#ধূসর_শ্রাবণ?
#লেখিকা:#তানজিল_মীম?
#পর্ব-০৯
________________
চিরচেনা এক পুরুষের কন্ঠ শুনে চোখ খুলে তাকালো হিয়া। পাশ ফিরেই নির্মলকে দেখে বেশি কিছু না ভেবেই বলে উঠল সে,
‘ আমার জ্বর হলে আপনার কি?’
‘ আমার কি মানে আমারই তো সবকিছু যাই হোক চলো আমার সাথে?’
‘ না আপনি যান।’
হিয়ার কথা শুনে বিরক্ত হলো নির্মল। চোখ মুখ খিঁচে নিজেকে শান্ত করে বললো,
‘ আমার মুডটা ঠিক আছে প্লিজ রাগিও না, বৃষ্টি নামবে আর বৃষ্টিতে ভিজলে তোমার জ্বর আসবে যেটা আমি মটেও চাই না। তাই কথা না বারিয়ে তাড়াতাড়ি চলো আমার সাথে ওইখানে আমার গাড়ি আছে তোমায় পৌঁছে দিবো।’
উওরে কিছুক্ষন চুপ করে রইলো হিয়া। কি করবে না করবে ঠিক বুঝতে পারছে না সে। এরই মধ্যে আকাশ পথ বেয়ে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়তে শুরু করলো। যা দেখে নির্মল বেশি কিছু না ভেবেই হিয়ার হাত ধরে এগিয়ে যেতে যেতে বললো,
‘ এই যে তুমি কথা বললে শুনতে চাও না এটাই আমার পছন্দ হয় না।’
‘ আর আমার আপনাকে।’
হিয়ার কথা শুনে নির্মল হেঁসেই বললো,
‘ আই নো বাট বিয়ে কিন্তু তোমায় আমাকেই করতে হবে এটা মনে রেখো।’
নির্মলের কথা শুনে ভ্রু-কুচকে বিস্মিত কন্ঠ নিয়ে বললো হিয়া,
‘ আপনাকে বিয়ে করতে বয়েই গেছে আমার।’
উওরে আবারো হাসলো নির্মল। কিন্তু কিছু বললো না। আর হিয়া জাস্ট হা হয়ে তাকিয়ে রইলো নির্মলের মুখের দিকে সে বুঝে না এই লোকটা কথায় কথায় এতো হাসে কেন?’
নির্মল হিয়ার হাত ধরে নিয়ে আসলো তাঁর বড় কালো গাড়িটার কাছে। তারপর হিয়াকে বসিয়ে দিয়ে সেও ড্রাইভারের সিটে বসলো। ততক্ষণে আকাশ বেয়ে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়তে পড়তে ভীষণ শব্দ করেই পড়তে শুরু করলো বৃষ্টি। বৃষ্টিতে হাল্কা ভিজেও গেছে নির্মল, চুল বেয়ে বিন্দু বিন্দু পানি জড়ছে তাঁর। যা দেখে হিয়া বলে উঠল,
‘ আপনি তো ভিজে গেছেন নির্মল?’
উওরে শুঁকনো হেঁসে গাড়ি স্ট্যার্ট দিলো নির্মল তারপর বললো,
‘ তোমার মুখে আমার নামটা শুনতে কিন্তু বেশ লাগে হিয়া।’
নির্মলের কথা শুনে ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায় হিয়া। সে কি বললো আর তাঁর প্রতিউওরে নির্মল কি বললো। এই লোকটা তো ভাড়ি বদমাশ?’
‘ এটা কিন্তু ঠিক না আমি কি এমন বলেছি যার জন্য তুমি আমায় গালি দিলে?’
সঙ্গে সঙ্গে চোখ বড় বড় হয়ে যায় হিয়ার এই লোকটা কি এখন তাঁর মনের কথাগুলো শুনতে পায় নাকি। হিয়ার রিয়েকশন দেখে আবার হেঁসে ফেললো নির্মল। ভ্রু-জোড়া কুচকে বললো,
‘ বেশি ভেবো না আগে বলো কোথায় যাবে বাড়ি নাকি কুরিয়ার সার্ভিস?’
নির্মলের কথা শুনে আবারো অবাক হলো হিয়া। চোখ বড় বড় করেই বললো সে,
‘ আপনি কি করে জানলেন যে আমি কুরিয়ার সার্ভিসে যাবো?’
উওরে বেশ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো নির্মল,
‘ আমি তো তোমার সম্পর্কে এমন এমন জিনিস জানি যেটা তুমি নিজেও জানো না।’
‘ আপনি মানুষটা তো ভাড়ি অদ্ভুত?’
