#ধূসর_শ্রাবণ?
#লেখিকা:#তানজিল_মীম?
#পর্ব-১০
________________
ভয়ে কাচুমাচু হয়ে খিঁচে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে বর্ষা। একেই বলেই বেশি ভাব নিতে নেই। একটু সুন্দর কি লাগছিল ওমনি ভাব নিয়ে নিচে নামতে গেল। ভালো হয়েছে তোর কোমড়টা দুইভাগ হয়ে গেছে। আর যাওয়া লাগবে না ঘুরতে এখন শুভ্র তোকে একা রেখেই চলে যাবে। এই রকম নানান কিছু ভেবে মনে মনে বকবক করতে লাগলো বর্ষা। হঠাৎই শুভ্র বিরক্তমাখা মুখ নিয়ে বললো,
‘ এই ইস্টুপিট গার্ল চোখ খোলো বলছি?’
সাথে সাথে চোখ খুলে ফেললো বর্ষা। আশেপাশে তাকাতেই বুঝতে পারলো বর্ষা তাঁর কোমড় ভাঙে নি কারন তাঁর কোমড় ভাঙার আগেই শুভ্র তাঁকে ধরে ফেলেছে। বর্ষা গালে হাত দিয়ে আনমনেই ভাবলো,
‘ ও মাই গড আহা কি রোমান্টিক সিন জামাই আমায় ধরে দাঁড়িয়ে আছে। এ তো পুরোই বাংলা সিনেমার কাহিনী। আমি হিরো আর আমার জামাই হিরোইন থুড়ি থুড়ি আমার জামাই হিরো আর আমি হিরোইন। আহা! আমার জামাইডা কত্তো কিউট!’
এদিকে বর্ষাকে নিজের দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকতে দেখে শুভ্র বিরক্ত হয়ে বললো,
‘ ওভাবে তাকিয়ে আছো কেন?’
শুভ্রের কথা শুনে আনমনেই বলে উঠল বর্ষা,
‘ আপনাকে দেখছি?’
‘ কি বলতে তুমি?’
শুভ্রের ঝাঁঝালো কণ্ঠ শুনে বর্ষা তাঁর ধ্যান থেকে ফিরে এলো তক্ষৎনাত শুভ্রকে ছাড়িয়ে সোজা হয়ে বললো সে,
‘ ইয়ে না মানে কিছু না চলুন তাহলে যাওয়া যাক।’
উওরে শুভ্রও কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো,
‘ হাঁটার সময় চোখ কোথায় থাকে তোমার?’
শুভ্রের কথা শুনে মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললো বর্ষা,
‘ আসলে বুঝতে পারি নি, সরি।’
‘ হুম হয়েছে চলো এখন?’
শুভ্রের কথা শুনে বর্ষা খুশি হয়ে বললো,
‘ হুম চলুন।’
বলেই বাড়ির ভিতর থেকে আস্তে আস্তে বের হলো বর্ষা আর শুভ্রও জোরে নিশ্বাস ফেলে সোফার ওপর থেকে ব্লু রঙের শার্টটা হাতে নিয়ে সেটা পড়তে পড়তে চললো বর্ষার পিছু পিছু।’
‘ এই মেয়েটা নির্ঘাত তাঁকে পাগল বানিয়ে ফেলবে?’
_____
আকাশটা তো মস্ত বড়। আর এই মস্ত আকাশে মাঝে লন্ডনের বিশাল এক সমুদ্রের ভীড়ে পাশাপাশি জাহাজে করে দাঁড়িয়ে আছে বর্ষা আর শুভ্র। কয়েক মুহূর্ত আগেই তাঁরা এসেছে এখানে। বর্ষা তো মাঝ সমুদ্রের মাঝখানে এসে বহুত খুশি। সে ভাবে নি শুভ্র তাঁকে এত সুন্দর একটা জায়গায় নিয়ে আসবে। তাঁর ইচ্ছে করছে শুভ্রকে একবার জড়িয়ে ধরে বলতে ‘আমি ভীষণ খুশি হয়েছি জামাই’ কিন্তু কথাটা মন পর্যন্তই আঁটকে রইলো তাঁর। সময়টা পরন্ত বিকেল বেলা। আকাশটা একদম নীল-সাদা সংমিশ্রনে হয়ে আছে। মেঘেরাও দুলছে তাদের পিছু পিছু। নিচেই সমুদ্রের পানিরা দুলছে বারংবার। শুভ্রের দৃষ্টি সেই মাঝসমুদ্রের দুলতে থাকা পানিদের দিকেই। আর বর্ষার দৃষ্টি শুভ্রের দিকে। পাশাপাশি রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে শুভ্র বর্ষা। হঠাৎই শুভ্র বলে উঠল,
‘ জায়গাটা সুন্দর না,বর্ষা?’
