ভালোবাসার ফোড়ন ২ পর্ব ৫

0
1043

#ভালোবাসার_ফোড়ন_২
#মিমি_মুসকান
#পর্ব_৫

রাতের আকাশের তাঁরা দেখতে বেশ চমৎকার লাগে। কিছু কিছু তাঁরা বেশ উজ্জ্বল দেখায় আর তাদের মাঝে থাকা চাঁদ টা যেন আকাশের পরিপূর্ণ একটা অংশ। তাঁরা সম্পর্কে আমার বিশেষ জ্ঞান নেই থাকার কথাও না। জানালা দিয়ে তাঁরা দেখছি আর মাঝে মাঝে ঘরে উঁকি দিচ্ছি। মিতু আপু রান্না করছে আর মুন্নি আপু ফোনে কিসব ঘাটছে। তার কানেও হেডফোন। এসব দেখে আহিয়ান’র কথা হুট করে মনে পড়ল। মুন্নি আপু আর তিনি একরকম। আচ্ছা তারা দুজনে সারাদিন কি দেখে ফোনে।

মিতু আপু রান্না শেষ করে উড়না দিয়ে হাত মুছতে মুছতে রান্না ঘর থেকে বের হলো। আমাকে দেখে হেসে বলেন..

“কি রে পড়া শেষ!

আমি হেসে মাথা নাড়লাম। আপু বলে..

“তাহলে চল ছাদে যাই যাবি!

“এক পায়ে রাজি চলো।

“মুন্নি তুই যাবি!

( মুন্নি আপু মাথা নেড়ে না বললো)

অতঃপর আমি আর মিতু আপু এটাই গেলাম ছাদে। রাতে ছাদে বসে থাকার মজাই আলাদা। দুজনেই ছাদে এলাম। রাতের অন্ধকারে ছাদের বর্ণনা দেওয়ার মতো কিছু নেই। শুধু ছাদের দরজার সামনে মাথার উপর একটা লাল লাইট জ্বলছে এই! এছাড়া একটা দোলনা আছে ছাদের এককোনে। এটা বেশ পুরোনো। তবে ছাদে একটা দোলনা বেশ অবাক করেছিলো প্রথমে আমায়। পরে দাদি থেকে জানলাম এটা নাকি দাদু তার জন্য এনেছিল। দুজনেই মাঝে মাঝে রাতে এসে এই দোলনায় বসত। এমন ভালোবাসা দেখতে ভালোও লাগে।

আমি আর মিতু আপু ছাদের এক পাশে গ্রিলের উপর বসলাম। এসবে আমার তেমন ভয় টয় নেই। কারন রাতের বেলা গাছে উঠে পেয়ারা চুরির অভিযোগে আছে আমার নামে। আর এটা সত্যি!
মিতু আপু দেখতে ভারি মিষ্টি আর সুন্দরী। আমার দেখা সেরা সুন্দরীর মধ্যে তিনি একজন। তবে মুন্নি আপুও সুন্দরী। কিন্তু মিতু আপুর চেহারা একটা মায়া আছে যা মুন্নি আপু’র মুখে তেমন একটা দেখা যায় না। মিতু আপু আকাশের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। আমি তাকে খোঁচা দিয়ে বলি..

“ব্যাপার কি একটু বেশি হাসছো যে আজকাল!

“হাসতে বুঝি কারন লাগে।

“অবশ্যই লাগে আর এরকম হাসির পিছনে কারন টা অনেক রহস্যময় লাগছে।

“কি রহস্যময় শুনি!

“রহস্য খোলাসা তো তুমি করবে।

“থাকলে তো করবো!

“আছে আছে! জলদি বলো ছেলেটা কে?

“দিন দিন পেকে যাচ্ছিস!

আমি দাঁত বের করে হেসে বলি…
“এখন তো পাকার বয়স তাই না।

“দেবে একটা। বড়দের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় ভুলে গেলি নাকি।

“আরে এতো লুকিচুরি কিসের। বলে দাও। আমাকে বলবে না তো কাকে বলবে।

“হ্যাঁ এটাও ঠিক। তোকে না তো কাকে বলবে। মুন্নি তো আমার সাথে ঠিক মতো কথাও বলে না আর না ওকে কিছু বলে শান্তি পাই।

“তাহলে দেখা হলো কবে হুমম!

