ভালোবাসার ফোড়ন ২ পর্ব ১৮

0
1027

#ভালোবাসার_ফোড়ন_২
#মিমি_মুসকান
#পর্ব_১৮

আমি চোখ বড় করে করে সামনে তাকিয়ে আছি। আমার ঠিক সামনে বরাবর বসে আছে আহিয়ান! অনেকদিন পর আজ দেখলাম তাকে। সেদিনের ওই ঘটনার পর কখনো তার মুখোমুখি হয় নি। আমি তাকে এখানে দেখে বেশ অবাক। কিন্তু উনি! উনি অবাক হওয়া তো দূর, উনি হয়তো জানেন ও না তার আশপাশ কি চলছে। তিনি খুব মনোযোগ দিয়ে তাকিয়ে আছে তার ফোনের দিকে। পারলে হয়তো তার ভিতর’ই ঢুকে পড়ে।

আমি পানির বোতল টা ব্যাগে রেখে ভ্রু কুঁচকে উনার দিকে তাকিয়ে আছি। কেন জানি মনে হচ্ছে এটা আমার কল্পনা! আমি একটু উঁকি মেরে উনাকে দেখার চেষ্টা করছি। যদিও উনার মুখের সামনে ফোন তবুও আমি উনাকে চিনতে পরেছি। কারন উনার এই ভঙ্গি টা আমার বেশ পরিচিত। এর আগেও তাকে এমন ভাবে দেখেছি আমি।

আমি একবার এদিক একবার ওদিক করে উনাকে দেখছি। কিন্তু উনি পুরো মনটাই ফোনের ভিতর। এর মাঝেই হঠাৎ কেউ আমাকে ডাকে। আমি চমকে উঠে তাকিয়ে দেখি আকাশ ভাইয়া! তিনি আমাকে দেখে বেশ অবাক। আকাশ ভাইয়া বলে উঠে,

“নিহা তুমি এখানে!

আকাশ ভাইয়া’র আওয়াজ এ আমি হতবুদ্ধি’র মতো আহিয়ান’র দিকে তাকাই। আকাশ ভাইয়া’র মুখে আমার নাম শুনে হয়তো তিনি আমার দিকে তাকালাম। দু’জনের চোখাচোখি হয়ে গেল। আমিও নিশ্চিত হলাম এটা আমার স্বপ্ন না সত্যি! আমি অবাক হয়ে চোখ বড় বড় করে তাকে আছি আর উনি চোখ ছোট ছোট আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

হঠাৎ’ই উঠে চলে গেলেন। আমার কাছে বিষয়টা অদ্ভুত লাগল। সেদিনের কথা মনে পড়ল। একারণেই কি আমাকে দেখেই কি উঠে চলে গেলেন তিনি। আমি মাথা নিচু করে বসে রইলাম। আকাশ ভাইয়া আমার সামনে বসে বলল,

“কেমন আছো অনেক দিন পর দেখা!

আমি মাথা তুলে হেসে বলি,
“ভালো ভাইয়া, আপনি!

“হুম ভালো। তা কোথায় যাচ্ছো তুমি?

ভাইয়ার কথা শুনেই বুক মোচর দিয়ে উঠল। এখন’ই জিজ্ঞেস করবে তোমার সাথে সে কোথায় যার সাথে তুমি থাকো। তার সাথে কি এখন আর থাকবে না। গ্রামে যাচ্ছি শুনলেই নির্ঘাত বলবে যে “গ্রামে কেন একা যাচ্ছো! না জানি আর কতো কি?

আমি এসব ভাবছিলাম তখন ভাইয়া বলে উঠল,
“গ্রামে যাচ্ছো!

আমি থমকে গেলাম। অতঃপর মাথা নেড়ে নিচু করে রইলাম। মিথ্যে বলার কারনে নিজের মধ্যে অপরাধ বোধ জাগছে। তারা এতোটাও খারাপ ছিল না যতটা খারাপ আমি ভেবেছিলাম। ভাইয়া সিটে হেলান দিয়ে বসে আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠেন,

“সত্যি তোমার সাহস আছে, যে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে একা থাকতে শহরে এলে আবার সেই গ্রামেই যাচ্ছো! কেন?

