ভালোবাসার ফোড়ন ২ পর্ব ৯

0
1027

#ভালোবাসার_ফোড়ন_২
#মিমি_মুসকান
#পর্ব_৯

আজ দাদি’র সাথে এসেছি নতুন স্টুডেন’র বাসায়। তাদের বাসা আসলেই অনেক দূর।‌ আসবার আগে দুটো সরু গলি পেরিয়ে এলাম। গলি গুলো নিস্তব্ধ ছিল প্রায়, কিন্তু এখন বিকেল। এসময়ও কোন কিছু নিস্তব্ধ থাকে এটা ভেবেই অবাক লাগছে। যাই হোক আজ অফ ডে, ভার্সিটি অফ ছিল বিধায় আসতে পারলাম।

দাদি আর আমি দুইজনেই সোফায় বসে আছি। একটা ৭ তলা ভবনের ৫ম তলায় থাকে তারা। পুরো ফ্লাট নিয়েই নাকি থাকেন। দেখে মনে হচ্ছে তারা বেশ সচ্ছল! আমাদের সামনে কিছু নাস্তা রেখে গেল একটা মেয়ে, হয়তো এখানকার কাজের মেয়ে। এটাই হবে, তার ধরন দেখে তাই মনে হচ্ছে। নাস্তা দেবার সময় সে বলে গেল,

“খালাম্মা আসছে! আপনাদের চা খেতে বলেছে!

বলেই সে চলে গেল। আমি আর দাদি বসে আছি। মাঝে মাঝে দাদি দু একটা কথা বলছে আর আমি মাথা নাড়ছি। এরা নাকি তার পরিচিত। খুব ভালো মানুষ তবে তাদের ছেলেটাই একটু দুষ্টু!
কিছুক্ষণ পর একটা ভদ্রমহিলা এলেন। বেশ সাজগোজ করেই এলেন। তার শাড়ির আঁচল ধরে পেছন পেছন একটা ছেলে এলো। ছেলেটা দেখতে বেশ সুন্দর! এতো সুন্দর ছেলে হয় এটা ভেবেই আমি বেশ অবাক। জানি না বড় হলে কতো সুন্দর হবে! না এসব ভাবা ঠিক না।

ভদ্রমহিলা হেসে বসলেন আমাদের সামনে অতঃপর বললেন,
“দাদি চা খেয়েছেন!

“খেয়েছি মা! আরে দাদু মনি তুমি এসো আমার কোলে এসো!

ছেলেটা হেসে দাদি’র কোলে উঠে গেল। ভারী মিষ্টি হাসি তার। দাদি বললেন,
“অর্ণ কে পড়ানোর ব্যাপারে কথা বলেছিলাম না, এই হলো আমার সেই নাতনি। অনেক ভালো পড়ায়!

“হ্যাঁ আমি জানি তুহিন কেও তো পড়াও তুমি!

“হুম!

“তুহিন তোমার ব্যাপারে অনেক প্রশংসা করেছে। তার মাও বলেছে বেশ ভালো পড়াও তুমি, কিন্তু কথা হলো আমার ছেলে যে খুব দুষ্টু। তাকে সামলানো যে আসল ব্যাপার!

আমি কিছু বলব তখন’ই অর্ণ মুখ ফুলিয়ে বলল,
“মাম্মাম! এটা ঠিক না তুমি আমাকে অপমান করছো! নতুন মিস’র সামনে এসব কি বলছো তুমি!

অর্ণ’র কথা বলার ভঙ্গি দেখে আমি না পেরে হেসে দিলাম। সত্যি বেশ মিষ্টি সে। অতঃপর তাকে পড়ানো ঠিক হলো। ২ দিন পর থেকে আসবো পড়াতে। তবে বাসা অনেক দূর, আসতে আসতে অন্ধকার হয়ে যাবে। কিন্তু কোনো উপায় নেই করতেই হবে। সামনেই আবার পরিক্ষা! পরিক্ষার জন্য ও টাকা লাগবে। কিছু হয়তো জমানো আছে কিন্তু সেটা দিয়ে হবে না।

রাস্তা দিয়ে আমি আর দাদি হাঁটছি। গন্তব্য এখন বাসা! তখন দাদি আমাকে বলল,
“কি ভাবলি পড়াবি তো!

“হুম পড়াবো।

“দেখ বাসা কিন্তু অনেক দূরে!