“প্রতিদিন’ই হয়। আমাদের অফিসে’ই চাকরি করে।

“ভালো টা প্রথম কে বাসল শুনি।

“সেই বললো।

“নামটা কি বলো!

“জহির!

“ওহ আচ্ছা মিতু আর জহির! খারাপ না!

“বেশি বলছিস। তিনি আমার সিনিয়র!

“ওহ আচ্ছা তাহলে এই ব্যাপার!
বলেই মুখ টিপে হাসলাম।

আপু মুখ ভেংচি দিয়ে বলল..
“যা তোকে আর বলবো না।

“এই না না আপি বলো না। কি হলো?

“কি হবে?

“মানে সে বলার পর তুমি কি বললে।

“কিছুই না!

“কিছুই না.. যাহ এটা কোন কথা বললে।

“কেন?

“ভালো তো তুমিই বাসো তাহলে বললে না কেন!

“তুই কখনো কাউকে ভালো বেসেছিস!

“হ্যাঁ বেসেছি না! বাবা কে, আম্মু কে তোমাকে ইতি কে!

আমার মাথায় একটা টোকা মেরে..
“আমি এই ভালোবাসার কথা বলছি না।

“তাহলে..

অতঃপর আমার মুখ থেকে একটা নিচে হাত রেখে বলল..
“এখানকার ভালোবাসার কথা বলছি।

“কেন এই ভালোবাসা ছাড়া বুঝি চলা যায় না।

“যাই না কে বললো। তবে এখানে একজন মানুষ থাকলে জীবন চলার পথ টা খুব সহজ হয়!

“তাহলে আমি কঠিন পথেই বাঁচতে চাই আপু। এসব আমার ভাগ্যে নেই।

“ভাগ্য কি আছে সেটা না আমি জানি আর না তুই।

অতঃপর আমার থিতুনি তে হাত রেখে বলে..
“দেখবি তোর মতো এমন একটা মিষ্টি মেয়ের জীবনে এমন একজন মানুষ আসবে যে তোর সব কষ্ট ভুলে দেবে। খুব ভালো বাসবে তোকে।

আপুর কথায় একটা উপহাসের হাসি হেসে বলি…
“তুমি কথা ঘুরাচ্ছো আপি। তোমার কথা বলো না। কিছু বললে না কেন?

“একটু পরিক্ষা করছি।

“ভালোবাসলে বুঝি পরিক্ষা করা লাগে।

“হুম লাগে। স্বর্ণ কে যাচাই না করে তো আর পড়তে পারি না বল।

“তা কতোদিন যাচাই করবে শুনি!

“দেখি কতোদিন করা যায়। কিন্তু তুই দেখিস তোর জীবনে যেই মানুষটি আসবে সে তোর জন্য একদম পারফেক্ট হবে।

“তুমি একথা কেন বলছো।

“কারন তুই খুব মিষ্টি একটা মেয়ে, আর কপালে ভালো কিছুই থাকবে!

আপুর কথায় আকাশের দিকে তাকালাম। মনে মনে বললাম..
” আর ভালো। আমার জীবনে আমি যা কষ্ট দেখেছি এরপর আর কি যে দেখবো সেটাই ভাবছি। পরে কি যে হতে চলছে তার সম্পর্কে আমার কোন ধারনা নেই তবে সেটা যদি আগের থেকেও আরো খারাপ হয় তখন! তখন আমি একদম নিঃস্ব হয়ে যাবো। শেষ হয়ে যাবে এই দেহ, আমার স্বপ্ন, অতীত,‌ আমার অস্তিত্ব! ভবিষ্যতে কি চলছে তা কেউই জানে না তবে কিছু মানুষ তা আঁচ করতে পারে সেটা কি হবে ভালো না মন্দ। আমিও আঁচ করতে পারছি আমার ভবিষ্যত কিছু হতে চলছে আর তা হবে অনেক ভয়ানক! খুব ভয়ানক…
.
সকালে খাওয়া দাওয়া করে তৈরি হয়ে ভার্সিটির জন্য রওনা দিলাম। অতঃপর পৌঁছে ইতি কে খুঁজতে লাগলাম। ম্যাডাম গাছের নিচে বসে হাতের কলম মুখে দিয়ে মাথা চুলকাচ্ছে। আমি ওর ঘাড়ে একটা টোকা দিয়ে সামনে বসে বলি..
“কিরে বিজ্ঞানি নিউটন হবার শখ নাকি যে গাছের নিচে বসেছিস, যদি আপেল মাথায় পড়ে তা নিয়ে কি আবার নতুন করে গবেষণা করবি!

