প্রণয় ডায়েরি পর্ব-৯

0
489

#প্রণয়_ডায়েরি
#Tafsia_Meghla
#পর্বঃ০৯

বাকি কথা শেষ হওয়ার আগে ওপাশ থেকে চেনা ক্লান্তি মেশানো শান্ত কন্ঠ শুনা গেলো,
“নিচে আসবেন একবার ৷ ”
ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় যেন কেঁপে উঠলো যেন৷ আমি কান থেকে ফোন সরিয়ে ব্যতিব্যস্ত হয়ে নাম্বারটা আবার পরখ করলাম৷ না এ তো তাঁর নাম্বার না৷ কিন্তু তাঁর কন্ঠ তো পেলাম৷ আমি কি ভুল শুনলাম? ওপাশ থেকে আবার ক্লান্ত মাখা কন্ঠ ধ্বনি ভেসে এলো,
“দাঁড়িয়ে আছি আমি৷ ঘুমিয়ে পরেছেন? চলে যাবো কি?”
মন যেন আরো বেশি অশান্ত হয়ে এলো৷ আমি কম্পিত কন্ঠে বললাম,
“কে৷ ”
সে আমার প্রশ্ন শুনে তৎক্ষনাত উত্তর দিলো,
“আমি তিশান৷ আমি আপনার বাড়ির সামনেই দাঁড়িয়ে আছি৷ আসবেন একটু? ”
এ ছেলে এতো রাতে আমার বাড়ির সামনে এসেছে? হায় আল্লাহ কিভাবে? কেউ দেখে ফেললে রক্ষে নেই৷
আমার মাথায় কিছুই আর খেয়াল রইলো না ছুটে আমাদের গেলাম মেইন গেটের দিকে৷ মেইন গেটের সামনে এসেও আবার ফিরে এলাম৷ আম্মুদের ঘরটা ড্রইং রুমের বরাবর রুমের দরজাটা লাগাম ঠিক মত আম্মুদের দরজাটা সাউন্ড প্রুফ থাই বিশিষ্ট এটা লাগালে কেচি গেট খোলার শব্দ আর আসবে না৷
দরজাটা লাগিয়ে ড্রইংরুমে চাবির হ্যাঙ্গার থেকে চাবিটা নিলাম অতঃপর সন্তপর্ণে কাঠের দরজাটা খুলে সাথের কেচি গেটটা খুলে বের হলাম৷ এক প্রকার দৌড়ে নিচে এসে মেইন গেটটা খুলে বাইরে এসে দাঁড়ালাম৷ বুক টা ধক ধক আওয়াজ হচ্ছে এই বুঝি হৃদপিন্ডটা বেড়িয়ে আমার হাতে চলে আসবে৷ আমি বাইরে বের হতেই হাতে টান পরলো হ্যাচকা টানে একটা ফাঁকা জায়গায় নিয়ে এলো৷ জায়গাটা আমাদের বিল্ডিং আর আর মেঝো চাচার বিল্ডিং এর মাঝে কিছুটা ফাঁকা জায়গা রয়েছে সেখানে৷ প্রথমত ভয় পেলেও বুঝতে দেরি হলো না কাজ টা কার৷
আমি দেওয়ালে ঠেস দিয়ে নেত্র যুগোল বন্ধ করেই দাঁড়িয়ে রইলাম৷ হাত পা কাঁপছে৷ অতঃপর কানে তাঁর মোলায়েম কন্ঠ ভেসে এলো,
“চাঁদ আমার কাছে আসুন৷ আপনাকে দেখার জন্য যে আমি ব্যতিব্যস্ত হয়ে আছি৷ আসুন না আমার বুকে৷ জড়িয়ে নিন না আমায় আপনাতে৷”
নিসংকোচে আবেদন৷ ‘ চাঁদ’ বলে সম্মোধন করলেন আমায়? ‘ চাঁদ ‘ কেন বললেন? পরক্ষণে মনে পড়লো আমার নাম তো মুন৷ মুনের বাংলা চাঁদ কিন্তু সে এই মুন নাম জানলো কোথা থেকে? তাঁর কন্ঠে নাম টা বেশ মোহনীয় লাগছে৷ কিন্তু সে কি বুঝতে পারে না তাঁর কন্ঠে এমন আবদারে আমি যে ধাতস্থ হতে পারি না? সে কি বুঝে না তাঁর ব্যাকুলতা আমাকেও ব্যাকুল করে? ইসস কি অসহ্য অনুভূতি৷ এ অনুভুতি থেকে আমি বাঁচবো কি করে? তাঁর মুখখানার দিকে দৃষ্টি দিলাম একবার এ-কদিনে যেন একটু শুকিয়ে গেছে মুখ ভরা ক্লান্ত৷ তাঁর কথা শুনে কান গরম হয়ে যাচ্ছে লজ্জায় নতজানু হয়ে রইলাম৷
