বেলা_শেষে_শুধু_তুমি পর্ব ২৭

0
1270

বেলা_শেষে_শুধু_তুমি পর্ব ২৭
#আনিশা_সাবিহা

নাকে হাত দিয়ে বসে আছে ঐশানী। চোখ লাল টুকটুকে হয়ে গেছে। তার পাশে সকলে চিন্তিত হয়ে তাকিয়ে আছে ঐশানীর দিকে। আয়েশা বেগম এগিয়ে এসে ঐশানীর পাশে বসে বলেন…..
–“নাকের থেকে হাত সরাও। নাহলে চুন লাগাইয়া দিমু কেমনে?”
ঐশানী দ্রুত নাবোধক মাথা নাড়িয়ে কাঁদো কাঁদো হয়ে বলে……
–“না। চুন লাগবে না। আমি হাতও সরাবো না। না জানি আমার নাম ফুলে কত বড় হয়ে গেছে। আমি হাত সরাব না।”
–“ভাবি, তোমার কি নাক ব্যাথা করছে না?”

অনিন্দিতার প্রশ্নে ঐশানী কি ভেবে বলে…..
–“একটু তো ব্যাথা করছে। কিন্তু আমি হাত সরাবো না।”
সবার জোড়াজুড়িতেও হাতটা সরানো গেল না ঐশানীর নাকের থেকে। অভয় এতোক্ষণ বুকে দুটো হাত জড়িয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে ঐশানীর কান্ড দেখছিল। ঐশানীর আঘাত লাগাতে অভয়ের যতটা
খারাপ লাগছে ঠিক ততটাই ওর কর্মকান্ডে হাসি পাচ্ছে। মৌমাছি আর জায়গা পেলো না? সরাসরি ওর নাকের ডগায় হুঁল ফুটিয়ে দিল? ভাবতেই পেট ফেটে হাসি বেরিয়ে আসতে চাচ্ছে ওর। মিসেস. রজনী ক্ষীণ সুরে বলেন….
–“জানালা খুলবে তো বলে খুলবে না? যাবার দিনে কি কান্ড বাঁধিয়ে বসলে বলো দেখি!”
–“আমি তো জানতাম না ওখানে মৌচাক থাকবে।”

অভয় শ্বাস নিয়ে আয়েশা বেগমের উদ্দেশ্যে বলেন….
–“চুন আমার হাতে দাও দাদিমা। তুমি একটু উঠে পড়ো। আমি ওর নাকে চুন লাগিয়ে দিচ্ছি।”
ঐশানী চোখ ছোট করে তাকায়। এতো কেউ মিলেও তার সঙ্গে পারছে না সেখানে এই লোকটা তাকে চুন লাগিয়ে দেবে? মনে মনে একবার ব্যঙ্গ করে হাসল ঐশানী। আয়েশা বেগম উঠতে উঠতে বললেন….
–“কেন রে? তুই কি সোনাই বাঁধানো চুন লাগিয়ে দিবি নাকি? যে তুই বললে ও নাক থেকে হাত সরাবে।”
অভয় দাদিমার কথায় উত্তর না দিয়ে ঐশানীর পাশে বসে পড়ে। তাতে কোনো হেলদোল হয় না ঐশানীর। আরেকটু সরে বসে সে।

–“হাত সরাও। চুন লাগাতে হবে। বাড়িতে আরো অনেক কাজ আছে। সেসব সবাই সারবে। তাই তাড়াতাড়ি এটা লাগিয়ে নাও নাকে ব্যাথা কমে আসবে।”
–“আমাকে জোকারের মতো লাগবে। আপনি সরুন।”
শুকনো গলায় বলে ঐশানী। অভয় একটা দম ফেলে বুঝে নেয় মেয়েটা সোজা কথায় মানবে না। মাথা একটু কাঁত করে ঐশানীর কানের কাছে গিয়ে বলে…..
–“আমি জানি তুমি সোজা কথার মেয়ে না। সেটা সবার সামনে প্রমাণ করতে হবে না। সেদিন বাচ্চাদের সাথে খেলতে গিয়ে ইশানকে পাথর তুমি মেরেছিলে না?”