“গাধি এটা কি আপেল গাছ নাকি!

“না তবে ডাব গাছ হলে সেই হতো!

ইতি আমার গাল টেনে বলল..
“হ্যাঁ তুই ছাড়া আমার অমঙ্গল আর কে চাইবে বল। হারামি একটা!

“হারামজাদি হবে! হি হি হি..

“আসলেই। আচ্ছা এখন বল! সেদিন তো আর্ধেক বলে চলে গেলি এরপর কি হলো!

“হাম শোন…( অতঃপর বাকি টুকু বললাম )

সব কথা শোনার পর ইতি’র চোখ চড়াকগাছ। সে বড় বড় চোখ করে আমার দিকে তাকিয়ে বলল..
“কি বলছিস! ট্রেনের ছেলে গুলো আহিয়ান ভাইয়া আর তার বন্ধুরা ছিল।

“হুম হুম। বর্তমান পরিস্থিতি সেটাই তো বলছে

“আচ্ছা সত্যি কি তোর কোন প্রেমিক ছিল নাকি!

“কি বললাম তোকে এতোক্ষণ! আমি মিথ্যে বলেছি, আসলে ভয় পেয়েছিলাম। কিন্তু বলতে গেলে আকাশ ভাইয়া খুব ভালো মানুষ!

“হুম তা তো বটে!

“তুই এতো লজ্জা কেন পাচ্ছিস আবার

“কিছু না এমনেই!

বলতে বলতে হঠাৎ ইতি আমাকে ইশারা করে পেছনে দেখতে বলল। দেখলাম আহিয়ান আর তার বন্ধুরা আমাদের থেকে দূরে গোল হয়ে বসে গল্প করছে। আমি দেখছি একটা মেয়ে আহিয়ান’র গা ঘেঁষে বসে আছে। কিছুক্ষণ পর আবার তার ঘাড়ে মাথা রাখল। হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে এটা উনার প্রেমিকা। এর মাঝে ইতি মুখের ভাব ভঙ্গি পরিবর্তন করে বলল…

“ঢং!

“কে আবার ঢং করছে,কার ঢং!

“ওই যে নিতি দেখছিস না কিভাবে ঘেঁষে বসে আছে, আর ওই টিনা কে দেখছিস না আকাশের কতোটা কাছে। পারলে তার বুকের মাঝেই ঢুকে যায়!

আমি একবার এদিক মুখ করে আবার ইতি’র দিকে মুখ করে বলি..
“হ্যাঁ দেখালাম কিন্তু তাতে তুই এতো রেগে যাচ্ছিস কেন? প্রেমিকা আর প্রেমিকের ঘাড়ে মাথা রেখেছে এতে তোর এতো জ্বলছে কেন সেটাই বুঝছি না।

ইতি আমার কথা শুনে চুপ হয়ে গেল। অতঃপর আচমকা জোরে হেসে বলল..
“কি বললি তুই, প্রেমিক প্রেমিকা! হা হা!

“এতো হাসার কি হলো?

“এটা কখনো সম্ভব না। আহিয়ান ভাইয়া আর আকাশ পিউর সিংগেল এটা পুরো ভার্সিটি জানে।

“তো কি আমি তো আর জানি না!

“আচ্ছা শোন আমি তোকে বলছি। ওই যে দেখছিস..

“কে নাহান ভাইয়া!

“হ্যাঁ তার আনাফ ভাইয়ার মাঝে বসা মেয়েটা আনিকা। ছোট খাটো মেয়ে তাই সবার আদরের। আহিয়ান ভাইয়া তো ছোট বোনের মতো আদর করে।

“তার বুঝি বোন নেই।

“আছে, বড় এক বোন আছে আয়ানা। শুনেছি সে বিবাহিত আর একটা বাচ্চা ও আছে।‌

“এতো খবর জানলি কিভাবে?