উওরে বর্ষাও শুভ্রের দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে পানির দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ হুম খুব।’
বর্ষার কথা শুনে হাসলো শুভ্র। তারপর বললো,
‘ আইসক্রিম খাবে?’
উওরে বর্ষা অবাক হয়ে শুভ্রের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ এখানে আইসক্রিমও পাওয়া যায়।’
‘ এখানে সব পাওয়া যায় চলো আমার সাথে?’
এতটুকু বলে বর্ষার হাত ধরে নিয়ে যেতে লাগলো শুভ্র। আর বর্ষাও বেশি কিছু না ভেবে এগিয়ে চললো শুভ্রর সাথে সাথে।’
____
কলিং বেল বাজতেই হিয়ার মা এসে দরজা খুলে দিলো। সামনেই হিয়ার ভিজে যাওয়া মুখটা দেখে বললেন উনি,
‘ এত দেরি হলো কেন?’
মায়ের প্রশ্নে সামান্য বিরক্ত হলো হিয়া। হতাশা ভরা কন্ঠ নিয়ে বললো সে,
‘ দেরি হবে না মা? দেখো না বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে তারওপর রিকশা পাই না তাই তো এত দেরি।’
‘ হুম বুঝেছি তাড়াতাড়ি ড্রেস পাল্টে ফ্রেশ হয়ে আয় তোর জন্য নুডলস রান্না করেছিলাম এখন হয়তো ঠান্ডা হয়ে গেছে।’
‘ তিয়াস খেয়েছে মা?’ (হিয়ার ছোট ভাই)
‘ হুম।’
‘ আর বাবা?’
‘ তোর বাবা অফিস থেকে এখনো ফিরে নি।’
মায়ের কথা শুনে দেয়াল জুড়ে থাকা সামনের ঘড়িটার দিকে তাকালো হিয়া। প্রায় রাত নয়টার কাছাকাছি। কিছুটা অবাক হয়েই বললো হিয়া,
‘ রাত ন’টা বাজে বাবা এখনো আসে নি।’
এরই মধ্যে বাড়ির কলিং বেলটা আবারো বেজে উঠল। যা দেখে হিয়া বললো,
‘ ওই হয়তো বাবা চলে এসেছে?’
‘ হুম তুই গিয়ে তাড়াতাড়ি চেইঞ্জ করে নে এইভাবে দেখলে হাজারটা প্রশ্ন করবে।’
‘ ঠিক আছে মা।’
এতটুকু বলে নিজের ব্যাগপত্র নিয়ে নিজের রুমের দিকে অগ্রসর হলো হিয়া। ভিজতো না সে নির্মল বলেছিল তাদের বাড়ির গেটের সামনে গাড়ি থামাতে কিন্তু হিয়া রাজি হয় নি। তাই মাঝরাস্তায় গাড়ি থেকে নেমে পড়ে হিয়া। বিকেলে সেই বৃষ্টিটা থেমে গিয়েছিল একটু কিন্তু হুট করে আবারো বেড়ে যায় কতক্ষণ পর যার দরুন বৃষ্টিতে ভিঁজে যায় সে। চোখ মুখ জ্বলছে, সাথে মাথাটাও জিম ধরে আছে হিয়ার। হিয়া চটজলদি ফ্রেশ হয়ে বসলো বিছানায় এরই মধ্যে তাঁর মোবাইলে মেসেজর টুং করে উঠলো। হিয়া দেখলো হাতে নিলো মোবাইলটা যেখানে লেখা,
‘ ঔষধ খেয়ে নিও কিন্তু তুমি যে বৃষ্টিতে ভিজেছো তা কিন্তু আমি দেখেছি জ্বর বাঁধলে তাঁর পরিনাম কিন্তু খারাপ হবে। তুমি হয়তো এখনো বুঝলে না আমার অবাধ্য হওয়ার পরিনতি কতটা ভয়ংকর!’
অবাক হলো হিয়া। এই লোকটা তাঁকে এইভাবে থ্রেড দিলো। পেয়েছেটা কি নিজের বিয়ে করা বউ নাকি যে যা বলবে তাই শুনতে হবে খাবে না সে ঔষধ! হুহ।’
বিরক্ত হয়ে ফোনটা ছুঁড়ে মারলো বিছানায়। এরই মধ্যে হিয়ার মা আসলো রুমে। মেয়েকে বসে থাকতে দেখেই বললেন উনি,
‘ তোর বাবা তোকে ডাকছে হিয়া?’
