প্রেমানুরাগ পর্ব ১২

0
487

#প্রেমানুরাগ❤️
#মাইশাতুল_মিহির
#পর্ব-১২

বৃষ্টিস্নাত বিকেল। পিচ ঢালা রাস্তা ভিজে আছে। গাছের ডাল পালা, পাতা বৃষ্টির পানিতে ভিজে চুপসে আছে। দুপুরের দিকে ঝুম বৃষ্টি হওয়ায় বিকেলের আবহাওয়া শীতল। মৃদু বাতাস ভয়ছে চারপাশে। তারই মাঝে কোলাহলপূর্ণ হাট বাজার। জনমানবপূর্ণ শপিংমল। সেখানের থার্ট ফ্লোরে দাঁড়িয়ে খুব ব্যস্ততার সাথে শশী ফোনে কথা বলছে। কথার মাঝে আবার খিলখিল করে হাসছে। তখন অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে একজন মহিলার সাথে ধাক্কা লাগে তার। মহিলার হাতে কিছু ব্যাগ ছিলো যা ধাক্কা লাগার কারনে নিচে পরে যায়। শশী কান থেকে মোবাইল নামিয়ে পকেটে রেখে ‘সরি আন্টি’ বলে। তারপর ঝুকে নিচে পরে থাকা শপিং’য়ের প্যাকেট গুলো তুলে হাসি মুখে এগিয়ে দেয়। মহিলাটি শশীর এমন সভ্য ব্যবহারে খুশি হয়। শশী আবারো অপরাধীর মতো বলে, ‘সরি আন্টি, আমি খেয়াল করি নি একদম।’

মহিলাটি তার হাত থেকে ব্যাগ গুলো নিলো। তারপর প্রতিত্তুর করলো, ‘ব্যাপার না। আমার দেখে হাটা উচিত ছিলো। ডোন্ট বি সরো গার্ল।’

প্রতি উত্তরে মিষ্টি করে একটা হাসি দিলো। তখন পাশ থেকে একটা পরিচিত কন্ঠস্বর ভেসে আসে।

‘আম্মু হয়েছে তোমার?’

হাতের ঘড়ি ঠিক করতে করতে রোজিনার পাশে দাঁড়ায় রবি। চোখ সরিয়ে সামনে তাকিয়ে শশীকে দেখে অবাক হয়ে যায় সে। শশীও রবিকে দেখে স্থব্ধ হয়ে যায়। দুজনই একে অপরের দিকে অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে আছে। ব্যাপারটা রোজিনা আচ্ করতে পারলো। রবি প্রশান্তির হাসি দিয়ে বলে উঠলো, ‘তুমি এখানে? কত খুঁজেছি তোমায় জানো?’

শশী চুপচাপ রবির দিকে তাকিয়ে আছে। রোজিনা প্রশ্ন করলো, ‘তোমরা একে অপরকে চিনো?’

রবি হেসে উত্তর দিলো, ‘হ্যাঁ আম্মু। ওর নাম শশী। আমরা দুজন এক সাথে বান্দরবন ট্রিপে ছিলাম।’

রোজিনা ছেলের হাসিখুশি মুখ দেখে পুরোপুরি সিউর হয়ে গেলো। শশীর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো, ‘মাশা’আল্লাহ, ভারি মিষ্টি মেয়ে তুমি!’

শশী বিনয়ীর হাসি দিলো। এখন কি বলা উচিত তার বুঝে আসছে না। তাই চুপচাপ ঠোঁট প্রসারিত করে হেসে কাজ চালিয়ে দিচ্ছে। রোজিনা শশীর হাত ধরে এক কাপ কফি খাওয়ার অনুরোধ জানালো। শশী বারণ করতে পারে নি। অতঃপর তিনজন ক্যাফেতে বসে বসে কফি খেলো। এর মাঝে একে অপরের সম্পর্কে সব জেনে নিলো তারা। রোজিনা আর শশীর মাঝে খুব ভালো ভাব জমলো। রবির লাইফ পার্টনার হিসেবে শশীকে ভালো লাগলো রোজিনার। রবিও প্রসন্ন হলো। এতো দিন ধরে যাকে খুঁজছে তাকে আজ অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে পেয়ে গেছে। এবার ভালো ভালোই প্রেম টা হয়ে গেলে ভালো। ভেবেই মনে মনে হাসলো সে। কফি খাওয়া শেষে ক্যাফ থেকে বেড়িয়ে এলো তিনজন। এবার বিদায় নেবার পালা। রোজিনা শশীর গালে হাত রেখে অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে বললো, ‘আমাদের বাড়িতে আসবে কিন্তু।’

