ভালোবাসায় বন্দিনী পর্ব ১১

0
1886

#ভালোবাসায়_বন্দিনী
#জান্নাতুল_নাঈমা
#পর্ব_১১
.
রক্তচক্ষু তে চেয়ে এগিয়ে আসছে রুদ্র। হৈমী ভয়ে ভয়ে দু পা পিছিয়ে পিছন ঘুরেই এক দৌড় দিতে নিলো।সাথে সাথে রুদ্র খপ করে তাঁর হাত চেপে ধরে টেনে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে নিজেও ওঠে পড়লো। প্রচন্ড স্পিডে গাড়ি চালিয়ে নিজের বাড়ির সামনে গাড়ি থামালো।

অদ্ভুত ব্যাপার চারদিক অন্ধকারে ছেঁয়ে গেছে।
দিনের বেলা হঠাৎ এমন অন্ধকার হয়ে গেলো কেনো??ভাবলো হৈমী।

সেই অন্ধকারেই হৈমীকে রুদ্র হিরহির করে টানতে টানতে নিয়ে বাড়ির ভিতর প্রবেশ করলো। একদম নিজের রুমে গিয়ে বিছানায় ছুঁড়ে ফেলে দরজার সিটকেরী লাগিয়ে দিলো। এতোক্ষণ হৈমী প্রচুর চিল্লিয়েছে রুদ্রর হাত থেকে বাঁচার জন্য ছটফট করেছে তবুও রুদ্র ছাড়েনি, একটা শব্দও করেনি।

দরজা লাগিয়ে নিজের পরিহিত কাবলীটা খুলে ফেললো রুদ্র। কি ভয়ংকর দেখতে লোকটা এর সামনে চারটা হৈমীও যেনো কিছুই না৷ মারাত্মক ভয়ংকর লাগছে লোকটাকে, চাহনীটাও খুবই হিংস্র লাগছে,এই চাহনী দিয়েই আজ বুঝি ভষ্ম করে দেবে সে হৈমী কে। হৈমী ভয়ে ভয়ে এক ঢোক গিললো কাঁপা গলায় বললো,

— কি করছেন প্লিজ আমার কোন ক্ষতি করবেন না। খুব ভয় লাগছে আমার এভাবে এগুচ্ছেন কেনো??

রুদ্র ডেভিল হাসি দিতে দিতে বিছানায় বসলো একটু একটু করে হৈমীর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে সে। হৈমী ভয়ে পিছাতে পিছাতে একদম দেয়ালে ঠেকে গেছে।
রুদ্র এক হাত বাড়িয়ে তাঁর ভি বেল্ট একটানে খুলে ফেললো। হৈমী এবার প্রচন্ড কাঁপতে শুরু করলো ভয়ে। ভয়ে ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে হাত জোর করতে শুরু করলো আমার কোন ক্ষতি করবেন না৷ তাঁর কথায় রুদ্র আরো দ্বিগুণ মজা পেয়ে তাঁকে বিছানায় চেপে ধরে বললো,

— কেনো ছাড়বো, ছাড়বো না তোকে আমি। কতোবার বলেছিলাম তোকে কতো বার বুঝিয়েছিলাম। এভাবে বের হবি না তুই। মানুষ কে তোর বডি ফিগার দেখিয়ে খুব আনন্দ পাস তাইনা।

— ছেড়ে দিন আমায় ভুল হয়ে গেছে আমার আর কখনো হবে না।

রুদ্র ধীরে ধীরে মুখ এগুতে এগুতে বললো,

— ভুল শুধু তুই ই কেনো করবি এবার ভুল আমাকেও করতে দে। বার বার বলেছিলাম এভাবে না বের হতে তুই শুনিসনি। তুই আমাকে নিয়ন্ত্রণে থাকতে দিস নি।
এবার তোর সব ভুলের শাস্তি আমি নিজে ভুল করে দিবো। বলেই ঠোঁট জোরা নিজের দখলে নিয়ে নিলো।

চিৎকার করে ওঠে বসলো হৈমী। শরীর কাঁপছে তাঁর, গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। পুরো রুম অন্ধকার ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে হেচকি ওঠে গেছে তাঁর। শরীর ঘেমে জামা কাপড় শরীরের সাথে লেপ্টে গেছে।
ঘুমানোর সময় ফ্যান অন করে ঘুমিয়েছিলো এখন অফ তাঁর মানে কারেন্ট চলে গেছে। আশেপাশে হাতরাতে লাগলো। কাঁপা হাতে বালিশের পাশের ফোনটা হাতে নিলো। নয়নের নাম্বার ডায়াল করলো রিসিভ হতেই হাউমাউ করে কেঁদে ওঠলো।

