৷ এই মেয়ে কি ভয় পায় না নাকি??

রুদ্রর বড় মামি বললো,

— অন্যের বাড়িতে এসেছো বান্ধবীর বোনের শশুর বাড়ি। মুখ তো কম চালাও না। বাড়ির ছেলের ঘরে ঢুকে এমন কাজ করতে লজ্জা করলো না।

নয়না মাথা নিচু করে ফেললো। হৈমী থতমত খেয়ে গেলো। জোর পূর্বক হেসে বললো,

— এটাতো নয়না আপুর শশুর বাড়ি৷ আর সম্পর্কে ওনি আমার বেয়াই হয় একটু মজা তো হতেই পারে।। তাছাড়া আমি শুনেছিলাম অমন চুলের জন্য ওনার মা কষ্ট পায়। তাই ভাবলাম আমি কেটে দিলে ওনার মা খুশি হবে।

রুদ্রর মামি বললো,

— বাহ এ বাড়ির সকলকে খুশি করার দায়িত্ব তুমি নিয়েছো নাকি।

সুরভী বেগম বললেন,

— আহ ভাবী থাক না বাচ্চা মেয়ে বুঝতে পারেনি।

নয়নার চোখ দুটো চিকচিক করছে। হৈমীর মুখটাও মলিন হয়ে গেছে। উপর থেকে সবটাই দেখলো রুদ্র।
সকলে যখন কাজে চলে গেলো নয়না কে নিয়ে তখন সূচনা উপরে ওঠে আসছিলো। হৈমীও মাথা নিচু করে পিছন পিছন গেলো।

নয়না, সূচনা রুমে ঢুকতেই হৈমী দরজা অবদি পা রাখতেই তার বাহু ধরে কেউ এক টান দিয়ে পাশের রুমে ঢুকিয়ে দরজা লক করে দিলো। হৈমী চোখ মুখ খিচে চেঁচিয়ে বললো,

— ঐ কেরে কে আমাকে এভাবে টান দিলি। কি লোহার হাত মায়েরি ওহ কি লেগেছে আহারে আমার হাতটা আর নাই রে কোন ডিপজল এমন করলি। এমনিতেই এখন আমার মুড অফ বলেই উপরে তাকাতেই চমকে গেলো।

ভয়ে ভয়ে থতমত খেয়ে এক ঢোক গিলে পিছন তাকিয়ে দেখলো দরজা লক করা। তাঁর পিঠ সম্পূর্ণ দরজায় ঠেকে গেছে। সামনে তাকাতেই রুদ্রর রাগি গম্ভীর মুখটা দেখে গলা থেকে বুক অবদি শুকিয়ে গেলো। রুদ্র ভয়ংকর চোখে চেয়ে আছে যেনো এখুনি গিলে খাবে তাঁকে। এতোটা কাছে আছে যে সরে যাওয়ারও উপায় নেই।

হৈমী ভয়ে ভয়ে তোতলাতে তোতলাতে বললো,

— দেখুন সাদা ভুত আমাকে ছেড়ে দিন নয়তো আমি চেঁচাবো। (রুদ্র সাদা কাবলী পড়া আছে তাই সাদা ভুত বললো হৈমী)এতো বড় গাম্বাস পুরুষ হয়ে আমার মতো অবুঝ শিশুকে নির্যাতন করতে পারেন না আপনি। আমি আপনার নামে মামলা করবো। আপনি যদি আমার দোষ ধরেন তাহলে আমি আপনাকে ভালো তেল,শ্যাম্পুর নাম বলে দিবো ওগুলো লাগালেই আপনার চুল আবার বড় সিলকি,মজবুত হয়ে যাবে। প্লিজ আমায় যেতে দিন।

রুদ্র তাঁর দুহাতে দরজা খানিক ধাক্কা দিয়ে শক্ত করে চেপে হৈমীকে আবদ্ধ করে ফেললো। হৈমী চোখ বড় বড় করে উপরে তাকালো। দম আটকে যেনো এবার মরন হবে হৈমীর৷ ভারী শ্বাস নিতে নিতেই বললো,

— এতো লম্বা হতে কে বলছে ঘাড় আমার ব্যাকা হইয়ে গেলো। এভাবে কি তাকিয়ে থাকা যায় ঘোড়ার ডিম। যেতে দিন নয়তো আমি চেঁচামেচি করবো। সবাই হাকডাক করে বলবো আপনি আমার ইজ্জত হরন করতে এভাবে টেনে এনেছেন।

