#ধূসর_শ্রাবণ?
#লেখিকা:#তানজিল_মীম?
#পর্ব-০৮
________________
অফিস থেকে বাসায় ঢুকতে গিয়ে আচমকা নিচে পড়ে থাকা পানির সাথে পা পিছলে ধারাম করে নিচে ফ্লোরে পড়ে গেল শুভ্র। ঘটনাটা হুট করে হয়ে যাওয়াতে চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেললো সে। পরক্ষনেই কিছুক্ষন পর চোখ খুলে আশেপাশে তাকাতেই পুরো রুম জুড়ে পানি দেখে চোখ মুখ শক্ত করে চেঁচিয়ে বললো সে,
‘ বররররর্ষা,
সঙ্গে সঙ্গে রান্নাঘর থেকে হাতে খুন্তি নিয়ে দৌড়ে আসতে লাগলো সে শুভ্রের সামনে। তারপর যা হওয়ার তাই হলো পা পিছলে ব্যালেন্স সামলাতে না পেরে বর্ষা গিয়ে পড়লো সোজা শুভ্রের গায়ের ওপর। এবার যেন শুভ্রের রাগ সপ্তম আকাশে উঠে গেছে। একই তো নিচে পড়ে গিয়ে কোমড়ে অসম্ভব ব্যাথা পেয়েছে তাঁর ওপর এই বর্ষা এসে পড়াতে যেটুকু বেঁচে ছিল তাও শেষ হয়ে গেল। মিট মিট চোখে তাকিয়ে আছে বর্ষা শুভ্রের দিকে। শুভ্রের থোবড়া দেখেই বুঝতে পেরেছে বর্ষা শুভ্র ভয়ংকরভাবে রেগে গেছে। বর্ষা মিটমিট চোখে শুভ্রের দিকে তাকিয়ে শুকনো হেঁসে বললো,
‘ আমায় ডেকেছিলেন শুভ্র?’
সাথে সাথে চোখ গরম করে বললো সে,
‘ এসব কি করেছো পুরো রুমে এতো পানি আসলো কোথা থেকে?’
উওরে ধীরে ধীরে শুভ্রের ওপর থেকে উঠতে উঠতে বললো,
‘ আসলে ঘরটা মুছতে নিয়েছিলাম ভেবেছিলাম আপনি আসার আগে হয়ে যাবে।’
‘ এটাকে ঘর মোছা বলে? পুরো রুমে তো শুধু পানিই দেখছি।’
উওরে শুধু দাঁত কেলানি হাসি দিলো বর্ষা। বর্ষার হাসি দেখে আরো রেগে গিয়ে বললো শুভ্র,
‘ হাসছো কেন? একদম হাসবে না। একই তো পড়ে গিয়ে আমার কোমড়ে তেরোটা বাজিয়ে দিছো।’
শুভ্রের কথা শুনে শুঁকনো হাসি থামিয়ে মিনমিনে কন্ঠ নিয়ে বললো বর্ষা,
‘ সরি আসলে আমি বু..
বর্ষা আর কিছু বলার আগেই শুভ্র থামিয়ে দিয়ে কাট কাট গলায় বললো,
‘ হয়েছে আর কিছু বলতে হবে না তোমায়!’
এতটুকু বলে নিজের হাত বর্ষার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
‘ ধরো আমায় তোমার জন্য আমার কোমড় তো শেষ।’
শুভ্রের কথা শুনে চটজলদি নিজের হাত থেকে খুন্তিটাকে সরিয়ে বললো বর্ষা,
‘ হুম।’
এতটুকু বলে তাড়াতাড়ি শুভ্রের হাত ধরে উঠালো বর্ষা। পায় আর কোমড়ে বেশ ব্যাথা পেয়েছে শুভ্র। বর্ষা ধীরে ধীরে শুভ্রকে ধরে বসিয়ে দিলো সোফাতে। শুভ্রের অবস্থা থেকে কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো বর্ষা,
‘ আপনি এখানে বসুন আমি আপনার জন্য তেল নিয়ে আসি?’
