ধূসর শ্রাবণ শেষ পর্ব

0
1318

#ধূসর_শ্রাবণ?
#লেখিকা:#তানজিল_মীম?
#পর্ব-৩০ #অন্তিম_পর্ব
________________

আচমকাই ঘুমের ঘোরে চোখ খুলতেই সামনে নির্মলকে দেখে থমকে গেল হিয়া। উত্তেজিত হয়ে কিছু বলবে তার আগেই নির্মল মুখ চেপে ধরলো তাঁর। আকস্মিক নির্মলের এমন কান্ডে চোখ বড় বড় হয়ে যায় হিয়ার। হাল্কা ঘাবড়ানো ফেস নিয়েই তাকিয়ে রয় সে নির্মলের মুখের দিকে।’

এদিকে,

নির্মল হিয়ার মুখ চেপে ধরে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে শীতল ভেজা কন্ঠ নিয়ে বললো,

‘ আমি যে এসেছি এটা বাড়ির সবাইকে জানানোর খুব ইচ্ছে হয়েছে নাকি।’

প্রতি উওরে কিছু বলে না হিয়া। শুধু তাকিয়ে রয় সে নির্মলের চোখের দিকে। হিয়া নির্মলের মুখ থেকে হাত সরালো তারপর খাটের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে নিচে বসেই উল্টোদিক ঘুরে বললো,

‘ জানো তো মাত্র দু’দিন তোমায় দেখি নি বলে মনটা ব্যাকুলতার শীর্ষে পুরো। তাই তো মাঝরাতে চোরের মতো তোমাকে দেখতে আসা লাগলো।’

বলেই তপ্ত নিশ্বাস ফেলে আবারও বলে উঠল নির্মল,

‘ জানো তো তুমি আমার চোখের তৃষ্ণা হিয়া, যতই দেখি মনই ভরে না। এতটা পাগল না বানালেও পারতে কিন্তু।’

নির্মলের কথা শুনে হিয়া কি বলবে বুঝতে পারছে না। তক্ষৎনাত শোয়া থেকে উঠে বসলো সে। তারপর খাট থেকে নেমে নির্মলের পাশে বসে বললো,

‘ আপনি কোথায় ছিলেন দু’দিন?’

হিয়ার কথা শুনে হাল্কা হেঁসে বললো নির্মল,

‘ কেন আমায় খুব মিস করছিলে বুঝি?’

নির্মলের কথা শুনে হাল্কা রাগান্বিত কন্ঠ নিয়ে বললো হিয়া,

‘ বাজে কথা বলা বন্ধ করুন আর যা বলছি তাঁর উত্তর দিন।’

‘ আরে তুমি রাগ করছো কেন?’

‘ ?

‘ ওভাবে তাকিয়েও না প্রেমে পড়ে যাবো তো।’

‘ আপনি কিন্তু খুব বাজে নির্মল।’

প্রতি উওরে হেঁসে ফেললো নির্মল। কপাল জুড়ে থাকা সিল্কি চুলগুলো হাত দিয়ে সরিয়ে বললো,

‘ আই নো।’

নির্মলের কান্ডে রাগ উঠলো হিয়ার। নির্মলের দিকে তাকিয়ে বলতে নিলো সে,

‘ শুনন,,

আর কিছু বলার আগেই হিয়াকে টেনে জড়িয়ে ধরলো নির্মল। বললো,

‘ বাকি সব বিয়ের পর শুনবো।’

উওরে কিছু বলতে পারে না হিয়া। চুপ করে রয়। নির্মল কিছুক্ষন হিয়াকে জড়িয়ে ধরে চুপ করে বসে রয়। তারপর বলে,

‘ ইদানীং কাজের চাপটা যেন বেশিই বেড়ে গেছে। মানুষগুলোও না কারনে অকারণে বেশ প্যারা দেয়। আমি যে বিয়ে করবো এটা হয়তো সবাই জেনে গেছে।’

নির্মলের কথা শুনে হিয়া অবাক হয়ে বলে,

‘ আমি কিছু বুঝচ্ছি না, আপনি কি বলছেন?’

