দুইটা পয়তাল্লিশ পর্ব ৬

0
292

গল্পঃ #দুইটা_পয়তাল্লিশ

লেখকঃ Parvez Rana

অন্তিম পর্ব/////পর্বঃ৬

চারদিকে স্তব্ধতা বিরাজ করছিল। নওরিন কিছু বুঝতে পারছিল ন৷ শুভ্রের হঠাৎ পরিবর্তন নওরিনকে ভাবিয়ে তুলছিল। নওরিনের কান্না আসার মতো অবস্থা হয়ে দারিয়েছিল। তার কিছু ভালো লাগছিল না। নওরিন বলল, ‘কেন করছ এমন আমার সাথে? আমি তো তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি। কেন আমার ভালোবাসার সাথে এমন ছিনিমিনি খেলছ? আমার কাছে কি চাও?’
শুভ্র বলল, ‘আমি যদি মানুষ না হই তবুও কি আমাকে ভালোবাসবে? আমার চেহারা যেমন দেখেছিলে তার থেকেও যদি হাজার গুণে বিভৎস হয় তবুও কি ভালোবাসবে?’
নওরিন কি বলবে বুঝতে পারছিল না৷ তবুও একটু ইতস্তত হয়ে বলল, ‘তুমি যদি আমাকে ভালোবাসো তবে আমিও তোমাকে ভালোবাসব। যদি আমার পাশে থাকো তবে আমিও পাশে থাকব। আমি নিজেই জানিনা কেন এতো ভালোবেসেছি। আর এই ভালোবাসা শুধু তোমার জন্য।’
‘ঠিক আছে। তুমি এখন ঘুমিয়ে যাবে আর আমার প্রকৃত চেহারা দেখবে। আমি আবার তোমাকে স্বপ্ন দেখাব। এবার কোন কিছু পরিবর্তন করব না৷’
‘ঠিক আছে।’
শুভ্র কিছু বলল না। নওরিন ফুপিয়ে কেদে ফেলল। সে নিজেও জানে না তার সাথে কি হতে চলেছে। সে জানে না স্বপ্নে কি দেখবে। দেখার পর মেনে নিতে পারবে কিনা সেটা জানে না। তবে একটা জিনিস জানে যে সে শুভ্রকে ভালোবেসে ফেলেছে। তাকে না দেখেই ভালোবেসে ফেলেছে। শুভ্র হয়তো মিথ্যা বলতে পারে তার কাছে কিন্তু সে শুভ্রের প্রতিটি কথা বিশ্বাস করেছে। নওরিনের চোখে ঘুম চলে আসে। এমন অবস্থা যে সে আর চোখ খুলে রাখতে পারছিল না। সে ঘুমে তলিয়ে যাচ্ছিল গভীর ঘুমে।
নওরিন ঘুম থেকে উঠে দেখে সে আবার সেই রুমে ঘুম থেকে উঠেছে যেখানে সে আগেরবার ঘুম থেকে উঠেছিল। রুমটা দেখার পর সে বুঝতে পারে সে স্বপ্ন দেখছে। সব কিছু রঙিন দেখতে পারছে। বুঝার কোন উপায় নেই এটা স্বপ্ন নাকি বাস্তব। সে শুধু রুমটা দেখে বুঝতে পারছে। কারণ আগের বারও এই রুমেই সে ঘুম থেকে উঠেছিল। স্বপ্নটা তাকে শুভ্র দেখাচ্ছে। সে বাহির থেকে কিছু আওয়াজ শুনতে পেল৷ যেন কেউ কিছু করছে। স্বাভাবিক আওয়াজ অর্থাৎ জিনিসপত্র নাড়াচাড়া করার আওয়াজ। নওরিন বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ল। তার মনের মধ্যে অনেক ভয় কাজ করছিল। ভীত ভাবে এক পা দু পা করে সামনে এগোতে থাকে। অনেকটা ভয়ের ভেতর দিয়ে নওরিন যাচ্ছিল। তার মধ্যে এক চাপা উত্তেজনা কাজ করছিল। হাটতে হাটতে দরজা পাশে গিয়ে দাড়ায়। দাড়িয়ে বাহিরের দিকে একবার উকি দেয়। উকি দিয়েই অনেক বেশি অবাক হয়ে যায়। কিছুটা হকচকিয়েও যায়। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। একবার তাকিয়েই মুখ ফিরিয়ে নেয়। নওরিন দেখতে পেল সেই আগের মতো অপরূপ চেহারা। মুখে মায়াময় হাসি। যেটা নওরিনকে পাগল করে তুলছিল। তার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে লাগল। শুভ্র বলল, ‘এভাবেই ওখান থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে আমাকে দেখবে নাকি আমার সামনেও আসবে? আর এটাই আমার সত্যিকারের চেহারা। আমার চেহারা এতোটাও বিভৎস না। আর তুমি এতো কান্না কেন কর একটু বল তো৷ খুশিতেও কাদো, কষ্টেও কাদো, রাগলেও কাদো আবার না রাগলেও কাদো৷ কাদো না কখন একটু বলবে?’
