প্রণয় ডায়েরি পর্ব-৩৩ শেষ পর্ব

0
664

#প্রণয়_ডায়েরি
#Tafsia_Meghla
#পর্বঃ৩৩

অন্তরিক্ষ তখন কৃষ্ণ আবরণে ছেয়ে আছে প্রেমিক পুরুষের মন ও তখন আঁধারে নিমজ্জিত৷ রাত দশটা বাজে৷ প্রগাঢ়, নিবিড় অভিমান থম মেরে দাঁড়িয়ে আছে নিজের প্রিয় বারান্দাটায়৷
প্রেয়সী বড্ড পাষাণ, এই পাষান হৃদয়ের মেয়েটাকে কিছু বলতেও পারে না৷ মেয়েটা কোন সময় ওর কষ্টটা নজরে আনে না৷
তাফসি সন্তপর্ণে এসে দাঁড়ালো তিশানের কাছে পাশে৷ নির্লজ্জ ছেলেতা নিচে ওকে লজ্জায় ফেলে এখানে এসে দাঁড়িয়ে আছে৷ এ বাড়ির সবাই তো ঠিকই এই ছেলেটা এমন ঘাড় বাঁকা স্বভাবের কেন?
“খুব রেগে আছেন?”
তাফসির কন্ঠে ধ্যান ভাঙে তিশানের ঠিকঠাক হয়ে দাঁড়ায় অতঃপর গম্ভীর কন্ঠে উত্তর দেয়,
“রাগবো কেন?”
তাফসি হাসলো প্রসন্ন হাসি অতঃপর মিহি কন্ঠে বলে,
“তাহলে চলে এলেন যে? আমি তো চলে যাচ্ছি৷”
তিশান বাঁকা হাসলো৷ তিশানের এহেন হাসি দেখে চোখ কুঁচকে তাকালো তাফসি ছেলেটা হাসছে কেন? কি চলছে এই ছেলের মাথায়?
তিশান উষ্ঠ কোণে হাসি রেশ ফুটিয়ে রেখেই তাফসিকে নিজের কাছে টেনে নিলো অতঃপর ললাটে গভীর চুম্বন একে বলে,
“চলে আর যাবে কই? ফিরতে তো হবে আমার আঙিনাতেই৷ আমার অন্দরে৷ অন্তরের অন্তস্থলে৷”
তাফসি একই ভঙ্গিতে হাসলো অতঃপর বললো,
“যদি না আসি?”
তিশান তাফসির কর্ণদ্বয়ের কাছে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,
“তুলে আনবো কালকের মতো৷ বেঁধে রাখবো৷”
অতঃপর কানের নিচে ঘাড়ে গভীর ভাবে মুখ ডুবালো কেঁপে উঠলো তাফসি৷ লজ্জায় আড়ষ্ট হলো ছেলেটা আজকাল গভীর ভাবে ছুঁয়ে দিয়ে মারার ফন্দি আটছে৷ হৃদপিণ্ড টা এই বুঝি বেরিয়ে আসবে৷
শরীর হীম হয়ে আসছে এই বুঝি পরে যাবে মেয়েটা ঠিক তখনই বাইরে থেকে ডাকার শব্দ পেলো৷
তিহান ডাকছে নিচে সবাই অপেক্ষা করছে ওর জন্য৷
তিশান ছাড়লো অতঃপর ললাটে ফের ভালোবাসার পরশ এঁকে দিয়ে বলেন,
” তোমায় নিতে ফের যাবো৷ আমার আকাশে ফের চাঁদ উঠবে ঝলমলে জলজ্যান্ত চাঁদ৷”
তাফসি ছাড়া পেয়ে যাওয়ার জন্য কয়েক কদম এগিয়েও থেমে গেলো৷ অতঃপর পিছন ফিরে তাকিয়ে বলেন,
“অপেক্ষায় থাকবো তোমার…..৷ ”
বলেই লাজুক মেয়েটা আর দাঁড়ালো না প্রস্থান করলো৷ থমকালো তিশান৷ হাসলো মন খোলা প্রসন্ন হাসি৷