‘ এটা তুমি আজ জানলে।’
এখন এর প্রতিউওর হিসেবে কি বলবে হিয়া বুঝতে পারছে না। এই লোকটার সাথে কিছুতেই যেন পেরে ওঠে না হিয়া। সেই দেখা হওয়ার প্রথম দিন থেকেই তাঁকে কারনে অকারণে জ্বালিয়ে মারছে ছেলেটা। হিয়ার এখনো মনে আছে তাঁর সাথে নির্মলের দেখা হওয়ার প্রথম দিনটার কথা। সেদিন ছিল হিয়াদের ভার্সিটির নববর্ষের উৎসব। বাংলা সালের নতুন দিনে নতুন সাজে সেজেছিল তাঁর ভার্সিটি। লাল সাদা রঙের শাড়ি পড়ে এসেছিল অসংখ্য মেয়েরা সেও পড়েছিল। চুল দিয়েছিল খুলে, দু’ হাত ভর্তি লাল কাঁচের চুড়ি, চোখে কাজল, ঠোঁটে লাল লিপস্টিক আর হাল্কা মেকাপ দিয়ে সেজেছিল খুব। সেদিন নিজেই নিজেকে দেখে ফিদা হয়ে যাওয়ার উপক্রম হিয়ার। নির্মলের সাথে হিয়ার দেখা হওয়াটা কোনো দূর্ঘটনা না আহামরি কোনো ঘটনা ছিল না জাস্ট ফুল হাতে নির্মলকে স্বাগতম জানিয়ে ছিল সে। কারন নির্মলই ছিলো সেদিন প্রধান অতিথির আসরে। সেদিন নির্মল হিয়াকে দেখে জাস্ট এতটুকুই বলে ছিল,
‘ আজ থেকে আপনার সুখের দিন শেষ দুর্দিন শুরু হলো মিস হিয়া?’
সেদিন নির্মলের কথার আগামাথা কিছু না বুঝলেও এখন হারে হারে বুঝতে পারে সে। বলতে গেলে হিয়া আর নির্মলের গল্পটার সূচনা হয় প্রথম দেখাই ভালোবাসা। হিয়াই ছিল নির্মলের জীবনের প্রথম মেয়ে যে মেয়েটাকে প্রথম দেখাই ভালোবেসে ফেলে নির্মল। আর সেই ভালোবাসা এখনো চলছে নির্মলের মনে। কখনো মুখ ফুটে বলা হয় নি ভালোবাসি কথাটা কিন্তু বাসে। হয়তো নিজের থেকেও বেশি। হঠাৎই হিয়ার ভাবনার মাঝখানে বলে উঠল নির্মল,
‘ তাহলে কুরিয়ার সার্ভিসেই আগে যাই কি বলো?’
উওরে আনমনেই হাল্কা মাথা দুলালো হিয়া। হিয়ার উওর পেতেই গাড়ির স্পিড বারিয়ে এগিয়ে চললো নির্মল। বাহিরে বেশি প্রবলভাবে বৃষ্টি না পড়লেও পড়ছে অল্প স্বল্প শব্দ করে। আর সেই বৃষ্টির মাঝেই এগিয়ে চললো হিয়া নির্মল।’
_____
টিভির সামনে বসে আছে শুভ্র। আজ তার অফিস বন্ধ সেই সুবাদে সারাদিন বাসাতেই থাকা হয়েছে শুভ্রের। পায়ে কোমড়ের ব্যাথা কমে গেছে অনেকটাই। এমন সময় শুভ্রের পাশে এসে বসলো বর্ষা। কিছুটা অভিমানী কন্ঠ নিয়েই বললো সে,
‘ আপনায় একটা কথা বলবো?’
টিভির দিকে তাকিয়ে টিভির চ্যানেল পাল্টাতে পাল্টাতেই বলে উঠল শুভ্র,
‘ হুম বলো?’
‘ আমায় ঘুরতে নিয়ে যাবেন এই ঘরের ভিতর আর ভালো লাগছে না।’
বর্ষার কথা শুনে টিভি থেকে দৃষ্টি সরিয়ে বর্ষার দিকে তাকালো শুভ্র। চুপচাপ মাথা নিচু করেই বসে আছে বর্ষা, হাত কচলাচ্ছে। শুভ্র কিছুক্ষন বর্ষার দিকে তাকিয়ে থেকে টিভিটা অফ করে বললো,
‘ ঠিক আছে।’
সঙ্গে সঙ্গে বর্ষা খুশি হয়ে বললো,
‘ সত্যি।’
‘ হুম তোমায় ১০ মিনিট টাইম দিলাম চটজলদি তৈরি হয়ে আসো।’
‘ ঠিক আছে।’
এতটুকু বলে দৌড়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠলো বর্ষা। আর শুভ্রও বেশি কিছু না ভেবে চললো উপরে তারও ভালো লাগছিল না বাড়িতে এইভাবে বসে থাকতে। যাক ভালো হয়েছে এই ভীতুরানী সাহস করে কিছু বলতে পেরেছে তাঁকে?’
