#প্রেমানুরাগ❤️
#মাইশাতুল_মিহির
#পর্ব-৫
সারাটা দিন ভারি বর্ষণের উপরেই কেটে গেছে। ঝুম বৃষ্টি উত্তরের শীতল হাওয়ায় মন প্রফুল্লিত। রবি দরজার পাশে ছোট টুলে বসে বাহিরে তাকিয়ে কাটিয়ে দিলো। শশী একবার বিছানার ধারে, আরেকবার পশ্চিম পাশের জানালার ধারে দাঁড়িয়ে বৃষ্টিবিলাশ দেখেছে। মাঝে মাঝে দু-একটা কথা বলেছে যার প্রতিত্তুর রবি অতি সংক্ষেপে দিয়েছে। এখন রাত্রীর প্রথমভাগ। বিকেলে বৃষ্টি কিছুটা কমার পর অর্থাৎ যখন ঝিরিঝিরি বৃষ্টি ছিলো তখন রবি বাহিরে গিয়ে কিছু ফল জোগাড় করে এনেছে। যেহেতু এই স্থানে রবি আর সাকিব এখানে আগে আসতো সেহেতু এই স্থানের কোথায় কি পাওয়া যায় খুব ভালো করেই জানতো তারা। হাল্কা শীতের শীতল শ্রোত বিলীন করতে সন্ধ্যায় কফি আর কিছু শুকনো খাবার খেলো দুজন। রবি নুডুলস করে ফল কাটলো রাতের খাবার হিসেবে। শশী আপাতত চুপচাপ বিছানায় পা তুলে বসে আছে। আজ সারাটা দিন নিরব ছিলো কথা না বলায় এখন পেটের ভিতর ইঁদুর দৌঁড়াচ্ছে। যদিও টুকিটাকি কথা বলেছিলো তাতে শশীর পুষায়নি। অবশেষে মুখ খুললো, ‘আচ্ছা আপনি থাকেন কোথায়?’
রবি ছোট করে উত্তর দিলো, ‘বাড়িতে।’
‘আরেহ্ এটা তো জানি। মানে আপনি থাকেন কোথায়? জায়গার নাম?’
‘ধানমন্ডি। তুমি?’
‘বনানী তে। আচ্ছা কিসে পড়েন?’
‘ঢাবিতে মাস্টার্স করছি।’
‘কোন সাবজেক্ট? আচ্ছা গার্লফ্রেন্ড আছে আপনার? সে জানে আপনি এখানে আছেন? কিছু বলেনি? না মানে সাত দিন নেটওয়ার্কের বাহিরে আছেন। আমি হলে তো কেলেঙ্কারি বাধিয়ে ফেলতাম।’
ভ্রু কুঁচকে তাকালো রবি। এই মেয়ে একটু কথার সুযোগ পেলেই কথার ঝুলি নিয়ে বসে পরে। এতো কথা মেয়ে মানুষ বলতে পারে। ইয়া মাবুদ! ফুঁশ করে তপ্ত শ্বাস ফেললো রবি। নুডুলসের বাটি শশীর দিকে এগিয়ে দিয়ে নিজে খাওয়া শুরু করলো। শশী এক চামচ নুডুলস মুখে দিয়ে বললো, ‘বলেন না।’
বিরক্ত হলো রবি। ধমকে উঠলো, ‘এই মেয়ে আর একটা কথা বললে তোমাকে এই পাহাড় থেকে ফে-লে দিবো।’
মুখ কালো করে তাকালো শশী। বললো, ‘পাপা আকিকা দিয়ে আমার নাম শশী রেখেছে। এই মেয়ে এই মেয়ে করবেন। নাম ধরে ডাকবেন।’
‘ওকে ফাইন মশারী। চলবে? চুপচাপ খাও।’
নুডুলসের বাটি বিছানায় ধপ করে রেখে কটমট করে বলে উঠলো শশী, ‘মশারী কে? আষ্টর্য।’
আর পারলো না রবি। হতাশার নিশ্বাস ফেলে বললো , ‘আল্লাহে ওয়াস্তে বইন তুই চুপ থাক। বৃষ্টি ভিজে আমার মাথা ব্যাথা করতেছে। একটু রেহাই দে আমারে। চুপচাপ খা।’
শশী আগ্রহ নিয়ে বললো, ‘মাথা ব্যাথা? আমি মাথা টিপে দেই? পাপা বলে আমি বাকি খুব ভালো মাথা টিপে দিতে পারি। ব্যাথা সব গায়েব হয়ে যায়।’
হতাশ চোখে তাকালো রবি। এই মেয়ে একদম বাঁচাল। কথা বন্ধ হয়ই না। একে যেভাবেই হোক কালকের মধ্যে বিদায় করতে হবে। আর মাত্র দুইদিন আছি এখানে এই দুইদিন একা কাটাতে চাই আমি। বুক ভরে নিশ্বাস ফেলে বললো, ‘তোমার পাপার কথা মনে পরছে না? কত দিন ধরে নি-খোঁজ তুমি?’