রুদ্র গাড় চোখে চেয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

— স্যাট আপ! মুখ বন্ধ রাখো বলেই আগাগোড়া তাকালো হৈমীর দিকে।

লেডি জিন্সের সাথে লেডি শার্ট পড়েছে হৈমী হাঁটুর ওপর অবধি লম্বা শার্ট। দুসাইটে দুটো ঝুঁটি করে কাধের সামনে নামিয়ে রেখেছে। আগাগোড়া বেশ ভালো মতোন দেখে নিয়ে বললো,

— পরিবার থেকে কি কোন শিক্ষা দিক্ষা দেওয়া হয়নি। মেয়েদের কিভাবে চলতে হয়, কিভাবে নম্রতা,ভদ্রতা বজায় রাখতে হয় তা কি তোমার মা বাবা তোমাকে শেখায়নি??

হৈমী স্তব্ধ হয়ে গেলো। মূহুর্তেই তাঁর সকল চঞ্চলতা থেমে গেলো। শুধু সে নিশ্চুপ হয়ে গেলো না। নিশ্চুপ হয়ে গেলো তাঁর চোখ, মুখ, হাত, পা সব কিছু।

রুদ্র দাঁতে দাঁত চেপে বলতেই থাকলো,

— “সারাক্ষণ এতো পটপট করো কেনো??সমস্যা কি?? মাথায় সমস্যা থাকলে বলো পাগলাগারদ এডমিট করে আসি। একটা ছেলের রুমে ঢুকে পড়লে,,, কারো ঘরে ঢুকলে নক করে ঢুকতে হয় তা জানোনা??নাকি এসব ভদ্রতা,সভ্যতা শেখানো হয়নি তোমাকে।কারো ব্যাক্তিগত জীবনে ইন্টারফেয়ার করতে হয় না তা জানো তুমি?? নিজেকে সকলের সামনে জোকার সাজাতে খুব ভালো লাগে তাইনা৷তোমার এইসব জোকারের মতো আচরন গুলো কিছু ইডিয়টরা হজম করে কিভাবে তাই ভেবে পাই না আমি।আমার রুমে এসে এসব বাদরামি করার দুঃসাহস কোথায় পেলে তুমি।সবজায়গায় এসব চলবে না মেয়ে বলে মেরে হাড়গোড় ভেঙে দেইনি৷ নয়তো এতোক্ষণে হসপিটালের বেডে থাকতে।

হৈমী চুপ।
রুদ্র কিছুসময় থেমে আবারো বললো,

–এই মূহুর্তে তোমার সাথে আমি ঠিক কি কি করতে পারি ধারনাও নেই তোমার। বলেই আরেকটু এগিয়ে গেলো। মাথাটা বেশ ঝুকে হৈমীর মুখোমুখি হয়ে ডানহাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে হৈমীর ঠোঁট জোরায় বেশ শক্ত করে চেপে লিপস্টিক মুছতে লাগলো।আর বললো,সং এর মতো নেক্সট টাইম যেনো সাজতে না দেখি মাইন্ড ইট!

হৈমী কেঁপে ওঠলো চোখ দিয়ে টপ টপ করে জল গড়িয়ে পড়লো। কান দিয়ে শো শো করে গরম বাতাস বয়ে যাচ্ছে। মাথায় প্রচন্ড চাপ পড়েছে তাঁর।

রুদ্র পুরোপুরি হৈমীর লিপস্টিক মুছে দিয়ে হৈমীর দিকে তাকাতেই চমকে গেলো৷ “এই মেয়ে আবার কাঁদতেও জানে ইন্টারেস্টিং! সারাক্ষণ তো এতো পটর পটর করে এটুকুতেই এই অবস্থা বাঁকা হাসলো রুদ্র” আরেকটু কাছে চলে গেলো মৃদু ধমক দিয়ে বললো,

— তোমার মতো হাঁটুর বয়সি মেয়ের ইজ্জত নিয়ে নিজের ব্যাক্তিত্বে কালী লাগানোর বিন্দু ইচ্ছে আমার নেই মিস.তবে শাস্তি তো ভোগ করতেই হবে। এতো বড় অপরাধের শাস্তি সিম্পল থাপ্পড় হতে পারে না। শাস্তির জন্য নিজেকে প্রিপেয়ার করার সময় দিলাম।

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here