চোখ কপালে উঠে যায় ঐশানীর। নাকের থেকে হাত আপনা-আপনি সরে যায়। ঢক গিলে তাকায় সে। এই লোকটা কোথায় দেখল ওকে? এই সুযোগে আঙ্গুলের মাথায় হালকা চুন ভরিয়ে নিয়ে ঐশানীর নাকের ডগায় লাগিয়ে দেয় সে। ঐশানী হালকা ব্যাথা কুঁকড়ে ওঠে। নাকে হাত দিতে চাইলে ধরে ফেলে অভয়। ওর নাকের ডগা অনেকটা ফুলে লাল হয়ে গেছে। না জানি কত কষ্ট পাচ্ছে মেয়েটা।
–“আর হাত দেওয়ার প্রয়োজন নেই। চুন লাগিয়ে দিয়েছি মুছে যাবে।”
বলেই উঠে পড়ে অভয়। হাতে থাকা চুনের কৌটো দাদিমার কাছে এগিয়ে দেয় সে। আয়েশা বেগম কিটকিটিয়ে হেসে তাদের দুজনের দিকে চেয়ে বলে….
–“বরের কাছ থেকে সেবা নিবি বললেই পারতে! আমি কি বাঁধা দিতুম নাকি?”

অভয় দাদিমার কথায় হালকা কেশে বাইরে চলে যায়। মাথা নামিয়ে বসে থাকে ঐশানী। দাদিমা আর কি করে জানবেন কোন ঠেলায় পড়ে ঐশানীকে নাকে চুন লাগাতে হলো? সবাই মিটমিটিয়ে হেসে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।

ঘরে একা বসে থাকে ঐশানী। অভয়ও নেই। চুপচাপ বসে থাকে সে। ফোন হাতে নিয়ে একটা গভীর ভাবনায় মেতে ওঠে। ফোনটা রেখে খাট থেকে নিচে নেমে পা বাড়ায় বাইরের দিকে।
ইশানের ঘরে ইশানকে না পেয়ে বারান্দা নিয়ে হাঁটে ঐশানী। আজ ওরা চলে যাবে। থেকে যাবে কিছু স্মৃতি। এটাই হয়ত এই বাড়িতে শেষ আসা। কারণ ঐশানী তো আর আসবে না। ও থাকবে না এই সংসারে। চলে যাবে। এতোদিনেও ও কোনো সিদ্ধান্ত পাল্টাতে পারেনি। ও যাবে যেহেতু ভেবেছে সেহেতু যাবেই। তবে যাওয়ার আগে যদি একবার ইশানের সাথে সায়রার ব্যাপারে কথা বলা যায় তাহলে মন্দ হয় না। যদি অনিন্দিতার মতো ভালো মেয়ের জন্য কিছু করতে পারে তাহলে সে নিজেকে ধন্য মনে করবে।

এসব আকাশ-পাতাল চিন্তাভাবনা করতে করতে বারান্দার শেষ দিকে চলে আসে ঐশানী। সেখানে দেখা পায় ইশানের। উল্টোদিকে ঘুরে সিগারেট খেতে মগ্ন সে। নিজেকে ইশানের সাথে কথা বলার জন্য প্রস্তুত করে গলা খাঁকারি দিয়ে ডেকে ওঠে…..
–“ইশান ভাইয়া!”
হকচকিয়ে সিগারেট হাতের পেছনে রেখে ঘুরে দাঁড়ায় সে। ভাইয়ের বউয়ের সামনে সিগারেট সে কোন মুখে খাবে? রেলিংয়ের ওপরে হাত রেখে সিগারেট ফেলে দিয়ে বোকা হেসে বলে…..
–“আরে ভাবি তুমি?”
–“হুমম আমি। বলছিলাম যে তোমার কপালে ব্যাথা ঠিক হয়েছে?”

ইশান কপালে হাত বুলায়। তারপর হাসি দিয়ে বলে….
–“মোটামুটি ঠিক হয়েছে।”
–“শুনলাম তোমার পড়াশোনা শেষ হয়েছে। কি করবে কিছু ভেবেছো?”
–“কি আর করব! চাকরি-বাকরি ছাড়া আর কি করার আছে।”
ঐশানী আসল কথাটা মুখ থেকে বের করতে না পেরে হতাশ হয়। বারান্দার রেলিং ধরে দাঁড়ায় সে। নিজের মনের মাঝে গুছিয়ে নিতে থাকা না বলা কথাগুলো। ফট করে বলে ফেলে…..
–“জীবনে এমন কেউ নেই? যাকে জীবনসঙ্গী বানাতে চাও? বা তোমার ভালো লাগে?”