নয়ন শোয়া থেকে তারাহুরোয় ওঠে বসলো। আতংকিত হয়ে জিগ্যেস করলো,

— এই হৈমী কি হয়েছে কাঁদছিস কেনো? ভয়ংকর কিছু স্বপ্নে দেখেছিস। বল আমায় সোনা কাঁদিস না এভাবে। তুই কাঁদলে আমারও যে খুব কষ্ট হয়। বল না জানু কি হয়েছে।

হৈমী ফুঁপিয়ে ওঠলো। নয়ন ধীর আওয়াজে বললো, — টেবিলে পানি থাকলে খেয়ে নে। তারপর আস্তে ধীরে বল কি হয়েছে। স্বপ্ন দেখেছিস সিওর কি দেখেছিস সেটা বল।

হৈমী অন্ধকারেই একটু সরে বসে হাত বাড়িয়ে টেবিলে থাকা গ্লাসটা নিলো আগেই পানি ভরা ছিলো। ঢকঢক করে এক গ্লাস পানি শেষ করে বেশ শব্দ করেই গ্লাসটা রাখলো। এখনো তাঁর হাত পা কাপছে ভয়ে। এক ঢোক গিলে নিয়ে পুরো স্বপ্ন টা নয়নকে বললো।সব শুনে নয়নও এক ঢোক গিললো ভয়ে পরোক্ষনে হৈমীর ভয় কাটানোর জন্য বললো,

— আরে ইয়ার স্বপ্ন তো স্বপ্নই এটা নিয়ে এতো সিরিয়াস কেনো হচ্ছিস৷ নিশ্চয়ই রুদ্র ভাইয়াকে নিয়ে একটু বেশী চিন্তা করছিস আজকাল?

হৈমী কাঁপা গলায় গতকালের সব ঘটনা খুলে বললো নয়নকে৷ সব শুনে নয়ন তো আরো ঘাবড়ে গেলো। ঘুম তাঁর একদম উড়ে গেলো। গালে হাত দিয়ে বললো,

— তুই রুদ্র ভাইয়াকে জরিয়ে ধরেছিস। ওহ মাই গড বলিস কিরে। তুই এমন সাহস করলি কি করে? কি ব্যাপার বলতো সামথিং সামথিং?

— না না নাথিং আমি সামথিং করবো না। আজ যা স্বপ্ন দেখলাম তাঁর পর তো একদমই না। তুই ভাবতে পারছিস না ওনি আমার সাথে কি অসভ্যতাই না করেছে। কেঁদে কেঁদে বললো হৈমী।

নয়ন হিহি করে হেসে ওঠলো। আর বললো,

— সারাক্ষণ ওলটা,পালটা চিন্তা করিস। রুদ্র ভাইয়াকে ভিলেন বলে গালাগাল দিস তাই তো স্বপ্নে ভিলেন হয়ে এট্যাক করেছে। শোন এরপর হিরো হিরো গালাগাল করবি তাই হিরোগিরি দেখাবে স্বপ্নে এসে বুঝলি।

নয়নের কথা শুনে হৈমী কেমন ডুঁকরে কেঁদে ওঠলো। যার অর্থ সে মজার মুডে নাই সে সাংঘাতিক ভয় পেয়েছে। নয়নের এবার ভীষণ খারাপ লাগলো। মেয়েটা খুব ভয় পাচ্ছে ভেবে ফোন কেটে দিয়ে রুম ছেড়ে বেরিয়ে মাহেরের দরজার সামনে গিয়ে ঠকঠক করতে লাগলো। এদিকে ফোন কেটে দেওয়ায় হৈমী ভয়ে গুটিশুটি মেরে বসে রইলো। এখনো তাঁর শরীর কাঁপছে। কারেন্ট টাও নেই।
.
নয়নের কাছে সব শুনে মাহেরের বুকের ভিতরটা কেমন অস্থিরতায় ভরে গেলো৷ নয়ন কে বললো,