নওরিন শুভ্রের সেই আওয়াজ শুনতে পেল। সেই চিরচেনা আওয়াজ৷ নওরিন চোখ মুছতে মুছতে বাহিরে বেরিয়ে এল। নওরিন কান্না ভরা কন্ঠে বলল, ‘কেন একটু আগে আমার সাথে এমন করলে বল তো? কেন শুধু শুধু আমাকে ভয় দেখাও?’
শুভ্র হেসে দিল। এগিয়ে এসে নওরিনের সামনাসামনি দাড়াল। তারপর বলল, ‘তুমি আমাকে কতটা ভালোবাসো সেটা জানার জন্য। আমি কিন্তু কোন মিথ্যা কথা বলি নি। আমার মা আমার কারণেই মারা গিয়েছিল। আর তোমার সিমপ্যাথি দিয়ে ভালোবাসা পাওয়ার কোন ইচ্ছা আমার নেই। কারণ আমি জানি তুমি আমাকে অনেক অনেক বেশি ভালোবাসো। আর আমি তো আগেই বলেছিলাম আমি কখনো মিথ্যা কথা বলি না।’
একই কন্ঠস্বরে নওরিন আবার বলল, ‘আর কত ভাবে আমার ভালোবাসার পরীক্ষা নিবে? কই যখন তুমি বলেছিলে আমাকে ভালোবাসো আমি তো পরীক্ষা নেই নি।’
‘আচ্ছা বাদ দাও। তোমাকে এই স্বপ্নে নিয়ে এসেছি কেন জানো?’
‘না। আমি জানি না।’
‘তোমার সাথে হাত ধরে হাটার জন্য। তোমাকে আমার নিজের সম্পর্কে আরো কিছু বলার জন্য। আমি যে সমস্যায় আছি সেটা সম্পর্কে বলার জন্য। আর তোমাকে এইটুকু ভয় দেখানোতে যে এতোটা ভয় পাবে জানা ছিল না৷ বাদ দাও আজ কিছু রান্না করা নেই। কফি খাবে আমার সাথে? আমি কিন্তু ভালো কফি বানাতে পারি।’
‘হুম। আচ্ছা স্বপ্নেও তোমাকে রান্না করতে হয়? সব কিছু অটোমেটিক হয়ে যায় না?’
‘নাহ। এই লাইফটাও অনেকটা বাস্তব লাইফের মতোই। সব কিছুই নিজেকে করতে হয়। তুমি গিয়ে চেয়ারে বসো আমি তোমার জন্য কফি বানিয়ে আনছি।’
নওরিন গিয়ে চেয়ারে বসল। শুভ্র কিচেনে গিয়ে কফি বানাতে থাকল। কফি বানাতে বানাতে বলল, ‘আমার মা মারা যাওয়ার পর অনেক রিলেটিভ আমাদের বাসায় আসতে থাকল। আমার নানার বাড়ি থেকেও অনেকে এসেছিল। কিন্তু কখনো আমার নানা আসেনি। আমার কয়েকজন রিলেটিভ আমার বাবাকে একটা পরামর্শ দেয়। আর সেটা হচ্ছে আমাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিতে অথবা কোন এতিম খানায় রেখে আসতে। সবাই আরো বলে বাবা যেন আরেকটা নতুন বিয়ে করে নেয়। কারণ তখন বাবার তেমন একটা বেশি বয়সও হইছিল না। দাদুও আবেগের বশে একবার তাদের মতে সায় দিয়েছিল। সবাই ভাবত আমার জন্যে আমার মা মারা গেছে। তারা ভুলও ভাবত না। তোমার কফিতে কয় চামচ চিনি দিব?’
নওরিন প্রথমে শুভ্রের শেষ কথা বুঝতে পারল না। নওরিন বলল, ‘কি আবার বলো?’
‘কফিতে কয় চামচ চিনি দিব?’