হিয়ার কথা শুনে নির্মল শান্ত দৃষ্টিতে তাকালো হিয়ার দিকে। বললো,

‘ আপনি আর সহ্য হয় না, তুমি কবে বলবে?’

থমকে যায় হিয়া নির্মলের কথা শুনে। শুধু নির্বিকার হয়ে তাকিয়ে রয় সে নির্মলের মুখের দিকে। মাথার ভিতর একটাই কথা ঘোরে তাঁর,

‘ এখন থেকে এই মানুষটাকে তুমি করে বলতে হবে?’

_____

মাঝপথে কেটে গেল অনেকগুলো দিন। সেই অনেকগুলো দিনে বদলে যায় অনেক কিছু্। শুভ্র বর্ষার জীবনে আসে নতুন সব দিন। ভালোবাসার গন্ধরা রোজ উঁকি দেয় তাদের বাড়ি জুড়ে। স্বাভাবিক সব স্বামী স্ত্রীর মতোই খুব স্বাচ্ছন্দ্যেই কাটছিল তাদের দিন। এর মাঝে শুভ্র গিয়েছিল লন্ডন। কয়েকদিন কাজের চাপে থেকে শুভ্রতার বিয়ে উপলক্ষে ছুটি নিয়ে আবার বাড়ি চলে আসে সে। পরেরবার বর্ষাকে নিয়েই পাড়ি জমাবে সে বিদেশ। ভালোবাসা হলো এমন একটা জিনিস যেটার সাধ একবার পেয়ে গেলে পুরো জীবনটাই সুন্দর মনে হবে। আর দূরে গেলে শূন্যতা ফিল হবে। তবে বর্তমানে দুটো নিয়েই ভালো আছে শুভ্র বর্ষা। শুভ্র তো এখন দাদুর কাছে প্রতিনিয়ত মনে মনে ধন্যবাদ জানায়। এই মানুষটা সাথে ওই ঔপন্যাসিকার জন্যই সে তাঁর ভালোবাসার মানুষটিকে পেয়ে গেল।’

আর রইলো নীলিমার কথা। বর্ষার সাথে একদিন রাতে কথা হয়েছিল নীলিমার। বর্ষাও বুঝিয়েছে অনেক কিছু নীলিমাও বুঝেছে। সাথে বলেছে,

‘ সে কখনোই শুভ্র বর্ষার মাঝে কাটা হয়ে দাঁড়াবে না।’

বর্ষাও খুশি হয়েছে খুব।’

জীবনে সবাই যে সবার ভালোবাসার মানুষটিকে পাবে এমন তো কথা নেই। নীলিমার মতো এমন হাজারো মানুষ আছে যারা ভালোবাসার মানুষটিকে পায় না। তবে এতে যে তাদের জীবন থেমে থাকে এমন তো নয়। জীবন তো চলতেই থাকে, কারণে অকারনে নিবিড় ভাবে।’

____

রোদ্দুরের প্রখর খুব। চারপাশে রাস্তার দুইধারে এগিয়ে চলছে অগণিত যানবাহন। আর এই অগণিত যানবাহনের মাঝেই শুভ্রতার বিয়ের শপিং করার উদ্দেশ্যে যাচ্ছে শুভ্র বর্ষা। বাকি সবাই আগেই চলে গেছে শপিং মলে। এখন শুধু এদের পালা। মুলত শুভ্রের ঢিলেমির জন্যই একা যেতে হচ্ছে তাঁদের। এতে অবশ্য হাল্কা রেগেও আছে বর্ষা। বর্ষাকে চুপচাপ মুখ ফুলিয়ে বসে থাকতে দেখে বললো শুভ্র,

‘ কি হলো এভাবে মুখ ফুলিয়ে আছো কেন?’