— চল আমার সাথে।
— সত্যি যাবে ৩ঃ৪৫ বাজে। মা বকবে না।
— জানলে তো বকবে তুই বের হো আমি বাইক বের করছি।
.
নয়ন হৈমীকে ফোন করে বললো,

— দোস্ত ভয় পাস না আমি আর ভাইয়া আসছি তোর সব ভয় দূর হয়ে যাবে চুপিচুপি এসে দরজা টা খুলে দে।

হৈমী ফোনের ফ্ল্যাশ জ্বালিয়ে ভয়ে ভয়ে রুম ছেড়ে বেরিয়ে বাচ্চা দের রুমে ওকি দিলো। তাঁরা বেঘুরে ঘুমাচ্ছে। দাদুর রুমে দরজা লক করা। পা টিপটিপিয়ে গিয়ে দরজা খুলে দিয়ে নয়নকে দেখতেই জরিয়ে ধরলো। চোখ দিয়ে পানি পড়েই যাচ্ছে তাঁর।
মাহের মলিন চোখ,মুখে চেয়ে সেই কান্না দেখছে। ভিতরটা তাঁর একদম পুঁড়ে যাচ্ছে। সে মূহুর্তেই সে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো নাহ আর দেরী নয়। হৈমীর পরীক্ষা অবদি ওয়েট করা যাবে না৷ বাকি পথ আর হৈমী একা হাঁটবে না ওর পাশে আমি থাকবে। আমার হাতে হাত রেখে সারাটাজীবন পার করবে সে৷ আমার বুকে মাথা রেখে সারাজীবনের সব রাত কাটাবে। কোন ভয় তাঁকে আর জরাতে পারবে না।
নিচু স্বরে বললো,

— নয়ন ছাদে চল এখানে দাঁড়িয়ে থাকা ঠিক হবে না।

নয়ন বুঝিয়ে শুনিয়ে হৈমীকে ছাড়িয়ে ওর হাতটা চেপে ধরে ছাদে চলে গেলো। কাঠের বেঞ্চিতে দুজন বসলো মাহের ছাদের বর্ডারে বসলো। নরম স্বরে বললো,

— তুমি যদি এখন স্বপ্নে দেখো তুমি চিকু মামার ছেলেকে বিয়ে করেছো। তাই কি তুমি তাঁর ছেলের বউ হয়ে যাবে? না ঐ পাঁচ বছরের বাচ্চা টা তোমার হাজব্যান্ড হয়ে যাবে?

ভয়ের মধ্যে মাহেরের এমন কথায় হৈমী ব্যাকুব বনে গেলো। তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে বললো,

— কি বললে তুমি ঐ হাঁটুর বয়সি ছেলেকে আমি বিয়ে করবো?
— নো ম্যাডাম আপনি ভুল শুনেছেন। আমি বলেছি যদি এটা স্বপ্ন দেখেন তাহলে তাই সত্যি হবে নাকি?
— মোটেই না। ভেঙচি কেটে বললো হৈমী।
ফোনের ফ্লাশ জ্বলছিলো জোৎস্নার আলোতে স্পষ্ট সেই ভেঙচি দেখতে পেলো মাহের৷ মুচকি হাসলো সে। নয়নও হৈমীর কাঁধ জরিয়ে মিটিমিটি হাসছে।
— তাহলে তুমি একটা অদ্ভুত স্বপ্ন দেখতেই পারো তাঁতে এতো ঘাবড়ে যাওয়ার কি আছে? আর যাকে নিয়ে দেখেছো মানুষ টা মোটেই অমন নয়। বদমেজাজি, রাগি বাট চরিএহীন নয়। অতিরিক্ত ভয় থেকে এমন হয়েছে। বললো মাহের।
— তুমি কি এখানে ওনার প্রশংসা করতে এসেছো নাকি আমাকে গান শোনাতে। অভিমানী স্বরে কথাটা বললো হৈমী।

মাহের মৃদু হাসলো নিচু গলায় বললো,– এতো রাতে গান গাইলে দাদু এসে লাঠির বাড়ি ফালাবে পিঠে।
— ফালাবে না আস্তে করে গাইবে এই যে কান পেতে দিয়েছি কানে কানে শোনাও। গাল এগিয়ে দিয়ে বললো হৈমী।
নয়ন খিলখিল করে হেসে ওঠলো। মাহেরও হাসলো। এরা দুজনই হৈমীকে প্রচন্ড পরিমাণে ভালোবাসে।হৈমীর মুখের হাসি ফোটানোর জন্যই এতো রাতে এদের আগমন। তাই সেই হাসির জন্য যা করতে বলা হবে সব করতেই প্রস্তুত মাহের। তাই নিচু গলায় সুরেলা কন্ঠে গান ধরলো।

