দুইটা পয়তাল্লিশ পর্ব ৪

0
360

গল্পঃ #দুইটা_পয়তাল্লিশ

লেখকঃParvez Rana

পর্বঃ ৪

নওরিনের বাবা নওরিনকে ডাকতে এসে লক্ষ্য করে নওরিন ঘুমিয়ে থাকলেও তার চোখ দিয়ে পানি পড়তেছে। ব্যাপারটা নওরিনের বাবাকে চিন্তায় ফেলে দেয়। তাই নওরিনকে কয়েকবার ডাক দেয়। আর নওরিনের বাবা সাদ্দাম সাহেবের ডাকে নওরিনের ঘুম ভেঙে যায়। নওরিন ধীরে ধীরে জেগে ওঠে। জেগে ওঠার পরও তার চোখ দিয়ে পানি পড়ছিল। সাদ্দাম সাহেব নওরিনকে বলল, ‘কিরে মা! ঘুমের মধ্যে কাদছিলি কেন? কিছু কি হয়েছে?’
নওরিন কথাটা শোনার পর তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কেদে ফেলে। নওরিনের বাবার চেহারায় দুশ্চিন্তার ছাপ পড়ে গেল। আর তার কপালে কিছুটা ঝমেছিল। নওরিনের বাবা নওরিনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। অন্যদিকে নওরিনের কান্নার পরিমাণ বাড়ছিল। সাদ্দাম সাহেবকে কিছুটা বিচলিত দেখাচ্ছিল। নওরিনের বাবা বলল, ‘আমাকে বল কি হয়েছে৷ দেখি সেটা আমি সমাধান করতে পারি কিনা।’
নওরিন নাক টানতে টানতে বলল, ‘আব্বু, আমাকে একজন রাত দুইটা পয়তাল্লিশ মিনিটে প্রায় প্রতিদিন ফোন করে কিছুটা ভয় দেখাতো৷’
‘কোন বখাটে ছেলে? রাস্তায়ও কি তোকে ডিস্টার্ব করে?’
‘না। সে শুধু আমাকে রাত দুইটা পয়তাল্লিশ মিনিটে ফোন করে ভয় দেখাতো। এছাড়া আর কখনো ফোন করে না। রাস্তায়ও দেখা হয় না।’
‘তাহলে ফোন অফ করে ঘুমাবি আর ফোন করতে পারবে না। আর আমি দেখছি তাকে কিভাবে শায়েস্তা করা যায়।’
‘না! এমন না। আমি ফোন থেকে ব্যাটারি খুলে রাখলেও আমাকে ফোন করতে পারে।’
সাদ্দাম সাহেবের মুখে চিন্তার ছাপ প্রসারিত হয়ে গেল। তিনি কিছুটা হকচকিয়ে গেলেন। তার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল। কিন্তু অবিশ্বাসও করতে পারছিল না। কারণ নওরিনের যা অবস্থা তা দেখে অবিশ্বাস করা যাচ্ছিল না। নওরিনের বাবা বলল, ‘দাড়া আমাকে একটু বুঝতে দে। কান্নাটা থামিয়ে একটু বিস্তারিত বল।’
‘তার বিভিন্ন ধরণের সুপারপাওয়ার আছে। সে প্রায় সব সময় আমাকে দেখতে পারে। আবার আমি কি চিন্তা করছি সেটাও বুঝতে পারে। আর আমাকে দুবার ঘুম পাড়িয়েও দিয়েছে।’
‘আর এসব কেন করছে তোর সাথে? সে বলছে সে নাকি আমাকে ভালোবাসে। আর কাল রাতে সে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আমার সাথে তাই একটু বেশি খারাপ ব্যবহার করে ফেলে৷ তাই বলেছে আমাকে আর ফোন করবে না।’
‘তাহলে তো সবকিছু ঠিক হয়ে গেল। এখন কাদতেছিস কেন? তুই কাদিস না মা তুই কাদলে যে আমার একটুও ভালোলাগে না৷ তুই ছাড়া আমার আর এই পৃথিবীতে কে আছে?’
