#ধূসর_শ্রাবণ?
#লেখিকা:#তানজিল_মীম?
#পর্ব-১১
________________
তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শুভ্র বর্ষার দিকে। চোখ দিয়ে যেন লাল আভা বের হচ্ছে তাঁর। আর বর্ষা ভয়ে ভয়ে শুভ্রের গায়ের ওপর থেকে একটা একটা করে জামাকাপড় সরাচ্ছে। বিকেলে তাড়াতাড়ি কাজটা শেষ করার জন্য সব জামাকাপড়গুলো একজোট বেঁধে আলমারিতে রেখেছিল বর্ষা। ভেবেছিল রাতে বাড়ি ফিরে শুভ্র ঘুমিয়ে যাওয়ার পর সবগুছিয়ে রাখবে কিন্তু শুভ্র যে রুমে ঢুকেই সর্বপ্রথম আলমারিটাই আগে খুলবে বুঝতে পারে নি বর্ষা। বর্ষা সব জামাকাপড়গুলো সরিয়ে আস্তে আস্তে বললো,
‘ সরি?’
সঙ্গে সঙ্গে শুভ্র তেলেবেগুনে এক হয়ে বললো,
‘ তোমার সরির একশো এগারো।’
‘ রাগ করেন কেন তখন তাড়াতাড়ি যাবো বলে এই ভাবে গুছিয়ে রেখেছিলাম।’
‘ এইটাকে গুছিয়ে রাখা বলে?’
উওরে কি বলবে বুঝতে পারছে না বর্ষা। শুভ্র বর্ষার দিকে তেড়ে এসে বললো,
‘ তোমাকে যে কি করতে ইচ্ছে করছে আমার, তা বলে বোঝানো যাবে না?’
শুভ্রের কাজে বর্ষাও ঘাবড়ে গিয়ে চোখ খিঁচে বন্ধ করে নিয়েছে নিমিষেই। শুভ্র আরো কিছু বলবে এরই মাঝে ফোনটা বেজে উঠল শুভ্রের। শুভ্র বিরক্ত নিয়ে ফোনটা তুলে বললো,
‘ হ্যালো?’
শুভ্রের ক্ষিপ্ত মেজাজের কথা শুনে অপরপাশে একজন বলে উঠল,
‘ কি মিস্টার হিরো আবারো ঝগড়া হলো নাকি বউয়ের সাথে।’
মোবাইলের কন্ঠ শুনে কান থেকে মোবাইলটা সরিয়ে মোবাইলের স্কিনের দিকে তাকালো শুভ্র। যেখানে লেখা ‘ঔপন্যাসিকা’।
শুভ্র একপলক বর্ষার দিকে তাকিয়ে জোরে নিশ্বাস ফেলে নিজেকে শান্ত করলো তক্ষৎনাত। তারপর মোবাইলটা কিছুটা দূরে রেখে কাট কাট গলায় বর্ষার দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ আধ ঘন্টার মধ্যে পুরো রুম পরিষ্কার না করলে আজ তোমার একদিন কি আমার একদিন? ইস্টুপিট একটা!’
শেষের কথাটা শুভ্র এতটাই জোরে বললো যে পুরো কেঁপে উঠলো বর্ষা। বর্ষাকে কাঁপতে দেখে আর একটু বর্ষার কাজে এসে জোরে শব্দ করে বললো শুভ্র,
‘ বুঝতে পেরেছো, ইডিয়েট?’
শুভ্রের কথা শুনে ভয়ার্ত চেহারা নিয়ে মাথাটা উপর উপর নিচ করে বললো বর্ষা,
‘ হুম।’
বর্ষার কথা শুনে শুভ্রও বেশি কিছু না ভেবে মোবাইলটা কানে নিয়ে আরেকবার হ্যালো বলে চলে যায় বেলকনির দিকে। আর বর্ষাও নিরাশ হয়ে তাকিয়ে থাকে শুভ্রের যাওয়ার পানে। হুট করেই মনটা খারাপ হয়ে গেল তার। প্রায় রাতেই বেলকনিতে দাঁড়িয়ে কার সাথে যেন কথা বলে শুভ্র। আর ফোনটা আসলেই শুভ্র কেন যেন শান্ত মুডে চলে যায় যে জিনিসটা বর্ষাকে খুব ভাবায়? গভীর ভাবে ভাবায়। কে করে রোজ রাতে শুভ্রকে ফোন। বর্ষা এখনো বুঝে উঠতে পারছে না তাঁর আর শুভ্রের সম্পর্কটা আসলে কোন দিকে যাচ্ছে। ‘ভালোবাসা’ শব্দটা কি তাঁর জীবনে আসবে কোনোদিন?’