তোমাকে… দেখার পর মনে হলো তুমি আমার সব,

লাগেনা ভালো, তুমি ছাড়া এটাই বলছে অনুভব।

মায়াবী হাসিতে, আবাগী দোলাতে, কেড়ে নিয়েছো এই মন,,,জান তুমি আমরই জান… প্রান তুমি আমারই প্রাণ।

নীল আকাশে ডানা মেলে ঐ দূরে পাখি রা উড়ে,
তোমায় নিয়ে মন আমার স্বপ্ন বুনে শুধু স্বপ্ন বুনে,,,

নীল আকাশে ডানা মেলে ঐ দূরে পাখি রা উড়ে
তোমায় নিয়ে মন আমার স্বপ্ন বুনে শুধু স্বপ্ন বুনে,,,

ঠোঁটের কোনে হাসি লেগে আছে হৈমীর। নয়নও হাসছে। মাহের এক ধ্যানে হৈমীর পানে চেয়ে আছে আর গান গাইছে। তাঁর ঠোঁটের কোনেও বেশ হাসি। সেই হাসিটা এতোই প্রশস্ত যে গালের টোল টা স্পষ্ট দেখতে পারছে হৈমী। শ্যামবর্নে মাহের দেখতে মন্দ নয় শেভ করায় শ্যামবর্নে আরো দ্বিগুণ উজ্জ্বলতা বেড়ে গেছে।

— এতো সুন্দর কিউট ভাইয়ার জন্য খুব তারাতারি একটা কিউট ভাবী খুঁজতে হবে। নয়তো এই সুরের জন্যই না জানি কোন শাঁকচুন্নি তুলে নিয়ে যায়। ভেবেই খিলখিল করে হেসে ওঠলো।

নয়ন বললো, — উফফ! এই মেয়ের হাসতেও দেরী লাগে না কাঁদতেও দেরী লাগেনা। ব্রাদার চলো যাই মহারানীর মন ফুরফুরা হয়ে গেছে এখন।
.
রুদ্র শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে পোশাক পড়ে নিলো।
ঘড়ি ওয়ালেট সব নিয়ে চুল গুলো আওড়াতে আওড়াতে বের হচ্ছিল তখনি সূচনার সাথে বেজে পড়লো। সূচনা তাঁর রুমেই আসছিলো। রুদ্র খানিকটা সরে গিয়ে কর্কশ গলায় বললো,

— চোখে দেখিস না চোখ কোথায় নিয়ে ঘুরিস?এ ঘরে এসময় কেনো? তোকে না সাবধান করেছি আমার রুমে আসবিনা এটা আমার একদমই পছন্দ না। বাইরে কি লেখা দেখিসনা। কফি দিতে আসিস নিষেধ করিনি সবসময় একদম এ ঘরে আসার চেষ্টা করবি না।

সূচনার চোখ দুটো টলমল করছে। মাথা নিচু করে বললো,

— বিছানা গোছাতে এসেছিলাম।
— হোয়াট!
রুদ্রর ধমকে কেঁপে ওঠলো সূচনা। রুদ্র দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
— তোকে এসব কে করতে বলেছে আমি বলেছি? এ বাড়িতে তোকে আমার কাজ করার জন্য রাখা হয়?নিজের চর্কায় তেল দে আমাকে নিয়ে তোর এতো ভাবতে হবে না।
রুদ্রর ধমক খেয়ে কাঁপছে সূচনা রুদ্র আর এক সেকেন্ডও না দাঁড়িয়ে চলে গেলো। সূচনার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে লাগলো।
— ইদানীং এতো খারাপ আচরন কেনো করে ও আমার সাথে। হৈমীর জন্যই কি এই পরিবর্তন? আগেতো এমন টা করে নি, এখন তাহলে এমন করে কেনো। নাহ আগে তো জানতো না ওর বিছানা আমি গোছাই তাই হয়তো। তাছাড়া সবারই তো এ রুমে আসা নিষেধ খালামুনি বাদে। চোখের পানি মুছে বিছানাটা গুছিয়ে বেরিয়ে গেলো সূচনা৷

