ধূসর শ্রাবণ পর্ব ১২

0
606

#ধূসর_শ্রাবণ?
#লেখিকা:#তানজিল_মীম?
#পর্ব-১২
________________

হিয়াকে জড়িয়ে ধরে চুপচাপ ঘুমিয়ে আছে নির্মল। চোখে মুখে একদম শান্ত ভাব তাঁর। কপালের সামনে থাকা ছোট ছোট চুলগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এদিক সেদিক। কপালের বাম দিকটায় সাদা ব্যান্ডেজটা ওপরটা লালচে হয়ে আছে। গাড়ির জানালা খোলা থাকায় আকাশ পথ বেয়ে আসছে মৃদু বাতাস সেই বাতাসে উড়ছে নির্মল হিয়ার দুজনেরই মাথার চুল। যদিও হিয়ার দৃষ্টি বর্তমানে নির্মলের মুখের দিকে। মানুষটা ঘুমিয়ে থাকলে একদম বাচ্চাদের মতো নিষ্পাপ লাগে। কে বলবে এই মানুষটা খুব রাগী। হিয়া আনমনেই নিজের হাতটা দিয়ে স্পর্শ করলো নির্মলের ব্যান্ডেজ করা কপালটায়। কতটা জানি কেটে গেছে? হিয়ার হাতের স্পর্শ পেতেই হাল্কা নড়ে চড়ে উঠলো নির্মল। সাথে সাথে দৃষ্টি সরিয়ে ফেলে অন্যদিকে তাকালো হিয়া। সে ভাবলো হয়তো নির্মল উঠেছে কিন্তু না নির্মল ওঠে নি হাল্কা নড়ে আবারো ঘুম দিয়েছে গভীর।’

সময় যাচ্ছিল দু’মিনিট তিনমিনিট করে সময় কাটছিল। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে আসছে। এবার হিয়া নড়েচড়ে উঠলো, অনেকক্ষন হয়ে গেছে এবার বাড়ি যাওয়া দরকার তাঁর। কিন্তু নির্মলের তো এখনো ঘুম ভাঙার নাম গন্ধও নেই এখন কি করবে হিয়া? একবার ডাকবে? যদি রেগে যায়। কিন্তু এভাবে তো বসে থাকাও যাচ্ছে না। হিয়া অনেকক্ষণ ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিলো এবার ডাকবে সে নির্মলকে। শান্ত স্বরেই বললো হিয়া,

‘ নির্মল শুনছেন, এবার উঠুন। আমাকে যে যেতে হবে?’

হিয়ার কথার প্রতি উওরে কিছুই বললো না নির্মল। এমনকি নড়লো না। এবার হিয়া আর একটু জোরে শব্দ করে বললো,

‘ নির্মল শুনছেন?’

এবার হাল্কা নড়েচড়ে উঠলো নির্মল। তবে চোখ খুললো না। হিয়া ভেবে পাচ্ছে না এখন কি করবে সে এদিকে সময় চলে যাচ্ছে? বাবা বাড়ি গেলে নির্ঘাত তাঁকে মেরেই ফেলবে। এমনিতেও বাবাকে কিছু না বলে চলে এসেছে সে। বাড়ির ঢুকলেই হাজারটা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে তাঁকে। কিন্তু এই নির্মলের যে ঘুমই ভাঙছে না। এবার কি করবে? হিয়া আর একবার ডাকতে নিলো নির্মলকে। এবার নির্মল উঠলো,চোখ খুলেই হিয়ার মায়াবী ফেসটা দেখে আনমনেই হাসলো সে। তারপর হিয়ার কোল থেকে মাথা সরিয়ে তাড়াতাড়ি শোয়া থেকে উঠে বসলো। তারপর আশপাশ তাকিয়ে বললো,

‘ কটা বাজে হিয়া?’

হিয়া তাঁর মোবাইলের স্কিনটা অন করে বললো,

‘ সাড়ে চারটে।’

সাথে সাথে চোখ বড় বড় করে বললো নির্মল,

‘ কি বলছো আমি এতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলাম আমায় আরো আগে ডাকবে না।’

প্রতি উওরে খুব শান্ত গলায় বললো হিয়া,

‘ ডেকেছিলাম তো আপনি তো উঠছিলেন না।’

হিয়ার কথা শুনে কিছুক্ষন চুপ করে রইলো নির্মল। তারপর চটজলদি গাড়ির পিছনের সিট থেকে বেরিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসলো সে। হিয়াও গাড়ি থেকে নেমে বসেছে নির্মলের পাশের সিটে। নির্মল তক্ষৎনাত গাড়ি স্ট্যার্ট দিলো নিমিষেই। কিছুক্ষনের নীরবতা চললো দুজনের মধ্যে। হঠাৎই সেই নীরবতার দড়ি ছিন্ন করে বলে উঠল হিয়া,

‘ এক্সিডেন্টটা কি করে হলো?’

