প্রণয় ডায়েরি পর্ব-৮

0
480

#প্রণয়_ডায়েরি
#Tafsia_Meghla
#পর্বঃ০৮

আজানের ধ্বনি ভেসে আসছে চারোদিক থেকে৷ আজানের ধ্বনি কানে আসতেই যেন পাখির কিচিরমিচির শুরু হয়ে গেছে৷ তাদের যেন আর ঘড়ে বসে থাকা চলেই না৷ আজান শেষ হতেই বাইরে বের হতেই হবে নয়তো যেন কোন ক্ষতি হয়ে যাবে এটা যেন নিত্য দিনের বেতন ভুক্ত কাজ৷ সূর্যর আগে যেন তাদেরই তাড়া বেশি৷ এখন না বের হলে যেন চলবেই না৷ আঁধার মাখা রাত টা যেন তারা খুব কষ্টে পোহায় পরের দিনের আলোর আশায়৷
পাখি যেমন আলো দেখার জন্য আর মুক্ত আকাশে উরার জন্য সারা রাত ছটফট করে তেমনটা যেন আমার কাছে মনে হচ্ছে কিন্তু কেন?
লোকটার প্রেমে যে পড়ছি ক্ষণে ক্ষণে তা তো বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছি কিন্তু প্রেমের সাথে কি মন টা তাকে দিয়ে দিচ্ছি নাকি? আস্তে আস্তে লোকটাকে কি ভালোবেসে ফেলছি নাকি? আচ্ছা প্রেম আর ভালোবাসা এক নাকি? দুটোই তো ভিন্ন৷ প্রেম তো মানুষের কার্যকালাপ, তার কথা তার ভাবভঙ্গি, তার মন তার চালচলন এর প্রেমে পরে৷ আর ভালোবাসা তো বলে আস্তে আস্তে তার প্রতি মায়া জরিয়ে পরা৷ যাকে ছাড়া থাকাই যায় না আর? আর কি? কে যানে এই ভালোবাসা মানে আর কি?
লোকটা সম্মোহন ক্ষমতা আছে, আমার মন মস্তিষ্ক তো সবি সম্মোহন করে নিয়েছে৷ নিজের মন আর নিজের কাছে থাকছে কই?
আর মস্তিষ্ক? সে তো তার ভাবনায় মত্ত্ব থাকে সারাটা সময়৷
আদো আদো আলো ফুটেছে আকাশে৷ আলো আর আঁধার মিলে মিশে আছে, সারা রাত বসেই কাটিয়ে দিলাম? এই তো তখন দেখলাম একটা বাজে পার হলো কি করে সারা টা রাত?
বই তো নামে মাত্র পড়ার জন্য নিয়েছিলাম সারা রাত তো তাঁর ভাবনায়ই ডুবে ছিলাম৷ কে যানে কি করছে সে? কোনো বিপদ কি হয়েছে তাঁর?
নাহ এসব আমি কি ভাবছি? কি হবে তাঁর? আচ্ছা তাহলে ফোন করলো না কেন? যে ছেলে ঘন্টায় ঘন্টায় ফোন দেওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে পরে প্রতি ঘন্টায় ঘন্টায় জিগ্যেস করে একবার কল দেই৷ তাঁর কি হলো?
হয়তো কোন কারণে ব্যাস্ত ছিলো? হবে হয়তো৷
নাহ অনেক্ষণ বসে আছি পিঠ ধরে গেছে৷ উঠে বসলাম আড়মোড়া ভেঙ্গে অতঃপর ওয়াশরুমের দিকে অগ্রসর হলাম ওযু করে নামাজ সেরে ঘুমটা টেনে বের হলাম আজ আবার হাটবো৷
আমাদের এলাকা থেকে কিছুটা দূরে একটা ঝিল আছে সেখানেই আসলাম এখানে মানুষের আনাগোনা খুব একটা বেশি না সকালে কয়েকজন মর্নিং ওয়ার্কে আসে নয়তো সারাটা সময় খালি থাকে৷ জায়গাটা পার্কের মতই ঝিলের পুরো পাশ পাকা করা একটা বসার জন্য জায়গা ও আছে৷ আর অনেক ফুলের গাছ৷ সিড়িতে গিয়ে বসলাম আসার সময় আম্মুকে বলে এসেছি৷ আমার মন খারাপ থাকলে আমি এখানেই এসে বসে থাকি প্রায়৷
করনা কালিন সময় তাই অনেকে মর্নিং ওয়ার্কেও বের হয় না খুব কম মানুষ বেড়িয়েছে৷
“এখানে এসময় বসে আছিস যে?”