নিচে সুরভী বেগমের সাথে বেশ তর্ক শুরু হয়ে গেছে রুদ্রর।

— তুমি আমার কাজ করতে না পারলে বলো আমি কাজের লোক রেখে দিচ্ছি। এ বাড়িতে কাজের লোক এলাউ করিনা কারন যতোদিন তোমরা কাজে সক্ষম ততোদিন অন্যদের দিয়ে কাজ করাতে চাইনি। তাই বলে তুমি আমার কাজ আরেকজনের ঘাড়ে চাপিয়ে দেবে। রেগে চোখ মুখ শক্ত করে বললো রুদ্র।

— সূচনার ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হয়নি ও কাজটা ভালোবেসেই করে। এতো রাগছিস কেনো তুই?বললো সুরভী বেগম।
— ভালোবেসে আমার কাজ না করে নিজের কাজটা করতে বলো। পড়াশোনা করতে বলো নিজের আরো অনেক কাজ আছে সেগুলো করতে বলো। এরপর যেনো এসব না দেখি।
রুদ্রর দাদী রাজিয়া বেগম বললেন,
— তা তুমি নিজের কাজ নিজে করতে পারো না। মা কে বলো কেনো। সকাল সকাল এতো রাগ না ঝাড়লে কি হতো না?

রুদ্র এ বাড়ির আর কারো ওপর চেচামেচি করতে চায় না তাই এক সেকেন্ডও দাঁড়ালো না আর হনহন করে চলে গেলো।

সুরভী বেগম বললেন,
— এটা কি করলেন মা। আপনি ওকে এটা বলতে গেলেন কেনো রাগ করে আর বাড়িই আসবে না। বলেই কেঁদে দিলো।

রাজিয়া বেগম বললেন,
— তুমি আমার কাছে কৈফিয়ত চাইছো বউ মা। ছেলেটা কে তো বানিয়েছো এক বেয়াদব। বড়টার মতো তো আর ছোট টা বানাতে পারলে না।

নয়না চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলো মাথা নিচু করে। সুরভী তাঁর দিকে চেয়ে আবার শাশুড়ির দিকে তাকালো।
— ছেলে বউয়ের সামনে আমি তর্কে যেতে চাইনা মা। আশা করি আপনি বাঁধ্য করবেন না।
দাদীর মুখ টা চুপসে গেলো। বেশী বলতে গেলে তাঁর হাড়িই ভেঙে যাবে তাই চুপচাপ ড্রয়িং রুম থেকে সরো গেলো।
নয়না শাশুড়ির কথাটা শুনেই রান্নাঘরে কাজে চলে গেছে। সূচনা মাথা নিচু করে নিচে এলো। তাঁর জন্যই কতো অশান্তি হয়ে গেলো কিন্তু কি করবে সে। সে তো ভুল করছে না তবুও মানুষ টা রেগে যাচ্ছে ভেবেই এক দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।
.
কলেজ গেইটের সামনেই গাড়ি থামালো রুদ্র। বসে সিগারেট ধরালো একটা৷ ৯টা বাজে হৈমী এখনি আসবে। ভেবেই অপেক্ষায় রইলো। কিছুক্ষণ পরই আবির এলো। রুদ্রর সামনে গিয়ে বললো,

— নিরব ওর বউকে নিয়ে বেড়াতে যাবে। কাল থেকে অফিস জয়েন করবে তাই আগেরিদন বউকে নিয়ে একটু ঘুরাঘুরি করবে বললো।আর সাদ আধঘন্টার মাঝেই এসে যাবে।

রুদ্র আবিরের দিক চেয়ে চেয়ে সিগারেটে টান দিয়ে যাচ্ছে। আবির এক হাত পকেটে রেখে আরেক হাতে ফোন টিপতে লাগলো গাড়ির সামনে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে।

হৈমী নয়ন গাড়ি দেখে আর আবিরকে দেখেই বুঝল রুদ্র আজো এসেছে। হৈমী মনে মনে ভাবলো,
— কাল ঐ ঘটনা করায় নিশ্চয়ই ওনি ভেবেছে আমি ওনার প্রতি দূর্বল হয়ে গেছি৷ ইশ কি যে হয়েছিলো তখন আমার। এই কাজটা কেনো করলাম আমি ছিঃ।