‘তুমি যতটুকু খাও ততটুকু। আমার মনে হয় তুমি জানো আমি কতটুকু চিনি খাই। শুধু জিজ্ঞাসা করছ।’
শুভ্র হেসে দিল৷ শুভ্র বলল, ‘তুমি ঠিকই ধরেছো আমি আগে থেকেই জানতাম। তবুও কিছু কিছু জানা কথা জিজ্ঞাসা করতে ভালো লাগে। এই কারণে অনেক প্রশ্নের উত্তর জানার পরও তোমাকে জিজ্ঞাসা করি। কারণ ভালোবাসার মানুষটির সাথে বেশি বেশি কথা বলতে ভালো লাগে। আচ্ছা শোন, যখন সবাই এসব বলছিল তখন আব্বু আমাকে জড়িয়ে ধরে বলেছিল, ‘আপনাদের পরামর্শটা আমার অনেক ভালো লেগেছে। কিন্তু এটা আমি মানতে পারব না। কারণ আমি ওর মাকেই সব থেকে বেশি ভালোবেসে ছিলাম। আর ও হচ্ছে আমাদের ভালোবাসার নিদর্শন। আমি ওকে আপনাদের কথামতো বাড়ি থেকে বের করে দিতে পারব না। কারণ ওকে তাড়িয়ে দেয়া মানে ওর মায়ের ভালোবাসাকে অপমান করা। শুভ্রের মা শুভ্রকে কতটা শুভ্রকে ভালোবাসত সেটা আপনাদের থেকে আমি কয়েকগুণ বেশি ভালোভাবে। আর আমি আরেকটা বিয়েও করব না। কারণ শুভ্রের সৎ মা কেমন হবে সেটা আমার জানা নেই। এমনও হতে পারে সে শুভ্রকে কোনভাবে সহ্য করতে পারল না। তাহলে আমি শুভ্র আর ওর মায়ের কাছে সব চেয়ে বড় অপরাধী হয়ে যাব। এই কারণে আমি শুভ্রকে একসাথে বাবা এবং মায়ের স্নেহ দিয়ে বড় করব। আর আপনাদেরকে কে বলেছে শুভ্রের কারণে ওর মা মারা গেছে? আর যদি মারাও যায় তাহলে শুভ্র তো ইচ্ছা করে মারেনি। আপনারা এখন আসতে পারেন।’ এতে ওনারা কিছুটা অপমানিত বোধ করেন। তারপর বাড়ি থেকে চলে যান। আমার দাদুও আব্বুর কথা শুনে নিজের ভুল বুঝতে পারেন। তারপর সেও আমাকে আরো নিজের কাছে টেনে নিল। এরপর থেকে আমাদের পরিবার এর সদস্য সংখ্যা হয়ে গেল তিন। আমি, আব্বু আর দাদু। কয়েকজন কাজের লোক ছিল৷ মোটামুটি ভালোভাবেই সময় কাটছিল। আব্বু ব্যাবসা সামলাতো৷ আমি আর দাদু বাড়িতে থাকতাম। দাদুর সাথে খেলা করতাম, দাদু আমাকে গল্প শোনাতো। অনেক আনন্দে সময় কাটাতাম। আমার মা যে নেই এটা আমি কখনো বুঝতেই পারতাম না। কারণ দাদু আর বাবার ভালোবাসা আমাকে ভুলিয়ে রাখত।আব্বু ঠিক কথামতো বাবা-মা উভয়ের স্নেহ দিয়ে আমাকে বড় করছিল। তখন থেকে নিজের শক্তি সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পেতে শুরু করি। কারণ আমি দেখতাম শুরুতে আমি আমার দাদু আর আব্বুর মনের কথা বুঝতে পারি। কারণ তাদেরকে এতোটা ভালোবাসতাম যে নিজেকেও তাদের একজন ভাবতাম। আমার মনে হতো না যে আমি আলাদা মানুষ। মনে করতাম আমরা একজনই। যখন আমার বয়স চার বছর তখন আমার দাদু মারা যায়। আমি আরো একা হয়ে যাই। দাদু রাতে হার্ট অ্যাটাক এ মারা যায়। আমি আর বাবা ভেঙে পড়ি। আমাদের জীবন থমকে দাড়িয়েছিল। এই নাও তোমার কফি।’
নওরিন এক দৃষ্টিতে শুভ্রের দিকে তাকিয়ে কথা শুনছিল। শেষ দিকে কন্ঠে কিছুটা হাহাকার ফুটে উঠছিল। শুভ্র নওরিনের দিকে কফির মগ এগিয়ে দেয়। নওরিন শুভ্রের হাত থেকে কফির মগটা নেয়। কফিতে চুমুক দেয়ার সাথে সাথে নওরিনের মনে হলো সে যেন কোন অমৃত পান করছে। তার জীবনে যেন এতোটা অপুর্ব কফি সে পান করেনি। নওরিন বলল, ‘আচ্ছা তুমি ছেলে হয়েও এতো সুন্দর সব কিছু বানাতে পার কি ভাবে? আমি মেয়ে হয়েও পারব না।’