আমি হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম। ভাইয়া আমার তাকিয়ে হেসে বলল,

“মানুষ কে অবাক করতে আমার দারুন লাগে। আর বিশেষ করে তুমি! তুমি অবাক হলে চোখ গুলো গোল আলুর মতো বড় করে ফেলো।

আমি ভ্রু কুচলাম! ভাইয়া এবার জোরে হেসেই বলল,
“চিল! আমি জানি সব। তুমি মিথ্যে বলেছিলে সেদিন আর আজ তা ধরা খেয়ে গেল। তাই না! হা হা হা।

অবাক স্বরে,
“আপনি কি করে মানে!

“আমি তো এটা ভাবিও নি যে তুমি একা থাকো। এটা তো শুধু আহিয়ান ভেবেছিল, যখন প্রথমবার তোমাদের বাসার দাদু’র সাথে কথা বলেছিলো। কথায় কথায় তিনি নাকি বলেছিলেন, “মেয়েটা বড্ড কষ্ট করে বুঝলে, দিন রাত খাটাখাটুনি করে বেঁচে থাকতে। খুব মায়া লাগে মেয়েটার প্রতি যদি কিছু করতে পারতাম”!

ভাইয়া আবারো এক দফা হাসে অতঃপর বলে,
“বুঝলে নিহা! আহি ভেবেছিল তোমরা হয়তো লিভ ইন এ থাকো। কিন্তু লিভ ইন এ থাকার জন্য ও তো একজন কে দরকার হয়, সেইজন তো তোমার নেই। তবুও সেদিন আহিয়ান কিছু জিজ্ঞেস করে নি। শুধু শুনল, তারপর সেদিন আমি আর আহি গেলাম চা খেতে আরে যেদিন নিতি তোমায় সরি বলল সেদিন! সেদিন বসে বসে কথার ছলে তোমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তখন সব জানলাম!

ভাইয়ার কথা শুনে আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে রইলাম! ভাইয়া বলে উঠে,

“আরে এটা কি, মন খারাপ করছো কেন। এটাতো স্বাভাবিক, একজষ অচেনা লোক কে তুমি তোমার সব ইনফরমেশন দিবে না। কিন্তু নিহা তুমি একটা কাজ ঠিক করো নি। আমি বার বার তার কথা জিজ্ঞেস করার পরও তুমি সত্যি টা বলো নি! নাকি আমাদের বিশ্বাস করো নি।

“ছিঃ ছিঃ ভাইয়া এটা কি বলছেন। আসলে সত্যি টা বলার সুযোগ পায় নি। আপনারা খুব ভালো মানুষ, অনেক সাহায্য করেছেন আমায়।

“জানো নিহা আমি যখন এই কথাটা শুনলাম তখন সে কতো হাসলাম। আমি তো ভেবেই নিয়েছিলাম তুমি একজন বিশেষ কারোর জন্য বিয়ে আসর থেকে পালিয়ে গ্রাম থেকে শহরে চলে এসেছো। কিন্তু না আমি ভুল ছিলাম। সব মেয়েরা বিশেষ কারো জন্য আসে না। নিজের জন্যও কেউ কেউ আসে।

আমি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম। ভাইয়া একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন,
“ব্যাপার কি এখন তাহলে চলছ যাচ্ছো কেন? কোন সমস্যা! আরে আমিও না, জিজ্ঞেস করছি সমস্যা আছে কি না, যেখানে তোমার জীবন পুরোটাই সমস্যা’য় ভরপুর। একা মেয়ে একটা সমাজে বেঁচে থাকা চারটে খানি কথা নয়। কিন্তু তাই বলে আবারো গ্রামে চলে আসছো।

“মা বাবা কে খুব মনে পড়ছে ভাইয়া! কি করবো বলো,কখনো থাকি নি তাঁদের ছাড়া।

“মেয়েরা যেমন মায়াবী হয়, তেমন নিজেরাও মায়া’য় আটকে থাকে। বুঝতে পারছি! আচ্ছা শোন..