‘আজকে নিয়ে দুই দিন।’
‘ওহ’ সংক্ষেপে উত্তর দিয়ে খেতে লাগলো রবি। শশীও চুপ থেকে নুডুলস প্রফুল্লিত মনে খাচ্ছে। যদিও তার নুডুলস ভালো লাগে না। কি আর করার পেট চালাতে তো হবে। খাওয়া শেষে দুজনই ইতস্ততবোধ করছে। বিশেষ করে শশী। কোথায় থাকবে এখন? বাহিরে বৃষ্টি। গতকাল রাতের মতো তো আর বাহিরে থাকতে পারবে না। এখানে একটাই বিছানা। যদিও একটু বড়। এখানে দুজন মানুষ অনায়াসে ঘুমাতে পারবে। কিন্তু দুজন ছেলে মেয়ে একি বিছানায় থাকা সম্ভব না। বৃষ্টির পানির জন্য মেঝে ভিজে কাদা হয়ে আছে। নিচে শুবার মতো ব্যবস্থা নেই। রবি বললো, ‘তুমি বিছনায় ঘুমিয়ে পরো।’
শশী প্রশ্ন করলো, ‘আপনি কোথায় ঘুমাবেন?’
রবি গায়ে জ্যাকেট পরলো। একটা পাতলা শাল টাইপ চাদর শশীর দিকে দিয়ে বললো, ‘সজাগ থাকবো। নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারো।’
শশী গায়ে শাল পেচিয়ে বললো, ‘পুরো বিকেল তো আমি ঘুমালাম। কাল রাতেও বোধহয় আপনার ঘুম হয়নি। দিনেও না। এক কাজ করুন আপনি প্রথমে কিছুক্ষন ঘুমান। তারপর নাহয় আমি ঘুমাই।’
শশীর কথায় প্রথমে রাজি হলো না রবি। কিন্তু শশীর প্যানপ্যানের কাছে হার মেনে রাজি হলো ঘুমাতে। ঘুমানোর আগে বললো মাঝ রাতে তাকে ডেকে দিতে। শশীও বাধ্য মেয়ের মতো মাথা দুলালো। রবি বিছানায় উল্টো পাশ হয়ে ঘুমিয়ে পরলো। শশী পশ্চিম পাশের জানালার কাছে টোল নিয়ে বসে আনমনে বাহিরের হাল্কা অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশ দেখছে। এভাবে বসে কাটিয়ে দিলো প্রায় ঘন্টা খানেক। ঘুমে তার চোখ টলছে। লাল হয়ে এলো চোখজোড়া। পিছনে তাকিয়ে দেখে রবি ঘুমোচ্ছে। হাল্কা আওয়াজে ডাক দিলো, ‘রবি? এই মিষ্টার? হ্যালো? শনি রবি সোম?’
রবি বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। কোনো প্রকার সাড়াশব্দ না পেয়ে শশী পিটপিট পায়ে এগিয়ে রবির পাশে গুটিসুটি মেরে শুয়ে পরলো। মুহূর্তেই তার চোখে ঘুম চলে এলো। ঘুমিয়ে গেলো সে রবির পাশে।
___________________
‘কোনো খোঁজ পেয়েছিস?’
অধিক আগ্রহভরে বললো সোহরাব। দীর্ঘশ্বাস ফেললো ইকবাল। চেয়ারে বসে থেকে বললো, ‘শশী এখন কোথায় আছে জানি না। শশীর ফ্রেন্ডদের কাছ থেকে জানতে পারলাম তারা নাকি ক্যাফেতে যাবার প্ল্যান করেছিলো। সবাই ভিতরে অপেক্ষা করছিল তার জন্য। শশীও ক্যাফেতে গিয়েছিলো কিন্তু’…
‘কিন্তু কি? বল থামলি কেন? কিরে বল না আমার মেয়ে কোথায়?’ উত্তেজিত হয়ে বললো সোহরাব। ইকবাল এক গ্লাস পানি তার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো, ‘রিলেক্স ইয়ার। এতো উত্তেজিত হওয়া তোর জন্য ভালো না। তুই ডক্টর হলি কিভাবে বলতো? ঘু-ষ টুষ দিয়েছিলি নাকি?’