নওরিন কান্না থামাচ্ছিল না। নওরিন ফোপাঁতে ফোপাঁতে বলল, ‘সে কাল রাতে বলেছিল আমাকে একটা স্বপ্ন দেখাবে। আর যেটাতে আমার সাথে তার দেখা হবে। ঠিক তার কথা মতো কিছুক্ষণ আগে আমি স্বপ্নটা দেখছিলাম। সেটা বাস্তবতাকেও হার মানিয়ে দেয়। এতো সুন্দর স্বপ্ন ছিল যা আমি বলতে পারব না। সেখানে আমি সত্যি সত্যি তাকে দেখি। সে আমাকে কতটা ভালোবাসে সেটাও দেখতে পাই। আর সেটাতে আমার তাকে ভালোলেগে যায়।’
‘এটা তো সামান্য স্বপ্ন ছিল। আর এই স্বপ্নটাও কি সেই তোকে দেখিয়েছিল?’
‘হুম। আর এটা স্বপ্ন না। আমার মনে হয় এটা বাস্তবের চেয়েও বেশি কিছু। কারণ কেউ কখনো স্বপ্ন রঙিন দেখা, গন্ধ পায় না, খাবারের স্বাদ পায় না। কিন্তু আমি এই সব পেয়েছিলাম।’
‘আচ্ছা তোর কথা আমি মেনে নিলাম। এখন তুই কি তাকে ভালোবেসে ফেলেছিস?’
‘হুম। আমি বোধহয় তাকে সত্যিই ভালোবেসে ফেলেছি।’
‘আমার তোর উপর ভরসা আছে। এখন তার সাথে কথা বলে আমার সাথে দেখা করতে বল। বল আমি তার সাথে কথা বলতে চাই। আর কথা বলে যদি ভালো লাগে তাহলে আমি তোদের বিয়ে দিয়ে দিব।’
নওরিনের মুখ হঠাৎ করেই উজ্জ্বল হয়ে উঠল। তার কান্না কিছুটা থেমে গেল। কারণ সে জানে তার বাবা সব সময় তার পাশে থাকে। আর এক্ষেত্রেও থাকবে। নওরিন বলল, ‘আমি এখনই ফোন করে বলব?’
‘ঠিক আছে বল।’
নওরিন হাতে ফোন নেয়ার পর দেখল তার ফোনে ফোন নাম্বারটা নেই। সে ফোন নাম্বার ডিলিটও করেনি। কিন্তু হঠাৎ করেই তাই একটু চিন্তিত হয়ে পড়ল। তার কিছুটা ভয় করতে লাগল। অনেক খোজাখুজির পরও ফোন নাম্বার তার ফোনে নাম্বারটা পেল না। প্রতিবার সাথে সাথে ডিলিট করে দেয়। কিন্তু এবার সে ডিলিট করেনি। তবুও ফোন নাম্বারটি নেই। তাই নওরিন ০২৪৫২৬ টাইপ করে কল দিল। কল দেয়ার পর একজন বলল, ‘প্রিয় গ্রাহক আপনি যে নাম্বারটিতে কল করছেন সেটি ভুল আছে।’
নওরিন কথাটা শুনে বিচলিত হয়ে পড়ল। সে কয়েকবার ট্রাই করল কিন্তু প্রতিবারই একই উত্তর পেল। নওরিন ভেবেছিল এবার হয়তো সে ফোন করতে পারবে। কারণ শুভ্র রাতে তাকে বলেছিল যে এরপর নওরিন যখন চাইবে শুধু তখনই ফোন করবে। এখন নওরিন মনেপ্রাণে শুভ্রের সাথে কথা বলতে চাইছে। কিন্তু নওরিন পারছে না। সাদ্দাম সাহেব মেয়ের এই অবস্থা দেখে বললেন, ‘এখন যদি না ফোন করতে পারিস তাহলে রেখে দে। পরে ফোন করলে আমার সাথে কথা বলতে বলিস।’
নওরিন মাথা নিচু করে করে বলল, ‘ঠিক আছে।’
‘আর তুই কি ভার্সিটিতে আজ যাবি?’