বলেই তিনি ব্যাগ থেকে একটা প্যাকেট বের করলেন। অতঃপর সেই প্যাকেট আমার হাতে দিয়ে বললেন,
“নাও!

“কি এটা?

“এটা তোমার, তোমার জিনিস তোমায় ফেরত দিচ্ছি।

“মানে?

“মানে এটাই নিহা, নিতি টাকা টা ফেরত দিয়ে দিয়েছে তবে তোমাকে দেবার সুযোগ হয়ে উঠেনি। ভেবেছিলাম ফিরে গিয়ে টাকা টা দেবো তবে ভালোই হলো এখানে তোমাকে পেয়ে।

“নিতি আপু টাকা দেয় নি আপনারা তার থেকে নিয়েছেন। আবারো ঝগড়া করেছেন।

“না এবার ঝগড়া করি নি, শুধু সিসি টিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখিছিলাম। এতেই কাজ হয়েছে। ওর অস্বীকার করার কোন সুযোগ ছিল না। নাও! এটা নিতে দ্বিধা করো না কারন এটা তোমার। মনে রাখবে নিজের জিনিস নিজের নিতে লজ্জা নেই। কারন এটা তোমার!

আমি ভাইয়ার হাত থেকে প্যাকেট টা নিয়ে ব্যাগে রাখলাম। ভাইয়া আবারো ব্যাগ থেকে দুটো চিপস বের করে আমাকে একটা দিল আরেকটা নিজে নিয়ে খেতে লাগল। আমিও চিপস খেতে লাগলাম। ভাইয়া কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠি,

“আপনারা কোথায় যাচ্ছেন!

“যেখানে তুমি যাচ্ছো সেখানেই তবে অন্য কাজে।

“কি কাজ!

“কাজটা আমাদের না আহিয়ানের। তবে তোমাদের গ্রাম টা খুব সুন্দর তাই আমরাও চলে এলাম ঘুরতে!

“গ্রামের মতো সৌন্দর্য সবখানে পাওয়া যায় না।

“ঠিক বলেছো। তা শোন কেন এসেছিলাম..

বলেই তিনি একটু নড়েচড়ে বসলেন। আমিও আগ্রহ নিয়ে তার দিকে তাকালাম। তিনি বলতে শুরু করলেন,

“এটা বুঝছো অনেক আগের একটা প্রেম কাহিনী। দু’জন প্রেমিক প্রেমিকার গল্প। তারা দুজন দুইগ্রামেই বাস করতো। তারা দুজনেই ছিলো জমিদার বংশের। আর এই বংশ নিয়ে তাদের মাঝে বেশ ঝগড়া বিবাদ ছিল, সোজা বলতে গেলে দুই গ্রামে ঝামেলা ছিল। তো তোমার গ্রামে থাকতো এক জমিদার আরেক জমিদার থাকতো তোমাদের পাশের গ্রামে। তোমাদের গ্রামে জমিদারের ছোট ছেলে নাহিয়ান চৌধুরী তার ভালোবাসতো তার পাশের গ্রামের জমিদারের একমাত্র মেয়েকে। মেয়েটা নাকি খুব সুন্দরী ছিল আর অহংকারী ও ছিল। যার কারনে নাহিয়ান প্রতি বার’ই তার কাছে প্রত্যাখান হয়েছিল। তো একদিন হলো কি? ( আমার দিকে উদ্দেশ্য করে.. ) নিহা তুমি ইন্টারেস্ট পাচ্ছো তো!

আমি চিপস মুখে দিয়ে মাথা নাড়লাম। উনি আবারো নড়চড়ে বসে বলে উঠে,
“তো একদিন হলো কি সেই নাহিয়ান চৌধুরী ওই অহংকারী মেয়েকে তার বিয়ের আসর থেকে তুলে আনল।

“কিহহ বিয়ের আসর থেকে!

“হুম কারন নাহিয়ান চৌধুরী তো ওই মেয়েকে ভালোবাসতো। আর মেয়েটার বিয়ে অন্য জনের সাথে ঠিক হয়েছিল তাই রেগে তিনি তাকে তুলে আনল। তিনি কিন্তু বেশ রাগি ছিলো বুঝলে।

“হুম হুম তারপর!