উওরে নিশ্চুপ বর্ষা। বর্ষাকে চুপ থাকতে দেখে আবারো বলে উঠল শুভ্র,

‘ কি হলো কথা বলছো না কেন?’

এবারও চুপ বর্ষা।’

‘ ওহ বুঝতে পেরেছি লেট হয়ে গেছে বলে রাগ করেছো।’

এবার মুখ খুললো বর্ষা। বললো,

‘ আপনি ইচ্ছে করে লেট করলেন তাই না।’

‘ তোমায় কতবার বলেছি আপনি করে বলবে না তুমি করে বলবে।’

‘ আমিও তো কতবার আপনায় বলেছি আমার দারা তুমি বলা সম্ভম হবে না।’

‘ তোমার দারা কি সম্ভব বলো তো, কি পারো তুমি?’

‘ কেন রান্না করতে পারি, আপনার জামাকাপড় গুছিয়ে রাখতে পারি আর আপনায় ভালোবাসতে।’

বর্ষার কথা শুনে শুভ্র ভ্রু-কুচকে বললো,

‘ কচু পারো। ভালোবেসে একটা কিসও তো করতে পারো না।’

সঙ্গে সঙ্গে চোখ বড় বড় করে বললো বর্ষা,

‘ কিসব আবোল তাবোল বলছেন আপনি?’

শুভ্র কিছু বলবে এমন সময় বিকট শব্দে ফোনটা বেজে উঠলে বর্ষার। উপরে শাশুড়ী মায়ের নাম্বার দেখে তক্ষৎনাত উঠালো সে। বললো,

‘ হ্যালো মা?’

বর্ষার ভয়েস শুনে অপর পাশে বর্ষার শাশুড়ী মা বলে উঠলেন,

‘ কোথায় তোমরা?’

‘ এই তো মা রাস্তায়।’

‘ তাড়াতাড়ি আসো তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছি তো আমরা।’

‘ আসছি মা। তোমরা শপিং করা শুরু করে দিয়েছো কি?’

‘ না তোমাদের জন্যই তো অপেক্ষা করছি কতক্ষণ লাগবে?”

‘ এই তো আর অল্প কিছুক্ষন।’

‘ ঠিক আছে তাড়াতাড়ি এসো।’

বলেই ফোন কাটলো শুভ্রের মা। বর্ষা কান থেকে ফোন সরিয়ে বললো,

‘ এইসব আপনার জন্য হয়েছে কতবার বললাম শুভ্র উঠুন শপিং করতে যাবো কিন্তু না আপনার তো পরে পরে ঘুমানো ছাড়া আর কাজ নেই।’

‘ আমি কি ইচ্ছে করে ঘুম থেকে উঠি না। আমার ঘুম না ভাঙলে আমি কি করতে পারি।’

‘ আপনি কি করতে পারেন মানে?’

বলেই গাল ফুলিয়ে বসে রইলো বর্ষা। এই শুভ্রের সাথে কথা বলাই বেকার। বর্ষার কাজে হাসলো শুভ্র বললো,

‘ এত রাগ করে না বোকারানি, তোমায় রাগলে যে আরো বেশি রাগাতে মন চায়।’

শুভ্রের কথা শুনে ভ্রু-কুচকে তাকালো বর্ষা। সে ভেবেছিল শুভ্র হয়তো রাগলে তাঁকে সুন্দর লাগে এমন কথা বলবে কিন্তু বললো কি?’ বর্ষার রিয়েকশন দেখে উচ্চস্বরে হেঁসে ফেললো শুভ্র। শুভ্রের কান্ডে বর্ষা শুভ্রের দিকে তেড়ে এসে বললো,

‘ আপনি খুব বাজে শুভ্র, খুব বাজে।’

বলেই শুভ্রকে কিল ঘুষি মারতে থাকে বর্ষা। বর্ষার কাজে শুভ্র হতভম্ব হয়ে বললো,

‘ আরে আরে কি করছো এক্সিডেন্ট হয়ে যাবে তো।’