শশী মুচকি হেসে শুধাল, ‘আসবো আন্টি।’

আরো কিছুক্ষণ কথা হলো শশী আর রোজিনার। রবির তো নিজেকে কাবাবের হাড্ডি লাগছে। সেও যে তাদের পাশে আছে তারা যেন তা বেমালুম ভুলে গেছে। হতাশার নিশ্বাস ফেললো রবি। তখন সোহরাব তাদের কে দেখতে পায়। সোহরাব, শশী আর ইকবাল শপিং’ এ এসেছিলো এক সাথে। শশীকে ভিতরে না পেয়ে বাহিরে খোঁজার জন্য এসে তাদের দেখতে পায়। শশীর পাশে রবিকে দেখে চেঁচিয়ে উঠে।

‘এই বেয়াদব ছেলে। তুমি এখানে কি করছো?’

হঠাৎ আকস্মিক ঘটনায় তিনজনই অবাক হয়ে যায়। শশী কিছু বলতে যাবে তার আগেই সোহরাব এগিয়ে রবির কলার ধরে বলতে লাগলো, ‘ওই দিন মা:র খেয়েও শিক্ষা হয়নি? আমার মেয়ের সাথে আবার দেখা করতে এসেছিস? এতো সাহস তোর? আজকে তোকে আমি মে:রে ফেলবো।’

সোহরাব ঘু’ষি মারার জন্য হাত উঠায়। রোজিনা আতকে উঠে। তখন ইকবাল এগিয়ে সোহরাবের হাত ধরে ফেলে। শশী আর ইকবাল মিলে সোহরাব কে ছাড়িয়ে নেয়। রোজিনা রবির হাত টেনে দূরে সরিয়ে নিয়ে আসে। সোহরাব নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলে লাগলো, ‘ছাড় ইকবাল। এই ছেলেকে মে’রে ফেলবো আজ।’

রাগান্বিত হলো রোজিনা। বললো, ‘রাস্তা ঘাটে এসব কি ধরনের অসভ্যতামি হচ্ছে? আপনার সমস্যা কোথায়? আমার ছেলেকে মারছেন কেন?’

সোহরাব বললো, ‘আপনার ছেলেকে সামলে রাখুন। আমার মেয়ের আশেপাশে যেন তাকে না দেখি। নাহলে ওই দিনের মতো আবারো মা’র’তে বাধ্য হবো।’

ভ্রুঁ কুঁচকালো রোজিনা। রবি এখনো নিশ্চুপ। রোজিনা রবির দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়লো, ‘তার মানে ওই দিন এই লোক তোমাকে মে’রে ছিলো?’

রবি কিছু বলার আগেই রোজিনা সোহরাবের দিকে তাকিয়ে কড়া গলায় বলে, ‘নিজের ভদ্রতা বজায় রাখবেন মিঃ! খবরদার আমার ছেলের গায়ে একটা আঁচড় লাগলে আপনার অবস্থা আমি খুব খারাপ করে দিবো। পারলে নিজের মেয়েকে সামলে রাখবেন।’