ইশান হঠাৎই থম মেরে যায়। ভাবনার গভীরে ডুব দেয়। একনাগাড়ে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে থেকে বড্ড চিন্তায় পরে যায় সে। বুঝতে পারে না হঠাৎ ঐশানী তাকে এসব কেন জিজ্ঞেস করল? ইশানের ভাবনায় পড়ে যাওয়া ঐশানীকে বিভ্রান্ত করে ফেলল। তবে তাকে হতাশ করল না। অবশেষে বুলি ফোটে ইশানের।
–“না তেমন কেউ নেই।”
–“কিছু মনে না করলে একটা কথা জিজ্ঞেস করি? কয়েকদিন ধরে আমি নিজে লক্ষ্য করছি তোমাকে সায়রার কথা বলতে। সায়রা কি তোমার বন্ধু ইশান ভাইয়া?”

ইশান বিভ্রান্তিকর অবস্থায় পড়ে যায়। ও সায়রাকে পছন্দ করে কি না তাও জানে না। এমনিই সায়রার সাথে কথা বলে এতোটুকুই। চুলে হাত দিয়ে বলে….
–“তেমন কিছু না। ওই এমনি বন্ধু। অভয়ের থেকে সবটা জেনেছি। আমার মনে হলো অভয় না হক আমিই ওকে শান্তনা দিতে পারি। তাই ওকে কল করেছিলাম। ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব হয়েছে।”
–“মানে শুধু বন্ধুত্বই??”
ইশান বিষম খেয়ে তাকায়। ঐশানী কি ইঙ্গিত করতে চাইছে? হালকা কেশে বলে মাথা দুলাতেই ঐশানী আবারও বলে……
–“আই এম সো সরি। আসলে আমি তোমার পারসোনাল লাইফে ঢুকতে চাইনি। কিছু মনে করো না ভাইয়া।”

–“না না। সমস্যা নেই। ইটস ওকে।”
জড়ো হাসি দিয়ে জবাব দেয় ইশান। ঐশানী রোবটের ন্যায় বলে ওঠে…..
–“আজ একটা কথা বলছি ভাইয়া! কথাটার ব্যাখ্যা তুমিই খুঁজে নিও। অযথা যেন মরিচীকার পেছনে ছুটতে গিয়ে এমন যেন না হয় তোমার চোখের সামনে পড়ে থাকা আসল স্বর্ণকেই তুমি দেখতে পেলে না।”
আর এক সেকেন্ড ঐশানী দাঁড়ায় না সেখানে। ইশানকে রহস্যের সমুদ্রে ডুবিয়ে দিয়ে চলে আসে। খুঁজে নিক সে নিজের আসল স্বর্ণ। অনিন্দিতার কথা সে বলবে না। অনিন্দিতাকে নিজে বলতে হবে। কারো ভালোবাসার কথা অন্যজন কিছুতেই ব্যক্ত করতে পারে না। যার ভালোবাসা তাকেই বুঝে নিতে হয়।

তবে দুপুরের খাবার খেয়ে এসে শুয়েছে অভয়। ঠোঁটের কোণে হাসি লেগে আছে তার। মাঝে মাঝে হাসির শব্দ হচ্ছে। চোখজোড়া বুজতেই দরজা খোলার শব্দ কানে আসে তার। তবে চোখটা খোলে না। সেভাবেই শুয়ে থেকে বলে….
–“খাওয়া হয়ে গেল এতো তাড়াতাড়ি?”
ঐশানী রেগে বম হয়ে দরজা সকল শক্তি দিয়ে লাগিয়ে দেয়। এবার চোখ খোলে অভয়। মুখে দুষ্টুমির ছাপ ফুটে ওঠে তার।
–“এই ভরদুপুরে এতো জোরে দরজা লাগিয়ে দেওয়ার শব্দ শুনলে লোকে কি ভাববে জানো? আমার মতো নিরীহ একটা ছেলের সাথে রোমান্স করতে তুমি উঠেপড়ে লেগেছো।”