‘ হয় হোক গিয়ে।’

বলেই আর কয়েকটা কিল ঘুষি মেরে সরে আসলো বর্ষা। বর্ষা থামতেই শুভ্র বর্ষার দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ অবশেষে মুক্তি।’

উওরে কিছু বলে না বর্ষা। চুপচাপ মুখ ভাড় করে তাকিয়ে রয় সে জানালার দিকে। এবার শুভ্র সিরিয়াস হলো, বর্ষাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে শীতল ভেজা কন্ঠে বললো,

‘ তুমি রাগ করলেও ভালোবাসি, অভিমান করলেও ভালোবাসি, কাছে থাকলেও ভালোবাসি, দূরে গেলেও ভালোবাসি, তোমায় ভালোবেসেই যাবো সারাটি জীবন। আমার প্রিয় বোকারানি।’

‘ হুম হইছে বেশি বেশি।’

‘ আহ্ এত সুন্দর কথা বললাম দাম দিলে না। ঠিক আছে কোনো ব্যাপার না আমরা আমরাই তো।’

উওরে হেঁসে ফেলে বর্ষা। বলে,

‘ আপনি না সত্যিই যাচ্ছে তাই।’

বর্ষার কথা শুনে হেঁসে ফেলে শুভ্র। তবে কিছু বলে না। এগিয়ে চলে নিজেদের গন্তব্যের দিকে। এমন সময় হঠাৎই উল্টো দিক দিয়ে তাদের দিকে আসতে ছিল একটা ট্রাক ব্রেক ফেল করেছে সেটা। আচমকাই সামনে ট্রাক চলে আসায় হতভম্ব হয়ে যায় শুভ্র। সাথে উত্তেজিত হয়ে গাড়ি এদিক সেদিক ঘুরাতে গিয়ে গাছের সাথে বারি খায় স্ব-জোরে। আর ট্রাকটাও সিটকে চলে যায় অন্য সাইডে। মুহূর্তের মধ্যে ঘটে যায় এই অঘটন। বর্ষার মুখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে অনবরত। শুভ্রেরও মাথা ফেটে রক্ত হচ্ছে খুব। শুভ্র তাকালো বর্ষার দিকে, যন্ত্রনায় কাতর হয়ে ছটফট করছে দুজনেই। হঠাৎই শুভ্র তাঁর চোখ বন্ধ করে ফেললো। হারিয়ে গেল অতল অন্ধকারে।’

চারপাশের লোকজন ছুটে আসলো তাদের দিকে। শোনা গেল চারপাশে, এক্সিডেন্ট হয়েছে এক্সিডেন্ট।”

_____

আজ ৬ মাস হতে চললো হিয়া তাঁর পেইজে গল্প দিচ্ছে না। ধূসর শ্রাবণ নামের চলতি গল্পের রানিং পার্ট চলছে এখনও। তাঁর পুরো পাঠক মহলে ঝড় উঠে গেছে গল্পের শেষের সেই এক্সিডেন্টের পর কি হলো শুভ্র বর্ষার? ওঁরা কি বেঁচে আছে নাকি মারা গেছে? লেখিকা গল্প কেন দিচ্ছে? কেন এখনো গল্পের লাস্ট পার্ট আসছে না? হিয়ার ফেসবুক, মেসেঞ্জার, পেইজের ইনবক্স, গ্রুপ চারিদিকে হট্টগোল পড়ে গেছে। কিন্তু হিয়া কারো প্রশ্নের জবাব দিচ্ছে না। বিগত ছয়মাস যাবৎ পুরোই নিখোঁজ হিয়া। কোথায় গেছে এই হিয়া নামক ঔপন্যাসিকা? উওর মেলে না। অতঃপর সময়ের সাথে সাথে তলিয়ে গেল সবকিছু্। কিন্তু অনেকেই ব্যাকুল হয়ে আছে শুভ্র বর্ষার এন্ডিং পার্টটা জানার জন্য। কিন্তু লেখিকা তো দিচ্ছে না।’ নানান সমালোচনা চলছে চারিদিকে? কিন্তু উত্তর কারো কাছেই যেন মিলছে না।’