‘না। ভালো লাগছে না।’
‘ঠিক আছে রেস্ট নে।’
সাদ্দাম সাহেব চলে গেলেন। যাওয়ার সময় ভাবতে ভাবতে গেলেন যে যদি ছেলেটা নওরিনকে সত্যি ভালোবাসে তবে তার সাথে নওরিনের বিয়ে দিয়ে দিবে। তবে তার আগে ছেলেটার কয়েকটা পরীক্ষা নিয়ে নেবেন। কারণ নওরিন যেগুলো বলেছে সেগুলো বিশ্বাসও করতে পারছিল না আবার অবিশ্বাসও করতে পারছিল না। তাই আগে ছেলেটার সাথে কথা বলার সিদ্ধান্ত নিল। আর সাথে কথা বলার পর ঠিক করবে নওরিনকে বিয়ে দিবে কিনা। সাদ্দাম সাহেব নওরিনের রুম থেকে বের হয়ে নওরিনের কাজিন আসাদুর রহমানের কাছে ফোন করে নওরিনের ব্যাপারে কথা বলল। আসাদুর রহমানেরও বিশ্বাস হচ্ছিল না কথা গুলো। সে নওরিনের বাবাকে নওরিনকে একজন সাইকিয়াট্রিস্ট দেখানোর পরামর্শ দিল। আর বলল যে নওরিন হয়তো কোন একটা স্ট্রেস এর ভেতর দিয়ে যাচ্ছে বলে এসব সমস্যার মধ্যে পড়েছে।
অন্যদিকে নওরিন সম্পূর্ণ স্বপ্নটা ডায়েরিতে লিখে ফেলল। লেখার পর নাবিলাকে ফোন করে জানাল। নাবিলাও গম্ভীর ভাবে স্বপ্নটার কথা শুনল। মাঝে কোন শব্দ করল না। নাবিলা বলল, ‘আমার কি মনে জানিস তোর শাহীনের সাথে দেখা করা উচিৎ।’
‘তোর বয়ফ্রেন্ড এর সাথে আমি দেখা করব কেন?’
‘ও আমার বয়ফ্রেন্ড হলেও ও একজন সাইকিয়াট্রিস্ট। তোর বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দিতে পারবে।’
নওরিন গম্ভীরভাবে বলল, ‘তোর কি মনে হয় আমি মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি?’
‘না। তবে ওর সাথে কথা বললে ও আমাদের থেকে ব্যাপারটা আরও ভালো বুঝবে।’
‘আচ্ছা ঠিক আছে। এখন রাখি।’
‘তুই কি আমার উপর রাগ করলি?’
