প্রেমানুরাগ পর্ব ৬

0
607

#প্রেমানুরাগ❤️
#মাইশাতুল_মিহির
#পর্ব-৬

স্নিগ্ধ সকালে পাখির কিচিরমিচির ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো শশীর। আড়মোড় ভেঙ্গে নিজেকে ঘরে একা আবিষ্কার করলো। বিছানা থেকে উঠে হাত দিয়ে উঁচিয়ে চুল গুলো খোঁপা করলো। কলস থেকে পানি নিয়ে পশ্চিম পাশের জালানা দিয়ে মুখ ধুয়ে নিলো। কাল সারারাত বৃষ্টি হওয়ায় আজকের পরিবেশ কিছুটা শীতল। শশী গায়ের শালটা দিয়ে মুখ মুছে নিলো। পরনে তার রবির দেওয়া সেই টি-শার্ট টি। টি-শার্ট টি একটু ঢিলেঢালা হওয়ায় শশী নিচের অংশ টেনে গিট্টু দিয়ে টাইট করে বাধলো। নিজেকে কে ঠিকঠাক করে বেরিয়ে এলো বাহিরে। মাচার পাশে দাঁড়িয়ে একটা চিকন বড় ডালের এক অংশবিশেষ সরু করে কা’ট’ছে রবি। শার্ট খোলে কমড়ে বেধে রেখেছে। কপালে তার ঘাম জমে আছে। চুল গুলো এক হাতে পিছে ঠেলে আবার কাটতে লাগলো। শশী এগিয়ে তারপাশে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন ছুঁড়লো, ‘এটা দিয়ে কি করবেন?’

রবি হাতের ছু-ড়ি দিয়ে ডালে আঘাত করতে করতে বললো, ‘মাছ ধরবো।’

অবাক চোখে তাকালো শশী। প্রফুল্লিত হয়ে বললো, ‘ওয়াও। এটা দিয়ে ধরবেন? কোথায় ধরবেন?’

রবি ত্যাছড়া ভাবে তাকালো। মাছ কোথায় ধরবে তাকে জিজ্ঞেস করছে? সিরিয়াসলি? এই মেয়ে বাঁচাল বৈকি আহাম্মক বেশি। চোখ ফিরিয়ে কাজে মনোযোগ দিয়ে ত্যাড়া ভাবে বললো, ‘গাছের মধ্যে উঠে।’

‘সিরিয়াসলি? কোন গাছে উঠে মাছ ধরবেন?’

কপাল কুঁচকে তাকালো রবি। বললো, ‘এই মেয়ে পাগল হয়েছো নাকি? গাছ থেকে আবার মাছ ধরে কিভাবে?’

চোখ পাকিয়ে কথার পিঠে কথা ছুঁড়ে বলে উঠলো শশী, ‘এটা তো আমার আপনাকে বলা উচিত। আপনি নিজেই আস্তো পাগল নাহলে কেউ বলে গাছে উঠে মাছ ধরবে? আষ্টর্য লোক আপনি।’

বিরক্তির নিশ্বাস ফেলে বললো রবি। এই মেয়ে এতো এতো পরিমানের বেশি কথা বলে যে তাকে অস্কার দেওয়া উচিত। রবি ঘরে এসে শশীকে শুকনো খাবার দিলো। পানি গরম রাখার বোতল থেকে পানি ঢেলে তার মাঝে লিফটন দিয়ে চা বানিয়ে দিলো। শশী আপন মনে টোষ্ট আর চা খাচ্ছে। রবি মাছ ধরার জন্য যাবতীয় জিনিস পত্র গুছিয়ে নিলো। পরনে তার কালো টি-শার্টের উপর নীল শার্ট। চুল গুলো কপালে পরে দুল খাচ্ছে। কাজ করছে বিধায় কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে আছে। কয়েকটা ভাজ পরে আছে কপালে।

‘চোখ সরাও বেহা:য়া মেয়ে। একটা ছেলের দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকে কেউ? ফাজিল, বেয়া:দব মেয়ে।’

শশী টোষ্টে কামড় বসিয়ে আপন মনে রবিকে পর্যবেক্ষণ করছিলো। রবির কথায় ভ্যাবাচেকা খেয়ে খুকখুক করে কেশে উঠলো। নিজেকে সামলে বললো, ‘এতো ভাব নিয়ে লাভ নেই হ্যা? আপনি এতো টাও আহামরি সুন্দর না যে বেহা:য়ার মতো আপনার দিকে তাকিয়ে থাকবো।’