আনমনেই হাসলো শুভ্র। শুভ্র বেশ আয়েশ করেই ঢুকলো তাঁর রুমে এমন সময় তাঁর মাথায় এসে পড়লো একটা শাড়ি। সাথে সাথে চমকে উঠলো শুভ্র। মাথা থেকে শাড়িটা সরাতেই নিরাশ শুভ্র কারন বর্ষা তাঁর পুরো রুমের বিছানা জুড়ে জামাকাপড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলেছে। একটা একটা করে আলমারি থেকে বের করছে আর নিরাশ হয়ে ছুঁড়ে ফেলছে। বর্ষার কাজে শুভ্র হতাশ হয়ে বললো,
‘ এগুলো কি করেছো তুমি?’
উওরে শুভ্রের দিকে না তাকিয়েই বললো বর্ষা,
‘ দেখুন না আমি একটাও ভালো জামা খুঁজে পাচ্ছি না যেটা পড়ে এখন আপনার সাথে যাবো।’
বর্ষার কথা শুনে পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে বললো শুভ্র,
‘ এতগুলো জামাকে এখানে সেখানে ফেলে দিয়ে এখন বলছো তোমার ভালো জামা নেই?’
শুভ্রের কথা শুনে পিছন ঘুরে তাকালো বর্ষা। পুরো রুমের অবস্থা দেখে ঠোঁটে কামড় দিলো সে। এ বাবা এগুলো কি করেছে সে। বর্ষা শুভ্রের মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ এগুলো তো সব শাড়ি আমি এখন আপনার সাথে শাড়ি পড়ে যাবো।’
হতাশ শুভ্র। শুভ্র কিছুক্ষন চুপ থেকে কাট কাট গলায় বললো,
‘ আগের ১০ মিনিটের সাথে আর পাঁচ মিনিট যোগ করে দিলাম যা আছে তাঁর মধ্যে একটা পড়ো তোমার সব জামা তো শাড়ি নয়। তাই যা আছে তাঁর ভিতর দিয়ে একটা পড়ো আর হ্যাঁ সাথে এই পুরো রুম পরিষ্কার করে চটজলদি চলে আসবে। না হলে তোমার একদিন কি আমার একদিন। বলেই আলমারি থেকে নিজের একটা ড্রেস বের করে রাগে হন হন করতে করতে যেতে নেয় শুভ্র। সাথে সাথে সামনে পড়ে থাকা একটা জামার সাথে পায়ে স্লিপিট খেয়ে পড়ে যেতে নেয় সে কিন্তু পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে হন হন করে চোখ গরম করে একপলক বর্ষার দিকে তাকিয়ে বেরিয়ে যায় শুভ্র,
‘ এই মেয়েটা তাঁকে পাগল করেই ছাড়বে?’ এতগুলো জামা অথচ বলে কি না পড়ে যাওয়ার মতো জামা নেই, আজব মেয়ে তো?’
এদিকে শুভ্রকে পড়ে যেতে দেখে প্রথমে হাসলেও পরক্ষণেই কি থেকে কি করবে ভেবেই মাথায় হাত দিলো বর্ষা। হঠাৎই কিছু একটা মাথায় আসতেই খুশি মনে নিচে পড়ে থাকা সব জামাকাপড়গুলো গুছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো বর্ষা।’
____
ইয়োলো রঙের টিশার্ট সাথে ব্লাক জিন্স পড়ে দাঁড়িয়ে আছে শুভ্র। অপেক্ষা করছে সে বর্ষার জন্য, বিরক্ত লাগছে শুভ্রের। সে বুঝে না এই মেয়েটা এমন কেন? একটা অগোছালোর গোডাউন যেন। শুভ্র রাগে ফুসতে ফুসতে ডাইনিং টেবিলের উপর থেকে পানির জগটা হাতে নিয়ে এক গ্লাস পানি ঢেলে ঢক ঢক করে পুরো পানিটা শেষ করলো। তাঁর ভালো মুডটারে একদম ভ্যাবাচেকা বানিয়ে দিলো। এমন সময় একটা ওয়াইট রঙের টিশার্ট ওয়াই লেডিস জ্যাকেট কালো জিন্স, খোলা চুলে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামলো বর্ষা। শুভ্র পানি খেতে খেতে তাকিয়ে রইলো বর্ষার মুখের দিকে। এদিকে বর্ষা খুব ভাব নিয়ে নিচে নামলেও লাস্ট সিঁড়ি পর্যন্ত আসতেই ধপাস করে পড়ে যেতে নিলো….
#চলবে….
[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। আর গল্প কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে।]
#TanjiL_Mim♥️