“তারপর দুই গ্রামের মাঝে তো খুব ঝগড়া, তাদের মেয়েকে তুলে আনা হয়েছে সে কি আর বসে থাকবে নাকি। কিন্তু তাদের কাউকে খুঁজে পেলো না। কেন পেলো না জানো!

“কেন?

“কারন নাহিয়ান সেই মেয়েকে নিয়ে সোজা শহরে চলে এলো। এখানে এসে শুরু করল ব্যবসা, যেহেতু জমিদার ছিল তাই শহরেও তার কিছু সম্পত্তি ছিল। এগুলোই নিয়েই সে ব্যবসা শুরু করল।

“আর সেই মেয়েকে!

“তাকে! তাকে এনে নাকি একা অন্ধকার ঘরে ৭ দিন আটকে রেখেছিল। ৭ দিন ধরে নাকি সেই মেয়ে সূর্যের আলো দেখে নি। আর তার খাবার ছিল পান্তা ভাত, পেয়াজ আর কাঁচা মরিচ!

“কিহ!

“হ্যাঁ এই ৭ দিন ধরে মেয়ে শুধু এগুলোই খেয়েছে। প্রথম দুদিন অবশ্য রেগে ফেলে দিয়েছে, কারন সে অহংকারী ছিল। কিন্তু পরে যখন দেখল না খেয়ে থাকতে পারবে না তখন এগুলোই সে খেতে লাগল।

“অতঃপর!

“অতঃপর নাহিয়ান চৌধুরী সেই মেয়েকে ঘর থেকে বের করল। মেয়ে তো বেশ রেগে ছিল। সে নাহিয়ানের সাথে কথা বলা তো দূর তার দিকে ফিরেও তাকায় নি। কিন্তু নাহিয়ান হার বার পাত্র ছিল না। সে মেয়েকে সেদিন নিজের হাতে রান্না করে খাওয়ালো।‌ খুব ভালো ভালো খাবার ছিল তাই মেয়েটা নাহিয়ানের হাতেই সে খাবার গুলো খেলো। শুধু সেদিন না এরপর থেকে প্রতিদিন’ই সে নাহিয়ানের হাতে খেতো।‌ অতঃপর একসময় সে নাহিয়ান কে ভালোবেসে ফেলল। তারপর তারা বিয়ে করল।

“বিয়ের পর কি আর গ্রামে আসে নি।

“এসেছে তো! তবে সাথে করে একজন কে নিয়ে এসেছিল যাকে দেখে তাদের পুরো পরিবার তাদের মেনে নিল। সে ছিল তাদের চোখের মনি!
অতঃপর সেই চোখের মনি ধীরে ধীরে বড় হলো, বিদেশ গেলো লেখাপড়া করতে। তারপর একজন রূপসী মেয়ে কে দেখে বিয়ে করে শহরে থেকে গেল। তবে শহরে থাকলেও বাবা মার সাথেও তাদের সম্পর্ক অনেক ভালো ছিল। আসলে তার বাবা চাইত এই জমিদারি ধরে রাখতে। আর তার চিন্তা ছিল অন্যরকম। আর তারা দুজনেই দুজনের মত কে সমর্থন করত। ছেলে নিয়মিত গ্রামে আসত মা বাবা’র সাথে দেখা করতে। তার মা চাইত তার মৃত্যু যেন এই গ্রামেই হয়।

“( আমি স্থির চোখে তাকিয়ে আছি ভাইয়ার দিকে। )

ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে হেসে বলল,
“অতঃপর সেখানেই তাদের মৃত্যু হলো। প্রথমে মারা গেলেন নাহিয়ান চৌধুরী’র বিবি অতঃপর ৫ মাসের মধ্যেই মারা গেলেন আহিয়ান চৌধুরী! কি বলো তো খুব ভালোবাসা ছিল তাদের দু’জনের মাঝে তো তাই একজন কে ছেড়ে অন্যজন বেশিদিন থাকতে পারল না।

“দারুন ছিল!

