প্রেমানুরাগ পর্ব ১৩

0
490

#প্রেমানুরাগ❤️
#মাইশাতুল_মিহির
#পর্ব-১৩

রাত্রীর প্রথম ভাগ। বাহিরে ঘুটঘুটে অন্ধকারে পরিবেশ নিরব। রাস্তাঘাট সোডিয়ামের কৃতিম আলোতে আলোকিত। নিস্থব্ধ পরিবেশে মৃদু শীতল বাতাসে থাইগ্লাসের সামনে ঝুলানো সাদা পর্দা গুলো দুলছে। বিছানার হেড সাইডে হেলান দিয়ে বসে আছে শশী। হাতের মোবাইলে রিংটোন বাজতেই সাইলেন্ট করে বিছানার পাশে রেখে দিলো শশী। বুকে দুই হাত গুঁজে বিছানায় বসে দরজায় তাকিয়ে আছে। বিকেলে রুমে এসে যে দরজা লাগিয়েছে এখনো দরজা খুলে নি। আর সোহরাব? সেই থেকে দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে নানান কথা প্রলাপ করে শশীর রাগ ভাঙ্গানোর চেষ্টা করছে। সোহরাবের এমন পাগলামো তে শশী মাঝে মাঝে বিরক্ত হলেও প্রচন্ড ভালো লাগে তার। হাসি পায় প্রচুর। তার বাবা মাঝে মাঝে পাগলামো নয় বাচ্ছামো করে। প্রতিটা মেয়ের কাছে হয়তো তার বাবার করা প্রত্যেক ভালো কৃতকর্ম পছন্দ খুব। শশীর ক্ষেত্রেও তাই।

‘শশী মামনি! দরজা খুলো প্লিজ। আর এমন হবে না। দেখো কান ধরছি।।’ অস্থির কন্ঠে বললো সোহরাব। তার পাশে ইকবাল দেয়ালে হেলান দিয়ে পকেটে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে ছিলো। সে শশীর উদ্দেশ্যে চেঁচিয়ে বললো, ‘শশী, তোর বাপ না’কা’নি’চু’বা’নি ভালোই খাইতেছে। দরজা খুলিস না। আরেকটু হ্যানস্তা হতে দে।’

সোহরাব চোখ পাকিয়ে ইকবালের দিকে তাকালো। বললো, ‘দুধ কলা দিয়া কালসাপ পুষছি আমি। তুই সামনে থেকে যা। নয়তো তোরেও ওই পোলার মতো অবস্থা করমু।’

ইকবাল কন্ঠস্বর ত্যাঁছড়া করে উত্তর দিলো, ‘তুই হবু শ্বশুর হওয়ায় ওই পোলা তোরে ছাড় দিছে। আমি? কোলে বসাইয়া চুম্মাহ্ দিমু ভাবছোস? ডাবল দিমু।’

ঠোঁট চেপে হাসলো শশী। হাসি তার থামছে না। আবার উচ্চস্বরেও হাসতে পারছে না। বাবা-চাচার এমন ঝগড়া সে বেশ ভালো উপভোগ করে সবসময়। ছোট থেকেই দেখে আসছে ইকবাল আর সোহরাব একে অপরের সাথে এভাবে ঝগড়া করে। তবে দুজনের পথ কখনো আলাদা হয়না। এমন বন্ধুত্ব বোধহয় হাতে গুনা কয়েকটা পাওয়া যাবে। দুজনের এমন মিলমিশ দেখে প্রসন্ন হয় শশী।

আবারো ডাকলো সোহরাব। শশী তার হাসি মুখ খানা গম্ভীর করে দরজা খুলে বিছানায় বসলো। সোহরাব ইকবাল রুমে আসলো। সোহরাব শশীর পাশে আর ইকবাল চেয়ার টেনে শশীর সামনে বসলো। শশী বুকে হাত গুঁজে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে রেখেছে। সোহরাব আবারো এটা সেটা বলছে। কিন্তু শশী প্রতিত্তুরে নিরব। হতাশ হলো সোহরাব। অসহায় কন্ঠে বললো, ‘ওই দ’জ্জা’ল মহিলার জন্য তোর পাপার সাথে রাগ করে আছিস? এটা রীতিমতো অন্যায় শশী। অন্যায়!’

চোখ বড়বড় করে সোহরাবের দিকে তাকালো শশী। ইকবাল খুকখুক করে কেশে গলা ঝেড়ে বললো, ‘তুই রাগ ভাঙ্গাতে আসছোস নাকি আগুনে ঘি ঢালতে?’