এতক্ষণ পর হিয়ার কথা শুনে শান্ত দৃষ্টিতে তাকালো নির্মল হিয়ার মুখের দিকে। তারপর বললো,

‘ জানি না।’

নির্মলের কথা শুনে বিস্ময় ভরা কন্ঠ নিয়ে বললো হিয়া,

‘ জানেন না মানে।’

প্রতি উওরে প্রসঙ্গ পাল্টে বলে উঠল নির্মল,

‘ শুনলাম আজ নাকি তোমাকে দেখতে এসেছিল তা ছেলে পছন্দ হয়েছে বুঝি?’

নির্মলের কথা শুনে হকচকিয়ে উঠল হিয়া। চোখে মুখে বিস্ময়ের ছাপ দিয়ে বললো,

‘ তাঁর মানে আপনি সবটা জানতেন।’

হিয়ার কথা শুনে সোজাসাপ্টা জবাব নির্মলের,

‘ না জানার কি আছে?’

এবার বেশ খটকা লাগলো হিয়ার। ভ্রু-কুচকে বললো সে,

‘ আপনি কি তাদের সাথে ঝামেলা করেছেন, নির্মল?’

উওরে হাসলো নির্মল। তারপর বললো,

‘ ওনাদের সাথে আমি ঝামেলা করবো কেন?’

‘ আপনি আমার থেকে কিছু লুকাচ্ছেন নির্মল? বলুন না প্লিজ।’ (বেশ আগ্রহ নিয়ে)

‘ আশ্চর্য! যখন কিছু হয় নি তাহলে বলবো কি।’

‘ ???

‘ ওভাবে তাকিও না প্রেমে পড়ে যাবো কিন্তু?’

‘ আপনি একটা যাচ্ছে তাই।’

উওরে আবারও হাসলো নির্মল। নির্মলের হাসি দেখে মুখ ভাড় করে বসে রইলো হিয়া গাড়িতে। হিয়ার কান্ডে হেঁসেই বলে উঠল নির্মল,

‘ দিন দিন তুমি খুব সাহসী হয়ে উঠছো হিয়া। বেশি কিছু করি নি সত্যি বলছি শুধু গাড়ির টায়ারটা রোহানকে (নির্মলের ফ্রেন্ড) দিয়ে ফাটিয়ে দিয়েছি।’

নির্মলের কথা শুনে চোখ বড় বড় করে বললো হিয়া,

‘ কি?’

‘ বেশি জোরে চেঁচিয়েও না।’

‘ ওদের না আসার আসল কারনটা না হয় বুঝলাম কিন্তু আপনার এই অবস্থা হলো কি করে।’

হিয়ার কথা শুনে স্বাভাবিক গলাতেই বললো নির্মল,

‘ তোমার ওপর রাগ করে? কাঁচের গ্লাস চেপে ধরে হাতটা কেটে ফেলেছি আর কপালটা দেয়ালের সাথে বারি দিয়ে।’

নির্মলের কথা শুনে এবার হিয়ার চক্ষু বেরিয়ে আসার উপক্রম। অবাক হয়েই বললো সে,

‘ আপনি কি একটা সাইকো? এইভাবে কেউ নিজেকে আঘাত করে।’

‘ তুমি আমার যন্ত্রণাটা বুঝবে না, বুঝলে হয়তো এমন করতে না।’

নির্মলের কথা শুনে বেশ খারাপ লাগলো হিয়ার। নির্মলের কথার প্রতি উওর হিসেবে কি বলবে সেটাই বুঝতে পারছে না সে। আবারও নিস্তব্ধতা এসে ঘিরে ধরলো তাদের। আর সেই নিস্তব্ধতা এসে থামলো নির্মলের বলা একটা কথার মাঝে,

‘ তোমার মাঝেই আমি আমার মানসিক শান্তি খুঁজে পাই, আবার তোমাতেই মানসিক যন্ত্রনা আমার? তবে ভুল করেও ভেবো না তোমায় কোনো মূল্যে ছাড়ছি আমি। আমার মাঝেই সুখ তোমার না হয় ভয়ংকর যন্ত্রণা।’

নির্মলের কথা শুনে কিছু বলে না হিয়া। শুধু নির্বিকার হয়ে চেয়ে রয় নির্মলের পানে। লোকটার শান্ত গলাও কেমন ভয়ংকর লাগলো হিয়ার।’