“আচ্ছা নিহা একটা কথা বলো তো সেই নাহিয়ান চৌধুরী কে তুমি চিনো!

আমি হেসে মাথা নাড়লাম! ভাইয়া ভ্রু কুঁচকে বলে উঠে,
“কে?

আমি দাঁত বের করে হেসে বলি,
“আহিয়ান!

ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে জোরে হেসে দিল। আমরা দু’জনেই হাসতে লাগলাম। ভাইয়া বলে উঠে,
“বাহ বেশ ধরলে তো!

“হুম! সেই নাহিয়ান হলো আহিয়ানের দাদু আর অহংকারী মেয়েটা হলো তার দাদি ঠিক না!

“হুম ঠিক! নাহিয়ান থেকেই আহির বাবা ওর নাম রেখেছে আহিয়ান। আর যখন তুমি পালিয়েছিলে তখন আমরা ওর দাদি’র মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে অনাথ আশ্রমে বাচ্চাদের খাওয়াতে এসেছিলাম। ও তোমাকে বলা হয় নি এখানে একটা অনাথ আশ্রম আছে। যা ওর দাদি তৈরি করেন মানে মিসেস চৌধুরী!

“হুম! আচ্ছা ভাইয়া আহিয়ান পুরো উনার দাদা’র মতো হয়েছে নাহ!

“এই তুমি কিভাবে বুঝলে! জানো তো ওর বাড়িতে গেলে ওর মা প্রায়’ই এই কথা বলেন। দাদু’র ডুবলিকেট!

“আচ্ছা যদি উনিও উনার বউ কে ওরকমভাবে আকটে রাখে তো!

আমার কথায় এবারও আরেকদফা হাসির শব্দ উঠল। ভাইয়া হাসতে হাসতে বলল,
“নিহা তুমি পারোও বটে কি..

অতঃপর ভাইয়া চুপ হয়ে গেল। ভাইয়া চুপ হবার কারনে আমিও চুপ হয়ে গেলাম। দেখলাম ভাইয়ার দৃষ্টি আমার পিছনে! আমিও পিছনে ঘুরলাম তাকিয়ে দেখি আহিয়ান দাঁড়িয়ে আছে। তাকে দেখে আমরা দু’জনেই নিস্তব্ধ!

উনি এসে উনার সিটে বসে কিছু চাবাতে লাগলেন। আমি ভুল না করলে এটা চুইংগাম আর যদি তাই হয় তাহলে এতক্ষণ উনি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সিগারেট খেয়েছিলেন। হ্যাঁ এটাই হবে!

আমি মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে রইলাম। কিছুক্ষণ বাদেই আকাশ ভাইয়া’র ফোন বেজে উঠল। তিনি মুচকি হেসে ফোনটা হাতে নিয়ে চলে গেলেন। আমি এবার একটু একটু মাথা উঠিয়ে উনার দিকে তাকালাম। দেখলাম উনার দৃষ্টি এখন ফোনে। আমি হালকা একটু কাশলাম। এতে উনার ভাবভঙ্গি পরিবর্তন হলো না। অতঃপর আমি আস্তে করে বলে উঠি,

“সরি!

( উনি ফোনের ভিতর ঢুকে যাবে মনে হচ্ছে )

“আসলে সেদিন আপনাকে এভাবে এতো কিছু বলা ঠিক হয় নি।

( এখন মনে হচ্ছে ফোনের ভিতরে ঢুকে গেছেন )

আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বসে পড়লাম। কিছুক্ষণ পর উনি ফোন নামিয়ে পাশে রাখলেন। অতঃপর আমার দিকে তাকিয়ে তাকালেন। আমি উনার চাহনি দেখে খানিকটা ভয় পেয়ে গেলাম। আশেপাশে কেউ নেই এটা ভেবেই বুক কেঁপে উঠল। থমতম খেয়ে বলি,

“দেখুন আমি খুব সরি, প্লিজ!

“আমি বাঘ না যে তোমায় খেয়ে ফেলবো।

উনার কথায় আমি মাথা নিচু করে নেই। হঠাৎ উনি বলে উঠেন,
“তবে সত্যি ভুল টা আমার’ই ছিল!