“সমস্যা নেই, পারবো।

“এই বয়সে অনেক ধকল করিস রে তুই মেয়ে, একটু বিশ্রামও নিস।

“নেই তো দাদি আম্মা!

“কোথায় নিস, একটু ভালো মতো খাওয়া দাওয়া করিস না। আমার পক্ষে ও তো সম্ভব হয় না তবুও তো তোকে বলি যেতে কিন্তু তুই! অনেক দেমাক রে মেয়ে তোর।

দাদি’র কথায় আমি হেসে বলি,
“আমার তো কোন মান সম্মান নেই দাদি, একটু আত্নসম্মান’ই থাকতে দাও না!

দাদি আমার কথায় হেসে মাথায় হাত রাখেন!
.
পরদিন ভার্সিটিতে..
ভয় লাগছে এটা সত্য, কিন্তু আজ নিতি’র দেখা নেই। হয়তো আজ আসে নি! মনে হচ্ছে আহিয়ান’র উপর রেগে আছে যার কারণে আজ আসে নি। কারন আজ আহিয়ান এসেছে! আমি দেখেছি তাকে, আকাশ ভাইয়া এর মাঝে এসে আমার সাথে দেখা করে গেছে। কিন্তু সেদিন কার ব্যাপারে কোন কথা বলে নি। ভালোই হয়েছে কিছু বলে নি। না বলা টাই ভালো!

ক্লাস শেষ করে বাইরে বের হয়েছি। কিছুক্ষণ আগেও বেশ বৃষ্টি হয়েছে, কিন্তু এখন পুরো আকাশ শান্ত! স্থির, নীল,‌নিশ্চুপ! কেউ দেখলে বলবে না এতক্ষণ আকাশ অস্থির ছিল। রাস্তার দিকে তাকিয়ে দেখি কিছু কিছু জায়গায় পানি জমে গেছে। আমি একপাশ দিয়ে হাঁটতে শুরু করি। হুট করেই একটা গাড়ি আমার পাশ দিয়ে খুব জোরে গেল, যার ফলে রাস্তায় জমে থাকা ময়লা পানি গুলো সোজা এসে আমার গায়ে পড়ল।‌

আমি হা হয়ে স্থির ভাবে দাড়িয়ে হয়ে গেলাম। কি হলো এটা? গাড়িটা থেমে গেল সেই আওয়াজ পেয়েছি।‌ পেছনে ফিরে তাকাতেই দেখি গাড়ির কাঁচ নিচে নামিয়ে নিতি আমাকে দেখে হাসছে।‌ হয়তো তার সাথে টিনা আর আনিকাও আছে। নিতি গাড়ি আবারো ব্যাক করে আমার সামনে এসে বলল,

“ইশ! পুরো জামা নষ্ট হয়ে গেল তোমার। কাঁদা, ময়লা পানি ছিটে বিচ্ছিরি অবস্থা! নাহলে আমার গাড়িতে করে লিফট দিতাম তোমায়!

ওপাশ থেকে টিনা বলল,
“ওকে কিছু টাকা দিয়ে দে, নতুন জামা কিনে নেবে!

“ঠিক বলেছিস!
অতঃপর নিতি হেসে আমার দিকে কিছু টাকা ছুড়ে মারল। আমি চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। আনিকা হেসে বলল,
“হায়রে বেচারি!

নিতি গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে বলল,
“তোমার যোগ্যতা এটা অবদি,‌ যোগ্যতার‌ বাইরে কিছু করতে গেলে মুখ থুবড়ে পড়বে। তখন অবস্থা এর চেয়েও খারাপ হবে!

বলেই তারা চলে গেল। নিঃশব্দে চোখ থেকে নোনা জল গড়িয়ে পরল। ইচ্ছে করছিল কিছু বলতে কিন্তু বললে যদি এর থেকেও খারাপ কিছু করে তখন.. সব কিছু না ভেবে কথা বললে পরিনাম ভয়াবহ হবে।

নিচের দিকে তাকিয়ে দেখি টাকা গুলো উড়ছে। হাজার টাকার নোট! মানুষের ভাগ্য কি ভয়াবহ, আমি টাকার জন্য এতো কষ্ট করি আর তারা সেই টাকা মানুষের দিকে ছুঁড়ে মারে। টাকার কোন দাম নেই তাদের কাছে। কিন্তু এই টাকা আমি নিতে পারি না। আর এভাবে রাস্তায় ও ফেলে দিতে পারি না, তাহলে যে টাকার অপমান হবে।