বর্ষার কথা শুনে শুভ্র ভ্রু-কুচকে বলে উঠল,
‘ তেল দিয়ে কি হবে?’
‘ মালিশ করে দিবো দেখবেন তাড়াতাড়ি সেরে যাবে।’
‘ ব্যাথা দিয়ে এখন মলম লাগানো হচ্ছে।’
শুভ্রের কথা শুনে বর্ষা কাঁদো কাঁদো ফেস নিয়ে বললো,
‘ আমি ইচ্ছে করে কিছু করি নি।’
‘ হুম ঠিক আছে ঠিক আছে যাও এখন।’
উওরে বর্ষাও পাল্টা কিছু না বলে চলে যায় রান্না ঘরের দিকে। তাঁর রান্না প্রায় শেষ। এবার সর্বপ্রথম শুভ্রের জন্য তেল গরম করে আনবে বর্ষা। এমন ভাবনা নিয়েই এগিয়ে চললো সে।’
.
সোফায় চুপচাপ বসে আছে শুভ্র। কোমড়ে খুব বেশি ব্যাথা না পেলেও পায়ে অসম্ভবভাবে ব্যাথা পেয়েছে সে। যেটা শুরুতে বুঝতে না পারলেও এখন বেশ বুঝতে পারছে। শুভ্রের রাগ হচ্ছে এই মেয়েটা তাঁকে আঘাত করতেই থাকে। প্লেনে বসে দেওয়া হাতের আঘাতটা পুরোপুরি যাওয়ার আগেই পায় আর কোমড়ে ব্যাথা পেল। শুভ্র বুঝতে পারে না এইরকম আঘাত তাঁকে আরো কতভাবে পেতে হবে। শুভ্রের মনে আছে ছোট বেলায় বর্ষা তার ঘাড়ে খুব জোড়ালোভাবে কামড় দিয়েছিল যদিও সেখানে তাঁর দোষটাই বেশি ছিল। বর্ষা ছোট বেলা থেকেই চকলেট খেতে পছন্দ করে খুব চকলেটের ভাগ কখনই দিতে রাজি নয় সে। তো একবার শুভ্র বর্ষার কাছ থেকে জোরপূর্বক তাঁর চকলেট নিয়েছিল যার শাস্তিস্বরূপ তার ঘাড়ে কামড় বসিয়ে দিয়েছিল বর্ষা। যদিও তার দাগটা এখন বেশি গভীরভাবে না থাকলেও অল্প স্বল্প আছে। সেই থেকেই এই বর্ষার নামক মেয়েটাকে অপছন্দ করে শুভ্র। যদিও এখন সে বুঝে ছোট বেলার কাহিনীতে তারই দোষ ছিল।’
হঠাৎই পায়ে টান অনুভব করাতে নিজের ভাবনা দেখে বেরিয়ে আসলো শুভ্র। তাকালো সে বর্ষার দিকে, চোখে মুখে বিস্ময়ের ছাপ, কপাল বেয়ে বিন্দু বিন্দু ঘাম ঝড়ছে তার, চুলগুলো উঁচু করে খোঁপা করে কাঁকড়া ব্যান্ট দেওয়া কপালের সামনে ছোট ছোট চুলগুলো পড়ে আছে এলেমেলোভাবে। পরনের এস কালার টপস আর ব্লাক জিন্স। এলেমেলোভাবে থাকলেও কেমন বউ বউ লাগছে শুভ্রের কাছে বর্ষাকে। বর্ষা শুভ্রের পাটাকে টি-টেবিলের ওপর রেখে শুভ্রের প্যান্টটা পায়ের দিকে থেকে উঁচকিয়ে পায়ে হাত দিয়ে বললো,
‘ কোথায় ব্যাথা লাগছে আপনার?’
বর্ষার হাতের স্পর্শ পেতেই যেন কারেন্টে শকট লাগার মতো আঁতকে উঠলো শুভ্র। তক্ষৎনাত বর্ষার মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ হুম..