আমি অবাক হয়ে উনার দিকে তাকালাম। উনি বলে উঠেন,
“আমার বোঝা উচিত ছিল নিতি বসে থাকবে না। কিন্তু তাই বলে তুমি আমাকে এতো কথা শুনাবে!

( আজব তো বলছে উনার দোষ আবার বলছে আমি উনাকে বেশি কথা শুনিয়েছি! তবুও আমিই আবার বলে উঠি..) সরি!

উনি অর্ণ’র মতো নিজের মুখটা ঘুরিয়ে নেয়। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রই। একদিন অর্ণ এমনটা করেছিল। আমি ভুল করে ওকে আস্তে মারতে গিয়ে জোরে মেরে ফেলেছিলাম। সে রেগে আমার সাথে সেদিন আর কথাই বলে নি। পড়া শেষ করে উঠে চলে গেছিল। পরদিনও তার রাগ কমে নি তাই আমি তাকে সরি বলেছিলাম।সেদিন সে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছিল তখন আমি হেসে ছিলাম। কিন্তু এখন হাসবো কি না বুঝছি না কারন এটা অর্ণ’র মতো একটা বাচ্চা কে মানায় উনাকে না। তবুও বলে উঠি,

“সরি! এই নিয়ে তিন বার না এক, দুই, তিন, চার হ্যাঁ চার বার সরি বলেছি।

“তো! তোমার এটাই করা উচিত। হাজার বার সরি বলা উচিত!

“কেন হাজার বার বুঝি অপমান করেছিলাম।

উনি ছোট ছোট চোখ করে আমার দিকে তাকালেন। আমি একটা মুখ ভেংচি দিয়ে বাইরের দিকে তাকালাম। উনি বলে উঠেন,
“এতো ভাব নিয়ে কিভাবে চলো তুমি!

“এভাবেই চলি,‌আর হ্যাঁ ভাব তো মেয়েদের’ই থাকবে না।

“কিন্তু তুমি অতিরিক্ত।

“ক’দিন’ই‌ বা চিনেন আমায় যে এইকথা বলছেন।

“যত’দিন’ই চিনি না কেন, তবুও বেশ ভালোই বলতে পারি তোমার সম্বন্ধে!

“আমিও বলতে পারি আপনার সম্পর্কে!

“কি জানো শুনি!

“এটাই আপনি পুরো আপনার দাদু’র মতো।

উনি খানিকক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। অতঃপর বাইরের দিকে তাকালেন। আমিও আর কোন কথা না বলে বাইরের দিকে তাকিয়ে রইলাম। আর কোন কথা হলো না দুজনের মাঝে।
.
ট্রেন এসে স্টেশনে নামল রাতের দিকে। তখন রাত খুব গভীর। আমি ইচ্ছে করেই রাতে নামার পরিকল্পনা করি যাতে গ্রামের কেউ আমায় চিনতে না পারে।‌ এখানে আকাশ ভাইয়া সোজা বলেদিয়েছেন তিনি আমাকে বাসায় দিয়ে আসবে। মোটেও আমাকে একা ছাড়বে না।

ট্রেন থেকে নামতেই শরীর শিউরে উঠল। কাঁধের ব্যাগ টাকে হাত দিয়ে ধরে ঘ্রাণ নিতে লাগলাম গ্রামের। বেশি একটা ভিড় নেই। মানুষের আনাগোনা অনেকটা কম। আহিয়ান, আকাশ,নাহান আর আনাফ ভাইয়া দাড়িয়ে কাউকে খুঁজছে। হ্যাঁ তারাও এসেছিল তাদের সাথে তবে তাদের সিট আলাদা পড়েছিল। আমাকে দেখে তারা অবাক হলাম আমি অবশ্য হলাম না। কারন আমার ধারনা ছিল তারা থাকবে।

আহিয়ান হঠাৎ করেই সামনে এগিয়ে কারো কাছে গেল। আমি তার দিকে তাকতেই সে বিস্ময় চোখে আমার দিকে তাকাল আর আমার ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটল!

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here