অতঃপর টাকা গুলো উঠিয়ে নিলাম। সামনেই একটা মসজিদ পেলাম সেখানে দান বক্সে টাকা গুলো রেখে দিলাম। বাসায় আসছি, আশপাশের মানুষজন আমাকে দেখছে আর হাসছে। কানে কানে কথাও বলছে আমাকে নিয়ে অথচ তারা কেউই আমার সম্বন্ধে কিছু জানে না। জানে না কেন হলো এমন! মানুষ এমন’ই! কোন কিছু হলে সবাই হাসতে থাকে কিন্তু কখনো তার পিছনের কারন টা খুঁজে না। এভাবে তো সবকিছুতে তাদের আগ্রহ থাকে কিন্তু জনসম্মুখে কখনো কাউকে ছোট করতে দেখলে তাদের মজার শেষ থাকে না!

বাসায় এসেই দ্রুত ওয়াশরুম এ ঢুকে পড়লাম। ঢুকরে কেঁদে উঠলাম! হাঁটু গেড়ে নিচে বসে কাঁদতে থাকলাম কিছুক্ষণ। মাথা ব্যাথা শুরু হয়ে গেল। সমস্যা এটাই কিছুক্ষণ কাঁদলেন মাথা ব্যাথা করে। না এভাবে আর বসে থাকা যায় না, উঠতে হবে। গোসল সেড়ে বের হয়ে নিলাম। আজ আর কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না। ইচ্ছে করতে একটু ঘুমাতে। মনে হচ্ছে জ্বর আসবে আমার!
ভাবলাম আজ একটু দেরি করেই যাবো পড়াতে। এই ভেবে বিছানায় শুয়ে পড়লাম। কখন যে চোখ লেগে এলো বুঝতে পারলাম না‌।

চোখ খুলতে পারছি না, মাথায় অসহ্য ব্যাথা করছে। চোখ দুটো জ্বলছে। ঝাপসা ঝাপসা চোখে তাকিয়ে দেখি দাদি আমার পাশে বসা। হাত বুলাচ্ছে আমার মাথায়। মাথায় হয়তো জল পট্টি দেওয়া। যা ভাবলাম তাই, জ্বর এসেছে আমার। পাশ থেকে দাদা’র গলার আওয়াজ পেলাম। তিনি বলছেন,

“দাদু ভাই এখন কেমন লাগছে!

“আমি ঠিক আছি দাদু ভাই!

“মরন! কিসের ঠিক রে তুই ছেমড়ি। ১০২ ড্রিগ্রি জ্বর তোর জানিস। কিভাবে বাধালি এই অসুখ লা। রিনু’র মা আমাকে ফোন না করে বললে আমি তো কিছুই জানতে পারতাম না। পরে একা ঘরে মরে পরে থাকতি!

আমি হেসে উঠে বসলাম। বলে উঠি,
“মরে একা পড়ে থাকলে কি হতো, মরার পর তো তোমরা এসে আমার জন্য দোয়া পড়তে। আশপাশ থেকে অনেক মানুষ আসতো তখন কি আর একা থাকতাম!

“ছেমড়ির কথা শুনেছো তুমি!

“দাদু ভাই, উঠছো কেন তুমি। শুয়ে থাকো তোমার শরীর ভালো না।

“আমি ঠিক আছি দাদু ভাই!

“মরন! বুড়ো টা কিভাবে কথা বলছে দেখ। একটু ধমক দিতে পারো না। বলতে পারো না ডাক্তার বলে গেছে ওকে শুয়ে থাকতে। আর তুমি ঔষধ এনেছো। আনলে ঘর থেকে চারটে ভাত নিয়ে আসো। তোমার দাদু ভাই কে খাইয়ে উদ্ধার করো আমায়।

আমি হেসে উঠি, দাদি রাগ আর ভালোবাসা দুটোই দেখাচ্ছে আমাকে। মা বাবার পর প্রথমবার এতো ভালোবাসা পেলাম কারো কাছে। আমার দাদা দাদী খুব ছোট বেলায় মারা গেছে। আর মা তো ছিল অনাথ। তবে বড় মা’র মা বাবা ছিল কিন্তু তারা কখনো আদর করে নি আমায়। এখনো মনে আছে, আমি একবার নানু বাড়ি গিয়েছিলাম বাবা’র সাথে। তখন নানু অনেক বাজে ভাষায় গালিগালাজ করেছিল আমায়। আমার মরা মাকেও ছাড়ে নি। এরপর বাবা আর কখনো তাদের বাসায় নিয়ে যায় নি আমাকে। আর আমি ও যাবার সাহস করে নি। যখন তারা আসতো আমাদের বাসায় আমি সবসময় তাদের থেকে দূরে থাকতাম। চলে যেতাম বাবা’র কাছে আর রাতে তার সাথেই বাড়ি ফিরতাম!