হঠাৎ চেনা কন্ঠে পিছনে তাকালাম৷ চাচাতো ভাইয়ার বন্ধু মাহতাব৷ তাকে দেখে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পরলাম সে স্বাভাবিকই দাঁড়িয়ে আছে৷ তাঁর সামনে আমার প্রতিবারই আনইজি ফিল হয়৷ বাল্যকালের প্রথম মনে ধরা ব্যাক্তি বলা যায়৷ কিন্তু ওই সময়ের সাথে সাথে মানুষ পালটায় তাকে শুধু আমার দেখতে ভালো লাগতো আর কিছুই না৷
সেই ছোট বেলা ঠোঁট কাটা স্বভাব নিয়ে একবার বলেছিলাম,
“মাহতাব ভাইয়া আপনাকে আমার অনেক ভালো লাগে৷আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই৷”
সেই থেকেই তাঁর সামনে যেতেও কেমন অস্বস্তি লাগে৷ বড় হয়েছি বুঝতে শিখেছি এখন বুঝছি কি ঠোঁট কাটা কথাটাই না বলেছিলাম?
আমি নিচের দিকে তাকিয়ে উত্তর দিলাম,
” হাটতে বেড়িয়েছিলাম, হেটে এখানে এসে বসলাম৷ ”
উনি ছোট করে “ওহ” বললো৷ তিনি সব সময় উত্তরা হোস্টেলে থেকে পড়া লেখা করে বছরে অনেকবার আসলেও আমার সাথে একবারই দেখা হয়৷ থার্টি ফার্স্ট নাইটে৷ কিন্তু আজ দেখা হলো আবার৷ না জানি আমার টাইগার চাচাতো ভাই কে গিয়ে বলে,
“তোর বোন কে একা বসে থাকতে দেখেছি৷ ”
আর সময় সে আমার সাথে দাঁড়ায় না একা দেখা হলে কিন্তু আজ সে আমার সামনের সিড়িটায় এসে বসলো৷
অতঃপর কিছু গম্ভীর কন্ঠে বলেন,
“ভালো আছিস মুন?”
আমি তাকালাম একবার ভাইয়ার দিকে আমার নাম মুন ও কিন্তু সবাই তাফসি বললেও ভাইয়া মুন বলে৷
আমি মিহি হেসে জবাব দিলাম,
“ভালো তুমি?”
সে কিছুক্ষণ নিরবতা পালন করলো৷ আমি তার উত্তরের আশায় তাঁর দিকে তাকালাম অতঃপর সে নিরবতা ভেঙে বললো,
” প্রেম করছিস?”
ধক করে উঠলো বুকটা, হায় আল্লাহ ভাইয়া কি করে জানলো? এখন নিশ্চয়ই রক্ষে নেই হৃদয় ভাইয়া কে গিয়ে যদি বলে দেয়?
ভাইয়া আবার বলেন,
“ছেলেটা কে মুন?”
কন্ঠে তার স্বচ্ছতা৷ আমি এবারো উত্তর দিতে পারলাম না সে ক্ষীণ শব্দে হেসে আবার বলেন,
“ভয় পাচ্ছিস?
ভয় পাস না তোর ভাই কে কিছু বলবো না৷ ”
আমি অবাক চোখে তাকালাম৷ মাহতাব ভাইয়া তো আমরা বোনেরা কিছু করলেই ভাইয়া কে গিয়ে বিচার দেয়৷ তাহলে আজ কি হলো?