তপ্ত নিশ্বাস ফেলে এলেমেলো আর অগোছালো রুমটাকে গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো বর্ষা। জীবনটা যেন ধূসরে ধূসরে আঁটকে গেছে খুব।’
ঘড়িতে একটার কাঁটায় ছুঁই ছুঁই।
জোরে নিশ্বাস ফেলে বেলকনি ছেড়ে রুমে প্রবেশ করলো শুভ্র। মোবাইলে কথা বলা শেষ হয়েছিল অনেক আগেই। কিন্তু রুমে আসে নি সে। বাংলাদেশ ছেড়ে লন্ডনে এসেছে মাত্র কয়েকদিনই হলো তাদের। অথচ এই কয়দিনেই বিতৃষ্ণা ধরে গেছে শুভ্রের। বর্ষার বোকা বোকা কাজ কর্মে বেশ বিপাকে ফেলছে তাঁকে? এই মেয়েটা কি আধও কখনো ঠিক হবে না। বুঝে উঠতে পারে না শুভ্র। রুমে ঢুকে পুরো রুমে চোখ বুলালো শুভ্র। পুরো রুম গুছিয়ে বিছানায় চুপটি করে শুয়ে আছে বর্ষা। হয়তো অনেক আগেই ঘুমিয়ে পড়েছে সে। শুভ্র আস্তে আস্তে এগিয়ে গেল বর্ষার দিকে। বিছানায় থাকা কাঁথাটাকে সুন্দর করে জড়িয়ে দিল বর্ষার গায়ে। মেয়েটা যে এমন কেন সেটাই বুঝে উঠতে পারে না শুভ্র?’ এমনিতে তো ভালো কিন্তু মাঝে মাঝে এমন এমন কাজ করে বসে যে ভালো জিনিসটাই চলে যায় নিমিষে। জোরে শ্বাস ফেললো শুভ্র। তারপর রুমের লাইট অফ করে শুয়ে পড়লো সে বর্ষার পাশ দিয়ে। প্রচন্ড ঘুম পেয়েছে তাঁর। শরীরটা ক্লান্ত থাকায় বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই ঘুমিয়ে পড়লো শুভ্র।’
অন্যদিকে,
শুভ্র ঘুমিয়ে পড়তেই চোখ খুলে ফেললো বর্ষা। ঘুমাইনি সে, জাস্ট শুভ্রের উপস্থিতি টের পেয়ে চোখ বন্ধ করে রেখেছিল মাত্র। শুভ্র তাঁর গায়ে কাঁথা জড়িয়ে দিয়েছে বিষয়টা বেশ লেগেছে তাঁর। আনমনেই মুচকি হেঁসে কাঁথাটাকে আর একটু শক্তি করে জড়িয়ে ধরে বললো,
‘ আপনি কি আমায় কোনোদিনও ভালোবাসবেন না শুভ্র?’
বলেই দীর্ঘশ্বাস ফেললো বর্ষা। তারপর শুভ্রের দিকে মুখ রেখেই চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়লো সে। রাতের জোৎসা ভরা আলোরা উঁকি মারছে রুমে, বেলকনি বেয়ে মৃদু বাতাস বইছে খুব। জানালা জুড়ে থাকা সাদা পর্দাগুলোও নড়ছে বারংবার। আর এসবের ভিড়েই একে অপরের মুখোমুখি হয়ে চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে আছে শুভ্র বর্ষা।’
_____
আজ হিয়াকে ছেলেপক্ষ দেখতে আসবে। সকাল থেকেই হিয়াদের বাড়িতে মোটামুটি একটা তোড়জোড় চলছে এর জন্য। হিয়ার মা পুরো বাড়ি গুছিয়ে রেখেছে অনেক আগেই এখন শুধু মেহমানদের আসার অপেক্ষা। নিজের রুমে লাল টুকটুকে শাড়ি পড়ে চুপচাপ বসে আছে হিয়া। বিরক্ত লাগছে তাঁর। আপাতত বিয়ে জিনিসটার ওপর বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই তাঁর। হিয়া তো ভাবছে অন্যকিছু বাই এনিচান্স যদি নির্মল এই বিষয় সম্পর্কে জানে তাহলে কি হবে? আচ্ছা নির্মল যদি সত্যি সত্যি বিয়েটা ভেঙে দেয় তাহলে খুব ভালো হবে তাই না।’ আনমনেই কথাটা ভাবলো হিয়া। এমন সময় তাঁর রুমে প্রবেশ করলো তার মা হতভম্ব হয়ে বললেন উনি,
‘ জানিস হিয়া তোকে যাঁরা দেখতে আসতে চেয়েছিল ওনাদের গাড়িটা নাকি মাঝপথে খারাপ হয়ে গেছে তাই আজ আর ওনারা আসবে না।’
কথাটা শোনার সাথে সাথে যেন চোখে মুখে হাসি ফুটে উঠলো হিয়ার। খুশি মনে বললো সে,
‘ কি বলো মা সত্যি?’