কিন্তু এরা, এরা দুজন খুব ভালোবাসে আমায়। আমাকে চিনে না জানে না তবুও কতো ভালোবাসে আমায়। আগলে রাখে নিজের কাছে। জানি না এভাবে আর কখনো কেউ ভালোবাসবে কি না আমায়।
.
জ্বরে ৩ দিন ভুগলাম। মিতু আপু রাতে আমাকে আগলে রাখতো আর দাদা দাদি দিনে। এভাবেই ৩ দিন কাটল। ইতি আমার বাসার ঠিকানা জানে না, নাহলে নিশ্চিত আসতো আমাকে দেখতে! নতুন টিউশনিতে যাবার কথা ছিল গতকাল থেকে। জ্বরের কারনে যাওয়া হয় নি। দাদি সবাইকে ফোন করে বলে দিয়েছে আমার জ্বর তাই আসতে পারি নি। কিন্তু এভাবে তো আর চলে না। ঘরে কিছু নেই, এতোদিন দাদি’ই আমাকে খাইছে কিন্তু এভাবে কি আর চলা যায়।

আজ বের হলাম ভার্সিটির উদ্দেশ্যে। ইতি আমাকে দেখেই মুখ ঘুরিয়ে নিল। শরীর এখনো বেশ দুর্বল আমার। মুখ চোখ সব শুকিয়ে গেছে। আমি ইতি’র পাশে বসে বলি,

“জানিস জ্বরে ৩ দিন ভুগেছি আমি!

“ভালো হয়েছে, তুই মরলেও তো কোন খবর পাবো না আমি।

“অনেক রেগে আছিস মনে হচ্ছে।

“থাকবো না। গত ৩ দিন তোর কোন খবর নেই। আমার ফোন ও সাথে রাখিস না যে তোর খোঁজ নেব। জানিস কি চিন্তে হচ্ছিল আমার। ভাবলাম আর হয়তো কখনো তোর খবর’ই পাবো না।

“আচ্ছা দেখ মরে যায় নি তো।

“যেতি আমার কি তাতে।

আমি ওর ঘাড়ে মাথা রেখে বলি,
“আমি মরে গেলে কষ্ট করবে কে শুনি!

ইতি আমার মাথায় হাত রেখে বলে,
“আজ না আসলেও পারতি। শরীর গরম আছে এখনো তোর।

“আরে এটা তাপমাত্রা।

“কোনটা তাপমাত্রা কোন জ্বর চিনি। মানুষ আমি!.

“আমি বুঝি গরু কিনবা ছাগল বলেছি তোকে।

“চল উঠ।

“কোথায়?

“কিছু খাবি।

“না আমি খেয়ে এসেছি।

“হ্যাঁ জানি কি খেয়েছিস আয় আমার সাথে।

“ইতি থাম না।

“তুই উঠবি।

অতঃপর আমাকে উঠিয়ে নিয়ে গেল ভার্সিটির ক্যান্টিনে। আমার কিছু খাবো না বলে খুব জোর করলাম ওকে। কিন্তু সে কিছুতেই কিছু শুনলো না। জোর করে খাইয়ে দিল আমাকে। অতঃপর একটা পেরাসিটামল খাইয়ে দিয়ে বলল,

“আজ ক্লাস করা লাগবে না, চল ক্যাম্পাসে বসে থাকি গিয়ে।

“সামনে পরীক্ষা।

“একদিন ক্লাস না করলে ফেল করবি না।

“আমি ৩ দিন ক্লাস করে নি।

“চুপ কর তো। চল!

অতঃপর আমি আর ইতি বসে গল্প করতে লাগলাম। ভালোই কথা বলছি দুজন। হঠাৎ ইতি আমাকে জিজ্ঞেস করল,

“জানিস একটা কান্ড ঘটেছে।

“কি কান্ড?

“সেদিন আকাশ ভাইয়া আমার কাছে এসে তোর শশুড় বাড়ি’র খবর জানতে চাইল।

“কিহহহ?