গাড়ির পাশ কাটিয়ে গেলো হৈমী৷ নয়ন রুদ্র কে সালাম দিলো কেমন আছে জিগ্যেস করে সামনে এগিয়ে গেলো। রুদ্র একধ্যানে হৈমীর যাওয়ার দিকে চেয়ে আছে। সেই দৃষ্টি হৈমীর দৃষ্টি তে পড়লে হয় তো ভয়ে তাঁর বুকটা কেঁপে ওঠতো। এ দৃষ্টি একদম আলাদা যার গভীরত্ব বিশাল।
গেটের কাছে যেতেই আবির চেঁচিয়ে বললো,

— আরে পিচ্চিরা এসে গেছে যে। বলেই দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেলো।

হৈমী নয়ন দুজনই থেমে গেছে৷ হৈমীর বুকটা ধুরু ধুরু করছে। রুদ্রর চোখে সে না তাকালেও তাঁর বড্ড অস্বস্তি হচ্ছে হয়তো রুদ্রর চাহনীতে অজান্তেই এই অস্বস্তির সৃষ্টি হয়েছে তাঁর।

— হাই পিচ্চিরা!

আবিরের দিকে তাকাতেই হৈমী মনটা শান্ত করলো। চোখে মুখে দুষ্টুমি নিয়ে বললো,

— হ্যালো বুইড়া ব্যাটা৷
নয়ন মুচকি হাসলো। আবির চোখ,মুখ কুঁচকে বললো,
— এই এই আমাকে কি বুড়ো মনে হয় তোমাদের।
হৈমী কোমড়ে দুহাত রেখে তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে বললো,
— আমাদের কি পিচ্চি মনে হয় আপনার। দেখছেন না কলেজে পড়ি। কতো ছেলে লাইন দিয়ে রাখছে জানেন। পিচ্চি হলে কি প্রেম করার জন্য ছেলেরা লাইন দিয়ে রাখতো নাকি? লাভ লেটার পাঠাতো নাকি বলেই চোখ মারলো।
আবির কিছু বলতে যাবে তাঁর আগেই ফোন বেজে ওঠলো। হৈমী নয়নকে আঙুল দেখিয়ে বললো,
— একমিনিট উত্তর দিচ্ছি ওয়েট।
হৈমী নয়ন দুজনই ভেঙচি কেটে ভিতরে চলে গেলো।
.
ছুটির পর নয়ন আর হৈমী গেছে ফুসকা খেতে। বার বার বলছে,

— মামা দু প্লেট ফুসকা দিন। অথচ মামা দিচ্ছেই না পিছন দিকে কি দেখছে আর ঢোক গিলছে। হৈমী এবার ঝগরা শুরু করে দিলো ফুসকা দিচ্ছে না বলে।

নয়ন বললো,
— হৈমী রুদ্র ভাইয়া পিছনে দেখ গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে আঙুল দিয়ে মামা কে না ইশারা করছে।

হৈমী পিছন চেয়ে রুদ্রকে রোবটের মতো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো। তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে দাঁত কেলাচ্ছে সাদমান। হৈমী তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে আবার ফুসকার মামার দিকে তাকালো কড়া গলায় বললো,

— মামা ফুসকা দিন দু প্লেট।
মামা আবারো ঢোক গিললো একদিকে মেয়েটা ধমকায় আরেকদিকে ছেলেটা ভয় দেখায়। কোনদিক যাবে সে৷
হৈমী এবার মামা কে বললো,
— ফুসকা না দিলে দোকান ওল্টে দিব এ নয়ন চলতো দোকানই ওল্টে দেই। ঐ লোকটার ইশারায় ভয় পাচ্ছে আর আমি যে ধমকাচ্ছি মরাটা ভয়ই পাচ্ছে না।
মামা অসহায় চোখ মুখে অনুরোধ করলো। হৈমীর মনটাও গলে গেলো কিন্তু রাগ হলো রুদ্রর ওপর। পেয়েছে টা কি লোকটা। ফুসকা খেতে আসছি আর খেতে দিচ্ছে না। ভেবেই চোখ,মুখ কুঁচকে সটাং সটাং পা ফেলে রুদ্রর দিকে এগিয়ে গেলো। নয়ন এতো ডাকলো তবুও থামলো না। রুদ্রর সামনে গিয়ে চোখ, মুখ শক্ত করে বললো,

— আপনি ফুসকা খেতে দিচ্ছেন না কেনো? মামা কে না করছেন কেনো? মনে হচ্ছে আপনার টাকা দিয়ে ফুসকা খাবো। এই যে শুনুন আমার বাবার পেনশনের টাকা এগুলো। এগুলো দিয়ে আমি ফুসকা খাবো,ঝালমুড়ি খাবো,চকলেট খাবো আপনার টাকা তো খরচ করছি না তাহলে আপনার গায়ে ফোস্কা পড়ছে কেনো ??

