প্রণয় ডায়েরি পর্ব-৭

0
536

#প্রণয়_ডায়েরি
#Tafsia_Meghla
#পর্বঃ০৭

চারোদিকে আলো আঁধারের মিলন মেলা চলছে, অহোরাত্র শেষ হওয়ার অন্তিম সময় আর গোধুলীর লগ্নের সূচনা হচ্ছে৷
শীতের হীম করা ঠান্ডা হাওয়া শরীরকে যেন আরো হীম করে দিচ্ছে৷ জানুয়ারি মাসে যেন শীত একটু বেশি পরেছে৷ সেই রেস্টুরেন্ট থেকে বেড়িয়ে ডেমরা এসেছি আমি একদমি আসতে চাইনি জোর করে নিয়ে এসেছে৷ আম্মু ফোন করে ছিলো আম্মুকে বলেছি এসে পড়বো তাড়াতাড়ি৷ আম্মু জানে বান্ধুবিদের সাথেই আছি৷ তৃপ্তি কে ফোন করে বলেছিলাম আম্মুকে ফোন করে জানাতে সে জানিয়েছে আমি তাদের সাথে আছি৷ কেমন অপরাধ বোধ কাজ করছে মিথ্যে বলে আমি ঠিক করলাম কি? এক জায়গার কথা বলে আরেক জায়গায় আসলাম কেমন যেন লাগছে৷
নদীর পার ঘেষে দাঁড়িয়ে আছি আমি আমার ডান পাশেই সে৷ স্নিগ্ধ এই পরিবেশে সাথে প্রিয় মানুষ টা থাকলে ভালোই লাগে৷ কি বললান ‘প্রিয়’? সে কি আমার প্রিয়? আমার জন্য সে কি এটাইতো জানি না৷ আচ্ছা ও কি আমার সত্যি প্রিয়? হাসলাম নিজের ভাবনায়৷ আজ কাল বেশ ভাবুক হয়ে গেছি আমি অভ্যাসটা পাল্টাতে হবে৷
স্নিগ্ধ এ পরিবেশে নদীর পানির “ছল ছল” শব্দ ধ্বনি প্রকৃতির সৌন্দর্যের উদাহরণ দিচ্ছে যেন৷ মাঝে মাঝে ট্রলার জাহাজ এর শব্দ ছাড়া চারোপাশে নিরবতা বিরাজ করছে সেই প্রথম থেকেই৷ সে চুপ করে আছে কে জানে সে কি এতো ভাবছে?আমি কি বলবো খুঁজে পেলাম না তাই চুপ করে আছি৷ আর সময় হলে তো সবার সাথে কথার ঝুড়ি নিয়ে বসি তাহলে এখন কি বলবো খুঁজে পাচ্ছি না কেন? আমি তো এতো চুপচাপ মেয়ে না তাহলে? তাঁর সামনে এলে এমন পালটে যাই কেন? তাঁর সামনে এলেই আমার কথা ফুরিয়ে যায়৷ এমন একটা গোধুলীর লগ্ন যে আমরা এক সাথে পার করতে পারবো আমার ভাবনার বাইরে ছিলো৷ ইসস কি সুন্দর সময়টা? থেমে যাক না এখানেই? সময়টা থেমে গেলে ক্ষতি কি? আরেকটু সময় না হয় তাঁর সাথে পার করতে পারবো?