‘না। আমি রাগ করি নাই। এখন রাখ।’
‘আমি তোর ভালোর জন্য বলছি। আচ্ছা রাখছি।’
নওরিন ফোন কেটে দিল। নওরিন নাবিলার উপর কিছুটা অভিমান করল। কারণ নাবিলা নওরিনকে ভালোভাবে বিশ্বাস করতে পারছিল না৷ নওরিন সারাদিন বাসায় কাটিয়ে দিল। কারও সাথে তেমন কোন কথা বলল না। রাতে আড়াইটার এলার্ম সেট করে ঘুমিয়ে পড়ল। তার ইচ্ছা দুইটা পয়তাল্লিশ মিনিটে শুভ্র ফোন করলে তাকে বলে দিবে নওরিন যে শুভ্রকে ভালোবেসে ফেলেছে। এই চিন্তা করতে ঘুমানোর চেষ্টা করল। কিন্তু নওরিনের ঘুম ধরল না। সারাটা রাত বিছানার উপর এপাশ ওপাশ করতে থাকল। কিন্তু তার চোখে কোনভাবেই ঘুম আসল না। দেখতে দেখতে রাত আড়াইটা বেজে গেল। সে পুরোটাই জেগে রইল। আড়াইটা বাজার সাথে সাথে তার সেট করা এলার্ম বেজে উঠল। হঠাৎ এলার্ম বাজায় নওরিন কিছুটা ভয় পেয়ে যায়। সে প্রায় ভুলেই গিয়েছিল যে সে আড়াইটার এলার্ম সেট করে রেখেছিল। তার মনের মধ্যে হঠাৎ করেই একটা উজ্জ্বল আর ভীত ভাব একসাথে চলে আসে। তার মনের মধ্যে ভয় ভয় ভাব কাজ করছিল। আবার কিছুটা আনন্দের ভাবও কাজ করছিল। কারণ তার ধারণা আর কিছুক্ষণের মধ্যে শুভ্রের কল আসবে।
রাত দুইটা চল্লিশের পর তার হার্টবিট যেন হঠাৎ করেই বেড়ে গেল। সে ফোন কলের জন্য ব্যাকুল হয়ে যাচ্ছিল। বুঝতে পারছিল না হঠাৎ করেই পরিবেশটা গা ছমছমে হয়ে যাচ্ছিল। নওরিন কিছুটা ভয় পেয়ে যাচ্ছিল। কিছু কিছু অস্বাভাবিক আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিল। নওরিন দুইটা পয়তাল্লিশ বাজার অপেক্ষায় ছিল। কিন্তু দুইটা চল্লিশ এর পর যেন সময় থমকে গিয়েছিল। আর সময় এগোচ্ছিল না। সব কিছু নীরব হয়ে গিয়েছিল। নওরিনের কাছে প্রতিটি মিনিট যেন একেকটা ঘন্টার মতো দীর্ঘ লাগছিল। তার কাছে সময় প্রায় থেমে গিয়েছিল। যখন দুইটা চুয়াল্লিশ বাজল পরিবেশ সম্পূর্ণ থমথমে হয়ে গেল। সে প্রতিটা মুহুর্ত হঠাৎ করেই তার কাছে বিষের মতো লাগছিল। নওরিন ভাবছিল তার সাথে কিছু খারাপ হতে যাচ্ছে। দুইটা পয়তাল্লিশ বাজার আর পাঁচ সেকেন্ড বাকি ছিল। নওরিন দ্রুত তার হাতে তার মোবাইলটা নিল। দুইটা পয়তাল্লিশ বেজে গেল কিন্তু ফোন কল এলো না। ফোন কল না আসায় পরিবেশ আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে লাগল। থমথমে পরিবেশ মিলিয়ে গিয়ে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে আসতে লাগল। কিন্তু ফোন কল আসল না। সময় যেমন থমকে গিয়েছিল হঠাৎ করেই আবার এমন হলো যেন সময় দ্রুত চলে যাচ্ছে। নওরিনের চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে গেল। সে ফোন কল না আসায় অনেকটা কষ্ট পেতে শুরু করল। নওরিনের কান্না আসতেছিল। নওরিন ফুপিয়ে কেদে ফেলল। নওরিন এখনো বুঝতেছিল না তার সাথে কি ঘটছে। যে লোকটা তাকে এতোটা ভয় দেখালো তার ফোন কলের অপেক্ষায় সে কাদছে। শুভ্রকে নওরিন শুধু স্বপ্নে দেখেছে। আর স্বপ্নেই তাকে ভালোলেগে গেছে। নওরিন সারাটা রাত শুভ্রর কলের অপেক্ষা করল। কিন্তু শুভ্র কল করল না। নওরিন সারারাত এতোটা ফুপিয়ে কাদল যে তার তার বালিশ সম্পূর্ণ ভিজে গিয়েছিল।