ইকবালের কথায় সোহরাবের টনক নড়লো। শশীর দিকে তাকাতেই দেখে শশী তার দিকে কটমট চোখে তাকিয়ে আছে। সোহরাব বোকা বোকা টাইপ হাসি দিয়ে বলল, ‘সরি, ভুলে বলছি। ওই শাঁ’ক’চু’ন্নি মহিলা। সরি সরি ভদ্র মহিলা হবে।’

শশী নিরবে হতাশার নিশ্বাস ফেলে হালকা মাথা এদিক সেদিক দুলালো। তারপর বললো, ‘পাপা তুমি।’

‘তো কি বললো? ওই মহিলা আসলেই শাঁ’ক’চু’ন্নি। দেখিস নি কিভাবে ঝগড়া করছিলো? এই মহিলার ছেলের সাথে তোর বিয়ে ক্যান্সেল।’

ইকবাল সোহরাবকে অপদস্থ করে বলে উঠলো, ‘তুই মনে হয় ভদ্র? তুই নিজেই বেডি মানুষের মতো কোমড়ে ওড়না বেধে ঝগড়া করছোস। লাইক সিরিয়াসলি সোহরাব?’

সোহরাব ইকবালের দিকে দাতে দাত পিষে তাকিয়ে বললো, ‘তুই বাইর হ। যা ভাগ এখান থেকে।’

শশী এবার নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে উচ্চস্বরে হেসে ফেললো। ইকবাল সোহরাব দুজনই প্রসন্ন হলো তার হাসিতে। শশী হাসতে হাসতে শুধাল, ‘পারো তোমরা সারাদিন ঝগড়া করতে।’

শসীর হাসিতে প্রসন্ন হলো সোহরাব। সাথে ইকবালও। দুজনকে খুশি হতে দেখে শশী হাসি থামিয়ে গম্ভীর্ম মুখে বললো, ‘বাই দ্যা ওয়ে, আমার রাগ ভাঙ্গে নি।”

হতাশার চোখে তাকালো সোহবাব। তপ্ত শ্বাস ফেলে বললো, ‘ওই শাঁ’ক’চু’ন্নির সাথে আমি কথা বলতে পারবো না।’

শাঁ’ক’চু’ন্নি বলায় শশী আবারো তেঁতে উঠলো। বাবা কে শাসনের সুরে বললো, ‘উনি খুব ভদ্র মহিলা। তুমি প্রথমে উনার সাথে মিসবিহেভ করেছো। তাই তুমি আগে উনাকে সরি বলবে। রবির সাথেও কথা বলে সব ঠিক করবে।’

সোহরাব কিছু বলতে যাবে তার আগে শশী দাঁড়িয়ে বলে উঠে, ‘আমি কোনো এক্সকিউজ শুনতে চাই না। যা বলেছি তাই করবে নাহলে আমার সাথে কথা বন্ধ।’ গটগট পায়ে বেড়িয়ে যায় রুম থেকে। সোহরাব অসহায় চোখে ইকবালের দিকে তাকাতেই ইকবাল বললো, ‘ওরা যদি একে অপরকে ভালোবাসে তাহলে তোর সমস্যা কোথায়?’

‘আমি আমার মেয়েকে হারাতে চাই না। ওরা শশীকে নিয়ে যাবে। একা থাকবো কিভাবে আমি?’

‘বোকা প্রত্যেক মেয়েই বিয়ের পর শ্বশুর বাড়ি যায়। শশী তো দেশ ছাড়ছে না। দেখা তো হবেই। শশীকে কি ঘরে বসিয়ে রাখতে পারবি? একদিন তো বিয়ে দিয়েই হবে তাই না? এতো অবুঝ কেন তুই? শশী তোর মেয়ে। তোর থেকে কেন কেউ দূরে রাখবে? যার রবি ছেলে হিসেবে অনেক ভালো। শশীকে ভালো রাখবে। ট্রাস্ট মি।’

সোহরাব প্রতিত্তুর করলো না। ভাবছে সে। সত্যি তো একদিন না একদিন শশীর বিয়ে হয়ে যাবে। এটাই তো নিয়ম। সেই আর বাঁচবে কয়দিন? ধীর্ঘশ্বাস ফেললো সোহরাব। বসা থেকে উঠে আস্তে আস্তে পায়ের কদম ফেলে নিজের রুমে গেলো। ড্রয়ার থেকে শিশিরের একটা ছবি বের করলো। ইজি চেয়ারে গা এলিয়ে বসে দেখতে লাগলো শিশির কে। এক সময় বুকের মাঝে ছবিটা রেখে প্রশান্তির ঘুম দিলো চেয়ারে বসে থেকেই।
_________________