সে আমার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট এলিয়ে বাঁকা হেসে বলে,
“বড় হয়ে গেছিস মুন৷ ”
এইটুকু বলেই উঠে গটগট করে চলে গেলো তার বাড়ির রাস্তায়৷ আমি হাফ ছেড়ে বাচলাম৷ কিন্তু জানা হলো না কি করে জানলো৷ হায় আল্লাহ বাঘের পাল্লায় যে পরতে পরতে বেচেছি এই অনেক৷ নয়তো আজ ভাইয়া কে বললে আম্মুও জেনে যেতো৷
উঠলাম এখান থেকে আজ এতো কুয়াশা নেই, উঠে মাথার কাপড় টা টেনে হাটা দিবো ঠিক তখনি লেকের পাশে সাদা গোলাপ ফুল গাছটায় বড় একটা গোলাপের দিকে চোখ গেলো৷ ফুল গাছটার সামনে এলাম ফুলটা নেওয়ার জন্য হাত বাড়াতেই হঠাৎ আবার কারো গম্ভীর কন্ঠস্বর ভেসে এলো,
“এটা ছিড়িস না মুন৷”
আমি পিছনে তাকালাম মাহতাব ভাইয়া আবার৷ শরীরে মর্নিং ওয়ার্কের পোশাক টা নেই৷ অন্য একটা গেঞ্জি পালটে এসেছে৷
আমি প্রশ্ন বোধক চাওনি দিয়ে তাকাতেই সে আবার বলে,
“যে যেখানে শোভা পায়, যে যেখানে ভালো থাকে তাকে সেখানেই থাকতে দেওয়া উচিত৷ যে তোর না সে দিকে হাত বাড়াতে বেই কিছু জিনিস তার নির্দিষ্ট স্থানেই মানানসই হাতে বা অন্য কোথাও নয়৷ ”
ভাইয়ার কথাটা ভালো লাগলো৷ ঠিকি তো ফুল টা তো আমার হাতে মানাবে না৷ ছিড়ে কি করবো? কিছুখন পর তো ফেলে রেখেই দিবো এর সৌন্দর্য ও নষ্ট হয়ে যাবে৷ কিন্তু এখানে থাকলে তার সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি পাবে৷ আমি নিলাম না৷
ভাইয়া মুচকি হেসে বলে,
“বাড়িতে যা৷ এতক্ষণ এখানে আছিস কাকিমা হয়তো খুঁজছে তোকে৷ ”
আমি মাথা নিচু করে “আসছি” বলে প্রস্থান করলাম৷
আজ সারা দিন কেটে গেলো ফোন করলো না সে৷ অভিমানের পাল্লা ভারি হচ্ছে আমি কল করেছিলাম কিন্তু ফোনটা বন্ধ ছিলো৷
সে কি আর আমার সাথে কথা বলবে না? শেষ কি তাহলে সব কিছু? থমকে গেলো এখানে সব কিছু? প্রণয় প্রহর শুরু হয়েও থমকে গেল?
ভুল মানুষ কে নিজের মন টা দিয়ে বসলাম?
মাথা ফেটে যাচ্ছে চিন্তায়৷ বুকে কেমন ব্যাথা অনুভব হচ্ছে কেন?
কেন এমন হচ্ছে?
রাত বাড়ছে ঘড়িতে বারোটা বেজে পঞ্চাশ মিনিট৷ কিছু ভালো লাগছে না৷ অশান্তি লাগছে সব কিছু৷
হটাৎ ফোনটা কেঁপে উঠলো৷ মোবাইলের উচ্ছাসিত হয়ে তাকালাম এই ভেবে হয়তো তিশান ফোন করেছে৷ কিন্তু না স্ক্রিনে তাকাতেই চোখটা ভরে এলো৷
তিশান না আননোন নাম্বারে কল এসেছে, বিরক্ত হয়ে ফোনটা কেটে দিলাম হয়তো তৃপ্তি কল করেছে ও মাঝে মাঝেই আননোন নাম্বারে ফোন করে দুষ্টুমি করে৷
কেটে দিলাম আবার ফোন এলো সে নাম্বার থেকে৷ আবারো কেটে দিলাম আবার ফোন এলো এবার বিরক্ত হয়ে ফোন তুলে ঝাঝালো কন্ঠে বলি,
“কি সমস্যা? বার বার ফোন,,,,৷ ”
বাকি কথা শেষ হওয়ার আগে ওপাশ থেকে চেনা ক্লান্তি মেশানো শান্ত কন্ঠ শুনা গেলো,
“নিচে আসবেন একবার তাফসি৷ ”

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here