শুভ্র হেসে দিল। তারপর কফিতে একবার চুমুক দিয়ে আবার বলতে শুরু করল। আর নওরিন অপলক দৃষ্টিতে শুভ্রের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো শুনছিল। শুভ্র বলছিল, ‘দাদু মারা যাওয়ার পর থেকে অনেকটা একা হয়ে গেলাম। আব্বু আগের তুলনায় আমাকে সময় দেয়া একটু বাড়িয়ে দেয়। আগে বেশির ভাগ সময় অফিসে কাটালেও এরপর থেকে আমার সাথে সময় একটু বেশি কাটানো শুরু করে। আমাকে সাড়ে চার বছর বয়সেই একটা স্কুলে ভর্তি করে দেয়। কিন্তু সেখানে আমি বেশিদিন স্থায়ী থাকতে পারলাম না৷ কারণ টিচাররা আমাকে যা কিছু জিজ্ঞাসা করত আমি সেগুলোর উত্তর দিয়ে দিতে পারতাম। হোক সেটা আমার লেভেলের অথবা বড়দের লেভেলের। এর কারণ হচ্ছে ওনারা আমাকে যা কিছু জিজ্ঞাসা করত আমি ওনাদের মস্তিষ্কে উকি দিয়ে জেনে নিয়ে বলে দিতে পারতাম। এই কারণে ওনাদের জিজ্ঞাসা করা প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর আমি দিতে পারতাম। আর এতে টিচাররা একটু বেশিই অবাক হতো৷ তাই আব্বু আমার পড়ালেখার ব্যবস্থা বাসায় করলেন। সেখানে আমি কিছুটা উচ্চতর লেভেলের পড়ালেখা করতাম। মানে আমার বয়স যখন সাড়ে চার আমি তখন থেকেই হাই লেভেলের পড়ালেখা করতাম। বাবা আমাকে দেখে অনেকটা অবাক হতো৷ সে কিছুটা ভয়ও পেত। তাই আমাকে কিছুটা লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করত। আব্বু আমাকে প্রথমবারের মতো মস্তিষ্কের স্ক্যান করাতে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে দেখে আমার মস্তিষ্কের প্যাটার্ন অনেকটাই আলাদা। ডাক্তাররা এতে চিন্তিত হয়ে যায়। তার আব্বুকে আমাকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। কারণ এর সমাধান তাদের কাছে ছিল না। আব্বুকে অনেক চিন্তা করতে দেখতাম। এমন অনেক রাত গেছে যে আব্বু ঘুমায়নি। সারারাত আমার মাথায় বিলি কেটে দিয়েছে। একটা সময় আব্বুও সিদ্ধান্ত নেয় আমাকে বিদেশে নেয়ার। আর বিদেশে নেয়ার কিছুদিন আগেই আমার উপর দিয়ে ঝড় বয়ে যায়। যে ঝড়টা আমার জীবনকে তছনছ করে দিয়ে যায়৷ আর সেটা হচ্ছে আমার পাঁচ বছর বয়সে একমাত্র আপন ব্যক্তি আব্বুও মারা যায়। আমি হয়ে গেলাম একেবারে এতিম। সবথেকে একা। যার আপন বলতে কেউ নেই।’
নওরিন লক্ষ্য করল শুভ্রের চোখ দিয়ে পানি ঝরছে। কিন্তু মুখে কোন আওয়াজ ছিল না। নওরিনের চোখ দিয়েও পানি পড়তেছিল। শুভ্র নিজের চোখের পানি মুছে ফেলল। তারপর নওরিনও চোখের পানিও মুছে ফেলল। শুভ্র বলল, ‘তুমি না আমার হাত ধরে হাটতে চেয়েছিলে?’
নওরিন মাথা নেড়ে হ্যা সূচক জবাব দিল। শুভ্র বলল, ‘চলো তাহলে বাহিরে গিয়ে হাটব। আর পরবর্তী জীবনের কাহিনী বলব।’
নওরিন মাথা নাড়ল তারপর বলল, ‘ঠিক আছে। চলো।’
নওরিন আর শুভ্র একসাথে বাহিরে বের হলো৷ নওরিন খেয়াল করল বাড়িটা সেই আগের মতোই আছে। কিন্তু বাগানটা একটু পরিবর্তিত হয়ে গেছে। নওরিন সেদিকে তেমন মনযোগ দিল না। নীল আকাশে জ্বলজ্বলে সূর্য দেখা যাচ্ছিল। রোদ এতোটা তীব্র ছিল যে নওরিন একবার রোদের দিকে তাকিয়েই দ্রুত চোখ নামিয়ে নেয়। নওরিন বলল, ‘তোমার বাকি জীবনটা কি এতোটা কষ্টের মাঝেই কেটেছে?’