শশীর অগোচরে নিরবে হাসলো রবি। এই মেয়ের সাথে কথায় কেউ পেরে উঠবে না। রবি হাতে লাঠিটা নিয়ে দাঁড়াতেই শশী বলে উঠলো, ‘আরে একা যাবেন নাকি? আমাকে নিয়ে যান। আমিও আসছি। ওয়েট খাওয়া শেষ আমার।’

রবি দাঁড়িয়ে বললো,’যেতে পারো একটা শর্তে। একটাও ফালতু কথা বলতে পারবে না।’

শশী বিছানা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে নিজেকে ঠিক করে বললো, ‘শশী ইমতিয়াজ কখনো ফালতু বলে না ওকে? এবার চলুন আমি তৈরি। দাঁড়িয়ে টাইম ওয়েস্ট করছেন কেন? আসুন।’ বলেই বেরিয়ে গেলো। রবি একদম বোকা বনে গেলো। এই মেয়ে পা-গল?

উঁচু পাহাড়ের দৃশ্য বরাবরই আকর্ষণীয়। বাতাস বইছে চারপাশে। বাতাসের সাথে শশীর চুল দুল খায়িয়ে নাচ্ছে। রবি হাতের ডালের মাধ্যমে সামনের ঝোপঝাড় নেড়ে নেড়ে এগোচ্ছে। শশীও হাতের লাঠি মাটিতে ভর দিয়ে নেচে নেচে এগোচ্ছে সামনে। কাল রাতে বৃষ্টি হওয়ার শত্বেও মাটি শুকনো। মাটির গভীরত্ব পানি শুষে নিয়েছে। গাছের ডাল পালা ভিজে চুপসে আছে। মাটিতে পরে থাকা পাতা গুলো পিছলে দিচ্ছে। তাই ডাল দিয়ে নিজেদের ব্যালেন্স রাখার চেষ্টা করছে দুজন। পাহাড়ের উপর থেকে প্রায় মিনিট বিশেক হাটার পর অবশেষে কাঙ্ক্ষিত স্থানে এলো দুজন। শশী চোখে মুখে বিস্মিকর রেখে তাকিয়ে আছে ঝর্নার দিকে। ছোট ঝর্না হওয়ায় রিক্সির ব্যাপারটা সামান্য। রবি তার কোমড়ে বাধা শার্ট, জুতা, ঘড়ি খুলে একটা পাথরের উপরে রাখলো। খুব সাবধানতার সাথে পাথরে পা রেখে পানিতে নামার চেষ্টা করলো। কাল বৃষ্টি হওয়ায় পাথর সব ভিজে একাকার। তার উপর ঝর্নার পানিতে পাথরের উপর শৈবাল জমে আছে। ভুলবশত পা পরলেই পিছলে পরার সম্ভাবনা বেশি। শশী একটা পাথরের উপর বসে রবির কাজ মনোযোগ সহকারে দেখছে। রবি হাটুর নিচ অব্ধি পানিতে নেমে নিরবে দাঁড়ালো। খুব চতুরতার সাথে আশেপাশে দেখে মাছের অনুসন্ধান চালালো। তখন শশী উপর থেকে চেঁচিয়ে উঠলো, ‘হ্যালো মিষ্টার। একটা রুই মাছ ধরবেন। আমার খুব প্রিয়।’

বিস্মিত চোখে তাকালো রবি। বলে কি এই মেয়ে। নির্ঘাত পাগলাগারদ থেকে পালিয়েছে। নয়তো এতো বড় মেয়ের জন্য কেউ তিন তিনটে গার্ড রাখে? রবিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে শশী আবার চেঁচিয়ে উঠলো, ‘আমার দিকে তাকিয়ে আছেন কেন? বেহা:য়া লোক কোথাকার। আমি অনেক সুন্দরী জানি এভাবে তাকিয়ে থাকতে হবে না। মাছ ধরেন।’

বিরক্ত হলো রবি। দাতে দাত পিষে বললো, ‘দয়া কইরা বোইন তোর মুখ টা বন্ধ রাখ।’

কিন্তু শশী তো শশীই। সে আর মুখ বন্ধ রাখবে? কথার বুলি চালিয়েই গেলো। ‘আমি আপনার কোন জন্মের বইন লাগি? দেখেন শনি রবি সোম। রাস্তা ঘাটে বোন বোন ডাকবেন না। একটা বউ বয়সী মেয়েকে বোন ডাকতে ল:জ্জা করে না?’