লালাভো আর ধুসর সংমিশ্রণ আকাশটায় পুরো পুরি আঁধার নেমে আসছে৷ সূর্যটা ধিরে ধিরে যেন মিহিয়ে যাচ্ছে, হয়তো বা লুকিয়ে ফেলছে নিজেকে অন্ধকার রাতের মাঝে?
সে তাঁর জায়গা থেকে নড়েচড়ে সন্তপর্ণে আমার সমীপে এসে দাঁড়ালো৷ আমার বাহু ঘেঁষে দাঁড়িয়েছে সে৷ অতঃপর নিরবতা বিচ্ছিন্ন করলো গলা খাকারি দিয়ে৷ সে গম্ভীর্য কন্ঠে বললেন,
“আপনার প্রতি আমার অনুভূতিটা খুবই শক্ত পোক্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ এ অনুভুতিকে হেলা ফেলা আমি করতে পারিনি, আচ্ছা একই অনুভূতি কি আপনার মনে গড়ে তুলতে পেরেছি নিজের জন্য? যদি হয়ে থাকে তাহলে এ অনুভুতির নাম কি দেওয়া যায় বলুন তো? ভালোবাসা কি? যাই হোক আমি আপনাতে মত্ত্ব হয়ে গেছি তাফসি৷ এমনটাও সম্ভব অচেনা কারো জন্য এতোটা ব্যাকুল হয়ে যাওয়া? আমি আপনাকে খুঁজেছি তাফছি পাইনি৷ অনেক খুঁজেও পাইনি৷ ঢাকা শহরটা আমার ছোট মনে হতো উহুম শুধু ঢাকা না গোটা পৃথিবীটা আমার ছোট মনে হতো কিন্তু আপনাকে খুঁজার পর মনে হলো পৃথিবীটা অনেক বড় তাই তো আপনাকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না৷ এতো সব অচেনা মুখের মাঝে আমি সেই স্নিগ্ধ মুখশ্রী টা দেখতে পাইনি৷ অগোছালো, খাপ ছাড়া হয়ে গেলাম আমি৷ অগোছালো করে দিলেন তো আপনি আমায়? গোছালো আমিটাকে অগোছালো না করলেও পারতেন৷ আমার এমন অবস্থায় আপনি খুশি এবার?
কিন্তু আমি যে আপনাকে ছাড়ছিনা অগোছালো আমিটাকে আপনাকেই গোছাতে হবে৷ ”
এমন কঠিন স্বরে বলা অনুভুতির বহিঃপ্রকাশ আমার মনে তীরের ন্যায় বিধিয়ে দিলো যে সে৷ নিজে পাগল হয়ে আমাকেও পাগল বানানোর পায়তারা করেছেন সে৷ আজানের ধ্বনি শোনা যাচ্ছে অতি কাছ থেকে তিশান আমার পিছন দিয়ে হাত দিয়ে অন্য বাহুতে হাত দিলো৷ তাঁর সাথে একেবারে মিশে আছি৷ আমি এমনি আধা মরা হয়ে গেছি এবার পুরো পুরি আমায় মেরে ফেলবে নাকি ছেলেটা? আমি কিছু বললাম না চুপ করে রইলাম৷