ঐশানী হনহন করে খাটের কাছে এসে বিছানায় এক আঘাত করে জোরে বলে ওঠে…..
–“আপনি নিরীহ? নিরীহ শব্দটা একদম আপনার নামের সাথে মানায় না। তাই নিজেকে নিরীহ বলে নিরীহ শব্দের অপমান করবেন না।”
ফাজিলের মতো হেসে উঠে বসে অভয়। ভ্রু নাচিয়ে বলে…..
–“তাহলে আমি কি বলো?”
–“তার আগে আপনি বলুন খাওয়ার সময় আপনি আমার নাকের দিকে তাকিয়ে হাসছিলেন কেন? কি বলুন? হাসছিলেন কেন?”
–“আমি হাসছিলাম? কই না তো!”

–“আমার নজর আপনার দিকেই ছিল। তাই মিথ্যে বলবেন না। আমার নাকে প্রবলেম হয়েছে তার মজা নিচ্ছেন আপনি?”
ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল ঐশানী। ভ্রুকুটি তার কুঁচকানো। রাগের চোটে গালে লাল লাল আভাগুলো স্পষ্ট হয়ে ধরা পড়েছে। ঠোঁটের ওপরে গরমের কারণে জমেছে বিন্দু বিন্দু ঘাম। অভয় ঐশানী ভালো করে লক্ষ্য করে ঠোঁট প্রসারিত করে একটু এগিয়ে এসে বলে….
–“আমি তোমাকে দেখছিলাম সেটা তুমি জানো। কারণ তুমিও আমার দিকে নজর রাখো স্পেশাল ভাবে। আর কারো দিকে তখনই এভাবে নজর দেয় যখন সেই মানুষটা তার কাছে বিশেষ হয়।”

অভয় এমন প্রসঙ্গ তোলায় থতমত খেয়ে থমথমে চেহারা হয়ে গেল ঐশানীর। তবুও না দমে গিয়ে বলল….
–“আপনি হয়ত জানেন না, আমরা মেয়েরা বিশেষ ক্ষমতা নিয়ে জন্মাই। আমাদের দিকে কে কখন কিভাবে তাকাচ্ছে সেটা নজর করে আমরা বুঝে যেতে পারি ওদের মতলব কি। আর আপনি আমার নাকের দিকে তাকিয়ে হাসছিলেন। এরমানে আপনি ব্যঙ্গ করছিলেন।”
ঐশানীর মুখোমুখি বালিশ নিয়ে গালে হাত দিয়ে বসে পড়ে অভয়। সিরিয়াস হয়ে বলে…..
–“হয়েছেটা কি বলো তো! ওইতো তোমার নাকে সাদা চুন লেগে আছে সেটা মিলিয়ে তোমাকে একটা জোকার মনে হচ্ছিল।”

রাগে কটমট করে চাইলো ঐশানী। নাকে হাত দিতে নিল সে চুন মুছতে। কত বড় বিদ্রুপ হলো তার ভাবা যায়? কিন্তু অভয় তার হাতটা ধরে বলে….
–“না মুছবে না। ব্যাথা পাবে। তাছাড়া তোমাকে এমনি হাস্যকর জোকার মোটেই লাগছে না। ছোটখাটো একটা পুতুল জোকারের মতো লাগছে।”
ঐশানী ভেংচি কেটে অন্যদিকে তাকায়। অভয় হাসতে হাসতে শুয়ে পড়ে। একসময় হাসিতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে চোখ বুজে নেয় সে। বিড়বিড় করে বলে….
–“বিকেলে বাস ছাড়বে পারলে তুমিও একটু ঘুমিয়ে নিতে পারো। তুমি তো জার্নি করলে অতিরিক্ত ক্লান্ত হয়ে পড়ো।”