দুজন পাশাপাশি হাটছিল কিন্তু কেউ কারো হাত ধরছিল না। শুভ্র বলল, ‘নাহ। কারণ আমার আর কারও হারানোর ভয় ছিল না। যাদেরকে হারানোর ছিল সবাইকেই আমি আমি দুই চার আর পাঁচ বছর বয়সেই হারিয়ে ফেলেছি। এরপর আমার জীবনটা একাকিত্বকে সঙ্গে নিয়ে চলছিল। আমাদের ব্যবসার খেয়াল রাখত আমার এক দূরসম্পর্কের আত্মীয়। তবে মোটামুটি ছোটবেলা থেকে কিছুটা ব্যবসা বুঝতে পারতাম। কিন্তু এদিকে তেমন মাথা ঘামাতাম না। অঢেল সম্পত্তি ছিল। সেখান থেকে কিছু অংশ এদিক ওদিক হলেও আমার তাতে কিছু হতোও না। আমি সারাদিন বাসায় থাকতাম৷ সবসময়ই বলতে গেলে বাসায় থাকতাম। আর ওই আংকেল মাসে মাসে আমাদের একাউন্ট এ টাকা রাখত। হঠাৎ এক দুবার অফিসে যেতাম। ধীরে ধীরে আমার বয়স বাড়তে থাকল। আমি বাড়িতে একা থাকতাম। আর সাথে কয়েকজন কাজের লোক আর দারোয়ান থাকত। বেশিরভাগ সময় আমি নিজের কল্পনায় থাকতাম। আমি নিজের কল্পনাতে আরও একটি জগৎ তৈরি করে ফেলেছিলাম। সেখানে থাকত আমার বাবা-মা আর দাদা-দাদী। এমন হতো যে আমি চার পাঁচ দিন একটানা নিজের কল্পনায় কাটিয়ে দিতাম। খাওয়া দাওয়া সব সেই স্বপ্নের মধ্যে হতো। আবার বাস্তব জীবনে কাটাতাম চার পাঁচ দিন। মাঝে মাঝে ড্রাইভার এর সাথে গাড়িতে ঘুরতে যেতাম। বিকালে ছাদে উঠে রাস্তার দিকে একনজরে তাকিয়ে থাকতাম। দেখতে দেখতে আমার বয়স আরো একটু বেড়ে গেল। তখন আমার বয়স মনে হয় আঠারো ছিল। আমাদের পাশের বাড়িতে একটা মেয়ে থাকত। প্রায় সমবয়সী। তার নাম ছিল অদিতি। আমার অদিতিকে অনেক ভালো লাগত। কারণ বেশির ভাগ সময় আমি ওকে দেখার জন্য ছাদে যেতাম। কারণ অদিতির রুটিন ছিল প্রতিদিন বিকালটাতে ছাদে কোন বই পড়া। আমি অদিতিকে নিয়মিত বই পড়তে দেখতাম। কারণ আমাদের ছাদে দাড়িয়ে ওদের ছাদে সরাসরি দেখা যেত। কিছুটা ভালোবেসে ফেলেছিলাম অদিতিকে। অদিতি তোমার মতো এতোটা সুন্দরী ছিল না। তবে আমার কাছে তাকে অসম্ভব সুন্দরী লাগত। অদিতি ছিল একটু শ্যামলা। তবে তার তার চোখ দুটো আমাকে মুগ্ধ করে দিত। ও প্রায়ই বই পড়া বাদ দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকত৷ আমিও ওর চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতাম। মূলত আমি অদিতির চোখ দেখেই প্রেমে পড়ে যাই। একদিন হঠাৎ আমি ওকে প্রপোজ করে বসি। আর ও একসেপ্ট করে ফেলে। আর এর মাধ্যমে শুরু হয় আমাদের ভালোবাসার গল্প। আমরা দুজন একসাথে সময় কাটানো শুরু করি। বাস্তব জগতেই দুজনে সময় কাটাতাম। ওকে আমার অস্বাভাবিকতা, নিজের শক্তি সম্পর্কে বলি। ও আমাকে আমার শক্তিতে ভয় পেয়ে আমাকে ছেড়ে চলে যায় নি। বরং আমার হাত ধরে আমার পাশে ছিল। ঠিক যেভাবে তুমি আমার পাশে আছো। অদিতির বাবা আমাদের ভালোবাসা সম্পর্কে জেনে যায়। আমরা অনেকটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। অদিতির পরিবার আমাদের ভালোবাসাটা মেনেও নেয়। কিন্তু আমাদের বয়স কম থাকায় বিয়ে দেয়নি। আবার অদিতির পড়ালেখাটাও শেষ হয় নি। তাই পড়ালেখা শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলে। আমি আর অদিতি অপেক্ষা করতে থাকলাম। দুজনে একসাথে অনেক সময় কাটাতাম। আমার আর কখনো মনে হতো না আমি একা। আমার কেউ নেই। আমার সব সময় মনে হতো আমারও একজন সব থেকে আপন মানুষ আছে। যে