‘ কোথায় ব্যাথা লাগছে আপনার?’
বলেই শুভ্রের পায়ের উপরে অংশ হাল্কা চাপ দিতে লাগলো সে। শুধুতে কিছু অনুভব না হলেও পরক্ষণেই খুব কঠিনভাবে পায়ে ব্যাথা অনুভব হওয়াতে মুখ থেকে কিছু অস্পষ্টনীয় শব্দ বের হলো শুভ্রের সঙ্গে সঙ্গে বর্ষা শুভ্রের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ সরি সরি।’
এতটুকু বলে চটজলদি তাঁর আনা গরম তেল হাতের তালুতে নিয়ে মালিশ করে দিতে লাগলো বর্ষা। বর্ষার কাজে বেশ অবাক হয়েই বললো শুভ্র,
‘ এটা কি করছো তুমি আমার লাগছে বর্ষা?’
‘ কিছু হবে না দেখবেন এক্ষুণি সেরে যাবে।’
প্রতিউওরে কিছু বলতে পারলো না শুভ্র। চুপচাপ ঠোঁট চেপে ব্যাথাটা হজম করতে লাগলো সে।’
অন্যদিকে বর্ষাও খুব আলতোভাবে তাঁর নরম হাত দিয়ে তেল মালিশ করে দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো শুভ্রের। এই কাজটা শেষ করে চটজলদি ঘরটা পরিষ্কার করতে হবে তাঁকে। ভুলটা আসলে তারই ছিল নিজের অসাবধানতার জন্যই তখন পায়ে বেজে পানির বালতিটা পড়ে গিয়েছিল নিচে। মুছতেও নিয়ে ছিল কিন্তু রান্না চুলায় থাকায় দৌড়ে সেদিকে যায় সে৷ কিন্তু এরইমধ্যে যে শুভ্র অফিস থেকে চলে আসবে বুঝতে পারে নি বর্ষা। বর্ষাও জানে সে জেনে হোক বা না জেনে বার শুভ্রকে আঘাত করতেই থাকে। সে যতই সাবধানতার সাথে কাজ করুক না কেন তাঁরপরপ শুভ্র আঘাত পেয়েই যায়। তপ্ত নিশ্বাস ফেললো বর্ষা।’
সন্ধ্যা_৭ঃ০০টা….
বিছানায় চুপচাপ বসে আছে শুভ্র। পায়ের ব্যাথা আগের চেয়ে অনেকটাই কমে গেছে তাঁর। আইথিংক একদিন বেড রেস্ট করলেই কমে যাবে। কোমড়েও ব্যাথা আছে অল্প। এমন সময় শুভ্রের সামনে এককাপ কফি এগিয়ে দিয়ে বললো বর্ষা,
‘ আপনার কফি?’
উওরে শুভ্রও বেশি কিছু না ভেবে কফির কাপটা হাতে নিয়ে মুখে দিতে লাগলো। সঙ্গে সঙ্গে মুখটা পুড়ে যেতে নিলো শুভ্রের। শুভ্রের কাজে বর্ষা কিছুটা আতংকিত কন্ঠে বললো,
‘ ওটা গরম অনেক আস্তে খান।’
বর্ষার কথা শুনে অসহায় দৃষ্টিতে বর্ষার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো,
‘ কথাটা কি আর একটু আগে বলা যেত না অপ্রিয় বালিকা।’
____
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেছে অনেক আগেই মুক্ত আকাশ পানের দিকে তাকিয়ে মুক্ত মন নিয়ে এগিয়ে চলছে হিয়া। আজ মনটা খুবই ভালো তাঁর মুলত কুরিয়ার সার্ভিসের উদ্দেশ্যে যাচ্ছে সে। কিছু গিফট এসেছে নাকি তাঁর নামে। এরই মাঝে হঠাৎই চোখ গেল হিয়ার তাঁর থেকে কয়েক কদম দূরে কিছু বাচ্চা কাচ্চা আর একটা সুদর্শন ছেলের দিকে। ছেলেটার ফেস দেখে আরো বেশি অবাক হলো হিয়া কারন