বসন্তের আভা আজ
কৃষ্ণচুরার রঙ মেখেছে
গোধুলির শেষ আলো আজ
ভালোবাসার রঙ বুনেছে

কর্ণকুহরে চেনা ছন্দটা পৌঁছাতেই থম মেরে রইলাম কিছুক্ষন৷ অতঃপর মনে পরলো ছন্দটা তো নিজেরই লেখা আমি অবাক চোখে তাঁর দিকে তাকালাম৷ সে আকাশের পানে চেয়ে মুগ্ধতায় মাখা হাসি দিলো৷ ইসস কি প্রানবন্ত তাঁর হাসি৷ এ হাসি দেখে লুকিয়ে পরা সূর্যটাও হয়লো লজ্জা পেলো?আমিও হাসলাম তাঁর আড়ালে৷
কিয়ৎ সময় যেতেই সে মসৃণ কন্ঠে বলেন,
“আমার বসন্ত আপনি৷ আপনি পাশে থাকলে বারো মাসই আমার বসন্ত৷ ”
আমি হাসলাম সে কিছুক্ষণ পর প্রসন্ন কন্ঠে বলেন,
“যাওয়া যাক?”
আমি উনার চেহারার দিকে তাকালাম মাথা উচু করে সে আমার থেকে বেশ লম্বা তার বুকের কাছে আমার মাথা ঠেকে৷
সে হাসলো শার্টে ঝুলিয়ে রাখা সান গ্লাস টা চোখে পরে আমার হাত ধরে বাইকের সামনে নিয়ে এলো৷ অতঃপর সে উঠে বসে আমাকে বসতে বললো আমি উঠে বসলাম৷ সে ঘুরে আমাকে নিজ হাতে হেলমেট পরিয়ে দিলো৷ আসার সময়ের মতই৷ না ধরে বসলাম৷ তা দেখে সে কন্ঠ খাদে নামিয়ে গম্ভীর স্বরে বলে,
” ধরে বসুন তাফছি৷ ”
আমি আগের ন্যায় বললাম,
“আমি ঠিক আছি৷ ”
সে একই স্বরে বললেন,
“আপনি বড় অবাধ্য৷ ধরে বসুন রাত হচ্ছে৷ ”
আমি তাঁর কাধে হাত রাখলাম৷ সে নিজের হেলমেট পরতে পরতে বলে,
“ঠিক করে ধরুন তাফছি৷ ”
আমি এবার তাঁর কোমর জড়িয়ে বসলাম সাথে সাথে সে বাইক স্টার্ট দিলো৷ আমার বাড়ির কিছুটা দূরে খালি জায়গায় এসে থামালো আমি৷ আমি এখানে রাখতে বললাম সেখান থেকে বিদায় নিয়ে আমি বাড়ির গোলিতে ঢুকলাম সে আমার বাড়ি অব্দি পিছন পিছন এসেছে কিন্তু কেউ বুঝবে না যে সে আমার সাথে৷
আমার ভয় করছে আম্মু হয়তো বকবে? বকারি কথা মেয়ে মানুষ রাতে বাইরে থেকে এলো৷ বাড়িতে আসতে ফুপ্পিকে দেখলাম যাক জোর বাচা বেচে গেছি৷
আম্মু কঠিন কন্ঠে বলে,
“এতোক্ষণ ঘুরতে হয় বান্ধুবিদের সাথে?”
আমার উত্তর দেওয়ার আগে ফুপ্পি বললো,
“আরে ভাবি এখন বাচ্চা দের একটু ঘুরতে যেতে দিতে হয় তুমি ওকে বকো না৷ ”
আম্মু কিছু বললো না আমি নিজের ঘরে এসে বসলাম৷
বাড়িতে আসার পর একটু শান্তি লাগছে এতক্ষণ আতংকে ছিলাম কেউ যদি দেখে ফেলতো তাহলে বিপদ ছিলো খুব৷

একেবারে এতো দিন ঘরে বসে থাকা, ঘরে কাটানো খুবই কষ্ট দায়ক কিন্তু কষ্ট হলেও বা কি? বিধিনিষেধ তো মানতেই হবে৷ আবার লকডাউন পরে গেলো তাও কঠোর ভাবে, বাড়ি থেকে বের হওয়াও নিষেধ বাড়ির আশে পাশে পুলিশ থাকেই৷
জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহ শেষ আজ, তিশানের সাথে দেখা হওয়ার পাঁচ দিন পার হলো৷ এ পাঁচ দিনে অসংখ্য বার কথা হয়েছে বারংবার তার ধমক খাওয়া হয়েছে৷
লোকটার মন বুঝা বড় দায় কখনো রেগে থাকে আবার কখনো হাশিখুশি কখনো আবার তার পাগলামো৷ কবে যে আবার সেই কাঙ্ক্ষিত মুখ খানা দেখতে পাবো কে জানে?
হুমায়ুন আহমেদ এর “অপেক্ষা” উপন্যাস টা বন্ধ করে কফির কাপটা নিয়ে আবার চুমুক বসালাম৷ এখন মধ্যরাত প্রায় আকাশ নিবিড় কুয়াশাচ্ছন্ন৷ সন্তপর্ণে কাপটা রেখে পাশে থাকা মোবাইলটায় নজর দিলাম৷ কাল দুপুরের পর আজ সারা দিন কথা হয়নি তার সাথে কে জানে সে কোথায় আছে?
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অভিমান জমছে মন গহীনে, সারাদিন কি এমন মহা কাজে ব্যাস্ত সে? একবার ফোন করতে পারলো না? আমি তাঁর কথায় ভাবছি ফোন তো আমিও দেইনি৷ আমি অনেক্ষণ ভেবে ফোন দিলাম৷ ফোন রিং হলো ধরলো না৷ আমি আমার দিলাম এবার বন্ধ বলছে৷ কি হলো? ফোন ধরছে না কেন তিশান? বন্ধ করে দিলো কেন? মাথা চিন্তায় ফেটে যাচ্ছে আভার কল দিয়েছিলাম বন্ধই৷ সে কি কোন কারণে রাগ? কল হওয়ার পর বন্ধ করে দেওয়ার কারণ কি?

চলবে,

(রি-চেক দেইনি ভুল গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন৷ “

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here