— নয়ন গাড়িতে বসো আমি পৌঁছে দিচ্ছি বাসায়। বললো রুদ্র।

নয়ন চুপচাপ গাড়িতে ওঠতে নিতেই হৈমী নয়নের হাত চেপে ধরে বললো,
— ঐ শালী তোরে ওঠতে বলবো আর তুই ওঠবি।
কথাটা শুনে রুদ্রর মাথায় যেনে রক্ত ওঠে গেলো। এটুকুন মেয়ের এ কি ভাষা সুখনীড়ের বাচ্চা রা এসব ভাষা শুনলে এগুলোই শিখবে। নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে হৈমীকে তাঁর দিক ঘুরিয়ে গালে থাপ্পড় লাগিয়ে দুগাল চেপে ধরে বললো,
— চুপচাপ গাড়িতে বসো তোমার মতো বেয়াদব কে এভাবে ছাড়া অন্য কোন উপায়ে বলা যায় না।
সাদমান বললো,
— রুদ্র মানুষ দেখছে ছাড় ওকে।
রুদ্র ছেড়ে দিলো হৈমী ঠোঁট ফুলিয়ে কেঁদে ওঠলো। নয়ন হৈমীর হাত টেনে ভিতরে বসালো। আবির পুরো দুই ব্যাগ ভালোমানের ফাস্টফুড খাবাড় এনে সাদমানের হাতে দিলো। সাদমান সেগুলো নিয়ে গাড়িতে ওঠে বসলো রুদ্র ওপাশ দিয়ে গাড়িতে ওঠে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলো।
.
নয়নের বাড়ির সামনে নয়নকে নামিয়ে দিলো৷ এক ব্যাগ খাবাড় নয়নকে দিয়ে সাদমানও নেমে পড়লো সেখানে। রুদ্র পিছন দিক চোখ ওল্টে চেয়ে বললো,
— সামনে আসো।
— আসবো না। আপনি আমাকে মেরেছেন। যাবো না আমি এখানেই বসে থাকবো৷
— চুপচাপ সামনে আসো। ধমকে বললো রুদ্র।
সাদমান বাইরে থেকে করুন গলায় বললো,
— পিচ্চি বনু রাগ করেনা সামনে যাও।
হৈমী ঠোঁট ফুলিয়ে মিনমিন স্বরে কাঁদতে কাঁদতে সামনে গিয়ে বসলো।
রুদ্র নয়নের বাড়ির সামনে থেকে গাড়িটা বেস কিছুদূর নিয়ে ব্রেক করলো। যতোই কাছাকাছি না থাকার চেষ্টা করুক তবুও বাধ্য হয় কাছাকাছি আসার।গভীর এক শ্বাস ছেড়ে গম্ভীর গলায় হৈমীকে বললো,
— এদিক ঘুরো।
— ঘুরবোনা। আপনি আমায় মেরেছেন আপনি খুব খারাপ একটা লোক।
— আই সেইড ঘুরো এদিকে। (ধমকের স্বরে)
চোখ,মুখ খিচে ঘুরলো রুদ্রর দিকে। রুদ্র কেমন এক চাহনীতে তাকালো। এক ঢোক গিলে তাঁর ডান হাত বাড়িয়ে হৈমীর বা গালে আলতো করে স্পর্শ করলো।
কেঁপে ওঠলো হৈমী। ব্যাথায় গালটা টনটন করে ওঠলো। চোখ জোরা বুজে ফেললো সে ঠোঁট জোরা কাপছে তাঁর। এ দৃশ্য দেখে চোখ সরিয়ে হাতও সরিয়ে নিলো রুদ্র সিটে হেলান দিয়ে নিজের চোখ দুটো বন্ধ করে ফেললো।

চলবে।
প্রিয় পাঠক,পাঠিকা আপু এবং ভাইয়ারা ভুলগুলো ধরিয়ে দেবেন দয়া করে।এবং গঠনমূলক মন্তব্য করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here