পানি পুরো টা শেষ করে টেবিলে আওয়াজ করে রাখলো সোহরাব। অসন্তুষ্টিতে বললো, ‘ইয়ার্কি করিস না। বল।’
‘শশী ক্যাফের ভিতরে যাবার আগে কেউ ওর মুখে রুমাল চাপা দিয়ে কি-ড-ন্যা-প করেছে। যদিও আমার মনে হচ্ছে এটা কি-ড-ন্যা-প না। যদি তাই হতো তাহলে আজ দুইদিন হলো এখনো মুক্তি-পণের জন্য কোনো কল করেনি।’
হতভম্ব হয়ে গেলো সোহরাব। ভাঙ্গা গলায় কাঁপাকাঁপা স্বরে বললো, ‘মানে কি বলতে চাইছিস?’
‘দেখ দুইদিন হলো কোনো প্রকার মুক্তিপণের জন্য কল আসেনি আমাদের কাছে। আমার মনে হচ্ছে শশী পা-চা-র-কারী দের হাতে পরেছে।’
কেঁদে ফেললো সোহরাব। কান্নায় ভাঙ্গা গলায় বললো, ‘দোস্ত আমার মেয়েকে এনে দে। ওকে ছাড়া আমি বাঁচবো না। প্লিজ দোস্ত ‘
ইকবাল বললো, ‘ডোন্ট ওয়ারি দোস্ত। সিসিটিভি ক্যামেরা দেখে একজনকে শনাক্ত করেছি। কে-লা-নি দেওয়ার পর জানতে পারলাম বান্দরবন তাদের আ-স্তানা। আই থিংক ওরা শশীকে সেখানেই নিয়ে গেছে। আমি জানার পর ফোর্স লাগিয়ে দিয়েছি। আরো কিছু ইনফরমেশন কালেক্ট করে কাল আমি যাবো।’
‘দোস্ত আমিও যাবো। প্লিজ আমাকেও নিয়ে যা।’ অনুনয় স্বরে বললো সোহরাব। ইকবাল হেসে প্রতিত্তুর করলো, ‘ঠিক আছে ইয়ার। কাঁদিস না। আয় কাল সকাল সকাল বের হতে হবে। ঘুমিয়ে পর নাহলে দেড়ি হয়ে যাবে।’
উঠে দাঁড়ালো দুজন। কেবিন থেকে বেরিয়ে বেডরুমের দিকে পা বাড়ালো। রুমে এসে সোহরাব আলমারি থেকে ম-দের বোতল বের করলো। তা দেখে ইকবাল চেঁচিয়ে উঠলো, ‘শা:লা, এখন তুই ম-দ খাবি?’
সোহরাব একটা গ্লাসে ঢেলে বললো, ‘একটু খাবো। নাহলে ঘুম আসবে না।’
ইকবাল রেগে বললো, ‘তুই এখন খেতে বসলে আর উঠবি না। তোকে আমি চিনি। রাখ এটা। কাল সকালেই বের হবো। তুই এখন টালমাটাল হয়ে পরে থাকলে নিতে পারবো না তোকে।’
‘এক গ্লাস খেলে কিছু হবে না।’
রেগে গেলো ইকবাল। এগিয়ে সোহরাবের কাছ থেকে বোতল আর গ্লাস নিয়ে রেখে দিলো। তারপর সোহরাব কে বিছানায় বসিয়ে বললো, ‘ঘুমা শা:লা। খবরদার ম-দ গিললে তোকে নিবো না দেখিস। শশীকেও খোঁজে বের করবো না।’
সোহরাব বিছনায় চিৎ হয়ে শুয়ে ঘুমুঘুমু কন্ঠে বললো, ‘ঘুমাচ্ছি। খাবো না প্রমিস। শিশির আর শশীকে এনে দে। তোকে একটা সিগারেট খাওয়াবো। পেপসি দিবো। চকলেট খাওয়াবো। শিশির আসলে আমি এইসব ছাইপাঁশ খাবো না।…..
বিড়বিড় করতে লাগলো সোহরাব। সব শুনতে পেয়ে দির্ঘশ্বাস ফেললো ইকবাল। এই ছেলে পাগল হয়ে গেছে। শশীকে পেলে সোহরাব কে আবার ডক্টর দেখাতে হবে চিকিৎসার জন্য। কিছু করার নেই।
চলবে???
নোট : ভুলত্রুটি মার্জনীয়। কার্টেসি ছাড়া কপি নিষিদ্ধ।