নিরবতা! পুরো বাড়ি জুড়ে চলছে নিস্থব্ধতা। জমকালো আলোতে পুরো বাড়ি আলোকিত। অভিজাত্য খাবারের টেবিলের একাপাশে জড়সড় হয়ে বসে আছে রবি। তার ঠিক সামনে মোর্শেদ। রবি একবার মোর্শেদের দিকে তাকালো। তারপর আড় চোখে তাদের ডান পাশে বসে থাকা রোজিনার দিকে তাকালো। কিছু বলতে চাইছে রবি। কিন্তু রোজিনার তীক্ষ্ণ চাহনীতে জিভ চলছে না তার। সার্ভেন্ট খাবার দিয়ে গেলে রোজিনা খাওয়া শুরু করতে বলে।

রোজিনা খাবার চিবুতে চিবুতে প্রশ্ন করলো, ‘আমার মনে হয় কিছু বলতে চাইছো তুমি।’

রবি মামার দিকে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকায়। মোর্শেদ এক হাতে কপাল চুলকে চোখের ইশারায় বুঝায় বলে ফেল। রবি শুকনো ঢুক গিলে বলতে নিবে তার আগেই রোজিনা বলে উঠে, ‘শশীর ব্যাপার বাদে অন্য কিছু বলতে পারো।’

নিভলো রবি। আহত হলো মায়ের কথায়। হতাশার নিশ্বাস ফেলে চামচ প্লেটে রাখলো। টুং করে আওয়াজ হয় প্লেটে। শুধাল, ‘তাহলে আর কিছু বলার নাই।’

রোজিনা হাসলো। তবে সেটা সকলের অগোচরে। ছেলেটা ভালোই প্রেমে ফেঁসেছে। মনে মনে হাসি দমিয়ে রেখে বললো, ‘শশীকে আমার পছন্দ হয়েছে।’

অবাক হয়ে চকচকিয়ে তাকালো রবি আর মোর্শেদ। দুজনের এমন চাহনীতে রোজিনা হাল্কা গলা ঝেড়ে আবারো বললো, ‘কিন্তু তার বাবার মিসভিহেবের জন্য আমি তাকে আমার বাড়ির বউ করে আনতে পারবো না।’

মোর্শেদ ফুঁশ করে নিশ্বাস ফেলে বিড়বিড় করে বললো, ‘বাহ্ বইন বাহ্। গিরগিটির মতো রঙ বদলাতে ভালোই পারো!’

কথা বলে সামনে তাকাতেই দেখে রবি রোজিনা তার দিকে তাকিয়ে আছে। সে বিড়বিড় করে বললেও রোজিনা আর রবির কানে এলো কথাটা। মোর্শেদ বেক্কল হয়ে বোকা হাসি দিয়ে বলল, ‘না মানে আমি কিছু বলি নি। আমি তো খাবার খাচ্ছিলাম। হেহে।’

কেউ কিছু বললো না। মোর্শেদ হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। রোজিনা ছেলের বিষন্ন মন দেখে আবারো মনে হাসলো। পানির গ্লাস হাতে নিয়ে বললো, ‘তবে একটা শর্ত আছে।’

বলে পানির গ্লাসে চুমুক বসালো। রবি প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকালো। মোর্শেদ ইশারায় বললো রাজি হয়ে যা। রবি বললো, ‘কি শর্ত?’

রোজিনা পানির গ্লাস টেবিলে রেখে বললো, ‘আগে বলো তুমি রাজি কিনা?’

বিপাকে পরলো রবি। কি এমন শর্ত দিবে তার মা? ঠোঁট কামড়ে ভাবতে লাগলো। প্রতিত্তুরে সম্মতি দিতেই রোজিনা বললো। শর্ত শুনার পর রবির মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরলো। বিস্ময়ে চোখ তার কোটর বেড়িয়ে আসার উপক্রম। মোর্শেদ দাত কেলিয়ে হাসলো। এবার কোথায় যাবে বাছাধন? হতাশ হলো রবি। গালে হাত ঠেকিয়ে ক্ষুন্ন মনে খাবার চিবুতে লাগলো। তার মা এতো বড় কার্লপিট হবে সেটা তার জানা ছিলো না। হায়! প্রেমে পরলাম কেন আমি? কেন????

চলবে??

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here