____

শ্রাবণ মাস। চারদিকে বৃষ্টি আসার পূর্বাভাস চলছে। আকাশে মেঘেরা কালো হয়ে আছে, থম থমে বাতাস বইছে খুব। গাছের পাতারাও উড়ে চলছে নিবিড়ভাবে। এসবের ভিড়েই এয়ারপোর্টের সেই সিমেন্টের তৈরি বসার জায়গাটায় বসে আছে হিয়া। পরনে তাঁর ওয়াইট কালার জর্জেট থ্রি-পিচ, খোলা চুল, চোখে কালো ফ্রেমের চশমা। হাতে ডাইরি সমেত মুখে কলম রেখে চুপচাপ বসে আছে সে। মাথার ভিতর বিগত ছয় মাসের ধূসরতা ঘুরছে তার মাঝে, অগনিত পাঠকদের অগনিত কথা, অগনিত সমালোচনা সবই দেখেছে সে। কিন্তু সেই বা কি করবে সে তো নিজেও বিগত ছয় মাস যাবৎ শুভ্র বর্ষার এক্সিডেন্টের পর কি হলো তা জানার জন্য ব্যাকুল হয়ে আছে। শুভ্রের সাথে যে নাম্বার দিয়ে কথা হতো সেটা বিগত ছয় মাস যাবৎ বন্ধ। হিয়া যে কতভাবে শুভ্রকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করেনি তা বলা বড়ই দায়। কেউ জানুক আর জানুক হিয়া তো জানে এতদিন যাবৎ সে যে ধূসর শ্রাবণ গল্পটি লিখতো এটা কাল্পনিক ছিল না। প্রায় রাতে শুভ্রের সাথে কথা বলে তাদের বৈবাহিক জীবনে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা গুছিয়ে গল্প আকারে পোস্ট করতো হিয়া। আর এই জিনিসটা শুধুমাত্র হিয়া নিজেই জানে শুভ্রও জানে না। তাহলে হুট করে লাস্টের দিকটা না জেনে কি করে লিখলো হিয়া। কে হয়েছিল সেদিন, শুভ্র বর্ষা কি বেঁচে নেই আর।’

আর ভাবলো না হিয়া। মাথা ভনভন করছে তার কষ্ট হয় এসব ভাবলেও। মনটা ব্যাকুল হয়ে আছে শুভ্রের সাথে একবার মিট হওয়ার জন্য। আকাশ পথে তাকালো হিয়া। মনে মনে বললো,

‘ প্লিজ একবার তো সামনে আসো শুভ্র। আমিও জানতে চাই কি হয়েছিল সেদিন সেই এক্সিডেন্টের পর। তোমরা কোথায় আছো আর কেমন আছো জানার জন্য আমি ব্যাকুল হয়ে আছি শুভ্র।’

এমন সময় হাতে একটা কোন আইসক্রিম নিয়ে সামনে দাঁড়ালো নির্মল। বললো,

‘ সারপ্রাইজ এটা তোমার জন্য?’

হিয়া দেখলো নির্মলকে তবে খুশি খুশি ভাবটা এলো না তাঁর। যা দেখে নির্মল বলে উঠল,

‘ মন খারাপ?’

প্রতি উওরে হিয়া নির্বিকার গলায় বললো,

‘ আমি কি শুভ্র বর্ষাকে কখনো খুঁজে পাবো না নির্মল?’

