তুমি_আছো_হৃদয়ে_তাই পর্ব_৭

0
2222

#তুমি_আছো_হৃদয়ে_তাই
#শোভা_আক্তার(লাভলী)
#পর্ব_৭

বাবার রাগ এইবার সপ্তম আসমানে উঠে গেল। আধুনিক্তার কথা শেষ হতেই সজোরে মেয়ের গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো। সবাই অবাক হয়ে গেল। আধুনিক্তা দু হাত দিয়ে জামা আঁকড়ে ধরে মাটির দিকে তাকিয়ে আছে। রাগে তার চোখ লাল রং ধারণ করেছে। মাশরাত কী করবে বুঝতে পারছে না। দাদী ধমকের স্বরে বললেন-
“পাগল হয়ে গেলি তুই? মেয়ের গায়ে হাত তুললি কেন?”
“যদি আগে ঠিক মতো শাসন করতাম আজ এই দিন দেখতে হতো না।”
মা বললো-
“তুমি ভালো মতো জানো মেয়ে তোমার মতোই রাগী হয়েছে। তুমি সুন্দর করে বুঝাতেও পারতে। আধুনিক্তা তুমি..”
আধুনিক্তা মায়ের দিকে তাকিয়ে চোখে ইশারায় বললো কিছু বলতে না। মা চুপ হয়ে গেল। আধুনিক্তা বাবার দিকে তাকিয়ে বললো-
“কে তুমি? আমি জিজ্ঞেস করছি কে তুমি? ভুলে গেলে তুমি কেমন মানুষ?”
“আধুনিক্তা তুমি…”
দাদাই কিছু বলার আগেই আধুনিক্তা চেচিয়ে বললো-
“যখন আমি কিছু বলবো কেও কথা বলবে না ইটস মাই ওয়ার্নিং।”
আধুনিক্তা আবার বাবার দিকে তাকিয়ে বললো-
“তুমি আমাকে শাসন করার আগে নিজেকে শাসন করো। তোমার চরিত্রে দাগ আছে আমার না।”
আধুনিক্তার বাবা হাত মুঠো শক্ত করে ফেললো। মা তারাতাড়ি আধুনিক্তার হাত ধরে বললো-
“মা আমার এইভাবে বলে না। অতীত টেনে কী লাভ বলো? বাবা রাগে কিছু বললে কী মনে রাখতে হয়? চুপ করো আম্মু আর কিছু বলো না।”
“তো তোমার স্বামীকে বলে দাও অকারণে বাজে ব্যবহার করতে না। সবাইকে কী তোমার স্বামী নিজের মতো নিচু মস্তিষ্কের মানুষ ভাবে?”
বাবা রাগে গজগজ করতে করতে বললো-
“পুরো ঘটনা জানো না তাই আন্দাজে কিছু বলার অধিকার তোমার নেই। যদি আর একবার তুমি…”
“তোমাকে আমি ভয় পাই না।”
আধুনিক্তার বাবার কাছে গিয়ে চোখে চোখ রেখে নিচু স্বরে বললো-
“আমি কখনো সেদিনের কথা তুলি না বলে ভেবো না সব ভুলে গিয়েছি। প্রতি মাসে তোমার ব্যাংক থেকে টাকা ট্রান্সফার হয় তাই না? তোমার কী মনে হয় আমি কিছু জানি না?”
“সেদিন তোমাকেই হসপিটালে দেখতে যাচ্ছিলাম আমি, ভুলো না।”
“আই ডোন্ট কেয়ার তুমি একজন অপরাধী।”
বাবা মুখ ঘুরিয়ে ফেললো। আর কথা না বাড়ানোই শ্রেয়৷ মাশরাত তাদের পরিবার আলাপের মাঝে আসতে চায় না। কিন্তু এখন আধুনিক্তাকে না সামলালে পরিস্থিতি আরো বিগড়ে যাবে৷ মাশরাত ধমকের স্বরে আধুনিক্তাকে বললো-
“তোমার কোনো অধিকার নেই নিজের বাবার সাথে এইভাবে কথা বলার আধুনিক্তা৷ এখনই মাফ চাও।”
আধুনিক্তা ভ্রু কুঁচকে মাশরাতের দিকে তাকিয়ে বললো-
“হোয়াট ননসেন্স আমি মাফ চাইবো কেন?”