তর্কাতর্কি শুরু হলো দুজনের মাঝে। শশী তার বাবাকে আর রবি তার মাকে থামানোর চেষ্টা করতে লাগলো। কিন্তু কেউ থামছে না। হতাশ হয়ে একে অপরের দিকে তাকালো দুজন। শপিংমলের সামনে ঘটা এই আকস্মিক ঘটনায় চারপাশে মানুষের ভীর জমে গেছে। ঝগড়ার এক পর্যায়ে একে অন্য জনের দিকে তীক্ষ্ণ চাহনি আর কড়া থ্রে’ট দিলো। তারপর শশীর হাত ধরে সোহরাব চলে যেতে লাগলো। হতাশ হলো রবি। এগিয়ে শশীকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই রোজিনা তার হাত ধরে অন্য দিকে যেতে লাগলো। রবি আর শশী দুজনই নিরুপায়। রবি ঘাড় ঘুরিয়ে শশীর দিকে তাকালো। শশী গাড়িতে উঠার আগে একবার অসহায় চাহনীতে রবি কে দেখলো। তার পর ক্ষুন্ন মনে গাড়িতে উঠে বসলো। বিষন্নতায় ছেয়ে এলো দুজনের মন। পুরো রাস্তা কেউ কোনো প্রকার কথা বলে নি। শশী বাড়ি ফিরেই চুপচাপ দ্রুততার সাথে পা চালিয়ে নিজের রুমে চলে গেছে। ইকবার ক্রোধান্বিত হলো সোহরাবের উপর। দাতে দাত পিষে সোহরাবের দিকে কড়া চাহনি নিক্ষেপ করে সে তার রুমে চলে গেলো। সোহরাব হতাশ হলো এবার। গায়ের ব্লেজার খুলে সোফায় ফেলে গলার টাই টেনে ঢিলে করে করলো। সোফায় গা এলিয়ে বসলো। অনুতপ্তবোধ করছে সে। আসলেই তখন এমন রিয়েক্ট করা উচিত হয়নি। আচ্ছা ছেলেটা কে কি শশী ভালোবাসে? তাহলে কি শশীকে আমার থেকে দূরে নিয়ে চলে যাবে? কিন্তু শশীকে ছাড়া আমি থাকবো কিভাবে?? ছেলেটার গায়ে হাত তুলার জন্য কি শশী মামনি আমার উপর রাগ করেছে? কথা বলা বন্ধ করে দিবে? চটপট চোখ খুলে তাকালো সোহরাব। শশী কোথায়? রেগে আছে? অস্থির হলো তার মন। দ্রুততার সাথে উঠে দাঁড়ালো। পা বাড়ালো শশীর রুমের উদ্দেশ্যে।
______________

‘আম্মু আমার কথা তো শুনো?’

রোজিনার পিছু হাটতে হাটতে বললো রবি। রোজিনা সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠছে। রবির কথার কর্ণপাত করে নি একদম। রবি আবারো বলতে লাগলো, ‘ওই দিন ছোট একটা মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়েছিলো। তাছাড়া শশীর বাপ তো একটা সাইকো। উফফ আম্মু শুনো তো।’

সিঁড়ির মধ্যভাগে দাঁড়িয়ে পরলো রোজিনা। রবি তার তিন সিঁড়ি নিচে দাঁড়িয়ে আছে। গায়ের আচল পিছন থেকে সামনে টেনে শুধাল, ‘তুমি সে দিন মিথ্যে বলেছিলে আমাকে। আমি’….

কথা শেষ হবার আগেই রবি বলে উঠলো, ‘তার জন্য সরি আম্মু। শশী অনেক ভালো মেয়ে। শশীর বাপ হয়তো একটু সাইকো কিন্তু অনেক ভালো। প্লিজ এমন রিয়েক্ট করো না।’

শেষের কথাটা অনুনয় স্বরে বললো রবি। রোজিনা তার তীক্ষ্ণ চাহনীতে উত্তর দিলো, ‘ভুলে যাও ওই মেয়েকে। এতো কিছুর পরেও কিভাবে তুমি এই কথা বলছো? আমি কিছুতেই ওই লোকের মেয়েকে তোমার সাথে বিয়ে দিবো না। এন্ড ইট’স ফাইনাল।’

গটগট পায়ে চলে গেলো রোজিনা। রবি আগের জায়গায় দাঁড়িয়ে রইলো। বিরক্তিতে মুখ দিয়ে ‘শীট’ বললো। এক হাত উঠিয়ে কপাল কুঁচকে বিরক্তি মুখে ভাবছে কি করা যায়। শশীর বাবা কি আসলেই পাগল? হুদাই কেউ এভাবে রিয়েক্ট করে? আমি একা থাকলে একটা কথা ছিল কিন্তু না। আমার গুপ্তধর মা জননী সাথে ছিল। ব্যাটা যদি শশীর বাপ, আমার হবু শ্বশুর না হতো তাহলে ওখানেই দুই-চার ঘা লাগিয়ে দিতাম। উফফ ইয়ার আমার লাইফেই কেন এতো প্যারা? সব প্যারা কি খালি আমারেই দেওয়া লাগছে? হুয়াই???

চলবে??

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here