হিয়ার কথা শুনে চুপ হয়ে যায় নির্মল। সেও জানে না এই প্রশ্নের উত্তর কি দিবে। গত ৬ মাস যাবৎ তো সেও কম খোঁজে নি ওদের। কিন্তু ব্যর্থ সে। শুধু নাম দিয়ে কি একটা মানুষকে খুঁজে বের করা যায়। নির্মল বসলো হিয়ার পাশ দিয়ে তারপর বললো,

‘ আমি তো কম চেষ্টা করে নি, কিন্তু পাই নি তো। তবে তুমি চিন্তা করো না কোনো না কোনো খবর তো ঠিক পেয়েই যাবো।’

উওরে শুঁকনো হাসে হিয়া। হিয়ার মন খারাপ দেখে উঠে দাঁড়ালো নির্মল। বললো,

‘ তুমি একটু বসো আমি এক্ষুনি আসছি?’

‘ ঠিক আছে।’

হিয়ার কথা শুনে আর কিছু না বলে এগিয়ে যায় নির্মল সামনে। আর হিয়া চুপচাপ বসে রয়। ডাইরিটা খোলা তাঁর লাস্ট কয়েকটা পৃষ্টায় অবশিষ্ট আছে মাত্র। রোজ কলমটা একই জায়গা এসে থেমে যায়। লেখা আর হয় না তপ্ত নিশ্বাস ফেললো হিয়া।’ এমন সময় বেশ খানিকটা বিরক্ত নিয়ে তাঁর পাশে এসে বসলো একটা মেয়ে। পরনে তাঁর শাড়ি। খানিকটা বিরক্ত নিয়েই বললো সে,

‘ এই ছেলেটা অলওয়েজ আমায় লেট করায়। একবার দেখা হোক আমি যাবই না লন্ডন।’

‘লন্ডন’ নামটা শুনতেই থমকে গেল হিয়া। পাশ ফিরে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বললো সে,

‘ আপনি লন্ডন থাকেন বুঝি?’

আচমকা কোনো মেইলি কন্ঠ কানে আসতেই পাশ ফিরে তাকালো বর্ষা। বললো,

‘ হুম।’

বর্ষার কথা শুনে হিয়া বেশ আগ্রহ নিয়ে কিছু বলতে যাবে এমন সময় সেখানে এগিয়ে আসলো শুভ্র। হিয়া শুভ্রকে দেখে তক্ষৎনাত উঠে দাঁড়ালো। বললো,

‘ শুভ্র তুমি? তুমি জানো তোমায় আমি কোথায় কোথায় না খুঁজেছি? তোমার ফোনেও কতবার কল করেছি কিন্তু প্রতিবারই বন্ধ বলেছে সেটা। তোমার সাথে দেখা হওয়ার জন্য কতটা ব্যাকুল আমি জানো তুমি? আর ও, ও কে?’

হিয়ার কথা বর্ষা উঠে দাঁড়ালো ভ্রু-কুচকে বললো,

‘ আপনি কে বলুন তো?’

‘ আমি হিয়া আর আপনি?’

‘ আমি বর্ষা।’

সঙ্গে সঙ্গে অবাক হয়ে বললো হিয়া,

‘ ওহ মাই গড তুমি তাহলে শুভ্রের বোকারানি বর্ষা। আমার তো বিশ্বাস হচ্ছে না তোমরা দুজন আমার সামনে বসে। আমি গত ছয় মাস যাবৎ তোমাদের পাগলের মতো খুঁজছি।’

হিয়ার কথা শুনে বর্ষা অবাক হয়ে বললো,

‘ কেন বলুন তো কে আপনি?’

এইবার শুভ্র মুখ খুললো। বললো,

‘ ও হলো ঔপন্যাসিকা বর্ষা।’

সাথে সাথে চমকে উঠলো বর্ষা। অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো সে হিয়ার মুখের দিকে। বললো,

‘ আপনি তাহলে শুভ্রের সেই ঔপন্যাসিকা। থ্যাংক ইউ আপি তোমার জন্যই সেদিন শুভ্র ফিরে এসে বিয়ে করেছিল আমায়।’

প্রতি উওরে হাল্কা হেঁসে উত্তেজিত কন্ঠ নিয়ে বললো হিয়া,

‘ সেসব পড়ে হবে আগে বলো সেদিন এক্সিডেন্টের পর কি কি হয়েছিল?’