“তোমার জন্মদাতা পিতা উনি। কমনসেন্স বলতে কিছু আছে নাকি সেটাও হারিয়ে ফেললে?”
“স্যার আপনি কিছু জানেন না উনি…”
“আমি কিছু জানতে চাই না। বাবাকে যেদিন হারিয়ে ফেলবে সেদিন বুঝবে যে আজকের দিনে কত কষ্ট দিয়েছে বাবাকে। যত পর্যন্ত তোমার পরিবার পারমিশন না দিবে আমি তোমাকে ট্রেইনিং দিবো না। আর হ্যাঁ তুমি আগে তোমার বাবাকে সম্মান দাও তারপর আমার জন্য প্রতিবাদ করতে এসো। আজ আসি।”
বলেই মাশরাত হাঁটা ধরলো। আধুনিক্তা মুখ গোমড়া করে দাঁড়িয়ে আছে। মাশরাত চলে গেল। বাবা হঠাৎ বলে উঠলো-
“যা করার করো তুমি। জীবন তোমার আমাদের না। একদিন পস্তাবে যে কেন পরিবারের কথা শুনি নি?”
বাবাও চলে গেলো উনার রুমে। আজানের শব্দ চারপাশে ছড়িয়ে পরতেই দাদাই চলে গেলেন নামাজে। দাদীও চলে গেলেন উনার রুমে। মা আধুনিক্তার কাঁধে হাত রেখে বললেন-
“যদি খেলার কারণে তোমার হার্ট অ্যাটাক হয় তাহলে কী হবে বুঝতে পেরেছো? তোমার এখনো হার্ট সার্জারী হয় নি আধুনিক্তা। ডাক্তার বলেছিলো সার্জারী এক না একদিন করতেই হবে। কিন্তু তার আগে তোমার সুস্থ থাকা জরুরি। এই তিন বছর তোমাকে আমরা খুব কষ্টে সামলিয়েছি। কারণ তুমি দুর্বল হয়ে গেলে সার্জারী আন-সাকসেসফুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশী।”
“আমি চাই না সার্জারী করাতে। তুমি তো জানোই সার্জারী করলে কী হবে।”
“হ্যাঁ জানি, কিন্তু যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে আম্মু। এখন গিয়ে ফ্রেশ হও। আজ আব্বুকে প্রথমবার তুমি রাগের মাথায় কষ্ট দিয়েছো। ক্ষমা চেয়ে নিবে কেমন?”
“হুম”
মা আধুনিক্তার মাথায় চুমু দিয়ে জড়িয়ে ধরলো। আধুনিক্তা মাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো। মা হাসলো, কাওকে কষ্ট দিলে মেয়েটা নিজেই কান্না করে।

মাশরাত হেলেদুলে রাস্তায় হাঁটছে। যদিও তার ইচ্ছে নেই আধুনিক্তার পরিবারের মাঝে নাক গলাতে কিন্তু বেশ ভাবাচ্ছে তাকে আধুনিক্তার কথাগুলো। আধুনিক্তার বাবা বিজনেসম্যান। হয় তো কোনো অপরাধ করেছে। কিন্তু কী এমন অপরাধ যে আধুনিক্তা আজ এইভাবে কথা বললো? মাশরাত বাসায় এসে দরজা ঠকঠক করলো। মালিহা এসে দরজা খুলে বললো-
“ট্রেনিং তো ৪ টায় শেষ হয়ে যায়। তুমি আজ এত লেইট কেন?”