দিন পেরোলো সময় পাল্টালো৷ কাঙ্ক্ষিত সময় ঘনিয়ে এলো৷ হলুদ জামা পরে বড় ঘোমটা দিয়ে স্টেজে বসে আছে তাফসি৷ তিশানের সাথে কথা হয়নি আজ সারাদিন৷ স্বর্না আর তাসনিম মিলে ফোন নিয়ে নিয়েছে৷ তিশানের ফোন ও নিয়ে নিয়েছে ইশান আর আরাভ৷
আজ সে সবার মধ্যমনি তার দিকেই সবার নজর৷ এক সপ্তাহের মাঝে একটা বিয়ের অনুষ্ঠান করা আজকালকের দিনে খুব কঠিন না হলেও সহজো নয় ব্যাস্ত হয়ে এদিক ওদিক ছুটছে বাড়ির বড়রা৷ আত্মিয় পরিজন খুব একটা না বললেও যারা এসেছে তাদের কৌতুহলতা শেষ নেই৷ কয়েকদিন আগে এ বাড়ির এক মেয়ে বিয়ে হবার এক সপ্তাহের মাঝেই সেই মেয়ের দেবরের সাথে আরেক মেয়ের বিয়ে৷ তাফসির বড় চাচাতো বোনের বিয়ে না হয়ে ওর হচ্ছে এ নিয়েও মানুষের কথার শেষ নেই৷
কিন্তু আপাদত কেউ সে কথায় কান দিচ্ছে না৷ অতি বড় না করে হলেও ছোট খাটো করে অনুষ্ঠান টা করছে তা তাফসির কথাতেই৷ ওয়ালিমা ও বাড়িতে বড় করে হবে৷ নিচে নজরদারি করে উপরে এসে বসলো তাফসির বাবা মেয়েকে একটু আগে বসানো হয়েছে এখানে৷
মেয়েটা বড় হয়ে গেছে অনেক কাল চলে যাবে তার নতুন ঠিকানায়৷ এখন থেকে সে ঘরই হবে মেয়ের নিজের বাড়ি নিজের ঘর৷ তারা হবে মেয়ের পর৷
তাঁর আঙিনায় আর তাঁর আম্মাজানের গুঞ্জন শোনা যাবে না৷ প্রতিদিন বড় মেয়েটাকে ডাকার চাকরি টা ঘুচোলো৷ দুই মেয়ে হলেও দু-চোখি করেনি কখনো তবুও ভালোবাসার ক্ষেত্রে বড়রা তো একটু বেশি পায়৷ কারণ প্রথম মাতৃত্ব আর পিতৃত্বের স্বাদ তো তারাই বোঝায়৷ মেয়ে দুটো তাঁর প্রান কাল একজন চলে যাবে৷
ছোট মেয়েটা থেকে বড় মেয়েটা সবসময় বাড়িটাকে মাতিয়ে রাখতো শুধু ওনার বাড়ি নয় এনার আরো তিন ভাইয়ের বাড়িটাও এই মেয়েটাই মাতিয়ে রাখতো৷ স্বর্না আর তাফসি সর্বদাই চঞ্চল বাকিরা একটু গোমড়া স্বভাবের৷
হলুদে মেয়েটাকে রাজকন্যার মতই লাগে৷ শুধু হলুদ নয় তাঁর রাজ কন্যাতো সব রঙেতেই সুন্দরি৷
বাবা বলে হয়তো? বাবার কাছে তো সবার থেকে তাঁর মেয়েই বেশি সুন্দর৷
তিশান কে তার মনে ধরেছে খুব বেশি৷ মেয়ে ভুল মানুষ কে যে ভালোবাসেনি এই তাঁর শান্তি৷
ছেলেটা তার মেয়ে বলতে পাগল এক একটা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জিনস নিজের উপার্জনের টাকায় কিনে দিয়েছে বাবা ভাই থেকে নেয়নি৷ তাফসি কি পরবে তা থেকে সব কিছু নিজের পছন্দে এনেছে৷ তিশান নামক ছেলেটি বড্ড স্পষ্টবাদী আর আত্মবিশ্বাসী এমন ছেলে তাফসির বাবার মন্দ লাগে না৷
তাফসির বাবা আর মা মিলে হলুদ ছোয়ালো মেয়েকে৷ বাবার মলিন মুখ দেখে ঝাপসা হয়ে এলো তাফসির অতঃপর বললো,
“আমি নেই বলে আমাকে ঘুম থেকে তুলতে হবে না এটা মোটেও ভেবো না৷ প্রতিদিন ফোন করে জাগাতে হবে আমাকে৷”
বলেই কান্না করে দিলো তাফসি জড়িয়ে ধরলো বাবা মাকে৷ বাবা শান্তনা সুরে বলে,
“কাদে না আম্মাজন৷ আমি প্রতিদিন তোমায় ফোন করবো৷”
তারা উঠে যেতেই মাহতাব আর হৃদয় এলো বোনকে হলুদ ছুইয়ে মুচকি হেসে বলে,
“এবার থেকে আর আমার ধমক শুনতে হবে না তোর৷ শান্তি থাকবি নিশ্চয়ই?”
তাফসি ভাইকে জড়িয়ে ধরে বলে,
“খুব শান্তি থাকবো৷”
মাহতাব ভাই বোনের কান্ডে হাসলো৷ ভিতরটা ওর পুরে যাচ্ছে তবুও হাসতে হচ্ছে৷ মিথ্যে হাসি৷
হলুদ দিয়ে সরে আসলো অতঃপর দূরে দাঁড়িয়ে আপন মনে আওরালো,
মোনের গহীনে তোরি নাম লেখা হৃদয়ের স্ফন্দনে তোরি কথা তোকে না পাওয়ার তৃষ্ণায় বেকুল এই মন..
ভালোবাসি যতনে ভালো বাসবো প্রতিক্ষন?