হিয়ার কথা শুভ্র বললো,

‘ আমি বলছি।’

সেদিন এক্সিডেন্টের পর আমায় আর বর্ষাকে হসপিটালে নেওয়া হয়। সেখানে সিচুয়েশন ক্রিটিকাল হওয়ায় ইমিডেটলি আমাদের বিদেশে পাঠানো হয়। আর ভাগ্যক্রমে আমরা বেঁচে যাই। টানা দু’মাস তো আমরা বেডরেস্টেই ছিলাম। আমার ফোনটা হারিয়ে যাওয়ায় বাড়ির লোক নতুন ফোন নতুন সিম কিনে দেয়। অতঃপর তোমার নাম্বারটা হারিয়ে যাওয়ায় আর যোগাযোগ করতে পারি নি তোমার সাথে।’

শুভ্রের কথা শুনে অত্যাধিকহারে খুশি হয় হিয়া। অবশেষে সে তাঁর গল্পের এনডিং লিখতে পারবে। হিয়া খুশি হয়ে জড়িয়ে ধরলো বর্ষাকে। বললো,

‘ থ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ সো মাচ।’

হুট করে হিয়ার এমন খুশি হওয়ার ভাবটা ঠিক বুঝলো না বর্ষা। তাই বললো,

‘ এত ধন্যবাদ কেন?’

‘ তোমরা জানো না এটলাস্ট অবশেষে আমি আমার উপন্যাসের এন্ডিং লিখতে পারবো। বিগত ছয় মাস যাবৎ ঝুলে ছিল সেটা।’

হিয়ার কথা শুনে শুভ্র অবাক হয়ে বললো,

‘ মানে।’

প্রতি উওরে সংক্ষিপ্ত জবাব হিয়ার,

‘ তা না হয় অন্য আরেকদিন বলবো।’

এমন সময় হাতে অনেকগুলো লাভের বেলুন নিয়ে এগিয়ে আসতে লাগলো নির্মল। হিয়া নির্মলকে দেখেই খুশি হয়ে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো নির্মলকে। বললো,

‘ জামাই আজ আমি ভীষণ খুশি অবশেষে গল্পের পরিসমাপ্তি দিতে পারবো আমি।’

হুট করেই হিয়ার কান্ডে থমকে যায় নির্মল। সাথে সাথে তাঁর হাতে করে আনা অসংখ্য লাভের বেলুন উড়ে যায় আকাশে। নির্মল হা হয়ে তাকিয়ে রয় সেই আকাশ পথে উড়ে চলা বেলুনের দিকে। তারপর বলে,

‘ বেলুনগুলো উড়ে গেল তো?’

‘ বাদ দেও তো বেলুন আগে চলো আমার সাথে,

এই বলে নির্মলকে টেনে নিয়ে যায় হিয়া শুভ্রদের সামনে। শুভ্র বর্ষা তখন ওদের দিকেই তাকিয়ে ছিল। হিয়ার কান্ড কারখানা, সাথে বেলুন উড়ে যাওয়ার বিষয়টা দুটোই দেখেছে তাঁরা। সাথে অবাকও হয়েছে। হিয়া শুভ্রদের সামনে নির্মলকে দাঁড় করিয়ে বললো,

‘ শুভ্র বর্ষা মিট মাই হাসবেন্ড ইন ল। নির্মল মাহামুদ।’

উওরে বর্ষা বলে,

‘ আসসালামু আলাইকুম।’

নির্মলও অবাক হয়ে জবাব দেয়,

‘ ওলাইকুম আসসালাম।’

আর শুভ্র বলে,

‘ এই তবে তোমার ভিলেন বয়ফ্রেন্ড নির্মল। কিন্তু তোমাদের বিয়ে হলো কবে?’