এভাবে এক মাস কেটে গেল। আর এই এক মাসের প্রতিটা রাতেই নওরিন শুভ্রের ফোন কলের অপেক্ষা করত। কিন্তু একবারও শুভ্রের ফোন আসেনি। নওরিন বহুবার শুভ্রকে ফোন করার চেষ্টা করেছে কিন্তু সেটা কোনদিনও সম্ভব হয়ে ওঠেনি। আর নওরিন প্রতিটা রাতেই কান্না করে বালিশ ভিজিয়ে ফেলত। নাবিলা অনেকবার ব্যাপারটা ভুলতে বলেছিল কিন্তু নওরিন ভুলতে পারেনি। প্রতিটা রাতের দুইটা চল্লিশ থেকে পয়তাল্লিশ পর্যন্ত নওরিনের অসম্ভব খারাপ লাগত। পরিবেশটা থমথমে হয়ে যেত৷ সময় প্রায় থমকে যেত। তার অসহ্যকর যন্ত্রণা হতো৷ কিন্তু শুভ্র ফোন করত না। নওরিনের শরীর দিন দিন খারাপ হতে থাকে। নওরিনের বাবা এ নিয়ে অনেকটা টেনশনে পড়ে যান। নওরিনের বাবা নওরিনকে সাইকিয়াট্রিস্ট এর কাছে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিল। নওরিন কোনভাবেই যেতে চাইত না। নাবিলা নওরিনের বাবাকে শাহীনের কাছে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। নওরিন কারও কাছে যেতে না চাওয়ায় শাহীন আর নাবিলা নওরিনের বাসায় এসে দেখে যায়। শাহীন নওরিনের কোন সমস্যা খুজে পেল না। নওরিন সম্পূর্ণ স্বাভাবিক ছিল। নওরিনকে স্বাভাবিক দেখে শাহীন নওরিনকে কিছু ঘুমের ঔষধ দিয়ে যায়। নওরিন সেগুলো প্রতিরাত এগারোটার দিকে খেলেও তার ঘুম ধরত না। তার ঘুম ধরত ঠিক রাত দুইটা আটচল্লিশ এর দিকে। আর প্রতিটা রাতেই পাঁচ মিনিটের জন্য তার অসহ্যকর পরিবেশের মধ্যে দিয়ে যেতে হতো। ঘুম না আসার ব্যাপারটা শাহীনকে বেশ অবাক করেছিল। সে কয়েক ধাপে ঘুমের ঔষধের ডোজ বাড়িয়ে দিয়েছিল কিন্তু কোন কাজ না হওয়ায় নিজে থেকেই আবার নওরিনকে আবার ঔষধ খেতে নিষেধ করে দেয়।

মাঝে একদিন নওরিনের অসম্ভব মাথা ব্যাথ্যা করছিল। মাথা ব্যাথার কারণে কোন কিছুই তার ভালোলাগছিল না৷ তার এমন মনে হচ্ছিল যেন তার মাথাটা না থাকলে ভালো হতো৷ ঠিক এমন সময় কিছু অদ্ভুত আওয়াজ শুনতে পেল৷ তার কানে কানে কেউ কিছু বলছে। নওরিন মনযোগ দিয়ে সেটা শোনার চেষ্টা করল। নওরিন প্রথমে মধুর একটা হাসির আওয়াজ শুনতে পেল। আওয়াজ শোনার সাথে সাথে সে বুঝে ফেলল যে এটা শুভ্রের হাসির আওয়াজ। হাসির আওয়াজটা তার মনের সব কষ্ট যেন দূর করে দিচ্ছে। নওরিন শুনল শুভ্র হাসিমুখে কিছু একটা বলছে। নওরিনের চোখ দিয়ে অঝোরে পানি বের হচ্ছিল। কিছুক্ষণের মধ্যে তার গাল বেয়ে বেয়ে পড়ছিল। অন্যদিকে তার মাথা ব্যাথার জন্যে অনেকটা কষ্ট পাচ্ছিল। নওরিন মনযোগ দিয়ে শুভ্রের কথা শোনার চেষ্টা করল। শুভ্র বলছে, ‘তোমার মাথা ব্যাথা করছে?’