আমাকে আর আমি যাকে অনেক বেশি ভালোবাসি। এর মাঝে আমি নিজে গাড়ি চালানো শিখে যাই। এরপর থেকে আমি আর অদিতি আমার গাড়িতে করে ঘুরতে যেতাম। এভাবে আমাদের রিলেশন এর দু বছর কেটে গেল। একদিন আমি আর অদিতি অনেক দুরে গাড়ি করে ঘুরতে গেলাম গাড়ি আমি ড্রাইভ করতেছিলাম। আমি অদিতির জন্য যত্ন করে একটা আংটি কিনেছিলাম। আর সেটা আমি সেখানে গিয়ে প্রথম বারের মতো অদিতিকে আংটি পড়িয়ে দিয়ে প্রপোজ করি। অদিতির মুখে আনন্দের ছাপ লক্ষ্য করলাম। এতোটাই আনন্দ যা আমি তোমাকে এখন ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। বাড়িতে ফিরে আসার পথে অদিতি অনেক টায়ার্ড হয়ে গিয়েছিল। তাই অদিতি একটু হেলে আমার কাধের উপর মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল। তখন মোটামুটি রাত আটটার মতো বেজেছিল। চারদিকে অন্ধকার। অদিতি আমার কাধে মাথা রাখায় গাড়ি চালাতে একটু সমস্যা হচ্ছিল কিন্তু আমি চালিয়ে আসছিলাম। আমি লক্ষ্য করলাম অদিতি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছে। আমার এই ক্ষমতাটাও আছে যে আমি অন্যরা কি স্বপ্ন দেখছে আমি সেটা দেখতে পারি। স্বপ্নের মধ্যে অদিতিকে অনেক খুশি লাগছিল। কারণ অদিতি স্বপ্ন দেখছিল যে আমার আর অদিতির বিয়ে হচ্ছিল। অদিতি লাল বেনারসি শাড়ি পড়েছিল আর আমিও বর বেশে ছিলাম৷ এইটা দেখে আমিও কিছুটা মনে মনে খুশি হয়ে গেলাম। আর ঠিক সেই মুহূর্ত সামনে থেকে একটা গাড়ি এসে আমাদেরকে ধাক্কা দেয়। সবকিছু ওলটপালট হয়ে যায়। আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। তিনদিন পর জ্ঞান ফিরলে জানতে পারি অদিতিও আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। যেমন করে আমার বাবা মা আর দাদু চলে গিয়েছিল। জীবনে আরো একটা বড় আঘাত পাই।’
নওরিন শেষ দিকে এসে লক্ষ্য করল শুভ্রের কন্ঠস্বর আবার ভিজে এসেছে। শুভ্রের দিকে তাকিয়ে দেখল ওর চোখ দিয়ে আবার পানি পড়ছে। নওরিন স্তব্ধ হয়ে শুভ্রের কথাগুলো শুনছিল। নওরিন বুঝতেছিল না কি করবে। কিছুটা শুভ্রের কষ্টটা আচ করতে পারছিল। কারণ শুভ্রের বর্ণনা অনুযায়ী কিছুটা ধারণা পাচ্ছিল যে শুভ্র কতটা অদিতিকে ভালোবাসত। নওরিন একবার শুভ্রের হাত ধরতে গিয়েও ধরল না। নওরিন নীরবে শুভ্রের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে বাগানের রাস্তাটা দিয়ে হাটছিল। শুভ্র আবার বলতে শুরু করল। শুভ্র বলল, ‘অদিতি আমাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার পর আমি আবার একা হয়ে গেলাম। অদিতির চলে যাওয়াতে আমি আবার আগের অগোছালো জীবনটা ফিরে পেলাম। অদিতি যেভাবে আমাকে একটা গোছানো জীবন দিয়েছিল তেমনি চলে যাওয়ার সময় সেটা আবার নিয়ে যায়। কিছুটা পাগলের মতো হয়ে গিয়েছিলাম৷ এমন জীবনে বাস করতাম যেখানে, যেখানে আমি একা। যেখান থেকে আমার সকল ভালোবাসার মানুষ হারিয়ে গেছে। আমি সিদ্ধান্ত নেই আর কাউকে ভালোবাসব না। এভাবে আমার জীবনে আরো কয়েকটা বছর কেটে যায়। আমি কারো সাথে কথা বলতাম না৷ বাড়ির সব কাজের লোক কাজ ছেড়ে চলে যায়। আমি বাড়িতে সম্পূর্ণ একা হয়ে যাই। সকলের স্মৃতিগুলো আকড়ে ধরে থাকতাম। বারবার অদিতি আর আমার একসাথে তোলা ছবি গুলো দেখতাম। বারবার দেখতাম। নিজেই নিজের রান্না করে খাওয়া