ছেলেটি আর কেউ নয় নির্মল। এই প্রথম হয়তো নির্মলের সাথে এত গুলো বাচ্চা কাচ্চা দেখছে হিয়া। কৌতুহলী এগিয়ে গেল সে সেদিকেই। একটা ছয়ছোট্ট আইসক্রিমের দোকানের সামনে ছয় সাতটা ছেলেমেয়ে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে নির্মল। আজ প্রায় দু’দিন পর নির্মলকে দেখলো হিয়া। সেদিন রাতের পর আজই কেবল বের হয়েছে হিয়া বাসা থেকে। অকারণেই ভার্সিটি যাওয়া হয় নি তার। হিয়া তাকালো নির্মলের মুখের দিকে বেশ হাসি খুশিভাবেই বাচ্চাগুলোর সাথে কথা বলছে নির্মল। এই মুহূর্তে নির্মলকে দেখে কেউ বলবে না এই ছেলেটা মানুষ খুন করতে পারে। হুট করেই আবারো নির্মলের বলা সেই কথাটা মাথায় বেজে উঠল হিয়ার যেখানে নির্মল বলে ছিল,
‘ আমায় কি একবার ভালোবাসা যায় না প্রিয়দর্শিনী?’ আমি কি সত্যি খুব খারাপ?’
কথাটা মাথায় আসতেই আবারো তাকালো হিয়া নির্মলের মুখের দিকে। আনমনেই বললো সে,
‘ আপনি মানুষটা আসলেই খারাপ নন নির্মল কিন্তু মাঝে মাঝে একটু বেমানান হয়ে যান এই আর কি?’
হুট করেই আকাশটা পাল্টে গেল। পরিষ্কার আকাশটায় ধেয়ে আসলো একরাশ ধূসরতা, অন্ধকার নামক ধোঁয়াশারা ঘিরে ধরলো হিয়ার আশপাশের আনাচে কানাচেটা। আচমকা মাথার উপরে থাকা আকাশটার এমন আবহাওয়ার পরিবর্তন দেখে চোখ মুখ কুঁচকে এলো হিয়ার। এখন যদি বৃষ্টি নামে আর সেই বৃষ্টিতে সে ভেজে তাহলে নির্ঘাত জ্বর এসে অবস্থা তাঁর খারাপ করে দিবে। এখন কি করবে? বাড়ি ফিরে যাবে কিন্তু বাড়িটা তো এখান থেকে অনেক দূর। আশেপাশে কোথাও দাঁড়াবে তাঁরও সুযোগ নেই। একদম মাঝরাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে সে। আকাশ বেয়ে আসা হিমশীতল বাতাসেরা আসছে বহুত জোরে, তাঁর সাথে ধেয়ে আসছে অসংখ্য ধুলো। যার ছোঁয়াতে পুরো কেঁপে উঠল হিয়া, সাথে চোখও বন্ধ করে ফেললো তক্ষৎনাত। এমন সময় তাঁর সামনে এসে দাঁড়ালো নির্মল বেশ ভাবনাহীন ভাবেই বললো সে,
‘ এভাবে দাঁড়িয়ে থেকে জ্বর বাঁধার ফন্দি এঁটেছো নাকি?’
#চলবে….
[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। আর গল্প কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে। অনেকেরই অনেক প্রশ্ন হিয়া আর নির্মলকে নিয়ে। তাদের উদ্দেশ্য বলবো এই পুরো গল্পটা বুঝতে হলে তোমাদের শেষ পর্যন্ত আমার সাথে যেতে হবে। আপাতত মাথায় কোনো প্রশ্ন না নিয়ে ভেবে নেও এই গল্পের দুটো জুটি এখন এক জুটির সাথে আরেক জুটির কানেকশন কোথায় সেটা জানতে হলে অপেক্ষা করতে হবে। আর আমার পাঠকেরা অধৈর্য নয় আমি জানি। অপেক্ষা করবে তো প্রিয়রা।]
#TanjiL_Mim♥️