সে কি বুঝলো নাকি আমার পরিস্থিতি কে যানে? শেষোক্ত সে নিজেই আমার সমীপে এসে দাড়ালো অতঃপর বাহু টেনে তাঁর দিকে ঘুড়িয়ে সন্তপর্ণে অলিঙ্গন করে নিলেন আমায় তাঁর বক্ষস্থলে৷ আমি কিছুটা থম মেরে রইলাম৷ আস্তে আস্তে লজ্জা ঝাপটে ধরছে আমায়৷ তাঁর এহেন কান্ডে হয়তো চাঁদ টা ও লজ্জা পেলো? বেশ কিছু সময় পর তাঁর হৃদ স্ফন্দন আমার কানে এলো৷ তাঁর হার্ট যেন দ্রুত গতিতে বিট করছে৷ এ থেকে মোহনীয় সময় আর হতে পারে নাকি? এ যেন শান্তির স্থান৷ আমার স্ফন্দন ও আরো বেড়েই চলছে৷
আচ্ছা থেমে যাক না সময়টা এখানে?ক্ষতি কি হবে? কিছুখন না হয় আমরা দুটিতে নিজেদের শান্তি খুঁজে নেই? প্রশান্ত করে দেই হৃদয় টা কে? তাঁর বক্ষস্থলে আমায় জড়িয়ে নিলেও আমি তাকে এখনো জড়িয়ে ধরিনি৷ লজ্জায় আমি যে মিহিয়ে যাচ্ছি৷ আস্তে আস্তে এক হাত তাঁর পিঠে রাখলাম৷ আমার মাথা তাঁর বুকের বাম পাশটায়৷ তার এক হাত আমার বাহুতে আরেক হাত চুলে৷
কতটা সময় তাঁর বক্ষপিঞ্জরায় ছিলাম জানি না খেয়াল ও নেই৷ কিয়ৎক্ষণ বাদ আমি নিজেই সরে আসলাম, মনে পরলো আমি তো অভিমান করেছি তাঁর উপর৷ কেন আমি তার বক্ষস্থলে থাকবো? কাল সারাদিন আজ সারাদিন এক বার ও সে আমার খবর নেয়নি এখন ভালোবাস উতলে পরছে হুহহ
সে কি বুঝলো নাকি কে যানে আমার অভিমানী মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো সে৷ অতঃপর হেসে বলে,
“আমার অভিমানীর অভিমান টা কি খুব বেশি?”
আমি আবারো কেঁপে উঠলাম “আমার অভিমানী” কথাটা শুনে৷ আমাকে তাঁর বলে সে দাবী করলো? আমি তাঁর?
আমি নতজানু হয়ে রইলাম৷ সে হেসে মিহি কন্ঠে বলেন,
“কাল থেকে দেখা করার অনেক চেষ্টা করছি কিন্তু পারছিলাম না৷ মোবাইল টা নষ্ট হয়ে গেছে লকডাউনে সব কিছু বন্ধ৷ মায়ের ফোনটা নিলাম আজ৷ কাল বিকেলে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত বাইকে এসেও ফিরে যেতে হয়েছে আমার৷ তাই আজ রাত করেই এলাম৷”
আমি অবাক হলাম তাঁর কথায়৷ লোকটা কি পাগল? লকডাউনে কেউ বের হয়? আর আজ এতো দূর থেকে এতো রাত করে আসার কি খুব দরকার ছিলো? আমার অভিমান যেন গলতে শুরু করলো৷
সে আমার কাছে এসে রসিক স্বরে বলে,
“আপনি কি কালো জাদু জানেন নাকি চাঁদ? আমাকে জাদু টোনা করে আপনাতে মত্ত করছেন?”