“একটা কাজে গিয়েছিলাম।”
বলেই মাশরাত ভেতরে ঢুকলো। মালিহা দরজা বন্ধ করে বললো-
“গোসল করে আসো আমি ভাত বেড়ে দেই।”
“আম্মু কোথায়?”
“বলবো, আগে তুমি যাও গোসল করে খাওয়া দাওয়া করে নাও।”
মাশরাত কথা বাড়ালো না। মাথা ব্যাথা করছে তার। বাথরুমে গিয়ে গোসল করে বের হলো। মালিহা খাবার বেড়ে টেবিলে রাখলো। মাশরাত এসে খাবার দেখে নাক মুখ কুঁচকালো। মালিহা তার চেহারা দেখে বললো-
“তোর আবার কী হলো?”
“এইটা ভাত নাকি খিচুড়ি?”
“ভাত, কেন কী হয়েছে?”
“আর এইটা কী ডাল?”
“হ্যাঁ”
“এমন কালো কেন? ধ্যাত আমি খাবো না।”
“ভাই এইভাবে বলিস না। আম্মু নেই তাই আমিই সব রান্না করেছি। ভাত আমি ভুলে এক ঘন্টা চুলায় বসিয়ে রেখেছিলাম তাই এমন হয়ে গিয়েছে। আর ডাল রান্নার জন্য যে পেঁয়াজ ভেজেছিলাম সেগুলো পুড়ে গিয়েছিল তাই ডালটা এমন হয়ে গিয়েছে।”
“হুম বুঝলাম আর কী রান্না করেছিস?”
“আলুর ভর্তা”
“আচ্ছা একটুখানি দে। দেখেই পেট ভরে গিয়েছে।”
“খাবার নিয়ে এমন করা ভালো না। তুই আমার ভাবীকে খাবার নিয়ে ভীষণ প্যারা দিবি বুঝতে পারলাম।”
“হ্যাঁ দিব, এখন মুখ বন্ধ রাখ।”
মালিহা পাশে বসে রইলো। কারণ মাশরাতের কিছুক্ষণ পর পরই এটা ওটা লাগতে থাকে। কখনো পানি ফেলে দিবে তো কখনো খাবার। তাই মা বা মালিহাই সব বেড়ে দেয়। মাশরাত খেতে খেতেই জিজ্ঞেস করলো-
“আম্মু কোথায় বললি না যে।”
“তুই খেয়ে নে তারপর বলছি।”
“মালিহা কি লুকাচ্ছিস?”
“কিছু না।”
“বলবি নাকি আম্মুকে কল দিব?”
“না না আমি বলছি। আম্মু মেয়ে দেখতে গিয়েছে।”
“মেয়ে মানে?”
“মানে তোর বিয়ের জন্য মেয়ে দেখতে গিয়েছে।”
মাশরাত দাঁড়িয়ে রাগী কন্ঠে বললো-
“বলেছিলাম না আমি বিয়ে করতে চাই না।”
“খাবার খেয়ে নে ভাই প্লিজ সকালেও নাস্তা না করে বেরিয়েছিলি। এর জন্যই তোকে বলতে চাচ্ছিলাম।”
“আম্মুকে প্লিজ বুঝা আমি বিয়ে করতে চাই না।”
“আর কত অপেক্ষা করবি ভাই?”