নিজের এমন কথায় নিজেই ভ্যাবাচেকা খেলো শশী। রবি চোখ ছোট ছোট করে তাকালো। বললো , ‘বউ বয়সী? তোমার মতো বাঁচাল মেয়ে যার কপালে সে বেচারা নির্ঘাত বংশের বাতি জ্বালানোর আগেই পরপারে চলে যাবে। বেচারার কপাল খারাপ।’

রাগে রিনরিনিয়ে উঠলো শশীর শরির। বললো, ‘লিসেন যার কপালে আমি আছি তার মতো এতো ভাগ্যবান এই দুনিয়াতে একটাও খোঁজে পাবেন না। হাহ্।’

রবি বিড়বিড় করে বললো, ‘হ কত ভাগ্যবান সেটা তোর সাথে একদিন থাকলেই বুঝতে পারবে।’

তারপর সিরিয়াস হয়ে শশীর উদ্দেশ্যে চেঁচিয়ে বললো, ‘দেখো মশারী, আর একটাও কথা বলবে না। কথা বললে মাছ ধরতে পারবো না। চুপচাপ বসে থাকো।’

মশারী বলায় শশী আবারো চেঁচাল, ‘শনি রবি সোমবার। খবরদার আমাকে মশারী বলবেন না। নাহলে আপনার চৌদ্দ গোষ্টি উদ্ধার করবো আমি।’

ধৈর্য হারা হয়ে রাগে হাত থেকে লাঠিটা ছুঁড়ে মারলো রবি। দাতে দাত চিবিয়ে বলে, ‘তোকে এখন পানিতে চু:বা:বো আমি। মে:রে মাটিতে পুতে ফেলবো। দাঁড়া তুই।’

সিরিয়াসলি রবিকে এগিয়ে আসতে দেখে শশী আহঃ বলে উঠে দাঁড়ায়। এক পা দু পা এগিয়ে দৌড় লাগায়। তাকে দৌড়াতে দেখে রবিও পিছু নেয়। শশী আর্তনাদ করে বলতে লাগলো, ‘ভাই আমার। কলিজা। দয়া করে এমন করো না। আমার এখনো বিয়ে করা বাকি। বাসরও হয় নাই। জামাই আমার অল্প বয়সে বিধবা হয়ে যাবে। দেখো ভাই আমার নাতি নাতনির বিয়ে খাওয়া এখনো বাকি। প্লিজ ছেড়ে দে ভাই কেঁদে বাঁচি।’

হাসি পেলো রবির। শশীর পিছু দৌড়ে ধরে ফেললো তাকে। এক হাতে টেনে পানির কাছে আনতে আনতে বললো, ‘বিয়ে করার ভালোই শখ দেখছি। বাসর বাকি, নাতি নাতনির বিয়ে খাওয়া বাকি। ভালোই এনার্জি আছে।’

শশী নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই রবি জোরপূর্বক কোমড়ে হাত জড়িয়ে শশীকে পানিতে ফেললো। তাৎক্ষনাৎ শশী পানিতে নাকানিচুবানি খেয়ে উঠলো। রবি উপরে পাথরে দাঁড়িয়ে হাতে হাত তালিয়ে দিয়ে উচ্চস্বরে হেসে ফেললো। শশী চুল গুলো পিছে ঠেলে দাতে দাত চিবিয়ে কটমট চোখে রবির দিকে তাকালো। এখানে পানি শশীর কাধ বরাবর পর্যন্ত। রবিকে পেটে হাত ধরে হাসতে দেখে শশীও আনমনে হেসে ফেললো। হাত দিয়ে পানির ছিটেফোঁটা রবির দিকে দিতে লাগলো। রবি চেঁচিয়ে বললো, ‘এই মেয়ে খবরদার পানি ছিটাবে না। থামো।’

শশী থামলো না। খিলখিল করে হাসতে লাগলো। রবি দুই হাত সামনে এনে পানির ছিটেফোঁটা থেকে বাঁচার চেষ্টা করছে। হঠাৎ পায়ে কিছু একটা হেচকা টান পরতেই পানিতে ধরফড়িয়ে পরে যায় রবি। সেও নাকানিচুবানি খেয়ে উঠলো। ডুব দিয়ে উঠে মাথা এপাশ থেকে ওপাশ করে পানি ঝেড়ে শশীর দিকে তাকালো। শশী এখনো প্রাণ খুলে হাসছে। উপরের মাড়ির বাকা দাতের জন্য হাসিটা মারাক্তক সুন্দর লাগছে। চোখে মুখের পানির বিন্দু কণা গুলো মুক্তের ন্যায় চিকচিক করছে। শশীর হাস্যউজ্জল চেহারা দেখে ভালো লাগলো রবির। বুকের বা পাশে চিনচিন ব্যাথা অনুভব করলো। হার্টবিট দ্রুততার সাথে কয়েকটা মিস হয়ে গেলো। হায়! প্রথম প্রেমের আভাষ!

চলবে??

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here