আমি নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে তাঁর দিকে তাকালাম৷ ছেলেটা একটা পাগলই জাদু করত যাবো কেন? জাদুর কথা যদি আসে তাহলে তা তো সে আমায় করেছে৷
সে হেসে আমার দিকে তাকালো অতঃপর তাঁর অগোছালো চুল গুলো হাত দিয়ে পিছন দিকে ঠেলে দিলেন৷ এখন ইচ্ছে করছে সদ্য গোছানো চুল গুলো এলো মেলো করে দেই৷ ইচ্ছেটা প্রখর ভাবে জাগছে কিন্তু এর আগেই তিনি তাঁর হাত ঘড়ি পরখ করে বলেন,
“আড়াইটা বেজে গেছে৷ বাড়িতে যান চাঁদ৷ ”
আমি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলাম অতঃপর বেড়িয়ে এলাম সে ফাঁকা জায়গা থেকে৷ আমার বাড়ির স্টিলের মেইন গেইটা সে নিজেই হাত বাড়িয়ে খুলে দিলেন আমি ভিতরে ঢুকলাম অতঃপর সে অপ্রন্ন কন্ঠে বললেন,
“আসছি আমি৷ ”
আমি নিচু হয়ে হাসলাম, তাঁর হয়তো যেতে ইচ্ছে করছে না তাঁর কন্ঠে অপ্রসন্নতা বিরাজমান৷ সে বললো,
“আপনি যান আগে৷ ”
আমি মলিন হেসে মেইন গেইট টা বন্ধ করতে নিয়েও খুলে ফেললাম৷ সে যাওয়ার জন্য কয়েক কদম এগিয়ে গেছে ঠিক তখনি আমি পিছন থেকে বলি,
“তিশান শুনুন৷ ”
আমি বলতে দেরি তাঁর পেছনে ঘুরে তাকাতে দেরি হলো না৷ তাঁর নেত্র পল্লব ধীর৷ সে তাঁর জাগয়ায় দাঁড়িয়ে আছে স্থীর হয়ে আমার কথার আশায়৷ আমি দুষ্টু হেসে গেটের বাইরে গিয়ে তাঁর চুল গুলো এলো মেলো করে এক প্রকার দৌড়েই আবার গেটের ভিতর এসে দাঁড়ালাম তাঁর ভাব ভঙ্গি দেখার আশায়৷ সে ঠোঁট কামড়ে হেসে দিলো৷ আমি লজ্জা পেলাম এবার৷ সে আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
“বাড়িতে যান চাঁদ আমি আবার আসবো৷ ”
বলে সে যেন তাড়াহুড়ো করে বেড়িয়ে গেলো৷ আমি বুঝলাম না এমন করে গেলো কেন? রাগ করেছে কি! না সে তো হেসেছিলো৷
ছেলেটা সত্যি অদ্ভুত৷ নয়তো হুটহাট কি করে বুঝা বড় দায় হয়ে যায়৷
আমি আনমনে হেসে দরজা বন্ধ করে সব কিছু ঠিক ঠাক করে নিজের ঘরে এসে বসলাম ঠিক তখনি মোবাইল টা টং করে এলো৷
ম্যাসেজ এলো তাঁর,
“চুল খুলে বাইরে বের হবেন না চাঁদ৷ প্রাণনাশিনী লাগে আপনাকে৷ মনে হয় এই বুঝি আমার প্রাণটা নাশ করে দিবেন৷ আর ওভাবে লজ্জা পেয়ে মুখ কুকিয়ে হাসবেন না বক্ষস্থল যে ক্ষত সৃষ্টি হয়৷ এমনিতেই অর্ধ মৃত হয়ে ছিলাম আজ এভাবে আরো দূর্বল না বানালেও পারতেন চাঁদ৷”

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here