“আমি অপেক্ষা করছি না।”
“ভাই আমি জানি তুই আজও ভাবীকে..মানে তাবাসসুম আপুকে ভালোবাসিস। কিন্তু এখন আপু হয় তো বিবাহিত। তুই অকারণে অপেক্ষা করছিস।”
মাশরাত বসে পরলো। গলা ধরে আসছে তার। মালিহা আবার বললো-
“কারো জন্য জীবন থেমে থাকে না। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখ। সময় সবসময়ের মতো এগিয়ে যাচ্ছে। সময়ের সাথে সাথে আমাদেরও এগিয়ে যাওয়া উচিত।”
“তো কী করবো আমি বল? আমার জীবনটা যেন থমকে গিয়েছে। পারছি না এগিয়ে যেতে।”
“চেষ্টা করে দেখ। তুই চেষ্টা করছিস না বলেই পারছিস না এগিয়ে যেতে। যদি ভবিষ্যতে কখনো আপুর সাথে দেখা হয় উত্তরটা জেনে নিস। এখন না হয় এগিয়ে যা।”
মাশরাত আর কিছু বললো না। কিভাবে পারবে সে সময়ের সাথে এগিয়ে যেতে? তাকে তো তার অতীত ঝাপ্টে ধরে রেখেছে।

রাতের বেলা…..
আধুনিক্তা বাবার ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ভেতরে যেতে ইচ্ছে করছে কিন্তু পারছে না। হঠাৎ দরজা খুললো কেও একজন। আধুনিক্তা মাকে দেখে হাঁটা ধরেছিলো কিন্তু মা তার হাত ধরে বললো-
“যে কাজের জন্য এসেছো সে কাজটা করে যাও। বাবা ভেতরে আছে।”
বলেই মা আধুনিক্তার হাত ছেড়ে পাশ কাটিয়ে রান্নাঘরে চলে গেলো। আধুনিক্তা লম্বা নিশ্বাস ফেলে নিজেকে স্বাভাবিক করে ঘরে ঢুকলো। বাবা ল্যাপটপে কাজ করছে৷ আর আরমান বসে বসে টিভি দেখছে। আধুনিক্তাকে দেখে আরমান বললো-
“মাম্মাম তুমি এসেছো দেখো দেখো শিনচ্যানকে ওর আম্মু আবার মেরেছে।”
বলেই আরমান হাসতে লাগলো। আধুনিক্তা হেসে আরমানের কাছে গিয়ে কপালে চুমু দিয়ে বললো-
“এই পর্বটা শেষ হলে ঘুমিয়ে যাবে ওকে? সকালে স্কুল আছে তোমার।”
“ওকে”
আধুনিক্তা আড়চোখে বাবার দিকে তাকালো। বাবার সব মনোযোগ ল্যাপটপে। হয় তো আধুনিক্তাকে দেখেই এমন করছে। নাহলে তো একবার হলেও তাকিয়ে দেখতো। আধুনিক্তা হেটে গিয়ে বাবার পায়ের সামনে বসলো। বাবা পা ভাজ করে হেলান দিয়ে বসলো। এখনো উনার মনোযোগ ল্যাপটপে। আধুনিক্তা তার ওড়না দিয়ে আঙুলে পেঁচিয়ে খেলা করছে৷ কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থেকে বললো-
“আব..আব্বু?”
বাবা চোখ তুলে আধুনিক্তাকে একবার দেখে আবার ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে বললো-
“হুম”
“আই এম সরি”
“হুম”
“ভুল হয়ে গেছে আর করবো না এমন।”
“হুম, যাও এখন গিয়ে ঘুমাও।”
“মাফ করেছো?”
“হুম”
“তাহলে ঠিক মতো কথা বলছো না যে।”
“কাজ করছি এখন কথা বলতে পারবো না।”
আধুনিক্তা মুখ লটকালো। বাবা বেশী রাগ করেছে আজ। তখনই মা আসলো খাবার নিয়ে। আধুনিক্তা মায়ের হাতে খাবার দেখে বললো-
“কার খাবার এটা?”
“তোর আব্বুর।”
“মানে কী আব্বু এখনো খায় নি?”
“না”
“কী? আব্বু তুমি এখনো খাও নি কেন?”