______

গভীর রাত! ঘঁড়িতে একটা ছাড়িয়ে দু’টোর কাঁটায় ছুঁই ছুঁই। রুমের মধ্যে পায়চারি করছে বর্ষা। কারন শুভ্র এখনো বাড়ি ফেরে নি। বাহিরে মুসল ধারে বৃষ্টি হচ্ছে যাঁর দরুন বেশ ভয় ভয় লাগছে বর্ষার। বার বার প্রার্থনা করছে শুভ্র যেন তাড়াতাড়ি চলে আসে। সেই সন্ধ্যা রাত থেকে বৃষ্টি হচ্ছে থামার কোনো নাম গন্ধ নেই। ভয়ে শরীর কাঁপাকাঁপির অবস্থা তাঁর। আজ শুভ্র কেন এত লেট করছে এটাই বুঝতে পারছে না বর্ষা। লন্ডনে আসার পর আজই এত বৃষ্টি হচ্ছে। বেশ কয়েকবার শুভ্রকে কলও করেছিল বর্ষা কিন্তু প্রত্যেকবারই সেটা নট রিচেবেল বলছে। টেনশনে টেনশনে মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে বর্ষার। এমন সময় বাড়ির কলিং বেলটা বিকট শব্দে বেজে উঠল। আচমকা এমনটা হওয়াতে বুক সমেত কেঁপে উঠল বর্ষার। তক্ষৎনাত নিজেকে সামলে নিয়ে দৌড়ে গেল দরজার কাছে। দরজা খুলতেই শুভ্রের ভিজে একাকার হয়ে যাওয়ার অবস্থা দেখে বললো বর্ষা,

‘ আজ এত দেরি কেন করলেন?’

উওরে শুভ্র জড়ালো গলায় বললো,

‘ অফিসে একটু কাজ ছিল।’

‘ একটা ফোন তো করতে পারতেন আমি সেই কখন থেকে আপনার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।’

উওরে ভাঙা গলায় বললো শুভ্র,

‘ আমার খুব ক্লান্ত লাগছে বর্ষা, বাকি কথা কাল বলবো?’

‘ আপনি কিছু খাবেন না আমি খাবার গরম করে আনছি আপনি রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিন।’

বর্ষার কথার পাল্টা উওর হিসেবে কিছুই বললো না শুভ্র। নীরবে এগিয়ে গেল সে তাঁর রুমের দিকে। অত্যাধিক হারে বৃষ্টিতে ভেজার জন্য চোখ মুখ জ্বলছে শুভ্রের। মাথাটাও ভাড় হয়ে আছে। হয়তো আজ তাঁর জ্বর আসবে। সচরাচর বৃষ্টিতে ভেজে না শুভ্র, বৃষ্টি জিনিসটাকে অতোটাও পছন্দ করে না সে। কারন হাল্কা একটু বৃষ্টিতে ভিজলেই তাঁর জ্বর আসে। আজ এক প্রকার বাধ্য হয়েই বৃষ্টিতে ভিজতে হয়েছে তাঁকে।’

রুমে ঢুকে শুভ্রকে কাঁথা জড়িয়ে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে বেশ হতাশ হয়েই হাতে আনা খাবারগুলো টেবিলে রাখলো বর্ষা। শুভ্রের টেনশনে সে নিজেও কিছু খায় নি। কিন্তু এখন শুভ্রকে ঘুমিয়ে পড়তে দেখে নিরাশ হলো বর্ষা। একবার ভাবলো শুভ্রকে ডাকবে,শুভ্র কি খেয়ে এসেছে নাকি না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়েছে। বললো তো অফিসে ছিল তাহলে বোধহয় না খেয়েই এসেছে? নানান কিছু ভেবে বর্ষা সিদ্ধান্ত নিলো ডাকবে সে শুভ্রকে। এক বুক সাহস নিয়ে জোরে নিশ্বাস ফেলে বললো বর্ষা,

‘ শুনছেন আপনি কি কিছু খাবেন না নাকি না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়লেন?’

উওরে কোনো হেলদোল করলো না শুভ্র। শুভ্রকে চুপচাপ দেখে গায়ে হাত দিয়ে বসলো বর্ষা। সাথে সাথে চমকে উঠলো সে। হতাশ হয়েই বললো বর্ষা,

‘ আপনার তো জ্বর এসেছে শুভ্র?’

#চলবে…..

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। আর গল্প কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে।]

#TanjiL_Mim♥️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here