—————–
অতঃপর প্রণয় পরিনয়ের সময় ঘনিয়ে এলো লাল জামদানিটা পরে নিজের ঘরেই বসে আছে তাফসি মুখে কৃত্রিম সাজের ছিঁটে ফোটাও নেই নাকে ছোট্ট একটা হিরের নাকফুল গলায় মোটা চেইন আর কানে ঝুমকো৷ তিশানের নির্দেশেই সাজানো হয়েছে৷ এবং সে এ ও বলেছে তার বউকে স্টেজে নিয়ে বসাতে হবে না হলুদের কথা শুনেও অনেক রেগে ছিলো৷
ইসলামিক নিয়মে তাদের বিয়ে হবে মেয়ের বাড়ি থেকে কিছুই নেওয়া হবে না৷ এমনি বিয়ে হয়ে গেলেও ফের কবুল বলবে তাঁরা ওয়ালিমা হবে ওদের বাড়িতে যা খরচ হবে ওরা করবে মেয়ের বাড়ি থেকে তাদের রাজকন্যাকেই নিয়ে যাবে৷
চঞ্চল ছেলের এহেন আচরণে অবাক হয়েছিলো তিশানের বাবা৷
অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো বসার ঘর থেকে কাজী তাফসির কাছে এলো৷
অতঃপর সে কাঙ্ক্ষিত শব্দটি বলার সময় বাবার বুকে লেপ্টে কেঁদেছিলো মেয়েটা৷ ফের বিদায় হলো তিশানের আঙিনায় জলজ্যান্ত চাঁদ টা ফের প্রবেশ করলো৷
গাড়ি থেকে নেমে শক্ত করে ধরলো হাত খানা তিশান বাড়িতে ঢোকার পূর্বে মিনমিনিয়ে বললো,
“আমার অন্তস্থলে ফের স্বাগতম চাঁদ৷”
অনুভুতিতে পরিপূর্ণ হলো তাফসির হৃদয়৷ পূর্নতা পেলো ভালোবাসা৷ খুব কম সময়ের পরিচয় ফের সবটা ভাবলো তাফসি৷ সেই দেখা হওয়া থেকে এখন পর্যন্ত৷
সব নিয়ম কানুন শেষে ঘরে দিয়ে যাওয়া হলো তাফসিকে৷ সে দিন জোর করে প্রবেশ করানো হয়েছিলো ঘরটায় আজ নিজ থেকে ঢুকলো৷ তাদের মত ঘরটাও আজ সেজেছে নতুন রুপে৷

অম্বর আজ ঘুটঘুটে আঁধারে নিমজ্জিত চাঁদ নেই আকাশে অমাবস্যা৷ ওই কৃষ্ণ বর্ণের অম্বরে চাঁদ নেই আজ৷ কিন্তু তিশান নামক পুরুষটির বক্ষস্থলে চাঁদ আছে আজ৷
এ চাঁদ টা একান্ত ওর যার জন্য ও নিজের কাছেই আজ অচেনা৷
বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে তিশান তাঁর পিছনে আর পিঠের সাথে লেপ্টে আছে৷
“ওই ঘুটঘুটে অম্বরটা আমাকে নিয়ে হিংসে করছে আজ তাই তো মন ক্ষুণ্ণ করে আছে৷ ”
হঠাৎ তিশানের এহেন করে কথায় ভরকালো তাফসি৷ হাল্কা পিছনে ঘুরে প্রশ্ন বোধক চাওনি দিয়ে তাকায় তাফসি তিশান তা দেখে ফের আগের মত করে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে কাধে থুতনি রেখে জরানো কন্ঠে বলে,
“অম্বরের বুকে ওই চাঁদ টা থেকে আমার বুকের এই চাঁদ টা বেশি সুন্দর৷ ওই চাঁদ টাকে সবাই পাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়৷ আর এই চাঁদ টা একান্ত আমার কেউ পাওয়ার জন্য হাত বারালেই নাশ করে দিবো তাকে৷”

তাফয়াই হাসলো প্রসন্ন হাসি৷ কৃষ্ণ কালো অন্তরিক্ষে দৃষ্টি দিলো তাফসি৷ কর্ণদয়ের কাছে উষ্ঠ ছুইয়ে তিশান ফের অনুভূতি পূর্ন কন্ঠে বললো,
“আমার হাজারো ভাবনার ভিরে
তুমি আছো আমার অবুঝ হৃদয় জুরে”

কেঁপে উঠলো মেয়েটা কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে আনমনেই হঠাৎ ঝংকার তোলা তিনটা বাক্য বললো প্রথম বারের মত যাতে কেঁপে উঠলো দাম্ভিক ছেলেটা,
“ভালোবাসি৷”
“ভালোবাসি চাঁদ৷ ”

,,,,,,,,,,,,,সমাপ্ত,,,,,,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here