“কাজ করছি তাই।”
“আমি তো আমার ঘরে খাবার খেয়েছি তো ডাইনিং টেবিলে বসে সবার সাথে খেয়ে নিতে।”
“ইচ্ছে করছিলো না তাই খাই নি। তুমি এখন গিয়ে ঘুমাও সকালে ভার্সিটি আছে তোমার।”
আধুনিক্তা উঠে গিয়ে হাত ধুয়ে আসলো। মায়ের হাত থেকে প্লেট নিয়ে খাটে পা ভাজ করে বসে ভাত মাখতে লাগলো। বাবা আধুনিক্তাকে দেখে ল্যাপটপ দিয়ে মুখ আড়াল করে নিঃশব্দে হাসলো। আধুনিক্তা বললো-
“ল্যাপটপ সরাও।”
“আমি কাজ করছি ডিস্টার্ব করো না।” আধুনিক্তা বাম হাত দিয়ে খোপ করে ল্যাপটপ নিয়ে বিছানায় রেখে বাবার মুখের সামনে ভাতের লোকমা তুলে ধরলো। বাবা ভ্রু কুঁচকে বললো-
“আর ঢং করতে হবে না। গিয়ে ঘুমাতে বলেছি তোমাকে। যাও বলছি।”
আধুনিক্তা নিশ্চুপ। শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বাবার দিকে। বাবার রাগ আধুনিক্তাকে দেখার সাথে সাথেই চলে গিয়েছে। এখন একটু মজা করলে কেমন হয়? বাবা রাগী দৃষ্টি বানিয়ে তাকিয়ে আছে আধুনিক্তার দিকে। ধীরে ধীরে আধুনিক্তার চোখে পানি জমে গেলো। বাবা দৃষ্টি স্বাভাবিক করলো। হঠাৎ করেই কেঁদে উঠলো। প্লেট বিছানায় রেখে মাথা নিচু করে শব্দ করে কাঁদছে। বাবা জিহ্বায় কামড় দিয়ে দিলো। সাথে সাথে একটু এগিয়ে গিয়ে আধুনিক্তাকে বুকে ভরে নিলো।
“সরি আম্মু সরি আজ রাগ করবো না প্রমিজ। আমি তো মজা করছিলাম বিশ্বাস করো। আমি কী আমার মেয়ের সাথে রাগ করে থাকতে পারি বলো?”
আধুনিক্তা বাবাকে জড়িয়ে ধরে বুকে মুখ গুঁজে শব্দ করে কাঁদছে। মা নিরব দর্শকের মতো একপাশে দাঁড়িয়ে বাপ মেয়ের কান্ড দেখছে। কেও কারো থেকে কম না। দুজনই রাগে আগুন হয়ে যায় আবার নিমিষেই রাগ চলে যায়। আবার দুজনই এক্টিংবাজ। মা হাসলো কথাটা ভেবেই।

মাশরাত হাতে একটা মেয়ের ছবি নিয়ে বসে আছে। তার পছন্দ হয় নি মেয়েটাকে। মেয়েটা দেখতে ভারী সুন্দর, পড়াশোনায়ও ভালো। ঘরের কাজ কর্ম টুকটাক পারে। কিন্তু তার ভালো লাগে নি। মা তো যেন দেখেই পাগল হয়ে গিয়েছে এই মেয়েটাকে পুত্রবধু বানানোর জন্য। উনি তো চেয়েছিলেন আজই আংটি পড়িয়ে রেখে আসবেন। কিন্তু ছেলের মতামত না জানার পর্যন্ত এমনটা করা উনার ঠিক মনে হয় নি। মা বললো-
“বল না কেমন মেয়েটা?”
“সুন্দর”
“সত্যি? তাহলে তোর পছন্দ হয়েছে। আমি কালই তাদের কল দিয়ে বলছি। ভাবছি এই এক মাসের মধ্যেই বিয়ে করিয়ে ফেলবো।”
“আম্মু, আমি বলেছি সুন্দর। কিন্তু পছন্দ হয়েছে এটা বলি নি।”
“মানে কী? তোর পছন্দ হয় নি?”