‘হুম। তুমি কোথায় এখন আমার সাথে প্লিজ কথা বলোনা।’
‘তুমি তো বলেছিলে আমি যেন আর তোমাকে ফোন না দেই। তাই তো এখন করছি।’
‘আমি এখন আবার বলছি আমার সাথে একটু কথা বলো না। আমার সাথে একটু দেখা করো না। তোমাকে আমি দেখতে চাই।’
‘হুম। দেখা করব। তার আগে সব কিছু ঠিক করে নেই। আর এখন তোমার মাথা ব্যাথা কমিয়ে দিতেছি। তুমি কিছুক্ষণের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়বে।’
‘না! আমি ঘুমাতে চাই না। আমি তোমার সাথে কথা বলতে চাই। আমি তোমাকে ভালোবাসি।’
কথাটা বলে নওরিন কেদে ফেলল। শুভ্রের একটা মৃদু হাসির আওয়াজ নওরিন পেল। শুভ্র বলল, ‘আমি জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো।’
‘তাহলে কেন করছ এমন আমার সাথে? আমাকে তোমার স্বপ্নের জগতে নিয়ে চলো না।’
‘যাব। সময় আসুক। দেরি হয়ে যাচ্ছে। তুমি এখন ঘুমিয়ে পড়বে। আমি বলেছিলাম না তোমার বিপদে আমি সাহায্য করব। এখন তোমার মাথা ব্যাথা তাই সাহায্য করতে এসেছি। তুমি আমাকে সব সময় খুজে বেড়াও ঠিক না?’
‘হুম। সব সময়। তোমাকে ছাড়া আমার এখন কিছু ভালোলাগে না।’
‘আমি তো আগেই বলেছিলাম আমি সব সময় তোমার পাশে থাকি। শুধু চোখ ঘোড়ালেই দেখতে পাবে এতোটা পাশে। বাতাস যেমন তোমার সাথে থাকে আমিও তেমন তোমার সাথে থাকি।’
‘কিন্তু আমি তোমাকে দেখতে চাই।’
‘দেখা হবে। আমাদের আমি একটা সমস্যার মধ্যে আছি। সেটা থেকে বেরিয়ে তোমার সাথে দেখা করব।’
‘কবে বের হবে এই সমস্যা থেকে?’
‘জানি না। হয়তো কখনোই বেরোতে পারব না। আবার হয়তো কিছু মুহূর্ত পরেই বেরিয়ে পড়ব। আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞাসা করি। বলতো আমি তো এবার তোমাকে ফোনও করিনি তবুও কথা বলছি কিভাবে?’
‘জানি না। আমি এসব ভাবতে পারছি না। আমি শুধু তোমাকে চাই।’
‘তোমার মধ্যে আমাকে নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে আমি জানি। যেহেতু তুমি এখন আমাকে ভালোবাসো তাই সেগুলোর উত্তর আমি তোমাকে দেই। আমি আগে তোমার ফোনে ব্যাটারি না থাকলেও ফোন করতে পারতাম ঠিক না?’
‘হুম৷’
‘আসলে আমি তোমার ফোনে মাত্র প্রথম দুইদিন করেছিলাম। আর কখনো ফোন করিনি। যখন ফোন করতাম না তখন আমি সবসময় তোমার চোখের সামনে ইলিউশন তৈরি করতাম। অর্থাৎ আমি যা চাইতাম তুমি সেটাই দেখতে। আমি চাইতাম তুমি দেখো তোমার ফোনে কল এসেছে। আর সেটা আমি করেছি। যার কারণে তুমি দেখতে তোমার ফোনে কল এসেছে। আর রিংটোন এর আওয়াজ এর ব্যাপারটা হচ্ছে আমি তোমার মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষে সরাসরি আওয়াজ তৈরি করতাম। আর তুমি ফোনটা কানের কাছে নেয়ার পর আমি তোমার সাথে টেলিপ্যাথির মাধ্যমে কথা বলতাম। অর্থাৎ টেলিপ্যাথি হচ্ছে দুর থেকে কোন মাধ্যম ছাড়া কথা বলা। টেলিপ্যাথির মাধ্যমে আমি যেখানে আছি সেখান থেকে মোবাইল এ যেভাবে কথা বলি সেভাবেই বলতে পারি। কিন্তু মোবাইল বা টেলিফোন ছাড়াই। যেমন এখন বলছি। কোন মাধম ছাড়া সরাসরি কথা বলছি। তোমার মনের সাথে আমার মনের সরাসরি যোগাযোগ। তোমার মাথা ব্যাথা কি ধীরে ধীরে কমছে?’