দাওয়া করতাম। আর এর মাঝে আমি তোমাকে দেখি। সেদিন আমি গাড়ি চালিয়ে ডাক্তারের কাছ থেকে বাড়ি ফিরছিলাম। আর রাস্তায় তোমাকে দেখে ফেলি। তোমাকে দেখার পর আমার অদিতির কথা মনে পড়ে যায়। কারণ তোমাকে কিছুটা অদিতির মতো দেখা যায়। বিশেষ করে তোমার চোখ আর অদিতির চোখ প্রায় একই রকমের। যে চোখের মায়ায় আমি অদিতির প্রেমে পড়ি সেই চোখ। শুধু চোখ না তোমার নাকে যেমন একটা তিল আছে অদিতির একই রকম ছিল। আমার তোমাকে ভালো লেগে যায়। আমি তোমাকে আরো কয়েকবার দেখি৷ ধীরে ধীরে তোমাকে দুর থেকে পর্যবেক্ষণ করতাম। নিজেকে তোমার কাছ থেকে দুরে সরানোর অনেক চেষ্টা করতাম কিন্তু পারতাম না। তোমাকে সেদিন প্রথম বারের মতো রাত দুইটা পয়তাল্লিশ মিনিটে ফোন করি। আরকি কথা বলি। একটু ভয় দেখাই। কারণ তোমাকে ভয় দেখিয়ে ইচ্ছা করছিল তোমাকে নিজের থেকে দুরে সরিয়ে দিতে। আবার একইভাবে কাছে পেতে ইচ্ছা করছিল। তোমাকে যতটা দূরে সরিয়ে দিতে চাইছিলাম তার থেকেও বেশি ভালোবেসে ফেলেছিলাম। কিন্তু একটা ভয় কাজ করত। সেটা হচ্ছে যাকে আমি ভালোবেসেছি তাকে হারিয়ে ফেলেছি। তোমাকে অনেক বেশি ভালোবেসে ফেলেছি। হয়তো আমি অদিতিকে যতটা ভালোবেসেছিলাম তার চেয়ে বেশি না কিন্তু তার চেয়ে কোন অংশে কমও না। দেখো আমি কথার মাঝে এখন কেমন আটকে যাচ্ছি।’
নওরিনের চোখ দিয়ে পানি ঝরছিল। শুভ্রের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। শুভ্রও কাদছিল। শুভ্রের মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে যাচ্ছিল। শুভ্র কিছুটা অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছিল। নওরিন কিছুটা ভয় পেয়ে গেল। নওরিন বলল, ‘কি হয়েছে তোমাকে এমন লাগছে কেন? তুমি এমন একদম ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছ কেন? আমার কি ঘুম ভেঙে যাচ্ছে?’
‘নাহ। তোমাকে বলেছিলাম না আমি একটা সমস্যার মাঝে ছিলাম এটা তার ইফেক্ট। জানো আমি তোমার জন্য একটা উপহার রেখে যাচ্ছি। সেটা হচ্ছে আমাদের বাড়িটা আমি তোমার নামে লিখে দিয়েছি। এখন থেকে আমাদের বাড়িটা তোমার। আমার রুমের লোকারে দলিল আছে।’
‘তুমি কি মনে করো তোমার আর অদিতির কথা শোনার পর তোমাকে ছেড়ে চলে যাব৷ তাই আমাকে আটকানোর জন্য টাকা পয়সার লোভ দেখাচ্ছ? ছি! এতোদিনে আমাকে এইটুকু চিনলে? বরং আমার তোমার প্রতি ভালোবাসা আরো বেড়ে গেছে। আমি তো এসব বাড়ি, গাড়ি, টাকা-পয়সা কিছুই চাই না। আমি তো শুধু তোমাকে ভালোবাসি। কেন দিতেছো?’
শুভ্রের কন্ঠে কিছুটা জড়তা চলে আসে। তার কান্না থামছিল না। শুভ্র বলল, ‘কারণ আমি এখন মারা যাচ্ছি। আমার সময় শেষ হয়ে এসেছে। আমার মস্তিষ্কে এখন রক্ত ক্ষরণ ঘটছে। এই পৃথিবীতে আমার আপন বলে আর কেউ নেই। যদি কেউ থাকে সেটা তুমি। তাই তোমাকে বাড়িটা দিয়ে যাচ্ছি৷ যাতে তোমার কাছে আমার স্মৃতি হিসেবে কিছু একটা থাকে। যেটার কারণে তুমি আমাকে মনে রাখতে পার।’
নওরিন একটা ধাক্কা খেল৷ নওরিন নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিল না। এমন মনে হচ্ছিল কেউ তার হৃদয়ে আঘাত করে টুকরো টুকরো করে ফেলছিল। নওরিনের কান্নার বাধ ভেঙে গেল। নওরিন কানতে কানতে বলল, ‘তুমি কি বলছ এসব! আমার সাথে কি আবার ফাযলামি করতেছো? আবারও কি কোন পরীক্ষা নিতেছো?’