‘ দু’মাস হয়ে গেছে। তোমায় তো আসার কথা বলেছিলাম কিন্তু হুট করে নিখোঁজ হয়ে যাওয়ায় মিস করলে।’

‘ কি করবো বলো বেড লাক। যাই হোক,

এই বলে নির্মলের দিকে তাকিয়ে বললো শুভ্র,

‘ হ্যালো বস আপনি কিন্তু ভীষণ লাকি ঔপন্যাসিকার মতো একজন জীবন সঙ্গিনী পেয়ে।’

শুভ্রের কথা শুনে নির্মলও হিয়ার দিকে একপলক তাকিয়ে মুচকি হেঁসে বললো,

‘ হুম। আর আপনিও কিন্তু আপনার বোকারানির মতো একজন বউ পেয়ে ভীষণ লাকি।’

শুভ্র অবাক হলো নির্মলের কথা শুনে। বোকারানি শব্দটা তবে এও জানে। নির্ঘাত হিয়া বলেছে। ভেবেই তাকালো সে হিয়ার মুখের দিকে। শুভ্রের চাহনি দেখে ঠোঁটে কামড় দিলো হিয়া। কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো,

‘ তা শুভ্রতার কি খবর বিয়ে হয়ে গেছে ওর?’

উওরে বর্ষা বলে,

‘ না আগামী মাসেই ওর বিয়ে তোমাদের দুজনকে কিন্তু আসতেই হবে।’

বলেই ব্যাগ থেকে বিয়ের কার্ডটা বের করে দিলো বর্ষা হিয়ার দিকে। হিয়াও নিলো খুশি হয়ে বললো,

‘ অবশ্যই।’

এমন সময় আকাশ পথ বেয়ে মেঘেরা গর্জন দিয়ে উঠলো। যা দেখে শুভ্র বললো,

‘ বৃষ্টি আসবে বোধহয়।’

শুভ্রের কথা শুনে হিয়া বললো,

‘ হুম। এবার বোধহয় যেতে হবে আমাদের।’

হিয়ার কথা শুনে বর্ষাও বলে উঠল,

‘ আমাদেরও।’

বর্ষার কথা শুনে মুচকি হেঁসে বললো হিয়া-নির্মল,

‘ ভালো থেকো তোমরা?’

‘ তোমরাও ভালো থেকো।’

অতঃপর অবশেষে দুই জুটি দু’দিক চলে গেল। হাজারো কল্পনার অবসান ঘটলো তবে। মাঝ পথে স্মৃতি হয়ে রয়ে গেল শুধু হিয়ার লিখে রাখা ডাইরি,

“ধূসর শ্রাবণ”

সিমেন্টের তৈরি বেঞ্চটাতে এখনো জুড়ে আছে সেটা। বাতাসের প্রবলতায় তাঁরা উড়ে চলছে খুব। জানান দিচ্ছে ভীষণ। আমি ভিজে যাচ্ছি কিন্তু, শ্রাবণ মাসের এই প্রবল বৃষ্টির ছোঁয়ায়।’ তোমরা ভালো থেকো? আর মনে রেখো এই ‘ধূসর শ্রাবণকে!’

#সমাপ্ত…??

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। অবশেষে শেষ হলো ‘ধূসর শ্রাবণ’। শুরু থেকেই অনেক অভিযোগ ছিল গল্পটা নিয়ে। এখনও হয়তো থাকবে। জানি না গল্পটা কতটুকু ভালো লেগেছে তোমাদের। তবে যেভাবে ভেবেছিলাম সেভাবেই দিয়েছি। কার কেমন লেগেছে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে কিন্তু। তোমাদের সাথে আবার দেখা হবে নতুন কোনো গল্প বা উপন্যাস নিয়ে ততদিন সবাই ভালো থাকো সুস্থ থাকো।]

~ আল্লাহ_হাফেজ

#TanjiL_Mim♥️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here