“না”
“কিন্তু কেন? মেয়েটা খুব ভালো।”
“দুনিয়ায় তো আরো ভালো ভালো মেয়ে আছে। এখন কী সবাইকে বিয়ে করে ফেলবো?”
“তোর কী হয়েছে এইভাবে কথা বলছিস কেন?”
“মা আমি বিয়ে করতে চাই না।”
“সারাজীবন এইভাবে থাকার ইচ্ছে?”
“সেটা বলি নি। কিন্তু মেয়ে আমার মনের মতো হতে হবে।”
মা বিরক্ত হলো। এখন জিজ্ঞেস করলে ছেলে লম্বা লিস্ট ধরিয়ে দিবে শিওর। তবুও জিজ্ঞেস করলেন-
“কেমন মেয়ে তোর পছন্দ বল।”
“বলছি।”
মাশরাত ছবিটা মায়ের কাছে দিয়ে কিছুক্ষণ ভাবলো। ভাবা শেষ হতেই আনমনে বলা শুরু করলো-
“চঞ্চল মেয়ে, যার চোখগুলো হবে মায়াবী। আর চোখের মণি হবে বাদামী বর্ণের। যার চুলগুলো হবে লম্বা কিন্তু হালকা কোঁকড়ানো। যার হাসির শব্দ শুনলে শুনতেই ইচ্ছে করবে। যার উপরে সব রং এর জামা মানায়। যে হবে প্রতিবাদী। আমি এমনই একজন চাই।”
বলা শেষ হতেই মাশরাত মায়ের দিকে তাকালো। মা গালে হাত দিয়ে চোখ ছোট ছোট করে মাশরাতের দিকে তাকিয়ে আছে। মাশরাত বললো-
“এইভাবে তাকিয়ে আছো কেন?”
“এতগুলো মেয়ে এখন কোথায় পাবো ভাবছি।”
“এতগুলো কোথায়? আমি একটা মেয়ের কথা বলেছি।”
“বাবা তুই যেসব কোয়ালিটির কথা বললি। সেসব কোয়ালিটি একটা মেয়ের মধ্যে কখনোই পাবো না।”
“কে বলেছে পাবে না? এমন মেয়ের কী অভাব আছে দুনিয়ায়?”
“এখন কী আমি পুরো দুনিয়ায় টর্চ লাইট দিয়ে খুঁজবো? তোর যে পছন্দের লিস্ট।”
মা লম্বা নিশ্বাস ফেললো। মাশরাত বললো-
“পাবে মা অবশ্যই পাবে।”
“তুই ইচ্ছে করে এত বড়ো লিস্ট দিয়েছিস যাতে খুঁজতে খুঁজতে আরো ১০ বছর লেগে যায়।”
“সমস্যা নেই আমি অপেক্ষা করে নিবো।”
“হ্যাঁ ততদিনে আমি মরে ভূত হয়ে যাবো।”
“মা প্লিজ এইভাবে বলো না।”
“তো তুই আমার পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করবি কী না সেটা বল।”
মাশরাত বিরক্ত হলো। বিয়ে কী খুব জরুরি জীবনে? মা মাশরাতের কাঁধে হাত রেখে বললো-
“আমি মরার আগে তোকে ও মালিহাকে কারো হাতে তুলে দিতে চাই। তুই দয়া করে এই মেয়েকে বিয়ে করার জন্য রাজি হয়ে যা। মেয়েটা খুব ভালো।”
“আচ্ছা আমাকে কিছুদিন সময় দাও।”
“আচ্ছা”
মা মাশরাতের মাথায় হাত বুলিয়ে উঠে চলে গেল। মাশরাত চুপচাপ খাটে হেলান দিয়ে বসে রইলো। চোখ বন্ধ করে তার পছন্দের ব্যাপারে ভাবতে লাগলো। বাদামী বর্ণের চোখ, হালকা কোঁকড়ানো লম্বা চুল, প্রতিবাদী চঞ্চল মেয়ে। মাশরাতের চোখের সামনে হঠাৎ আধুনিক্তার চেহারা ভেসে উঠলো। তারাতাড়ি চোখ খুলে সোজা হয়ে বসলো৷ হঠাৎ বুকের বা পাশ মোচড় দিয়ে উঠলো। হৃদয়ের স্পন্দনও খুব বেড়েছে। চুপচাপ কিছুক্ষণ বসে থেকে শুয়ে পরলো।

পরেরদিন….