‘ কেন মা?’
‘ আমি কি করে বলবো?’
‘ তুমি সব জানো মা।’
উওরে মাথা নিচু করে ফেললো হিয়ার মা। মায়ের কান্ডে হিয়া বিস্মিত হয়ে বললো,
‘ আমি এখনই বিয়ে করতে চাই না মা।’
এরই মধ্যে দরজা সামনে দাঁড়িয়ে বলে উঠল হিয়ার বাবা,
‘ দেখতে আসলেই তো আর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে না হিয়া। ছেলে খুব ভালো। সরকারি চাকরি করে।’
বাবার মুখের ওপর আর কিছু বলতে পারলো না হিয়া চুপ হয়ে গেল সে।’
______
সারাদিন ঘুরে ফুঁড়ে সাথে বর্ষার জন্য কিছু শপিং করে বাসায় ফিরে ক্লান্ত শরীর নিয়ে সোফায় গা এলিয়ে দিলো শুভ্র। কাল অফিস আছে তাঁর। শুভ্র বসতেই তাঁর দিকে একগ্লাস ঠান্ডা পানি এগিয়ে দিল বর্ষা। শুভ্রও পানির গ্লাসটা হাতে নিয়ে ঢকঢক করে পুরো পানিটা খেয়ে নিলো। বর্ষা আবার শুভ্রের হাত থেকে পানির গ্লাসটা নিয়ে টেবিলের ওপর রাখলো। তারপর খুশি মনেই বললো,
‘ আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমাকে আজকে ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার জন্য।’
প্রতি উওরে তেমন কিছু বললো না শুভ্র। কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো,
‘ আমার কাল অফিস আছে বর্ষা আমি এখন ঘুমাবো।’
‘ ঠিক আছে।’
‘ রুম পরিষ্কার করে ছিলে তো তুমি?’
উওরে বেশ কনফিডেন্স নিয়েই বললো বর্ষা,
‘ হুম।’
বর্ষার কথা শুনে তক্ষৎনাত বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো আলতো পায়ে এগিয়ে গেল সে উপরের রুমের দিকে। আর বর্ষাও বেশি কিছু না ভেবে সোফায় বসলো কতক্ষণ আজ কি কি করলো সেগুলো ভাবছে সে। জাহাজ ভ্রমন করলো, আইসক্রিম খেল, লন্ডনের শহরের আশপাশের অনেক জায়গায় ঘুরলো, শপিং করলো আর সব শেষে ডিনার সেরে বাড়ি ফিরলো। মোটামুটি লেভেলের বলতে গেলে ঝামেলা বিহীন খুব সুন্দর দিন কাটলো তাঁর। এমন সময় উপরের রুম থেকে কর্কশ কন্ঠে বলে উঠল শুভ্র,
‘ বরররররররররর্ষা?’
সাথে সাথে দৌড়ে এগিয়ে গেল সে উপরের দিকে।’
অন্যদিকে গা ভর্তি জামাকাপড়ের বোঝা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে শুভ্র। চোখে মুখে বিরক্ত আর রাগের ছাপ। কিছুক্ষন আগেই আলমারির খুলতে গিয়ে আলমারি বোঝাই করা সব জামাকাপড় এসে পড়েছে তাঁর গায়ে। যার দরুন বর্ষাকে এত চিৎকার দিয়ে ডাকা। এদিকে বর্ষা হতভম্ব হয়ে রুমে ঢুকে বললো,
‘ কি হয়েছে? কি হয়েছে?’
বর্ষার কথা শুনে শুভ্র পিছন ঘুরে রাগে গদগদ হয়ে বললো,
‘ তোমার মাথা হয়েছে? এটা কি গুছিয়েছো তুমি?’
সাথে সাথে হা হয়ে তাকিয়ে রইলো বর্ষা শুভ্রের মুখের দিকে। মনে মনে বললো,
‘ কাম সারছে?’?
#চলবে…..
[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষে। এতদিন কিছু ব্যস্ততার কারনে গল্প দিতে পারি নি। এর জন্য দুঃখিত আমি। আজকের পার্টটা হয়তো খুব বেশি ভালো হয় নি। এবারের গল্পটা কেমন যেন অগোছালো হচ্ছে খুব শীঘ্রই এটাকে শেষ করে দিবো তোমরা অপেক্ষায় থেকো।]
#TanjiL_Mim♥️