‘হুম৷ কমছে। এভাবে তুমি আমার সাথে সারারাত কথা বলো না প্লিজ। তোমার কথা শুনতে আমার অনেক ভালো লাগছে।’
‘বলছি তো৷ আমি চাইলে শুরু থেকে তোমাকে এমন ভয় না দেখিয়ে কথা বলতে পারতাম। কিন্তু তুমি এতে ভুত ভেবে নিতে। যদিও তুমি এমনিতেও আমাকে ভুত ভেবে নিয়েছিলে। আসলে আমি কিন্তু ভুত না। আর কখনো ভুত ছিলামও না। এখনও তোমার মনের মধ্যে অনেক বেশি প্রশ্ন আছে আমি সেটা জানি। কিন্তু এখন তুমি ঘুমাও। কারণ তোমার মাথা ব্যাথা কমে গেছে। কারণ তোমার মাথা ব্যাথা কমাতে গিয়ে এখন আমার মাথা ব্যাথা শুরু হয়ে গেছে। আগে আমি সহজেই যে কারো মাথা ব্যাথা কমাতে পারতাম। এখন কারও মাথা ব্যাথা কমালে সমপরিমাণ মাথা ব্যাথা আমারও হয়। তাই এখন বুঝতে পারছি তোমার মাথা ব্যাথা কমে গেছে। তুমি ঘুমিয়ে পড়ো।’
‘তাহলে কেন করলে এমন? কেন আমার মাথা ব্যাথা কমাতে গেলে? আমি এই মাথার যন্ত্রণা নিয়েই থাকতাম। কেন সাহায্য করতে গেলে?’
‘কারণ আমি তোমাকে ভালোবাসি। আর তোমার কষ্ট সহ্য করতে পারি না। আই লাভ ইউ। আমি এখন চলে যাচ্ছি। যাওয়ার আগে কিছু বলবে আমাকে?’
‘যেও না প্লিজ। তোমাকে ছাড়া আমার থাকতে আরও বেশি কষ্ট হয়৷ তাহলে কেন এতো দুরে থাকো?’
‘আমি বলেছিলাম তো আমি একটা সমস্যার মধ্যে আছি। সেটা সমাধান হয়ে গেলে সারাজীবনের জন্য তোমার পাশে চলে আসব। আর আমি এগারো দিন পর আবার তোমার সাথে যোগাযোগ করব। আর ততদিনে হয়তো আমি আমার সমস্যার সমাধান করতে পারব। হয়তো বা পারব না। কিন্তু তোমার সাথে যোগাযোগ করব।’
নওরিনের চোখ ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আসছিল। কিন্তু নওরিনের চোখ দিয়ে পানি বেরোচ্ছিল। নওরিন বলল, ‘যেও না। প্লিজ যেও না।’
নওরিন আর কোন শব্দ শুনতে পেল না। চারদিকে নীরবতা ছেয়ে গেল। নওরিন ঘুমের কোলে ঢোলে পড়ল।
আজ সেই রাত যে রাতে শুভ্র নওরিনের সাথে কথা বলবে। এগারো দিন পেড়িয়ে গেছে। নওরিন শুভ্রের ফোন কলের অপেক্ষায় আছে। সে অপেক্ষায় আছে কখন তার ভালোবাসার মানুষ তার সাথে কথা বলবে।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here