“আমিও এমন’ই অবাক হলাম। খানিকক্ষণ পর মনে পড়ল তারা হয়তো জানে তোর বিয়ে হয়ে গেছে তাই একথা বলল।

“তুই কি বললি?

“বললাম আমি তোর বাসার খবর জানি না। অতঃপর সে চলে গেল।

“হঠাৎ সে এসে জিজ্ঞেস করল কেন।

“তোর সাথে নাকি আবারো নিতি ওরা কি করেছে।

“সে কিভাবে জানল।

“জানে না হয়তো ডাউট করছে। আচ্ছা সত্যি’ই কি কিছু করেছে।

“ওদের কাজ’ই এটা। আর যদি করেও থাকে করুক। আমি এতো ওদের কথা ধরি না।
.
আজ আর ক্লাস করা হলো না। বের হবার সময় নিতি ওদের দেখলাম। আমাকে দেখে তারা হেসে দিল। আমিই কোন প্রতিক্রিয়া করলাম না। আকাশ ভাইয়া এসে জিজ্ঞেস করল তারা কিছু করেছে কি না। আমি না বলে দিলাম। দরকার কি শুধু শুধু ঝামেলার।

টিউশনি তে গেলাম। সবাই শরীরের কথা জিজ্ঞেস করল। বললাম ভালোই আছি এখন। রিনু’র মা একটু রেগেই ছিলেন। বললেন,

“ম্যাম ওর পরিক্ষা একটু খেয়াল করে পড়াবেন। আর বেতন টা এবার দেরি করেই দেবো।

“( আমি শুধু মাথা নাড়লাম )

কিন্তু তোহা আর তুহিন’র আম্মু আজ বেতন দিয়ে গেল। যাক কিছু টাকা হাতে পেলাম এটাই অনেক। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে তখন গেলাম অর্ণ কে পড়াতে। অর্ণ’র মা আমাকে এক কাপ চা আর কিছু বিস্কিট দিয়ে গেলেন। আমার শরীরের কথাও জিজ্ঞেস করলেন। অর্ণ আমার কপালে হাত দিয়ে বলল,

“ম্যাম তোমার জ্বর আইছে।

“এসেছিল!

“না এখনো আছে, তোমার কপাল তো গরম।

“এরকম সবার’ই থাকে।

“আমার ও থাকবে বুঝি!

“হুম। এখন পড়তে বসো!

অতঃপর অর্ণ পড়তে বসল। বলা বাহুল্য খুব ভালোই পড়ল সে। তাহলে তার মা কেন বলে সে পড়ে না। নাকি আজ প্রথম দিন বলে আমার কাছে খুব ভালো পড়েছে। আস্তে আস্তে হয়তো আর পড়বে না হতেও পারে।

অর্ণ কে পড়িয়ে বাইরে এসে দেখি পুরো রাস্তা ফাঁকা। দু একজন মানুষজন আছে, আর আছে কিছু ল্যাম্পপোস্ট। সেগুলোতে নিভি নিভি আলো জ্বলছে। আমি ব্যাগ টা শক্ত করে ধরে হেটে চলছি। সব কিছু বেশ শান্ত, বেশ নিরব। একটা মেইন রোড পেরিয়ে সরু গলি, সেটা পেরিয়ে আরেকটা মেইন’র এ এসে পৌঁছানোর পর আরেকটা সরু গলি। অতঃপর সেটা দিয়ে কিছুক্ষণ হাঁটার পর একটা মসজিদ। মসজিদ থেকে আরো ৫ মিনিট হাঁটার পর বাসায় এলাম। বাসায় এসেই বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। কিছু করতে মন চাইছে না এখন আর। কখন যে ঘুমিয়ে গেছি জানি না।

রাত ১২ টায় মিতু আপু জাগালো আমায়। জোর করে কিছু খাইয়ে দিল আমায়। অতঃপর ঔষধ খাইয়ে দিয়ে বলল,

“ঘুমিয়ে পড়!

কিন্তু আমার আর সেই রাতে ঘুম এলো না। কি মনে করে যেন ছাদে চলে এলাম। এতো রাতে ছাদে আসে টা হয়তো ঠিক না কিন্তু আমি এলাম। কেন জানি মন চাইলো আসতে। ছাদের গা ঘেঁষে একটা গাছ আছে। অন্ধকারে দূর থেকে দেখলে বেশ ভয়ংকর লাগে। মনে হয় যেন কোন দৈত্য দানব আমার দিকে ঝুঁকে আছে!

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here