ঐশানী অভয়ের কথায় পাত্তা না দিয়ে ওই জানালার দিকে তাকায়। মৌমাছির জন্যই যত ব্যঙ্গ করছে অভয়। মাথায় শয়তানি বুদ্ধি হাসতেই দাঁত কেলিয়ে তাকায় অভয়ের দিকে। অভয় উপুড় হয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করছে। হাতে বালিশ নিয়ে ওই জানালার এদিকে এগিয়ে যায় সে। জালানা খুলে দ্রুত সাইড চেপে বালিশ দিয়ে নিজেকে আড়াল করে জানালা বন্ধ করে দেয়। আগের মতো একটা মৌমাছি ঘরে ঢুকেছে। উড়তে উড়তে ফ্যানের কাছে গিয়ে পাখার সাথে আঘাত খেয়ে একেবারে অভয়ের গাল বরাবর পড়ে যায় মৌমাছিটা। দাঁতে দাঁত খিঁচে কান্ড দেখতে থাকে ঐশানী।

শুয়ে থাকতে থাকতে এক পর্যায়ে অভয়ের মনে হয় তার গালে কিছু একটা পড়েছে। চোখ খুলে গালে হাত দিতে যাবে তার আগেই যা হবার তা হলো। মৃদু চিৎকার দিয়ে ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে অভয়। গালে হাত দিতেই ভীষণ জ্বালা করতে শুরু করে তার। হাত সরিয়ে উড়তে দেখে একটা মৌমাছিকে। খাটের পাশেই বালিশ নিয়ে নিজেকে আড়াল করে বসে আছে ঐশানী। মুখে তার বিজয়ের হাসি। বিষয়টা বুঝতে অভয়ের কয়েক সেকেন্ড সময় লাগল। অতঃপর তীক্ষ্ণ চোখে তাকালো সে। অভয়ের হাতে আবারও এসে মৌমাছিটা পড়তেই ঐশানী দৌড়ে এসে হাত লাগিয়ে মৌমাছি সরিয়ে দিতেই অভয় অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে। মৌমাছি অন্য জানালা দিয়ে বেরিয়ে যেতেই স্বস্তির শ্বাস ফেলে ঐশানী।

অভয়কে অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে ঐশানীর কপালে ভাঁজ পড়ে। চিকন সুরে বলে…..
–“কি হয়েছে? এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন আমার দিকে?”
–“তোমরা নারীরা এতোটা অদ্ভুত কেন বলো তো? নাকি একটু বেশিই অদ্ভুত! আমাকে মৌমাছির কামড় খাওয়াতে তুমি একটা মৌমাছি ঘরে ঢোকালে। তারপর যখন মৌমাছি দ্বিতীয় বার আমার হাতে হুঁল ফুটিয়ে দিয়ে যাচ্ছিল তখন তাকে সরিয়ে দিলে? কেন?”
–“কারণ আমি আপনাকে কখনোই কষ্ট দিতে চাইনি। আপনাকে হাসিখুশি দেখতে চেয়েছি। আমি তো মৌমাছির ব্যাপারটা ঘটিয়েছি কারণ আপনি যেন আমার বিদ্রুপ না করতে পারেন। আপনাকে কষ্ট দেওয়ার ইনটেনশন আমার কখনোই ছিল না। আপনার হাসি আমার মনে স্বস্তি। আপনার সুখ আমার ঠোঁটে ফুটিয়ে তোলা হাসি। আপনার একটুখানি কষ্ট আমার মনের দুয়ারে করাঘাত করে।”

কথা বলতে বলতে থেমে যায় ঐশানী। অভয়ের গালে হাত ছুঁইয়ে অনবরত নিজের অজান্তে কথাগুলো বলছিল সে। হুঁশ ফিরতেই হাত সরিয়ে দ্রুত সরে যায় সে। অভয়ের কাছে ঐশানীর কথাগুলো শ্রুতিমধুর হয়ে ঠেকছিল। ঘোর লাগানো কন্ঠে সে বায়না করে……
–“থামলে কেন? আরো বল! ভালোই তো লাগছে।”
–“আমি চুন নিয়ে আসছি। আপনি বসুন।”
কাঁপা কাঁপা সুরে কথাটি বলে বিষয়টাকে এড়িয়ে একপ্রকার পালিয়ে গেল ঐশানী। অভয়ের মনে রেখে গেল একটা প্রশ্ন! তা হলো, ‘নারীজাতি কি অদ্ভুত? নাকি ঐশানীই অদ্ভুত?’

চলবে……

[বি.দ্র. খুব দ্রুতই ঐশানীর অতিত, তার রহস্য ভেদ হতে চলেছে। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here