মাশরাত পকেটে হাত দিয়ে হাঁটছে। আজ তার ভালো লাগছে না। ইচ্ছে করছিলো শুয়ে থাকতে কিন্তু নতুন কাজ নিয়েছে না গেলেও হবে না। ধীরপায়ে হেটে এগিয়ে যাচ্ছিলো হঠাৎ একটা গাড়ি এসে মাশরাতের সামনে দাঁড়ালো। মাশরাত দাঁড়িয়ে পরলো। গাড়ির দরজা খুলে কেও একজন বের হলো। মাশরাত মানুষটাকে দেখে কিছু অপ্রস্তুত হলো।
“হেটে যাচ্ছো?”
মাশরাত হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ালো।
“চলো তোমাকে ভার্সিটি ড্রপ করে দেই।”
“না স্যার আমি যেতে পারবো। আর মাত্র ১০ মিনিটের রাস্তা।”
“এই ১০ মিনিটের রাস্তা ২ মিনিটে পাড় হয়ে যাবে। গাড়ির স্পিডের সম্পর্কে তো জানাই আছে তোমার।”
“জ্বী স্যার”
“তো আসো”
“না স্যার আমি যেতে পারবো।”
“ঠিক আছে এজ ইওর উইশ। একটা কথা বলার আছে আমার।”
“বলুন”
“আমার মেয়ের থেকে দূরত্ব বজায় রেখো কেমন?”
“আমি আপনার মেয়ের কাছে কখনো যাই নি যে দূরত্ব বজায় নিব।”
“হ্যাঁ আমি দেখেছি তুমি কিভাবে আমার মেয়েকে শাসন করছিলে।”
“আধুনিক্তা আমার জুনিয়র। যদি আমি দেখি আমার জুনিয়র মিসবিহেভ করছে কারো সাথে আমার কর্তব্য তাকে থামানো।”
“মাশরাত তোমার কী মনে হয় না আধুনিক্তা কোনো ভাবে তোমাকে জড়িয়ে ফেলেছে আমাদের ফ্যামিলি ম্যাটারের মধ্যে৷ সব না হলেও কিছু তো জেনেছো তুমি।”
“আমি যা জেনেছি তা সব না জানার মতোই। আমার এসব নিয়ে ভাবার সময় কোথায় স্যার? আর আপনার ভয় পেতে হবে না। আমি কখনো এসব কাওকে বলতে যাবো না। আসি আমার লেইট হচ্ছে।”
মাশরাত হাঁটা ধরলো। আধুনিক্তার বাবা একটা নিশ্চিন্তের নিশ্বাস ফেললো। ছেলেটার সাথে কথা বলে উনি এইটুকু বুঝতে পারলেন ছেলেটা অন্যের ব্যাপারে নাক গলানোর মানুষ না। তাই এখন নিশ্চিন্তে থাকতে পারবেন উনি।
মাশরাত দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। আজ হয় তো লেইট হয়ে যাবে সে। হঠাৎ সামনে দেখলো রাস্তার মাঝখানে মানুষের ভীর জমে আছে। সেই রাস্তা দিয়েই তো যেতে হবে। মাশরাত ভীর ঠেলে এগিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ ভীরের মাঝে চোখ যেতেই অবাক হয়ে বললো- “আধুনিক্তা?”

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here