‘ হুম! তোর বাবা তো এইমাত্র তাই বললো।’
‘ ভালো হয়েছে দোয়া করো আর যেন না আসে।’
মেয়ের কথা শুনে হতাশ হলো হিয়ার মা। এমন সময় বিকট শব্দে ফোনটা বেজে উঠলো হিয়ার। হিয়াও বেশি কিছু না ভেবে ফোনটা তুললো তারপর যা শুনলো তাতে তাঁর মাথায় যেন বাজ ভেঙে পড়লো সঙ্গে সঙ্গে হতভম্ব কন্ঠ নিয়ে বললো,
‘ আমি এক্ষুনি আসছি?’
এতটুকু বলে ফোনটা কেটে মাকে হতভম্ব গলায় বললো,
‘ আমায় একটু যেতে হবে মা।’
মেয়ের কাজে হিয়ার মাও অপ্রস্তুত হয়ে বললো,
‘ কোথায় যাবি?’
‘ এসে বলবো মা।’
এতটুকু বলে ড্রয়ার থেকে হ্যান্ড ব্যাগটা কাঁধে জুলিয়ে মোবাইল হাতেই বেরিয়ে পড়লো হিয়া। নিচে রুমে বাবা না থাকায় বিনা বাক্যেই বেরিয়ে গেল হিয়া বাড়ি থেকে।’
_____
শহর থেকে কিছটা দূরে কিছু গাছেদের আড়ালে লুকিয়ে আছে একটা কালো গাড়ি। তাঁর ভিতরই হাতে আর মাথায় ব্যান্ডেজ করে চুপচাপ বসে আছে নির্মল।’
এমন সময় সেখানে হতভম্ব হয়ে রিকশা করে আসছিল হিয়া। সামনেই তাঁর থেকে কিছুটা দূরে কালো গাড়িটাকে দেখে রিকশাটা কিছুটা দূরে থামিয়ে ভাড়া মিটিয়ে তাড়াতাড়ি নেমে পড়লো হিয়া। তাঁরপর দ্রুত গতিতে অগ্রসর হতে লাগলো সে গাড়িটার দিকে। কয়েক মুহূর্ত আগেই শুনেছে সে নির্মলের নাকি এক্সিডেন্ট হয়েছে যার দরুন এতদূর ছুটে আসা। কথাটা শোনার পর একবারও হিয়ার মনে হয় নি সে আসবে না বরং কতক্ষণে আসবে এটাই যেন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল তাঁর।’
অন্যদিকে লুকিং গ্লাসে হিয়াকে আসতে দেখে ওদিকেই তাকিয়ে রইলো নির্মল। লাল শাড়ি,খোলা চুল, চোখে কাজল, ঠোঁটে লাল লিপস্টিকে অপরূপ লাগছে যেন হিয়াকে। এরই মাঝে গাড়ির দরজা খুলে ভিতরে বসে পড়লো হিয়া। তারপর হতভম্ব কন্ঠ নিয়ে বললো,
‘ এগুলো কি করে হলো?’
হুট করেই জিনিসটা হয়ে যাওয়াতে লুকিং গ্লাস থেকে দৃষ্টি সরিয়ে শান্ত ভঙ্গিতে তাকালো নির্মল হিয়ার দিকে। মেয়েটাকে আজ যেন বড্ড বেশি সুন্দর লাগছে। কপালের পাশে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে হিয়ার। চোখে-মুখে স্পষ্ট হতাশার ছাপ। না চাইতেই নির্মল তাকিয়ে রইলো হিয়ার মুখের দিকে। এই একটা মেয়ের মুখে কি এমন যাদু আছে বুঝে উঠতে পারে না নির্মল। মেয়েটাকে দেখলেই আর উত্তেজিত মনটা শান্ত হয়ে যায় নিমিষেই। আবার যন্ত্রনা দেওয়ার ক্ষেত্রেও এই মেয়েটা সবার থেকে এগিয়ে। নানান কিছু ভাবতে লাগলো নির্মল হিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে। নির্মলকে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আবারো উত্তেজিত কন্ঠ নিয়ে বলে উঠল হিয়া,
‘ কি হলো আপনি কিছু বলছেন না কেন?’
প্রতিউওরে হুট করেই হিয়াকে জড়িয়ে ধরলো নির্মল। নির্মলের কাজে পুরোই চমকে উঠলো হিয়া। পাল্টা কিছু বলবে তাঁর আগেই নির্মল শান্ত কন্ঠে বলে উঠল,
‘ আমার কিছুক্ষন মানসিক শান্তি চাই হিয়া, প্লিজ ডিসটার্ব করো না।’
নির্মল শেষের কথাগুলো এমনভাবে বললো যে হিয়া ইচ্ছে থাকা সত্বেও কিছু বলতে পারলো না চুপচাপ বসে রইলো নীরবে। সে বুঝলো না হুট করে মানুষটার হলোটা কি?’
#চলবে…..
[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। আর গল্প কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে।]
#TanjiL_Mim♥️