শুভ্র ধীরে ধীরে আরও অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছিল। ধীরে ধীরে শুন্যে মিলিয়ে যাচ্ছিল। শুভ্র বলল, ‘প্রকৃতির মধ্যে অনেক রহস্য আছে। যেমন আমি নিজেই একটা রহস্য। আমার এতো ক্ষমতা কেন সেটা আমি নিজেও জানি না। হয়তো সৃষ্টিকর্তা আমাকে আদর করে দিয়েছিল আর প্রতিদান হিসেবে যাদেরকে ভালোবেসেছি তাদের নিয়ে গিয়েছে। আবার একই ভাবে প্রকৃতির কিছু ধরা বাধা নিয়ম থাকে। সেগুলো কাউকে ভাঙতে দেয় না। আমি এর অনেকগুলো ভেঙে ফেলেছি যার শাস্তি পেতেছি৷ এর আগেরবার যখন তোমাকে এখানে নিয়ে এসেছিলাম সেটাও নিয়ম ভেঙে নিয়ে এসেছিলাম। আর তোমাকে আনার জন্য মস্তিষ্কে অতিরিক্ত পরিমাণে চাপ পড়ে। যার কারণে ঘুম ভাঙার সাথে সাথে মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণ হয়। যার কারণে আমাকে হসপিটালে নেয়া হয়। সেখানে আমাকে সতের দিন থাকতে হয়েছিল তাই মাঝে তোমার সাথে কোন যোগাযোগ করতে পারিনি। কিন্তু এখন আমার ঘুমের ভেতরেই রক্তক্ষরণ ঘটছে। আর সময় নেই। শুধু একটা রিকুয়েষ্ট রেখে যাচ্ছি যে আমি না থাকলে তুমি আমাদের বাড়িটা নিজের বাড়ি হিসেবে ব্যবহার করো। আর আমার রুমে আমার আর অদিতির একসঙ্গে তোলা কিছু ছবি দেয়ালে টানানো আছে। সেগুলোকে একটু যত্ন নিও।’
‘তোমার কিছু হবে না। আমরা দুজন একসাথে ওই বাড়িতে থাকব। একসাথে অদিতির স্মৃতি আকড়ে ধরে থাকব। তুমি শুধু বলো আমি কিভাবে তোমার বাড়িতে যাব।’
শুভ্র প্রায় অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল। শুভ্রের শরীরভেদ করে সব কিছু দেখা যাচ্ছিল। নওরিন অসম্ভব পরিমাণে কাদছিল। শুভ্র নওরিনকে শুভ্রের বাসার ঠিকানা বলে দিল। সাথে শুভ্রের ফোন নাম্বারও। তারপর বলল, ‘হয়তো তুমি আমাকে আর পাবে না৷ আমি হয়তো থাকব না। কিন্তু আমি ভালোবাসি তোমাকে। অসম্ভব ভালোবাসি। কিছু রহস্য নিয়ে তোমার জীবন থেকে চলে যাচ্ছি। ইচ্ছা ছিল তোমার সাথে কিছু ছবি তুলে একই দেয়ালে টাঙিয়ে রাখব। যেখানে অদিতির ছবি আছে। কিন্তু পারলাম না। বিদায়। লাভ ইউ সো মাচ।’
শুভ্র তার মায়াময় হাসি দিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেল। নওরিন প্রথম বারের মতো শুভ্রকে স্পর্শ করার চেষ্টা করল। কিন্তু পারল না। সবকিছু অন্ধকারে মিলিয়ে যেতে থাকল। নওরিনের ঘুম ভেঙে গেল। ঘুম ভাঙার সাথে সে একটা চিৎকার দিল। তারপর সাথে সাথে ৯৯৯ এ ফোন করে শুভ্রের বাসায় এম্বুলেন্স পাঠাতে বলল। নওরিনের চিৎকার শুনে নওরিনের বাবা ওর ঘরে চলে আসে৷ নওরিন ওর বাবাকে সাথে নিয়ে দ্রুত শুভ্রের বাড়ির দিকে রওনা দেয় শুভ্রকে বাচানোর জন্য। সেই মানুষকে বাচানোর জন্য যাকে সে কখনো সামনাসামনি দেখেনি। যার সাথে কখনো সরাসরি কথা বলেনি। যাকে কখনো সে স্পর্শ করেনি। নওরিনের গন্তব্য সেই অচেনা আবার চিরচেনা ব্যক্তির কাছে।

সমাপ্ত

পরিশিষ্টঃ #দুইটা_পয়তাল্লিশ গল্পটি সমাপ্তি ঘোষণা করছি। অনেকে কাছে হয়তো গল্পটি শেষ হয়নি। যাদের কাছে শেষ হয়নি তারা চাইলে শুভ্রকে নিজেদের কল্পনায় বাচিয়েও রাখতে পারেন। আবার মেরেও ফেলতে পারেন। আপনাদের ব্যক্তিগত ইচ্ছার উপর ছেড়ে দিলাম। আর এই পর্বের মাধ্যমে ১১ দিনের পথচলার সমাপ্তি ঘটল।

ধন্যবাদ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here