“এই শহরের এমন কেউ নেই যে তাদের চিনে না। তার বাবা এই শহরের খুব বড় একজন বিজনেসম্যান! কবীর চৌধুরী! তার বড় মেয়ে আয়ানা আর ছোট ছেলে আহিয়ান। শুনেছি আয়ানা নাকি পড়াশোনা শেষ করে বাবার অফিসে তাকে সাহায্য করছে।

“মা নেই!

“আছে তো। আর আকাশের পাশে থাকা মেয়েটা ( বলার সময় দাঁতে দাঁত চাপল। মনে হচ্ছে প্রচুর রাগ আছে মেয়েটার উপর ) টিনা!

“ওহ আচ্ছা! আর আহিয়ান ভাইয়ের পাশের মেয়ে..

“নিতি, তাই তো!

“তুই জানলি কিভাবে?

“নাম শুনেছি আমি।

“হুম এখন শুনে রাখ, নিতি আপু আহিয়ান ভাইয়া কে অনেক ভালোবাসে। যদি তারা ৩ জন’ই ভাইয়ার জুনিয়র তবে আমাদের সিনিয়র। মানে তৃতীয় বর্ষের স্টুডেন। আহিয়ান ভাইয়ার দিকে কোন মেয়ে তাকালে তিনি সহ্য করতে পারেন না। যদিও তিনি খুব বড়লোক।

“তাহলে বলছিস আহিয়ান তাকে ভালোবাসে না।

“না!

“কেন?

“তিনি কোনের মেয়ের দিকেই তাকান না। একদম চুপচাপ একজন লোক। তবে জানিস তিনি কিন্তু ভার্সিটির ফার্স্ট বয়। খুব মেধাবী।

“আচ্ছা নিতি আপুর চেয়েও তো সিনিয়র মেয়ে আছে। তারা যদি কখনো আহিয়ান কে প্রপোজ করে..

“করে না বল অলরেডি করে ফেলেছে। আর তখন নিতি! বাপরে বাপ যা করলো মেয়েটার সাথে।‌ মেয়েটার মুখে পানি ছুঁড়ে মারল। অতঃপর চুলের মুঠি ধরে সবার সামনে অপমান করল। তবে এটা একবার না অনেকবার। শুধু বাপের টাকা আছে বলে বার বার বেঁচে যায়।

“আহিয়ান সব দেখল কিছু বললো না!

“আহিয়ান দেখবে কিভাবে, সে থাকতে কি করে নাকি এসব। আহিয়ান চলে গেলে সে এসব করে!

“বাহ মেয়েটার তো বেশ বুদ্ধি!

“বুদ্ধি না বল কু”বুদ্ধি!

“তাতে আমাদের কি! চল ক্লাসে যাই। কিন্তু একটা কথা..

“আবার কি?

“আমি তো এখানে আজ দু মাস পড়ছি। এতোদিন চোখে পড়ল না কেন?

“তারা ট্রিপ এ গিয়েছিল। আবার শুনেছি এর মাঝে নাকি তার বোনের ছেলে অসুস্থ ছিল।‌ সেজন্য আহিয়ান আসে নি। আর সে আসেনি বলে তার কোন বন্ধুও আসে নি।

“অনেক জোড়ালো বন্ধুত্ব দেখছি!.

“হুম তাই। চল এখন..

অতঃপর দুজনেই উঠলাম। ক্লাস এ গিয়ে ক্লাস করতে লাগলাম।‌ অতঃপর ক্লাস শেষ হলে দু’জনেই একসাথে বের হলাম। সিঁড়ি দিয়ে নামতে যাবো তখন হুট করে কেউ আমাকে পিছন থেকে কেউ আমার ঘাড়ে হাত রাখল। আমি পিছনে ফিরে তাকে দেখে বেশ অবাক হলাম। ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম..

আগাম একটা করে বেশি পর্ব পড়তে চাইলে আমাকে ফ্লো করুন ✊?️

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here